প্রেম_প্রার্থনা #তামান্না_আঁখি #পর্ব-১৪

0
537

#প্রেম_প্রার্থনা
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-১৪

শাখাওয়াত তালুকদার খুশি মনে বারান্দায় চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছেন। তার মুখ হাসি হাসি। তিনি ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালেন। নাহ! এইবার ও রুবিনা আসছে না। তিনি খুব ই বিরক্ত হলেন। ছেলে মেয়েরা সবাই ঘুর‍তে গেছে। খালি বাড়ি। তিনি ভেবে রেখেছেন এমন পরিবেশে তিনি একটু স্ত্রীকে নিয়ে বসে চা খাবেন, সময় কাটাবেন, সুখ দুঃখের গল্প করবেন। কিন্তু তা হচ্ছে কই? এত বার ডেকে আসার পরেও তার আনরোমান্টিক বউ এর দেখা নেই। শাখাওয়াত তালুকদার খুব ই বিরক্ত হলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন উঠে গিয়ে রুবিনা বেগম কে কিছু কঠিন কথা শুনাবেন। তিনি চেয়ার থেকে উঠতে নিবেন তখনি রুবিনা বেগম চায়ের কাপ হাতে ঘর পেরিয়ে বারান্দায় এলো। এসে চায়ের কাপ সাম্নের ছোট টেবিলে রাখলো। শাখাওয়াত তালুকদার সেদিকে তাকিয়ে আরো বিরক্ত হলেন। তিনি রুবিনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন-

“চায়ের কাপ একটা কেন? তোমার কই? তোমারে না বললাম দুইজনে একসাথে বইসা একটু চা খাইবাম।”

রুবিনা বেগম কপালের ঘাম আঁচল দিয়ে মুছে বললেন-

“এই ভর দুপুরে চা খাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নাই। তুমি খাও।”

শাখাওয়াত তালুকদার অবাক হওয়ার মত ভান করে বললেন-

“ভর দুপুর কই? এখন ত বাজে দুইটা। বিকাল ছুই ছুই। যাও তোমার লাইগা ও চা আনো।”

রুবিনা বেগম না পেরে উঠে গেলেন চা বানাতে। নিজের জন্য এক কাপ চা নিয়ে এসে পাশের চেয়ারে বসলেন। শাখাওয়াত তালুকদার বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিলেন। তারপর তৃপ্তিসূচক শব্দ করে বললেন-

“আয়াহ!! দুপুরের খাওয়ার পর চা খাইতে যে এত স্বাদ আগেত জানতাম না। আজকে থাইকা প্রতিদিন দুপুরে খাইয়া আমি আর তুমি এম্নে চা খাইতে বসবাম। ঠিক আছে?”

“তুমি আছো চা নিয়া? পুলাপান গুলা সেই কখন মেলায় গেছে। দুপুরে খাইলো কিনা আল্লাহ জানে।”

“আরে রাখো ত ওদের কথা। এই বয়সে ঘুরাঘুরি করতে গিয়া এক বেলা না খাইলে কিছু হইত না। তুমি বরং একটু চেয়ার টা আগায় আনো। কানে কানে একটা কথা কই।”

রুবিনা বেগম ভ্রু কুঁচকে স্বামীর দিকে তাকালেন। তারপর বললেন-

“এইখানে তুমি আমি ছাড়া আর কেউ নাই। তাই কানাকানির দরকার নাই।”

শাখাওয়াত তালুকদারের মুখ কুচকে এলো। মুখের চা টাও কেমন তেতো ঠেকলো। কেউ আশেপাশে থাকলেই খালি কানাকানি করা যায়, অন্য সময় যায় না? তিনি হতাশ শ্বাস ফেললেন। সৈয়দ বাড়ির মেয়ে বিয়ে করা তার ভুল হয়েছে। এই বংশে রসকষহীন লোকের সংখ্যা বেশি। তার মত প্রেমিক হৃদয়ের মানুষের এরকম রসকষহীন মানুষ বিয়ে করা উচিত হয় নি।

