প্রেম_প্রার্থনা #তামান্না_আঁখি #পর্ব-৩৩

0
493

#প্রেম_প্রার্থনা
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৩৩

ফারহানা সিড়ি বেয়ে অস্থির হয়ে নিচে নামছে। তার চোখ মুখে কিছুটা ভয়। এক দৌড়ে রান্নাঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালো। সাজেদা বেগম,রাজিয়া বেগম সহ সামিরাও তাকালো ফারহানার দিকে। ফারহানা শুকনো ঢোক গিলে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল-

“চারু, চারু ঘরে নাই। বাড়ির কোথাও নাই।”

তিন জা ই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। ঘরে নেই মানে? কারোর ই ফারহানার কথা বোধগম্য হচ্ছে না। রাজিয়া বেগম ফারহানা কে সরিয়ে দিয়ে দুতলার সিড়ির দিকে ছুটলেন। সাজেদা বেগম সামিরাকে রান্নাঘরের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে তিনিও দুতলার দিকে গেলেন। ফারহানাও পিছু পিছু গেলো। সারা বাড়ির কোথাও চারুকে খুজে পাওয়া গেলো না। রাজিয়া বেগম অস্থির হয়ে কয়েকবার পুরো বাড়ি ঘুরলেন। শেষে ক্লান্ত হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। সাজেদা বেগম ও চিন্তিত হয়ে এদিক ওদিক খুজলেন। কোথাও ই নেই চারু। তিনি রাজিয়া বেগমকে টেনে তুলে আড়ালে নিয়ে গেলেন।বললেন-

“এখন কি হইব রে? আমার তো খুব ডর করতাছে।”

রাজিয়া বেগম ডুকরে কেঁদে দিলেন। বললেন-

“আপা আমি কিছু জানি না।আমার মেয়েটারে খালি আইন্না দেও। মান সম্মান সব চুলায় যাক আমার মেয়েটারে আইন্না দেও।”

সাজেদা বেগম অসহায় চোখে তাকালেন।আজ শাহজাহান আলী বাড়িতে থাকলে কিছুতেই ঘটনাটা এই পর্যন্ত আসতো না। তিনি মনে মনে আল্লাহর কাছে এই বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে প্রার্থনা করলেন।

_______

চারু রবিনের সামনে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে। মাঝে মাঝে তার নাক টানার শব্দ ও শোনা যাচ্ছে। রবিন একই ভাবে গাছের শিকড়ে বসে আছে, তার মাথা ঝুঁকে আছে নিচের দিকে। আরো কিছুক্ষন পর সে মাথা তুলে চারুর ক্রন্দনরত মুখের দিকে তাকালো। গম্ভীর কন্ঠে বলল-

“ন্যাকা কান্না আমার পছন্দ না। তোরে আমি বাড়িতে যাইতে কইছি। দাঁড়ায় না থাইকা যা।”

চারু রবিনের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবারো চোখ নামিয়ে নিলো। কান্নাভেজা কন্ঠে বলল-

“বাড়িতে গেলে আব্বা আমারে বিয়ে দিয়া দিব। আমি যাইতাম না।”

রবিন একটা ছোট শ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো। চারুর কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বলল-

“বিয়ে দিত না। পাত্রী দেখলেই বিয়ে হইয়া যায় না।”

চারু ডুকরে কেঁদে দিলো। বললো –

” না বিয়ে দিয়ে দিব। আমি আব্বারে মোবাইলে কথা কইতে শুনছি। আমি বাড়িত যাইতাম না। কোনোমতেই না।”

” তুই বাড়িতে না গেলে সৈয়দ বাড়ির মান সম্মান নষ্ট হইব।মেঝ মামা না বুইঝা এই কাজ করছে। তুই বাড়িতে যা বড় মামা আইসা সব আটকায় ফেলব।”

” তুমি আসো আমার সাথে। তুমি আটকাও। ”

“আমি আটকাইতে পারলে আমি সব চেষ্টা করতাম। তোরে দেখতে আসা ওই ছেলেরে গ্রামেই ঢুকতে দিতাম না। কিন্তু আমি অপারগ চারু। ”

চারু ক্ষেপে গেলো। চিৎকার করে বলল-

“কিসের অপারগ তুমি? তুমি জানো আমি তোমারে বিয়ে করতে চাই তাইলে…..”

