#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব ২০
এক দুই ফোটা বৃষ্টি পড়ছে। আকাশ চমকাচ্ছে। কিছুক্ষন পর পরই অন্ধকার আকাশে আলো জ্বলে উঠছে। অসহায় ভঙ্গিতে শাড়ীর নিচের অংশ ধরে দাঁড়িয়ে আছে বিদেশীনি। ধবধবে সাদা পেট, গলা দৃশ্যমান। আনাবিয়ার অবশ্য সেদিকে মাথা ব্যাথা নেই। তার দুঃখ এতো কষ্ট করে শাড়ী পরলো অথচ ইরানের ভালোভাবে দেখার আগেই খুলে গেলো। ইরান বৃষ্টি দেখে নিজেই এগিয়ে যায় আনাবিয়ার কাছে। নিচে পরে থাকা শাড়ী এক হাতে তুলে নেয়। আরেক হাত দিয়ে আনাবিয়ার হাত ধরে ঘরের ভিতরে নিয়ে যায়। এটাকে ঘর বলা যায় আবার যায়ও না। কেমন চারপাশে বড় বড় গাছ একদম জঙ্গলের মতো। তার ওপর হয়তো প্লাস্টিক তারপর জর্জেট সাদা কাপড় দিয়ে সাজিয়েছে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো আনাবিয়া। মুড নষ্ট হয়ে গিয়েছে তার। ইরান বিষয়টা বুঝে আনাবিয়ার স্মুখীন এসে দাঁড়ায়। থুতনি ধরে মাথা ওপরে তুলে আনাবিয়ার।
-কী হয়েছে? এইটুকু বিষয়ে কারো মন খারাপ হয়! শাড়ীই তো আবার পড়তে পারবে সমস্যা নেই।
-আপনাকে ভালোভাবে দেখাতে পারিনি।
-দেখেছি আমি। এখনও দেখছি।
আনাবিয়া এবার মাথা তুলে আশেপাশে তাকায়। চারোপাশে মোম জ্বলছে। যেখানে তারা দাঁড়িয়েছে সেখানে কাঠ। আরেকটু ভিতরে গোল বিছানার মতো পাতা। পাশেই একটা টি টেবিল। দুটো চেয়ার। এক কিনারে সোফা। তাঁজা গোলাপ আর জেসমিন ফুল দিয়ে সাজানো পুরো ঘরটা। বিছানায়ও ফুল দিয়ে কিছু একটা লেখা। দূরে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে আনাবিয়া সেটা স্পষ্ট ভাবে পড়তে পারল না। আনাবিয়া সরু চোখে ইরানের দিকে তাকিয়ে বলে,
-কী এইসব? আর কোথায় আমরা?
-কক্সবাজার চেনো?
-নাম শুনেছি বাট আসা হয় নাই। এটাই কী কক্সবাজার?
-ইয়েস।
-হঠাৎ এখানে নিয়ে আসা? এতো ডেকোরেশন? কারণ কী হুম?
-সারপ্রাইস পছন্দ হয়েছে?
-হ্যাঁ অনেক বেশি। খুব সুন্দর করে সাজানো।
-এটা একটা রিসোর্ট। নিউলি ম্যারেড ক্যাপলরা এখানে আসে।
-ওওও। বাট বৃষ্টি হলে তো ভিজে যাবে।
-বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। সিস্টেম করা ভিতরে পানি আসবে না।
-তাহলে তো ভালোই।
আনাবিয়া শাড়ী রেখেই সামনে এগিয়ে যায়। ইরান হাতের শাড়ীর দিকে তাকিয়ে আছে। আনাবিয়ার দিকে তাকানোর সাহস হচ্ছে না তার। এই একটা জায়গায়ই সকল পুরুষজাত দুর্বল। আনাবিয়া জিন্স পেন্ট আর ব্লাউজ পরে শান্তিতে পুরো ঘর ঘুরে ঘুরে দেখছে। ইরান শান্ত কণ্ঠে বলে,
-আনাবিয়া শাড়ী পরে নেও।
-আমি পড়তে পারি না।
-এসো আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।
আশ্চর্য হয়ে আনাবিয়া ইরানের দিকে তাকায়। চমকিত কণ্ঠে বলে,
-আপনিও শাড়ী পড়াতে পারেন! ওয়াও!
