#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস (২)
#পর্ব_১৬
#মোহনা_হক
ইনিমা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। নিমি কিছুক্ষণ আগেই বলেছে রুয়াত আগে থেকেই জানে আয়াজ রুয়াত কে ভালোবাসে। ইনিমা তো খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে এসেছিলো। কিন্তু এটা যে তারা আগে থেকেই জানে সেটা সে জানতো না। এখন সব মজাই মাটি হয়ে গিয়েছে। কথাটি শোনার জন্য একদমই প্রস্তত ছিলো না। মুখে হাত দিয়ে রুয়াত এক দৃষ্টিতে ইনিমার দিকে তাকিয়ে আছে। সেও ভালোই মজা পেয়েছে। কারণ তার ভাই তো আগেই বলে দিয়েছে। এখন বোন আবার নতুন করে বলতে এসেছে। নিমি ইনিমার কাঁধে হাত দিলে হালকা করে ধাক্কা দেয়। মুচকি হেসে বলে-
-‘কি আপু তোমার শোক পালন করা শেষ হয়েছে? আর কতক্ষণ এভাবে বসে থাকবে?’
মাথা তুলে ইনিমা বিরক্তিচোখে নিমির দিকে তাকায়। এই মুহুর্তে তার এসব মজা মোটেও ভালো লাগছে না। কিন্তু তাও নিমি বলেই চলছে। মুলত তাকে বিব্রত করার ধান্ধা তার। রেগে উঠে সে। নিমি কে ধমক দিয়ে বলে-
-‘তুই চুপ থাক। তখনই তো বলেছি এরকম মজা ভালো লাগে না। এরপর ও করেই চলেছিস। বে’য়া’দ’ব মেয়ে। আর ওটা আগে থেকে জেনেছিস তো কি হয়েছে? আরেকবার জানাতে কি খুব ক্ষতি হয়েছে নাকি? একদম আমাকে এসব বলবি না।’
ইনিমার এরূপ রাগ দেখে নিমি হাসে। তাতে তার রাগ আরও বেড়ে গিয়েছে। নিমি কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুয়াত তাকে থামিয়ে দেয়।
-‘তোমাদের যুদ্ধ বন্ধ করো। এসব বাদ দাও। নিচে চলো খেতে যাবে।’
-‘আমি এখন খাবো না। তোমরা দু জন খেয়ে আসো।’
প্রথমেই নিমি নাকোচ করে দিলো। ইনিমা সেসবে পাত্তা দেয়নি। রুয়াতের হাত ধরে বলে-
-‘আমরা তো জানি ভাইয়া তোকে ভালোবাসে। তুইও কি আমার ভাইকে ভালোবাসিস রুয়াত? আপুর কাছ থেকে কিন্তু কিছু লুকোবি না।’
দ্বিধার মধ্যে পড়ে যায় রুয়াত। সে কি বলবে? আয়াজ কে ভালোবাসে? কেমন লাগছে মনে করতেই। কিভাবে সেটা ইনিমার কাছে বলবে? যাই হোক ইনিমা কে সব সময় তার বড় বোনের মতো দেখে শুনে এসেছে। আবার যার কাছে বলবে তার ভাইকেই সে ভালোবাসে? অধম কামড়ে রুয়াত কিছু একটা ভাবে। রুয়াতের আগেই নিমি বলে উঠে,
