#প্রেম_প্রার্থনা
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৪৪
না দেখা জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। তেমনি রহস্যময় পুরুষ নারীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে।যে পুরুষ যতবেশি রহস্যময় তার প্রতি নারীর আকর্ষণ তত বেশি। যে পুরুষ ধরা ছোয়ার বাইরে তাকে ধরার জন্য নারীর মনে এক অন্যরকম নারীসুলভ জেদ থাকে। রবিন যেদিন থেকে চারুর সামনে আসা বন্ধ করে দিয়েছে,নিজেকে অদৃশ্যের চাদরে আবৃত করেছে, সেদিন থেকেই চারুর কাছে সে এক রহস্যে পরিণত হয়েছে।যে রহস্য ভেদ করার জন্য জেদি চারু কম কিছু করে নি। চারু আর রবিনের এই লুকোচুরি বাড়ির মানুষের চোখে তেমন পড়ে নি। তবে রবিনের গ্রামে কম আসা এবং সৈয়দ বাড়িতে একেবারেই না আসা নিয়ে কথা তুলেছিলো বাড়ির গিন্নীরা।রবিন সেই কথাও উপযুক্ত যুক্তি দিয়ে যখন উড়িয়ে দিলো তখন কেউ আর এসব নিয়ে মাথা ঘামায় নি।চারু আর রবিনের সম্পর্কও তেমন বন্ধুসুলভ কখনোই ছিলো না। ছোটবেলায় চারু দুষ্টামি করেছে,রবিনকে বিরক্ত করেছে বিনিময়ে রবিনের মার খেয়েছে দৌড়ানি খেয়েছে। বড় হওয়ার পরে দুজনের মাঝেই যথেষ্ট দূরত্ব বেড়েছে। কিন্তু দুজনের যে একবারে মুখ দেখাদেখি বন্ধ তা কারোরই চোখে পড়ে নি কিংবা কেউ এসব খেয়াল করেনি।
চারু রবিনকে খুজলেও তা উপরে কখনো প্রকাশ করে নি।সে মনে মনে রবিনকে খুজতো৷ আগেই বলেছি নারীরা রহস্যময় পুরুষদের প্রতি আগ্রহী থাকে।চারুও তার ব্যতিক্রম না।রবিনের রহস্য ভেদ করার জেদ ই যেন চেপে বসেছিলো তার মনে। আর আজ এখন এই মুহুর্তে সেই রহস্যময় পুরুষ তার সামনে, তার দিকেই শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে। আবছা অন্ধকার ঘরে রবিনের সামনে চারু নিজেকে খুব অসহায় অনুভব করলো। তার তেজ,জেদ সব হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়ে গলা শুকিয়ে আসলো। সে শুকনো ঢোক গিললো। রবিন চেয়ার থেকে পা নামিয়ে টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। পুরুষালি গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো-
“এইখানে কি?”
চারু দাঁড়িয়ে রইলো কিছু বলল না। রবিন আবার বললো-
“কথা ছিলো আমি তোর সামনে যাব না,কিন্তু তুই আমার সামনে আসলে হিসাব আলাদা। এখন ক হিসাব কেমনে মিটাইতাম?”
চারু ইতিউতি তাকালো। খুব অস্বস্তি লাগছে তার। সে নিজেকে সামলে চোখে মুখে কিছুটা গম্ভীর ভাব এনে কন্ঠ উঁচু করে বলল-
“আমি জানতাম না যে আপনি এইখানে আছেন।জানলে আসতাম না।”
রবিন ভ্রু উঁচু করলো। মুখে কৌতুকের হাসি ফুটিয়ে বলল-
“আপনি? এত সম্মান?”
চারু ভেবে পেলো না কি বলবে। চার বছর পর দেখা হওয়া দামড়া ছেলেকে সে তুমি করে ডাকতে সাহস পায় নি। রবিন এগিয়ে এসে চারুর কাছাকাছি দাঁড়ালো। তার কড়া পারফিউমের গন্ধ বাড়ি খেলো চারুর নাকে। সে এক পলক রবিনের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে এলোমেলো চাহনি ফেললো। রবিন নীচু কন্ঠে বলল-
“নিজে থাইকা আমার সামনে আইসা তোর বড় বাবার মান-সম্মান তো সব খাইয়া দিলি। এখন কি করবি?”
