সে_প্রেমিক_নয় #Mehek_Enayya(লেখিকা) #পর্ব ২১

0
344

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ২১

রাতে অঝোরে বৃষ্টির পর সকালে ঝলমলে রোদের দেখা মিলেছে। রোদের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে চারোপাশে। সেই সাথে তনুসফার মন মস্তিকও আজ অগ্নিগিরি! রাগে অগ্নিমূর্তি হয়ে সদর দরজা দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। ড্রইংরুমের কাঁচের সুবিশাল ফুলের টপ শব্দ করে মেঝেতে ফেলে দেয়। হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই ছুঁড়ে ফেলছে এদিক সেদিক। রাকিয়া মেয়ের চিৎকার শুনে রুম থেকে বেরিয়ে আসে দ্রুত পায়ে। সবকিছু এলোমেলো দেখে হতভম্ব সে। আজ নির্বাচন ছিল। প্রত্যেকবার এইদিনে দুই ভাইবোন মুখে হাসি ফুটিয়ে বাসায় আসে। আজ তনুসফা একাই চলে এসেছে। রাকিয়া কিছু সময়ের মধ্যেই সবটা বুঝে যায়।
তনুসফা নিজ চুল মুঠি করে ধরে সোফায় বসে পড়ে। রাকিয়া মেয়ে পাশে বসে। শান্ত স্বরে বলে,

-শান্ত হো মা শান্ত হো। বয়স হচ্ছে এইরকম রাগ শরীরে জন্য ভালো না।

তনুসফা শান্ত হলো না। ফণা তোলা সাপের মতো ফুসতে লাগলো। রাকিয়া পুনরায় তনুসফাকে বলে,

-কী হয়েছে মা? ইরান বাবা আসেনি?

-আমি এবার বিজয়ী হইনি আম্মা।

রাকিয়া বুঝেছিল। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সান্ত্বনার বাণীতে বলে,

-তো কী হয়েছে? এবার বিজয়ী হতে পারিসনি সামনের বার হবি। এই ছোট বিষয়ের জন্য এতো রাগ করে!

-আম্মা তুমি বুঝতেছ না আমার হাত থেকে কী চলে গিয়েছে। আমার ক্ষমতা, আমার দাপট এখন অন্য একজনের হাতে! আর এবার ইরানও আমার কোনোভাবে সাহায্য করেনি।

-আবার হবে তুই চিন্তা করিস না। আর ইরানকে দোষারোপ দেওয়া বন্ধ কর।

তনুসফা দীর্ঘশ্বাস নেয়। শান্ত স্বরে বলে,

-আমি আজ পরাজয় হতাম না আম্মা আমার সাথে কেউ বেঈমানি করেছে।

-মানে?

-আমি মন্ত্রী সাহেবের সাথে ডিল করেছিলাম তার মেয়ের সাথে ইরানের বিয়ে দেবো আর সে আমাকে বিজয়ী করবে। আমাদের কথোপকথন এর ভিডিও কেউ পলিটিক্স গ্রূপে লিক করেছে। সেই ভিডিও দেখে সবাই আমার ওপরে অনেক রাগ। এর কারণেই আমি বিজয়ী হইনি।

-মা তোরও তাহলে দোষ আছে।

-আম্মা রাজনীতিতে এইরকম ডিল অহরহ হয়। আপাদত আমার কাজ যে ভিডিওটা করেছে তাকে খুঁজে বের করা। সে হয়তো আমার অনেক পরিচিত কেউ।

-ইরান কোথায়?

