সে_প্রেমিক_নয় #Mehek_Enayya(লেখিকা) #পর্ব ৪৩

0
327

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ৪৩

শরীরের ওপর ভারী কিছু অনুভব করতেই ঘুম ভেঙে যায় আনাবিয়ার। ইরান ঘুমের মধ্যে শরীরের সম্পূর্ণ ভার আনাবিয়ার ওপরে ছেড়ে দেয়। দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম আনাবিয়ার। ইরানের কাঁধে মৃদু ধাক্কা দিয়ে তাকে জাগানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ইরানের কোনো সাড়াশব্দ নেই। আনাবিয়া কয়েকবার ইরানকে ডেকে চুল ধরে জোরে টান দেয়।
ঘুমন্ত অবস্থায় হটাৎ আক্রমণে ভড়কে যায় ইরান। চোখের পলক খুলে কপাল কুঁচকে আনাবিয়াকে বলে,

-হোয়াট’স ইওর প্রবলেম আনাবিয়া?

-আপনি যে আমাকে মেরে ফেলতে চাচ্ছেন সেটা কিন্তু আমি বুঝেছি! এই এলিফ্যান্টের মতো দেহ নিয়ে আমার ওপরে ঘুমালে আমি কী নিঃশাস নিতে পারি?

নিজের অবস্থান লক্ষ্য করে চটজলদি সরে যায় ইরান। বিছানায় বসে চোখ ডলতে থাকে। আনাবিয়া কোমর ধরে উঠে বসে। বিরক্তিকর দৃষ্টিতে ইরানের দিকে তাকায়।

-ঠিক আছো তুমি? কোথাও পেইন করছে?

-কাম ডাউন আই এম ওকে।

-আচ্ছা রাতে কী হয়েছিল? আমার মাথা এতো ভার ভার লাগছে কেনো?

আনাবিয়া বিছানা থেকে নেমে আয়নার স্মুখীন যেয়ে দাঁড়ায়। চুল ঠিক করতে করতে বলে,

-ভিজে টইটুম্বুর হয়ে বাসায় আসলে জ্বর তো হবেই।

-ওয়েল। তুমি কী আমার ওপর রেগে আছো? গতকালের জন্য আই এম এক্সট্রিমলি সরি আনাবিয়া।

-কিসের জন্য সরি বলছেন? মিথ্যে বলার জন্য? নাকি ইচ্ছে করে আমাকে এতদিন কষ্ট দেওয়ার জন্য?

ইরান গম্ভীর হয়ে যায়। কাবাড খুলে একটা টি-শার্ট নিয়ে পরে। স্বাভাবিক ভাবেই বলে,

-তোমাকে আঘাত করার জন্যে।

ইরানের কথা শুনে ক্ষুন্ন হয় আনাবিয়ার মন। চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। রাগী কণ্ঠে বলে,

-আমি আমার মমের সাথে দেখা করতে চাই।

ইরান নিশ্চুপ। আনাবিয়া চোখ ছোট ছোট করে ইরানের দিকে তাকায়। কঠিন স্বরে বলে,

-আপনি আমাকে ওয়াদা দিয়েছিলেন ইরান শেখ যে আমার কোনো চাওয়া অপূরণ রাখবেন না। এখন কী নিজেই ওয়াদা ভঙ্গ করবেন?

-তৈরি হও। নিজ ওয়াদায় পাক্কা ইরান।

ইরান ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। আনাবিয়া খুশিতে আত্মহারা। আলমিরা খুলে টকটকে লাল রঙের একটি শাড়ী হাতে নেয় আনাবিয়া। এতো বছর পর তার মা তাকে দেখবে একটু সেজেগুঁজে না গেলেই নয়! আনাবিয়ার মা বাঙালি সাজ ভীষণ পছন্দ করত। কিন্তু আনাবিয়ার বড় বোনের বাঙালি মানুষ আর বাঙালি সাজ একটুও পছন্দ ছিল না। আনাবিয়ার ভালো লাগতো বাঙালি সাজ। কিন্তু ছোট বয়সে শাড়ী হ্যান্ডেল করতে পারত না। আনাবিয়ার মনে আছে তার মা তাকে বলেছিল,

