শেষটা_সুন্দর(সিজন-২) #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ২২।

0
395

#শেষটা_সুন্দর(সিজন-২)
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
২২।

‘ফোন দিয়েছিলি?’

‘হু, তুমি কি খুব ব্যস্ত?’

‘না, বল।’

পুতুল ঠোঁট কামড়ে হাসে। রগড় সুরে বলে,

‘আমি তো সব ধরে ফেলেছি, সারাজ ভাই।’

সারাজের অক্ষিযুগল স্থির হয়। ভ্রু এর মাঝে পড়ে দৃঢ় ভাঁজ। সন্দিহান কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

‘কী ধরে ফেলেছিস?’

পুতুল মিটিমিটি হাসছে। হু, এসেছিল তাকে জ্বালাতে। এখন যে নিজেই জ্বলছেন। ঐ কামাল মিয়ার কথা শুনলেই তো কেমন ছ্যাৎ করে উঠেন। ভাবেন, কেউই বুঝি কিছু বুঝে না। উনিই একমাত্র চালাক, আর বাকি সবাই হাদারাম।

‘আছিস?’

‘হু।’

‘তাহলে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছিস কেন? কিছু জিজ্ঞেস করেছি তো?’

‘তোমাকে আমি কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।’

অকপটে বলল পুতুল। আজ আর কোনো ভয় ডর নেই তার। সারাজ ক্রূর হাসে। বলে,

‘বাহ, খুব তো সাহস হয়েছে দেখছি। তোকে আমার বাধ্য বানানোর সমস্ত প্রক্রিয়া আমি সেরে ফেলেছি, পুতুল। বাড়ি যা, দারুণ এক সারপ্রাইজ আছে তোর জন্য।’

পুতুল এক পল ভেবে বলে,

‘আমার জন্য সারপ্রাইজ? তোমার মাথায় কী চলছে বলতো?’

পুনরায় হাসে সারাজ। মেয়েটাকে বোকা বানাতে বেশ লাগে তার। প্রশ্নের বিপরীতে কোনোপ্রকার জবাব না দিয়েই কল কেটে দেয়। পুতুল তাতে ক্ষুব্ধ হয় ভীষণ। এটা কেমন ধরনের অভদ্রতা? তার কথার কোনো মূল্য নেই? এভাবে মুখের উপর কল কেটে দিল? এই লোকটাকে বিয়ের পর সে নাকানিচুবানি খাওয়াবে। ডিসিশান ফাইনাল।

_____

বাসায় ফিরে পুতুল আরেকদফা চকিত হয়। তার মা’কে আজ অন্যরকম লাগছে। দেখে মনে হচ্ছে, দারুণ খুশি সে। তার স্নিগ্ধ মুখশ্রীতে সেই আমোদের প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট। হঠাৎ কী নিয়ে এত খুশি? ঐ কামাল মিয়ার সাথে বিয়েটা আবার ফাইনাল হয়ে যায়নি তো? আঁতকে উঠে তীব্রভাবে। ছুটে যায় মায়ের কাছে। বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘মা, কী হয়েছে? তোমাকে আজ এত খুশি লাগছে কেন?’

মেহুল হেসে তার দিকে তাকায়। উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে,

‘দারুণ খবর আছে, পুতুল।’

দারুণ খবর শুনে পুতুলের চিত্ত আরো চুপসে যায়। এই দারুণ খবর তার জন্য না আবার নিদারুণ কষ্ট হয়ে দাঁড়ায়। সে ভীত সুরে জিজ্ঞেস করে,

‘কী খবর, মা?’