-‘আর বলো না। একবার আয়াজ ভাইয়া সতেরো দিন বাসায় ছিলো না। এই সতেরো দিনে রুয়াত আধম’রা হয়ে গিয়েছে। আবার ভাইয়ার কাছে কল ও দিয়েছে। কেঁদে কেঁদে বলেছে আপনি কেনো বাসায় আসছেন না বলুন তো। ভাবা যায় রুয়াত এই কাজটা করেছে? এর মানে কি বোঝা যায়? রুয়াত আয়াজ ভাইয়া কে ভালোবাসে। যদিও কখনো স্বীকার করেনি। কিন্তু এসব দেখে বোঝাই যায়।’
ইনিমার অবাক হয়ে রুয়াতের দিকে তাকায়। সে মাথা নিচু করে আছে লজ্জ্বায়। ইনিমা বরাবরের মতোই জানতো রুয়াত আয়াজ সহ্য করতে পারে না। কারণ রুয়াত কিছু বললেই আয়াজ একবার না একবার হলেও তাকে ধ’ম’ক দিতো। কিছুদিন আগে যখন বাসায় এসেছিলো তখনও রুয়াত আয়াজ কে সহ্য করতে পারতো না। কখনো কখনো মুখের উপর প্রতিবাদ করে সে সেখান থেকে দৌড়। আজ পরপর এরকম কথা শুনে সে অবাক হয়েই যাচ্ছে। হঠাৎ একদিনেই এমন খবর শুনেছে। অবাক হওয়ারই কথা। রুয়াত চোখ রাঙিয়ে নিমির দিকে তাকায়। এই মেয়ে কে সে এজন্যই কিছু বলতে চায় না। সব সময় কোনো কথা বললে তা ফাঁস করে দেয়। অন্য কথা হলে মানা যেতো। কিন্তু এমন এক কথা বলেছে যেটার জন্য ক্ষমা চাইলেও সেটা অযোগ্য হয়ে যাবে। নিমি মুখ ভেঙচি দেয় রুয়াত কে। ইনিমার উদ্দেশ্যে বলে-
-‘আপু দেখো রুয়াত আমাকে চোখ রাঙাচ্ছে। আমি মিথ্যে কি বললাম? সত্যিটা বলেছি দেখে এখন চোখ রাঙাচ্ছে।’
-‘রুয়াত তুই আমার ভাই কে ভালোবাসিস?’
চোখ বন্ধ করে রুয়াত। ধীর গলায় বলে-
-‘হ্যাঁ আপু।’
ইনিমা খুশি হয়ে যায়। রুয়াতের বাহু ঝাকিয়ে বলে-
-‘তুই এ আমার ভাবি হবি। ভাই কি যে খুশি লাগছে। এতো তাড়াতাড়ি সু’খবরখানা শুনবো ভাবিনি। তবে একটা বিষয় জেনে অবাক হয়েছি তুই সেই তুই কিনা আমার ভাইয়ের কাছে কল দিয়ে কেঁদেছিস বাসায় আসছে না বলে। মানে তোর মধ্যেই কত বেশি তফাৎ। আগের রুয়াত আর এখনকার রুয়াতের মধ্যে অনেক চেঞ্জ এসেছে। আচ্ছা সেসব বাদ আমার ভাইয়ের বউ যে তোর মতো একটা মিষ্টি মেয়ে হবে তাতেই আমি খুশি। আর কিছু ভাবতে চাইনা। আমার তো মন চাচ্ছে এখনই তোকে আর ভাই কে বিয়ে দিয়ে ভাবি ডাকি। সমস্যা নেই এখন চুপি চুপি ভাবি বলবো। অন্তত আমার মা আর ভাইয়ের সামনে বলবো না। কারণ মা আগেই মানা করেছে যাতে কেউ কিছু না জানে। খুব বিশ্বাস করে বলেছে। তাই সবার অগোচরে ভাবি বলবো ঠিক আছে মাই জান?’
