#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস (২)
#পর্ব_২১
#মোহনা_হক
আজ আবার শহরে ফেরার দিন চৌধুরী বাড়ির সবার। আট দিনের মতো গ্রামে ছিলো তারা। তাও কিনা রাহীম চৌধুরী জোর করে তাদের রেখেছিলো। কাল রাতেই ফজলুল চৌধুরী জানিয়ে দিয়েছিলেন আগামীকাল তারা আবার শহরে ব্যাক করবে। কারণ অনেক কাজ জমা হয়ে গিয়েছে এ কয়েকদিনে। তাই আর দেরি করতে চাননি তিনি। সকালের নাস্তাটা ঠিক করেছে বাড়ি থেকেই করে যাবে। এজন্য সকাল সাতটার দিকে বসে বসে এখন নাস্তা করছে সবাই। নাস্তা সামনে রেখে আয়াজ চেয়ারে হেলান দিয়ে কথা বলছে এক লোকের সাথে। রুয়াতের সাথে সেদিনের পর থেকে আর কথা বলেনি। এমনকি তাকায়ওনি। কেউ না বুঝলেও রুয়াত ঠিকই বুঝে গিয়েছে। খাবার ফেলে রুয়াত আয়াজের দিকটায় তাকিয়ে আছে। ইনিমা চিমটি কাঁটে তার হাতে। আচমকা কেঁপে উঠে ইনিমার দিকে তাকায় সে। কন্ঠস্বর নিচু করে ইনিমা বলে-
-‘এতক্ষণ ধরে আমার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো? ভাইয়া কে বলবো কিছু?’
হতভম্ব হয়ে যায় রুয়াত। তার খেয়াল ছিলো না যে কেউ একজন তার দিকে এভাবে নজর রেখেছে। জিহ্বা দ্বারা অধর ভেজায়। পাশ ফিরে ইনিমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের খাবার খাওয়া শুরু করে।
-‘কথা বলছিস না কেনো? আমি আজই ভাইয়া কে বলবো তুই খাবার রেখে ভাইয়ার দিকে তাকিয়েছিস।’
বিরক্তিকর শব্দ করে রুয়াত। একে তো মনের ভিতর অস্থিরতার পরিমাণ বেড়েই চলছে তারউপর আবার ইনিমার এরূপ কথাবার্তা।
-‘আর তাকাবো না তোমার ভাইয়ের দিকে। হয়েছে এবার?’
নিঃশব্দে হেসে দেয় ইনিমা। এই মেয়েটা কে জ্বা’লাতন বেশি কিছুর দরকার নেই। শুধু দু একটা অন্য রকম কথা বললেই রেগে যায়। ইনিমা মোটেও আয়াজ কে কিছুই বলবে না। শুধু মাত্র রুয়াত কে ডিস্টার্ব করার জন্য এ কথাটি উচ্চারণ করেছে। নিমি একটু চেপে বসলো তাদের দিকে। ইদানীং অনেক কথা নিমি কে ছাড়া হয় রুয়াত আর ইনিমার মাঝে। যেসব কিছুই পরে জানানো হয় না নিমি কে।
-‘আমাকে ছাড়া আজকাল অনেক কথাই বলো তোমরা। বুঝেছি আমায় পর করে দিয়েছো। কি এমন বলো যে যেগুলো আমি শুনতে পারবো না?’
ফজলুল চৌধুরী একবার মাথা তুলে তিনজনের দিকে তাকায়। আস্তে কথা বললেও কেমন ফিসফিস আওয়াজ আসছে কথার। তিনি কোনো ডাক না দিয়েই খাবার খাওয়া শেষে করে উঠে যায়। রুমে গিয়ে ক্ষনিকের জন্য বিশ্রাম নিবে। তারপরেই রওনা হবে শহরের উদ্দেশ্যে। কথা বলা শেষে আয়াজ ফোনটা টেবিলের এক পাশে রাখে। মাথা নিচু করে খাওয়া শুরু করে। মায়া চৌধুরী মেহরুবা এখানে নেই। তারা আয়েশা চৌধুরীর রুমে। জেবা গিয়েছে চা বানাতে। কাউকেই এখনো চা দেওয়া হয়নি এখনো। সবাই নাস্তা দিয়ে চা বানাতে গিয়েছে। নিমির কথা শুনে কিছুটা বিরক্ত হয় ইনিমা। উচ্চস্বরে বললো,
-‘সব কথা নিমির শুনতে হবে কেনো? আমরা তো আর সেরকম কিছু বলিনি। শুধু বলেছি রুয়াত আমার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো? এটুকুই। আর কি শুনতে চাচ্ছিস তুই?’
