শর্ত #লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম) #পর্ব:০৯

0
263

#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০৯

ক্লাস শেষ করে কলেজ থেকে বাহিরে আসতেই শিশিরকে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পায় রাত। সে সেদিকে এগিয়ে যাবে এমন সময় পিছন থেকে রিসাব বলে উঠে,

-“হেয় রাত?”

রাত থেমে যায়। পিছনে ফিরে বলে,

-“কি?”

রিসাব মাথা চুলকে হেসে বললো,

-“আমি ড্রপ করে দিবো?”

-“না রে লাগবে না।”

অনেক্ষণ যাবত শিশির রাতকে রিসাবের সাথে কথা বলতে দেখছে।আস্তে আস্তে মনের মধ্যে কেমন একটা জ্বলন অনুভব হচ্ছে । দাঁত কিড়মিড় করে গিয়ে গাড়িতে বসে পড়লো।ড্রাইভার বলতে লাগলো,

-“স্যার স্টার্ট দিবো?”

শিশির রেগে বলে উঠলো,

-“বলেছি আমি?”

ড্রাইভার আর কিছু বলার সাহস পেলো না। শিশির রাগে গরম হয়ে ভাবছে,

-“এত কিসের কথা বলতে হয়?আমি যে দাঁড়িয়ে ছিলাম তার কোনো খবর নাই।”

এদিকে রাত রিসাবকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“আসি।”

-“আরে আমি ড্রপ করে দিচ্ছি। আয়।”

বলতে বলতে সে বাইকে বসে পড়লো।রাত হাত নাড়িয়ে না করতে করতে বললো,

-“আমার ড্রাইভার অপেক্ষা করছে। আসি রে।”

বলেই সে আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে গিয়ে বসলো।গাড়িতে বসেই দেখতে পেলো শিশির অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।তা দেখে রাত বলতে লাগলো,

-“শরীর কেমন এখন?”

-“ভালো।”

-“সায়ু কি করছে?”

-“মায়ের সাথে খেলছে।”

শিশিরের এমন ঠান্ডা গলায় কথা বলা রাত কে কেমন ভড়কে দিচ্ছে। রাত অবাক হয়ে বললো,

-“এত চুপচাপ যে?”

-“তো কি করব।”

-“ওমা কথা বলুন।”

শিশির রাতের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো,

-“তোমার কথা বলা শেষ হলে না কথা বলব।”

-“আমি?কার সাথে?”(অবাক হয়ে)

-” ওইযে বন্ধুদের সাথে।”

রাত হেসে ফেললো। তারপর শিশিরের হাতের ভিতর হাত দিয়ে বললো,

-“ধূর।রিসাব!ড্রপ করে দিতে চাইছিল।”

শিশির এটা শুনে যেন আরো রেগে গেল। ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“তো চলে যেতে। এত আশা নিয়ে বললো।”

রাত মুখ ফুলিয়ে বললো,

-“ধূস। আর এদিকে যে আমার মাস্টারমশাই অপেক্ষা করছে।সেটা? ”

শিশিরের মুখে হাসি ফুটলো।রাতের গাল টেনে বললো,

-“হয়েছে বুঝতে পেরেছি। ”

রাতও হেসে ফেললো।তবে শিশিরের মনের জ্বলনটা সে বুঝলো।একটু ভালোলাগা কাজ করলো রাতের মনে। ইশ!শিশির তার জন্য জেলাস।ভাবতেই কেমন খুশি খুশি লাগছে রাতের।

____
বাসায় ঢুকেই নুশান আর মিতালিকে দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে রাত আর শিশির।মিতালি সায়ানকে কোলে নিয়ে সোফায় বসে দোলাচ্ছে আর নুশান তার পাশেই বসে। রাত তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে চৈতী বেগমকে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো,

-“আন্টি!আন্টি!”

শিশিরও বেশ রেগেই গেলো। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

-“নুশান!তুই এখানে কি করছিস?”

ততক্ষণে চৈতী বেগম এসে দাঁড়ালেন তাদের সামনে। রাতকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,

-“এসেছিস তোরা!”

শিশির চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে বলতে লাগলো,

-“মা ও এখানে কি করছে?”

চৈতী বেগম কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। এদিকে রাত ভ্রু কুঁচকে মিতালির দিকে তাকিয়ে আছে।মিতালি সায়ানকে বুকে নিয়ে খেলছে তখনও।নুশান উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

-“রিলাক্স! আমি বলছি।”

রাত নুশানের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

-“কি বলবেন আপনি?”

শিশিরও রাতের পাশে দাড়িয়ে বললো,

-“হ্যা বলুন কি বলবেন।”

নুশান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-“আসলে মিতালি মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়েছে। সায়ানের জন্য । তাই ডাক্তারের মতে কিছুদিন ওর কাছে সায়ানকে…”

রাত রেগে গেলো। বুকটা ধরফর করছে। তার সে বললো,

-” ওহ আচ্ছা? আপনার কি মনে হয় মিঃ নুশান!আপনি যা ইচ্ছে বলবেন আর আমরা বিশ্বাস করে নিবো?”

