হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস (২) #পর্ব_০৮+০৯ #মোহনা_হক

0
285

#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস (২)
#পর্ব_০৮+০৯
#মোহনা_হক

-‘একটা বড়সড় গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবো রুয়াত?’

বিছানা গোছাচ্ছে রুয়াত। নিমি রুমের এক কোনায় বসে আছে। কাজ তো করেই না আবার ফাঁকিবাজি দেখায়। সে বলবে বড়সড় গুরুত্বপূর্ণ কথা? ভেঙচি কাটে রুয়াত। নিমির কথায় উত্তর দেয়নি। চুপচাপ নিজের কাজ করে যাচ্ছে। নিমির কথা শুনে কান নষ্ট করতে চায় না সে।

নিমি ফের বলে-
-‘তুই ভেঙচি কেটেছিস আমি দেখেছি কিন্তু। ঠিক আছে আজ আমার কথাটা শোনার প্রয়োজন মনে করলি না। একদিন ঠিকই করবি। যখন আমি থাকবো না।’

ফিক করে হেসে দেয় রুয়াত। নিমি ও মিটমিট করে হাসছে অন্য দিকে ফিরে।

-‘তোর এসব কথা বন্ধ কর। আচ্ছা বল কি বলবি?’

হুড়োহুড়ি করে নিমি উঠে রুয়াতের কাছে। কথাটি না বললে শান্তি লাগতো না তার। একপ্রকার অশান্তি বয়েছিল মনের মধ্যে।

-‘আমি আজ একটা জিনিস খেয়াল করলাম এবার আর আয়াজ ভাইয়া বিয়ের কথা বলার সময় তাকায়নি তোর দিকে। আমার মনে হয় ভাইয়া বুঝে গিয়েছে আমি নজর রাখছি তার দিকে। আর ওনার কথা বলার ধরণ দেখেছিস? আমাদের ভালোবাসার অধিকার নেই শুধু তারই আছে। সে ভালোবেসে আবার বিয়েও করবে। তাহলে আমার বেলায় এতো নিয়ম করে রেখেছে কেনো?’

-‘একদিন তাকিয়েছে বলে প্রতিদিন তাকাবে? তুই যতসব উল্টো পাল্টা ভাবিস। আর রইলো তোর প্রেমের কথা! এগুলো আমার কাছে বলিস কেনো? আয়াজ ভাইয়ার কাছে বলতে পারিস না? আর এগুলো নিয়ে আমার সাথে কথা বলবি না।’

চোখ মুখে হাত দিয়ে ঢেকে ফেলে নিমি। শাফী কে সবার অগোচরে অনেক বার কল দিয়েছে কিন্তু বরাবরের মতো শাফীর মোবাইল বন্ধ বলছে। হাসি মুখে থাকলেও মনের ভিতর হাজার হাজার যন্ত্রণা লুকিয়ে আছে নিমির। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে সে সহ্য করতে পারছে না। আর মেনে নিতে পারছে না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। সমবয়সী বলে কি ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে না? সব ভালোবাসা কি বয়স দেখে হয়? নিমি ঠিক শাফীর সাথে থাকতে পারবে। আশে পাশের মানুষ কেনো ভুল বুঝে বসে আছে নিমি কে? মেনে নিলে কি হবে? মৃদু শব্দে কেঁদে ওঠে নিমি। তার চারপাশে বড্ড অশান্তি লাগছে। রুয়াত চমকে তাকায় নিমির দিকে। আশ্চর্য সে। হঠাৎ এভাবে কেনো কাঁদছে?

-‘কি হয়েছে নিমি? কেনো কাঁদছিস?’

রুয়াত নিমি কে বুকে জড়িয়ে নেয়। যতোই নিমি কে বিভিন্ন কারণে বকা দিক, রাগ করুক দিন শেষে রুয়াত নিমি কে ছাড়া থাকতে পারে না। কিছু কিছু কারণে বেশ অনেক্ক্ষণ যাবত রাগ করে থাকে কিন্তু নিমিই সেরা বোন, বান্ধুবী। হঠাৎ হাসিখুশি মেয়েটা কে কাঁদতে দেখলে কেমন লাগবে? হয়তো সেটা কারোই ভালো লাগবে না। সেখানে যদি হয় প্রিয় মানুষের কান্না তাহলে নিশ্চিত একটু না একটু হলেও খারাপ লাগবে। রুয়াত মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় নিমির।

-‘বলবি না কি হয়েছে?’

