#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব ২৩
-আজব তো! আপনারা ছবি তুলছেন না কেনো? দ্রুত তুলুন।
আনাবিয়ার কথায় ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে ফেলে সাংবাদিকরা। ইরান সব কয়টা ছবিতে আনাবিয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিল। তাহশিয়া একটু দূরে যেয়ে দাঁড়ায়। গম্ভীর চাহনি দিয়ে পরোক্ষ করতে থাকে আনাবিয়াকে। আশেপাশের সবাই অবাক হয়ে আনাবিয়া আর ইরানকে দেখছে। সাংবাদিকরা বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করে,
-স্যার উনি কে? আপনার কোনো কাজিন?
সাংবাদিকের প্রশ্নে ইরান ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে হাসি মুখে আনাবিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
-উনি আপনাদের মেডাম আমার ওয়াইফ। মিসেস আনাবিয়া শেখ।
সবাই বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো তাঁদের দিকে। আরেকজন সাংবাদিক বলে,
-স্যার বিয়েটা কী ফ্যামিলিগত ভাবে হয়েছে?
-ফ্যামিলিগত ভাবে হয়েছে তবে ভালোবাসাও ছিল।
-এনপি ইরান শেখের বিয়ে চুপচাপ হয়ে গেলো! কোনো ফাঙ্কশন করবেন না স্যার?
-অবশ্যই করব। সুন্দর মতো আমার ভাগ্নির বিয়ে হয়ে যাক তারপর আমারটাও করব।
-ম্যাম দেখি বিদেশী!
-ম্যাম একটু পোজ দেন প্লিজ।
-ম্যাম আপনাকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে বাঙালি সাজে।
-আপনাদের দুইজনকে অনেক বেশি মানিয়েছে স্যার।
এইরকম নানান মন্তব্য দিচ্ছে সকলে। আনাবিয়ার চোখ মুখ চকচক করছে খুশিতে। ইরানের ভালো লাগছে না অনাবিয়ার তারিফ অন্য একজনের থেকে শুনতে। তাহশিয়া শুধু আনাবিয়াকে দেখেই যাচ্ছে। তার থেকেও বেশি সুন্দর আনাবিয়া। তনুসফা মুখ বাঁকিয়ে তাহশিয়ার কাছে আসে।
-আনাবিয়া, ইরানের ওয়াইফ।
-মাশাআল্লাহ মেয়েটি! সৃষ্টিকর্তা অনেক যত্ন করে বানিয়েছে ওকে।
-তোমার আচরণ দেখে আমি ক্ষণে ক্ষণে অবাক হই! ঐ শাকচুন্নি মেয়ে তোমার ভালোবাসার মানুষকে ছিনিয়ে নিচ্ছে আর তুমি সেখানে ওর তারিফের মালা যবছো!
-যে সুন্দর তার তো তারিফ করবই! আর শুধু কুকুরের মতো ঘে*উ ঘে*উ করলেই সবকিছু হয় না। কিছু কিছু সময় বুদ্ধি দিয়েও কাজ করতে হয় তনুসফা শেখ।
-তোমার কী ভালো লাগছে ওদের একসাথে দেখে? দেখো সবাই কত তারিফ করছে আনাবিয়ার। একটুও বুক জ্বলছে না তোমার?
তাহশিয়া আগের মতোই শান্ত। স্মিত হেসে বলে,
-আপনি যে আপনার ভাইয়ের বড় শত্রু এটা কী আপনার ভাই মানে ইরান জানে?
-আমি ইরানের শত্রু না। আমি শুধু ওর ভালোটা চাই। এখন বলো জ্বলছে না তোমার বুক?
-শুধু বুক জ্বলছে না আমার দেহের সর্বাঙ্গ জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। তবে আমি আমার কষ্ট ভিতরে লুকিয়ে রাখতে ভালোবাসি। অন্যকে দেখিয়ে কোনো লাভ হবে? তারা আরো উপহাস করবে।
-আমি এতদিন শুধু আনাবিয়াকেই সাংঘাতিক মেয়ে ভাবতাম আজ দেখলাম তুমিও কম নয়! আনাবিয়ার মতো মেয়ের সাথে লড়তে হলে এইরকম স্ট্রংনেসের-ই প্রয়োজন।
-আমি কারো সাথে লড়তে আসিনি। শুধু নিজের অসম্পূর্ণ জিনিসকে সম্পূর্ণ নিজের করতে এসেছি। ওকে?
-মানে? কী বলছো তুমি এইসব?
