#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব ২৬
-অনেক ভালোবাসেন আমাকে?
-নিজের থেকেও বেশি। আমার বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যই তুমি আর আম্মা।
-আমি কখন ভাবতেও পারিনি কেউ একজন আমাকে এতো ভালোবাসবে আর আমিও কাউকে এতো ভালোবাসবো!
-আমার যা না ভাবি সেগুলোই হয় আমাদের সাথে।
-একদম। আগামীকাল সকালে আমরা ঘুরতে বের হবো। আমার স্কুল, কলেজ থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবো আপনাকে।
-তাই নাকি?
-জি। চলুন নিচে যাই।
-চলো।
-আগে গরম পোশাক পরিধান করে নিন সসসা সাম দূর বলতেও পারছি না। কী জেনো শব্দটা?
-কোন শব্দ?
-বাংলায় হাসব্যান্ডকে জেনো কী বলে?
-জামাই?
-নোপ্।
-সহধর্মি ওর পতি?
-নো ম্যান। ফেমাস একটা শব্দ তো?
-বুঝেছি স্বামী।
-ইয়েস। স্বামী।
ইরান জেকেট পরতে পরতে মৃদু হাসে। আনাবিয়ার সামনে গিয়ে মাফলার আনাবিয়ার গলায় পেঁচিয়ে দেয়। সুযোগ পেয়ে টুপ করে আনাবিয়ার গালে একটা কিস করে দেয়। আনাবিয়া গাল ফুলিয়ে বলে,
-আপনি যখন তখন শুধু কিস কেনো করেন? এতো ফিলিংস আসে কোথা থেকে?
-প্রিয় মানুষের জন্য মনে সবসময়ই ফিলিংস থাকে। রইলো তোমাকে কিস করার কথা? তুমি হলে একটা কাপকেক। যাকে দেখলেই আমার খেয়ে ফেলতে মন চায়।
-এটা ফানি ছিল!
-হুম চলুন এবার।
সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে আনাবিয়া দেখতে পায় ড্রইংরুমে তাজীব মুসুর সাথে খেলছে। আনাবিয়া সেদিকে তাকিয়ে বলে,
-তাজীব ব্রো কে বিয়ে করাচ্ছেন না কেনো? তারও তো বয়স হচ্ছে।
-ওকে বলেছি যদি কাউকে পছন্দ হয় আমাকে বলতে সেদিনই আমি তার বিয়ে করিয়ে দেবো।
-ওওও। ওকে ক্যান আই আস্ক ইউ এ কোয়েশ্চন?
-অফ কোর্স।
-হু আর ইউ?
আনাবিয়ার এহেন প্রশ্ন শুনে ভড়কে যায় ইরান। সহসা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আনাবিয়ার পানে তাকায়। আনাবিয়ার মুখে এতক্ষন একটা উত্তেজনা ছিল। ইরান তার দিকে তাকাতেই আনাবিয়া মেকি হাসে। ইরান কণ্ঠস্বর খাঁদে ফেলে বলে,
-হোয়াট টাইপ অফ কোয়েশ্চন ইস দ্যাট!
-নট এট অল। চলুন গ্রান্ডমা ডাকছে।
আনাবিয়া সোফায় পরে। ইরানও আনাবিয়ার পাশে বসে। গ্রান্ডমার সাথে আনাবিয়া কথা বলছে। ইরান তাঁদের একটি কথাও বুঝছে না। হঠাৎ কল আসায় বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় সে। এক কিনারে যেয়ে কল রিসিভ করে। তার একজন সিক্রেট অ্যাসিস্ট্যান্ট কল দিয়েছে বাংলাদেশ থেকে।
-হ্যাঁ বলো কী দরকার?
-স্যার তাজীব স্যারের কথা মতো আজ সারাদিন আমি তনুসফা ম্যাম ও তাহশিয়া ম্যামের ওপর নজর রেখেছি।
-তো বলো স্পেশাল কিছু জানলে?
