শেষটা_সুন্দর(সিজন-২) #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৩১।

0
419

#শেষটা_সুন্দর(সিজন-২)
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৩১।

বাগদানের পর্ব চুকতেই মিষ্টি খাওয়ার রোল পড়ল। এ ওকে তো সে তাকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে। লীনাও এসে সারাজের মুখের সামনে মিষ্টি ধরল। সারাজ প্রসন্ন হেসে গ্রহণ করল সেই মিষ্টি। আরেকটা মিষ্টি তখন লীনা তুলল পুতুলের মুখের সামনে। পুতুল অল্প একটু খেল। বাকিটা খাইয়ে দিল লীনাকে।

মিষ্টি খাওয়া পর সবাই টেবিলে এসে বসেছে, দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য। সবাই একসাথেই খাওয়ায় বসেছে। পুতুলকে এবারও বসানো হয়েছে সারাজের পার্শ্ব আসনে। তখনের পর থেকেই মারাত্মক রকমের লজ্জায় মুখিয়ে আছে পুতুল। অথচ, যে অভদ্র লোক কাজটা ঘটিয়েছে সে অদ্ভুতভাবে নির্লিপ্ত। এমন একটা ব্যবহার, যেন এটা কোনো ব্যাপারই না। অথচ পুতুল এই ব্যাপার নিয়েই এত ব্রীড়ায় সংকুচিত হয়ে মরছে।

_________

নিচে সবাই বিয়ে নিয়ে বিশদ আলোচনায় বসেছে। দাওয়াত, আপ্যায়ন, মেহমান, খাবার দাবার সবকিছু নিয়েই তাদের এই আলোচনা। লীনা কিছুক্ষণ আগেই বেরিয়েছে। পুতুল তাকে এত করে বলেছিল, “থাক, তোকে নিয়ে শপিং-এ যাব”। কিন্তু, সেই মেয়ে জানাল তার বাসা থেকে ক্রমাগত কল আসছে; এখন না গেলেই নয়।

রুমে বর্তমানে একাই বসে আছে পুতুল। গায়ে জড়ানো এখনও আকাশী শাড়ি। তার মনোযোগী দৃষ্টি এখন ঐ অনামিকা আঙ্গুলের অঙ্গরীয়কের উপর। আংটি’টা কী অবলীলায় চকমকিয়ে যাচ্ছে। কী দারুণ, এর সৌন্দর্য। পুতুল দেখছে আর মুগ্ধ হচ্ছে।

এই সময় সারাজ এর আগমন ঘটল তার কক্ষে। হালকা গলা ঝেরে সারাজ বলল,

‘আসব?’

পুতুল ঘুরে তাকাল। ভ্রু নাচিয়ে বলল,

‘আমার রুমে আসার আগে তুমি অনুমতি নিচ্ছো, স্ট্রেঞ্জ!’

ভেতরে প্রবেশ করে সারাজ। সোজা গিয়ে বসে পুতুলের পাশে। একদম ঘা ঘেঁষে। ভ্রু কুঁচকাল পুতুল। জিজ্ঞেস করল,

‘কী হলো?’

সারাজ ঘাড় ঘুরিয়ে তার পানে চায়। রগড় সুরে বলে,

‘আপাতত কিছু হয়নি। তবে বিয়ের পর হবে।’

পুতুল সরু চোখে তাকায়। মৃদু আওয়াজে বলে,

‘আজকাল তুমি ভীষণ অভদ্র হয়ে যাচ্ছো, সারাজ ভাই।’

সারাজের কপালে ভাঁজ পড়ল। গম্ভীর গলায় শুধাল,

‘আমি তোর সাথে কোনোপ্রকার অভদ্রতা করেছি?’

‘অবশ্যই করেছো।’

বিস্ফোরিত চোখে তাকায় সারাজ। অবিশ্বাস্য সুরে বলে,

‘আমি তোর সাথে অভদ্রতা করেছি? সিরিয়াসলি, পুতুল?’

সারাজের বিচলিত চোখ মুখ দেখে ঠোঁট গুঁজে হাসে পুতুল। তারপর বলে,

‘আজকে সবার সামনে আমার হাতে চুমু খেলে কেন? এটা কি অভদ্রতার কাতারে পড়ে না?’

সারাজ নিশ্বাস ছাড়ে। তারপর বাঁকা হেসে বলে,

‘আচ্ছা, এই ব্যাপার? সবার সামনে চুমু খেয়েছি বলে সমস্যা? আগে বলবি-না, তোর লুকিয়ে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।’

পুতুলের চোয়াল ঝুলে। অবাক কন্ঠে বলে,

‘আমি আবার এই কথা কখন বললাম?’

