#প্রেম_প্রার্থনা
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৩৯
দুদিনের ব্যবধানেই ফরহাদ আর স্মৃতির বিয়ের আয়োজনে লেগে পড়লো সবাই। শুক্রবারে বিয়ের অনুষ্ঠানের ডেট ফিক্সড করা হলো। আর তিনদিন পর ই শুক্রবার। সবাই নাকে মুখে কাজ করছে। কার্ড ছাপানো থেকে শুরু করে আত্নীয়দের বাড়িতে গিয়ে দাওয়াত দেয়া সবকিছুই দ্রুততার সাথে করতে হচ্ছে। বিয়ের বর হয়ে ফরহাদ নিজেও কাজে হাত লাগিয়েছে। স্মৃতিও বসে থাকছে না মা-চাচীদের হাতে হাতে এটা ওটা করে দিচ্ছে। আস্তে আস্তে আত্নীয় স্বজন এসে ঘর ভরে যাচ্ছে।
চারু উদাস হয়ে তার ঘরে বসে আছে। এই দুদিন রবিনের দেখা পাওয়া তো দূর কন্ঠ ও শুনে নি সে। রবিন বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব পালন করলেও সেটা সৈয়দ বাড়ির বাইরে থেকেই করছে। চারুর ভাবনার মাঝে রনি এসে ঘরে ঢুকলো। চারুর হাতে টান দিলো।চারু মুখ ফিরিয়ে তাকালো। রনিকে দেখে হাসলো। রনির মাথার চুল টেনে দিয়ে বলল-
“কি?”
“তোমারে বড় বাবায় ডাকে।”
“এখন? বড় বাবা না ঘুমে?”
“এখন ঘুম থাইকা উঠছে।”
চারু রনির সাথে ঘর থেকে বের হয়ে এলো। নীচে নেমে উঠোনে তাকালো।উঠোন ভর্তি মানূষ। কেউ কেউ বাড়ি সাজাচ্ছে,কেউ আবার চেয়ার টানছে।চারুর চঞ্চল চোখ দুটি কাউকে খুজলো, না পেয়ে মনের কোণায় কিছুটা হতাশা দেখা দিলো।কিন্তু পরক্ষনেই সচেতন হয়ে চারু মাথা ঝাঁকালো, মন থেকে সরিয়ে দিতে চাইলো এই ধরনের চিন্তা। তড়িৎ গতিতে সে সেই স্থান ত্যাগ করে শাহজাহান আলীর ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। দরজা খোলাই ছিলো চারু নীচ দিকে তাকিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রইলো।
শাহজাহান আলী বিছানায় বসে পেপার পড়ছিলেন চারুর উপস্থিতি টের পেয়ে তাকালেন। মৃদু হেসে ডাক দিলেন-
“ওইনে দাঁড়ায় আছস কেন?আমার কাছে আইসা বস।”
চারু ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বসলো।শাহজাহান আলী পেপার টা পাশে রেখে চোখ থেকে চশমা খুলে বেডসাইড টেবিলের উপর রাখলেন। চারুর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন-
“আমার মায়ের মন টা কি খারাপ? ”
চারু দুপাশে মাথা নেড়ে “না” বুঝালো।শাহজাহান আলী কোমল কন্ঠে বললেন-
” এই দুদিন বড় বাবার কাছে আসলি না কেন?”
