#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৬
রিসাব এখনো রাতের মুখপানে তাকিয়ে আছে জবাবের আশায়। রাত রিসাব কে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগে,
-“আমি তোকে ভালোবাসি না।”
চারিদিক নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। গান বাজনা সব অফ। রাত আবারো বলতে লাগে,
-“আমি বিবাহিত।আমার একটা বেবি আছে।”
রিসাব এবার অবাকের শীর্ষে। সে উঠে দাঁড়ালো। অবাক হয়ে বলতে লাগলো,
-“কিহ!কবে?”
রাত মুচকি হেসে বললো,
-“বলতে চেয়েছিলাম অনেকবার। শুনিসনি। শুনলে আজ এই দিনটা দেখতে হতো না!আমি শিশির চৌধুরীর বউ আর সায়ান চৌধুরীর আম্মু।”
-“আমাদের কলেজের শিশির চৌধুরী?”
-“হ্যা।”
-“কিন্তু ওনার তো বউ আছে।”
-“এটা আমাদের পারসোনাল বিষয় রিসাব।তোকে জবাব দিতে বাধ্য নই।”
রিসাবের পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো। আস্তে আস্তে পিছাতে পিছাতে বললো,
-“সরি রাত। আমার ভুল হয়ে গেছে। মস্ত বড় ভুল। ইউ ক্যান গো রাত।”
-“ধন্যবাদ।”
বলেই রাত শাড়ির কুঁচি ধরে দৌড় লাগালো।সবাই সাইড হয়ে গেলো।রিসাব রাতের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে৷ আর ভাবছে,
-“আমার ভালোবাসাটা এক তরফা। রাত শিশিরের সাথেই ভালো থাকবে।”
ভেবেই সে চোখের কোণে থাকা পানিটা মুছে নিলো।তারপর সকলের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“লেটস এনজয় দা পার্টি।”
এদিকে রাত বাহিরে এসে দেখলো গাড়ি ঠিকই পার্ক করা বাট শিশির নেই। রাত হন্তদন্ত হয়ে শিশিরকে খুঁজতে লাগলো।কোথাও না পেয়ে নিজের গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করতে লাগলো।
বাসায় আসতেই দেখতে পেলো শিশিরের জুতো দরজার বাহিরে। রাতের মুখে হালকা হাসি ফুটলো। কারণ শিশির বাসায়!রাত তাড়াতাড়ি রুমে চলে গেলো।রুমে পা রাখতেই দোখতে পেলো সবকিছু অন্ধকার। কেউ নেই এখানে। রাত তবুও বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলো। গিয়ে দেখতে পেলো শিশির সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।মুখটা আকাশের দিকে।রাত শিশিরের কাঁধে হাত রাখলো।শিশির চোখের পানিটা মুছে রাতের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হেসে বললো,
-” চলে এলে যে!”
-“আপনি চলে এলেন তাই।”
-“আমাকে দিয়ে কি যায়-আসে রাত। তুমি এনজয় করতে পারতে।”
-“যায়-আসে।আপনি আমার স্বামী স্যার। আমাদের বিয়ে হয়েছে, পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ আমরা। আপনি আমাকে যা বলবেন তাই করতে বাধ্য আমি।আপনার পছন্দ মত চলতে বাধ্য আমি।আর আপনি কিনা আমাকে রেখেই চলে এলেন।”
শিশির রাতের দিকে তাকালো।শিশিরের লাল চোখজোড়া দেখে আঁতকে উঠলো রাত।তারপর বলতে লাগলো,
-“হেঁটে এসেছেন?”
-“রিকশা দিয়ে।”
-“চলুন ঘরে। এখানে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছেন কেন।”
বলেই রাত শিশিরের হাত ধরে টানতে লাগলো রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু শিশির সেখানেই দাঁড়িয়ে। রাত বুঝলো,শিশিরের মন খারাপ। তাই সেও দাঁড়িয়ে থেকে বললো,
-“কি দেখেন আকাশে।”
-“চাঁদ! ও নিজেও আমার মত একা।”
-“আপনি কই একা?আমি আছি না?”
-“আমার সাথে কেউ থাকে না রাত। সবাই ছাড়তেই ভালোবাসে।”
-“কে বললো থাকে না?আমি আছি না?”
-“রিসাবের প্রপোজাল একসেপ্ট করোনি কেন?”
