প্রেম_প্রার্থনা #তামান্না_আঁখি #পর্ব-১১

0
562

#প্রেম_প্রার্থনা
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-১১

রবিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরল। বাড়ি ফিরে বাইক পার্ক করে সদর ঘরের দরজায় নক করল। দরজা খুলে দিলো চারু। চারুকে দরজায় দেখে রবিন কিছুটা অবাক হলো। কিন্তু কিছু বলল না। ভ্রু কুচকে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইল কিন্তু হলো না। চারু দরজা খুলে দরজার দুই পাশে হাত রেখে যে দাঁড়িয়েছে আর সরছে না। রবিন না পেরে বলল-

“কি রে সর!”

রবিনের কথায় চারুর ঘোর কিছুটা কাটলো। সে “হ্যা?” বলে আবারো রবিনের দিকে তাকিয়ে থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। রবিনের খুব ই রাগ হলো। সারাদিন বাইরে কাটিয়ে এসে ক্লান্ত সে। ঘরে ঢুকে ফ্রেশ হওয়া দরকার তার। কিন্তু চারু এখনো দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছে। সে এবার ধমকে উঠলো।

“সরতে বলছি না তোরে? খাম্বার মতো দাঁড়ায় আছস কেন? সর!”

শেষের “সর” শব্দটায় চারু আঁতকে উঠল। সে এদিক ওদিক তাকালো । যখন বুঝলো সে দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছে রবিনকে ঢুকতে দিচ্ছে না তখনি ছিটকে সরে গেলে। রবিন ক্ষিপ্ত চোখে চারুর দিকে চেয়ে ঘরে ঢুকে সোজা তার ঘরে চলে গেলো।। চারু একটা ভেংচি কেটে দরজা লাগিয়ে রানির ঘরে চলে গেলো। তার ফুপি আজকে তাকে রেখে দিয়েছে। সে আজ রানির সাথে থাকবে।

ঘরে গিয়ে চারু ভাবতে বসলো কি এমন হলো তার? রবিনকে দেখলেই তার এমন লাগে কেনো? দরজা খুলে সে এভাবে রবিনের দিকে হা করে তাকিয়েই বা ছিলো কেন? সে ত এর আগেও রবিনকে কত বার দেখেছে কই তখন ত এমন হয় নি। সে আর কিছু ভাবতে পারল না। একটা ছোট চিৎকার দিয়ে চুল এলোমেলো করে হাত পা ছুঁড়ে বিছানায় মুখ চেপে ধরলো। চারুর হঠাৎ চিৎকারে রানির হাত থেকে বই প্রায় পড়েই যাচ্ছিল। চারুর দিকে চেয়ে সে বিড় বিড় করে বলল-

“একটা মাথা পাগল কি কইরা আমার মামাত বোন হইলো!!!”

রাতের খাওয়া শেষ করে চারু আর রানি দুজনেই মোবাইল নিয়ে বসলো। দুজনেই মোবাইল নিয়ে দুই মাথা এক করে কিটকিট করে হাসছে। তখনি দরজায় নক পড়লো। গম্ভীর কন্ঠে আওয়াজ এলো-

“রানি ঘুমায় গেছস?”

চারু আর রানি দুজনেই তড়িঘড়ি করে লাফ দিয়ে উঠলো। এটা তো রবিন ভাইয়ের কন্ঠ। দুজনেই হাতের ফোন বালিশের নিচে রেখে বই হাতে নিয়ে বসলো। রানি গলা উঁচিয়ে বললো –

“না ভাইয়া, ঘুমাইছি না। আসো।”

রবিন দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকল। রানির বিছানায় এসে বসলো। আড়চোখে চারুকে দেখে রানিকে বললো –

“তোর সাথে আমার কথা আছে। ”

“কি কথা ভাইয়া?”

রবিন এবার চারুর দিকে তাকিয়ে বললো-

“চারু তুই একটু বাইরে যা।”

চারু বোকার মত রবিনের দিকে একবার আর রানির দিকে একবার তাকালো। রানিও তাকিয়ে আছে। কি এমন কথা যা চারুর সামনে বলা যাবে না? তার মাথায় কিছু ঢুকছে না। রবিন আবারো তাড়া দিলো চারুকে-

” কি হইলো? যা।”

চারু খুব অপমানিত অনুভব করলো। অপমানে তার মুখ শক্ত হয়ে গেলো। সে ধুপ ধুপ পা ফেলে শব্দ করে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার সময় ইচ্ছা করে দরজাটা হাট করে খুলে রেখে গেলো। রবিন হতাশ শ্বাস ফেলে উঠে গিয়ে দরজা লাগিয়ে আবার এসে রানির সামনে বসল। নরম কন্ঠে বললো-

“রানি, আমি তোর বড় ভাই। তোর সব সুবিধা অসুবিধা আমার জানার অধিকার আছে নাকি নাই?”

