প্রেম_প্রার্থনা #তামান্না_আঁখি #পর্ব-৩৮

0
497

#প্রেম_প্রার্থনা
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৩৮

শাহজাহান আলীর কেবিনে সবাই ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু কেউ কোনো শব্দ করছে না।চারদিকেই পিনপতন নীরবতা শুধু ডাক্তারের প্রেশার মাপার যন্ত্রের নড়াচড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। ডাক্তার সব কিছু চেক করে পরিবারের লোকদের দিকে তাকিয়ে বললেন-

“বিপদ কেটে গেছে এখন আর ভয় নেই। উনার সিটিস্ক্যানেও তেমন কোনো জটিলতা নেই। আর কয়েক ঘন্টা অবজার্ভেশনে রাখলেই হবে।”

শাহজাহান আলী মৃদু স্বরে বললেন-
“আর অবজার্ভেশনের দরকার নাই।আমি বাড়িতে যাইতে চাই।”

পরিবারের লোকেরাসহ ডাক্তাররাও শেষমেশ হার মানলেন শাহজাহান আলীর জেদের কাছে। সকাল দশটার পরেই শাহজাহান আলীকে নিয়ে পরিবারের সবাই রওয়ানা করলো সৈয়দ বাড়ির দিকে। হাসপাতাল ত্যাগ করার আগে আরেকবার সবকিছু চেকাপ করানো হয়েছে তবুও ভয় কাটেনি পরিবারের কারোরই।

সৈয়দ বাড়ির গেটে এসে গাড়ি থামলো।একে একে সবাই নামলো।শাহজাহান আলীকে নামিয়ে হুইল চেয়ারে বসানো হলো। গেট পেরিয়ে উঠোনে ঢুকতেই সবাই বিস্মিত হয়ে গেলো। ফরহাদ আর স্মৃতি বসে আছে বারান্দার ফ্লোরে। শাহজাহান আলীকে হুইল চেয়ারে দেখে স্মৃতি বসা থেকে দৌড়ে এসে হাঁটু গেড়ে বসলো। শাহজাহান আলীর হাত ধরে ডুকরে কেঁদে দিলো।ফরহাদ এসে অপরাধী মুখে বাবার সামনে দাঁড়ালো। দুজনের মুখ ই শুকিয়ে আছে হয়ত সারা রাত কান্নাকাটি করেছে।রাজিয়া বেগম প্রশ্ন করলেন ফরহাদ কে-
“তোরা কখন আইলি?”

“আধা ঘন্টা হইলো আসছি। খবর পাইলাম তোমরা আব্বারে নিয়া বাড়িতেই আসবা তাই আর হাসপাতালে যাই নাই।”

ফরহাদের কন্ঠ অনেক ক্লান্ত শুনালো। স্মৃতি কান্নারত অবস্থায় শাহজাহান আলীর হাত ধরে বলল-

“আমারে মাফ করে দাও বড়বাবা।আমার জন্য কষ্ট পাইয়া তুমি আজকে মরতে বসছিলা।আমি অনেক বড় অপরাধী। আমারে মাফ কইরা দেও…..”

হাওমাও করে স্মৃতির কান্নায় অনেকেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। তার কান্না করে বলা কথা গুলো কারোর ই বোধগম্য হল না। সামিরা বেগম এসে স্মৃতিকে টেনে তুললেন, ফরহাদকে ইশারা করলেন শাহজাহান আলীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ফরহাদ কাঁপা হাতে বাবার হুইল চেয়ারে টেনে বসার ঘরে নিয়ে আসলো। শাহজাহান আলী চোখ বন্ধ করে বসে রইলেন কিছুক্ষন। তারপর চোখ খুলে বসার ঘরে পরিবারের সবাইকেই একবার দেখলেন। থেমে থেমে বললেন-

“কামরুজ্জামান আর মোস্তফা কি আইতাছে? কতদূর আইছে?”