-“আপনি কি করে জানলেন?”(অবাক হয়ে)
-“আমি জানি যে রাত কখনোই একসেপ্ট করবে না। এটা রাত!মিতালি না।”
-“হ্যা এটা ঠিক। কিন্তু এমন ভাবে বলছেন যেন একসেপ্ট করার খুব প্রয়োজন ছিল!”
শিশির রাতের দিকে ফিরলো। রাতের হাত ধরে বলতে লাগলো,
-“আমার সাথে থাকলে হয়তো তোমার লাইফটা নষ্ট হবে রাত।নিজের লাইফটা এভাবে নষ্ট করো না। তুমি বরং..তুমি বরং ওর প্রপোজাল একসেপ্ট করে নাও।”
বলেই শিশির পিছনে ঘুরে গেলো কান্না লুকাতে। রাত শিশিরের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,
-“তারমানে এগুলো ভেবেই উনি পার্টিতে কিছু বলেননি।”
রাত শিশিরকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো,
-“এতদিনে আমাকে এই চিনলেন? আমি সায়ানকে নিজের ছেলে মানি আর আপনাকে নিজের স্বামী। আমি কখনোই আপনাদেরকে ছেড়ে যেতে পারবো না স্যার।আপনি..”
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই শিশির রাতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। রাত অনুভব করছে,শিশিরের হার্টবিট কত জোরে হচ্ছে! রাতও শিশিরের পিঠে হাত রাখলো।শিশির অসহায় গলায় বললো,
-“রাত প্লিজ আমায় ছেড়ে কখনো যেয়ো না রাত। প্লিজ।আমার পরিবারটাকে তুমিই পারবে আগলে রাখতে রাত। আমার একমাত্র বউ তুমি। তোমাকে আমি পুরোপুরি সেই অধিকার দিয়েছি। আমাকে ছেড়ে যেয়ো না রাত। থেকে যাও আজীবন।”
রাত মুচকি হেসে বললো,
-“এতক্ষণে মনের কথাটা বের হলো।ওগুলো মুখের কথা ছিল।”
-“হু!”
-“আমি আপনাদের ছাড়া থাকতে পারব না শিশির।মরেই যাব। সায়ান তো আমার প্রাণ।ওকে ছাড়া কেমন ছটফট করি দেখেনই তো।আর পুরো পরিবারটা আমার ভালোবাসা। ”
শিশির রাতকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো। রাত কান্না থামাচ্ছে না।সে চায় যেন শিশির হালকা হয়। একটু কাঁদে।তাহলেই তো তার মনটা হালকা লাগবে।
বেশকিছুক্ষন পর রাত শিশিরের হাত ধরে বলল,
-“চলুন!”
-“কোথায়?”
রাত কিছু না বলে শিশিরের হাত ধরে ছাদের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো।
ছাঁদে এসে শিশিরের হাত ধরে পাতা মাদুরে বসলো রাত।শিশির অবাক হয়ে বললো,
-“ছাদে আনলে যে?”
-“ভূতে ধরাবো তাই।”
বলেই রাত ফিক করে হেসে দিলো। শিশির রাতের গাল টেনে বললো,
-“আমার সাথে মজা?”
-“তো কার সাথে করব?”
শিশির আচমকা রাতকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“আমার সাথেই!”
রাত হাসলো। শিশিরের চোখের পানিটা শুকিয়ে গেছে। চোখগুলো একটু লাল হয়ে আছে আর খানিকটা ফুলেও গেছে। সাদা শরীরের খাড়া নাকটার আগায় লাল হয়ে আছে। রাত সেটায় স্পর্শ করে বললো,
-“আপনি কাঁদতেও জানেন?”
শিশির রাতের কাধে মাথা রাখে। রাতের অন্যরকম ফিলিং হচ্ছে! শিশিরের সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত তার কাছে স্পেশাল!আর শিশির এখনো তার কাঁধে মাথা রেখে আছে। এ-র চেয়ে সুখের আর কি?শিশির আলতো করে রাতের কোমড় জড়িয়ে আকাশপানে তাকিয়ে বললো,
-“মিতালি যাওয়ার পর আমার প্রতিটা রাত কেঁদেই কেটেছে।”
রাতের মুখটা মলিন হয়ে গেলো। শিশির অসহায় গলায় বলল,
-“যাওয়ার পর বলছি কেন?সায়ান পেটে আসার কয়েকমাস পর থেকেই ও আমায় অবহেলা শুরু করে!”
-“আপনার খুব কষ্ট হতো তাই না?”