রুয়াত চোখ বড় বড় করে ইনিমার দিকে তাকায়। প্রথমে বুঝতে না পারলে ও শেষে বুঝে মুখে তড়িঘড়ি করে হাত দেয় ইনিমা। নিমি ঘাড় বাঁকা করে আয়াজের দিকে তাকায় তাকাচ্ছে বার বার। মাথা তুলে আয়াজ ইনিমার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। একটু গম্ভীরমুখে বলে-
-‘তোরা কি নাটক করতে বসেছিস এখানে? কতক্ষণ ধরে এগুলো নিয়ে বসে আছিস? তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করে উঠ এখান থেকে।’
ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে রুয়াত। ভেবেছিলো আয়াজ অন্য কিছু বলবে। তেমন কিছুই হয়নি। বেঁচে গিয়েছে সে। তবে আজকাল সবাইকে একটু রাগ দেখিয়েই কথা বলে আয়াজ। আর তার হাসিমুখ তো উধাও একদম। এর কারণ কি রুয়াতের বলা সেই কথাগুলো? ভেবে পাচ্ছে না সে। তখন আয়াজ কে কিছু না বললেও হতো। আবার নিজের কান কে ও অবিশ্বাস করতে পারছে না। এক প্রকার মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে রয়েছে। তাদের আগেই আয়াজ খেয়ে উঠে চলে যায়। নিমি খানিকটা স্থির হয়ে বসে।
-‘ইনিমা আপু কি দরকার ছিলো আয়াজ ভাইয়ের সামনে এটা বলার? বললেও আস্তে বলতে পারতে। এত জোরে বলেছো কেনো?’
বিপাকে পড়ে যায় ইনিমা। সে আস্তেই বলতে চেয়েছিলো। রাগে মাথায় জোরে বলে ফেলেছে। নিমির উদ্দেশ্যে বলে-
-‘তুই আমাদের তখন ও কথাটা না বললেই আমার মুখ দিয়েও এসব বের হতো না। আমি কি ইচ্ছে করে বলেছি নাকি? আমাকে দোষ দেওয়া বন্ধ কর।’
হার মেনে যায় নিমি। এসব অপ্রাসঙ্গিক কথা বলতে চায় না।
(*)
গ্রাম থেকে আসার পর পর একদম সন্ধ্যা হয়ে যায়। সবাই ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে এখন। আয়াজ সেখান থেকেই তার অফিসে চলে যায়। গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকার কারণে আর বাসায় আসেনি। মায়া চৌধুরীর কাছে বলে গিয়েছে সেখানে যাবে। রুয়াত রুমে এসে পায়চারী করছে। নিমি শোয়া থেকে উঠে বলে-
-‘কিরে এভাবে সারা রুম জুড়ে পায়চারী করছিস কেনো? তোর কি একটুও ক্লান্ত লাগছে না?’
সরু চোখে রুয়াত নিমি কে একবার দেখে।
-‘তুই রেস্ট কর। আমার ভালো লাগছে না। এজন্য এভাবে পায়চারী করছি।’
নিমি শুনলো না রুয়াতের কথা। বরং টেনে এনে বসায় তার সামনে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে রয়েছে রুয়াত। কিছু একটা ভেবে নিমি বলে উঠে,
-‘কি হয়েছে তোর? সত্যি সত্যি বল। সারাদিন মুখ বেজা’র করে রাখিস। কিছু হয়েছে কি?’
