শেষটা_সুন্দর(সিজন-২) #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ১৬।

0
439

#শেষটা_সুন্দর(সিজন-২)
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
১৬।

সারাজ গলার স্বর একটু বাড়াল। পুতুলকে শোনাতে হবে। এতক্ষণ ভীষণ বিরক্ত হওয়া মেয়েটির দিকে চেয়ে সে দারুণ চমৎকার এক হাসি দিল। বলল,

‘অবশ্যই। এমন মিষ্টি একটা মেয়ে আমার কাছে একটা জিনিস চাইল, আর আমি তাকে ফিরিয়ে দিব; অসম্ভব। লেখো, নাম্বার বলছি।’

মেয়েটা খুশিতে অস্থির। তাড়াহুড়ো করে ফোনটা ব্যাগ থেকে বের করে বলল,

‘জি, বলুন।’

‘01715…’

‘লিখেছো?’

‘জি।’

‘এটাই আমার নাম্বার। রাতে আমি ফ্রি আছি, কল দিও।’

এ তো পুরো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। মেয়েটা খুশিতে পারছে না এক্ষুণি সারাজকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরতে। এই প্রথম সে তার কোনো ক্রাশ থেকে পাত্তা পেয়েছে। আহ, আজ তো তার জন্য ঈদ।

সারাজ মৃদু হেসে বলল,

‘এবার আমি যাই। আমার একটু কাজ আছে।’

‘জি, অবশ্যই।’

মেয়েটা নাচতে নাচতে প্রস্থান ঘটাল। সারাজ ফুঁস করে নিশ্বাস ছেড়ে পেছনে তাকাতেই দেখল এক জোড়া রক্তিম চোখ তাকে যেন গিলে খাচ্ছে। মনে মনে ভীষণ খুশি হলো সে। যাক, প্ল্যান সাকসেসফুল হয়েছে তাহলে। পুতুল তার দিকে তেড়ে আসে। নাক মুখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

‘তুমি ওকে চেনো?’

‘না তো।’

সারাজ স্বাভাবিক ভীষণ। পুতুল গর্জে উঠে বলল,

‘তাহলে ওকে তোমার ফোন নাম্বার দিলে কেন?’

সারাজ দায়সাড়া ভাবে বলল,

‘চেয়েছিল, তাই দিয়েছি।’

তেতে উঠল পুতুল। কোমরে হাত দিয়ে কর্কশ গলায় বলে উঠল,

‘কেউ চাইলেই তাকে নাম্বার দিয়ে দিবে? আশ্চর্য! এত বড়ো হয়েছো অথচ এই সামান্য কমনসেন্সটুকু তোমার নেই? এই জন্যই মামনি তোমাকে বোকা বলে।’

‘এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দিব, ফাজিল মেয়ে। আমি কাকে নাম্বার দিব না দিব সেটা আমার ইচ্ছে। তোকে আমি সেই কৈফিয়ত দিব নাকি? সর সামনে থেকে।’

পুতুলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সারাজ গটগট করে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে যায়। বাইরে বেরিয়েই শব্দ করে হেসে ফেলে সে। কী এক্টিং’টাই না করছিল। তার তো সিনেমায় নাম লেখানো উচিত।

_____

রাগে শরীর রি রি করছে পুতুলের। ইচ্ছে করছে এখানের সব টেবিল চেয়ার ভেঙে একদম গুড়িয়ে দিতে। কী অ সভ্য লোকটা। একটা অপরিচিত মেয়ে এসে নাম্বার চেয়েছে, আর তিনিও নাচতে নাচতে নাম্বার দিয়ে দিয়েছেন। আরো বলে কি-না, মিষ্টি মেয়ে। কই তাকে তো জীবনেও মিষ্টি মেয়ে বলেনি? বরং সবসময় এমন ভাবে আচরণ করেছে যেন সে করলার চেয়েও তেঁতো। রাগে দাঁতে দাঁত পিষছে পুতুল। ঐ মেয়ে যদি তার সিনিয়র না হতো, তবে এক্ষুণি গিয়ে সে তাকে চিবিয়ে খেত। ছেলেদের কাছ থেকে নাম্বার নেওয়ার শখ তার জন্মের মতো গুজিয়ে দিত সে।

লীনা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে পুতুলের দিকে। আজ সকাল থেকেই অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটছে। একদিনেই এত সব অদ্ভুত ঘটনা কেন ঘটছে কে জানে? সে বোঝে না, সারাজ ভাই যদি কাউকে নাম্বার দেয়ও তাতে পুতুলের এত রাগ করার কী আছে? নাম্বার কাকে দিবে না দিবে সেটা তো সারাজ ভাইয়েরই ব্যাপার। তাহলে পুতুল এমন করছে কেন?