-“তুমি বিশ্বাস না করলে আমি রিপোর্ট দেখাই। আর মিতালি ভীষণ অসুস্থ। ভেঙে পড়ছে ধীরে ধীরে। ”

রাত মিতালির থেকে সায়ানকে নিতে গেলে মিতালি সায়ানকে নিয়ে উঠে দাড়ালো। চেপে ধরে বললো,

-” না না না। আমার বাচ্চা কে দিবো না আমি।”

শিশির মিতালির হাত চেপে ধরে বললো,

-“একদম আমার আমার করবা না। ভালোই ভালোই বলছি আমার বাসা থেকে বেড়িয়ে যাও।”

মিতালি দৌড়ে নুশানের পিছনে দাঁড়িয়ে বললো,

-“নুশান তুমি কিছু বলো নাহ!”

নুশান হাত জোড় করে বলতে লাগলো,

-“আপনাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ।প্লিজ আমাদের উপর একটু দয়া করুন।মাত্র ৭ টা দিন। যত খরচ আছে সব আমিই বহন করবো। দয়া করে ৭ টা দিন একটু আমাদের এখানে থাকতে দিন। নাহয় আমার স্ত্রী মারাও যেতে পারে।”

রাত এবার হো হো করে হাসতে লাগলো। রাতের হাসি দেখে সবাই প্রায় অবাকের শেষ প্রান্তে। রাত হাসতে হাসতেই বললো,

-“ওহ রিয়ালি?তো কই ছিল এই পাগলামো যখন আপনার বউ এই ১৫ দিনের সায়ানকে রেখে পালিয়ে গেছিলো?কই ছিল এই পাগলামো যখন আমার স্বামী নিজের ভালোবাসাকে হারিয়ে কাঁদছিলেন! ১৫ দিনের এই এতটুকু বাচ্চা টা খালি ঘরে ভয়ে কাঁদছিল। কেউ ছিল না ওর কাছে।কই ছিল তখন আপনার স্ত্রী?”

নুশান এবার চুপ করে রইলো। পুরনো দিনের কথা মনে পড়ায় চৈতী বেগম মুখ চেপে কাঁদছেন। শিশির চোখের কোণে থাকা জলটা মুছে বললো,

-“আইনত আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। আর আমার বাচ্চার দায়িত্ব যে মিতালি নিবে না তাও লেখা ছিলো পেপারস এ। ”

নুশান হাত জোড় করে বলতে লাগলো,

-“দয়া করে একজন মায়ের থেকে তার সন্তান কে কেড়ে নিবেন না।”

রাত এবার চেঁচিয়ে উঠলো,

-“এই কিসের মা? কিসের মা হুম? যেই চ*রি*ত্র*হী*ন মা তার ১৫ দিনের সন্তান আর ৩ বছরের সংসার ছেড়ে এক পরপুরুষের সাথে পালিয়ে যেতে পারে সে আবার কিসের মা?”

নুশান কি বলবে বুঝতে পারছে না। রাত আবার চেঁচিয়ে উঠলো,

-“কিহ? আনসার মি!”

মিতালি সায়ানকে বুকে নিয়ে রাতের পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,

-“প্লিজ আমাকে আমার বাচ্চার কাছে থাকতে দাও। আমি দূরেই থাকব। সত্যি।”

রাত মিতালিকে তুললো। তারপর ওর কাছ থেকে সায়ানকে কোলে নিয়ে দৌড়ে রুমে চলে গেলো।সায়ানকে হারানোর যে বড্ড ভয় তার। বড্ড বেশি।মিতালি এবার জোরে কেদে উঠলো।কিন্তু এই কান্না যে জেদের সেটা হয়ত কেউই বুঝেনি। কিসের জেদ? রাত যে দৌড়ে পালালো।আর সে কেড়ে নিতে পারলো না। এই জেদের। নুশান মিতালিকে জড়িয়ে ধরতেই মিতালি নুশানকে ধাক্কা মেরে শিশিরের পা ধরে বলতে লাগলো,

-“দয়া করো আমার উপর। আমি দূরেই থাকব। কয়েকদিনের ঠাই দাও আমায়। আমি মরেই যাব শিশির।”

শিশির মিতালিকে পায়ের ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিলো। তারপর মুখ ঘুরিয়ে বললো,

-“কতবার বলেছি!অপবিত্র শরীরে আমাকে ছুবি না।”

মিতালি আর কি করবে ভেবে না পেয়ে চৈতী বেগমের পা ধরে বসে পড়লো। এবার যদি একটু ঠাই হয়!