সেই মুহূর্তে কর্কশ শব্দ করে শাখাওয়াত তালুকদারের ফোন বেজে উঠলো। রুবিনা বেগম স্বামীকে বসতে বলে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে তিনিই উঠে গেলেন ফোন ধরতে। ফোনের স্ক্রিনে দেখলেন দলের একজন কল করছে তিনি ফোন কানে ধরলেন। কিন্তু বেশিক্ষন ধরে রাখতে পারলেন না। তার হাত থেকে ফোন পড়ে গেলো, পর পর পড়ে গেল চায়ের কাপ।তিনি চিৎকার করে মাটিতে বসে পড়লেন।

বিকট শব্দ পেয়ে শাখাওয়াত তালুকদার ঘাড় ঘুরিয়ে ফিরে চাইলে। রুবিনা বেগমকে চিৎকার করে মাটিতে বসে পড়তে দেখলেন। তিনি দৌড়ে আসলেন রুবিনা বেগমের কাছে। কাঁধ ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন-

“কি হইছে রুবি?”

রুবিনা বেগম হাউ মাউ করে বললেন-

“ওগো, আমার রবিন।আমার রবিন।আমার রবিন রে ওরা মাইরা ফেলব।”

_________________

রবিন অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে তার পরিবারের সদস্যদের দিকে। কিভাবে রক্ষা করবে ওদের? ওর ভাবনার মাঝেই আরো কত গুলো গুলি এসে লাগল আশেপাশে। প্লেট, গ্লাস, জগ ভেংগে গুড়িয়ে যাচ্ছে গুলি লেগে। শত্রুরা জানে যে ওরা এখানে লুকিয়েছে। শত্রুরা এগিয়ে আসছে। রবিন মনে মনে প্রমাদ গুণলো। এখনি বের হতে হবে এখান থেকে, নাহলে সবাই মারা যাবে। সে চিৎকার করে লিমনকে ডাকলো-

“লিমন, ওদের নিয়ে বের হ। আমি এই দিক টা দেখতাছি।”

লিমন উত্তর করলো-

“ভাই, এত গুলাগুলিতে কেমনে যাইবাম? ওরা দেখলেই গুলি করব।”

“তুই ওদের নিয়ে বের হ। ওদের আসল টার্গেট আমি। আমি আড়াল থাইকা বের হয়ে ওদের সামনে গেলে ওদের মনোযোগ আমার উপর থাকব। সেই সুযোগে তুই সবাইরে নিয়া ভিড়ের মাঝে মিশে গাড়ির কাছে যাইবি।”

রানি হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো-

“ভাইয়া, তোমারে ছাইড়া আমি যাব না। কোনোমতে ই না।”

রবিন অসহায়ের মত বোনের দিকে তাকালো। এমন হবে জানলে সে ওদের কাউকে নিয়ে আসত না। আজকে মেলায় ওর কিছু হয়ে গেলে ওর পরিবারের একটা মেয়ের ও সম্মান বাঁচবে না। তাই যা করার তাড়াতাড়ি করবে সে। রবিন রানির কান্নাকে পাত্তা দিল না। লিমনকে ইশারা দিলো। লিমন মাথা নাড়িয়ে না করলো। সে রবিনকে রেখে যাবে না। রবিন আবারো ইশারা দিয়ে বুঝালো এছাড়া উপায় নেই।লিমন দাঁত কামড়ে কান্না আটকিয়ে রবিনের ইশারা মেনে নিলো। সে এখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি।

রবিন শেষবারের মত সবার দিকে তাকালো। চারু আর রানি এক আরকজনকে ধরে কাঁদছে।রনি ফারহানার কোলে বসে কাঁদছে। এই অবস্থায় নিজের পরিবার কে দেখে রবিনের বুকে আগুন জ্বলে উঠলো।বেঁচে থাকলে আজকে যারা আক্রমণ করেছে সে তাদের একজনকেও ছাড় দিবে না।

রবিন লিমন এর দিকে তাকালো। এখনি সে সবথেকে বড় ঝুঁকি টা নিবে। এ ছাড়া উপায় নেই। তার দলের লোকজন আসতে আরো ২০ মিনিট এর মতো লাগবে। ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে যাবে। রবিন ইশারা করলো লিমন কে। লিমন এক হাতে ফারহানার হাত ধরল অন্য হাতে রানির হাত ধরল। সবাইকে এক প্রকার টেনে আনলো দোকানের বাইরে। তখনি রবিন অপর পাশ দিয়ে বের হয়ে খোলা ময়দানে দৌড় দিল। সব শত্রুর মনোযোগ চলে গেলো ওর দিকে। সবাই ওকে টার্গেট করে আক্রমন করতে ব্যস্ত।