চারু বসে বসে নখ খুটতে লাগলো। তার চোখ টলমল, এক্ষুনি পানি গড়িয়ে পড়বে পড়বে ভাব। শাহজাহান আলী ভাতিজির মনের অবস্থা বুঝলেন।তিনি একটু উঠে বসে চারুর মাথায় হাত দিয়ে বললেন-
“মানুষের জীবনে অনেক রঙ থাকে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রঙ ধারন করে জীবন। সেই রঙের সাথে নিজেরে মানায় নিতে হয়।তোর বয়স টা ছোট কঠিন ব্যাপারগুলো তোর না বুঝার ই কথা।তাই নিজেরে দোষ দিয়া কষ্ট পাইস না।যা হইছে সব ই ভাগ্য।”
চারু কেঁদে দিলো। কান্নার দমকে তার শরীর কেঁপে উঠলো। শাহজাহান আলী ভাতিজির দিকে স্নেহাশিস চোখে তাকিয়ে থাকলেন। এই মেয়ে তার মৃত মায়ের মতো কান্না করে। শুধু কান্নার দিক দিয়েই না, তার মায়ের সাথে এই মেয়ের অনেক মিল আছে।তার মা ছিলো একজন জেদি স্বভাবের নরম মনের মানুষ,এই মেয়েও তাই। জেদি মেয়েরা বোকা হয়। সেইটা এই মেয়ে বারবার প্রমান করে।
চারুর কান্নার তেজ কিছুটা কমে এলো। নিচের দিকে তাকিয়ে হেচকি তুলে বলল-
“আমি সবসময়ই খালি ভুল করি। আমার লাইগাই তোমার এত বড় অসুখ হইছে। ”
শাহজাহান আলী শব্দ করে হাসলেন।চারু মুখ তুলে চাচার সেই হাসি দেখলো।শাহজাহান আলী কৌতুকপূর্ন সুরে বললেন-
“আমার যে এই ভুল করা চারু মা রেই পছন্দ।আমার চারু মার যেই সাহস সেই সাহসের কাছে সব তুচ্ছ। ”
চারু বোকা বোকা চোখে চেয়ে রইলো।শাহজাহান আলী থেমে আবারো বললেন-
“আমার চারু মা তো একাই অন্ধকারে আমারে হাসপাতালে নিয়া গেছে। এই সাহস কি আর কারো আছে?”
চারু কিছুটা শান্ত হলো।শাহজাহান আলী আরো কিছুটা এগিয়ে এসে বসলেন।চারুর দিকে পূর্ব দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন-
“তোর যদি রবিনের প্রতি কোনো অনুভূতি থাকে তুই তোর বড় বাবারে বলবি। আমি তোদের দুইজনরে পবিত্র বন্ধনে বাইন্ধা দিবাম। কিন্তু এর আগে রবিনের সাথে সব ধরনের দূরত্ব আমার চারু মা বজায় রাখব তাই না?”
চারু খুব লজ্জা পেলো,কিছুটা অস্বস্তি ও হলো।সে ইতস্ততভাবে মৃদু সুরে বললো-
“আমার এসব কিছু লাগব না। রবিন ভাই একটা খারাপ লোক।”
ভাতিজির কথায় শাহজাহান আলী অভিমানের আভাস পেলেন। কিশোরী হৃদয়ের ছন্দপতনের সুর তিনি জানেন। তবে তিনি তার পরিবারের মেয়েদের হৃদয়ে কোনো আঁচড় লাগতে দিবেন না।মেয়েদের হৃদয় যে বড্ড কোমল, সেই হৃদয়ে আঁচড় লাগলে রক্তক্ষরণ হয়ে বেশি।এক সময় সেই রক্ত জমাট বেঁধে শক্ত আবরণ সৃষ্টি করে কোমল হৃদয়ে। তিনি চান না তার পরিবারের মেয়েদের হৃদয়ের কোমলতা শক্ত আবরনে ঢাকা পড়ুক। তিনি চান না তার পরিবারের মেয়েরা তার মায়ের মতো না পাওয়ার যন্ত্রনায় থাকুক।
______
গায়ে হলুদের অনুষ্টান আজ।চারদিকে উৎসবের ধুম লেগেছে। সাউন্ড বক্সে গান বাজছে।আরেকটু পরেই কনে আর বরকে স্টেজে বসানো হবে।ছাদে স্টেজ সাজানো হয়েছে। কনে আর বর এক ই পরিবারের হওয়ায় একসাথেই স্টেজে বসবে তারা।বিয়ের আমেজে চারুর মনের কালো মেঘ অনেকটাই সরে গেছে। তার নিজের বোনের বিয়ে বলে কথা।
রানি আর চারু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঠেলাঠেলি করছে। দুজনের কারো মুখ ই আয়নায় ভালো করে দেখা যাচ্ছে না।চারু কাজল হাতে নিয়ে ধাক্কা দিলো রানিকে। রানি আয়না থেকে কিছুটা সরে গেলো,সেও ধাক্কা দিলো চারুকে। চারু রেগে গিয়ে তাকালো। দুজনের এই ঠেলাঠেলি চলতেই লাগলো।
ফারহানা এসে এক ধমক দিলো দুজনকেই। গরম স্বরে বলল-
“ছাদে অনুষ্ঠান শুরু হইয়া গেছে আর তোরা এখনো সাজাই শেষ করস নাই।”
রানি মুখ গোমড়া করে বলল-
“দেখো না আপু চারু আমারে আয়না দেখতে দেয় না।”
চারু রানির চুলে টান দিয়ে বলল-
“আমি তোরে কইছি না আমার ঘরের আয়নায় আমি আগে সাজবাম।তুই পরে সাজবি।”
ফারহানা কপালে হাত দিয়ে বলল-
“ইয়া আল্লাহ!তোরা দুইটা এত হিংসামি কইরাও একসাথে থাকোস কেমনে?”
