শেষটা_সুন্দর(সিজন-২) #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৪৫।

0
570

#শেষটা_সুন্দর(সিজন-২)
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৪৫।

পুতুল এক কদম এগিয়ে এল। ঘন পল্লবে বেষ্টিত আঁখি যুগল পরপর ঝাপটে বলল,

‘তুমি কি কোনো কারণে রেগে আছো, সারাজ?’

‘এখানে আসার আগে আমাকে বলে আসিসনি কেন?’

‘মামনিকে বলেছিলাম তো।’

‘আমাকে বলিসনি কেন?’

পুতুল চোখ সরিয়ে অন্যদিকে চেয়ে বলল,

‘তুমি ব্যস্ত ছিলে, তাই।’

‘আমি ব্যস্ত ছিলাম বলে, নাকি কাল তোর কথা শুনেনি বলে রাগ দেখিয়ে চলে এসেছিস; কোনটা?’

‘না, রাগ দেখাব কেন? আর এটা আমারও বাড়ি, এখানে আসতে কোনো কারণ লাগবে নাকি?’

‘না, সেটা লাগবে না। তবে আসার আগে আমাকে বলে আসবি। আর আজ বলে আসিসনি বলে আমি বর্তমানে ভীষণ রেগে আছি। এই রাগ কমাতে হলে পরপর তিনটা চুমু খাবি। চুমু ছাড়া রাগ কমবে না।’

পুতুল নাক মুখ কুঁচকে বলল,

‘দরকার নেই তোমার রাগ কমার। তুমি থাকো তোমার রাগ নিয়ে।’

বলেই পুতুল সেখান থেকে চলে যেতে উদ্যত হয়। সারাজ ডেকে উঠে বলে,

‘ভেবে বলছিস তো? এখন রাগ কমাতে চাইলে তিনটা চুমুতেই হয়ে যাবে, পরে কিন্তু চুমুর সংখ্যা আরো বাড়বে পুতুল। তাই যা করার ভেবে চিন্তে কর।’

ফের ঘুরে চাইল পুতুল। ক্ষিপ্ত আওয়াজে বলল,

‘তোমার মতো অসভ্য মানুষ আমি আর দুটো দেখিনি।’

হাসে সারাজ। রগড় সুরে বলে উঠে,

‘রুমে যাবি? নাকি এখানেই পারবি?’

পুতুল কোমরে দুই হাত ঠেকিয়ে গর্জে উঠে বলে,

‘উফ, বাজে বকা বন্ধ করো। আমার মাথায় এমনিতেই অনেক টেনশন। তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে।’

সোফায় গা এলিয়ে দিল সারাজ। ভাব নিয়ে বলল,

‘আগে চুমু, তারপর বাকি সব।’

পুতুল দাঁতে দাঁত পিষে বলল,

‘চুমু খাওয়ার ব্যারাম ধরেছে নাকি তোমার? রাতদিন চব্বিশ ঘন্টা কেবল চুমু চুমু করো কেন?’

‘তুই কি থাপ্পড় খেতে চাস, পুতুল? এমনিতেই অফিস করে বাসায় ফিরে তোকে না পেয়ে মাথা গরম। এখন আবার এসব আজাইরা কথা বলে আমার মাথা আরো গরম করছিস। কী সমস্যা তোর? কথা কম বলে কাজের কাজ কিছু কর। এদিকে আয়, মা রান্নাঘরে আর বাবা উপরে। এখনই মোক্ষম সময়। জলদি আয়।’

পুতুল মাথা চাপড়ে বলল,

‘তোমার জ্বালায় আমি মরি না কেন?’

সারাজ দুঃখি দুঃখি কন্ঠে বলল,

‘হায় হায়! এখনই মরমি কেন? এখনও আরো কতকি করার বাকি; বাচ্চা-কাচ্চা হবে, বাচ্চা-কাচ্চার বিয়ে হবে, নাতিপতি হবে, আমরা নানা নানু, দাদা দাদু হব, তারপরই না মরবি। এখনই মরে গেলে আমার এত বড়ো স্বপ্ন পূরণ হবে কী করে, বলতো?’