রুয়াত হতভম্ব হয়ে গিয়েছে ইনিমার কথা শুনে। ভেবেছে কি আর হয়েছে কি? লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে রুয়াত। এগুলো শুনে রীতিমতো কান জ্ব’ল’ছে তার। নিমি দুষ্টোমি করে বলে-
-‘ভাবি এতো তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়বেন না। খেতে চলুন নিচে। বড় মায়ের ডাক শোনা যাচ্ছে। এখন না গেলে পরে আবার বড় মা বকবে।’
শোয়া থেকে উঠে পড়ে সে।
-‘যাচ্ছি৷ তবে তুই অন্তত আপুর মতো ভাবি বলবি না। কেউ শুনলে কি বলবে? আশ্চর্য! একটু জ্ঞান বুদ্ধিও নেই তোর।’
রুয়াত বেরিয়ে আসে রুম থেকে। ইনিমা আর নিমি হাসতে হাসতে তার পিছন পিছন আসে। মায়া আর জেবা মিলে সবাই কে খেতে দেয়। আয়াজের পাশে ফজলুল চৌধুরী বসেছে। অনেকদিন পর এভাবে বাবা ছেলে কে একসঙ্গে বসতে দেখে মায়ার ভীষণ ভালো লাগলো। বাবা আর যাই করুক না কেনো সে তো বাবা। আয়াজ একবার ফজলুল চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আবার নিজের খাবারে মনোযোগ দেয়। খাওয়া শেষে ফজলুল চৌধুরী আর মাহের চৌধুরী চলে আসে তাদের রুমে। সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আয়াজ ফোনে কথা বলছে। ইনিমা আর নিমি ফোনে কিছু একটা দেখছে আর হাসছে। রুয়াত একপাশে বসে আছে। কথা শেষে আয়াজ ভিতরে আসে। এমতাবস্থায় অন্য মনষ্ক হয়ে ইনিমা বলে উঠে,
-‘রুয়াত আমার হবু ভাবি এক গ্লাস পানি দে।’
আচমকা মৃদু কেঁপে উঠে রুয়াত। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানবটার দিকে তাকায়। চোখ মুখ কুচকে সে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ইনিমার মুখ থেকে রুয়াত কে ভাবি বলে সম্মোধন করাটা ঠিক যেনো হজম হলো না তার। নিমি হালকা কাঁশি দিয়ে ইনিমা কে খোঁচা দেয়। সে ফোন থেকে মাথা তুলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে বড় সর্বনাশ করে ফেলেছে। আয়াজ যে এখানে ছিলো এটা একবারের জন্য ও খেয়াল করেনি। সবাই কে আশ্চর্য করে দিয়ে আয়াজ বলে-
-‘ও বলেছে না পানি দিয়ে আসতে? যাও দিয়ে আসো।’
ভদ্র মেয়ের মতো গুটিগুটি পায়ে রুয়াত এক গ্লাস পানি নিয়ে যায় ইনিমার কাছে। আয়াজের ভয়ে একদমে ইনিমা পুরো গ্লাস পানি শেষ করে। কারণ তার ভাইয়ের দৃষ্টি তার দিকেই। ভয়ে ভয়ে আছে আয়াজ না মায়া চৌধুরীর কাছে বলে দেয়। তিনি জানলে ইনিমার আর আস্ত রাখবে না। কখনও আর কোনো কথা বলবে না ইনিমা কে। আয়াজ ইনিমার উদ্দেশ্যে বললো,
-‘মা কে বলিস আমি বাহিরে যাচ্ছি। কিছু কাজ পড়ে গিয়েছে।’
ইনিমা আমতা আমতা করে বললো,
-‘কোঁথায় যাচ্ছো?’
-‘কাজে। আসছি। আমার ফিরতে অনেক রাত হবে। মা কে বলে দিস। আর বলিস যেনো কোনো চিন্তা না করতে।’
মাথা নাড়ায় ইনিমা। আয়াজ রুয়াতের দিকে তাকিয়ে বের হয়ে যায় বাসা থেকে। ইনিমা বুকে হাত দিয়ে বড়সড় নিঃশ্বাস টানে। খুব বড় বাঁচা বেঁচে গিয়েছে আজ। কিন্তু একটা ভয় থেকেই গেলো। আয়াজ যদি বলে দেয় মায়া চৌধুরী কে তাহলে কি হবে?