-‘কিছু হয়নি। কি আর হবে।’
বিশ্বাস করলো না নিমি। কিছু একটা তো হয়েছে যার কারণে সারাদিন নিরবতা পালন করে রুয়াত। মেয়েটা মোটেও এরকম ভাবে থাকে না কোনো সময়। কিন্তু তিন চারদিন ধরে খেয়াল করছে রুয়াত সবার সঙ্গে কম কথা বলছে। আবার তাদের সাথে রাতে আড্ডা ও দিতে চায় না। এর রহস্য উদঘাটন করার জন্য নেমে পড়েছে নিমি। এবার আর কাউকে কিছু জানাবে না। এমন কি ইনিমা কে ও না। রুয়াতের দিকে খানিকটা চেপে বসে নিমি। অনুরোধের সুরে বলে-
-‘বল আমায়। বুঝেছি ইনিমা আপুর মতো তুই ও আমায় পর করে দিয়েছিস। আগে তো কথা পেটে ধরে রাখতে পারতি না বেশি সময়। অথচ এ কয়েকদিন ঠিকই কিছু একটা লুকিয়ে যাচ্ছিস তুই।’
-‘কিছু লুকাইনি। তুই রেস্ট কর। আমি রূহানের কাছে যাচ্ছি।’
রুয়াত বেরিয়ে যায় রুম থেকে। আপাতত কাউকে কিছু বলতে ইচ্ছুক নয় সে। নিমি অসহায় দৃষ্টিয়ে রুয়াতের চলে যাওয়া দেখছে। সত্যিই অসহায় অসহায় লাগছে তার। ভেবেছিলো রহস্য উদঘাটন করবে। কিন্তু রহস্য রহস্যই রয়ে গেলো। তবে এটা নিশ্চিত রুয়াতের কিছু একটা হয়েছে। তা না হলে কখনো রুয়াত এমনটি করতো না।
(*)
রাত দশটার মধ্যেই আয়াজ বাসায় ফিরে আসে। ফজলুল চৌধুরী কিছু একটা বলবেন ভেবে রেখেছেন। কিন্তু আয়াজের জন্যই বলতে পারেনি। এতো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে সেখানে আয়াজ না থাকলে ব্যাপারটা বেমানান লাগবে। অসম্পূর্ণ হয়ে থাকবে তা। কথাটি বলার জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি। আর বারবার তার মেয়ে দিকে তাকাচ্ছেন। তার এমন সিদ্ধান্ত মেনে নেবে তো ইনিমা? গতবার কিভাবে না করে দিয়েছিলো মুখের উপর। এবার কি হবে আসলে?মায়া চৌধুরী খবর পাঠিয়েছেন আয়াজ কে নিচে আসার জন্য। আয়াজ ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে এসে মাহের চৌধুরীর পাশে বসে। ফজলুল চৌধুরী শুকনো কাঁশি দিলেন। অতঃপর বললেন,
-‘আমার একটা কথা ছিলো। কেউ শোনার পর ভেবো না যে গতবারের ঘটনার উপর ভিত্তি করে বলছি। এবার আমি সিরিয়াস। ইনিমার জন্য ছেলে দেখেছি। আমার কাছের একজন মানুষ। কোম্পানির একটা ডিল হয়েছিলো তার সাথে। দেখতে শুনতে খুব ভালো। ব্যবহার, আচরণ, কথাবার্তা সব কিছু। ছেলেটার মা নেই। বাবা আছে। তবে অসুস্থ। ভাই বোন কেউ নেই। মোট কথা আমার ছেলেটা কে পছন্দ হয়েছে। অনেক বছর ধরে পরিচয় তার সাথে। আমি চাই ছেলেটির সাথে ইনিমার বিয়ে হোক। বাবা হিসেবে এটুকু বলার অধিকার আছে আমার। আশাকরি এবার আর কেউ কিছু বলবে না।’
মুহুর্তেই থমথমে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এবার অবশ্য ফজলুল চৌধুরী জানিয়েছে মায়া চৌধুরী কে। তিনিও সম্মতি দিয়েছেন। যতই চেনা জানা হোক আবারও খোঁজ খবর নিবে। বিয়েটা তো আর ছেলে খেলা নয়। আর মায়া চৌধুরী যদি সম্মতি না দিত তাহলে কখনোই এ সম্মন্ধে এগুতেন না তিনি। আয়াজ ফোন ছেড়ে তার বাবার দিকে তাকায়। ইনিমা এমন কথা শুনে একদম চুপ হয়ে যায়। তার একমাত্র ভরসা এখন আয়াজ। স্বাভাবিক স্বরে আয়াজ বললো,