-পারি না। তবে পেঁচিয়ে ঘুচিয়ে পড়াতে পারব।
-পরিয়ে দিন।
ইরান শাড়ী সম্পূর্ণ মেলে হাতে নেয়। আনাবিয়ার পেতে হাত দিয়ে প্রথমে এক অংশ গুঁজে দেয়। এতক্ষন স্বাভাবিক থাকলেও এখন আনাবিয়া ঢোক গিলে। পর পর কয়েকবার পলক ফেলে। দু হাত মুঠোয় করে খিচে দাঁড়িয়ে রইলো। ইরান উল্টোপাল্টা চিন্তা বাদ দিয়ে হালকা কুচি দিয়ে পেঁচিয়ে শাড়ী পরিয়ে দেয় আনাবিয়াকে। শাড়ী পড়ানো হলে সম্পূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে আনাবিয়াকে। আনাবিয়া হাঁসফাঁস করছে। ইরানের অধরের কিনারে হাসির রেখা দেখা যায়। মুগ্ধ হয়ে বলে,
-অপরূপ! আকাশের চাঁদও ফিকা পরে যাবে আমার চাঁদের সামনে।
-তারিফ করলেন না কি?
-জি। কালোতে অনেক বেশি আবেদনময়ী লাগছে আপনাকে।
-আবেদনময়ী মানে?
-কিছু না। হ্যাপি ওয়ান মান্থ এনিভার্সারি ডিয়ার।
-ও এম জি! ওয়ান মান্থ হয়ে গেলো! এর জন্যই সারপ্রাইস?
-নোপ্।
-তাহলে?
-এসো।
ইরান আনাবিয়ার হাত ধরে সামনে নিয়ে যায়। পাতানো বিছানার সামনে নিয়ে দাঁড় করায়। আনাবিয়ার নজর পরে বিছানার লেখার ওপর। “মাই ডিয়ার ওয়াইফি আই এম ফিল ইন লাভ উইথ ইউ”। গোলাপের পাঁপড়ি দিয়ে অনেক বেশি সুন্দর করে লেখা উক্ত উক্তিটি। আনাবিয়া লাজে রাঙা হয়ে হাসি দেয়। ইরান পকেট থেকে কিছু একটা বের করে হাটু ঘেড়ে নিচে বসে পরে। আনাবিয়া আকস্মিক হয়ে তাকিয়ে রইলো। ইরানের চোখ মুখ চকচক করছে। মোমের হলুদ আলোতে আনাবিয়ার কাছে ইরানের চেহারা সুদর্শন লাগলো। চাপ দাঁড়ি ওয়ালা শ্যাম বর্ণের পুরুষটিকে মনে ধরেছে তারও। এখন মুখ ফুটিয়ে বলতে পারলেই হলো।
ইরানের ডান হাতে একটি রিং। পাথর মুক্তার মতো চকচক করছে। ইরান পলক না ফেলে আনাবিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
-যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছি সেদিন থেকেই তোমার প্রতি অন্যরকম ফিলিংস জন্ম নেয় আমার মনে। ধীরে ধীরে সময় অতিবাহিত হয় তোমার প্রতি প্রণয়ও গভীর থেকে গভীররত্ব হয়। আমি এক সময় উপলম্বীত করতে পারি অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়। অনেক বেশি। তোমার প্রতি জেলাসি অনেক বেশি আমার। একটা অন্যরকম পসিসিভনেস তোমার প্রতি আমার। সকল কথার এক কথা আই লাভ ইউ আনাবিয়া সাবরিন। আমি চাই অন্যদের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে। তুমি আমি আমাদের সুখের সংসার।