(*)
সকালে বাগানে জড়সড় হয়ে বসে আছে রুয়াত। ঘুম থেকে উঠেই এখানে এসেছে। অনেক দিন শরীরে সকালের রোদের তাপ লাগায়নি। কাল রাতে হুট করে জ্বর চলে আসে। আচমকা শরীর একদম গরম হয়ে গিয়েছিলো। সঠিক সময়ে মেহরুবা ঔষধ খাইয়ে দিয়েছিলো রুয়াত কে। যার কারণে জ্বর এতোবেশি আক্রমণ করতে পারেনি। এখন মোটামুটি ভালো আছে। রাতে বৃষ্টি হওয়ার কারণে সকালের আবহাওয়া খুব ঠান্ডা ঠান্ডা হয়ে আছে। এসেছিলো রোদ পোহাতে কিন্তু রোদের ছিটেফোঁটাও নেই। শরীরে জ্বর এসেছিলো বলে শীত লাগছিল তার। সেজন্যই এখানে এসে বসেছে। নিমি ইনিমা এখনও ঘুমিয়ে আছে। তাদের আর উঠায়নি। মাত্র সাতটা বাজে। রাতে দু’জন অনেক্ক্ষণ কথা বলেছিলো। রুয়াত ঘুমিয়ে গিয়েছিলো বলেই তাড়াতাড়ি উঠতে পেরেছে।
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে আয়াজ। হাতে তার এক কাপ কফি। কয়েকবার চুমুক দিয়ে ফেলেছে। বাহিরে যাওয়ার জন্য একদম তৈরি হয়ে গিয়েছে। মাত্র তিনঘন্টা ঘুমিয়েছে বাসায় আসার পর। হঠাৎ অনেক কাজের চাপ বেড়ে যায়। সেজন্যই আজ এতো তাড়াতাড়ি তৈরি হয়েছে। তার ব্যালকনি থেকে রুয়াত কে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কিছু একটা ভেবে হাতের কফির কাপ রেখে ফোনটা পকেটে পুড়ে বেরিয়ে পড়ে রুম থেকে। রুয়াত যেখানে বসে আছে সেখানেই এসেছে এখন। একটা চেয়ার টেনে এনে রুয়াতের পাশাপাশি বসে। মেয়েটা ঘাড় ঘুরিয়ে আয়াজের দিকে তাকায়।
-‘আপনি এখানে?’
দূর্বল স্বর প্রেয়সীর। ভ্রু কুচকে আয়াজ পাশ ফিরে রুয়াতের দিকে তাকায়।
-‘কি হয়েছে? গলাও আওয়াজ এতো আস্তে কেনো? অসুস্থ?’
দমে যায় মেয়েটা। কিছু সময় বাদে উত্তর দেয়,
-‘কাল রাতে একটু জ্বর এসেছিলো। তাই হয়তো।’
পকেট থেকে ফোন বের করে আয়াজ। চেয়ারে শরীর হেলিয়ে দেয়। দুটো হাত দু পাশে রাখে। কাউকে মেসেজ লিখছে। সেই ফাঁকে রুয়াত কে বলে-
-‘এতো অসুস্থ হলে ভবিষ্যতে চলবে কিভাবে? ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করো এখন থেকেই।’
রুয়াত চুপ হয়ে যায়। দৃষ্টি সরিয়ে আনে। ফের আয়াজ বলে-
-‘কাল ইনিমা তোমায় ভাবি বললো কেনো?’
-‘আপনি রাত কখন বাসায় এসেছেন?’
কথা এড়িয়ে যায় রুয়াত। তবে আয়াজ বুঝেছে রুয়াত কথা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এটা বলেছে। তাই আয়াজ ও আর জোর করলো না সোজাসাপ্টা বলে-
-‘মধ্য রাতে এসেছি।’
-‘ক’টায়?’
-‘তিনটায় বোধহয়। সময় দেখিনি। তবে এরকমই হবে।’
-‘ওহ্।’
ফোনের কাজ শেষ হলে আয়াজ সেটা তার হাতে রাখে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে প্রেয়সীর পানে চায়।
-‘তোমাকে যে আমি এতো ভালোবাসি সেটা মানুষ জানলে কি বলবে বলো তো প্রেয়সী?’
রুয়াত শুষ্ক অধর মেলে হাসে। গালে হাত দিয়ে আয়াজ অপলক ভাবে চেয়ে আছে।
-‘লোকে পা’গ’ল বলবে এমপি সাহেব।’
সুর মিলিয়ে আয়াজ বলে-
❝লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি..
তোমার পিছু ছাড়বো না।❞
#চলবে….
[আসসালামু আলাইকুম। আপনারা রেসপন্স করা কমিয়ে দিয়েছেন কেনো?🥹 এমনটা হলে কিন্তু গল্প তাড়াতাড়ি শেষ করে দিবো। কষ্ট করে লিখি যদি রেসপন্স না করেন তাহলে আরও বেশি কষ্ট লাগে। দয়া করে রেসপন্স করার চেষ্টা করবেন। ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]