শেষটা_সুন্দর #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৬০।

0
535

#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৬০।

আগামীকাল রাবীর এর নির্বাচন। আজকের দিনটা তাই সে নাকে মুখে ছুটছে। নির্বাচনের সময় তার যত দুশ্চিন্তা থাকে, ভোট চুরি নিয়ে। প্রতিপক্ষ দল আর কিছু পারুক বা না পারুক, ভোট ঠিকই চুরি করবেই। তাই এবার শুরু থেকেই রাবীর বেশ সতর্ক। ন্যায় ভাবে কেউ জিতলে তাতে তার কোনো অসুবিধা নেই। তবে কোথায় দুর্নীতি দেখলে তার আর মাথা ঠিক থাকে না। তাই এবার প্রত্যেকটা কেন্দ্রে আগে থেকেই বেশ পুলিশ মোতায়েনের ব্যবস্থা করেছে। এসবের মাঝে সাদরাজ ও তাকে বেশ সাহায্য করছে। যখন যেখানে যেতে হচ্ছে, সাদরাজও তার সাথে সাথেই যাচ্ছে। মাঝে মাঝে অনেক মানুষ আবার তাদের একসাথে দেখে অবাক হচ্ছে। দু’দিন আগের ভয়ানক শত্রুতা হঠাৎ এত ভালো বন্ধুত্বে পরিণত হলো কী করে, সেটাই তাদের বোধগম্য হচ্ছে না।

মেহুল নামাজে বসে দোয়া করে, যেন ভোটটা ন্যায় ভাবে হয়। কারণ, ন্যায় ভাবে হলে তার স্বামী অবশ্যই জয় লাভ করবে। এটাতে তার কোনো সন্দেহ নেই। তবে আজকাল দুর্নীতি যা বেড়েছে, এই ন্যায়ের তো আর কোনো মূল্যই নেই সমাজে।

মেহুল আজ ইফতারের পর একটু রিতার সাথে দেখা করতে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু, রাবীরকে ফোন করতেই সে সাফ মানা করে। সে চায় না, এই সময় মেহুল বাসা থেকে বের হোক। বাইরের পরিবেশ এখন খুব একটা সুবিধার না। রাবীরের শত্রুরা হয়তো উৎ পেতে আছে, সুযোগ বুঝেই হামলা করতে চাইবে তারা। মূলত সেই জন্যই সে মেহুলকে বারণ করেছে। মেহুলও বুঝতে পারে ব্যাপারটা। তাই সেও আর জেদ ধরেনি। রিতার সাথে ফোন করেই কথা বলে নেয় সে।
রিতার শরীর খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। প্রথম তিন মাস শরীর একটু বেশিই খারাপ থাকে। সেটা মেহুলও জানে। তাই রিতা এখন তার বাবার বাড়িতে আছে। সেই বাড়িতেও খুশির আমেজ। রিতার মা বাবাও তাদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছেন। রিতার জীবনে এখন খালি সুখ আর সুখ। মেহুলের দোয়া যেন কবুল হয়েছে। রিতাকে সুখী হতে দেখে মেহুলের এখন ভীষণ শান্তি লাগে।

_____________

একটা রোদ ঝলমলে সকাল। ফজরের পর থেকেই মেহুল আজ ঘুমাতে পারেনি। ঘুমাবে কী করে, এত টেনশনে কি আর ঘুম আসে? রাবীর ফজরের নামাজ শেষ করেই অফিসে বেরিয়ে গেছে। খুব সকালেই ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে যায়। প্রার্থীরা যার যার মতো কেন্দ্রে ভিড় জমায়। রাবীর একবার তার লোক নিয়ে সবগুলো কেন্দ্রে টহল দিয়ে আসে। সাথে কেন্দ্রে দায়িত্বরত লোকদের বুঝিয়ে আসে, যেন কোনোপ্রকার দুর্নীতি না হয়। অফিসে ফিরে এসে শান্ত হয়ে চেয়ারে বসে সে। ঘেমে সাদা পাঞ্জাবী শরীরে চিপকে আছে তার। এসি আরো কমিয়ে চেয়ারে গা এলিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর সাদরাজ তাকে কল দিয়ে জানায়,সেও কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘুরে খোঁজ নিয়েছে এবং এখন পর্যন্ত সব ঠিক আছে। পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে। সব শুনে রাবীর নিশ্চিন্ত হয়। মেহুলকে কল দিয়ে তাকেও দুশ্চিন্তা করতে বারণ করে।

ঠিক বিকেল পাঁচটায় ভোট গণনা শেষ হয়। রেজাল্ট আসে আরো আধ ঘন্টা পর। চারদিকে হৈ চৈ লাগে। খবর আসে, দ্বিতীয়বারের মতো আবারও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আরিয়ান খান রাবীর বিপুল সংখ্যক ভোটে জয়লাভ করেছেন। খবরটা বাতাসের ন্যায় চারদিক ছড়িয়ে যায়। রাবীরের অফিসের বাইরে জনগনের ভিড় জমে যায়। সবাই যেন বেশ খুশি, তাদের যোগ্য নেতাকে আবার বিজয়ী হতে দেখে। রাবীরও খুশি ভীষণ। জনগনের সামনে দাঁড়িয়ে সবার সাথে খুশবিনিময় করে। সাদরাজও আছে। সে অনেক মিষ্টি এনে নিয়ে আসে। বন্ধুকে মিষ্টি খাইয়ে দেয়। ঐদিকে টিভিতে খবর দেখে মেহুল আর তার শাশুড়িও বাড়িতে বসে উচ্ছ্বাস করছেন। মেহুল কল দিয়ে তার মা বাবাকে জানায়। এই খবর শুনে সবাই খুব খুশি হয়।