সাজেদা বেগম উত্তর করলেন-
“আইসা পড়ছে কাছাকাছি।”

চারু এক কোণায় দাঁড়িয়ে থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার সাহস হচ্ছে না বড়বাবার দিকে তাকানোর। কোথাও যেন তার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে কিছুটা। সে বুঝতে পারছে রাগের মাথায় অবুঝের মতো তখন তার জেদ করা উচিত হয় নি। এতটা নির্লজ্জ হওয়া তার উচিত হয় নি।

খানিক পরেই হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলেন শাখাওয়াত তালুকদার। নির্বাচনের কাজে তাকে জেলা সদরে যেতে হয়েছিলো এই জন্য মেয়ের জন্মদিনেও তিনি থাকতে পারেন নি কিন্তু শালার অসুস্থতার খবর পেয়ে তিনি সব কাজ ছেড়েছুড়ে এসেছেন।তিনি ঘরে ঢুকে সবার দিকে নজর বুলিয়ে চেয়ার টেনে শাহজাহান আলীর নিকট বসলেন। মৃদু স্বরে বাক্যব্যয় করে তার শরিরের অবস্থা জানতে চাইলেন।শাহজাহান আলীও জবাব দিলেন।দুজনেই অল্পবিস্তর আলোচনায় মগ্ন হলেন। সাজেদা বেগম স্বামীর অসুস্থতায় বিহ্বল হয়ে গেলেও সংসারের প্রতি দায়িত্ব অবহেলা করলেন না।বাড়ির ছেলেমেয়েদের কে এক প্রকার তাড়িয়ে তাড়িয়ে ঘরে পাঠালেন কিন্তু ফরহাদ আর স্মৃতিকে পাঠাতে পারলেন না। শেষমেষ তিনি হাল ছেড়ে দিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে স্বামীর জন্য কিছু বানাতে বসলেন। রাজিয়া বেগম বড় জা কে সাহায্য করতে আসলেন। এক সময় দুজন ই অল্পস্বল্প কিছু নাস্তা বানিয়ে কাজের লোককে দিয়ে যার যার ঘরে পাঠিয়ে দিলেন। শাহজাহান আলীকে ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাজেদা বেগম বাকি রান্নার পাট কাজের মহিলাকে বুঝিয়ে দিয়ে স্বামীর জন্য নরম করে রান্না করা খিচুড়ি নিয়ে ঘরে এলেন। শাহজাহান আলী বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছেন। তার আশে পাশে রুবিনা বেগম আর শাখাওয়াত তালুকদার বসে আছে। ফরহাদ আর স্মৃতি দুজনেই তার পায়ের কাছে বিছানার দুদিকে বসে আছে।দুজনের কেউই নাস্তা খায় নি। সাজেদা বেগম একটা শ্বাস ফেললেন। তিনি মনে মনে টের পাচ্ছেন সামনে খুব বড় ঝামেলা আসতে চলেছে। তাই তিনি নিজেকে ভেতরে ভেতরে শক্ত করছেন। তিনি এই সৈয়দ বাড়ির বড় বউ তাকে সব পরিস্থিতিতেই শক্ত থাকতে হবে

_______

চারু বিছানায় পা তুলে হাঁটুতে মাথা রেখে বসে আছে। সে গতরাতের জামাকাপড় এখনো খুলে নি সাজেদা বেগমের পাঠানো নাস্তাও ছুয়ে দেখেনি। রানি ঘরের ভিতর পায়চারী করছে, সে গভীর ভাবনায় মগ্ন।হঠাৎ করে পায়চারি থামিয়ে চারুর সামনে বিছানায় বসে বললো-

” ফরহাদ ভাই আর স্মৃতি আপুর নিশ্চয়ই কোনো ব্যাপার আছে তাই না? তোর কি মনে হয়?”

চারু কোনো উত্তর করলো না। সে সেভাবেই বসে রইলো। গত রাতের আতংক থেকে সে এখনো বের হয়ে পারছে না। রানি চারুর মুখচোখ দেখে তার মনের অবস্থা পড়ার চেষ্টা করলো। তারপর কন্ঠ নরম করে বলল-
“ভাইয়ার উপর রাগ করছস? ভাইয়া কি তোর সাথে খুব খারাপ আচরন করছে? গায়ে হাত তুলছে?”