-আনা তোমাকে আমি কোনো বাঙালি ছেলের সাথে বিয়ে দেবো। একদম টুকটুকে লাল বাঙালি বউ বানিয়ে রাখবে সে তোমাকে।

আনাবিয়া তখন মার কথা শুনে শুধু হেসেছিল। আয়নার সামনে যেয়ে শাড়ীটা গায়ে মেলে ধরে। খুশিতে চকচক করছে তার মুখশ্রী। আয়নায় নিজেকে দেখে বলে,

-মম তোমার আনা বড় হয়ে গিয়েছে। সে এখন একজন বাঙালির লাল টুকটুকে বউ! খুব জলদি মাদারও হয়ে যাবে তোমার আদরের আনা।

আনাবিয়া ওয়াশরুম থেকে ব্লাউজ আর পেটিকোট পরে রুমে আসে। শাড়ীটা সম্পূর্ণ মেলে বিছানায় রাখে। আয়নার সামনে বসে হালকা মেকআপ করতে। মুখে ফেইস পাউডার বা ক্রিম কিছুই দেয় না। কারণ সে এমনেই অতিরিক্ত ফর্সা তার ওপর এইসব দিলে ফর্সা ভুত দেখা যাবে আনাবিয়ার মতে! তাই চোখে হোয়াইট কাজল, মাসকারা আর চেরি রেড লিপস্টিকের ওপর লিপগ্লোস দিয়ে নেয়। আয়নার সামনে রাখা জুয়েলারির বক্স খুলে চোখ বুলায়। কানে চকচকে সাদা পাথরের সিম্পল একজোড়া ইরাররিং পরে। গলায় লকেট পরে। ছোট নাকফুলটা হাতে নেয় আনাবিয়া। নিস্পলক তাকিয়ে থেকে সেটাও পরে নেয়। সাজগোজ শেষ হলে উঠে দাঁড়ায় আনাবিয়া। শাড়ীটা সুন্দর মতো শরীরে জড়িয়ে নেয়। কুচিগুলো ঠিক করার সময় আনাবিয়ার নিজের হাতের দিকে নজর পরে। সম্পূর্ণ খালি হাত ভালো দেখাচ্ছে না। তাই আনাবিয়া মনের সাথে যুদ্ধ করে ইরানের দেওয়া রিংটা আঙুলে পরে। সবসময়ের মতো চুলগুলো মধ্যে সিঁথি করে খোঁপা করে নেয়। এই স্টাইলটা অনেক বেশি পছন্দের তার। অতঃপর সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে নিজেকে দেখতে থাকে।

আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে হটাৎ আনাবিয়া আয়নায় ইরানের অবয়ন দেখতে পায়। হতবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে পিছনে ফিরে আনাবিয়া। বুকে হাত গুঁজে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বাঁকা হাসছে ইরান। আনাবিয়া নজর সরিয়ে ফেলে। ইরান ভিতরে আসতে আসতে বলে,

-সিরিয়াসলি আমার দেখা তুমিই একমাত্র মেয়ে যে ১৫ মিনিটে তৈরি হয়ে যায়! পা ব্যাথা হয়ে গেলো!

-কে বলেছিল ঐখানে দাঁড়িয়ে থাকতে?

-তোমাকে ডিসটার্ব করতে মন চাইলো না। বাই দা ওয়ে তোমার শাড়ী পরার স্টাইলটা কিন্তু ইউনিক!

-আগের থেকেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আপনি?

-আগে থেকে নাকি জানি না বাট তুমি যখন ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছো তখন থেকেই তোমাকে দেখছি আমি।

দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে রইলো আনাবিয়া। ইরানের ঠাট্টা বুঝতে অসুবিধা হয় না তার। মানে ইরান এতক্ষন তাকে পর্যবেক্ষণ করছিল! লাজে রাঙা হয়ে যায় আনাবিয়ার গালে। ইরান নিজের ড্রেস বের করতে করতে বলে,

-দরজা লাগিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করবে। আমার জায়গায় যদি অন্য কেউ হতো!