“চুপ একদম চুপ। আয় আমার সাথে আমি তোরে বাড়িতে দিয়া আসতাছি। চুপচাপ পাত্রের সামনে যাবি। সৈয়দ বাড়ির অসম্মান হয় এমন কিছু করবি না।”

রবিন চারুর হাত ধরলো।চারু এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিলো। রবিন রাগী চোখে তাকিয়ে গর্জন করলো-
“চারু।”

চারুর কান্না দ্বিগুণ হলো। কিন্তু রবিন কোনো পাত্তা দিল না।সে জোর করে চারুর হাত ধরলো। রবিনের হাতের চাপে চারুর হাতের কাচের চুড়ি ভেংগে নিচে পড়ে গেলো।রবিন টানতে টানতে চারুকে বাইকের কাছে নিয়ে গেলো। আদেশ করলো-

“বাইকে উঠ। আর কোনো ঝামেলা আমি চাই না।”

চারু উঠলো না।জেদ করে দাঁড়িয়ে রইলো। রবিন চারুর বাহু ধরে তাকে বাইকের পিছনে বসিয়ে দিলো। তারপর নিজে উঠে বসে চারুর একটা হাত পেটের সাথে চেপে ধরে অন্য হাতে বাইক স্টার্ট দিলো। পুরো রাস্তা চারু রবিনের পিঠের উপর মাথা রেখে ফোঁপাতে ফোঁপাতে গেলো। রবিনের পিঠের শার্টের কিছু অংশ ভিজে গেলো চোখের পানিতে। সৈয়দ বাড়ির পিছনের গেটে এসে বাইক থামালো রবিন। চারুর হাত টেনে বাইক থেকে নামালো। চারু নিচ দিকে তাকিয়ে এখনো আগের মতোই কান্না করছে। রবিন কিছুক্ষন সেই কান্না ভেজা ফোলা চোখ মুখ দেখলো। হাত বাড়ালো চোখের পানি মুছার জন্য। কিন্তু কি ভেবে আবার নামিয়ে নিলো। কন্ঠ নরম করে বলল-

“ঘরে যা। কেউ যেন কিছু টের না পায়। ”

চারু কোনো উত্তর করলো না। কাঁদতে কাঁদতে ঘুরে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। রবিন অস্থির হয়ে ডাকলো-

“চারু”

চারু দাঁড়ালো।কিন্তু পিছন ফিরলো না। রবিন ধরা গলায় বলল-

“আমি থাকতে অন্য কারো সাথে তোর বিয়ে হইত না। তুই……তুই এইটা নিয়ে ভাবিস না।”

চারু কোনো উত্তর করলো না।ধীর পায়ে দরজা দিয়ে বাড়িতে ঢুকে গেলো। রবিন বাইকে বসা অবস্থায় কিছুক্ষন সেদিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।

চারু ধীর পায়ে সিড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। প্রথমেই সাজেদা বেগমের চোখে পড়লো সে। তিনি দৌড়ে এসে চারুকে ধরলেন। বিধ্বস্ত চারুকে দেখে চাপা কন্ঠে বললেন-

“তোর এই অবস্থা কেমনে হইছে? কই গেছিলি তুই?”