-‘তোমার চেনা জানা হোক এরপর ও আমি দেখা করবো ছেলের সাথে। খোঁজ খবর নিবো। আমার বোন কে তো আর হুট করে কোনো ছেলে ধরে তার সাথে বিয়ে দিতে পারি না। কাল দেখা করবো ছেলের সাথে। এরপর আমার পছন্দ হলে এসব নিয়ে ভাববে। এর আগে কোনো শব্দ করবে না কেউ।’
মাহের চৌধুরী চেনে ছেলেটা কে। যথেষ্ট নম্র ভদ্র ছেলে। কথাবার্তায় কখনো সেরকম কিছু প্রকাশ হয় নি। ফজলুল চৌধুরী মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় আয়াজের কথায়। একটু নিশ্চিন্ত হলো ইনিমা। ভরসা পেলো। আয়াজের ছেলেটা কে পছন্দ নাও হতে পারে। সেটা ভেবে খানিকটা শান্ত হয় সে।
(*)
রাত দেড়টা বাজে। সবাই ঘুমিয়ে আছে। লিভিং রুমের সোফায় মাথা ধরে বসে আছে রুয়াত। তার ঘুম আসছে না। অনেক্ক্ষণ যাবত ঘুমের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু সে ধরা দিচ্ছে না রুয়াতের চোখে। হাতে এক কাপ চা। ঘুম আসছে না বলে চা বানিয়ে এনেছে। মেহরুবার পাশ থেকে উঠে এসেছে অনেক সময় হলো।
রাতের বেলায় আয়াজ তার কাজ করছে। একটা হিসেব কোনো মতেই মিলছে না। এক প্রকার বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে। লিভিং রুমে লাইট জ্বলছে দেখে সেখানটায় যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। হঠাৎ লিভিং রুমে রুয়াত কে একা বসে থাকতে দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হয়। সামনের দিকটায় আর পা বাড়ালো না। দাঁড়িয়ে থাকলো সেখানটায়। এত রাতে রুয়াত না ঘুমিয়ে এখানে বসে আছে? সাথে আবার নিমি অথবা ইনিমা কেউই নেই। মেয়েটার কিছু হয়েছে কি? জানতে চায় আয়াজ। তবে কোনো এক কারণে ধামাচাপা দিয়েছে জানার ইচ্ছেটা কে। কিছুদিনের জন্য বন্ধ রেখেছে রুয়াতের সঙ্গে কথা। মেয়েটা খানিকটা বুঝুক তার অবহেলার কারণ। অ’কারণে দোষ দিয়েই যাচ্ছিলো তার উপর। রাগ হয়েছে তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। এখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও কথা বন্ধ করেছে। আয়াজ কিছু না বলেই অন্য দিকে ঘুরে। আবার রুমে যাবে সে।
-‘শুনুন।’
মেয়েলি কন্ঠস্বর শুনে। থেমে যায় আয়াজ। তবে পিছন ঘুরলো না। রুয়াত তড়িঘড়ি করে করে এসে আয়াজের সামনে দাঁড়ালো। বুকে হাত গুঁজে থাকা মানবটার দিকে কিছু সময় চেয়ে থাকলো। যেনো মনেহচ্ছে বহু বছর পর সাক্ষাৎ তাদের। আমতা আমতা করে রুয়াত বললো,
-‘আপনি আমার সাথে কথা বলছেন না কেনো?’
অপাশ থেকে কোনো উত্তর আসেনি। বেশ অস্বস্থি লাগছে রুয়াতের। তবে তার কি ডাক দেওয়াটা ভুল হয়েছে? ফের বলে-
-‘কি হলো কথা বলছেন না কেনো?’
