সে_প্রেমিক_নয় #Mehek_Enayya(লেখিকা) #পর্ব ৩৬

0
303

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ৩৬

-এমপি ইরান শেখ কিছুদিন ধরে দেখছি আপনার কাজের প্রতি তেমন মনোযোগ নেই! দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করছেন না! কোনো সমস্যা কী আপনার?

আনমনে বসে ছিল ইরান। মিটিং চলছে জাতীয় সংস্থার উন্নয়নের জন্য। মন্ত্রী-মিনিস্টার, এমপি, চেয়ারম্যান সহ সকলেই উপস্থিত। ভরা মঞ্জিলে স্বাস্থমন্ত্রীর কথায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে ইরান। মনে মনে লজ্জিত অনুভব করে সে। আরেকজন মন্ত্রী বলে,

-হ্যাঁ ইরান শেখ আপনি তো সবসময় কাজের প্রতি অনেক দায়িত্বশীল। কখন আপনার কোনো কাজের জন্য কমপ্লেইন করতে হয়নি কয়দিন ধরে হটাৎ কী হয়েছে আপনার? একজন এমপির এইরকম দায়িত্বহীন হওয়াটা ভালো দেখায় না।

-শুনলাম আপনাদের এলাকায় নাকি রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু হবে আগামীকাল থেকে? এই সম্পর্কে সবটা জানার জন্য গতকাল রাতে আপনাকে ইমেইল করেছিলাম আপনি হয়তো খেয়াল করেননি।

সরমে মাথা ঝুঁকিয়ে ফেলে ইরান। বরাবর বসেছিল হাসিব আলী। ইরানকে অপমানিত হতে দেখে মনে মনে খুশিতে ফেটে পরে সে। অনুতপ্ত স্বরে ইরান বলে,

-আমি ভীষণ দুঃখিত স্যার। কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে একটু অন্যমনস্ক ছিলাম। তবে আপনি চিন্তা করবেন না আমি বাসায় যেয়েই ইমেইল চেক করব। আর হ্যাঁ আগামীকাল থেকে রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু হবে। আমি নিজে যেয়ে এই শুভ কাজ আরাম্ভ করব।

-তোমার থেকে আমি এরকমটাই আশা করি ইরান। তোমাকে দায়িত্বহীন নয় দায়িত্বশীল মানায় সর্বদা।

-ধন্যবাদ স্যার।

হাসিব আলী সকলের আড়ালে মুখ কালো করে ফেলে। ইরান গম্ভীর হয়ে কিছু ফাইল চেক করে রণরণে কণ্ঠ স্বরে বলে,

-আগামী ২০ জুলাই সম্মেলন আছে। যেকোনো একজনকে সকল আয়োজনের ভাড় দেওয়া হবে। এখন আপনারা সবাই মিলে বিবেচনা করুন।

-আমার মতে তোমারই আয়োজনের দায়িত্ব নেওয়া উচিত ইরান। আগেরবারও তুমি বেশ শৃঙ্খলা ভাবে আয়োজন করেছিলে। মন্ত্রীগণ বেশ প্রসন্ন হয়েছিল।

-তিনি ঠিক বলছে ইরান শেখকেই এই দায়িত্ব দেওয়া হোক।

-হ্যাঁ এটাই ভালো হবে। আপনার আমাদের সাহায্য লাগলে বলবেন ইরান শেখ।

ইরান আড়চোখে হাসিব আলীর পানে তাকায়। ফ্যালফ্যাল করে হাসিব আলী তার দিকেই তাকিয়ে আছে। হালকা হেসে ইরান বলে,

-আমি আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করব সুষ্টভাবে আয়োজন করার। আপনাদের কথার মর্যাদা রাখবো ইনশাআল্লাহ।

___________________

মিটিং থেকে সোজা শেখ বাড়িতে আসে ইরান। তনুসফা কয়েকদিন যাবৎ অনেক বেশি অসুস্থ তাই অফিসে যায়নি। হটাৎ এই ভর দুপুরে ইরানকে গম্ভীর মুখে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে দেখে রূহ কেঁপে উঠে তার। ইরানকে তনুসফা এখন যমের মতো ভয় পায়। আপন ছোট ভাই হলেও বর্তমান ইরানকে দিয়ে একটুও বিশ্বাস নেই তার। চোরের মতো বসা থেকে উঠে নিজের রুমে যেতে নেয় এমন সময় ইরান পিছন থেকে বলে উঠে,

-কী চুরি করে এভাবে চোরের মতো লুকাচ্ছেন আপা?