রানি আর চারু দুজনেই একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচালো।ফারহানা দুজনকেই তাড়াতাড়ি আসতে বলে ছাদের দিকে রওয়ানা দিলো।একসময় দুজনের ই সাজ শেষ হলো।দুজনেই সেম কালারের শাড়ি পড়েছে।চুল খোপা করে হলুদ ফুল লাগিয়েছে। চুড়ি পড়ার সময় চারুর নজর গেলো রবিনের কিনে দেয়া হলুদ চুড়ি গুলোর দিকে। সে নজর সরিয়ে অন্য চুড়ি হাতে পড়তে লাগলো।রানি ভ্রু কুচকে বলল-
“হলুদ চুড়ি থাকতে অন্য চুড়ি পড়াতাছস কেন? শাড়ির সাথে ম্যাচ করতাছে না তো।”
“না করুক।এটাই স্টাইল।এখন কেউ ম্যাচ কইরা কিছু পড়ে না।”
রানি নাক কুচকালো চারুর এমন বেঢপ স্টাইল দেখে। হলুদের অনুষ্টানে হলুদ শাড়ির সাথে কেউ নীল চুড়ি পড়ে বলে তার জানা ছিলো না।
দুজনেই আঁচল দুলাতে দুলাতে ছাদে এলো। স্টেজে বর কনেকে তোলা হয়েছে।বাড়ির বড়রা হলুদ লাগাচ্ছে।ফটোগ্রাফাররা ফটাফট ছবি ক্লিক করছে।চারু আর রানি ফটোগ্রাফারদের আশায় থাকলো না তারা নিজেরাই ফোন দিয়ে সেল্ফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। এদিক ওদিক ঘুরে একজন আরেকজনকে অনেক ছবি তুলে দিলো।দুজনের ছবি তোলায় বাঁধ সাধলো সারা। সারার ডাকে দুজনেই ঘুরে তাকালো।সারা মাত্রই এসে ছাদে উঠেছে। তার পড়নেও শাড়ি। স্টাইল করে শাড়ি পড়ে চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে। চারুর চোখ হিংসায় জ্বলে গেলো যেন। রানিকে ডাকছে সারা। রানি চারুকে রেখেই এগিয়ে গেলো। চারু একটা মুখ ঝামটা দিয়ে ছাদের রেলিঙের কাছে দাঁড়িয়ে সেল্ফি তুলতে লাগলো। কিন্তু এবারো কারো ডাকে বাঁধা পড়লো ছবি তুলায়।
“ছবি তুলতে তুলতে পড়ে গেলে তো কিচ্ছা খতম হয়ে যাবে।”
চারু বিরক্ত হয়ে ফোন নামিয়ে তাকালো সামনের ব্যাক্তিটির দিকে। সামনে তাকিয়ে তার বিরক্তি আরো বেড়ে গেলো।তার দূর সম্পর্কের এক চাচাত ভাই দাঁড়িয়ে আছে । ছেলেটা একটা বাঁকা হাসি দিয়ে চারুর সাথে রেলিং ঘেষে দাঁড়ালো।চারুর দিকে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখ করে বলল-
“ইউ আর চারুলতা, রাইট?”