এবারও নিশ্চুপ আয়াজ। কেমন অস্থির হয়ে যাচ্ছে তার প্রেয়সী উত্তর না পেয়ে। ঠিক এটাই দেখতে চেয়েছিলো সে।
-‘কথা বলুন। আশ্চর্য! আপনি এভাবে চুপ হয়ে আছেন কেনো?’
শেষের কথায় রুয়াত আয়াজের হাত চেপে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে রুয়াতের হাত ছেড়ে দেয় সে। খানিকটা অবাক হয়ে তাকায় রুয়াত। শুকনো ঢোক গিলে। ভাবলেশহীন হয়ে আয়াজ বললো,
-‘খু’নিদের হাত ধরতে নেই। সরো সামনে থেকে।’
অবাক চিত্তে রুয়াত কথাগুলো শ্রবণ করলো। তৎক্ষনাত মাথা তুলে তাকালো মানুষটার দিকে। মুখশ্রী তে বিরক্তিকর ছোঁয়া বিদ্যমান। তবে কি রুয়াত কে দেখে আয়াজ এখন বিরক্তি অনুভব করছে?
-‘মানে?’
-‘বাংলায় বলেছি। আশাকরি বোঝার কথা। রাত হয়েছে ঘুমাবো।’
সহসা রুয়াত বলে উঠে,
-‘কেনো এমন করছেন? আপনি আগে কখনো এমন করেননি। এ কয়েকদিনে কি হলো আপনার?’
-‘আগে তো আর বুঝিনি কেউ একজন আমায় খু’নি ভেবে ঘৃণা করবে।’
-‘দুঃখিত। আর করবো না। এবার তো কথা বলুন। আমার সত্যি সত্যি ভালো লাগছে না।’
-‘আমারও লাগছে না।’
-‘তাহলে এমন করছেন কেনো? আপনার হৃদয় এখন পাথরের ন্যায় হয়ে গিয়েছে। পাষাণ আপনি। শুনছেন আমি কি বলেছি?’
আয়াজ একটু পিছু সরে আসে। ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন করে,
-‘রাতে একটা ছেলেকে একটা মেয়ে কখনোই এসব বলতে পারে না। আর রইলো তোমার বলা দ্বিতীয় কথা। খু’নিদের হৃদয় পাথর হতে হয়। নাহয় মানুষ খু’ন করবে কিভাবে? এতো রাতে কোনো এক খু’নির সাথে একটা মেয়ের কথা বলাটা শোভা পায় না। মাথা ঠান্ডা করো। ঘুমাও। তবে একটা কথা আর কখনো আগের মতো বিরক্ত করবো না তোমাকে।’
মন উশখুশ করছে রুয়াতের। তখন নাহয় ভুল করেই বলেছিলো। তবে সে কথাটিও আয়াজ ক্লিয়ার করেনি। সে কি সত্যি জড়িত ওসবের সাথে? হাজার হাজার প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে। বলার সাহস পাচ্ছে না। একে তো মানুষটার এরূপ ব্যবহার। দ্বিতীয়ত এরকম কথাবার্তা। কোন দিকে যাবে রুয়াত? কোনটা বিশ্বাস করবে? তার নিজের কানে শোনা সে কথাটি? কিন্তু সে তো আয়াজের এরকম ব্যবহার ও সহ্য করতে পারছে না। কেনো জানি মনেহচ্ছে তার কোঁথাও ভুল হচ্ছে। এক প্রকার চিন্তার মধ্যে পড়ে যায় সে।
-‘সেসব বাদ দিন। আর কখনো আগের মতো বিরক্ত করবো না মানে? এটা কেনো বলেছেন?’
