#প্রেম_প্রার্থনা
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৩১
দুপুরের শুরুতেই রান্না বান্নার ধুম লেগে গেলো। চারু ফারহানা রানি তারা সবাই ই কাজে সাহায্য করছে। যদিও তারা রান্নার তেমন কিছুই জানে না কিন্তু এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে,ধুয়ে দিচ্ছে কিংবা কেটে দিচ্ছে। রবিন একটু দূরে বসে পর্যবেক্ষণ করছে। কোনো কিছু লাগবে কিনা দেখছে। এর মাঝে নতুন ঝামেলা হিসেবে যোগ হয়েছে তুহিন। সে ও মেয়েদের সাথে গিয়ে হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে। তবে কাজের চেয়ে অকাজ ই বেশি করছে সে। রান্নায় লাগবে পেয়াজ বাটা সে এগিয়ে দিচ্ছে আদা কুচি, তরকারিতে ঝোল দেয়ার সময় সে আস্ত এক জগ পানিই ঢেলে দিয়েছে। সবাই তাকে নিয়ে বিরক্ত। তাকে যতই বলা হচ্ছে তার কাজ করার দরকার নেই, সে কোনো কথাই শুনছে না।
তার এক কথা বিনা কাজে সে পিকনিকে সামিল হবে না। কিন্তু কাজ কমানোর বদলে সে উলটা কাজ বাড়াচ্ছেই। রবিন এসব দেখেও কিছু বলল না, কারন বলে লাভ নেই।
একটা সময় দেখা গেলো কোনো কোল্ড ড্রিংকের ব্যবস্থা করা হয় নি। তুহিন এটা নিয়ে খুব হম্বিতম্বি করলো।তখনি সজলকে দোকানে পাঠিয়ে এক কার্টুন কোক আনালো। একটা সময় পর সে ক্লান্ত হয়ে রবিনের পাশে এসে বসে পড়লো। হাবে ভাবে এমন দেখালো যেন পুরো রান্নাটাই সে করেছে। তুহিন বসার সাথে সাথে রবিন উঠে চলে গেলো। কখন কি কথা তুহিন বলে ফেলে এই ভয়ে রবিন আর বসার সাহস পেলো না। তুহিন রবিনের যাওয়ার দিকে উদ্দেশ্য করে একটা উড়ন্ত ঘুষি ছুড়ে দিলো। তার চোখ পড়লো সামনের দিকে। চারু স্কুলের কল থেকে হাত ধুয়ে এসেছে। তুহিন গলা উঁচিয়ে ডাকলো-
“চালের নাড়ু, দাঁড়াও।”
তুহিনের ডাক শুনে চারু দাঁড়ালো। তুহিন চারুর কাছে এসে একটা অমায়িক হাসি দিয়ে জানতে চাইলো-
“দিনকাল কেমন যায়?”
“ভালো।”
“আমারে দাওয়াত দিছো এইজন্য তোমার লাইগা এক্টা স্পেশাল গিফট তোলা রইলো।”
চারু একটা হাসি দিলো। গিফটের কথা শুনলে সে আবার না করতে পারে না। তুহিন আশপাশে তাকিয়ে গলা নামিয়ে বললো –
“রবিন টা দিন দিন কেমন জানি হইয়া যাইতাছে তাই না?আসলে ছেলে মানুষের আবেগ বেশি দিন চাপায়া রাখলে এমন হয়।”
চারু ভ্রু কুচকালো। জিজ্ঞেস করলো-
” কিসের আবেগ?”
“প্রেম, ভালোবাসার আবেগ।”
চারু বড় বড় চোখ করে তাকালো।রবিন ভাই কি অন্য কাওকে ভালবাসে নাকি।চারু ব্যস্ত হয়ে প্রশ্ন করলো-
“রবিন ভাই কি কাওরে ভালোবাসে?”
“তা তো জানি না। তবে বাসলে বাসতেও পারে। তুমি কিছু জানো নাকি?”