‘তুই চা’টা খাবি না? ঠান্ডা হচ্ছে তো। আমি খেয়ে নিব?’

‘খেয়ে নে।’

‘তুই তোর চা আমাকে খেয়ে নিতে বলছিস? তুই না চা শেয়ার করিস না?’

পুতুল দুঃখী দুঃখী মুখ করে চেয়ে বলল,

‘যেখানে আমার জীনটাই আরেকজনের সাথে শেয়ার হয়ে যাচ্ছে, সেখানে এই সামান্য চা…. তুই’ই খেয়ে নে।’

‘কী হয়েছে, দোস্ত? কিছু ঘটেছে? বলবিনা আমায়?’

পুতুল ঠোঁট উল্টে বসে বসে টেবিল খুঁটছে। মনটা মারাত্মক খারাপ তার। লীনা তার দিকে এগিয়ে বলল,

‘বল না, কী হয়েছে?’

‘মা আমার বিয়ের জন্য পাত্র দেখছেন।’

‘আলহামদুলিল্লাহ, এ তো ভালো খবর।’

লীনা খুশি হলো। পুতুল নাক মুখ কুঁচকে বলল,

‘এটা কোন দিক দিয়ে তোর কাছে ভালো খবর বলে মনে হলো? আমি বিয়ে করব না। কিন্তু, মা মানতে নারাজ। সকালে আসার সময়ও কতক্ষণ ঝগড়া করে এসেছি। মন মেজাজ একদম ঠিক নেই আমার। তার উপর ঐ সারাজের বাচ্চা সারাজ আমার মেজাজ আরো বিগড়ে দিয়েছে।’

লীনা এক সেকেন্ড ভেবে বলল,

‘ওহ, সেইজন্যই সারাজ ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করছিলেন, তুই কাউকে পছন্দ করিস কি-না?’

চমকে তাকাল পুতুল। লীনার দিকে ঝুঁকে এসে বলল,

‘সারাজ ভাই তোকে এই কথা কখন জিজ্ঞেস করেছেন?’

‘আজকে সকালেই। তুই আসার আগে।’

‘তুই কী বলেছিস?’

‘বলেছি, না, পছন্দ করিস না।’

পুতুল বিরক্তির সাথে বলে উঠল,

‘ধুর, বলতি কাউকে পছন্দ করি। না বলার কী দরকার ছিল?’

‘ওমা! মিথ্যে বলতে যাব কেন?’

‘আরে আহাম্মক, এটা শুনলে উনি হয়তো আমার বিয়েটা হতে দিতেন না। আমার শেষ আশাটাও তুই নষ্ট করে দিলি।’

পুতুল মন খারাপ করে চেয়ারে গা এলিয়ে দিল। তার বোধ হয় কপালটাই খারাপ। নয়তো একটার পর একটা কেবল খারাপই কেন হচ্ছে? সারাজ ভাই নির্ঘাত শিওর হওয়ার জন্য লীনাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। এখন তো উনি বুঝে গিয়েছেন, সে যে মিথ্যে বলেছে। তাহলে, আর কী বলে এখন বিয়ে আটকাবে? সত্যিটা বলে দিবে? বলে দিলে, সারাজ ভাই কি মেনে নিবেন সবটা? মেনে নিবেন পুতুলকে বউ হিসেবে?

পুতুল জানে, মানবেন না। পুতুলের প্রতি টান থাকলে তিনি নিজ থেকেই বিয়েটা আটকাতেন। কিন্তু, তিনি কাল থেকে এতটা নির্লিপ্ত, যেন কিছুই হয়নি। তার পুতুলের বিয়েতে তার কিছুই যায় আসে না। উল্টো ভার্সিটিতে এসে অন্য মেয়ের সাথে লাইন মারার চেষ্টায় আছেন। অ সভ্য লোক।

_____

‘হ্যালো ম্যাডাম, আকাশ বাতাস দেখে আবৃত্তি করলে চলবে না। অডিয়েন্সের সাথে আই কন্ট্যাক্ট করতে হবে, বুঝেছেন?’