‘এই যে, মাত্র বললি।’

‘আমি…’

“আমি’টা” আমিতেই আটকে রইল। বাকিটা শেষ করার আগেই সারাজের ভয়ানক কাজে স্তব্ধ হয়ে গেল সে। গাল হাত দিয়ে ড্যাবড্যাব করে চাইল সারাজের মুখপানে। সারাজের ঠোঁট কোণে চমৎকার হাসি, যেন বিশ্বজয় করেছে সে। পুতুলকে সে মুখ খোলার সুযোগ না দিয়েই বলে উঠল,

‘শাড়ি পরিস না, পুতুল। শাড়িতে তোকে বিদঘুটে লাগে।’

বলেই সে রুম ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল। পুতুল হতবম্ব, হতবাক। গালে হাত দিয়ে এখনও এক ভাবে চেয়ে আছে। কী অদ্ভুত লোক! প্রথমে চুমু খেয়ে পরে বলে আবার শাড়িতে বিদঘুটে লাগে। শাড়িতে বিদঘুটে লাগলে চুমু খাবে কেন, আশ্চর্য?

______

সারাজ পাঞ্জাবী গায়েই বেরিয়েছে। তবে পুতুল শাড়ি ছেড়ে গায়ে জড়িয়েছে একটা সুতি কামিজ। গাড়ির পেছনে মেহুল আর রিতা। সামনে ড্রাইভিং সিটে সারাজ, পাশে পুতুল। রাবীর আর সাদরাজ আজও এই সেই বাহানা দিয়ে উধাও। মেয়ে মানুষের সাথে শপিং এ বেরিয়ে মাথা খারাপ করতে চায় না তারা। তাই তো নিঁখুত অভিনয় চালিয়ে কেটে পড়েছে।

লাল রং’টা সারাজের বরাবরই অপছন্দ। অথচ আজ নিজেই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সেই রং দেখছে। পুতুল ভেবেছিল, বিয়ের শাড়ি কিনতে আসলে সারাজের সাথে আরেক দফা ঝগড়া হবে। কারণ হিসেবে শাড়ির লাল রংটাই ভেবেছিল সে। কিন্তু এখানে আসার পর তো সব উল্টো হচ্ছে। সারাজ নিজে থেকেই লাল রং এর শাড়ি দেখছে।

একটা লাল টকটকে বেনারসী হাতে তুলল সারাজ। হুট করেই এই শাড়িটা যেন চোখে আটকেছে। সে পাশে পুতুলের দিকে চেয়ে বলল,

‘দেখতো এটা কেমন লাগে?’

শাড়িটা দেখে খুশি হলো পুতুল। চমৎকার লেগেছে তার। সাথে সাথেই বলল,

‘খুব সুন্দর।’

‘নিব এটা?’

সারাজ ফের প্রশ্ন করে। পুতুল মাথা কাঁত করে সম্মতি জানাল। সারাজ এবার দুই মায়ের দিকে চেয়ে বলল,

‘তোমাদের পছন্দ হয়েছে?’

মেহুল হেসে বলল,

‘হ্যাঁ হ্যাঁ, তোদের পছন্দই আমাদের পছন্দ।’

সবার সম্মতি পেয়ে সারাজ প্রসন্ন চিত্তে শাড়িটা দোকানদারকে দিয়ে বলল,

‘এটা প্যাক করে দিন।’

শাড়ি কিনে পুতুল বেজায় খুশি। শাড়ি একেবারে মনের মতো হয়েছে তার। তাই সে সারাজের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ধন্যবাদ।’

সারাজ তখন কাউন্টারে টাকা পে করছিল। পুতুলের দিকে চেয়ে বলল,

‘কীসের জন্য?’

পুতুল প্রাণবন্ত হেসে বলল,

‘এই যে এত সুন্দর একটা শাড়ি কিনে দেওয়ার জন্য।’

সারাজ মৃদু হেসে বলল,

‘কী করব বল, পছন্দ মতো না কিনে দিলে তো বিয়ের দিনও মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবি। তখন তো আবার আমার বিয়ের ছবিগুলো খারাপ আসবে, সেই চিন্তা করেই দিলাম আরকি।’

পুতুল দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে,

‘সে তুমি মুখে যা-ই বলো না কেন, আমি কিন্তু ঠিকই সব বুঝি।’

সারাজ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

‘কী বুঝিস?’

‘তোমার সেসব না জানলেও চলবে। এখন শাড়ি নিয়ে চলো তাড়াতাড়ি। একটা শাড়ি কিনলেই তো আর হবে না। তোমাকে পুরো ফকির বানিয়ে তবে আমি যাব। ওহ মনে পড়েছে, একটা লেহেঙ্গাও নিতে হবে লীনার জন্য। সেটা অবশ্য তোমার টাকায় নিব না। আমার টাকাতেই নিব, আর বাকি লাগলে মা তো আছেই।’

‘লীনার জন্য তুই কেন লেহেঙ্গা নিবি?’