“আমি নিজে থাইকা আসি নাই। আপনি ইচ্ছা কইরা আমারে এদিকে আনছেন।”
চারুর কন্ঠ অনেক তেজী শুনালো।তার চোখেমুখে কিছুটা রাগের আভাসও দেখা যাচ্ছে। রবিন মজা পেলো চারুর তেজ দেখে। এই মেয়ের জেদ রাগ সব আগের মতোই আছে। রবিনের ফোনে কল আসায় তাদের কথায় বাঁধা পড়লো। চারু থমথমে মুখে এখান থেকে যেতে নিলো।রবিন খেয়াল করে চারুর হাত চেপে ধরলো।চারু বিস্মিত হয়ে তাকালো। রবিন কানে ফোন ধরে “হুম,হাম” করে কথা বলছে। চারু হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পারছে না। রবিন কান থেকে ফোন নামিয়ে চারুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে পর্দা সরিয়ে বেরিয়ে গেলো। চারু রবিনের যাওয়ার দিকে একবার তাকালো। তারপর ফোন কানে ধরতেই রানির কন্ঠস্বর শুনতে পেলো-
“চারু,আম্মা ড্রাইভাররে কল দিয়া গাড়ি বাড়িতে নিয়া গেছে। আমি তোর তুহিন ভাইয়ের সাথে চইলা যাইতাছি। তুই ভাইয়ার সাথে চইলা আসিস।”
চারুর সারা অঙ্গ রাগে জ্বলে গেলো। সে দাঁত কিড়মিড় করে বলল-
“হারাম*জাদী তুই আগে থাইকাই জানতি যে তোর ভাই এর সাথে আমার দেখা হইব……”
চারু কথা শেষ করতে পারলো না এর আগেই রানি ফোন কেটে দিলো। চারু কিছুক্ষন হ্যালো হ্যালো করলো। তার অনেক রাগ লাগছে। সে ছুটে বেরিয়ে এলো দোকান থেকে। রবিন দোকানের সামনে দাঁড়ানো ছিলো।চারু বের হয়ে রবিনের হাতে ফোন ধরিয়ে দিলো।রবিন ফোন নিতে নিতে বললো –
“আমার সাথে আয়।”
চারু মুখ ঝাড়ি দিয়ে বলল-
“লাগব না আমি একাই যাইতে পারবাম।”
চারু হন হন করে হাঁটা ধরলো সাম্নের দিকে। রবিন ভ্রু কুচকে তাকালো সেদিকে। জেদি মেয়েরা অনেক অবাধ্য হয়।আর অবাধ্য মেয়ে মানেই বেয়াদব।কিন্তু এই বেয়াদবকে সামলানোর উপায় রবিনের জানা আছে।সে বড় বড় পা ফেলে চারুর পিছু পিছু গেটের দিকে এগিয়ে গেলো।চারু মেলার গেট থেকে বের হয়ে একটা রিক্সার দিকে এগিয়ে গেলো। রিক্সাওয়ালা তাকে মুখের উপর না করে দিলো “যাবে না”। চারু আরেকটা রিক্সার কাছে গেলো সেই রিক্সাওয়ালাও একই উত্তর করলো।চারু অবাক হলো। সে আরেকটা রিক্সাওয়ালার কাছে এগিয়ে গেলো। রিক্সাওয়ালার দিকে তাকিয়ে দেখলো রিক্সাওয়ালা সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। চারু পিছন ফিরে দেখলো রবিন এদিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার বুঝতে আর বাকি থাকলো না রিক্সাওয়ালারা কেন তাকে নিয়ে যাবে না।চারু সিদ্ধান্ত নিলো সে হেঁটেই যাবে। এই পর্যায়ে রবিন একটা ধমক দিলো-
” আর এক পা সামনে দিবি না। চুপ কইরা দাঁড়া।”