-আমি জানি না। নির্বাচন শেষে কোথায় জেনো গিয়েছে।

-ঠিক আছে। যা তুই বিশ্রাম কর গিয়ে।

-হুম।

তনুসফা শাড়ী ঠিক করে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায়। আচমকা দু’তালায় তাকাতেই তার মুখের ভঙ্গিমা আবারও রাগী হয়ে যায়। আনাবিয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে আর তার দিকে তাকিয়ে মিটমিট হাসছে। তনুসফা পারছে না আনাবিয়াকে চোখ দিয়ে গিলে ফেলে। আনাবিয়ার হাসিটা আরো চওড়া হয়। এক হাতে কাপ নিয়ে আরেক হাত দিয়ে হাই দেখায়। তনুসফা রাগে কটমট করতে করতে ভিতরে চলে যায়। আনাবিয়া এবার শব্দ করে হেসে দেয়। ধীর পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে। রাকিয়াও ততক্ষনে নিজ রুমে চলে গিয়েছে। আনাবিয়া আশেপাশে চোখ বুলিয়ে সদর দরজা ধরে বাহিরে চলে আসে।
ইরান কোথায়? তনুসফার সাথেই তো আসার কথা তার! আনাবিয়া হাঁটতে হাঁটতে পুলের সামনে যেয়ে বসে। কয়েকদিন পর জেসিকার বিয়ে। এখন থেকেই মোটামুটি আয়োজন করা শুরু হয়েছে। অনেক বেশি বড় করে ফাঙ্কশন করবে। আজ ইসরাফকে বাসায় নিয়ে আসা হবে। অজান্তেই আনাবিয়ার মুখে পৌঁশাচিক হাসি ফুটে উঠে।
গাড়ি পার্ক করে মাত্রই বাসায় প্রবেশ করেছে ইরান। আনাবিয়াকে আনমনে বসে থাকতে দেখে পাঞ্জাবী ঠিক করতে করতে এগিয়ে যায় সেখানে।

-এই রোদের মধ্যে এখানে বসে আছো কেনো? কুইকলি ভিতরে চলো।

-আমার এখানে ভালো লাগছে।

ইরান আনাবিয়ার পাশেই বসে পরে। হাতের সাহায্যে ললাটের চুল গুলো পিছনে নিয়ে যায়। গম্ভীর স্বরে বলে,

-কী পরিধান করেছ এটা?

-কেনো? ড্রেস পরেছি।

-আমার দেওয়া চিহ্ন সবাইকে দেখিয়ে না ঘুরলেও পারো! ওড়নাটা সুন্দর করে নেও।

আনাবিয়া টু শব্দ করল না। ওড়না ঠিক করে ভোঁতা মুখে ইরানের পানে চোখ স্থির করে।

-আপা এসেছে?

-হ্যাঁ।

-ঠিক আছে।

আনাবিয়া নিজের হাসি লুকিয়ে শান্ত স্বরে বলে,

-আপনার বোন এবার বিজয়ী হয়নি? তাকে দেখলাম রাগারাগি করছে।

-হুম, অন্য একজন হয়েছে।

-যাক ভালোই হয়েছে।

-আপার আজ মুড ভালো নয়। দোয়েয়া করে তুমি কোনো উল্টোপাল্টা কথা বলিও না আনাবিয়া। আমি চাই না তোমাদের পুনরায় ঝগড়া হোক।

আনাবিয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কোমরে হাত দিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বলে,

-হোয়াট ডু ইউ মিন ইরান? সবসময় আমিই ঝগড়া করি তার সাথে? সে যে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে সেটা দেখেন না?

-আমি এইরকম কিছু বলতে চাইনি।

-ওও রিয়েলি! আপনি কী বলতে চেয়েছেন আমি বুঝেছি।

-ওয়েল। শুনো আনাবিয়া, আমি তোমার হাসব্যান্ড। তোমাকে ভালোবাসি বলে অনেক সময় তোমার অনেক দোষ মাফ করে দেই তবে আমার সাথে উঁচু আওয়াজে কথা বলবে না। এটা আমি একদম পছন্দ করি না।

-যখন আপনার বোন বলে তখন তাকে তো কিছু বলেন না!