চারু ভাবলেশহীন চোখে তাকিয়ে রইলো কিছু বলল না। সাজেদা বেগম এদিক ওদিক তাকিয়ে চারুকে নিয়ে তাড়াতাড়ি দুতলায় উঠে এলেন। চারুকে নিয়ে চারুর ঘরর আসলেন। সেখানে রাজিয়া বেগম বসে কান্না করছেন।ফারহানা সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছে। চারুকে দেখে ফারহানা রাজিয়া বেগমকে ডেকে বলল-

“চাচী চারু আইছে।”

রাজিয়া বেগম মাথা ঘুরিয়ে চারুকে দেখে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন। কান্না করে বললেন-

“আমার মা! তুই কি আমার উপর রাগ করছস? আমার যে কিছু করার নাই।আমারে মাফ কইরা দে।”

চারু নিজেও কেঁদে দিলো। দুই মা মেয়ের কান্নার মাঝেই কামরুজ্জামানের হাঁক শুনা গেলো। মেহমান রা গেটে চলে এসেছে। তিনি বাড়ির সবাইকে নিচে আসতে ডাকছেন। রাজিয়া বেগম নিজের চোখ মুছে চারুর চোখ মুখ ও মুছিয়ে দিয়ে বললেন-

” পাত্রী দেখতে আইলেই বিয়ে হয় না রে মা। তোর বাপ এই পাগলামি করছে এখন তুই যদি সামনে না যাস তোর বাপের যে ইজ্জত যাইব।”

চারু কান্নাভেজা কন্ঠে বলল-

“আমি আব্বারে মোবাইলে কথা কইতে শুনছি আম্মা। পাত্র আমারে পছন্দ করলে বিয়ে দিয়া দিব আজকেই।”

রাজিয়া বেগম সাজেদা বেগমের দিকে বিস্মিত চোখে তাকালেন।তারপর চারুকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন-

“তোর আম্মা থাকতে এমন কিছু হইতো না। তুই চিন্তা করিস না। তোর আব্বা ডাকলে ঠিকঠাক মতো পাত্রের সামনে আসিস। তোর আব্বার উপর রাগ করিস না। মানুষটার মাথার ঠিক নাই এখন। পরে ঠিক ই বুঝতে পারব।”

সাজেদা বেগম আর রাজিয়া বেগম চলে গেলেন অতিথিদের আপ্যায়ন করতে। ফারহানা চারুকে হাত ধরে টেনে নিয়ে বিছানায় বসাল। কোমল কন্ঠে জিজ্ঞেস করল-

“কই গেছিলি? এইভাবে কেউ বাড়ি ছাইড়া যায়? চাচী কি কান্নাই না করছে তোর চিন্তায়।”

“আমি বিয়ে করতাম না আপু। আব্বা আমারে বিয়ে দিয়া দিব। বড় বাবা আসে না কেন? বড় বাবারে খবর দেও। ”

চারু চোখের পানি ফেলে কান্না করতে লাগলো। ফারহানা কিছুটা অবাক হলো।চারুর এই কান্না শুধু মাত্র বিয়ে না করার কান্না না, এই কান্নার পিছনে আরো কোনো কারণ আছে। নয়ত এই সামান্য কারনে কোনো কিশোরী মেয়ের কান্না এতটা গভীর হয় না। একটা মেয়ে হয়ে ফারহানা সেটা বুঝে।

কামরুজ্জামান অতিথি আপ্যায়নে কোনো ত্রুটি রাখলেন না। তিনি নিজের হাতে সবাইকে আপ্যায়ন করলেন। এক ফাঁকে রাজিয়া বেগম তাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে বললেন-

” আমার মেয়েটা অনেক ছোটো। সামনে তার পরিক্ষা। এই সময় তুমি এইটা কেন করলা?”

“বেশি বুঝবা না। যাও মেয়েরে নিয়া আসো।”

“চারু কান্নাকাটি করতাছে।”

“করুক। আমি ওর ভালোর জন্যই সব করতাছি। ছেলে অনেক উচ্চ বংশের ।যাও ওরে নিয়া আসো।।”

কামরুজ্জামান ঝড়ের বেগে চলে গেলেন। রাজিয়া বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। ফারহানাকে ডেকে চারুকে আনতে বললেন। ফারহানা আরেকবার চারুকে সুন্দর করে ঠিকঠাক করে দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে নিয়ে আসলো। ঘরে ঢুকে চারু মায়ের শিখানো অনুযায়ী সবাইকে সালাম দিলো। কামরুজ্জামান তাকে তার পাশে নিয়ে গিয়ে বসালেন। পাত্রের বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন-