– আপনি বেতীত কারো সাহস নেই এই রুমে আসার।

-ঠিক বলেছ। ইউ নো তুমি মেয়েটা আসলেই আজিব!

-কেনো?

-তোমার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে হলে এতক্ষনে আমার ১৪ গোষ্ঠী এক করে ফেলতে। কারণ আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তার সব দেখে ফেলেছি তাই!

-লুকিয়ে দেখার মতো আর কিছু নেই আমার। তাছাড়াও আপনি দেখলেও কী না দেখলেও কী!

ইরান বিস্মিত হয়ে আনাবিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। এতো ইজিলি এই মেয়ে সবকিছু কিভাবে বলে দেয় সেটাই ভাবছে ইরান। আনাবিয়া ইরানের উত্তরের অপেক্ষা না করে বলে,

-চলুন তাহলে?

ইরান জহুরি দৃষ্টিতে আনাবিয়া পা থেকে মাথা পর্যন্ত আপাদমস্তক পরোক্ষ করে নেয়। ঠোঁটে হাত দিয়ে বলে,

-তৈরি তুমি?

-চোখ কী অন্য কাউকে দিয়ে এসেছেন নাকি?

-ব্রেকফাস্ট করেছ?

-না।

-তো যাও গিয়ে ব্রেকফাস্ট করো আমি ততক্ষনে তৈরি হয়ে আসছি।

-আর কী তৈরি হবেন আপনি? ঠিকই তো আছেন।

-শর্ট’স পরে বাহিরে যাই না আমি।

আনাবিয়া মুখ ভেংচি কেটে চলে যেতে নেয়। হটাৎ ইরানের কিছু মনে পরতেই থেমে যেতে বলে আনাবিয়াকে। আনাবিয়া ভ্রু কুঁচকে বলে,

-সমস্যা কী?

-ওয়েট।

ইরান আলমিরা খুলে একটি ছোট ব্যাগ বের করে। ব্যাগ থেকে একটি বক্স বের করে এগিয়ে দেয় আনাবিয়ার কাছে। আনাবিয়া বক্সটা খুলে বলে,

-চেইন! বাট আমি তো লকেট পরা।

-চেইন না স্টুপিড! কোমর বন্ধনী। অনেকদিন আগে তোমার জন্য গিফট হিসেবে এনেছিলাম বাট দেওয়া হয়নি।

-কিভাবে পরে এটা?

-প্রথমে খুলো। চেইনের মতোই কোমরে পরে।

ইরানের কথা মতো কোমর বন্ধনী খুলে হাতে নেয় আনাবিয়া। কোমরে পরার সময় একটু অসুবিধা হয় তবুও ইরানকে পরিয়ে দিতে বলে আর না ইরান এগিয়ে আসে। দুইজনের ইগো আকাশ সমান! পরা শেষ হলে আনাবিয়া দম নেয়। শাড়ী ঠিক করে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। ইরান আনাবিয়ার ব্যবহার দেখে নিজ কপালে চাপর মারে। হাসতে হাসতে বলে,

-একজন পেয়েছিলাম আমি! একটু জিজ্ঞেসও করল না “আমাকে কেমন লাগছে”! কোথায় আমি আরো তারিফের ঝুঁড়ি খুলে বসেছিলাম! এখন একটাই ভয় আমার নিষ্পাপ বেবিটাকেও না আবার নিজের বহুরূপ বানিয়ে দেয়।





অন্যদিকে রাকিয়া চিন্তিত হয়ে ড্রইংরুমের সোফায় বসে আছে। দুইদিন ধরে ইসরাফের কোনো খবর নেই। শেষবার ইসরাফ তাকে বলেছিল বন্ধুদের সাথে ট্যুরে যাচ্ছে সে। কিন্তু এরপর আর একবারও কল দেয়নি। রাকিয়া জানে ইসরাফ তাকে মুখে মুখে মা বললেও মন থেকে মা হিসেবে মেনে নেয় নি। তনুসফা মাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে আসে। পাশে বসে সান্ত্বনা স্বরে বলে,

-আম্মা এতো চিন্তা করো না। ও ওর ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে গিয়েছে এখন ফোন ধরার সময় হয়তো পায় না।

-একবার একটু বললে ওর কী ক্ষতি হয়ে যাবে! আমি যে চিন্তা করছি ইসরাফ বুঝে না?