রবিন অন্য কাওকে ভালোবাসতে পারে শুনে চারুর মুখ টা এতটুকু হয়ে গেলো। তুহিন তা লক্ষ্য করে বলল-
“তোমার কি মন টা খারাপ হইয়া গেলো নাকি?”
চারু নিশ্চুপ রইলো। তার চোখ টলমল। কিশোরী হৃদয়ের অনুভূতির অত্যাচারে সে বিভ্রান্ত। তুহিন হাসি চাপিয়ে অবাক হওয়ার ভান করে বলল-
“আল্লাহ গো! তোমার কি রবিনের লাইগা অনুভূতি আছে নাকি?”
চারু থতমত খেয়ে তাকালো। তুহিন মাথায় হাত দিয়ে “হায় হায় ” করে উঠলো। নিঁখুত অভিনয় করে বলল-
“এইটা তুমি কি করলা চালের নাড়ু শেষমেশ এই বাটপারের প্রেমে পড়লা। ”
চারু রাগে ফুঁসে উঠলো-
“রবিন ভাই বাটপার না।”
তুহিন হাতের তালুতে কিল দিয়ে বলল-
“অবশ্যই বাটপার। ও একটা বিশ্ব বাটপার। দেখলা না কেমন বাটপারি কইরা তোমারে কাছে পাইয়া তোমার কাঁধে ভর দিয়া আরামে বাড়িতে গেলো।এখন তুমি যদি খালি তোমার মনের অনুভূতির কথা স্বীকার করো দেখবা তার আসল রূপ বের হইয়া আসছে। তোমার সাথে মাখো মাখো প্রেম কইরা একবারে বাসর……”
তুহিন এ পর্যন্ত বলেই জিভ কাটলো। চারু ভাবনায় ডুবে গেলো। আসলেই তো, রবিনকে তার অনুভূতি বলার পর থেকেই রবিনের ব্যবহার কেমন জানি চেঞ্জ হয়ে গেছে। কেমন করে যেন তাকায়, কথা বলে।
তুহিন চারুর ভাবভঙ্গি দেখে মাথা দুলিয়ে মৃদু হাসলো।তার ভীষণ মজা লাগছে চারুর দ্বিধাগ্রস্ত মুখ টা দেখতে।
রবিন দূর থেকে চারু আর তুহিনকে কথা বলতে দেখলো।এগিয়ে এসে রানিকে জিজ্ঞেস করল-
“এই দুই মাথা পাগল এত কি কথা কয়?”
“জানি না ভাইয়া।”
“যা, বেনীওয়ালা মাথা পাগল টারে নিয়া আয়।খাওয়ার সময় হইছে।”
রানি ওদের দিকে এগিয়ে গেলো। একটু দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে চারুকে ডাকলো-
“ওই বেনীওয়ালি এইদিকে আয়, দুপুরের খাওয়ার সময় হইছে।”
চারু কিছু বলবে তার আগেই তুহিন ব্যস্ত হয়ে বলল-
“তাই নাকি? এইজন্যই তো বলি পেটে গুড়গুড় শব্দ করে কেন? আসো রানি আসো আমরা একসাথে খাইতে বসি।”
বলেই তুহিন কারো অপেক্ষা না করে মাদুরে গিয়ে প্লেট নিয়ে বসে পড়লো। আস্তে আস্তে সবাই এসে বসলো। খাওয়া দাওয়ার এক পর্যায়ে তুহিন সামনে বসা রানির প্লেটে একটা লেগপিস তুলে দিলো। সে একটা আদুরে হাসি ঠোঁটে নিয়ে রানির দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর যখন অনুভব করলো রবিনসহ সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে তখন তার হাসি মিলিয়ে গেলো। খানিকক্ষণের জন্য থতমত খেয়ে গেলেও পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে আংগুল নেড়ে ভাষনের মতো করে রবিনকে বললো –
“কেমন ভাই তুই? বোন কি খাইলো না খাইলো খেয়াল রাখোস না।নিজে গপগপ কইরা গিলতেছস। রানি তুমি চিন্তা কইরো না তোমার তুহিন তোমার খেয়াল রাখব।”
রবিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকালো।সেই দৃষ্টিতে তাকিয়ে তুহিন আবারো সাথে সাথে বললো –
” আই মিন তোমার “তুহিন ভাই” তোমার খেয়াল রাখব।”
নামের পাশে ভাই লাগাতে তুহিনের খুব কষ্ট লাগলো। রানি ঠোঁট টিপে হাসলো তুহিনের অবস্থা দেখে। বেচারা!!