ভেবছেঁকা খেয়ে যায় তনুসফা। ইরানের দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে বলে,

-আআমি কী চুরি করব আবার!

-জানেন তো চোরের মন পুলিশ পুলিশ! এভাবে তোতলাচ্ছে কেনো আপা? কোনো বিষয় নিয়ে ভয় পাচ্ছেন কী?

-না। ভয় কেনো পাবো!

-তাহলে তো ভালোই। আম্মাকে ডাকুন আপা বলুন তাকে সুখবর নিয়ে এসেছি।

-কী সুখবর?

সিঁড়ির দিকে তাকাতেই ইরানের মুখে হাসি ফুটে উঠে। রাকিয়া ইরানের কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়েই নিচে নেমে এসেছে। নিজ রক্তের সাথে কী রাগ করে থাকা যায়! রক্ত তো রক্তই! নাড়ী ছেঁড়া ধন তার। ধীর পায়ে ইরানের কাছে এসে পুনরায় জিজ্ঞেস করে,

-বল কী সুখবর?

-এবারের সম্মেলনের আয়োজনের ভাড় আমাকেই দেওয়া হয়েছে আম্মা। এবং আমার কথা মতো আগামীকাল থেকে রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু হবে।

-বেশ ভালো। মন দিয়ে কাজ কর। আনাবিয়া কেমন আছে? আর কাল হটাৎ করে আমাকে চলে আসতে বললি কেনো?

-সে বিরাট কাহিনী! এখন শোনো আগামীকাল আমার এক ক্লোস্ড ফ্রেন্ডের বিয়ে। ভেবেছি সম্পূর্ণ পরিবার নিয়ে যাবো। তাই তোমাদের জন্য কিছু গিফট এনেছি।

-তুই আগে বস।

-না বসবো না।

ইরান হাতের একটা ব্যাগ ধরিয়ে দেয় রাকিয়াকে। তারপর এগিয়ে যায় তনুসফা শেখের কাছে। তাকেও তার ব্যাগ ধরিয়ে দেয়। বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে,

-আম্মা ইসরাফ বাসায়?

-হ্যাঁ। কেনো?

-ডাক দেও ওকে। আমি ক্ষমা চেয়ে নেই ওর কাছে। জানো তো ভাই বোনদের কষ্ট দিতে পারি না আমি।

খুশিতে গদগদ করতে করতে রাকিয়া ইসরাফের রুমে চলে যায়। তনুসফা ভীত কণ্ঠে বলে,

-শুনেছিলাম আনাবিয়া অসুস্থ। কেমন আছে এখন?

-বেশ আছে।

-ভালো থাকলেই ভালো। আজকের নিউজে তোকে দেখিয়েছিল।

-হ্যাঁ। এভাবেই চলতে থাকলে খুব জলদিই আপনার পাটনার হাসিব আলীর পদ আমার নামে হয়ে যাবে আপা। মন্ত্রী ইরান শেখ। ওয়াও সেই না আপা?

তনুসফা শুকনো ঢোক গিলে হ্যাঁ বোধক মাথা নারায়। রাকিয়া ইসরাফকে নিয়ে আসে। মুখ কালো করে রেখেছে ইসরাফ। ইরান সবার আড়ালে বাঁকা হেসে তার কাছে যায়। অনুতপ্ত হওয়ার ভান করে ইসরাফের পায়ের সামনে হাটু মুড়ে বসে পরে।

-আমি জানি ইসরাফ তুই আমার ওপর রেগে আছিস। ঠিকই আছে আমি তোর অপরাধী। অনেক বেশি বলে ফেলেছি সেদিন আমি। যতই হোক তুই আমার ভাই। তোকে কষ্ট দিয়ে আমি শান্তিতে থাকতে পারব না ভাই। প্লিজ বড় ভাইকে মাফ করে দে। যা হয়েছে হয়েছে। আনাবিয়া এখন তোর ভাবি হয়। আমি চাই না শুধু শুধু তোদের সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট হোক।