‘তোর তো বিয়ে ফাইনাল।’

যা ভেবে অন্তঃকরণে এতক্ষণ তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছিল, অবশেষে তাই হলো। এবার তাকে ঐ কামাল মিয়াকেই বিয়ে করতে হবে। পুতুল অসাড় ভঙ্গিতে কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে প্রস্থান ঘটাল। মেহুল নির্বোধের মতো চেয়ে দেখল কেবল। মেয়েটা তার পুরো কথা না শুনেই চলে গেল? যাকগে, পরে না হয় সারপ্রাইজ দেওয়া যাবে।

গোসল সেরে পুতুল না খেয়েই শুয়ে পড়েছে। মেহুল এসে অনেকবার ডেকে গিয়েছে তাকে। কিন্তু সে কোনো সাড়া দেয়নি। তার বক্ষুঃস্থলের ব্যথাও ততক্ষণে আরো প্রখর হয়েছে। এই যন্ত্রণা কুলোতে না পেরে কেঁদে ফেলে সে। সারাজ ভাইয়ের সাথে অভিমান করে সে এই বিয়েতে রাজি হওয়ার অভিনয় করেছিল; কিন্তু, সারাজ ভাই এসবে কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখালেন না। বরাবরের মতোই নির্লিপ্ত ছিলেন। উনি কি তবে সত্যিই পুতুলকে চান না?

পুতুল ঠোঁট উল্টে উঠে বসে। তীব্র ক্রোধে গা কাঁপছে তার। এই এত এত আবেগ অনুভূতি কি ঠুনকো জিনিস নাকি? ঐ লোকটা তার সাথে এমন করতে পারে না। তাকে বুঝতে হবে। অবশ্যই বুঝতে হবে।

পুতুল উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। গোধূলি লগ্ন। অম্বরে তখন পীতবর্ণ অম্বুধর তাদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। সেই পীতবর্ণের এক ছটা বর্ণ এসে ঠিকরে পড়ছে পুতুলের কঠিন ললিত মুখশ্রীর উপর। মাত্রাধিক চটে আছে সে। সারাজের নাম্বারে কল লাগাল। কল রিসিভ হলে, ওপাশ থেকে শোনা যায় নিঃস্পৃহ গলার স্বর,

‘বারবার কল করে বিরক্ত করছিস কেন, বলতো?’

‘তুমি ভীষণ খারাপ, সারাজ ভাই। ভীষণ মানে ভীষণ। এই ভীষণের কোনো তুলনা নেই। ইনফিনিটি। তোমার মতো খারাপ লোক আমি আমার জীবনে আর একটাও দেখিনি।’

‘দেখবি কী করে? আমি এই এক পিস’ই আছি। তা, হঠাৎ আমাকে খারাপ বলার জন্য এত উতলা হয়ে উঠলি যে? কী এমন খারাপ কাজ করেছি আমি?’

‘তুমি কিছু করোনি; আর দুঃখটা তো আমার এখানেই। তুমি কিছুই করলে না। আমি বারবার বলেছি, মা’কে বোঝাও; বিয়েটা ভেঙে দাও। শুনলে না আমার কথা। এখন খুশি তো? এটাই তো চেয়েছ তুমি? এই সারপ্রাইজের কথাই তো বলছিলে নিশ্চয়ই?’

সারাজের কাছে খটকা লাগে। পুতুল এভাবে বলছে কেন? ও কি খুশি তবে হয়নি? ও কি চায় না, তার আর সারাজের বিয়ে হোক? তবে, এত বিদ্বিষ্ট কেন শোনাচ্ছে তাকে?
সারাজ গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে,

‘এই, কী হয়েছে বলতো? তুই এভাবে কেন বলছিস? তুই কি এই বিয়েতে খুশি না?’

পুতুলের এবার দুঃখে মরে যেতে ইচ্ছে করছে। সারাজ ভাই এখনও কিছু বুঝতে পারছেন না? অথচ তিনি নির্বোধ ডাকে পুতুলকে। কিন্তু উনার চেয়ে অধিক নির্বোধ কেউ আছে না-কি?