চারু এত বড় ধমক খেয়ে ভয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।আশেপাশে লোকজন আছে, এখন না দাঁড়ালে রবিন যদি লোকজনের সামনে আরো ধমক দেয় তাহলে মান সম্মান আর থাকবে। অবশ্য তার পক্ষে এতটা রাস্তা হেঁটে যাওয়া একদম ই সম্ভব না।তাই রবিন যেহেতু সেধে সেধে নিতে চাচ্ছে সঙ্গে গেলে সমস্যা তো আর নেই। রবিন হাঁক ছেড়ে লিমনের নাম ধরে ডাকলো। লিমন এগিয়ে আসলো।লিমনকে দেখে চারু ঠোঁট বাঁকালো।রবিনের এই চামচা টা এই চার বছরে তাকে অনেক জ্বালিয়েছে। সব জায়গায় পিছু নিয়েছে। চারু হঠাৎ খেয়াল করে দেখলো লিমনের সাথে একটা সাইকেল। লিমন সাইকেলটা রবিনের কাছে দিয়ে যে পথে এসেছিলো সেই পথেই চলে গেলো। রবিন এক হাতে সাইকেল ঠেলে চারুর সামনে এসে দাঁড়ালো। মাথা ইশারা দিয়ে সাইকেল দেখিয়ে বলল-
“ওঠ।”
চারু চোখ বড় বড় করে বলল-
“সাইকেলে কইরা যাইবাম? আপনার বাইক আনেন নাই?”
“না।”
চারু সাইকেলের পিছন দিকে তাকিয়ে মৃদু চিৎকার করে বলল-
“এই সাইকেলের তো পিছনে সিট নাই আমি কই বসবাম।”
“সামনে।”
রবিনের কথা শুনে চারু চোখ পিটপিট করে তাকালো।তার ঠোঁট দুটো হালকা ফাঁক হয়ে গেলো।
_______
সারা খুশি মনে গাড়িতে বসে আছে।অবশেষে সে তার মা কে রাজি করিয়ে মেলায় আসতে পেরেছে। রুবিনা বেগমকে দিয়ে ড্রাইভারকে কল করে বাড়িতে ডেকেছে তাকে মেলায় নিয়ে আসার জন্য।ওইতো মেলার গেট দেখা যাচ্ছে। আরেকটু গেলেই মেলার গেট। সারা খুশিমনে গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছে রবিনের সাথে দেখা হওয়ার জন্য।হঠাৎ তার চোখ পড়লো সামনে থেকে আসা একটা সাইকেলের দিকে।সাইকেলে বসা ছেলেটিকে তার চেনা চেনা লাগলো। সে অনুসন্ধানী চোখে তাকালো।তাকিয়েই তার মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো। সাইকেলে বসা রবিনকে সে চিনতে পেরেছে। সাইকেলের সামনে রবিনের দুই বাহুর মাঝে আবদ্ধ হয়ে বসে থাকা চারুকে দেখে সারার অন্তরে বিষ নির্গত হলো। বিষাক্ত হয়ে গেলো তার অন্তর্দেশ। চোখে এসে ভীড় করলো হিংসার আগুন।
রবিনের সাইকেল সারার চলন্ত গাড়িকে পাশ কাটিয়ে গেলো।সারা পুরোটা সময় তাকিয়ে রইলো রবিন আর চারুর দিকে। ওদের সাইকেল পাশ কেটে চলে গেলেও সারার চাহনীর পরিবর্তন হলো না। মেলার গেটের কাছে গিয়ে গাড়ি থামলো। সারা নড়লো না,শক্ত হয়ে বসে রইলো।ড্রাইভার সারার নড়চড় না দেখে সারার উদ্দেশ্যে বললো-
“মেলার গেটে আইছি,ম্যাডাম।নামেন।”
সারা উত্তর করলো না। সে সেভাবেই বসে রইলো। ড্রাইভার কি করবে বুঝতে পারছে না। শহর থেকে আসা চেয়ারম্যানের একমাত্র ভাগ্নিকে দ্বিতীয় বার গাড়ি থেকে নামতে বলার সাহস সে পাচ্ছে না। ড্রাইভার সামনের দিকে তাকিয়ে বসে রইলো। চেয়ারম্যানের ভাগ্নি যদি সারাক্ষন গাড়িতে বসে থাকতে চায় তাহলে বসে থাকুক।তার তো সমস্যা নেই তার কাজ শুধু গাড়ি চালানো।
খানিক বাদেই সারা মৃদু বিমর্ষ কন্ঠে বললো-
“গাড়ি ঘুরাও।”
“জী ম্যাডাম?”