-তনুসফা ম্যাম প্রতিদিনের মতো অফিসে গিয়েছিল। সারাদিন কাজ করে বাসায় চলে যায়। কিন্তু কাল রাত সম্ভবত দশটার দিকে ম্যাম কোথায় জেনো গিয়েছিল। নিজস্ব গাড়ি দিয়ে যায়নি। একটা রিকশা করে গিয়েছে।
-কোথায় গিয়েছিল?
-কিছু রাস্তা ফলো করার পর হঠাৎ ম্যামের রিকশা উধাও হয়ে যায় স্যার। ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি তখন।
-জানার চেষ্টা করো কোথায় গিয়েছিল।
-জি স্যার। আর স্যার তাহশিয়া ম্যাম আজই নাকি বিদেশে চলে গিয়েছে।
-আই ক্যান্ট বিলিভ! তুমি একটু ভালো করে খোঁজ নেও। যদি সে অন্য উদ্দেশ্যে আসে তাহলে এতো জলদি তার ফিরে যাওয়ার কথা নয়।
-জি স্যার।
ইরান কল কেটে নিঃশাস নিয়ে পিছনে ফিরতেই দেখে আনাবিয়া দাঁড়িয়ে আছে। ইরান দু পা পিছিয়ে যায়। আনাবিয়া বলে,
-ভয় পেয়ে গেলেন নাকি? সরি।
-কী করছিলে এখানে?
-আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে এলাম।
-হুম বলো?
-গ্রান্ডমা জিজ্ঞেস করছে রাতে কী খেতে পছন্দ করবেন?
-যা রান্না করবে তাই খাবো। আমি সব ধরণের খাবারই খেতে পারি।
-তাহলে তো ভালোই হলো।
আনাবিয়ার কোলে মুসু ছিল। আনাবিয়া এখানে আসার পর থেকে মুসুকে কোলে নিয়েই ঘুরছে। এক মুহূর্তের জন্য দূর করছে না। মুসু কত সুন্দর আনাবিয়ার মোলায়েম শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। ইরানের মনে হিংসা জন্ম নিলো মুসুর প্রতি। আনাবিয়া বার বার মুসুকে চুমু দিচ্ছে। সেটা দেখে ইরান নিজের হাত মুঠো করে নেয়। কোথায় আনাবিয়া তাকেও এভাবে কারণে অকারণে চুমু দেয় না! এভাবে আদর করে না! তবে এই মুসু কী তার জায়গা দখল করে নিচ্ছে? ইরানের মস্তিকে কিছু অদ্ভুত ধারণা বাসা বেঁধে নেয়।
-ইরান আমি ভাবছি মুসুকে আমি এবার আমাদের সাথে নিয়ে যাবো। ভালো হবে না?
ভিতরে ভিতরে রাগ করলেও বাহ্যিক তা প্রকাশ করল না। হাসি মুখে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। আনাবিয়ার কপালে দু ভাঁজ পরে। চোখ ছোট ছোট করে বলে,
-আপনার হাসি দেখে মনে হয় অনেক কষ্টে হাসছেন জেনো! হাসি জিনিসটা হয়তো আপনার পছন্দ না?
-গম্ভীর থাকা হলো আমার স্বভাব। তুমি জীবনে আসার পর থেকেই আমি এতো হাসি।
-হুম আমি বুঝি তো আপনি আমার সামনে একটা মুখোশ পরে থাকেন।
-মুখোশ!
-মানে এইযে আমার সাথে কত হাসেন, মন খুলে কথা বলেন। কিন্তু বাহিরের সবার সাথে গম্ভীর ভয়ংকর ইরান। তাই বললাম আমার সামনে মুখোশ পরে থাকেন।
আনাবিয়া গ্রান্ডমার সাথে কিচেনে চলে যায়। ইরান সেদিকে তাকিয়ে থাকে মূর্তি হয়ে। যেতে যেতে আনাবিয়া তার কথায় একটা কিন্তু রেখে গেলো ইরানের জন্য।
___________________🌸
রাতে খাওয়া দাওয়ার পর গ্রান্ডমার সাথে কিছুক্ষন কথা বলে রুমে আসে আনাবিয়া। ইরান শুয়েছিল তখন। আনাবিয়াকে দেখে রাগী কণ্ঠে বলে,
-আসলে কেনো আজ গ্রান্ডমার সাথেই ঘুমাতে!