-আপারও সাহস নেই আমার সাথে উঁচু আওয়াজে কথা বলার।

-আমি বলবো-ই। আপনাকে ভয় পায় না আনাবিয়া। গট ইট ইন ইউর মাইন্ড।

আনাবিয়া রাগে ফেটে যাচ্ছে একদম। হাতের কাপটা নিচে ফেলে দেয়। সাথে সাথেই চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে যায় কাঁচের টুকরো গুলো। ইরান সেদিকে তাকিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে নেয়। আনাবিয়া বড় বড় পা ফেলে বাড়ির ভিতরে চলে যায়। ইরান কপালে হাত ঠেকিয়ে নীরবে বসে রইলো।

_____________________

ইসরাফকে বিকেলে বাসায় নিয়ে আসা হয়। আনাবিয়া দুপুরের পর আর নিজ রুম থেকে বের হয়নি। ভীষণ রেগে আছে সে ইরানের ওপরে।
রাত নয়টায় রুমে প্রবেশ করে ইরান। আনাবিয়া তখন গভীর ঘুমে মগ্ন। ইরান একবার আনাবিয়াকে দেখে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুম চলে যায়। ফোনের রিংটোনের আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় আনাবিয়ার। ইরানের ফোন বাজছে। বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে শোয়া থেকে উঠে বসে। ততক্ষনে ইরান শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসেছে। উধাম গায়ে কালো রঙের পেন্ট পরনে তার। তৈয়ালে দিয়ে চুল মুচছে। ফোন হাতে নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। আনাবিয়া বিছানা থেকে নামলো না। আধশোয়া হয়ে বসে ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রল করতে থাকে। ইরানকে দেখেও না দেখার ভান করে।
ফুরফুরে মনে আনাবিয়ার সাথে দেখা করতে আসে জেসিকা। আনাবিয়া তাকে দেখে হালকা হাসে। জেসিকা আনাবিয়ার পাশে বিছানায় বসে। উৎফুল্ল হয়ে বলে,

-বাসায় কখন এসেছেন মামী?

-ভোর সকালেই তো। দেখো নি?

-না। আমি আবার একটু পার্লার গিয়েছিলাম। নানুমার মুখে শুনলাম আপনারা এসেছেন।

-ওহহ।

-হ্যাঁ, কোথায় নিয়ে গিয়েছিল মামু আপনাকে?

-কক্সবাজার। অনেক বেশি সুন্দর একটা প্লেস ছিল।

তাঁদের কথোপকথনের মাঝেই ইরান রুমে প্রবেশ করে। জেসিকাকে দেখে মুচকি হেসে বলে,

-জেসিকা তোমার মাদার কোথায়?

-হয়তো সে নিজের রুমে। আমি মামীর সাথে দেখা করতে আসলাম।

-ওকে। শপিং ডান?

-অলমোস্ট ডান। মামী আপনি শপিং করবেন না? আর হ্যাঁ আমার সাথে কিন্তু পার্লারেও যাবেন।

ইরান জেসিকার কথায় তাল মিলিয়ে বলে,

-হ্যাঁ জেসিকা তুমি একটু তোমার মামীকে নিয়ে যেও শপিং করতে।

আনাবিয়া মেকি হেসে বলে,

-আমার আর শপিং এর প্রয়োজন নেই।

-কী বলেন মামী! এইরকম মেয়েও আবার হয়! আপনার মতো কম খরচ করা মেয়েই তো বাংলাদেশের যুবকরা চায়।

-ভেরি ফানি।

-আপনার চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পরে গিয়েছে। আপনি একটা ঘুম দেন মামী। আমি তাহলে আসি।

-ঠিক আছে।

জেসিকা চলে যায়। আনাবিয়া পুনরায় ফোন নিয়ে বসে। ইরান দরজা লাগিয়ে লাইট অফ করে আনাবিয়ার পাশে বিছানায় উঠে বসে। আনাবিয়া তখনও স্বাবাবিক। ইরান উল্টো হয়ে শুয়ে আদেশ স্বরে বলে,

-আনাবিয়া আমার পিঠ আর কোমরটা একটু মালিশ করে দেও তো। সারাদিন বসে থাকতে থাকতে আমি প্রায় শেষ!