“বললাম গাড়ি ঘুরাও।এক্ষনি।তালুকদার বাড়ি চল।”
সারার চিৎকার করে বলা কথায় ড্রাইভার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। একটু আগেই তো হাসছিলো, এখন আবার এমন করছে কেন? ড্রাইভার তড়িঘড়ি করে গাড়ি স্টার্ট দিলো, তারপর গাড়ি তালুকদার বাড়ির দিকে ঘুরিয়ে দিলো।
________
রবিন বিকেলের নরম আলোতে ঢিমে তালে সাইকেল চালিয়ে জংগলের পাশে দিয়ে যাচ্ছে। চারু তাকিয়ে দেখলো এইটা সেই জংগল যেখানে সে আর রবিন এসে আশ্রয় নিয়েছিলো। আজকের মতো সেদিনও তারা সাইকেলে করেই পালিয়েছিলো।তবে তখনকার তুলনায় আজকের পরিবেশ অনেক রোমান্টিক।চারু সাইকেলের সামনে শক্ত হয়ে বসে আছে। তার পিঠ লেগে আছে রবিনের চওড়া বুকে। চারু যে ইচ্ছা করে সামনে বসেছে তা কিন্তু না।পিছনে সিট নেই দেখে যখন সে সামনে বসবে না বলে জেদ করলো তখন রবিন কঠিন গলায় ধমকে বলল “তুই বসবি তোর ঘাড় বসবে”। এটা শোনার পর চারু আর কিছু বলার সাহস পায় নি।এমনিতে সে রবিনকে তেমন ভয় পেত না,কিন্তু গত নির্বাচনে রবিনের কুপিয়ে কয়েকজনকে হাসপাতালে পাঠানোর খবর শোনার পর এখন তার রবিনের রাগকে বেশ ভয় লাগে। তাই সে কোনো উচ্চবাচ্য না করে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাইকেলে উঠেছে।
রবিনের গা থেকে ঘাম আর পারফিউম মিলেমিশে এক অদ্ভুত গন্ধ নাকে লাগছে চারুর।তার পিঠের দিকটা রবিনের উষ্ণ বুকের সাথে লেগে থাকায় তার মনে হচ্ছে তার পিঠ যেন পুড়ে যাচ্ছে। চারু নড়েচড়ে একটু সামনে এগিয়ে বসতে চাইলো।কিন্তু চলন্ত সাইকেলে তেমন সুবিধা করতে পারলো না।সে আবারো একটু নড়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাইলো।তখন রবিন হালকা কন্ঠে বললো-
” নড়িস না।পইড়া যাবি।”
চারু নড়াচড়া বন্ধ করে দিলো। তার চোখমুখ লাল হয়ে আসছে। রবিন মৃদুতালে সাইকেলে প্যাডেল মারছে।তার কোনো তাড়াহুড়ো নেই। চারুর ছেড়ে রাখা চুল বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে হালকা উড়ছে।রবিনের চোখেমুখে ও লাগছে। রবিন নাক এগিয়ে হালকা করে শ্বাস টানলো।তারপর নীচু গলায় চারুকে জিজ্ঞেস করলো-
“শুনলাম আমারে সন্ত্রা*সী ডাকসোস।আমি সন্ত্রা*সী? হুম?”
চারুর চোখমুখ পালটে গেলো।ভয় ভয় লাগলো তার। রানি শয়*তানি তার ভাইয়ের কাছে এই কথা বইলা দিছে। ওরে সামনে পাইলে খামছে গাল লাল করে দিবে সে।
রবিন চারুর মাথায় নিজের গাল ঠেকালো। সাইকেলের গতি আরেকটু ধীর করে বলল-
“আরো শুনলাম আমারে নাকি কাইল্লা ডাকসোস।”
চারু চোখ বড় বড় করে ফেললো। ইয়া আল্লাহ! এই কথাও কানে চলে গেছে? এই কথা কে বলেছে? রনি? সে তো এমনি এমনি রাগের চোটে মুখ ফসকে রনির সামনে রবিনকে “কাইল্লা” বলে ফেলেছিলো।এইসব কথা এখন তার গলার কাঁটা হয়ে গেলো তো।
রবিন আবারো বলল-
“তুই ফর্সা বইলা খুব দেমাক?”