-সত্যি! গ্রান্ডমাও এটাই বলছিল।
আনাবিয়া যেভাবে এসেছিল সেভাবেই আবার বেরিয়ে যেতে নেয়। ইরান কিঞ্চিৎ সময়ের মধ্যে বিছানা থেকে উঠে দরজা লাগিয়ে আনাবিয়া স্মুখীন এসে দাঁড়ায়। আনাবিয়া কিছু বলতে উদ্যত হতেই ইরান আনাবিয়ার অধর নিজের অধরে পুরে নেয়। অতিকৃত হয়ে আনাবিয়া ইরানকে আঁকড়ে ধরে। ইরান প্রথমে রাগে রুক্ষভাবে চুম্বন করলেও ধীরে ধীরে কোমল হয়ে যায়। আনাবিয়ার দু গাল ধরে বিছানার দিকে অগ্রসর হতে নেয় হঠাৎ আনাবিয়া ইরানের ঠোঁটে কামড় দিয়ে বসে। বিরক্তিতে কপালে ভাঁজ পরে ইরানের। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে,
-একটু কিসই তো করছিলাম এভাবে কামড় না দিলেও পারতে।
-আমি ইচ্ছে করে দেইনি হঠাৎ লেগে গিয়েছে হয়তো।
-হ্যাঁ বুঝেছি। যাও ঘুমাও।
ইরানের কণ্ঠস্বর মনমরা। আনাবিয়া এবার রেগে যায়। চেঁচিয়ে বলে,
-আরেহ আমি ইচ্ছে করে কামড় দেইনি তো। এখন রাগ দেখাচ্ছেন কেনো? আজব!
-আমি বুঝেছি তো তোমার আমার রোমান্স ভালো লাগে না।
-দূর আপনার সাথে কিছু বলাই ভুল।
আনাবিয়া জেদে বসে পা উঁচু করে ইরানের দু গাল শক্ত করে ধরে নিজেই ইরানকে কিস করে। ইরান মনে মনে খুশি হয়। আনাবিয়াকে কিস করার সুযোগ না দিয়ে হাত বাড়িয়ে বাতি নিভিয়ে দেয়। তারপর আনাবিয়াকে সোজা কোলে তুলে বিছানায় ফেলে দেয়। আনাবিয়া চিৎকার করে বলে,
-আপনি কী আমার কোমর ভাঙতে চাচ্ছেন? উফফ আমার কোমর ভেঙে গেলো!
-চুপ আর একটা কথাও বলবে না।
”
”
”
রাশিয়া পা রাখে তাহশিয়া। সকাল হলেও তুষারপাতের জন্য রাস্তাঘাট একদম খালি। নির্জন রাস্তা দিয়ে তার গাড়ি আগে বাড়ছে। আগের থেকেই রিসোর্ট বুক করে রেখেছিল সে এখন সেখানেই যাবে। তাহশিয়ার বাঁকা হেসে তার অ্যাসিস্ট্যান্টকে বলে,
-ইরান এই মুহূর্তে কোথায় আছে?
-আনাবিয়ার বাসায় ম্যাম। নর্থ সাইডে।
-ওকে। এখন আমি রিসোর্ট যাবো একটু রেস্ট নেবো তারপর বের হবো।
-ঠিক আছে ম্যাম।
-ইরান এতো চতুর, এতো বুদ্ধিমত্তা তাকেও কত সহজে বেকুব বানিয়ে দিলাম আমি! বিষয়টা হাস্যকর বটে।
-আমিও সেটাই ভাবছি ম্যাম।
-আমি জানি ইরান আমার বিষয় খোঁজ নিচ্ছে হয়তো কোনো সিক্রেট গোয়েন্দাও লাগিয়েছে।
-জি ম্যাম ইরান স্যার বসে থাকার লোক নয়।
-তার এই এটিটিউড, আত্মসম্মান, গম্ভীরতা আমি অনেক বেশি পছন্দ করি। সত্যি বলতে সম্পূর্ণ ইরানকেই আমার ভালো। ইসসস কবে যে সে আমার হবে!