-“হুম হতো!প্রিয় মানুষ অবহোলা করলে যে ঠিক কতটা কষ্ট লাগে সেটা আমি তখন বুঝেছিলাম। সারাটাদিন কাজ করে যখন বাসায় ফিরে ওকে খুঁজতাম, ও আমায় পাত্তাই দিতো না।কিন্তু তোমার বেলায় সবটা উল্টো রাত। তুমি সবসময় আমার সব কাজে সাহায্য করো!ভুল ধরিয়ে দাও। আমার খেয়াল রাখো,আমার পরিবারের খেয়াল রাখো। এত ভালো কেন তুমি রাত?”
রাত নিঃশব্দে হাসলো। চোখের কোণে জমে থাকা
পানিটা মুছে বললো,
-“আপনার বউ যে তাই।”
-“না রাত!আমি তো ওতো ভালো নই। ভালো হলে কি মিতালিকে আনতাম?বিয়ের পর পর তোমার সাথে বাজে বিহেভিয়ার করতাম?তুমি সবচেয়ে স্পেশাল রাত!তুমি আমার জীবনটাকে রঙিন করে দিয়েছো। ইউ আর গ্রেট।”
-“হু হু থাংকু।কিন্তু আমার এসবের পিছনে একটা কারণও আছে।”
-“কি কারণ?”
-“সায়ান।আমার ছেলে। ওকে আমি নিজের ছেলে বানিয়েছি। ওকে ছেড়ে কিভাবে যেতাম বলতে পারেন?আপনি তো জানেন যে আমি কখনো মা হতে পারব না।”
বলতে বলতে রাতের চোখ থেকে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। শিশির সেটা মুছে বললো,
-“ডাক্তার দেখিয়েছিলে?”
-“হুম।”(মাথা নিচু করে)
-“জিজ্ঞেস করা উচিত না কিন্তু তাও জিজ্ঞেস করবো,ডাক্তার কি বলেছে যে একদমই মা হওয়ার আশংকা নেই?”
-“আমি তো জানি না। আমাকে মা বলেছিল রিপোর্ট দেখার পর। কারণ আমার অস্বাভাবিক পেট ব্যাথা হত। যার কারণে ডাক্তার দেখাতে যাই।কিন্তু রিপোর্ট টা আমি চেক করিনি,চেক করার মত শক্তি ছিল না। মা যা বলেছিল সেটাই মনে আছে।”
-“কি বলেছিল?”
-“বলেছিল..বলেছিল যে..রাত তুই কখনো মা হতে পারবি না।”
বলেই রাত শিশিরের বুকে ঝাপিয়ে পড়লো।কাঁদতে আরম্ভ করলো। শিশির রাতের চুলে হাত দিয়ে বললো,
-“কেঁদো না রাত!আমরা ডাক্তাদের কাছে যাব।যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে এর সমাধানও নিশ্চয়ই রয়েছে!”
রাত কিছু বলছে না। এতদিন পর কাঁদার জন্যে একটা বুক পেয়েছে সে। আজ কাঁদবে সে। মন ভরে কাদবে।এমন কাঁদার জন্যে বুক কয়জনই বা পায়?অবহেলায় হারিয়েও যায়।কিন্তু রাত তো হারাতে চায় না। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখতে চায় শিশিরকে তার সাথে। রাত শিশিরের শার্ট খামচে ধরলো।কিছুক্ষণ পর তার কান্না থামলো। শিশির রাতের চোখ মুছে বললো,
-“আর কখনো কাঁদবা না!”
-“হু!”(নাক টেনে)
-“গুড গার্ল।”(মুচকি হেসে)
-“স্যার একটা কথা বলি?”
-“কি?”
-“আমি কিন্তু দ্বিতীয় শর্তটাও জিতে গেলাম।”(বাঁকা হেসে)
শিশির অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রাতের মুখপানে। আসলেই তো তাই।রাত তো জিতে গেছে। হ্যা!আর রাতের এই দ্বিতীয় #শর্ত জেতার মধ্য দিয়েই আজকের পর্ব এখানেই…
চলবে…
(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। একটা সুন্দর মন্তব্য উপহার দিয়েন🙃🖤)
(আসলে আমি ভীষণ অসুস্থ। জ্বর আর মাথা ব্যাথায় কার লিখতে মন চায়?তাও পাঠক-পাঠিকাদের কথা ভেবে কষ্ট করে লিখেছি।কালকে গল্প পাবেন না। আমার শরীর ভীষণ খারাপ😔😔😔।আজই ভীষণ কষ্ট করে লিখেছি। দোয়া করবেন😔)