লিমন সামনের দিকে তাকিয়ে দৌড়াচ্ছে সবাইকে নিয়ে। ফারহানার কোলে রনি আর রানির হাত আঁকড়ে ধরে আছে চারু। রানি চিৎকার করে কাঁদছে। রবিনকে ছেড়ে সে যাবে না। লিমন এক প্রকার টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে সবাইকে। তার উদ্দেশ্য মেলার গেট।সেখানে গাড়ি রাখা আছে।

চারু কাঁদতে কাঁদতে পিছন ফিরল। তার স্বপ্নের শ্যামবর্নের পুরুষ দৌড়াচ্ছে উলটো দিকে। চারুর বুক বিষাদে ছেয়ে গেলো।তার ইচ্ছে হলো সেই পুরুষের দিকে ছুটে যেতে। কিন্তু তার ছোট্ট হৃদয়ের সাহসে কুলাচ্ছে না। তখনি রবিন ছিটকে পড়ল মাটিতে।গুলি লেগেছে তার হাতে। চারু “রবিন ভাই ” বলে চিৎকার দিলো। সেই চিৎকারে দাঁড়িয়ে পড়লো লিমনসহ সবাই। রানি রবিনকে আহত দেখে এক ঝটকা দিয়ে লিমনের হাত ছাড়িয়ে নিলো। দৌড় দিলো রবিনকে উদ্দেশ্যে করে। সেই সাথে দৌড় দিলো চারুও। দুজনের হাত এখনো ধরা অবস্থায়।

আকস্মিক কান্ডে লিমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। আরেকটু গেলেই মেলার গেট।।সে ফারহানার কাছে থাকবে নাকি চারু আর রানিকে গিয়ে ধরবে বুঝলো না। চারু আর রানি মুহূর্তেই ভিড়ে মিশে গেছে। লিমন ফারহানা আর রনিকে নিয়েই দৌড়ে গেট পার হলো।গাড়ির ভিতর নিয়ে ওদের বসাতে চাইলো কিন্তু অন্য বিপদের কথা চিন্তা করে তা করলো না। সে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কোনো চেনাপরিচিত কেউ আছে কিনা। কাউকে পেলো না। হঠাৎ করে নজরে পড়লো একটা টিনের ঘর। লিমন ফারহানা আর রনিকে সেখানে রেখে বাইরে থেকে লাগিয়ে দিলো। তারপর ছুট লাগালো মেলার দিকে। সেখানে চারু আর রানি এখনো আছে।

রবিনের সারা শরির অবশ হয়ে গেলো।পরক্ষনেই সমস্ত শরিরে যন্ত্রনা ছড়িয়ে গেলো। সে তার গুলিবিদ্ধ হাত চেপে ধরে মাথা নেড়ে উঠে বসলো। তখন তার কানে আসলো কেউ তার নাম ধরে চিৎকার করছে। সে সামনে তাকালো কিন্তু অপরিচিত মানুষজনের ছুটাছুটি ছাড়া কিছুই দেখলো না।সে আবারো সেই চিৎকার শুনলো। এবার ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো।দেখলো রানি আর চারু হাত ধরাধরি করে ভীড় ঠেলে দৌড়ে আসছে। রবিনের বুকটা ধ্বক করে উঠলো। সে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে রইল সেদিকে। ওরা এদিকে আসছে কেন? এদিকে আসা মানেই ত বিপদ। সে প্রবল বেগে মাথা নাড়লো।বিড় বিড় করে বললো “আসিস না, আসিস না”.।

সে চিৎকার করে ওদের না করতে চাইলো কিন্তু পারলো না, তার আগেই একটা প্রবল বেগে লাথি এসে পড়লো তার বুকে। সে উলটে মাটিতে পড়ে গেলো। চারু আর রানি চিৎকার করে উঠলো। আরেকটা লাথি এসে রবিনের বুকে আঘাত করবে তার আগেই রবিন পা ধরে ফেললো এক টান দিয়ে ফেলে দিলো লাথি দিতে আসা ছেলেটিকে। তারপর এক হাতে গুলির জায়গা টা চেপে উঠে দাড়ালো। সে নিজেকে শক্ত করলো। সে আজ কিছুতেই হারবে না। শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে। আরেকটা ছেলে এগিয়ে ঘুষি ছুড়লো রবিনের দিকে। রবিন হাত টা ধরে মুচড়ে দিলো।ঘুষি বসালো ছেলেটির ঘাড়ে। ছেলেটি আঘাত পেয়ে উলটে পড়ে গেলো। আরো কয়েকজন এগিয়ে এলো রবিনের দিকে। রবিন আগুন গরম চোখে তাকালো। কাওকেই সে ছাড়বে না আজ।