-হবে ম্যাম আপনারই হবে।
__________________
ব্রেকফাস্ট করে তৈরি আনাবিয়া ও ইরান। এখন তারা বাহিরে ঘুরতে বের হবে। গ্রান্ডমা দুইজনকে সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখতে বলছে। একটু বাতাস লাগলেই ঠান্ডা লেগে যাবে তাই। অতঃপর বিদায় নিয়ে দুইজন বের হয়। ইরান প্রথমে গাড়ি করে যেতে চাইলেও আনাবিয়া জোর করে ইরানকে নিয়ে হাঁটা ধরে। ইরানের হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে আনাবিয়া বলে,
-হেঁটে চলুন শরীর এমনেই গরম হয়ে যাবে।
-আমার তো শুধু তোমার সনিকটে আসলেই শরীর গরম হয়।
-রাব্বিশ!
-কত বছর ধরে এখানে থাকছো তোমরা?
-উম বারো বছর ধরে। বারো বছর আগে ডেডি এই বাড়িটা বানিয়েছিল।
-ওওও।
-হুম।
হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরেই এসে পরে তারা। আনাবিয়া একটা বিল্ডিংয়ের দিকে ইশারা করে বলে,
-উইযে ঐটা আমার স্কুল। আমার বোন এবং আমি সেখানেই স্টাডি করেছি।
-ওহহ! মানুষজন দেখা যাচ্ছে না যে?
-তুষারপাতের কারণে এইসময় স্কুল বন্ধ দেওয়া হয়। দেখছেন না রাস্তায়ও মানুষজন নেই।
-হুম একদম নির্জন। লাইক হরর এলাকা!
আনাবিয়া ইরানের কথা শুনে হাসতে থাকে। ইরান দু ঠোঁট প্রসারিত করে আনাবিয়ার হাসির হাসি দেখে। আচমকা আনাবিয়ার গালে কিস করে দেয়। আনাবিয়া কিছু বলবে তার আগেই ইরান বলে,
-আমার কিসিং ফিলিংস হলে আমি নিজেকে আটকাতে পারি না ডিয়ার।
বলেই ইরান সামনে দৌড় দেয়। আনাবিয়া কিছুক্ষন ইরানের পিছনে দৌড়ে থেমে যায়। নিচে থেকে কিছুটা তুষারপাত হাতে তুলে নিয়ে গোল বল বানিয়ে ইরানের দিকে ছুঁড়ে মারে। ইরানও আনাবিয়াকে পাল্টা আক্রমণ করে। এভাবেই মাঝ রাস্তায় দুইজন দৌড়াদৌড়ি করে তুষারপাত ছুঁড়ে মারে একজন আরেকজনের দিকে। আনাবিয়া একসময় ক্লান্ত হয়ে হাসতে হাসতে নিচেই বসে পরে। ইরান আনাবিয়াকে টেনে কোলে তুলে নেয়। ভড়কে গিয়ে আনাবিয়া বলে,
-কী হলো কোলে তুলে নিলেন কেনো?
-ঠান্ডায় বসলে জ্বর হবে। যেখানে আমি উপস্থিত সেখানে তোমার বসার জন্য অন্য জায়গা লাগে নাকি!
-আপনি ক্লান্ত হয়ে যাবেন নামান আমাকে।
-তোমার মতো চিকনিকে কোলে নিলে আমার মনে হয় না আমি কাউকে কোলে নিয়েছি।
-অপমান করলেন!
ইরান মুচকি হেসে প্রতিউত্তরে বলে,
-না তারিফ করলাম। আমার ওয়াইফের কত স্লিম ফিগার! হ*টিন*টি।
-উফফ কী যে বলেন আপনি!
-একটা সত্যি কথা বলবো?
আনাবিয়া ইরানের গলা জড়িয়ে ধরে বাবু হয়ে বলে,
-হুম বলুন?
-অনেক বেশি কেউট লাগছে তোমাকে এই লুকে। একদম চলন্ত পুতুল!
-চলন্ত পুতুল!
-অপ্স সরি ইরানের পুতুল। এখন ঠিক আছে?
-হুম। আপনি আনাবিয়ার প্রিন্সচার্মিং আর আমি ইরানের ডল।
-একদম।
>>>>চলবে।