-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

আনাবিয়ার থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে ইরান মাথা তুলে আনাবিয়া দিকে তাকায়। অসহায় কণ্ঠে বলে,

-এইযে মিসেস শেখ, একটু দোয়েয়া করুন এই অসহায় বালকের ওপর।

-ডোন্ট ডিস্টাব মি।

-আমি ডিস্টাব করছি?

উঠে বসে ইরান। আনাবিয়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে তার হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নেয়। আনাবিয়া রাগী মুখ করে বলে,

-গিভ মি মাই ফোন।

-নো নো নো। দেখো ডিসটার্ব কাকে বলে এবং কত প্রকার।

আনাবিয়া এবার ইরানকে এটিটিউড দেখিয়ে শুয়ে পরে। কাঁথা দিয়ে মাথা সহ সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে নেয়। ইরান নাস্তানাবুদ! আনাবিয়ার কাঁথা ধরে টানাটানি করতে থাকে। আনাবিয়াও শক্ত করে ধরে রয়েছে কাঁথা। ইরান বুদ্ধি করে নিজেও আনাবিয়ার কাঁথার মধ্যে ঢুকে পরে। হাত পা দিয়ে জড়িয়ে ধরে আনাবিয়াকে। আনাবিয়া অস্থির হয়ে বলে,

-আমি মরে যাবো তো এতো টাইট করে ধরেছেন কেনো! ছাড়ুন।

-দেখো ডিয়ার ডিস্টাব কাকে বলে।

-ভালো হবে না কিন্তু ছাড়ুন।

-ভয় পেলাম না।

-ইরান সত্যি বলছি আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।

-আর ইগনোর করবে আমায়? এটিটিউড দেখাবে আমাকে?

আনাবিয়া কিছু বললো না। আলগাস্থে নিজেকে ঘুরিয়ে ইরানের মুখোমুখি করে। ইরানের মুখে বিজয়ী হাসি আর আনাবিয়ার লাল হয়ে উঠা বিরক্তকর মুখ। ইরান ভ্রু নাচিয়ে বলে,

-এবার তাহলে মাথায় জ্ঞান এসেছে? আগেই নিজ থেকে আমার কাছে নিজেকে ধরা দিলেই পারতে ডিয়ার।

-আপনাকে তো,

আনাবিয়া ইরানের গালে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে কামড় বসিয়ে দেয়। ইরান প্রথমে দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা সহ্য করলেও শেষে আতর্নাদ করে উঠে। আনাবিয়া নিজেই ভয় পেয়ে ছেড়ে দেয় ইরানকে। গাল ডলতে ডলতে আর ব্যাথায় কুঁকরিয়ে উঠে বসে ইরান। আনাবিয়া বিছানা থেকে নেমে বাতি জ্বালিয়ে দেয়। ইরানের কাছে আসতেই দেখে ইরানের গালে তার দাঁতের ছাপ বসে গিয়েছে। হালকা রক্ত জমেছে জায়গাটায়। আনাবিয়ার আপসোস হলো। সে শয়তানি করে কামড় দিয়েছিল এতো জোরে হয়ে যাবে বুঝতে পারেনি সে। আমতা আমতা করে বলে,

-আর ইউ ওকে?

-ওকে থাকার মতো অবস্থায় রেখেছো আমায়! আমার গালের মাংস তোমার এতোই পছন্দের আগে বলতে আমি নিজেই কেটে তোমাকে দিয়ে দিতাম।

-শাট আপ ইরান। আমি ইচ্ছে করে এতো জোরে কামড় দেইনি।

-বুঝেছি। ঘুমাও এখন আর ডিস্টাব করব না।

-আমার ওপর রেগে আছেন?

-না ঘুমাও।

আনাবিয়া নিজের ওড়না দিয়ে ইরানের গাল মুছে দেয় সযত্নে। তারপর উদাসীন হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে ইরানের দিকে। গভীর ভাবে নিজ অধর ছুঁয়ে দেয় ইরানের গালে। হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

-আই এম সরি। প্লিজ ফোর্গিভ মি।

-তোমার একটু অধরের স্পর্শের জন্য আমি র*ক্তার*ক্ত হতেও রাজি।

-বদমাইশ এমপি!