আনাবিয়া সবটা শুনলো মনোযোগ দিয়ে। এখন কী বলবে? কী বলা উচিত তার? ভাবতে ভাবতে কিছুই মাথায় আসলো না আনাবিয়ার। ইরান পুনরায় বলে,
-আমি জানি তুমিও আমাকে চাও। যদি তোমার কিছুদিন সময় লাগে তাহলে নিতে পারো আমার সমস্যা নেই।
-না আমার সময় চাই না। আমি সিউর না নিজের মনের অবস্থা নিয়ে। তবে স্বাভাবিক সংসার আমিও করতে চাই আপনার সাথে।
-তোমার এইটুকু কথাই আমার জন্য যথেষ্ট। বিয়ের পর তোমার প্রথম গিফট ফ্রম হাসব্যান্ড। হাত সামনে আনো
আনাবিয়া হাত সামনে আনে। ইরান যত্ন সহকারে রিং পড়িয়ে দেয় আনাবিয়ার হাতে। সেই হাতেই গভীর ভাবে নিজ অধর ছুঁয়ে দেয়। আনাবিয়া দ্রুত হাত সরিয়ে ফেলে। ইরান উঠে দাঁড়ায়।
-চলো ডিনার করবে।
-হ্যাঁ
———————-
বাহিরে বর্ষণের তেজ বাড়ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাতাস তো আছেই। সমুদ্রের উথা*লপা*থাল ঢেউয়ের আওয়াজে বার বার কেঁপে উঠছে আনাবিয়া। খাওয়ার পর্ব শেষ করে বিছানায় বসে আছে সে আর ইরান। দুইজনের মধ্যে নীরবতা বিরাজমান। আনাবিয়ার মধ্যে অন্যরকম একটা জড়তা কাজ করছে। ইরান নীরবতা কাটিয়ে বলে,
-কিছু বলো চুপ করে আছো কেনো?
-বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না।
-শাড়ীতে বসে থাকতে অস্বস্তি লাগছে?
-হ্যাঁ একটু আরেকটু।
-খুলে ফেলো তাহলে।
-না থাক। আমি বৃষ্টিতে ভিজতে চাই।
-ভুলেও না। এখনকার বৃষ্টি ভালো নয়।
-প্লিজ?
-নোহ আনাবিয়া।
-প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ?
-না করেছি না?
-প্লিজ না ইরান? একদম একটু ভিজবো প্রমিস।
হঠাৎ ইরানের মন গলে যায়। ঠান্ডা কণ্ঠে বলে,
-ঠিক আছে যাও।
ইরানের রাজি হতে দেরি কিন্তু আনাবিয়ার দৌড় দিতে নেই। ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বালুর ভিতরে লাফাতে থাকে। দূরে বৃষ্টির ফোটা গুলো রিমঝিম শব্দ তুলে সমুদ্রের পানিতে পড়ছে। শাড়ীর ভীষণভাবে বিরক্ত করছে আনাবিয়াকে। তাই সে বুদ্ধি করে শাড়ীর আঁচল খুলে স্ক্যার্টের মতো কোমরে পেঁচিয়ে নেয়। ইরান দূরে দাঁড়িয়ে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে আনাবিয়াকে দেখছে। তার সাহস হচ্ছে না সামনে আগানোর।
আনাবিয়া হাঁটতে হাঁটতে ইরানকে হাতের ইশারায় ডাক দেয়। ইরান আসে না। আনাবিয়া একা একাই সমুদ্রের দিকে চলে যায়। ইরান এবার ভীত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। আনাবিয়ার পিছনে দৌড় দেয়। পানির স্মুখীন বসে আশেপাশে চোখ বুলাচ্ছে আনাবিয়া। ইরান আনাবিয়ার কাছাকাছি আসতেই শাসনের স্বরে বলে,