মাথা তুলে নিমি। দু হাত দ্বারা চোখ মুছে। খোপা করে খোলা চুল বাঁধে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে-

-‘জানিস রুয়াত শাফী কে আমি অনেক বার কল দিয়েছে ধরেনি। বারবার বন্ধ বলবে। ওর বন্ধু নবীন কে ও কল দিয়েছি ও ধরেনি।’

কিছু চমকায় রুয়াত। নিমি কাউকে না জানিয়ে আবার শাফীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। এবার যদি কারো কানে কথাটা যায় নিশ্চিত নিমির বাবা মা বকা দিবে। তখন দেখা করতে গিয়েছে শুনে জেবা হাত তুলেছিলো গায়ে। নিমির বাবা মা কথা বন্ধ করে দিয়েছিলো কয়েকদিনের জন্য। এবার এসব শুনলে আর বাসায় রাখবে না নিমি কে। মেয়েটা কি এসব বুঝে? বোঝার ও একটা সময়, বয়স, জ্ঞান বুদ্ধি থাকার কথা। যা সবগুলোই মেয়েটার মধ্যে রয়েছে। তাহলে কেনো বারবার এমন ভুল করছে? রুয়াত নিমির গালে হাত রাখে। একটু চিন্তিত স্বরে বলে-

-‘গতবার কি হয়েছে তুই জানিস না? নিজের চোখে দেখেছিস সব। তাহলে কেনো আবার ঠিক একই কাজ করছিস?’

অধর কামড়ে কান্না থামায় নিমি। তার মনের কথা কেউ বুঝবে আদোও? ভিতরটা যেনো কষ্টে ফেঁটে যাচ্ছে। উঠে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। রুয়াত কে বলার কোনো ইচ্ছে নেই। সবার মতো রুয়াত ও বুঝবে না কিছু।
নিমি কে উঠে বারান্দায় যেতে দেখে রুয়াত ও সেখানে গেলো। পিঠে হাত রেখে বললো,

-‘আমি তোর ভালোর জন্য বলেছি। সত্যি এর পিছনে কোনো কারণ নেই। এমনটা ও নয় যে সবার মতো আমি তোর কষ্ট বুঝবো না।’

-‘তুই কাউকে ভালোবাসিস না তাই বুঝবি না ঠিক। আমি যে প্রতিনিয়ত শেষ হয়ে যাচ্ছি রুয়াত। আমাকে একবার শাফীর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দে। আমার ভালো লাগছে না কিছু। সব পা’গ’ল পা’গ’ল লাগছে। একবার শাফীর সাথে কথা বলিয়ে দিবি? তুই ওকে কল দে আমি জানি ও তোর কল পেয়ে ধরবে। আমায় মনেহয় ব্লক করে দিয়েছে। আমাকে শুধু একবার বলুক যে কেনো এতো ইগনোর করছে। ওর আমার কথা মনে পড়ে না? আমার জন্য কষ্ট হয় না? কিভাবে এতোদিনের সম্পর্ক ভুলে থাকতে পারছে? আমি পারছি না কেনো? ভুলতে পারছি না শাফী কে। এতো দিনের সম্পর্ক ভুলতে পারছি না।’

চাপা আর্তনাদ নিমির। মানুষ ভালোবাসার কাঙাল। এ কথাটি শুধু শুনেই গেলো রুয়াত। কখনো পরিপক্ব প্রমাণ পায়নি৷ আজ নিমির অবস্থা দেখে বুঝে গিয়েছে। সাথে প্রমাণ ও পেয়েছে। একটা মানুষ কতোটা ভালোবেসে সেই ভালোবাসার মানুষ কে হারিয়ে যে এভাবে পাগলামো করতে পারে নিমি কে না দেখলে বোঝাই হতো না। রুয়াত নিজেকে সামলায়। ঢোক গিলে। অতঃপর বলে-

-‘আমি তোর কষ্ট অনুভব করতে পারছি নিমি। কিন্তু সমাজের মানুষের কথাও ভাবতে হবে। তারা এসব সহজ ভাবে নিবে না। বা’জে কথা রটাবে। আচ্ছা ওটা বাদ দে তোর মা বাবার কথা ভেবে দেখ। তারা তো কখনো রাজি হবে না এই সম্পর্কে। রাজি হবে বল? কাঁদিস না। যা হয় ভালোর জন্য হয়। রুমে চল আমার সাথে।’