-‘তুমি কি সত্যিই বুঝোনি? নাকি বুঝেও না বোঝার মতো থাকো। আমার মোটেও আগ্রহ নেই এতো রাতে এসব কথা বলার।’
বলেই পাশ কাটিয়ে আয়াজ চলে যায়। রুয়াত সামনে ও ফিরলো না পেছনেও না। বরং একই জায়গায় থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকলো। আয়াজ কি তাকে সত্যিই অবহেলা করা শুরু করেছে? সেদিন যে বললো এ খু’নি তোমায় ইগনোর করলে সেটা সইতে পারবে না তুমি। দমে যায় রুয়াত। সে তো আসলেই সইতে পারছে না।এখন মনেহচ্ছে আপাতত এই কারণেই মানসিক অশান্তিতে ভুগছে।
(*)
এই নিয়ে তিন নাম্বার সিগারেট মুখ পুড়ছে আয়াজ। আজ আর আপন মনে ধোঁয়া আকাশের পানে উঁড়িয়ে দিচ্ছে না। ধোঁয়া এদিক সেদিক উঁড়ে যাচ্ছে। দু’টো সিগারেট যে শেষ করেছে সে খেয়াল নেই তার। পুরো রুম অন্ধকার করে রেখেছে। রাস্তার পাশের ল্যাম্পপোস্ট থেকে আলো আসছে। এতো রাতেও শহরের মানুষের চোখে যেনো ঘুম নেই। কেউ যাচ্ছে গ্রামে বা আবার কেউ আসছে শহরে। দিনের তুলনায় রাতের শহর একটু শান্ত। স্থির হয়ে একদিকে চেয়ে আছে আয়াজ। বারবার মনে পড়ছে তার প্রেয়সীর মুখখানা। নিশ্চয়ই কষ্ট পেয়েছে ভীষণ। সেটা তখনকার চেহেরা দেখেই বোঝা গিয়েছে। কিছু করার নেই তার। ইচ্ছে করেই এমন করছে অথচ তার মনেহচ্ছে যেনো সব দিক দিয়ে হাত পা বাঁধা। অতি ক্ষুদ্র শ্বাস ফেলে বলে-
-‘আমার হৃদয় পাথর হয়নি প্রেয়সী। আমি পাষাণ ও নই। শুধু তুমি আমায় চিনতে ভুল করেছো। কতবার ক্ষমা করবো? ভুল করতে করতে ভুলের সংখ্যা পাহাড়ের মতো হয়ে গিয়েছে। আমি তো অবিশ্বাস করিনি তোমায়! তোমার উপর থেকে এক বিন্দুও বিশ্বাস কমেনি তাহলে কেনো এতো অবিশ্বাস করো আমায়? ভালোবাসি বলে? যখন কথাটি গোপন ছিলো তখন একদম বাধ্য মেয়ে ছিলে। অথচ এখন কথাটি প্রকাশ করার পর প্রতিনিয়ত অবাধ্য হয়ে যাচ্ছো। এতো ভুল বুঝো কেনো আমায়? চেয়েছিলাম তোমার অভিমান ভাঙাবো। যে করেই হোক অভিমান ভাঙাবো। সে সুযোগটা ও দিলে না। উল্টো এখন আমার তোমার উপর অভিমান করে থাকতে হচ্ছে। আয়াজ আরও কঠিন হবে তোমার জন্য। বারবার একই শব্দ উচ্চারণ করে আমার হৃদয় পুড়িয়েছ। ভালোবাসি বলে সব সময়ের মতো মাফ করে দিবো? সেটা কখনোই হবে না প্রেয়সী। চাইলেই তোমাকে ক্ষমা করে দিতে পারি। কিন্তু তোমার বোঝা উচিৎ অবহেলা ঠিক কি জিনিস। তোমাকে শোধরাবার সুযোগ আবারও দিলাম। কিছু দিন কষ্টে থাকো। ঠিক কোঁথায় ভুল হয়েছে তোমার সেটা আগে বুঝো। তোমাকে আমি প্রতিবারের মতোই ক্ষমা করে দিলাম মন থেকে। যেটা শুধু অজানা থাকবে তোমার কাছে বেশ কিছুদিনের জন্য। পরিশেষে একটাই কথা বলতে চাই ‘এই আমি উম্মাদের মতো ভালোবাসি তোমায় প্রেয়সী।’
#চলবে….