পুতুল বিরক্ত গলায় বলল,

‘আরেকটা বিয়ে করে নিও।’

সারাজ ফিচেল হেসে বলল,

‘ভালো আইডিয়া দিয়েছিস। তোর চেনা পরিচিত কেউ আছে নাকি? থাকলে আগে থেকেই তাকে বলে রাখিস যেন, তুই মরলে আমাকে আর কষ্ট করে বউ খুঁজতে না হয়।’

পুতুল এগিয়ে এসে সারাজের পাশেই স্থান নিল। হেসে হেসে বলল,

‘তাই না? বিয়ে করার খুব শখ তোমার? তবে আমি মরলে কেন? এখনই বিয়ে করো। ইসলামে চার বিয়ে জায়েজ। যাও, বিয়ে করে বউ নিয়ে এসো; আমার কোনো আপত্তি নেই।’

কথাখানা সমাপ্ত করেই দাঁতে দাঁত খিঁচে বসল সে। সারাজ যেন এই সুযোগই খুঁজছিল। অকস্মাৎ সে কোমর টেনে নিজের অতি নিকটস্থ করল পুতুলকে। পুতুল আঁতকে উঠে বলল,

‘এই এই, মা চলে আসবেন; ছাড়ো।’

সারাজ ছাড়ল না। উল্টো হাতের বাঁধন আরো দৃঢ় করল। এগিয়ে গেল পুতুলের দিকে। পুতুলের মোচড়ামুচড়ি তীব্র হলো। সারাজও তাই পাল্লা দিয়ে বাড়াল তার স্পর্শের গভীরতা। পুতুল ততক্ষণাৎ সারাজের দুহাত চেপে ধরল। ক্ষিপ্ত সুরে বলল,

‘পাগল হয়েছ?’

ক্রূর হাসে সে। বলে,

‘ছাড়া পেতে চাইলে এক্ষুনি চুমু খা।’

পুতুল ফুঁস করে নিশ্বাস ফেলল। বলল,

‘মা চলে আসবেন।’

‘আসবেন না।’

পুতুল সতর্ক দৃষ্টিতে একবার চারদিক পরখ করে নিল। তারপর একটু এগিয়ে গেল সারাজের দিকে। সারাজের চোখের দৃষ্টি এলোমেলো। সহসা সে ডান গালটা এগিয়ে দিল পুতুলের পানে। পুতুল সলজ্জা সমেত এক গাঢ় চুম্বন আঁকল সারাজের কপোলে। হাসল সারাজ। এবার বাম গালটাও এগিয়ে দিল। পুতুল পুনরায় ঠোঁট বসাল সেই স্থানে। আই-ঢাঁই করে বলল,

‘এবার ছাড়ো।’

‘আরো একটা চুমু বাকি।’

এই বলেই এবার সে তার ওষ্ঠযুগল এগিয়ে দিল তার দিকে। পুতুল দু হাত দিয়ে সহসা সারাজের বুকে ধাক্কা দিয়ে বলল,

‘একদম না। আমি তোমার মতো নির্লজ্জ না, সারাজ।’

সারাজ হেসে ফেলল। বলল,

‘ঠিক আছে। এটা তবে তোলা থাক, রুমে গিয়েই দিস।’

হাঁফ ছেড়ে যেন বাঁচল পুতুল। চট করে উঠে দাঁড়াল। একটু সময় দাঁড়িয়ে কিঞ্চিৎ দূরত্ব রেখে ফের বসল। অতঃপর সারাজের দিকে চেয়ে ইতস্তত সুরে বলল,

‘একটা কথা বলার ছিল?’

মেহুল নাস্তা নিয়ে এল সেই সময়। টি টেবিলে নাস্তা রেখে বলল,

‘তোরা নাস্তা খা, আর কথা বল। আমি উপরে আছি।’

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাল দুজন। মেহুল সে জায়গা ছেড়ে প্রস্থান ঘটাতেই সারাজ বলল,

‘বল, কী কথা?’