লীনা ক্ষিপ্ত হলো। সে এখানে প্র্যাকটিস করতে আসার পর থেকেই লোকটা তার ভুল ধরছে। এই প্রথমবারের মতো সে স্টেজে দাঁড়িয়ে কোনো পারফরমেন্স করতে যাচ্ছে, এমনিতেই মারাত্মক নার্ভাস; তার উপর এই ছেলের একটু পর পর ধমক দিয়ে বলে উঠা কথাগুলো আরো বেশি ভয় পাইয়ে দিচ্ছে তাকে।

মাহাত চশমাটা ঠেলে ভালোমতো চোখে লাগাল। লীনার দিকে চেয়ে বিরক্ত গলায় বলল,

‘ম্যাডাম, আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?’

‘জি, পাচ্ছি।’

‘তবে যেভাবে বলেছি সেভাবেই করুন। আই কন্ট্যাক্ট রাখার চেষ্টা করুন।’

লীনা নাক ফুলিয়ে বলল,

‘এখানে কে আছে, যার সাথে আমার আই কন্ট্যাক্ট করতে হবে?’

মাহাত বুকের উপর হাত ভাঁজ করে টানটান হয়ে চেয়ারে বসল। শান্ত গলায় বলল,

‘আমি আছি না? আমার দিকে চেয়ে বলুন। এদিক ওদিক তাকানো যাবে না। জাস্ট, লুকিং এট মি। নাও, স্টার্ট।’

দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল লীনা। অনুষ্ঠানের আগ অবধি যে এই লোক তাকে মারাত্মক প্যারা দিবে সেটা আর বলার বাকি রইল না।

লীনা হালকা করে গলা ঝারল। অতঃপর শুরু করল আবৃত্তি,

” অচির বসন্ত হায় এল, গেল চলে–
এবার কিছু কি, কবি করেছ সঞ্চয়।
ভরেছ কি কল্পনার কনক-অঞ্চলে
চঞ্চলপবনক্লিষ্ট শ্যাম কিশলয়,
ক্লান্ত করবীর গুচ্ছ। তপ্ত রৌদ্র হতে
নিয়েছ কি গলাইয়া যৌবনের সুরা–
ঢেলেছ কি উচ্ছলিত তব ছন্দঃস্রোতে,
রেখেছ কি করি তারে অনন্তমধুরা।
এ বসন্তে প্রিয়া তব পূর্ণিমানিশীথে
নবমল্লিকার মালা জড়াইয়া কেশে
তোমার আকাঙক্ষাদীপ্ত অতৃপ্ত আঁখিতে
যে দৃষ্টি হানিয়াছিল একটি নিমেষে
সে কি রাখ নাই গেঁথে অক্ষয় সংগীতে।
সে কি গেছে পুষ্পচ্যুত সৌরভের দেশে।”
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

লীনা পুরো আবেগ ঢেলে কবিতাটা আবৃত্তি করল। তার মাঝে এক পলকও সে এদিক ওদিক চাইল না। সম্পূর্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে ছিল মাহাতের দিকে। মাহাতও চোখ সরাতে পারেনি। কী যেন খুব মনোযোগের সহিত শুনছিল সে। এই যে এখনও চোখ সরাতে পারছে না। কী এত দেখছে কে জানে? লীনা হালকা গলা ঝেরে বলল,

‘কোনো ভুল হয়েছে কি?’

সম্বিত ফেরে মাহাতের। এদিক ওদিক চেয়ে নিজেকে ধাতস্ত করে। তারপর মৃদু সুরে বলে,

‘না, সব ঠিক আছে। এভাবেই প্র্যাক্টিস করতে থাকুন।’

লীনার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটল। বলল,

‘ঠিক আছে।’

মাহাত সেই জায়গা ছেড়ে উঠে পড়ে। ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে একটু পানি দিয়ে আসা দরকার।

চলবে…

(পর্ব ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here