______

রাত সেই যে বিকাল থেকে সায়ানকে বুকে নিয়ে বসে আছে।এখনো বসেই আছে।সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলো।শিশির এতক্ষণ স্টাডি রুমে বসে আছে। রাতকে ডিস্টার্ব করতে চায় না। থাক না ছেলের সাথে।সায়ান রাতের চুল নিয়ে খেলছে।রাতের ভীষণ ভয় হচ্ছে। ছেলেকে হারানোর ভয়।সে কিছুতেই মিতালিকে দিবে না তার ছেলেকে।কিছুতেই না। কাঁধে কারোর হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠলো রাত।পিছনে ফিরে দেখলো শিশির দাঁড়িয়ে। রাত অসহায় ভঙ্গিতে তাকিয়ে আবারো চিন্তায় নিমগ্ন হলো।শিশির রাতের পাশে বসে বললো,

-“মন খারাপ পিচ্চি?”

-“আমার সায়ান!”

বলেই রাত ফুঁপিয়ে উঠলো। শিশিরের বুক ধরফর করে উঠলো।রাতের কান্নাটা সে মোটেও নিতে পারছে না। রাত কেন কাঁদবে? রাতের এই চোখের জল তার কাছে বিষের মত লাগছে।সে রাতকে বুকে জড়িয়ে বললো,

-“কেন কাঁদছো রাত? এই দেখো সায়ান তো এখানেই।”

বলেই সে সায়ানের কপালে চুমু দিলো।রাত কাঁদতে কাঁদতে বললো,

-“মিতালি আমার ছেলেকে কেড়ে নিতে এসেছে।”

-“তেমন কিছুই হবে না রাত।আমি তোমার পাশে আছি।সবসময়!”

-“ও কেন আমার ছেলেকে কোলে নিবে!”

-“আর নিবে না। দিবা না।”

-“হুহ। কখনো না। সায়ান আমার বুকের ধন। ওকে আমি কাউকে দিবো না।”

বলেই সে সায়ানকে এলোপাতাড়ি চুমু দিচ্ছে। আর সায়ান খিলখিল করে হাসছে। শিশির রাতের পাগলামি দেখে ভাবছে,

-“এতটা ভালেবাসে ও সায়ানকে!ওর সামনে তো মিতালি কিছুই না।”

রাত সায়ানকে নিয়ে বিছানায় শুতে শুতে বললো,

-” রাত হয়ে এলো।আমি ওকে ঘুম পাড়িয়ে আপনার খাওয়ার ব্যবস্থা করছি।”

-“আজ মায়ের অনেক কাজ। এতজনের খাবার।”

রাত ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“এতজনের খাবার মানে?”

-“মা মিতালির কান্না দেখে কিছুটা গলেছে।তাই সাতদিন থাকবার পারমিশন দিয়েছে। আমি অনেক রাগারাগি করেছি।কিন্তু! “(চাপা রাগ নিয়ে)

-” আর রাগ দেখাতে হবে না স্যার।”

-“মা নিজের ফ্ল্যাটে রাখবে ওদের।তাই বলেছে আমাকে টেনশন না করতে। আর মায়ের আরেকটা ভয়ও আছে।”

-“কিসের? ”

-“মিতালি যদি সায়ানের জন্য আমার বিরুদ্ধে মামলা করে,আর যদি পুলিশি ঝামেলা হয়!!তাই মা আমায় নিষেধ করছে রাগারাগি করতে।”

-“হুম ঠিকই বলেছেন উনি। আর আমি সায়ুকে হারাতে চাই না।”(অসহায় গলায়)

-“তুমি একদম ভয় পেয়ো না। মিতালিকে আমি কিচ্ছু করতে দিবো না।”

রাত হাসলো।তারপর বলতে লাগলো,

-“মিতালি এখানে কোনো মতলব নিয়েই এসেছে স্যার।”

-“জানি।”(রাগ কন্ট্রোল করে)

-“কিন্তু উনি যদি চলেন ডালে ডালে,আমিও তবে চলি পাতায় পাতায়।”

-“মানে?”(অবাক হয়ে)

-“আমিও দেখি উনি কতদূর করতে পারেন।উনি এখানে সাতদিনের সুখ নয় মরণ যন্ত্রণা নিতে এসেছেন।অতি চালাকির গলায় দড়ি জানেন তো?”

-” হু “(মাথা নাড়িয়ে)

-” সেটাই ওনাকে দেখাবো এবার।”(বাঁকা হেসে)

চলবে…..

(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। একটা সুন্দর মন্তব্য উপহার দিয়েন🥰)

(গতকাল আমি প্রিন্সিপাল এর বদলে বারবার হেড স্যার লিখেছি।ওটা প্রিন্সিপাল স্যার হবে। মূলত আমার কিবোর্ড এ সমস্যার জন্য বানানটা রং দেখাচ্ছিলো।তাই ভুল বানান না লিখে সহজ বানানের জন্য হেড স্যার লিখেছিলাম।অন্য ফোন দিয়ে লিখেছিলাম তো,বাট এখন ঠিক আছে।ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী😊)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here