রুয়াতের হাত ছেড়ে দেয় নিমি। অন্যদিকে ঘুরে বলে-
-‘বলেছিলাম না তুই বুঝবি না। আমার কথা মিললো তো? তুই এখান থেকে দয়া করে চলে যা। আমার ভালো লাগছে না কারো কথা শুনতে।’

-‘যাবো না। কেনো পাগলামো করছিস? কেউ এই সম্পর্ক মেনে নিবে না।’

-‘কেনো মানবে না? কোন দিক থেকে খারাপ সে? আমি জানি সব আয়াজ ভাইয়ের জন্য হয়েছে। ওনি মানা করেছে যেনো শাফী আমার সাথে কথা না বলে। নিজেকে কি মনে করেন তিনি? সব সময় জোর খাটাবেন। কেনো কেনো? ওনি তো ভালোবেসে বিয়ে করবেন। নিজের পছন্দ অনুযায়ী। তাহলে আমার বেলায় কেনো এতো সমস্যা তার?’

রুয়াত চুপ হয়ে যায়। নিমি ক্ষেপেছে। এখন উল্টো পাল্টা কিছু বলা মানে সব দোষ রুয়াতের ঘাড়ে এসে পড়া। খানিক সময় চুপ থেকে রুয়াত বলে-

-‘আচ্ছা হয়েছে। এখন রুমে আয়। রাত কিন্তু কম হয়নি।’

-‘যাবো না আমি। তুই গিয়ে ঘুমা।’

ফ্লোরে বসে আবারও কাঁদছে নিমি। রুয়াত হকচকিয়ে যায়। একবার কাঁদে তো আরেক বার রেগে জোরে কয়েকটা কথা বলে। তবে এটা সত্য নিমির এমন পরিণতি সহ্য করতে পারছে না। রুয়াত কিছু ভেবে নিমির হাত ধরে টেনে দাঁড় করায় তাকে। বড়সড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলে-

-‘চল আয়াজ ভাইয়ের সাথে কথা বলবো। চিন্তা নেই। শুধু আমি বলবো। তুই দাঁড়িয়ে থাকবি। তোর বলা কথা গুলোই আমি তাকে বলবো। চল আমার সাথে।’

নিমি কে নিয়ে যাচ্ছে রুয়াত। নিমি অবাক হয়ে শুধু চলে যাচ্ছে রুয়াতের সাথে। তার সত্যিই কিছু বলার নেই। আর বলবে ও বা কিভাবে? রুয়াত কি কথা বলার সুযোগ দিয়েছে। আয়াজের রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায় দু’জন। দু দু’বার নক দেওয়ার পর দরজা খোলে আয়াজ। হঠাৎ এতো রাতে রুয়াত আর নিমি কে দেখে অবাক হয়েছে। সহসা রুয়াত বললো,

-‘ভাইয়া আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো। বলা যাবে?’

হাতের মোবাইল থেকে আয়াজ সময় দেখে নেয়। রাত বারোটা ঊনচল্লিশ বাজে। এতো রাতে আবার কিসের কথা রুয়াত আর নিমির? বিষয় টি খুব ভাবাচ্ছে আয়াজ কে।

-‘বলো। আগে রুমে আসো দু’জন।’

নিমি শুধু দেখেই যাচ্ছে৷ কিছু বলার সাহস খুঁজে পাচ্ছে না। একটু আধটু ভয় ও পাচ্ছে সে। না জানি আয়াজ আজ কি বলে। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। রুয়াত উত্তর দেয়,

-‘আপনার যদি কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে ছাদে আসবেন? এখানে বলাটা ঠিক হবে না।’

ভ্রু কুচকায় আয়াজ।
-‘এখন?’

-‘জ্বী।’

চারপাশটা একবার দেখে আয়াজ বলে-
-‘আচ্ছা চলো।’

রুয়াত নিমি কে নিয়ে ছাদে যাচ্ছে। পিছন পিছন আয়াজ ও আসছে। মনে শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে রুয়াত কি এমন বলার জন্য ছাদে যাওয়ার কথা বলেছে? আবার সাথে নিমি ও আছে! বিষয়টা কেমন জানি ঘোলাটে লাগছে। ছাদে এসে আয়াজ এক জায়গায় দাঁড়ায়। তার সম্মুখে রুয়াত দাঁড়িয়ে। সাহসী নিমি আজ দূরে দাঁড়িয়ে আছে। গম্ভীর স্বরে আয়াজ বলে-

-‘বলো কি বলবে।’

-‘নিমি শাফী কে কল দিচ্ছে অনবরত কিন্তু শাফীর মোবাইল বন্ধ বলছে। এমনকি তার বন্ধু নবীনের কাছেও কল দিয়েছে সে ও ধরেনি। আপনি মানা করেছেন শাফী যেনো নিমির সাথে কথা না বলে?’