চারু মাথা নেড়ে ‘না’ বুঝালো।রানি কিছুটা স্বস্তি পেলো। চারু আর সে ছোটবেলা থেকেই রবিনের হাতে অনেক কানমলা, চড়-থাপ্পড় খেয়েছে কিন্তু সেসব কোনোটাই রবিন ওদেরকে আঘাত করার জন্য মারত না বরং ভয় দেখানোর জন্য হালকাভাবে মারত যাতে আর দুষ্টামি না করে। বড় হওয়ার পর রবিনের সাথে দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় আর সেরকম কোনো শাসন রবিন করে নি। রানি একটু এগিয়ে এসে চারুর হাত ধরে বলল-

“ভাইয়া আর মামার মাঝে কি হইছে? ভাইয়া যাওয়ার পর ই মামা স্ট্রোক করলো কেন?”

চারু এবার ও কোনো কথা বললো না। রানি ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দিলো। নীচ থেকে চেচামেচির শব্দে দুজন ই সচেতন হলো।কামরুজ্জামান আর মোস্তফা কামাল এসেছে। রানি চারুকে নিয়ে নিচে নেমে আসলো। বাড়ির সবাই ই এখন শাহজাহান আলীর ঘরে। মোস্তফা কামাল বড় ভাইয়ের সামনে বাচ্চাদের মতো কেঁদে দিলেন। বড় ভাইয়ের সাথে দূরত্ব থাকলেও এই মানুষটিকে তিনি অনেক সম্মান করেন। কামরুজ্জামান বড় ভাইয়ের পাশে বসে শরিরের অবস্থা জেনে নিলেন আগে সেই সাথে শহরে গিয়ে চেকাপ করানোর জন্য বড় ভাইকে রাজি করানোর জন্য বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

রানি আর চারু ঘরের দেয়াল ঘেষে দাঁড়ালো। কিছুটা দূরে ঘরের এক পাশে স্মৃতি আর অন্য পাশে ফরহাদ দাঁড়িয়ে আছে ।শাহজাহান আলী এইবার নড়েচড়ে বসলেন। গম্ভীর কন্ঠে প্রথমে ধমক লাগালেন ছোট ভাইকে-

“কান্না থামা। বাড়ির পুরুষরা কান্না করলে মেয়েরারে সাহস দিব কেডা?”

মোস্তফা কামাল সেকেন্ডের ভিতর কান্না থামিয়ে ফেললেন। বড় ভাইয়ের আদেশ অমান্য করা তার কাছে মৃত্যুসম। শাহজাহান আলী ঘরের সবার দিকে নজর বুলালেন। হাত ইশারা করে স্মৃতিকে কাছে ডাকলেন।মোস্তফা কামাল উঠে গিয়ে স্মৃতিকে বসার জায়গা করে দিলো। স্মৃতি শাহজাহান আলীর পায়ের কাছে বসলো। এক পলক তাকালো সামনে শাহজাহান আলীর পাশে বসে থাকা তার বাবার দিকে। কামরুজ্জামান একবারের জন্যও তাকাননি মেয়ের দিকে। শাহজাহান আলী দূর্বল গলায় বললেন-

“জামান, আমি তোর বড় ভাই।তোর কাছে একটা জিনিস চাইলে কি দিবি?”

কামরুজ্জামান বড় ভাইয়ের কথার সুর বুঝতে পারলেন। তিনি ধরা গলায় বললেন-

“আপনার যা ভালো মনে হয়।”

শাহজাহান আলী ঘরের সবার দিকে তাকিয়ে ঘোষণার মতো করে বললেন-

“আজকে থাইকা স্মৃতি আর এই বাড়ির মেয়ে না এই বাড়ির বউ। ফরহাদের বউ।”

ঘরের সবাই অবাক হয়ে তাকালো। তারা কেউই এই ধরনের সম্পর্কের ব্যাপারে চিন্তা করে নি। শাখাওয়াত তালুকদার প্রশ্ন করলেন-

“আপনি কি এরা দুইজনের বিয়ে দিতে চান? তাইলে তো এইটা শুভ প্রস্তাব। বাড়ির ছেলেমেয়ে…..”