চারু সামনের দিকে তাকিয়েই প্রবল বেগে দুই দিকে মাথা নেড়ে বুঝালো “না, তার দেমাক নেই।” রবিন আবারো বলল-
” চল দুইজন মিল্লা একটা কাজ করি। ফর্সা মেয়ে আর কালো ছেলের বাচ্চাগুলা কালো হয় নাকি ফর্সা হয় এইটা এক্সপেরিমেন্ট কইরা দেখি।”
চারুর মুখ হা হয়ে গেলো।এইসব কি কথাবার্তা? চার বছর পর এসে প্রথম দেখায় এইসব কেউ বলে? চারু রবিনের দুই বাহুর মাঝখানে লজ্জায় সিটিয়ে গেলো। রবিন ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো-
“কি?করবি?এক্সপেরিমেন্ট। ”
চারু মনে মনে বললো “ভাই,তুই আবার কয়েক বছরের জন্য গুম হইয়া যা।প্রমিস এইবার আর তোরে খুজতাম না”।
রবিন সাইকেল নিয়ে সৈয়দ বাড়ির সামনে থামলো।চারুকে উদ্দেশ্য করে বললো –
“উত্তর দিবি তারপর যাবি।”
চারু রবিনের কথা তোয়াক্কা করলো না।সে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো।কিন্তু যেতে পারলো না।রবিন তার হাত দিয়ে সাইকেলের হ্যান্ডেল ধরে আছে যার কারনে চারু এখনও তার দুই বাহুর মাঝেই বন্দী। চারু জোর গলায় বলল-
“হাত সরান,আমি বাড়িতে যাইবাম।”
“আগে উত্তর দে। এক্সপেরিমেন্ট করবি কিনা?”
চারু ঠোঁট কামড়ালো।যতই সে দূর থেকে রবিনকে দেখার জন্য আকুল থাকুক না কেন সে রবিনের এত কাছাকাছি এসে খুব লজ্জা অনুভব করছে। সে চোখ তুলে তাকাতেও পারছে না।অথচ রবিন এক দৃষ্টিতে তাকিয়েছে তো তাকিয়েই আছে। এমন সময় গেট দিয়ে বের হয়ে এলো শাহজাহান আলী। তিনি চারু রবিনকে একসাথে দেখে বিস্মিত হলেন।রবিন তার বড় মামাকে দেখে সাইকেলের হ্যান্ডেল থেকে হাত সরিয়ে ফেললো।উঁচু গলায় শাহজাহান আলীকে সালাম দিলো। শাহজাহান আলীও সালামের উত্তর দিলেন।
চারু ছাড়া পেয়ে দ্রুত পা চালিয়ে গেটের দিকে যেতে লাগলো। কিন্তু সে গেটে ঢুকতে পারলো না তার আগেই রবিন ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল-
“কে আগে কার সামনে আসছে এইটা বড় মামার সামনে বইলা দিয়া যা। ”
চারু থতমত খেয়ে শাহজাহান আলীর দিকে তাকালো। শাহজাহান আলী একবার চারুর দিকে আরেকবার রবিনের দিকে তাকালো। রবিন এক পা সাইকেলের প্যাডেলে আর আরেক পা মাটিতে রেখে সাইকেলে উপর বসে আছে। সে আবারো হাঁক ছাড়লো-
“কি রে!বল।”
শাহজাহান আলী রবিনকে কিছু বলতে যাবেন তার আগে রবিন তাকে উদ্দেশ্য করে বলল-
“আমি কয়েকটা ছেলেপেলে নিয়া বইসা ছিলাম তার মধ্যে হুট করে আপনার ভাতিজি গিয়া সামনে হাজির। আর এখন আমি দায়িত্ব পালন করার জন্যই তারে বাড়ি পৌছায় দিলাম।তাই না চারু?”