-এখান থেকে চলো আনাবিয়া। পানি ঢেউ অনেক বেশি।
-আই নো সুইমিং।
-ইটস্ নট পুল ডিয়ার।
আনাবিয়া ইরানের ইগনোর করে উঠে দাঁড়ায়। যেই আগে বাড়তে নিবে তার আগেই ইরান নিজের পুরুষালি বলিষ্ঠ হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে আনাবিয়াকে। হঠাৎ ইরানের গরম হাতের ছোঁয়া কোমরে পড়তে ষষ্ঠইন্দ্রিয় জেগে উঠে আনাবিয়ার। ইরান আনাবিয়াকে সম্পূর্ণ নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। আনাবিয়া ইরানের ভেজা নেশাক্ত আঁখিজোড়া দেখে নজর সরিয়ে ফেলে। ইরান তখন আনাবিয়ার মোহনীয় রূপে বিমোহিত। আনাবিয়ার এক হাত নিজের কাঁধে রাখে। গালে হাত দিতেই মৃদু কেঁপে উঠে আনাবিয়া। নিজেকে স্বাভাবিক রেখেই বলে,
-ইরান অনেক ভিজেছি আই থিঙ্ক এখন আমাদের শরীর মুছে ফেলা উচিত।
ইরান উত্তর দিলো না। আনাবিয়া পুনরায় মাথা তুলে ইরানের দিকে তাকায়। এক দৃষ্টিতে ইরান তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ইরানের হাত বেসামাল হয়ে আনাবিয়ার গাল থেকে ধীরে ধীরে নিচে নামে। ইরান নিজের মুখমন্ডল আনাবিয়ার একদম নিকটে নিয়ে যায়। আনাবিয়া মনে মনে ভাবে হয়তো ইরান লিপকিস করবে। তাই নিজেকে প্রস্তুত করে গলা ভিজিয়ে নেয়। কিন্তু ইরান! মুচকি হাসি দিয়ে আনাবিয়াকে অবাক করে তার ললাটে নিজের পূর অধর ছুঁয়ে দেয়। আনাবিয়ার চাহনি তখন হতবাক। মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছে না। ইরান এবার আনাবিয়ার পর পর দু’গালে চুম্বন করে। আনাবিয়া এবার ইরানের পিঠের ঐখানে শার্ট খামচে ধরে। ভাবে এবার হয়তো ইরান তার অধর নিজের দখলে নিয়ে নেবে। ইরান আনাবিয়ার ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে সহসা কোলে তুলে নেয় আনাবিয়াকে। আনাবিয়া চমকিত হলো না। ইরানের গলা জড়িয়ে ধরে।
-পানিতে নামবে না?
-কিসের পানিতে?
-সমুদ্রের?
-হ্যাঁ। নিচে নামলে তবে তো নামবো।
ইরান আনাবিয়াকে কোলে নিয়ে সমুদ্রের দিকে হাঁটা ধরে। আনাবিয়া শান্ত কণ্ঠে বলে,
-এইযে যদি আপনার ইচ্ছে থাকে আমাকে পানিতে চুবিয়ে মারবেন তারপর আরেকটা বিয়ে করবে তাহলে আমি একটা কথা বলে দেই? ভুত হয়ে কিন্তু ফিরে আসবো আমি।
-আপনাকে মারার আগে আমার নিজের মৃত্যু হোক।
-ওয়াও! এতো ভালোবাসেন আমাকে? নাকি সবই দেখানোর জন্য?
-সেটা নাহয় তুমিই একটু কষ্ট করে বুঝে নেও। সব কিছুই মুখে কেন বলে দিতে হবে?
-ওয়েল। কী করছেন সেটা তো বলুন?