নিমি ভয়ে চুপসে গিয়েছে। আয়াজের নজর তার দিকেই। আয়াজ আবার রুয়াতের দিকে তাকায়। আজ এরূপ রূপে রুয়াত কে দেখে কিছুটা খটকা লাগে আয়াজের। কিছু সময় চুপ থেকে বলে-

-‘তোমায় আমি কৈফিয়ত দিবো বলছো?’

-‘দিবেন। আপনি দিতে বাধ্য। জানেন নিমি কতোটা কষ্ট পাচ্ছে? এমনকি একটু আগেও কেঁদেছে মেয়েটা। মানুষের কষ্ট আপনার গা’য়ে লাগে না বুঝি? আচ্ছা ভালোবেসেছে এখন দোষ কোঁথায়? আপনি অন্য একজন কে ভালোবাসেননি? তাকেই তো বিয়ে করবেন। এগুলো নিয়ে কথা বললেই তো আপনি সবার কাছে গিয়ে বলে দিন। আচ্ছা নিমি আর শাফীর ভালোবাসায় কি ভুল ছিলো? তারা দু’জন সমবয়সী তাই তো? এটাই কারণ শুধু? সমবয়সী বিয়ে করে না? এমন ও তো আছে যে মেয়ের বয়সের তুলনায় ছেলের বয়স কম। কিন্তু বিয়ে হয়েছে। আর এখানে তো সেরকম কিছুই না। কেনো আমাদের বিষয়ে আপনি কথা বলবেন? কোন অধিকারে? মানছি বড় ভাই হিসেবে কিছু কিছু ব্যাপারে বলতেই পারেন তাই বলে কি সব কিছু তে বলবেন? শুধু আপনার একারই ভালোবাসা অধিকার আছে আর কারোর নেই?’

আয়াজ নির্বিঘ্নে কথাগুলো শুনে গেলো। তাও কিনা কারো উচ্চস্বরের কথা। ভাবা যায়? যেখানে এসব কথা আয়াজ কখনো অন্য কারোর মুখে এভাবে শোনেনি। নিমি মুখ চেপে ধরে আছে। কথার মাঝপথে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। ভেবেছে আজ আয়াজের হাতে থাপ্পড় খাবে রুয়াত। সেরকম কিছুই হলো না বরং উল্টো চুপচাপ শুনে নিয়েছে। শান্ত স্বরে আয়াজ বলে-

-‘আর কিছু বলার আছে?’

কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো রুয়াত। মানে আয়াজ কোনো রিয়েক্ট করছে না এসব বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।

-‘আমি তো অনেক বললাম। আপনি শুধু আমায় বলবেন যে কেনো শাফী কথা বলছে না নিমির সাথে। আপনি নিশ্চিয় কিছু বলেছেন।’

ভাবলেশহীন হয়ে আয়াজ বলে-
-‘আমি কিভাবে বলবো শাফী কেনো কথা বলছে না? আর নিমি কি যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে? তা এসব ওর বাবা মা জানে?’

-‘সব কথায় বাবা মা কে টানবেন না। আপনার তো অভ্যাস সব বাবা মা কে বলে দেওয়ার। এনাউন্সমেন্ট করে জানিয়ে দেওয়ার।’

আয়াজ সোজা নিমির সামনে দাঁড়ায়। এক আঙুলের সাহায্যে নিমির মুখটা উপরে তোলে। চক্ষু ছোট ছোট করে বলে-
-‘যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছো শাফীর সাথে?’

নিমি চুপ। দাঁতে দাঁত চেপে আয়াজ কথাটি বলে। এখন হ্যাঁ বললেই নিমির গালে পড়বে কয়েকটা। তাই চুপ থাকাটাই ভালো। আয়াজ ফের বলে-

-‘কথা কানে যায়নি মনেহয়?’