_______________________

জমকালো সন্ধ্যা। চারোদিকে বিভিন্ন রঙের কৃত্রিম বাতির আলো জ্বলজ্বল করছে। তার মধ্যে সাদা রঙটা একটু বেশিই উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। আজ জেসিকার গায়ে হলুদ। পুরো শেখ বাড়ি আজ চকচক করছে। ডেকোরেশন যেই দেখছে সেই জানো তারিফের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। অবশ্য তারিফ তো করতে হবেই এমপি ইরান শেখ নিজ দায়িত্বে যে ভাগ্নির বিয়ের সবটা আয়েজন করেছে। এক এক করে মেহমান আসছে। আঙিনায় স্টেজ করা হয়েছে। সব কিছুর মধ্যেই একটা রয়েল রয়েল ভাব। রিপোর্টাদের ভীড় জমেছে বাড়ির সদর মূখ দরজায়। আজ তাঁদের হিট টপিক-ই জেনো এটা। ইরান, তনুসফা কিছুক্ষন আগেই হাসি মুখে কিছু মন্তব্য বলে চলে গিয়েছেন। এখন ব্যস্ত থাকায় আর আসতে পারেনি।

গাঢ় লাল রঙের পাঞ্জাবীতে নিজেকে সাজিয়েছেন ইরান। হাতে ব্র্যান্ডেড ঘড়ি। সেট করা চুল ও চাপ দাঁড়ি। মুখে গম্ভীর ভাব সব মিলিয়ে একটু বেশিই সুদর্শন লাগছে ইরানকে। তাঁদের তেমন আত্মীয়স্বজন নেই। হাতে গোনা কয়েকজন আছে তারা এসেছে।
আনাবিয়া গোমড়া মুখে বসে আছে। স্মুখীন বিছানায় রাখা একটি লাল রঙের শাড়ী। আনাবিয়া শাড়ীটা দেখছে আর অস্থির হয়ে উঠছে। কম্বলের মতো এই মোটা শাড়ী সে পারবে না নিজের শরীরে জড়াতে। আর হলুদ জেসিকার। সে কেনো এতো ভয়ংকর শাড়ী পড়বে! বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে আলমিরা খোলে। ভাবনায় পরে যায় কী পরিধান করবে।

অন্যদিকে তনুসফা গেস্টদের ওয়েলকাম করতে ব্যস্ত। হঠাৎ ফোনে কারো সাথে কথা বলে তার মুখ খুশিতে চকচকে উঠে। দ্রুত পায়ে সদর দরজার সামনে যায়। কিছুক্ষনের মধ্যেই পর পর দু’টো কালো রঙের গাড়ি বাড়ির ভিতরে ঢুকে। প্রথম গাড়ি থেকে বের হয় মন্ত্রী সাহেব। তনুসফা তার সাথে হাসি মুখে কুশলবিনিময়ী করে। একজন বডিগার্ড দ্বিতীয় গাড়ির দরজা খুলে দিতেই বেরিয়ে আসে এক অপূর্বময় রমণী। টকটকে লাল রঙের জামদানি শাড়ী বাঙালি স্টাইলে পরা। হলদে ফর্সা গায়ের বরণে লাল রঙের টাটকা গোলাপ ফুলের তৈরি গহনা জড়িয়েছে কায়ায়। খোঁপা করা চুলগুলোয় বেলি ফুলের মালা গাঁথা। মুখে কয়েকটা কেশ এসে তার সৌন্দর্যকে বহু গুন বাড়িয়ে দিচ্ছে। লাল লিপস্টিকে রাঙানো ঠোঁটে মৃদু হাসির রেখা দেখা যাচ্ছে।
তনুসফা তাহশিয়াকে দেখে আকাশ থেকে পরলো। তাহশিয়ার থুতনি ধরে বিস্ময় ও মুগ্ধ হয়ে বলে,