তাহশিয়া হাসে। মুখে অমায়িক হাসি ফুটিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
-আমি হলাম আমার গল্পের নায়িকা ভিলেন কেনো হতে যাবো! সময় হোক যে ভিলেন সে নিজেই নিজের আসল রূপে ফিরে আসবে।
তাহশিয়া কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে হেঁটে আনাবিয়ার কাছে যায়। তনুসফা ফের অবাক হয় তাহশিয়ার কাজ দেখে। তাহশিয়া আনাবিয়ার সামনে গিয়ে হাসি মুখে ইরানকে বলে,
-লুকিয়ে বিয়ে করার কোনো মানে হয় মিস্টার ইরান! এতো সুন্দর ফুলের মতো ওয়াইফকে সবার স্মুখীন আনতে ইচ্ছুক ছিলেন না?
-আসলেই তাকে সবার সামনে আনতে চাইনি। কারণ ফুলের মতো বউ আমার! কখন কার খারাপ নজর লেগে যায় কে জানে।
-সহমত।
তাহশিয়া আনাবিয়ার থুতনি ধরে মুগ্ধ হয়ে বলে,
-সো বিউটিফুল। কোন দেশে থেকে এসেছেন আপনি?
অচেনা মেয়ের আদিখ্যেতা পছন্দ হলো না আনাবিয়ার। তবুও শান্ত স্বরে বলে,
-রাশিয়া।
-উম।
-আপনি কে?
-আমি জাস্ট একজন গেস্ট অথবা আপনার হাসব্যান্ড এর নেক্সট বিজনেস পাটনার।
-ওহহ! আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? ইরান উনাকে ভিতরে নিয়ে যান। আমি জেসিকাকে নিয়ে আসছি।
-হুম যাও।
🌸
অতঃপর বিয়ে শেষ হয়। সবাইকে বিদায় দিয়ে নিজ নিজ রুমে চলে যায় সকলে। আনাবিয়া আগেই টিসু দিয়ে মেকআপ তুলেছে। এখন গহনা খুলছে। চকচকে গোল্ডের জুয়েলারী পরেছিল আজ সে। ইরান শাওয়ার নিয়ে বের হয়। চুল মুছে আনাবিয়ার কাছে এসে নিজেই তার জুয়েলারি এক এক করে খুলে দিতে থাকে।
-আজকের সারপ্রাইসটা আমি কখন ভুলবো না। বাট এতো কিছু কেনো পরতে গিয়েছো? আবার এই ভারী শাড়ী! অনেক কষ্ট হয়েছে না হাঁটাচলা করতে?
-একদমই হয়নি। আপনি খুশি হয়েছেন আমার আর কী লাগে।
-তবে আমার খুশি যে তোমার খুশিতে । ওহ গড গলায় দেখি লাল হয়ে কেমন আঘাতের মতো হয়ে গিয়েছে! ওয়েট মলম লাগিয়ে দিচ্ছি।
-এখন না। আগে ড্রেস চেঞ্জ করে নেই তারপর।
-ওকে। দাঁড়াও আমি শাড়ী খুলতে সাহায্য করি।
-হুম।
শাড়ী খোলা হলে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুম চলে যায় আনাবিয়া। অনেক সময় নিয়ে লম্বা একটি শাওয়ার নিয়ে বের হয় সে। চুল না মুছেই বিছানায় বসে পরে। ইরান মলম নিয়ে বসে ছিল। আনাবিয়ার সামনে গিয়ে সযত্নে গলায়, ঘাড়ে মলম লাগিয়ে দেয়। তারপর তৈয়ালে খুলে আনাবিয়ার চুল মুছে দেয়। আনাবিয়া বিরক্ত হয়ে বলে,
-এই বেবি হেয়ার আর মুছতে হবে না।
-নিজের প্রতি এতো কেয়ারলেস কেনো তুমি? ভিজে চুলে ঘুমালে জ্বর হবে।
-জানেন যখন আপনি সবার সামনে আমাকে নিজের ওয়াইফ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন তখন আমার ভীষণ ভালো লেগেছিল।
-তোমার ভালো লাগা-ই যে আমার ভালো লাগা ডিয়ার।
আনাবিয়া ইরানের দিকে ফিরে বসে। নিজ গালে হাত বুলিয়ে বলে,
-ঐ মেয়েটা কে ছিল?
-কোন?
-যে আমাকে বিউটিফুল বললো সে?
-মন্ত্রীর মেয়ে সে।
-যার সাথে আপনার বিয়ের কথা চলছিল তিনি কী সেই মেয়ে?