-‘আপনি ওর সাথে এভাবে কথা বলছেন কেনো? ও ভয় পাচ্ছে। আমি প্রশ্ন করেছি না আমায় বলুন। ওকে বলবেন না কিছু।’

রুয়াতের কথায় ভ্রুক্ষেপ করলো না আয়াজ। আবারও নিমি কে বলে-
-‘তোমায় আমি প্রশ্ন করেছি না? তুমি আমায় বলো। যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছো?’

দ্রুত গতিতে মাথা নাড়ায় নিমি।
-‘হ্যাঁ চেষ্টা করেছি।’

-‘কেনো করেছো?’

-‘আমি থাকতে পারছি না এভাবে। তাই যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি।’

আয়াজ খানিকটা দূরে সরে আসে। দু’হাত বুকে গুঁজে। আজ নিমি কে দেখাবে সে জিনিস যাকে ছাড়া নিমি থাকতে পারছে না।
-‘তুমি জানো শাফী তোমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে? তাও স্বইচ্ছায়। এরপর ও কি বলবে আমার হাত আছে শাফীর চলে যাওয়ার পিছনে?’

নিমি চোখ তুলে তাকায়। কথাটি বিশ্বাস করতে পারছে না। শাফী কখনো এমন করবে না। সে ভালো করেই জানে আয়াজ শাফী কে ভয় দেখিয়েছে বলে শাফী কথা বলতে চাচ্ছে না নিমির সাথে। বেশ সাহস নিয়ে বললো,

-‘আমি বিশ্বাস করি না ভাইয়া।’

আয়াজ তাচ্ছিল্য হেসে নিমির কথায় বলে-
-‘তাই?’

মোবাইল বের করে আয়াজ। সেই রেকর্ড প্লে করে। যেখানে শাফী নিজ থেকে বলেছে নিমির থেকে দূরে চলে যাওয়ার কথা। রেকর্ড শোনার পর হতভম্ব হয়ে নিমি আয়াজের দিকে তাকিয়ে আছে। রুয়াত ও অবাক। নিমির শরীরের সমস্ত শক্তি যেনো গায়েব হয়ে গিয়েছে। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিটুকুও নেই। চোখের কার্নিশ থেকে পানি পড়ে গেলো। কান জ্বলছে তার।

-‘কি বিশ্বাস হয়েছে এখন?’

ছাদের মেঝেতে বসে পড়লো নিমি। আয়াজ মাথা নিচু করে তাকায়। এখন মোটেও নিমি কে অন্য কিছু বলা যাবে না। কারণ নিমি এখন কোন পরিস্থিতিতে আছে সেটা কিছুটা হলেও আয়াজ অনুভব করতে পারছে। রুয়াত এগিয়ে আসলো না। বরং দূরে দাঁড়িয়ে রইলো। তার এখন অনুশোচনা হচ্ছে। কেনো যে আয়াজ কে ওতোগুলো কথা না জেনে বুঝে বলতে গেলো? ভীষণ বড় ভুল হয়ে গিয়েছে। আয়াজ নিমির উদ্দেশ্যে বলে-

-‘উঠো। এতো রাতে এভাবে বসে থেকো না। ভালোবাসতে হলে সবদিক বিবেচনা কতে ভালোবাসা উচিৎ। আর তুমি যেটা করছো সেটা নিতান্তই আবেগ ছাড়া আর কিছু না। তুমি কিভাবে ওকে ভালোবাসতে গেলে? কখনো তো তোমাদের এরকম সম্পর্ক মেনে নেওয়া হতো না। শাফী কোনো চাকরি করে? তোমাকে বিয়ে করলে নিজের টাকায় তোমার ভরনপোষণ চালাতে পারবে? তুমি কি শাফীর বাবার টাকার ভরসায় তাকে বিয়ে করবে? তোমার বাবা মা তুলে দিবে বেকার ছেলের হাতে? কোনো বাবা মাই তার সন্তান কে কোনো বেকার ছেলের হাতে তুলে দিবে না। আর তোমার যেমন যতটুকু তার বয়স ও ততটুকু। এই বয়সে অন্তত কোঁথায় চাকরি পাওয়া যায় না। বেশি না শাফী যদি ইনকাম করতো তোমার ভরনপোষণ চালানোর মতো কোনো যোগ্যতা থাকতো তাহলে আমি নিজে তার হাতে আম তোমায় তুলে দিলাম। দরকার হলে পরিবারের বিরুদ্ধে হলেও গিয়ে তোমাদের বিয়ে দিয়ে দিতাম। আমার মতে সে তার জায়গা থেকে ঠিক করেছে তোমার থেকে দূরে চলে গিয়ে। একদম উচিৎ কাজ করেছে। এবার তুমিও মুভ অন করো। এসব নিয়ে ভেবো না। যেটা জীবন থেকে চলে যায় সেটার দিকে আবার না তাকানোটাই ব্যাটার। পরের বার যদি তোমার জীবনে ভালোবাসা আসেও তাহলে সেটা বুঝে শুনে। হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে আবারও এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন যাতে না হতে হয়। সব দিক বিবেচনা করে ভালো কিছু সিদ্ধান্ত নিবে। আমি চাই তোমার আগামী দিনের পথচলা আরো বেশি সুন্দর হোক।’