____________________________________________

দেখতে দেখতে রোযা শেষের দিকে। আর মাত্র পাঁচটা রোযা বাকি। তারপর খুশির ঈদ। যদিও এর মাঝে রোযা চলে যাওয়ায় মনের মাঝে একটা আক্ষেপ ও থাকে। প্রতিবারই ভেবে কষ্ট হয়, পরের বছরের রোযা আদৌ পাবো কিনা? আর প্রতিবছর’ই রোযার শেষে মেহুলের এমন একটা আক্ষেপ হতো। এবারও হচ্ছে। তবে আজ সকাল থেকেই মনটা ভীষণ রকম খারাপ তার। রোযা চলে যাচ্ছে বলে না শুধু, আরো একটা বিশেষ কারণ আছে। এই মন খারাপের সূচনা সময়ে সে কেঁদেও ফেলেছিল। কেন এমন হলো ভাবতে ভাবতে সে সিদ্ধান্ত নেয় যে, ডাক্তার দেখাবে। তাও আবার রাবীরকে না জানিয়ে।

রিতাকে বিকেলে কল দেয় সে। বলে,

‘রিতা, তুই রেডি হয়ে থাক। আমি আসছি, তোকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাব।’

রিতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘কেন? এখন হঠাৎ ডাক্তারের কাছে কেন যাবি?’

‘তোর চেকআপের জন্য। এই সময় বেশি বেশি ডাক্তারের ফলোআপে থাকতে হয়। এত কথা না বলে, এখন রেডি হয়ে থাক। আমি আসছি।’

রিতাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মেহুল কল কাটে। বাসায় রিতার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে বলে, সে তৈরি হয়ে বেরিয়ে যায়। রিতা সাদরাজকে কল দিয়ে জানিয়ে রাখে, সে যে মেহুলের সাথে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে। নয়তো, পরে লোকটা আবার অযথা টেনশন করত।

হসপিটালে পৌঁছেই রিতা বলল,

‘আমাদের তো সিরিয়াল দেওয়া হয়নি। এখন তো এর জন্য অনেক লেইট হবে।’

মেহুল বলল,

‘হবে না। আমি সিরিয়াল দিয়ে রেখেছি। তুই এখানেই বস, আমি দেখে আসি কত নাম্বার চলছে।’

মেহুল দেখতে যায়। আর বেশি না, একজনের পরেই তাদের নাম্বার। মেহুল তাই রিতাকে নিয়ে কাছে বসে যেন ডাকতেই চলে যেতে পারে।

ডাক্তারের সামনে বসে রিতা বুঝতে পারছে না কী বলবে। তার তো এখন মোটামুটি সবকিছুই স্বাভাবিক। ডাক্তার দেখানোটা জরুরি ছিল না। তাও কেন যে মেহুল জোর করল কে জানে। ডাক্তার তাও রিতাকে ভালোভাবে চেকআপ করে বলল,

‘উনার সবকিছু নরমাল আছে। চিন্তা করার কিছু নেই।’

রিতা তখন মেহুলের দিকে চেয়ে বলল,

‘দেখেছিস, আমি বলেছিলাম না; সবকিছু ঠিক আছে। ডাক্তার দেখানোর দরকার নেই। কিন্তু, তুই তো আমার কোনো কথাই শুনিসনি।’

মেহুল এতক্ষণে মুখ খুলে। মূলত সে নিজেই এখানে ডাক্তার দেখাতে এসেছে। এই কথা শুনে রিতা চমকায়। জিজ্ঞেস করে,

‘তোর আবার কী হয়েছে?’

মেহুল হতাশ মুখে রিতার দিকে তাকায়। বলে,

‘আমি কনসিভ করতে পারছি না।’

রিতার কপালে চওড়া ভাঁজ পড়ে। সে ডাক্তারের দিকে উত্তরের আশায় তাকায়। ডাক্তার মেহুলকে কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করেন। সবকিছুর গুছিয়ে জবাব দেয় মেহুল। সব শুনে ডাক্তার বলেন,

‘আপনাকে একটা টেস্ট করাতে হবে। আর সেই টেস্টের রিপোর্ট দেখেই বলা যাবে, সমস্যা কোথায়।’

মেহুল জিজ্ঞেস করে,

‘আজকে টেস্ট করে কি আজকেই রিপোর্ট পাওয়া যাবে?’

ডাক্তার বলেন,

‘না, আজকে আপনি টেস্ট করে যান। রিপোর্ট কালকে দিবে। তখন রিপোর্ট নিয়ে আবার আমার কাছে আসবেন।’

মেহুল মাথা ঝাঁকিয়ে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে টেস্ট করাতে চলে যায়।

ফেরার পথে মেহুলের অস্থির মুখখানা দেখে রিতা তার হাতের উপর হাত রেখে বলে,

‘চিন্তা করিস না, দোস্ত। কিচ্ছু হবে না।’

মেহুল ঢোক গিলে। ভীত সুরে বলে,

‘আমার না কেমন যেন ভয় হচ্ছে। যদি কোনো সমস্যা ধরা পড়ে?’

‘আরে না। সবকিছু নরমাল আছে। ঠিক হয়ে যাবে। তুই কোনো চিন্তা করিস না।’

রিতা তাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু, মেহুল কোনোভাবেই তার মনের ভয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। সে মৃদু আওয়াজে বলে,

‘সাদরাজ ভাইয়াকে এখনই কিছু জানানোর দরকার নেই।’

‘ঠিক আছে। আর তুই রাবীর ভাইয়াকে কিছু জানাবি না?’

মেহুল দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে বলে,

‘না, এখনই না।’

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here