রানি মাথা নাড়িয়ে বুঝালো ” আছে”।

“তাহলে তুহিন তোর সাথে আর কি কি করছে আমারে বল। ওইদিন তোর হাত ধরার কারনে আমি ওরে শাস্তি দিছি। ওইটার প্রতিশোধ নিতে কি আজকে কিছু করছে?”

রানি কি বলবে বুঝতে পারল না। সে দ্বিধায় পড়ে গেলো। সে মাথা নাড়িয়ে বলল-

“না ভাইয়া, কিছু করে নাই।”

রবিন আবারো বলল-

“তুহিন আমার ক্লাসমেট। আমি যতদূর জানি খারাপ কোনো চিন্তা ওর মাথায় আসার কথা না। কিন্তু তারপরেও যদি কোনো ধরনের সমস্যা হয় আমারে তখনি জানাইবি।মনে থাকব?”

রানি মাথা নাড়িয়ে জানালো তার মনে থাকবে। রবিন রানির মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে উঠে চলে গেলো। রানি হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। সে আর কোনো ঝামেলা চায় না বলেই মিথ্যা বললো। সে তার ভাই কে চিনে, তুহিন আজ তার সাথে যা করেছে তা জানলে তুহিনের খবর করে দিত।

রবিন ছাদে এসে তার জন্য রাখা চৌকিতে পাতা বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। কিছুক্ষন ওভাবেই চোখ বন্ধ করে থাকলো। হুট করে তার কানে ফোঁস ফোঁস শব্দ এলো। প্রথমে সে ভাবলো সাপ আসলো নাকি ছাদে। সে বিছানায় উঠে বসলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে সাপ খুজতে লাগলো। হঠাত চোখ পড়লো রেলিং এর কাছে দাঁড়ানো একটা অবয়বের দিকে। তার দিকে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে চারু। রবিন বুঝলো চারু রাগের চোটে ফোঁস ফোঁস করছে। রবিন মাথা নিচু করে দুই পাশে মাথা নাড়িয়ে শব্দহীন ভাবে একচোট হাসল। পরে মাথা তুলে জোরে আওয়াজ তুলে বলল-

“ওই নাগিনী!! ওইখানে কি করস। জ্বীনে ধরব তো।”

চারু হঠাৎ আওয়াজে চমকে পিছনে তাকালো। তাকিয়ে রবিনকে দেখলো।৷রবিন আবারো আওয়াজ তুলে বলল-

“ওইদিকে জ্বীন আছে। জ্বীনে ধরব। এইদিকে আয়।”

চারু জ্বীনের কথা শুনতেই চিৎকার করে এক দৌড়ে রবিনের চৌকির কাছে এসে দাঁড়ালো। পরক্ষনেই তার মনে পড়লো রবিন তাকে একটু আগে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলো। মনে পড়তেই সে “হুহ” বলে মুখ ঝামটা দিয়ে এক ছুটে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো। রবিন সেদিকে চেয়ে শব্দ করে হেসে দিলো।

_________

সকালে ঘুম থেকে উঠে খাবার টেবিলে বসে চারুর মন অনেক ভালো হয়ে গেলো। খাবার টেবিলে রবিন তাকে এক্সট্রা আরেকটা ডিম ভাজি প্লেটে তুলে দিয়েছে। যদিও রানিকেও রবিন ডিম দিয়েছে, কিন্তু তাতে কি তাকে ত বড় ডিম টা দিয়েছে। চারু এসব কেয়ার পাত্তা দিল না। গত রাতের অপমানের শোধ সে নিবে। তাই রবিনের দেয়া ডিম টা সে প্লেট থেকে নামিয়ে রেখে দিলো। রবিন সেটা দেখে নিঃশব্দে হাসলো। সে চারুর রেখে দেয়া ডিম টা নিজের প্লেটে নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। চারুর মন টা আবারো খারাপ হয়ে গেলো। আশ্চর্য!! সে রেখে দিছে বলে কি আবার তার প্লেটে তুলে দেওয়া যেত না?? চারু আবারো অপমানিত বোধ করলো। সে ইচ্ছে করে দুইটার জায়গায় তিনটা পরোটা খেলো।

দুপুরের দিকে চারুর মন আবারো ভালো হয়ে গেলো। চারু রানি দুজনেই আজ স্কুল মিস দিয়েছে। দুজনে ই বাড়ি বসে বসে মুভি দেখলো। মুভি দেখা শেষ করে রানি চারুকে বললো-

“দুইদিন পরে মেলা। এইবার মেলায় কে নিয়া যাইব? ফরহাদ ভাই ত নাই।”

“সেটাই ভাবতাছি। কারে নিয়া যাওয়া যায়!””