‘আমার বান্ধবী চেয়েছে, তাই।’

সারাজ শাড়ির ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলল,

‘ঠিক আছে, চল। এইদিকে বেশি লেইট করলে আবার দোকান সব বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’

________

চার জন মানুষের হাত হয়তো এক্ষুনি ছিড়ে পড়বে। না, আঙ্গুলের আর এইটুকু অংশও বাকি নেই যে যেখানে আরেকটা ব্যাগের একটুখানি জায়গা হবে। সবাই ক্লান্ত। পা চলছে না কারোর’ই। পুতুল এক দোকানের টুলে বসে মন্দীভূত সুরে বলল,

‘আমি আর হাঁটতে পারব না, মা। আমার পা কোমর সব ব্যথা করছে।’

তার কথা শুনে নাক মুখ কুঁচকায় সারাজ। ক্ষিপ্ত সুরে বলে,

‘আমাদের যেন খুব মজা লাগছে। নিজে হাঁটতে না পারলে আমাদের এত হাঁটাচ্ছিস কেন? এক দোকান থেকে সব কেনা যায় না। পুরো শপিং মল ঘুরতে ঘুরতে আমার এখন মাথা ঘুরাচ্ছে। উফ, বিয়ের শপিং এত ঝামেলার জানলে বিয়েই করতাম না।’

সারাজের কথা শুনে মেহুর রিতা একজন অন্যজনের দিকে চেয়ে হাসে। পুতুল তেতে উঠে বলে,

‘করো না। এখনও তো সময় আছে, না করে দাও।’

সারাজ ব্যাঙ্গাত্মক সুরে বলে উঠে,

‘হ্যাঁ, আমি এখন বিয়েতে না করি আর আমার এতগুলো টাকার কেনাকাটা সব জলে যাক; এটাই তো চাস তুই?’

‘আহা, তোরা ঝগড়া বন্ধ করবি? সব তো কেনাকাটা শেষ, চল তবে এখন বাড়ি ফিরে যাই।’

মেহুলের কথা শুনে পুতুল কাঁদো কাঁদো মুখে বলল,

‘কী করে শেষ হলো, মা? কাল আমার মেহেদী, অথচ তোমরা কেউ মেহেদীই কিনলে না। এখন তো মেহেদীর কোনো দোকানও খোলা নেই।’

‘ঠিক আছে, কাল সকালে কেনা যাবে তো। চল, উঠ এবার।’

পুতুল ঝিমিয়ে উঠে দাঁড়াল। সারাজের কাছে গিয়ে বলল,

‘এই ব্যাগগুলো ধরো না, আমি আর পারছি না।’

সারাজ ভ্রু কুটি করে চাইল। বলল,

‘আমার কি দুই তিনটা হাত এক্সট্রা আছে? দেখছিস, আমার হাতের গুলোই জায়গা হচ্ছে না, আবার উনি আসছে উনার গুলোও ধরিয়ে দিতে। পারব না আমি।’

পুতুল গাল ফুলিয়ে ভেংচি কাটল। বলল,

‘এখন ধরছ না তো কী হয়েছে। সারাজীবন তোমাকে দিয়েই সব বোঝা টানাব। দেখে নিও, হু।’

বলে পুতুল সামনে এগুতেই সারাজ তার হাতের ব্যাগগুলো টেনে ধরে। পুতুল ফিরতেই বলে,

‘দে আমার কাছে। এগুলোর ভারে আবার পড়ে গিয়ে আহত টাহত হলে অযথা আমার বিয়েটা ক্যান্সেল হবে। তার থেকে বরং আমিই কষ্ট করি।’

পুতুল খুশি হয়ে নিজের হাতে একটা ব্যাগ রেখে বাকি সবগুলো ব্যাগ সারাজের হাতে দিয়ে দেয়। সারাজ অসহায় সুরে বলল,

‘ঐ একটা করে আর রাখলি কেন? এটাও দিয়ে দে।’

পুতুল হেসে বলে,

‘না না, কী বলো। সব তোমাকে দিয়ে দিলে আমার হাত একদম খালি হয়ে যাবে না? তোমাদের সবার হাতে ব্যাগ আর আমার হাত খালি, এটা কেমন দেখায় না; থাক এটা আমার হাতে।’

বলেই সে হেলে দুলে সামনের দিকে এগুলো। আর পেছন পেছন সারাজ এগিয়ে ভাবতে লাগল,

‘বিয়ের পর এই মেয়ে নির্ঘাত তাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে।’

চলবে….

(কালকে গল্প দিতে না পারায় দুঃখিত। তবে পাঠকমহল, আপনাদের রেসপন্স কমে যাচ্ছে কেন? ভালো লাগছে না আর?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here