-হুম।
-বাহ্! মেয়েটা অনেক স্ট্রং! আমাকে দেখেও কত স্বাভাবিক ছিল।
-এসো ঘুমাবে।
-হুম।
______________________🌸
“সুখের দিন অতি দ্রুত অতিবাহি হয়ে যায়” কথাটা আসলেই সত্যি। দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ চলে গেলো। জেসিকার বিয়ে সম্পূর্ণ ভাবে শেষ। গত দু’দিন আগেই জেসিকা এবং তার হাসব্যান্ড হানিমুনে গিয়েছে। এটা গিফট ছিল মামা ইরানের তরফ থেকে। আনাবিয়ার বেশ ভালো দিন কাটছে। আজ তারা তাঁদের নিজস্ব বাসায় চলে যাবে। একটু মন খারাপ আনাবিয়ার। রাকিয়াকে ছাড়া কষ্ট হবে তার। ইরান অনেক বার মাকে বলেছিল তাঁদের সাথে বেড়াতে যেতে। কিন্তু রাকিয়া এই বাড়ি ছেড়ে কোথায়ও যাবে না।
ইসরাফ সবসময় তার রুমেই শুয়ে থাকে। দুইজন কাজের লোক রাখা হয়েছে তার দেখভাল করার জন্য। তাছাড়া তনুসফা ও ইরান কয়েকবার দেখা করতে যায় ইসরাফের সাথে। ঠিক ভাবে কথা বলতে পারে না ইসরাফ। একটু কথা বললেই অনেক হয়রান হয়ে যায়। আনাবিয়া এখন পর্যন্ত একবারও দেখা করেনি। সঠিক সময় আসুক তারপরই সে ইসরাফের সাথে দেখা করতে যাবে। সকাল দশটা বাজে এখন। তনুসফা, ইরান ব্রেকফাস্ট করে অফিসে চলে গিয়েছে। রাকিয়া আর আনাবিয়া ব্রেকফাস্ট করে ড্রইংরুমের সোফায় বসে। রাকিয়া নিউজপেপার পড়ছে আর আনাবিয়া এটা সেটা নিয়ে বকবক করছে। হঠাৎই রাকিয়ার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। পেপারটা সামনে নিয়ে ভালোভাবে পড়ার চেষ্টা করে।
আনাবিয়া রাকিয়ার এইরকম আচরণ দেখে একটু অবাক হয়। শান্ত স্বরে বলে,
-মম কী হলো? কী দেখলে এমন?
রাকিয়া কিছু না বলে আনাবিয়ার দিকে পেপার এগিয়ে দেয়। তারপর দ্রুত করে ড্রইংরুমের টিভি অন করে নিউজ চ্যালেনে দেয়। আনাবিয়া নিউজপেপারের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে যায়। তার, ইরান এবং তাহশিয়ার একটা পিক দিয়ে নিচে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে,
“তবে কী এমপি ইরান শেখও অন্য পুরুষের মতো বের হলো! একজনকে কথা দিয়ে অন্য এক বিদেশীকে লুকিয়ে বিয়ে করে নিলো! জনমান্য মন্ত্রীর মেয়েকে এভাবে ধোঁকা দিলো এটা কী মেনে নেবেন মন্ত্রী সাহেব? আমরা সবাই জানি এমপি সাহেব মন্ত্রী হাসিব আলীর অনেক বেশি প্রিয় ছিল এখন দেখা যাক কী হয়।”
আনাবিয়া মাথা তুলে টিভির পানে চোখ স্থির করে। ব্রেকিংনিউজেও এইটাই দেখাচ্ছে। আনাবিয়া স্তব্ধ হয়ে রাকিয়া শেখের দিকে তাকায়। কথা বলার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পেলো না সে। নিশ্চুপ হয়ে বড় বড় পা ফেলে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে চলে যায়। রুমে এসে ফোন হাতে নেয় ইরানকে কল দিতে। আকিস্মিক আনাবিয়ার ফোনে একের পর এক নোটিফিকেশন এসেই যাচ্ছে। ফেইসবুকে অনেকেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছে। নোংরা নোংরা মেসেজ দিচ্ছে। ইন্সট্রাগ্রাম, টুইটার জায়গায় জায়গায় মানুষ তাকে মেসেজ দিচ্ছে। আনাবিয়া কাঁপাকাঁপা হাতে কয়েকটা মেসেজে পড়ে। মেসেজ গুলোতে লেখা ছিল,
-কিভাবে আমার ক্রাশকে পটালেন? শরীর দেখিয়ে নাকি? আগে জানলে এইরকম মা**গী আমিই নাহয় হয়ে যেতাম!