“মেয়েটা আমার বয়সে ছোট তো তাই একটু দূড়ন্ত কিন্তু তার মন টা অনেক ভালো। সে পড়াশোনায় ও অনেক ভালো। আমি চাই আমার মেয়ের পড়াশোনায় যেন কোনো বাধা না আসে।”

পাত্রের মা চারুকে দেখে সন্তুষ্ট হয়ে বললেন-

“না ভাইসাহেব যতদুর মন চায় পড়ব। আমাদের তরফ থাইকা কোনো বাধা আসতো না।”

পাত্রের বাবাও মাথা দুলিয়ে সায় দিলো। চারু আড়চোখে একবার পাশে বসে থাকা তাকে দেখতে আসা ছেলেটার দিকে তাকালো। চোখাচোখি হলো দুজনের। ছেলেটাও এক দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। চারুকে তাকাতে দেখে মৃদু হাসলো। চারু তৎক্ষণাৎ চোখ সরিয়ে নিলো। রবিনের প্রতি তার হৃদয়ে এক রাশ অভিমান জমা হলো। রবিন কি চাইলেই পারতো না আজকের এই ঘটনাটাকে থামাতে? পারতো। কিন্তু ইচ্ছে করে কিছু করেনি। তার মানে কি রবিনের মনে তার জন্য কিছু নেই?

চারুর ভাবনার মাঝে দিয়েই ঘরে ঢুকলেন শাহজাহান আলী। পিছন পিছন ঢুকলো রবিন।ঢুকেই চারুর দিকে দৃষ্টি দিলো। চোখাচোখি হলো দুজনের। চারু চোখ সরিয়ে নিলেও রবিন সরালো না।সে শান্ত চোখে ঘোমটা দিয়ে বসে থাকা চারুর দিকে তাকিয়ে রইলো।

শাহজাহান আলীকে দেখে কামরুজ্জামান কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেলেন। তিনি আশা করেন নি এমন সময় তার বড় ভাই এখানে চলে আসবে।তিনি তো মোস্তফা কামাল কে সাথে নিয়ে শহরে গিয়েছিলেন ব্যবসার কাজে। পাত্রের বাবা শাহজাহান আলীর সাথে পরিচিত থাকায় তিনি উঠে এসে কুশল বিনিময় করলেন। শাহজাহান আলী একবার ছোট ভাইয়ের দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গিয়ে সোফায় বসলেন।

শাহজাহান আলীর আসার খবর বাড়ির গিন্নীদের কাছে চলে গেলো। সাজেদা বেগমসহ তিন জা ই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। রাজিয়া বেগম খুশিতে চোখ মুছলেন। আর যাই হোক শাহজাহান আলী কামরুজ্জামানের এই পাগলামির সাথে সায় দিবেন না। তিনি নিশ্চয়ই এই পাগলামি বন্ধ করবেন।

কথাবার্তার এক পর্যায়ে শাহজাহান আলী গলা ঝেড়ে বললেন-

“আমার ভাতিজি মাত্র ক্লাস টেনে পড়ে। তার বিয়েশাদির বিষয়ে আমরা এখনো তেমন কিছু ভাবি নাই। আপনারা দেখতে আসতে চান শুইনা আমার ভাই সম্মান রক্ষার্থে আপনাদের ইচ্ছা অগ্রাহ্য করতে পারে নাই। আর কয়েকমাস পর ই আমার ভাতিজির এসএসসি পরিক্ষা। এই সময়ে এই বিয়েশাদির আলাপ আলোচনা তার পড়াশোনার ক্ষেত্রে খারাপ প্রভাব ফেলব। তাই আমার অনুরোধ থাকলো আপনাদের প্রতি এখন এই বিষয়ে না আগানোই শ্রেয়।”