ইসরাফ বিরক্তবোধ করে ইরানের কথায়। রুক্ষ চোখে ইরানের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে,

-আপার থেকে আনাবিয়ার কথা শুনলাম। ঐ মেয়ে শুধু প্রতিশোধ নিতেই পরিচয় লুকিয়ে আমাদের এখানে এসেছে। আর আপনি তো একেবারে বিয়েই করে ফেললেন! ও কী আপনার বিষয় কিছুই জানে না? আপনার থেকে এখনও প্রতিশোধ নিচ্ছে না?

-মানুষকে কন্ট্রোল করতে জানি আমি ছোট ভাই। আমার বিষয় না ভেবে নিজেকে নিয়ে ভাবো কাজে দেবে।

-এখন ভাই তো আপনি তাই একটু চিন্তা হচ্ছে। ওর বড় শত্রুই তো আপনি! আপনাকে জিন্দা রাখবে?

-কিসমত করে তোর মতো ভাই পেয়েছি আমি। যে আমার জন্য এতো চিন্তা করে!

দুই ভাইয়ের কথার মাঝেই রাকিয়া বলে উঠে,

-ইরান তুই বস না আব্বা। সকালে নাস্তা করেছিস?

রাকিয়ার প্রশ্নে নিশ্চুপ হয়ে যায় ইরান। এখন মা কে কিভাবে বলবে সে নাস্তা তো দূরে থাক রাতের ডিনারও করেনি। মুখে নকলি হাসি ফুটিয়ে বলে,

-আম্মা তোমার চিন্তা করা আর কমলো না!

-মা তো তাই চিন্তা না করে থাকতে পারি না।

ইসরাফ বিরক্ত হয়ে নিজেই চেয়ার ঘুরিয়ে রুমে চলে যায়। ইরান অসন্তুষ্ট হয় ইসরাফের ব্যবহারে। ইসরাফের জন্য আনা গিফট রাকিয়ার হাতে দিয়ে বলে,

-এটা ইসরাফকে দিয়ে দিও আম্মা। আমি আসি এখন।

-কিছু খাবি না?

-না পেট ভরা আমার। আসি।

___________________

আধমরা হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে আনাবিয়া। কালকের থেকে না খেয়ে দুর্বল হয়ে পরেছে সে। রাতে অনেক কষ্টে পায়ের ও হাতের বাঁধন খুলেছে। পালানোর চেষ্টাও করেছে বহুবার কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। এখন অসহায় হয়ে উল্টো হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।
আচমকা চোখে আলো পরতেই ভড়কে যায় আনাবিয়া। পিটপিট করে চোখ খুলে মাথা ঘুরিয়ে সামনে তাকায়। অস্পষ্ট ইরানের মুখমন্ডল চোখে ভাসতেই চট করে উঠে বসে আনাবিয়া। বসার মতো শক্তি নেই তবুও বিছানার চাদর আঁকড়ে ধরে বসে। ঘৃণায় মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেলে।

ইরান গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করছে আনাবিয়াকে। দুইজন ভৃত্য পর পর অনেকগুলো খাবার নিয়ে এসে টেবিলে রেখে দেয়। একজন ভৃত্য পুরো রুম পরিষ্কার করে দেয়। আনাবিয়া জেনো কোনো মূর্তি। টু শব্দও মুখ দিয়ে বের করে না। কাজ শেষ হয়ে যেতেই ভৃত্যরা রুম ত্যাগ করে। ইরান পায়ের ওপর পা তুলে সোফায় বসে। শান্ত কণ্ঠে আদেশ স্বরে বলে,

-ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার খেয়ে নেও।

-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,।

-কিছু বলেছি আমি আনাবিয়া।

আনাবিয়া এবারও কিছু বলে না। ইরান বসা থেকে উঠে আনাবিয়ার সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। নিজের শক্ত পুরুষালি হাত দিয়ে আনাবিয়ার দুই গাল চেপে ধরে রুক্ষ কণ্ঠে বলে,

-কথা কানে ঢুকে না? কয়বার বলা লাগবে একটি কথা?