-বাহ্ ফি*গার জোস্! ইরানের পর আমাদেরও একটু সুযোগ দিও বেবি
-তোমার মুখে কালি মেখে দেওয়া দরকার। আমার ক্রাশকে কিভাবে নিজের মায়াজালে ফাঁসালে নোংরা মেয়ে।
এইরকম আরো কয়েকটা মেসেজ দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না আনাবিয়া। আছাড় দিয়ে ফেলে দেয় হাতের ফোন। চিৎকার করে রুমের সব জিনিস ভাঙচুর করতে থাকে। আর চিৎকার করে বলে,
-শেষ করে দেবো আমি তাঁদের সবাইকে। কাউকে ছাড়বো না। কাউকে না।
_________
অফিসে এসে নিউজপেপার দেখে ইরানের মেজাজ গরম হয়ে যায়। রেগে তার পিএ তাজীবের দিকে তাকায়। তাজীবও জেনো অকেজো হয়ে গিয়েছে। ইরান রাগী কণ্ঠে বলে,
-কোন সাংবাদিকের এতো বড় স্পর্ধা আমার স্ত্রীর নামে এইরকম ভুলভাল কথা ছড়ায়? জলদি এই সাংবাদিকদের বেপারে খোঁজ নেও। তাঁদের নিউজ ছাপানো আমি জনমের জন্য বন্ধ করে দেবো।
তাজীব ভীত হয়ে যায় ইরানের উঁচু আওয়াজে। দ্রুত সাংবাদিকের হেডকে কল দেয়। কল রিসিভ করার পর ফোন ইরানের কাছে দেয় তাজীব।
-আপনি কী মিস্টার সিফাত সরকার বলছেন?
-জি কেনো?
-আমি ইরান শেখ বলছি।
-স্যার আপনি! হঠাৎ কল কোনো সমস্যা কী স্যার?
-আপনাদের নিউজপেপারে এইসব কী খবর ছাপা হয়েছে! আপনাদের সাহস হলো কিভাবে আমার স্ত্রীকে নিয়ে এইরকম লেখার?
-সরি স্যার আমি আসলে বুজতেছি না আপনি কী বলছেন। আজ তো আপনাকে নিয়ে কোনো খবর আমরা দেইনি।
-ওহ রিয়েলি। আপনি আপনার অফিসে যান সেখানেই আমি আসছি।
কল কেটে দেয় ইরান। ঝড়ো বেগে ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে বাহিরে হাঁটা ধরে। তাজীবও ইরানের পিছু পিছু হাঁটতে থাকে।
________________🌸
রাকিয়ার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে আনাবিয়া। তখন আনাবিয়ার চিৎকারের আওয়াজ শুনে দৌড়ে আসে রাকিয়া। আনাবিয়াকে এইরকম পাগল প্রায় অবস্থায় দেখে জ্ঞান শূন্য হয়ে পরে সে। জড়িয়ে ধরে বিছানায় বসায়। এতো কিছুর পরও আনাবিয়া কাঁদছে না। চেহারা একদম লাল হয়ে গিয়েছে। রাকিয়া তার কোলে আনাবিয়ার মাথা রেখে বিলি কেটে দেয় আর অনেক কিছু বুঝায়।
ইরান সাংবাদিকদের অফিসে পৌঁছে ভিতর থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পায়। দ্রুত পায়ে ভিতরে গিয়ে দেখতে পায় তার আগেই এখানে উপস্থিত হয়েছে তাহশিয়া। স্টাফদের ওপর ইচ্ছে মতো চেঁচাচ্ছে। ইরান আরো সামনে এগিয়ে যায়। হেড অফিসার এগিয়ে আসে ইরানকে দেখে। ভীত কণ্ঠে বলে,
-সরি স্যার মাফ করবেন আমাদের। আসলে একজন নিউ স্টাফ ভুল করে আপনার নিউজ পেপারে ছাপিয়ে দিয়েছে। আমি নিজেও এই বিষয় কিছু জানতাম না আপনার বলার পরই জেনেছি।
-জানতেন না মানে? এইরকম ভুল হয় কিভাবে? একজন মানুষের ক্যারিয়ার নষ্ট করতে আপনাদের ফেক নিউজই তো যথেষ্ট।
তাহশিয়ার কথায় একমত হয় ইরান। তাহশিয়া পুনরায় বলে,