-মাশাআল্লাহ! তুমি সুন্দরী হবে এটা আমি জানতাম তবে আস্ত এক ফুটন্ত গোলাপ ফুল হবে এটা ভাবি নি।

তাহশিয়া হাসলো। হাতের চুরিগুলোতে হাত বুলিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

-আমারও একই অবস্থা! আপনার বয়স অনুযায়ী নিজের সৌন্দর্যকে বেশ ধরে রেখেছেন আপনি তনুসফা শেখ।

-ধন্যবাদ। ভিতরে এসো।

রিপোর্টার’সরা ঘিরে ধরে তাহশিয়াকে। মন্ত্রীর মেয়ে ছাড়াও তার নিজেরও একটা পরিচয় আছে। একজন ফেমাস ফ্যাশন ডিজাইনার সে। ছয় বছর পর নিজ দেশের মাটিতে পা দিয়েছেন তিনি। একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে রিপোর্টার’স। বেশ সাবলীল ভাবে উত্তর দিচ্ছেন তাহশিয়া। তার সাথে কয়েকটা ছবির জন্য পোজও দিচ্ছে। ফাঙ্কশনের চিপ গেস্টই সে। সবাই আড়চোখে অথবা সরাসরি তাকেই দেখছে। তাহশিয়ার নজর খুঁজে চলছে তার অতি প্রিয় মানুষটিকে।

জেসিকাকে নিয়ে স্টেজে বসানো হয়েছে। তাহশিয়াও আসন্ন গ্রহণ করেছে। কিছুক্ষন পূর্বেই সে তার পছন্দের মানুষটিকে দেখতে পেয়েছে। এখনও পলক না ফেলে তাকেই দেখছে। অথচ তাহশিয়াকে দেখছে ফাঙ্কশনে আসা সকল পুরুষ! আনাবিয়া মাত্রই আঙিনায় পা দিয়েছে। তাকে দেখে লাগছে না সে কোনো বিয়ের ফাঙ্কশনে এসেছে। রাকিয়া আনাবিয়াকে দেখে তার দিকে এগিয়ে যায়। আহাম্মক বনে গিয়ে বলে,

-মা এটি কী পরেছিস তুই? শাড়ী বা সেলোয়াড় কামিজ পরতে পারতিস তো!

আনাবিয়া মুখ ছোট করে কিনারে একটা চেয়ারে বসে পরে। উদাসীন কণ্ঠে বলে,

-আমি এটাতেই কমফোর্টেবল মম।। আর আমি স্টেজের ঐখানে যাবো না এখানেই বসে থাকবো।

-মা আমার সাথে আয় জামাটা চান্স করে নে।

আনাবিয়াকে খুঁজতে খুঁজতে পুল সাইটে আসে ইরান। এখানেও কয়েকজন আছে। হাত ঘড়িতে সময় দেখে সামনে তাকাতেই তার নজর আটকে যায় সেখানে। চোখ রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে যায়। কপালে রাগে দু ভাঁজ পরে। পকেটে হাত ঢুকিয়ে বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যায় আনাবিয়ার দিকে। আনাবিয়াকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত আপাদমস্তক পরোক্ষ করে দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে,

-হলুদের ফাঙ্কশনে তুমি গেঞ্জি আর জিন্স পেন্ট পরে নিচে এসেছো! আমি না শাড়ী রেখে এসেছিলাম? ওহ গড আনাবিয়া!

>>>চলবে।
(আসসালামু ওলাইকুম। হঠাৎ গল্প না দেওয়ায় অনেকেই আমাকে খারাপ ভাবছেন, কটু কথা বলছেন! প্রথমেই সরি আমি নিজ ইচ্ছায় হঠাৎ গল্প দেওয়া বন্ধ করতে চাইনি। আমি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিলাম। ফোনও ধরতে পারিনি যে পোস্ট করে আপনাদের বলবো। আলহামদুলিল্লাহ এখন পুরোপুরি সুস্থ না হলেও মোটামুটি ভালো আছি। আর হ্যাঁ এখন থেকে গল্প প্রতিদিন দেবো। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here