আনাবিয়া প্রতিবারের মতো চুপ। ইরানকে কোনো উত্তর দিতে মন চাইছে না তার। এইরকম অমানুষের সাথে কথা বলতেও বিরক্ত লাগছে আনাবিয়ার।
আনাবিয়ার পাংসুটে মুখশ্রী দেখে ইরান তপ্ত নিঃশাস ছাড়ে। গায়ের কোট খুলে শার্টয়ের ওপরের তিনটে বোতাম খুলে নেয়। তারপর একটুও সময় ব্যয় না করে কোলে তুলে নেয় আনাবিয়াকে। আনাবিয়া ইরানকে কিলঘুষি দিতে থাকে ছাড়ানোর জন্য। কোনো উপায় না পেয়ে রাগে ইরানের গলায় কামড় দিয়ে বসে। যেমন তেমন কামড় নয় একদম দাঁত বসিয়ে রক্ত বের করার মতো কামড়! ইরান ব্যাথায় চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়। ওয়াশরুমে এসে আনাবিয়াকে নামিয়ে গলায় স্পর্শ করতে ভেজা ভেজা অনুভব হয় তার। হাত সামনে আনতেই দেখতে পায় আঙুলে মৃদু রক্ত লেগে আছে। আঘাত প্রাপ্ত জায়গা ডলে রাগী চোখে আনাবিয়ার দিকে তাকায়। আনাবিয়া সুযোগ পেয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতে নেবে তার আগেই ইরান দরজা লাগিয়ে দেয়। আনাবিয়ার হাত ধরে ঝর্ণার নিচে নিয়ে দাঁড় করায়। ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলে,

-এতো শক্তি আসে কোথা থেকে? পাক্কা একদিন না খেয়ে আছো তবুও এতো এনার্জি, এতো জোর! আমাকে দেখে কী ভয় করে না তোমার? এতো সাহস কে দেয় তোমাকে? কয়েকদিনে এই সুন্দর মুখশ্রীর কী হালটাই না করেছো!

-ডোন্ট টাচ মি। জাস্ট স্টেই ওয়ে।

-দূরে যেতে বললে আমি আরো সামনে আসবো। বুঝলে?

ইরান আনাবিয়ার গালে হাত দিয়ে করুণ চোখে আনাবিয়ার পানে চোখ স্থির করে। অস্থির হয়ে বলে,

-তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না আমি আনাবিয়া। কেনো তুমি বোঝো না তোমাকে কষ্ট দিলে আমি নিজেই কষ্ট পাই! তোমার চোখের পানি দেখলে আমার কলিজা পুড়ে যায়। কেনো বোঝো না তুমি? প্লিজ স্টপ অল অফ দিস। আমি দ্বিতীয়বার বলছি হয় আমাকে মেরে ফেলো নয়তো আগে যেমন ছিলে সেভাবেই সংসার করো।

আনাবিয়া ভাবুক হয়ে মেঝেতে তাকিয়ে আছে। মনে মনে নতুন কিছু পরিকল্পনা করছে সে। ইরান আনাবিয়াকে জড়িয়ে ধরতে নেবে এমন সময় আনাবিয়া এক পা পিছনে সরে গিয়ে ইরানের গালে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। রাগী কণ্ঠে কিছু বলতে উদ্যত হবে তার আগেই ইরান জেদে বসে আনাবিয়ার অধর আঁকড়ে ধরে নিজের অধরজোড়া দিয়ে। আনাবিয়া এলোপেথারি ইরানের বুকে কিল ঘুষা দিয়েই যাচ্ছে। ইরান জেনো এখন নিজের মধ্যে নেই। এতো আক্রমণের পরও আনাবিয়াকে ছাড়ছে না। কয়েক মিনিট অতিবাহি হওয়ার পর আপনা আপনি ছেড়ে দেয় আনাবিয়াকে।

আনাবিয়া ইরানের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসছে। ইরান সেটা দেখে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,