-আম্মা পর কখনই আপন হয় না।

-তুই একটু ওকে ফোন দে না।

-দিয়েছিলাম নাম্বার বন্ধ আসে।

-ওহ।

-চিন্তা করো না। আনাবিয়া কেমন আছে এখন?

-ভালোই আছে।

-ও এখন এতো অসুস্থ হয় আবার বড় কোনো রোগ হলো নাকি?

-চুপ অশুভ কথা বলিস না। ওহ হ্যাঁ আমি আনাবিয়ার জন্য পুডিং আর ক্ষীর রান্না করতাম। দেখ তোর সাথে কথা বলতে গিয়ে ভুলেই গিয়েছি!

তনুসফা সন্দীহান দৃষ্টিতে রাকিয়ার দিকে তাকায়। শান্ত স্বরে বলে,

-হটাৎ এতো রান্না বান্না কেনো আম্মা?

-এখানে এতো কোথায়! আর আনাবিয়ার মিষ্টি অনেক প্রিয় তাই আমি এইসব রান্না করে বিকালে ওর জন্য নিয়ে যাবো।

-ওহ ভালোই তাহলে।

-হ্যাঁ। রান্না সেরে আসি আমি।

__________________🌸

চলন্ত গাড়িতে বসে আছে আনাবিয়া ও ইরান। ড্রাইভ করছে তাজীব। অধয্য হয়ে হাত মুচড়াচ্ছে আনাবিয়া। আনাবিয়া এক্সসাইটমেন্ট দমিয়ে রাখতে না পেরে ইরানকে জিজ্ঞেস করে,

-আমার বোন কী এখন আরো বড় হয়ে গিয়েছে? আর মম, ডেডি সবাই কী সুস্থ আছে?

-গেলেই তো দেখতে পারবে।

-হ্যাঁ। তারা আমাকে দেখলে হয়তো অনেক খুশি হবে। তাই না?

ইরানের মুখে একরাশ অন্ধকার এসে হানা দেয়। মুখে কিছু না বলে মাথা নারায়। বেশ কিছুক্ষন জার্নি করে একটি ভিলার সামনে গাড়ি থামে। তাজীব আগে বের হয়ে আনাবিয়ার দরজা খুলে দেয়। বাহিরে আসতেই আনাবিয়ার খুশি আরো বেড়ে যায়। ইরান মনে মনে ভীষণ ব্যাথা অনুভব করছে আনাবিয়াকে এতো খুশি দেখে। হয়তো কিছুক্ষন পরই এই হাসিখুশি মুখে হাসি থাকবে না! এটাকে বাড়ি থেকে জঙ্গল বললে বেশি ভালো মানায়। বড় বড় গাছগাছালি দিয়ে ভরা। ভিতরে একটি ভিলা দেখা যাচ্ছে সেটাও গাছের জন্য অস্পষ্ট। আনাবিয়া ইরানের দিকে তাকিয়ে বলে ,

-বাড়ি বানানোর জন্য আর জায়গা পাননি আপনি?

-এটা আমার সিক্রেট প্লেস। আমার আপনজন ছাড়া কেউই এই বাড়ির বিষয় অবগত নয়।

-ভুতিয়া বাড়ি!

-এসো। নিচে দেখেশুনে এসো।

তিনজন ভিতরে প্রবেশ করে। গাছের নিচ দিয়ে হেঁটে বাড়ির সামনে পৌঁছায় তারা। কলিংবেল বাজাতেই একজন ভৃত্য দরজা খুলে দেয়। ইরান আনাবিয়াকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বাড়ি দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় আনাবিয়া।

-আমাকে মমের কাছে নিয়ে চলুন ইরান।

-নিয়ে যাবো তার আগে তোমার নিজেকে শক্ত করতে হবে।

আনাবিয়া ইরানের কথার মানে বুঝতে পারে না। তাই অবুঝের মতো জিজ্ঞেস করে,

-মানে?