চারু আর রানি ভীড় ঠেলে দৌড়ে রবিনের দিকে এগুচ্ছে। কিন্তু ওরা দুজনেই এক জায়গায় থেমে গেলো। ওদের সামনে রামদা হাতে দাঁড়িয়ে আছে তিনটি ছেলে। মাঝখানের ছেলেটা রাম দা উঁচিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে সাথের ছেলে দুটোকে উদ্দেশ্য করে বলল-

” ওই, এই দুজন সৈয়দ বাড়ি আর তালুকদার বাড়ির মাইয়া। একটারেও ছাড়বি না।”

চারু আর রানি দুজনেই এই কথা শুনে ভয় পেয়ে উলটো ঘুরে দৌড় লাগালো। পিছনে দৌড়ে আসছে সেই তিনটি ছেলেও। বেশিক্ষন তারা দৌড়াতে পারলো না।ভীড়ের ধাক্কায় হাত ছুটে গেল দুজনের। দুজন দুই দিকে সরে গেলো। চারু “রানি, রানি, বলে চিৎকার করে ডাকলো।কিন্তু কোনো সাড়া এলো না। তার কথা ভীড়ের মাঝেই হারিয়ে গেলো। সে ভীড়ের ধাক্কায় এক দোকানের সামনে চলে এলো। দোকানে ঢুকে এক্টা টেবিলের নিচে লুকালো। কয়েকটা গুলির শব্দ ভেসে আসলো।চারু কাঁপা কাঁপা হাতে কান চেপে ধরলো।

রানি দিশেহারার মতো চারুকে খুজছে। ভিড়ের ধাক্কায় সে অনেকটা দূরে চলে এসেছে। এখান থেকে না চারুকে দেখা যাচ্ছে আর না রবিন কে। রানি চিৎকার করে চারুকে ডাকলো। কিন্তু সেই ডাক চারুর কানে পৌছালো না। রানি আবারো ডাকলো। ভয়ে তার কন্ঠ রোধ হয়ে আসতে চাইল। এইবারের ডাকে সেই তিনটি ছেলের দুটো ছেলে রানির দিকে ফিরে তাকালো। চারু আর রানি আলাদা হয়ে যাওয়ার পর তারা চারুর পিছনে এক জন গিয়ে বাকি দুজন রানির পিছু লেগেছে। রানি তালুকদার বাড়ির মেয়ে। তালুকদার বাড়ির ক্ষমতা ধ্বংস করতে রানিকে ব্যবহার করা যেতে পারে। তারা রানির কন্ঠ শুনে চিৎকার করলো-

“তালুকদারের মাইয়ারে ধর।”

রানি তাকিয়ে দেখলো রামদা হাতে তার দিকে দুজন ছেলে দৌড়ে আসছে। কিন্তু সে এক পা ও নড়তে পারছে না। সে ভয়ে আতংকে আড়ষ্ট হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। ছেলেগুলো কাছে এসে রানির গায়ে হাত দিতে চাইলো কিন্তু পারলো না এর আগেই উলটো হয়ে মাটিতে পড়ে গেলো।রানি পাশে তাকিয়ে দেখলো তুহিন কে। একটা লাঠি হাতে ক্ষিপ্ত হয়ে এগিয়ে আসছে।এগিয়ে এসেই ছেলেগুলোকে বেদম মারলো। তারপর হাতের লাঠি ফেলে দিয়ে রানির হাত ধরে টানতে টানতে অন্য দিকে নিয়ে গেলো। রানি শুধু স্তব্ধ হয়ে তুহিনের দিকে তাকিয়ে রইল।