-এভাবে তাকিয়ে না থেকে শাওয়ার নেও। বেশিক্ষন ঝর্ণার নিচে থাকলে জ্বর হবে।

আনাবিয়াকে নড়াচড়া করতে না দেখে ইরান বিরক্ত হয়ে নিজেই জোর করে গোসল করিয়ে দেয় আনাবিয়াকে। গোসল শেষ হলে আনাবিয়াকে তৈয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে পূর্বের মতোই কোলে করে রুমে নিয়ে আসে। ড্রেস বের করে আনাবিয়ার হাতে দিয়ে বলে,

-এখন নিজ হাতে ড্রেস চেঞ্জ না করলে সেটাও কিন্তু আমিই করে দেবো বলে দিলাম।

ইরান কথা শেষ করে নিজের জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুম চলে যায়। এর মধ্যে আনাবিয়া ড্রেস পরে দরজার কাছে যায়। কয়েকবার টানাটানি করে দরজা খোলার চেষ্টা করে। এই রুমে একটা নয় দুইটা দরজা। প্রথমে লিফটের মতো একটা দরজা। যেটা খুলতে হলে পাসওয়ার্ড দিতে হয়। পরেরটা সাধারণ কাঠের দরজা। আনাবিয়া কাঠের দরজা নিয়েই টানাটানি শুরু করেছে। খুলতে না পেরে হয়রান হয়ে বিছানায় বসে পরে।
ইরান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সোফায় বসে। সযত্নে খাবার বেড়ে থালিতে সাজিয়ে কিনারে রাখে।

-আনাবিয়া খেতে এসো।

আনাবিয়া নাক ফুলিয়ে তেঁতো কণ্ঠে বলে,

-এতো আদিখ্যেতা আমার জাস্ট অসহ্য লাগছে!
প্লিজ গতকালের মতো আমাকে একা ছেড়ে দিন। দরকার পরলে নাহয় ভৃত্যদের পাঠাবেন রুমে তবুও আপনি আসবেন না। আপনার এই বদসুরত চেহারা দেখলে ঘৃণা হয় আমার। পুড়িয়ে দিতে মন চায় ঐ সুরত!

ইরান আর কিছু বললো না। বসা থেকে উঠে আনাবিয়ার হাত ধরে জোর করে সোফায় নিয়ে এসে বসিয়ে দেয়। এক হাত দিয়ে আনাবিয়ার দুইহাত ধরে রাখে আরেকহাত দিয়ে খাবার খাইয়ে দেয় আনাবিয়াকে। প্রথম বাইট জোর করে মুখে দিতেই আনাবিয়া সেটা নিচে ফেলে দেয়। ইরান কিছু না বলে আরেক বাইট দেয় সেটাও ফেলে দেয় আনাবিয়া। ইরান বিরক্ত হয়ে বলে,

-এভাবে খাবার ফেলে তুমি আমার কিছুই করছো না বরং নিজের গুনাহ বাড়াচ্ছ। খাবারের অপমান করছো! রাগ জেদ আমার সাথে আমাকে আঘাত করো খাবারকে নয়।

কথা শেষ করে ইরান পুনরায় আনাবিয়ার মুখে খাবার দেয়। এবার আনাবিয়া খাবার ফালায় না। সেটা দেখে স্মিত হাসে ইরান। খাবার চিবুচ্ছে আর ইরানের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। আনাবিয়ার ভঙ্গিমা দেখে শব্দ করে হেসে দেয় ইরান। কোনোরকম হাসতে হাসতে বলে,

-এই শক্তি নিয়ে আমার সাথে লাগতে এসেছো তুমি? আমার এক হাতের বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারছ না তাহলে সম্পূর্ণ আমি থেকে নিজেকে কিভাবে ছাড়াবে ডিয়ার?

-শক্তি থাকলেই নিজেকে বাঘ মনে করা ব্যক্তি হলো দুনিয়ার সবচেয়ে বড় নির্বোধ ব্যক্তি! সুষ্ঠসম্পূর্ণ বুদ্ধি থাকলে ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর মানুষের সাথেও যুদ্ধে বিজয়ী হওয়া যায়।

-ওয়েল। ইউ আর এ মাস্টার মাইন্ডার ডেটস আই অল্সো নো বাট ইউ ডোন্ট নো এবাউট মাই অবিলিটি এন্ড কোয়ালিফিকেশন। ওকে?