পুতুল মনে মনে ভেবে সমস্ত বাক্য পরপর সাজিয়ে সারাজকে বলতে আরম্ভ করল। অতি মনোযোগের সহিত সব কথা শুনে সারাজ বলল,

‘তোর গানের ব্যাপারে আমার কোনো বাঁধা নেই, পুতুল। এই ক্ষেত্রে তুই একদম স্বাধীন।’

খুশিতে চোখ জোড়া জ্বলজ্বল করে উঠল পুতুলের। আপ্লুত সুরে বলল,

‘সত্যি?’

‘হ্যাঁ।’

পুতুলের বুক চিরে স্বস্তির নিঃশ্বাস নির্গত হলো। আবার একপল ভেবে চিন্তিত সুরে বলল,

‘তবে মামনি রাজি হবেন তো?’

সারাজ চায়ের কাপে চুমুক বসিয়ে বলল,

‘কেন রাজি হবেন না? অবশ্যই হবেন। আর না হলে আমি আছি না?’

আশ্বস্ত হলো পুতুলের বক্ষঃস্থল। সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে এতক্ষণ তাদের সব কথাই শুনছিল মেহুল। সারাজের কথা শুনে চিত্তপটে প্রশান্তির জোয়ার বইল। তার বেলায় সে তার স্বামীর একচ্ছত্র সমর্থন না পেলেও, তার মেয়ে পেয়েছে। আজ মনে হচ্ছে, তার মেয়ে তার থেকেও ভাগ্যবতী। আর সে জানে, রিতা একজন বান্ধবীর চেয়েও একজন শাশুড়ি হিসেবে অধিক চমৎকার; সে কখনোই পুতুলের গলায় শিকল পরাবে না।

_______

রাতের খাবার খেয়েই পুতুলকে নিয়ে সারাজ বেরিয়ে পড়ে। মেহুল পুতুলকে এক রাতের জন্য রাখতে চাইলেও রিতার ক্রমাগত ফোনের জ্বালায় রাখতে পারেনি। এতদিন পর পুতুল বাড়িতে ফিরেছে, তাই সে কোনোভাবেই এখন পুতুলকে ছাড়া থাকবে না। মায়ের বাসায় পড়ে থাকবে, আগে শাশুড়ির মন পুষুক। এই নিয়ে দুই বান্ধবী একদফা ঝগড়াও করে ফেলেছে। পুতুল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই ঝগড়া দেখেছে আর হেসেছে, তার দুই মা কেমন অবুঝের মতো তাকে নিয়ে ঝগড়া করছেন। আজ মনে হচ্ছে, ভাগ্যিস, সেদিন সেই মহিলা তাকে হাসপাতালে ফেলে গিয়েছিল; নয়তো এমন একটা পরিবার কোথায় পেত সে?

________

বাড়িতে পৌঁছেই সর্বপ্রথম রিতার রুমে গেল পুতুল। পুতুলকে দেখেই খুশিতে মজে উঠল রিতা। হেসে বলল,

‘ভাগ্যিস, ঐ অসভ্য মহিলাটা তোকে ছেড়েছে। নাহলে আজ একটা কেলেঙ্কারি বাঁধিয়ে দিতাম।’

পুতুল ঠোঁট চেপে হেসে বলে,

‘সেই অসভ্য মহিলাটা কিন্তু তোমার বেয়ান লাগে, মামনি।’

রিতা বলে উঠে,

‘আগে বান্ধবী, তারপর সব। এখন বল, তোর মা তখন কী কথা বলতে চাইছিল? ফোনে তো পুরোটা বলেওনি, বলেছে তোর থেকে শোনার জন্য। কী কথা, বলতো?’

পুতুল কিঞ্চিৎ হেসে বলে,

‘একটা জরুরি কথা, মামনি। বলব?’

‘হ্যাঁ, বল না।’

সাদরাজও আছে সেই রুমে। পুতুল ভাবল, এটাই ভালো সময়। দুজনকে একসাথেই উপলব্ধি করানো যাবে ব্যাপারটা। তাই আর সময় না নিয়ে পুতুল সবটা খুলে বলল। সুন্দর মতো গুছিয়ে বলল সবটা। সব শুনে রিতা চোখ মুখ কুঁচকে বলল,

….

চলবে…..

(গল্প কিন্তু শেষের দিকে)

ছবি:রত্নাবু❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here