চারু মাথা দুলিয়ে সায় দিলো। ছেলেটা আপাদমস্তক চারুকে দেখে বলল-
“ইউ লূক বিউটিফুল! বাই দ্য ওয়ে আমি সিয়াম। চিনেছ আমাকে?এর আগেও একবার এসেছিলাম তখন তুমি সিক্সে পড়তে।”
চারু কিছু বলল না।সিয়াম আবার বললো –
“তোমরা গ্রামের মেয়েরা অনেক তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাও।শহরের মেয়েদের তুলনায় তোমাদের গ্রোথ বেশি।এটা ভালো, দেখতে আকর্ষণীয় লাগে।”
চারুর সিয়ামের কথা ভালো লাগলো না।সে ভদ্রতাসূচক বললো –
“আমি যাই,আপুরে হলুদ দিবাম এখন।”
সিয়াম একটা হাসি দিলো। চারু চলে এলো ওখান থেকে। স্টেজের কাছে এসে দেখলো তার মা স্মৃতির পাশে বসে কাঁদছে,আর অন্যদিকে তার বড় চাচীও ফরহাদের পাশে বসে কাঁদছে।চারু নাক কুচকালো। এই দুই মহিলার এমন ভাব যেন ছেলে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে সৌরজগতের বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। চারু ওদিক তাকিয়ে দেখলো সারা এখনো রানিকে আটকে রেখে হাত নেড়ে কথা বলছে। চারু এগিয়ে গিয়ে বলল-
“রানি আয়, এখন আমাদের হলুদ দেয়ার পালা।”
রানি সারার দিকে তাকিয়ে বিদায় চেয়ে চারুর সাথে স্টেজের দিকে গেলো।সারা চোখ ছোট ছোট করে চারুর যাওয়া দেখলো। সে বোকা না, সে বেশ বুঝতে পারছে এই মেয়ের সাথে রবিনের কিছু একটা হয়েছে।কি হয়েছে সে জানতে চায় না।জল বেশি দূর গড়াবার আগেই সে রবিনকে নিজের জালে যে ভাবেই হোক বন্দী করবে।
চারু আর রানি স্টেজে উঠে সাজেদা বেগম আর রাজিয়া বেগমকে ঠেলে উঠিয়ে দিলো। যার কারনে স্টেজের কান্নাকাটি সব থেমে গেলো। দুজনেই কয়েক মুহূর্তে স্টেজের পরিবেশ গরম করে ফেললো।ছবি তুলতে তুলতে ফটোগ্রাফারদের শ্বাস তুলে ফেললো। মাঝে দুজন ছবির পোজ নিয়ে ঝগড়াও করলো এক দফা। আস্তে আস্তে শুরু হলো রঙ খেলা। যে যাকে পাচ্ছে হলুদ লাগাচ্ছে রঙ লাগাচ্ছে। ছাদের দৌড়াদৌড়ি আর চিৎকারে চারপাশ ভরে উঠেছে। চারুকে রানি দৌড়াচ্ছে হলুদ লাগাবে বলে। একসময় ধরতে পারলো। ধরে ইচ্ছেমতো হলুদ দিয়েই সটকে পড়লো। চারু নিজেকে কিছুটা ঠিকঠাক করে রানিকে খুজতে এদিক ওদিক তাকালো। তখনি তার গালে এসে লাগলো পুরুষালি হাতের ছোয়া। পাশে তাকিয়ে দেখলো সিয়াম হাত ভর্তি হলুদ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চারুকে অবাক করে দিয়ে অন্য হাতের হলুদ চারুর গলায় লেপ্টে দিলো,চারুর ঘাড়ে হাত ছুইয়ে চারুর গলায় পড়া চিকন লম্বা হারটা এক টানে খুলে ফেললো।চারু শিউরে উঠলো। নোংরা হাতের স্পর্শ বুঝার জ্ঞান তার আছে।সে কিছুটা পিছিয়ে গেলো।সিয়াম ঠোঁট বাকিয়ে হেসে একটা চোখ মেরে চলে গেলো।চারু স্তব্ধ হয়ে গেলো এই ঘটনায়। সে এদিক ওদিক তাকালো। এই ঘটনা আর কারো চোখে পড়েছে কিনা শিউর হতে চাইলো। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো এই কাজের জন্য সিয়ামকে একটা উচিত শিক্ষা সে দিবে। চারুর প্রতিজ্ঞা পূরন করার জন্য বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হলো না।