পাত্রের বাবা মনোযোগ সহকারে সব কথা শুনলেন। তিনি উত্তর করলেন-

“তা তো অবশ্যই ভাইসাহেব। মেয়ের অসুবিধা হউক এমন কোনো কাজ না করাই উত্তম এখন।”

পাত্রের বাবার কথা শেষ হতেই পাশে বসে থাকা পাত্র ভদ্রকন্ঠে বলল-

” আপনাদের মেয়ের পরিক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব। তাছাড়া সে এখনো অপ্রাপ্তবয়স্ক। আমি একজন শিক্ষিত ছেলে হয়ে বেয়াইনি কাজ করব না। সে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করব।কিন্তু তার আগে যদি আংটি পড়িয়ে এনগেজমেন্ট করে………”

ছেলেটির কথা থামিয়ে দিলো রবিন। বেশ রাগি এবং শক্ত কন্ঠে জবাব দিলো-

” না, কোনো এনগেজমেন্ট হবে না।”

রবিনের কথায় ঘরের সবাই ই বিস্মিত হয়ে রবিনের দিকে তাকালো। শাহজাহান আলী রবিনকে ইশারা করে থামিয়ে দিলেন।তিনি পরিস্থিতি বুঝে বললেন-

“এনগেজমেন্ট হইব কিনা এই কথা বলার আগে এই ব্যাপারে আমার ভাতিজির অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন আছে। সে যদি না করে তাহলে কোনোমতেই এই বিয়ে সম্ভব না।”

চারু ছলছল চোখে তার বড় বাবার দিকে তাকালো। শাহজাহান আলীও তাকিয়ে মৃদু হেসে তাকে আশ্বস্ত করলেন।বিপরীতে কামরুজ্জামান বিমর্ষ মুখে বসে রইলেন। মেয়ের প্রতি জেদের বশে করা অন্যায় তিনি উপলব্ধি করতে পারছেন আবার অন্যদিকে মেয়ের জন্য ভালো ভবিষ্যতের আশাও তিনি ছাড়তে পারছেন না। তিনি দোটানায় ভুগছেন।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে। মেহমান রা অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। চারু ছাদের কোণ ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। তার পড়নে এখনো শাড়ি। তার মনের কালো মেঘটুকু কেটে গেছে। কিন্তু তারপর ও কিছুটা অভিমান যেন রয়ে গেছে। বাবার কথা মনে পড়লেই চারুর অভিমান ও হচ্ছে আবার খারাপ ও লাগছে। মেহমান চলে যাওয়ার পর যখন চারুর মাথায় হাত দিয়ে বলল “আমারে মাফ কইরা দিস মা। তুই ছাড়া আমার আর কোনো সম্বল নাই। তোরে নিয়া আমার চিন্তা হয়” এই কথা শুনে চারুর বুক ভেংগে এসেছিলো। চারু ঢের বুঝতে পারছে স্মৃতির উপর অভিমান করে তার বাবা তার জন্য এই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু কি এমন করলো স্মৃতি? চারুর ভাবনা কাটলো একটা পুরুষালি গম্ভীর কন্ঠের ডাকে।

“চারু।”

চারু পিছন ফিরলো।পকেটে হাত গুঁযে রবিন দাঁড়িয়ে আছে। চারু মুখ ফিরিয়ে নিলো। রবিন কাছে এসে চারুর পিছনে দাঁড়িয়ে বলল-

“রাগ করছস নাকি অভিমান করছস?”

চারু কিছু বলল না ঠোঁট ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। রবিন আরেকটু কাছে আসলো। চারুর ছেড়ে রাখা চুলগুলো ডানহাতে পেচিয়ে পিছনের দিকে হালকা টেনে ধরলো। চারু চুলে টান পেয়ে “আয়াহ” শব্দ করে পিছনের দিকে কিছুটা হেলে গেল তার হাত চলে গেলো চুলের গোড়ায়। রবিন ধীর কন্ঠে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল-

“বিয়ে করবি না বইলা খুব কান্নাকাটি করলি।তেইলে এত সাজগোছ কিসের? কারে দেখানোর জন্য এত সাজছস?”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here