-যান আপনার রিপোর্টার’সদের ডাক দিন। এখন আমরা যা যা বলবো সেগুলো পুনরায় খবরে দেখানো হোক এবং নিউজপেপারে ছাপা হোক।
-ম্যাম, স্যার আপনার যেভাবে বলবেন সেভাবেই হবে প্লিজ আমার অফিস বন্ধ করিয়েন না।
-আমি এখন যা বললাম জলদি করুন।
হেড অফিসার ভয়ে ভয়ে কয়েকজন সাংবাদিককে ডেকে আনে। কিছুক্ষনের মধ্যেই সাংবাদিকরা সকল ব্যবস্থা করে ফেলে। তাহশিয়া ও ইরান একটা সোফায় বসেছে। সাংবাদিকের ইশারায় তাহশিয়া প্রথমে বলা শুরু করে,
-আমি তাহশিয়া আলী। মন্ত্রী হাসিব আলীর একমাত্র মেয়ে। আজই কিছু সাংবাদিকদের ভুলের কারণে একটা ফেক নিউজ ছাপানো হয়েছে। সত্যি বলতে আমাদের বিয়ের কথা চললেও এমপি ইরান শেখ পছন্দ করতে অন্য একজনকে এবং আমিও অন্য একজনকে পছন্দ করতাম। সেখানে আমাদের দুইজনের পছন্দই আলাদা সেখানে শুধু শুধু বিয়ে নামক কোনো সম্পর্কে জড়ানোর মানেই হয় না। তাই ইরান শেখ তার পছন্দের মানুষকে বিয়ে করেছে এবং আমি এখনও বিয়ে করিনি তবে সামনে করব। আনাবিয়া অত্যাধিক ভালো একজন মেয়ে। দোয়েয়া করে ওর নামে খারাপ কথা বলা বন্ধ করুন আপনারা। একটা বিষয়ে সম্পূর্ণ না জেনে কিছু না বলাই ভালো।
তাহশিয়া এক দমে সবকিছু বলে নিঃশাস নেয়। ইরান নিস্পলক তাহশিয়ার দিকে তাকিয়ে এবার সে বলতে শুরু করে।
-মিস তাহশিয়া তো সবটা বলেই দিলো। তো এখন আমার কথা হচ্ছে আমার স্ত্রী আনাবিয়াকে আর কোনোভাবে দোষারোপ করবেন না। আমার স্ত্রীকে কিছু বলা মানেই আমাকে বলা। আর তাকে নিয়ে যে বাজে উক্তি তুলবে আমি তার জন্য আইননি ভাবে পদক্ষেপ নেবো।
হেড অফিসার নিজ দায়িত্বে খবরও ডিলেট করে দেয়। তাহশিয়া শেষ বারের মতো কঠিন ভাবে শাসিয়ে দেয় তাঁদের। ইরান অনেক ইমপ্রেস হয় তাহশিয়ার ওপর। কৃতজ্ঞ স্বরে বলে,
-ধন্যবাদ মিস তাহশিয়া। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। এতো সুন্দর ভাবে সবটা সামলে নিলেন এবং আমার বেশি কিছু বলতেও হলো না। আবারও ধন্যবাদ।
স্মিত হাসে তাহশিয়া। শান্ত কণ্ঠে বলে,
-ইট’স্ ওকে ইরান শেখ। আপনি এখন গিয়ে আপনার স্ত্রীকে সামলান এইরকম জঘন্য পরিস্থিতিতে পরে বেচারি হয়তো ভেঙে পরেছে। আর এখানের বাকিটা আমি দেখছি।
-হ্যাঁ। আপনার এই উপকার আমি সবসময় মনে রাখবো। আসি তাহলে আমি।
-জি। আশা করি আবার দেখা হবে।
ইরান তাজীবকে নিয়ে চলে যায়। অন্যদিকে ইরান যেতেই তাহশিয়ার মুখে অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠে। হেড অফিসার হেঁটে তাহশিয়ার সামনে আসে।
-ম্যাম আপনি এমনটা কেনো করলেন? স্যার যদি বুঝে যেত সব কিছু আমি ইচ্ছে করে করেছি তাহলে আমাকে আস্ত রাখতো না।
-কিছু কিছু সময় ভালো সাজার জন্য একটু খারাপ হতে হয়। আমার প্রথম ধাপ একদম পরিকল্পনা মাফিক ছিল। এবার দ্বিতীয় ধাপের বারি।
>>>>চলবে।