-দেখো।
ইরান ধীরেসুস্থে সমুদ্রের পানিতে নেমে পরে। আনাবিয়া ভীত চোখে ইরানের দিকে তাকিয়ে আঁকড়ে ধরে তাকে। কোমর সমান পানিতে আসতেই ইরান নামিয়ে দেয় আনাবিয়াকে। আনাবিয়া পানি হাতে নিয়ে ইরানের মুখে ছিটা দেয়। ইরানও আজ থেমে নেই। দুইজন মিলে বাচ্চাদের মতো দুষ্টামি করে। আনাবিয়া শব্দ করে হাসতে হাসতে বলে,
-আজ আমার জীবনের অন্যতম একটা স্পেশাল ডে ছিল। থ্যাংক ইউ সো মাচ মিস্টার হাসব্যান্ড।
____________________
তনুসফা নিজ রুমে বসে হাঁসফাঁস করছে। অস্থিরতা ঘিরে ধরেছে তাকে। কিছুক্ষন আগেই সে জানতে পেরেছে তার ভাই আর আনাবিয়া ঘুরতে বের হয়েছে। আজ রাতে আর আসবে না। এখন তনুসফার চিন্তা আনাবিয়া যেটা বললো সেটা যদি সত্যি হয়! তার কাছে নিজে ভালো থাকা মানেই সব ভালো। অন্যের বিষয় সে অনেক কম ভাবে। তাই তো এখন নিজের স্বার্থের জন্য আপন ভাইকে উসড করছে। কতটা জঘন্য মস্তিকের একজন বোন এইরকম ভাবে নিজেরই ভাইয়ের সংসার ভাঙতে চায়?
তাহশিয়া মন্ত্রীর একমাত্র মেয়ে। অনেক আদরে বড় হয়েছে সে। ছোটকাল থেকে যা চেয়েছে তাই পেয়েছে। এখন তার একটাই চাওয়া ইরানকে নিজের করা। তনুসফাও নিজের ফিউচারের কথা ভেবে ইরানের অনুমতি না নিয়েই কথা দিয়ে দিয়েছে তাহশিয়াকে। এখন তাহশিয়া দেশে আসছে ইরানের মুখোমুখি হবে। সে অবশ্য জানে ইরান বিয়ে করেছে। যদি জানে ইরান আনাবিয়াকে ভালোবাসে তাহলে হয়তো বড় কোনো গেঞ্জাম হয়ে যাবে। তনুসফা পারছে না আর ভাবতে। তার মাথা ঘুরছে। মন বলছে সামনে ভয়ংকর কিছু হবে। ফোনের আওয়াজ শুনে কাঁপাকাঁপা হাতে ফোন হাতে নেয়। কল রিসিভ করে কানে দিয়ে বলে,
-হ্যাঁ বলো? তাহশিয়া কী এসেছে?
-না ম্যাম। এখনও পৌঁছায় নি।
-ওহহ। আমাকে সকল ইনফরমেশন দিও।
-জি ম্যাম। আর ইরান স্যার ও আনাবিয়া ম্যাম আজ রাতে বাসায় ফিরছে না।
-হ্যাঁ জানি। রাখো তাহলে।
-জি ম্যাম।
___________________
আটস্যাট হয়ে ঘরের এক কিনারে বসে আছে আনাবিয়া। মোমের আলোতে দেখা যাচ্ছে দুজন দু প্রান্তে বসে আছে। বৃষ্টিতে ভিজে ঘরে এসে তেমন কিছু পরিধান করার ছিল না। ইরান তো তাও শার্ট খুলে বসতে পারবে কিন্তু আনাবিয়া! রিসোর্টের তরফ থেকে ঘরে একটি তৈয়ালে আর দু’টি সাদা রঙের বাথস্যুট রাখা ছিল। আনাবিয়া এখন বাথস্যুট পরেই মাথা নিচু করে ভোঁতা মুখে বসে আছে। আনাবিয়া পারছে না উধাম গায়ে বসা ইরানের দিকে চোখ তুলে তাকাতে। নিজের মধ্যে লাজের অস্তিত্ব অনুভব করছে সে।
ইরানের অবস্থাও শোচনীয়। পুরুষ মানুষ সে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে তার জন্য। যদি না আনাবিয়া তার বিবাহিত স্ত্রী হতো তাহলে হয়তো এতো চুম্বকের মতো টানতো না তাকে! আনাবিয়া উস্কোখুস্ক করতে করতে বলে,
-ইরান বৃষ্টি তো বাড়ছে বাসায় যাবেন কখন?