“ওরা দুইজন বিবাহিত। তারা নিজেরা বিয়ে কইরা নিছে ”

শাহজাহান আলীর কথায় ঘরের ভিতর যেন বাজ পড়ল।সবাই চমকে গিয়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো।কিন্তু নির্লিপ্ত দেখা গেলো কামরুজ্জামান কে, তিনি আগে থেকেই অবগত। রাজিয়া বেগম সাজেদা বেগমকে ধরে বললেন-

“আপা ওরা নিজেরা বিয়ে করলো কোন সময়? ওদের মাঝে এই সম্পর্ক হইলো কখন? এক বাড়িত থাইকা কিছুই টের পাইলাম না।”

সাজেদা বেগম বিস্মিত নেত্রে ছেলের দিকে তাকালেন। তিনি এই বিয়ের প্রস্তাবে খুশি হয়েছেন কিন্ত ছেলের এহেন কান্ডে তিনি চমকিত।

শাহজাহান আলী গলা পরিষ্কার করে কামরুজ্জামানের দিকে তাকিয়ে বললেন-

“আমারে তুই কথা দে কোনো অবস্থায় ই এই পরিবারে কোনো ফাটল ধরতে দিবি না, এই সৈয়দ বাড়িতে যাই ঘটুক তা বাইরে পাঁচকান হইতে দিবি না,এই বাড়ির মানসম্মানে যেন আঘাত না লাগে।”

কামরুজ্জামান মুখে কিছু বললেন না বরং মাথা নেড়ে বড় ভাইকে আশ্বাস দিলেন। শাহজাহান আলী আশ্বাস পেয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বললেন-

“এই ঘরে যারা আছে সবাই আমার পরিবারের অংশ তাই কারো কাছ থাইকা কোনো কিছু গোপন রাখব না।”

একটু থেমে স্মৃতির দিকে তাকালেন, ফরহাদের দিকে তাকালেন তারপর ঘরের বাকি সবার দিকে তাকিয়ে বললেন-
“যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওদের বিয়ের অনুষ্ঠান করো তোমরা, সৈয়দ বাড়িতে বংশধর আসতাছে,স্মৃতি আর ফরহাদের সন্তান।”

ঘরের ভিতর সবাই বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো চমকে উঠলো। চারু আর রানি দুজনেই মুখে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো। রাজিয়া বেগম চমকে গিয়ে ছোট একটা চিৎকার করে উঠলেন। কামরুজ্জামান উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন। এই বিষয়ে তার জানা ছিলো না। শাহজাহান আলী খপ করে তার হাত ধরে ফেললেন। রাজিয়া বেগিম এগিয়ে এসে স্মৃতির দুই কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে বললেন-

“এইসব কি শুনতাছি স্মৃতি, তুই এত বড় কাম কেমনে করলি?”

স্মৃতি মাথা নিচ দিকে দিয়ে কাঁদছে। রাজিয়া বেগম সহ্য করতে না পেরে স্মৃতিকে এলোপাথাড়ি চড় থাপ্পড় মারতে লাগলেন। ফরহাদ দ্রুত এগিয়ে এসে রাজিয়া বেগমকে থামাতে চাইলো। সে স্মৃতিকে আগলে ধরলো। সাজেদা বেগম এসে টেনে নিয়ে গেলেন রাজিয়া বেগমকে। রাজিয়া বেগম রাগে দুঃখে কেঁদে দিলেন। কামরুজ্জামান মেয়ের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন যেন ভষ্ম করে দিবেন। শাহজাহান আলীর গম্ভীর কন্ঠ শোনা গেলো-

“ওরা যা করছে হালাল সম্পর্কে থাইকা করছে। ওরা বিবাহিত। ওদের উপর কেউ কোনো প্রশ্ন তুলবা না। তাড়াতাড়ি বিয়ের আয়োজন করো। বাড়ির মেয়ের যেন কোনো দুর্নাম না হয়। মেয়েরা বাড়ির সম্মান। এই কথা যেন বাইরে না যায়। এখন সবাই নিজ নিজ ঘরে যাও।”

তারপর কামরুজ্জামানের দিকে তাকিয়ে বললেন-

“তুই আমারে কথা দিছস আশা করি সেই কথার মান রাখবি।”