শেষের কথা বলার সময় আয়াজ নিমির মাথায় হাত রাখে। এতো অসহায়ত্বের মাঝে যে কেউ একজন এভাবে কথা বলে স্বান্তনা দিয়েছে সেটাই অনেক কিছু। নিমি উঠে দাঁড়ায়। আয়াজ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আয়াজ হাসে। নিমির মাথায় এক হাত রাখে। রুয়াত একটু চমকে যায়। যাকে সারাদিন বকে যার নামে বদনাম করতে করতে দিন পেরিয়ে যায় আজ তাকে জড়িয়ে ধরেছে। এ ঘটনা একদম অবাক করার মতো।

-‘ভাইয়া ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি যে আমার এরকম একটা সময়ে এসব কথা বলে আমাকে বুঝিয়েছেন তাতেই অনেক। আমি আপনার কথা সত্যি সত্যি মানবো। আর কখনো ফিরে চাইবো না পুরোনো ঘটনায়। ধন্যবাদ ভাইয়া। অনেক অনেক ধন্যবাদ।’

অবশেষে নিমি যে বুঝেছে এটাই বেশি। নিমি সরে আসে আয়াজের থেকে। আয়াজ অধর মেলে হেসে বলে-
-‘আচ্ছা হয়েছে। নিচে যাও তুমি।’

মাথা নেড়ে নিমি চলে যায়। যার সাথে এসেছিলো তাকে রেখেই চলে গেলো। রুয়াত নিমির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। অতঃপর আয়াজের সামনে এসে রুয়াত দাঁড়ায়। আমতা আমতা করে বলে-

-‘দুঃখিত ভাইয়া।’

বুঝেও আয়াজ না বুঝার ভান ধরেছে। স্বাভাবিক স্বরে বললো,
-‘শুনিনি কি বলেছো।’

খানিকটা ইতস্ত বোধ করলো রুয়াত। আবারও বললো, -‘দুঃখিত। আমি না জেনে বুঝেই আপনার সাথে ওরকম ব্যবহার করে ফেলেছি। ক্ষমা করবেন আমায়।’

-‘তোমার আচরণ ক্ষমার অযোগ্য। কি জানি বলেছো শুধু আপনার ভালোবাসার অধিকার আছে আর কারোর নেই? আমার ভালোবাসা নিয়ে তোমার কথা বলার অধিকার নেই। কেনো বলেছো এটা?’

-‘তার জন্যই তো ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’

-‘এর জন্য ক্ষমা করবো না। আর রইলো তোমাদের বিষয়ে কথা বলা নিয়ে প্রশ্ন করেছো না? নিমির জায়গায় তুমি হলে একদম জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে ফেলতাম সত্যিই।’

-‘কেনো? আমার বেলায় এমন নিয়ম কেনো?’

-‘প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই। তবে তোমার বেলায় সব সময় এমন নিয়ম অবগত থাকবে। এর নড়চড় হবে না কখনো।’

আয়াজ রুয়াতের হাত ধরে টেনে তাদের দূরত্ব কিছুটা কমিয়ে দেয়। গম্ভীর স্বরে বলে-
-‘আজ যে এভাবে কথা বলেছো শুধুমাত্র ‘বিশেষ কেউ’ বলে ছেড়ে দিলাম।’

#চলবে….

[আসসালামু আলাইকুম। বলেছিলাম সকালে দিবো। লিখা শেষ হয়নাই দেখে দিতে পারিনি। পর্বটা কিন্তু আজ বেশ বড় হয়েছে। ২৩০০+ শব্দ। আমার ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here