-তাঁদের দেখলেই বুঝে যাবে।

ইরান আগে আগে হাঁটতে থাকে পিছু পিছু আনাবিয়াও যায়। একটি রুমে প্রবেশ করে ইরান। আনাবিয়া রুমের ভিতরে পা দিবে হটাৎ করেই তার মন বিচলিত হয়ে পরে। অদ্ভুত অনুভূতি হতে থাকে তার। ইরান উঁচু স্বরে ডাক দেয় আনাবিয়াকে। না চাওয়ার শর্তেও আনাবিয়া রুমের ভিতরে প্রবেশ করে। মোটামুটি সব ফার্নিচারই রুমে রাখা। মধ্যে বড় একটি বেড। সবকিছু ঠিক থাকলেও একজন নার্সকে দেখে কপাল কুঁচকে যায় আনাবিয়ার। মনে কু ডাকছে তার। আরেকটু সামনে যেতেই আনাবিয়া বিছানায় শুয়িত তার মাকে দেখতে পায়। খুশিতে চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরছে তার। আশেপাশের কোনোকিছু খেয়াল না করে আনাবিয়া মায়ের পাশে বসে তার হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নেয়। শব্দ করে কাঁদতে থাকে আনাবিয়া।
আনাবিয়ার কান্নার শব্দ শুনে একসময় তন্নী ফারুকের ঘুম ভেঙে যায়। দ্রুত করে শোয়া থেকে উঠে বসে সে। আনাবিয়া কাঁপাকাঁপা হাতে মায়ের মুখ ছুঁয়ে দেয়। জড়িয়ে ধরতে নেবে এমন সময় তন্নী ফারুক রেগে ধাক্কা দেয় আনাবিয়াকে। ইরান সামলে নেয় আনাবিয়াকে নাহলে বিছানা থেকে নিচে পরে যেত। আনাবিয়ার মা চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে। একদম বাচ্চাদের মতো কান্না করে আনাবিয়াকে দূরে সরে যেতে বলে।

মায়ের এহেন ব্যবহার দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আনাবিয়া। ইরান এক হাত দিয়ে ধরে রেখেছে আনাবিয়াকে। প্রশ্নবোধক নজরে ইরানের পানে তাকায় আনাবিয়া। ইরান কিছু বলে না। আনাবিয়াকে ছেড়ে হাসি মুখে এগিয়ে যায় আনাবিয়ার মায়ের কাছে।

-বিউটিফুল কান্না করছেন কেনো আপনি? ভালো মেয়েরা কান্না করে না।

-ও কে? ওকে বলো এখান থেকে চলে যেতে।

-ও আমাদের আরেকটা বন্ধু। আর বন্ধুদের সাথে এরকম আচরণ করে না।

-ও বন্ধু?

-হ্যাঁ বন্ধু। ওর সাথে ভালোভাবে কথা বললে ও আপনাকে চকলেট দিবে।

-সত্যি চচচকলেট দিবে?

-হুমমম।

ইরানের কথা শুনে খুশি হয়ে হাতে তালি দেয় আনাবিয়া মা। আনাবিয়া শরীরের ভর ছেড়ে দিয়ে মেঝেতে বসে পরে। অনবরত চোখ দিয়ে নোনা পানি গড়িয়ে পরছে তার। নার্স আনাবিয়ার মা কে চকলেট দিয়ে শান্ত করে রাখে। ইরান আনাবিয়ার পাশে বসে শান্ত স্বরে বলে,

-মানসিক ভারসাম্যহীন উনি। কাউকে চেনে না এমন কী কারো কথা মনেও নেই তার। এতো চিকিৎসা করিয়েও সুস্থ করতে পারিনি। কানাডার ডাক্তার বলেছিল অপারেশন করলে আরো খারাপ অবস্থা হতে পারে সেই ভয়ে অপারেশন করানো হয়নি।

>>>>চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here