চারু তার বড়বাবার সামনে অনেক লজ্জায় পড়ে গেলো।সে মাথা নীচে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।শাহজাহান আলী চারুকে উদ্দেশ্য করে বললেন-
“যা মা,ঘরে যা।”
চারু এই কথা শুনে বাতাসের গতিতে গেট পেরিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেলো। শাহজাহান আলী রবিনের দিকে তাকিয়ে বললেন-
“বাড়ির ভেতরে আসো। তোমার মামীরা তোমারে অনেক মনে করে।”
“না মামা, বাড়িতে ফুপি আসছে।বাড়িতে যাওয়া লাগব।আজ যাই, অন্যদিন আসবাম।মামীদের আমার সালাম দিবেন।”
রবিন সাইকেল ঘুরিয়ে বাড়ির পথ ধরলো। শাহজাহান আলী রবিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। তার পরিবারের ছেলেমেয়েরা তাকে প্রেমের শত্রু মনে করে। রবিন যে সামনাসামনি দেখা না করার ব্যাপার টা এতটা সিরিয়াসলি নিবে সেটা তিনি ভাবেন নি।তিনি তো এম্নিই এই শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন যাতে চারু আর রবিন দুজনে কোনো ঝামেলায় না জড়ায়।তিনি তো ভেবেছিলেন দুইদিন পর ই হয়ত চারুকে রবিনের সাথে কোনো একটা বিষয়ে জেদ করতে দেখবেন। তারপর রবিনের এক ধমকে চারু চুপ হয়ে গাল ফুলিয়ে রবিনকে বকতে বকতে চলে যাবে।কিন্তু রবিন যে সত্যি সত্যি সামনে আসা বন্ধ করে দিবে এটা তিনি কস্মিনকালেও ভাবেন নি। শাহজাহান আলী ঠোঁট টেনে হাসলেন। ছেলেমেয়েরা গায়ে গতরে বড় হলেও আগের মতো ছোট ই রয়ে গেছে।
_______
সারা বিছানায় বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ গুজে আছে। থেমে থেমে তার শরির কাঁপছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে সে কান্না করছে। ফাতেমা বেগম সারাকে ডাকতে ডাকতে ঘরে ডুকলেন। মেয়েকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে তিনি ভ্রু কুচকে বিছানার দিকে এগিয়ে একটু ঝুঁকে মেয়ের পিঠে হাত রাখলেন।সারা বালিশ থেকে মুখ সরিয়ে তাকালো। ফাতেমা বেগম চমকে উঠলেন সারার কান্নারত চেহারা দেখে।তিনি ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন-
“কি হইছে তোর? কান্না করস কেন?”
সারা ভাবেনি যে তার মা এসে দেখে ফেলবে।সে চোখ মুখ মুছে বললো-
“এমনি মা।মাথা ব্যথা করছিল।”
“না না।কিছু একটা হইছে৷ তুই তো মেলায় গেছিলি,এত তাড়াতাড়ি বাড়িতে ঢুকতে দেইখা তখনি আমার সন্দেহ হইছিলো। আমারে বল মা কি হইছে?”
সারা ঠোঁট কামড়ে কান্না ঠেকিয়ে বললো-
“মা রবিন ভাই যদি আমাকে ভালো না বাসে তখন কি হবে?”
ফাতেমা বেগমের ভ্রু টান টান হলো।তিনি মেয়েকে কাছে টেনে বললেন-
“রবিন তোরেই ভালোবাসব।আজকেই আমি ভাইজানের সাথে আলাপ করবাম এই বিষয়ে। চার বছর এমনি এমনি নষ্ট হইছে।এখন আর সময় নষ্ট করতাম না।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোর আর রবিনের বিয়ে আমি ঠিক করবাম।”
সারার চোখ মুখ উজ্জ্বল হলো। সে যেভাবেই হোক রবিনকে চায়।আগে তো বিয়েটা হোক। একবার বিয়ে হয়ে গেলে রবিনের মনে যে ই থাকুক না কেন তাকে সে ঝেঁটিয়ে বিদায় করবে।
চলবে