__________________

রাতে একজন ভৃত্য এসে আনাবিয়াকে খাবার দিয়ে যায়। এখন আর ইরান আনাবিয়ার হাত, পা বাঁধেনি। কারণ ইরান সিকিউরিটি বাড়িয়ে দিয়েছে। আনাবিয়ার রুমের সামনে দুইজন গার্ডস দাঁড়িয়ে থাকে। প্রত্যেক জালানার নিচে একজন করে গার্ডস। পুরো বাড়ি গার্ডস দিয়ে ঘেরাও করা। এমন্ত অবস্থায় এখান থেকে কোনোভাবেই পালাতে পারবে না আনাবিয়া। তাই সে পরিকল্পনা করেছে ইরানের কাছে এখন ভালো হওয়ার নাটক করবে। কোনোভাবে বাড়ির বাহিরে যেতে পারলেই সে পালিয়ে যাবে এখান থেকে।

রাতে ইরান আর রুমে আসে না এতে ভীষণ খুশি হয় আনাবিয়া। পাগল হয়ে রুমের চারপাশে ফোন খুঁজতে থাকে। হটাৎ তার মনে পরে ফোন তো ভেঙে গিয়েছে! রাগে নিজের চুল মুঠি করে ধরে। বিছানায় বসে নেইল কামড়াচ্ছিল তখনই রুমে একজন অচেনা ভৃত্য প্রবেশ করে। আনাবিয়া তাকে দেখে তেমন প্রতিক্রিয়া করে না। ভৃত্য মেয়েটা রুমের দরজা লাগিয়ে আনাবিয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। আনাবিয়া মাথা তুলে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে,

-কে তুমি? আগে তো এই বাসায় তোমাকে দেখিনি!

-আমি আজই নতুন কাজে এসেছি ম্যাম। অথবা ধরে নিতে পারেন আপনাকে এই বন্দি জীবন থেকে মুক্তি দিতে এসেছি।

আনাবিয়া সরু চোখে মেয়েটার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরোক্ষ করে নেয়। বিছানা থেকে নেমে টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,

-তাই নাকি? বলো কে তুমি?

মেয়েটি ভীত চোখে আনাবিয়ার দিকে তাকায়। জামার ভিতরে লুকানো ফোন বের করে এগিয়ে দেয় আনাবিয়াকে। আনাবিয়া সন্দীহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে চুপচাপ।

-ম্যাম আমাকে ইসরাফ স্যার পাঠিয়েছে। উনি আপনার বিষয় সব জেনে অনেক চিন্তিত। এই ফোনের সাহায্যে আপনি তার সাথে কথা বলতে পারবেন।

-প্রথমত তুমি আমার রুমের পাসওয়ার্ড কিভাবে জানলে? দ্বিতীয়ত উনি আমাকে কেনো সাহায্য করবে? আর যে নিজের রক্ষা করতে পারলো না সে আমাকে কিভাবে রক্ষা করবে?

-আপনার পার্সোনাল একজন ভৃত্য থেকে রুমের পাসওয়ার্ড জেনেছি। আর ম্যাম আপনি স্যারের সাথে কথা বলুন।

-তুমি ইরান শেখকে চেনো? যদি তোমার সত্যি উনি জেনে যায় তাহলে তোমার কী অবস্থা হবে একটুও ভাবতে পেরেছ?

-আমি ইরান স্যারকে তেমন চিনি না কিন্তু আমার ভয় করছে। আমি এবার তাহলে আসি ম্যাম।

মেয়েটা চলে যায়। আনাবিয়া ফোনটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে থাকে। তারপর বাতি নিভিয়ে কম্বলের ভিতরে গিয়ে মেয়েটার দেওয়া নাম্বারে কল দেয়। কয়েক সেকেন্ড রিং হতেই কল রিসিভ করে ওপর জন।

>>>চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here