পুতুল ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকায়। সিক্ত সুরে বলে,

‘তুমি বুঝবে না, সারাজ ভাই। তোমাকে আমার বলা’ই ভুল হয়েছে। আমি আর তোমাক কিচ্ছু বলবো না। রাখি।’

রাখি বলেই রেখে দিল। সারাজ হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছে ফোনের দিকে। এই আহাম্মক মেয়ের হলো’টা কী? তার তো এতক্ষণে খুশিতে আধমরা হয়ে যাওয়ার কথা। অথচ, তা না করে উল্টো সে ফোন করে ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদছিল? ব্যাপার কী? সারাজ আর বিলম্ব না করে মেহুলকে কল দেয়। এক্ষুনি জানতে হচ্ছে সবটা।

সব শুনে কুটিল হাসল সারাজ। বলল,

‘আচ্ছা, এই ব্যাপার তাহলে? তোমার মেয়েকে কি আমি সাধে আহাম্মক বলি, মা? যাকগে, একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। ওকে একটু জ্বালানো যাবে। শোনো, ও যখন কিছু বুঝেইনি, তখন আপাতত আর বোঝানোর দরকার নেই। অনেক জ্বালিয়ে ছিল আমাকে। এবার তার শোধ নেওয়ার পালা।’

________

এই মাঝ রাতে মারাত্মক রকমের রোষ নিয়ে বসে আছে লীনা। ইচ্ছে করছে ফোনের ওপাশের ব্যক্তিটাকে তার রোষানলে একেবারে ভস্ম করে দিতে। সে আবারও তীব্র স্বরে বলল,

‘কী হলো, ফোন করে চুপ করে আছেন কেন? কথা বলতে না চাইলে বারবার কল কেন দিচ্ছেন? কী সমস্যা আপনার? বুকের গ্যাস্ট্রিক কি মাথায় উঠেছে? তাই এমন পাগলের মতো ব্যবহার করছেন?’

এবারও নিশ্চুপ ওপাশ। ঘন্টাখানেক যাবত ধরে এসবই হয়ে যাচ্ছে। কোনো এক আননোন নাম্বার থেকে বার বার কল আসছে। অথচ কল রিসিভ করলেই আর কোনো রা নেই। লীনা তখন থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির সাথে কথা বলার চেষ্টা করেই যাচ্ছে, অথচ সেই অজ্ঞাত ব্যক্তি হয়তো পণ করেছে, যায় হয়ে যাক না কেন আজ সে কোনোভাবেই মুখ খুলবে না। এবার রাগে ব্রহ্মতালু লাফাচ্ছে তার। এই মাঝরাতে ঘুম ভাঙিয়ে এসব ফাজলামোর কোনো মানে হয়। রাগে কল কেটে নাম্বারটা ব্লক করে দিল সে। রাগ দমাতে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলল। তারপর শুয়ে পড়ল আগের জায়গায়। এর কিয়ৎক্ষণ পরই আবার তার ফোন বেজে উঠে। মাথার ভেতরটা ক্রোধে ফাটছে তার। ফোন হাতে নিয়ে দেখে আরেকটা আননোন নাম্বার। নির্ঘাত আগের ব্যক্তিই, এখন অন্য নাম্বারে কল করছে। লীনা কল রিসিভ করে না। কল আপনা আপনি কেটে তার দু মিনিট পরেই একটা মেসেজ আসে। মেসেজে দেখেই বিস্মিত হয় লীনা। বড়ো বড়ো চোখে চেয়ে পড়তে থাকে সেটা। যেখানে লেখা,

‘আপনার রঙে হৃদয় রাঙিয়ে নারী
করে কুন্ঠিত স্বরে শ্লোক দান,
অথচ নারী স্বীয় অজ্ঞ
বোঝে না মোর প্রণয়বান।’

মেসেজ দেখে চক্ষু চড়কগাছ। এই যুগে এসে এমন কবিতার স্রোতে প্রেম নিবেদন কেউ করে নাকি? আশ্চর্য! কে এই ব্যক্তি?

চলবে….

(বলেন তো, কে এই ব্যক্তি?🤭)

ছবি: রত্নাবু❣️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here