-আজ রাত এখানে থাকলে কী অনেক বড় সমস্যা হবে?
-না। কিন্তু আমার অনেক বেশি শীত করছে।
ইরান বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। আশেপাশে তাকিয়ে বিছানার চাদর নিয়ে আনাবিয়ার শরীরে জড়িয়ে দেয়। আনাবিয়া মাথা তুলে তাকায়। ইরানের উম্মক্ত পেটানো শরীরে দিকে তাকাতেই হিমশিম খেয়ে যায় সে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে,
-আপনার শীত করছে না? এভাবে ড্রেস বিহীন বসে আছেন যে?
-সত্যি বলো না আমাকে এভাবে দেখে তুমি আনকন্ট্রোল হয়ে যাচ্ছ?
-রাব্বিশ!
ইরান বিছানায় যেয়ে বসে পরে। বাঁকা চোখে তাকায় আনাবিয়ার দিকে। আনাবিয়া চাদর জড়িয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে ফোন টিপছে। ইরান যে অধয্য হয়ে নিজের হাত খামচে ধরে আছে সেদিকে বিন্দু পরিমানও ধেন নেই আনাবিয়ার। কিছুক্ষন পর পর জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজাচ্ছে। আবার শীতে কেঁপেকেঁপে অধর কামড়ে ধরছে। ইরান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জ্ঞানশূন্য হয়ে বিছানা থেকে উঠে আনাবিয়ার পাশে সোফায় বসে পরে। আনাবিয়ার কিছু বুঝে উঠার আগেই আনাবিয়ার হাত থেকে ফোন নিয়ে কিনারে রেখে দেয়। একহাতে আনাবিয়ার কোমর আঁকড়ে ধরে আরেক হাতে আনাবিয়ার গাল চেপে ধরে। নিজ অধর দিয়ে আনাবিয়ার অধর চেপে ধরে। আনাবিয়া রিঅ্যাকশনও দিতে পারল না ইরানের এহেন কান্ডে। ইরান অধয্য হয়ে কিস করতেই থাকে। আনাবিয়াও আজ বাধা দিচ্ছে না ইরানকে। ইরানের কাঁধ ধরে রেখেছে।
ইরান কিঞ্চিৎ সময়ের জন্য ছেড়ে দেয় আনাবিয়াকে। আনাবিয়া বড় বড় চোখ করে চেয়ে আছে। ইরান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-রেসপন্স করতে পারবে না অন্তুত এভাবে আঘাত তো করো না! ফিলিংসের বারোটা বেজে যায়।
-আমি কোথায় আঘাত করলাম?