একটু পরে যখন সাউন্ড বক্সের তালে তালে সবাই যে যার মতো নাচানাচি করতে ব্যস্ত সিয়াম এসে নাচার ভান করে মেয়েদের গ্রুপের কাছাকাছি আসলো।আস্তে আস্তে চারুর পিছনে এসে দাঁড়ালো। চারু ঢের বুঝতে পারলো সিয়ামের উদ্দেশ্য। সে মেয়েদের ভীড় থেকে আরেকটু দূরে সরলো সিয়ামকে সুযোগ দেয়ার জন্য।আড়চোখে খেয়াল করতে লাগলো সিয়ামের নড়াচড়া।সিয়াম কিছুটা অপেক্ষা করে সুযোগ বুঝে চারুর কোমড়ের দিকে হাত টা এগিয়ে দিলো।চারু যেনে এটারই অপেক্ষা করছিলো।সে তার হাতে থাকা পিনটা সজোরে ঢুকিয়ে দিলো সিয়ামের হাতে। হাতের চামড়া ভেদ করে মাংস পর্যন্ত ঢুকে গেলো পিনটা। চারু থেমে থাকলো না, পিনটা ঢুকিয়েই সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে আড়াআড়ি ভাবে টান দিলো। হাতের চামড়া ছিড়ে গিয়ে গভীর ক্ষত হয়ে গেলো,কিছুটা রক্ত ও বের হলো।সিয়াম “আয়াহ” বলে ছিটকে দূরে সরে গেলো। চারু একনজর সিয়ামের হাতের দিকে দেখে নিলো। হাতের অবস্থা দেখে সন্তুষ্ট হলো সে। কালো চশমাটা চোখে দিয়ে “কালা চশমা” গানে নাচতে নাচতে মেয়েদের গ্রুপের মাঝখানে ঢুকে গেলো।
সন্ধ্যার পর চারু আর রানি দুজনেই গোসল করে ফ্যান ছেড়ে চুল শুকাচ্ছিলো। উঠোনের দিক থেকে শোরগোল পেয়ে দুজনেই সচেতন হলো,উঠে এসে ঘরের সামনের বারান্দায় রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে নিচে উঠোনের দিকে উঁকি দিলো। সিয়ামকে ধরাধরি করে নিয়ে এসে চেয়ারে বসানো হলো।তার অবস্থা শোচনীয়, জামা কাপড়ে রক্ত লেগে আছে।কপাল,মুখ আর হাতের বিভিন্ন জায়গায় কাটা ছেড়ায় ব্যান্ডেজ করা। হাতেও ব্যান্ডেজ করে গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।চারু অবাক হয়ে তাকালো। সে যেই হাতে আচড় দিয়েছিলো পিন দিয়ে সেই হাতে এত মোটা ব্যান্ডেজ কেন? সে কি এত জোরেই আচড় দিয়েছে নাকি। মানুষের কথাবার্তায় বুঝতে পারলো চারুর আচড়ের জন্য ব্যান্ডেজ দেয়া হয় নি বরং সিয়াম হাত ভেংগে ফেলেছে। আরেকটু কান পেতে শোনার পর কানে আসলো সিয়ামকে মাটিতে ফেলে পিটানো হয়েছে। চারু অবাক হলো, সিয়ামের সাথে ত কারো শত্রুতা নেই তাহলে তাকে মারবে কে? চারুর চোখ পড়লো উঠোনের এক পাশে চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকা রবিনের দিকে। তার চোখ মুখ শক্ত হয়ে আছে। তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে তার সাঙ্গ পাঙ্গরা।হলুদ পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামায় দেখতে বেশ সুদর্শন লাগছে রবিনকে।তখনি রবিনের হাটুর উপর রাখা ডান হাতের দিকে চোখ পড়লো চারুর। সেই হাতের মুঠোয় চারুর গলার হারটা প্যাচানো, যেটা হলুদ দেয়ার সময় সিয়াম খুলে নিয়েছিলো।
চলবে