কামরুজ্জামান কিছু না বলে বড় বড় পা ফেলে ঘর ত্যাগ করলেন। পিছু পিছু গেলো রাজিয়া বেগম ও।আস্তে আস্তে সবাই বেরিয়ে গেলো। ঘরে থাকলো সাজেদা বেগম, ফরহাদ আর স্মৃতি। স্মৃতি শাহজাহান আলীর পা ধরে কেঁদে দিলো। ফরহাদ অপরাধী কন্ঠে বলল-

“আমারে মাফ কইরা দেন আব্বা।আমার জন্য আজ এই পরিবারের এই অবস্থা। আমার ভুলের জন্য। আমার আবেগের জন্য।”

শাহজাহান আলী হাত তুলে থামালেন তাদের। বালিশে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললেন-

“যে যার ঘরে যাও, বিয়ের অনুষ্ঠানের আগ পর্যন্ত তোমরা আলাদা থাকবা।”

_________

রাতের অন্ধকারে চারু বারান্দার গ্রিল ধরে দূর আকাশে তাকিয়ে আছে। বাতাসে তার অর্ধভেজা চুল উড়ছে।একটু আগেই সে গোসল করে এসেছে। সারাদিনের ধকলের পর এখন কিছুটা ভালো লাগছে। আস্তে আস্তে স্মৃতি আর ফরহাদের সম্পর্কের বিষয় টা বাড়ির সবাই ই সহজভাবে নিচ্ছে। চারু আকাশের দিকে ঠায় তাকিয়ে রইলো। আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢেকে আছে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার সেই ঘন কালো মেঘ ছাপিয়েও গুটি কয়েক তারা দেখা যাচ্ছে। চারুর কান্না পেলো খুব। গত রাত পর্যন্ত তো সব ঠিকঠাক ছিলো এখন কেন এমন হলো? তার অতিরিক্ত জেদ করাটাই কি কাল হয়ে দাঁড়ালো তার? কিশোরী মনের অবাধ্য অনুভূতিই কি কাল হয়ে দাঁড়ালো?

মাঝ রাতে রবিন বাড়ি ফিরলো। সদর দরজা খোলা পেয়ে অবাক হলো সে। বসার ঘরে ঢুকে রুবিনা বেগমকে সোফায় ঘুমিয়ে থাকতে দেখলো।রবিনের দৃষ্টি নরম হয়ে এলো। ভোরে হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় মায়ের শুকনা মুখটা শেষবার দেখেছিলো,আর সারাদিন পরে এখন দেখলো। রবিন তার মা কে ডাকতে উদ্ধত হলো কিন্তু কি ভেবে আর ডাকলো না। আস্তে আস্তে উপরে উঠে গিয়ে তার ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। ধীর পায়ে হেঁটে বিছানার পাশে ফ্লোরে বসে পড়লো। হাটুর উপর এক হাত রেখে মাথা হেলিয়ে দিলো পিছনে বিছানার উপর। তার চোখ লাল হয়ে আছে, চুল এলোমেলো হয়ে কপালের উপর ছড়িয়ে আছে, সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা কুচকে গিয়ে জায়গায় জায়গায় ময়লা লেগে আছে। রবিন ছাদের দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে চোখ বন্ধ করে ফেললো। গত রাতের ঘটনাগুলো ভাসলো চোখের সামনে।
ছাদ থেকে যখন দেখলো গাড়ি থেকে লাল কালো স্কার্ট-টপ পড়ে এক মিষ্টি মেয়ের আগমন ঘটলো তখন রবিন চোখ সরাতে পারছিলো না। ছাদের বাগানের গোলাপ গাছের দিকে চোখ যেতেই তার মনে হলো এই ফুল গাছে থাকার চেয় এই মেয়েটির চুলে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারলেই বরং ধন্য হবে। তখনি ফুল তুলে রওয়ানা হয়েছিল সেই মেয়েটির উদ্দেশ্যে কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো। রবিন তার পাঞ্জাবির পকেট থেকে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া গোলাপ টা বের করলো।ফুলটা আর দেয়া হয় নি চারুকে।ফুলটার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো রবিন এই ফুলটার মতো তাদের জীবন টাও তো এক রাতের ব্যবধানে দুমড়ে মুচড়ে কালো হয়ে গেছে। এর জন্য সে কাকে দোষ দিবে? এই ফুলকে? এই রাতকে নাকি নিজেকে?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here