“ভাইয়ারে বইলা দেখবি, আমাদের নিয়ে যায় কিনা?”

চারু মুখ ভেংগিয়ে বললো-

“রবিন ভাইরে নিয়া গেলে ঘুইরা ঘুইরা আর মেলা দেখা লাগত না। এক জায়গায় খাম্বা হইয়া দাড়ায়া মেলা দেখার শখ মিটানো লাগব।”

“তুই একটু বইলা দেখবি? ”

চারু রানির কথায় ছ্যাত করে জ্বলে উঠলো। ক্ষেপে গিয়ে বললো –

“আমি বললে কি হইবো? আমার ধমক খাওনের শখ নাই। তুই গিয়ে বল।”

রানি চারুকে বুঝানোর সুরে বললো-

“তুই ভাইয়ার মামাতো বোন না? তোরে ত ভাইয়া ছোট থেকে কত আদর করে। তুই বললে ভাইয়া মানতেও পারে।”

চারুর কথা টা মনে ধরল। চিন্তা করে দেখলো রবিন ভাইয়ের কাছে গিয়ে বলে দেখবে সে মানে কিনা। এতেই বুঝা যাবে রবিন ভাইয়ের কাছে চারুর গুরুত্ব আছে কিনা। রবিনের কাছে যাওয়ার আগে সে হালকা একটু সেজে নিল। মুখে একটু পাওডার দিয়ে চোখে কাজল দিলো তারপর ঠোঁটে হালকা একটু লিপ্সটিক দিয়ে এই ভ্যাপ্সা গরমে চুলগুলো ছেড়ে দিল। চুল গুলো ছাড়তেই গরম অনুভব হলো চারুর। কিন্তু সে আমলে নিলো না। সাজগোজের বেলায় এসব হালকা-পাতলা গরমে তার যায় আসে না। নিজেকে পরিপাটি করে সে ছাদে উঠে গেলো।

রবিন ছাদে খড়ের ছাউনির নিচে চৌকিতে পাতা বিছানায় বসে বই পড়ছিলো। চারু ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো। কন্ঠ যথাসম্ভব মিষ্টি করে বলল-

“রবিন ভাই, একটা কথা ছিলো।”

রবিন বই রেখে মুখ তুলে চাইলো। চারুকে দেখে বইটা পাশে রেখে পূর্ন দৃষ্টিতে চাইল। গম্ভীর কন্ঠে বললো-

“বস।”

চারু ওড়নার কোণা আংগুলে প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে মুখে লাজুক হাসি নিয়ে চৌকির কোণায় বসলো।রবিন সব ই খেয়াল করলো। সে আবারো বলল-

“কি বলবি বল?”

চারু মনে মনে কথা সাজালো তারপর করুণ মুখ করে বললো-

“দুই দিন পর ই ত মেলা। এইবার আমাদের মেলায় নিয়া যাওয়ার কেউ নাই।”

“নিয়া যাওয়ার কেউ না থাকলে যাইস না।”

চারু এবার নড়েচড়ে বসলো। ইনিয়ে বিনিয়ে মাথা নাড়িয়ে বললো-

“ফরহাদ ভাই থাকলে ঠিক ই নিয়া যাইতো। ফরহাদ ভাই কত ভালোবাসে আমরা সবাইরে।”

বলেই চারু আড়চোখে রবিনের দিকে তাকালো। রবিন চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে চারুর দিকে। চারু কি বলতে চাইছে বুঝার চেষ্টা করছে। চারু আবারো বলল-

“প্রতিবার ই ত ফরহাদ ভাই এর সাথে যাই। এইবার তুমি নিয়া যাও না রবিন ভাই!”

রবিন এইবার বুঝলো চারুর এত ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলার রহস্য। সে গম্ভীর স্বরে বলল-

“ঠিক আছে নিয়া যাব।”

চারু এক প্রকার লাফিয়ে উঠলো। সে ভাবে নি রবিন রাজি হবে। সে রবিনকে ধন্যবাদ দিবে তার আগেই রবিন বললো-

“এই ভর দুপুরে এইভাবে পেত্নী সাজছস কেন?”

চারু থতমত খেয়ে গেলো। পেত্নী সাজছে মানে? সে এত সুন্দর করে সাজলো, গরম সহ্য করে চুল ছেড়ে রাখলো পেত্নী ডাক শোনার জন্য? চারুর মন খারাপ হলো। সে মুখ ভোঁতা করে বললো-

“পেত্নী সাজব কেন? আমি ত সুন্দর দেখানোর লাইগা সাজছি।”

রবিন কিছুক্ষন গভীর চোখে চারুর ভোঁতা মুখের দিকে চেয়ে রইল। তারপর বলল-

“তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস চারুলতা। ”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here