লিমন দৌড়ে মেলার ভীড়ের মাঝে চারু আর রানিকে খুঁজছে।কিন্তু কোথাও কারো কোনো চিহ্ন নেই। রবিন কোথায় আছে তাও সে জানে না। মানুষ দিক্বিদিক হয়ে ছুটছে চারপাশে। আর কিছুক্ষন পরেই তাদের দলের লোকেরা চলে আসবে। তখন আরো বড় হাংগামা হবে। এর আগে যে করেই হোক রানি চারুকে খুঁজতে হবে। লিমনের হঠাত চোখ পড়লো একটা দোকানের দিকে। নীল জামা পড়া একটা মেয়ে টেবিলের নীচ থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বের হচ্ছে। লিমন চারুকে চিনতে পারলো। দৌড়ে গেলো সেদিকে।

চারু অনেক্ষন কান চেপে বসে থাকার পর হুট করে ওর রবিনের মুখ টা ভেসে উঠলো।মনে পড়লো রবিন হাতে গুলি খেয়েছে। সে তখনি সিদ্ধান্ত নিলো সে রবিনের কাছে যাবে, রবিনকে বাঁচাবে। টেবিলের নীচ থেকে বের হয়ে দৌড় দিয়ে রবিন যেদিকে আছে সেদিকে দৌড় লাগালো। ভীড় ঠেলে সে পৌছে গেলো সেখানে। দূর থেকে দেখলো রবিন টলতে টলতে এখনো মারামারি করছে। তার মুখ রক্ত আর ঘামে মাখামাখি। শার্ট রক্তে ভিজে গেছে। চারু সেদিকে এগিয়ে যাবে তার আগেই লিমন খপ করে ওর হাত ধরল। সে চারুকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। চারুকে নিরাপদে রেখে এসে সে রবিনের কাছে আসবে।

রবিন চোখে ঝাপসা দেখছে।তার শক্তিতে আর কুলাচ্ছে না। চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে। এতক্ষন খালি হাতে মারামারি করলেও এখন আর সম্ভব না।সবার হাতেই অস্ত্র। লাঠি, রামদা আর বন্দুক নিয়ে ঘিরে ধরেছে সবাই।আর ঠেকানো সম্ভব না। রবিনের ভীষণ চিন্তা হলো, চারু আর রানিকে কি খুজে পেয়েছে লিমন? ফারহানা আর রনিই বা কোথায়। রবিন টলতে লাগলো।বার কয়েক মাথা ঝাড়লো, চোখ রগড়ে তাকালো। তার ডানদিকে চোখ পড়লো।এক নীল জামা পড়া মেয়েকে দেখলো। দৌড়ে আসছে। কিন্তু আসতে পারলো না লিমন এসে ধরে ফেলেছে। রবিন সেদিকে আর মনোযোগ দিতে পারল না একটা লাঠির বারি পড়লো তার পিঠে। সে সামনে ঝুঁকে গেলো। তারপর পিছন ফিরে লাথি বসাল লাঠির বারি দেয়া ছেলেটির বুকে। ছেলেটি পড়ে গেলো।কিন্তু আবারো উঠে দাঁড়ালো। চারপাশে আস্তে আস্তে সবাই ঘিরে ধরল।রবিন বুঝলো তাকে এইভাবে জানে মারবে না, আস্তে আস্তে দূর্বল করে করে মারবে।

রবিনের পিঠে বারি পড়তে দেখে চারু এক ঝটকা দিয়ে লিমনের হাত সরিয়ে লিমনকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিল।তারপর পাশ থেকে একটা লম্বা বাঁশের লাঠি তুলে চিৎকার করে ছুটলো রবিনের দিকে।

আচমকা মেয়েলি চিৎকারে রবিনকে ঘিরে থাকা সবাই চারুর দিকে চাইলো।একটা মেয়েকে বাঁশ উ্চু করে তাদের দিকে দৌড়ে আসতে দেখে তারা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।

রবিন ক্লান্ত স্থির চোখে চারুর দৌড়ে আসার দিকে তাকিয়ে আছে। ঠোঁট বাকিয়ে একটু হাসলো যেন এই দৃশ্যটা খুব ই স্বাভাবিক। তারপর ক্লান্ত স্বরে বিড়বিড় করে বলল-

“চারু! চারু! চারুলতা!”

চলবে

[ গল্পটা আমি ধীরে ধীরে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। অনেকের কাছে স্লো মনে হতে পারে। এইটা আমার লেখা প্রথম গল্প। সবাই গঠনমূলক কমেন্ট করে ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here