-দাঁত ভিতরে ঢুকিয়ে রাখো প্লিজ ডিয়ার।
আনাবিয়া কিছু বলবে তার আগেই ইরান পুনরায় আনাবিয়ার অধর নিজের অধরের সাথে মিলিয়ে নেয়। আনাবিয়া মূর্তি। ইরান জোরে জোরে নিঃশাস নিচ্ছে। হঠাৎই ইরান নিজের অস্তিত্বে ফিরে আসে। ছেড়ে দেয় আনাবিয়াকে। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বড় বড় পা ফেলে বাহিরে চলে যায়। আনাবিয়া হতভম্ব। ইরানের ব্যবহারে বিস্ময় সে। মন ক্ষুন্ন করে বসা থেকে উঠে বাহিরে উঁকি দেয়। বৃষ্টির মধ্যে ইরান দাঁড়িয়ে আছে রোবটের মতো। আনাবিয়ার হঠাৎই রাগ হলো। অনেক বেশি রাগ।
রাগে বিড়বিড় করতে করতে বিছানায় যেয়ে শুয়ে পরে। চাদর জড়িয়ে নেয় গায়ে।
গভীর রাতে ইরান ঘরে প্রবেশ করে। আনাবিয়া ঘুমের ভান ধরে শুয়ে আছে। ইরান তৈয়ালে দিয়ে চুল মুছে আনাবিয়ার কাছে যায়। বিছানায় বসবে নাকি বসবে না একটা জড়তা কাজ করছে তার মনে। ধপ করে উঠে বসে আনাবিয়া। ছোট ছোট চোখ করে ইরানের পানে তাকায়। ইরান আমতা আমতা করে বলে,
-তখন ঐভাবে কিস করতে চাইনি। আসলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলাম।
-আপনি এখনও আপনার এক্সকে মিস করেন?
-না।
-তাহলে তখন এভাবে সরে গেলেন কেনো?
-তোমার অনুমতি ছাড়া আগে বাড়তে চাইনি।
আনাবিয়া কিছু বললো না। ইরান আনাবিয়ার পাশে বসে। আনাবিয়ার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
-আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার অনুমতি না নিয়ে কিছু করব না আমি।
আনাবিয়া কিছুক্ষন চুপ থেকে আচমকা ইরানের কোলে উঠে বসে পরে। ইরানের কিছু বুঝে উঠার আগেই ইরানের অধরে নিজের অধর ছুঁয়ে দেয়। ইরান প্রথমে ভড়কে গেলেও পরে রেসপন্স করে। আনাবিয়া অস্পষ্ট স্বরে বলে,
-আই ওয়ান্ট ইউ ইরান।
আনাবিয়ার একটি বাক্যই যথেষ্ট ছিল ইরানকে উম্মাদ করে তুলতে। আনাবিয়াকে বিছানায় শুয়ে তার ওপর নিজের ভর দিয়ে দেয়। বেসামাল হয়ে পরে ইরানের হাত। আনাবিয়া জোরে জোরে নিঃশাস ত্যাগ করছে। ইরান আকস্মিক হয়ে আস্তে আস্তে বলে,
-আনাবিয়া আগে বাড়া কী উচিত হবে? আমার কাছে কিন্তু কোনো প্রটেকশন নেই।
-আই ওয়ান্ট এ বেবি।
-মানে?
-আমি শুনেছি বেবি হলে নাকি সংসার বেশি সুন্দর হয়ে যায়। তাই আমি চাই আমাদের একটা বেবি হোক। আপনাকে আর আমাদের বেবিকে নিয়ে আমি এখানেই থেকে যেতে চাই।
ইরান প্রসন্ন হাসলো। আনাবিয়ার কপালে ঠিক মধ্যখানে ভালোবাসার স্পর্শ বসিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে রাত বাড়তে থাকে এবং বাড়তে থাকে তাঁদের উষ্ণ ছোঁয়া। মোম নিভে যায় আপনা আপনেই। অন্ধকারে গভীর থেকেও গভীররত্ব হতে থাকে ভালোবাসা। বস্ত একে একে অবহেলায় নিচে পরে থাকে। আনাবিয়ার জোরে জোরে নিঃশাস নেওয়া একসময় নিশ্চুপ হয়ে যায়। ঘামে চুব চুব দু’জন। ইরান মিলন মুহূর্তে আনাবিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
-আই লাভ ইউ ডিয়ার। থাঙ্কস ফর কামিং ইন মাই লাইফ। এন্ড থাঙ্কস ফর দিস বিউটিফুল নাইট।
>>>>চলবে।