চারু একবার রবিনের দিকে আরেকবার নিজের প্লেটের দিকে তাকালো। ইশশশ! রবিন ও যদি এইভাবে একটু আদর করে তাকে একটা কিছু প্লেটে তুলে দিত। কিন্তু তা কি আর দিবে? ভাবনার মাঝেই চারু তার প্লেটে একটা বড়সড় চিকেনের পিস আবিস্কার করলো। মুখ তুলে দেখলো রবিন হাত বাড়িয়ে তার প্লেটে এই পিস দিয়েছে।তার মন ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো। রবিন শুধু তাকেই দিলো না বাকি সবাইকেই নিজের হাতে করে এটা ওটা তুলে দিলো। কিন্তু তাতে কি? চারুকেই তো সবার আগে দিয়েছে তাই না। তার মন টা খুশিতে ভরে গেলো।
খাওয়া দাওয়ার পর আরেকটু সময় কাটিয়ে সব কিছু গুছিয়ে সবাই গাড়িতে চড়ে বসলো। যাওয়ার আগে তুহিন অনেক চেষ্টা করলো রানির সাথে একটু কথা বলার কিন্তু রবিনের শকুনি দৃষ্টির কারনে তা আর হলো না। রবিন ফারহানা রনি আর চারুকে তালুকদার বাড়ি নিয়ে আসলো।আজ তারা এখানেই থাকবে।
_______
সারা পুরো আলমারির সব কাপড় চোপড় নিচে নামিয়ে এনেছে। মেঝে থেকে বিছানায় সব কাপড় চোপড়ের ছড়াছড়ি। সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একটা করে ড্রেস ধরে ধরে দেখছে কোনটায় তাকে মানাচ্ছে। যেটা পছন্দ হচ্ছে সেটা লাগেজে গুছিয়ে রাখছে। আর দুদিন পর ই সে তালুকদার বাড়িতে যাবে রানির জন্মদিন উপলক্ষে। তালুকদার বাড়ি এখন শুধু তার মামার বাড়িই না তার হবু শ্বশুরবাড়িও। তাই তাকে সবসময় সুন্দর লাগতে হবে। সারা কয়েকটা শাড়িও নিয়ে নিলো।যদি ওখানে গিয়ে দরকার পড়ে তাই। ওখানে গিয়ে রবিনের সাথে দেখা হবে ভাবতেই তার মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে।একটু লজ্জা লজ্জাও লাগছে।রানির জন্মদিনে তাদের বিয়ের কথা পাকাপাকি করে আসবেন ফাতেমা বেগম। সারা মনে আনন্দ নিয়ে লাগেজ গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
______
হুট করে চারুর ঘুম টা ভেংগে গেলো। ঘুম ঘুম চোখ খুলে সে চারপাশে অন্ধকার দেখতে পেলো। প্রথমে বুঝতে পারলো না সে কোথায় আছে।চোখে অন্ধকার খানিকটা সয়ে যেতেই সে বুঝতে পারলো সে এখন রানির ঘরে। পাশ ফিরে আবছা আলোতে রানি আর ফারহানা কে ঘুমিয়ে থাকতে দেখলো। চারু উঠে বসলো। তার প্রচন্ড ক্ষুধা অনুভব হলো। সন্ধ্যায় সবার সাথে আড্ডা দেয়ার মাঝখানে তার প্রচন্ড ঘুম পেয়েছিলো। তাই এক কোনায় জায়গা করে শুয়ে পড়েছিলো। তাই আর রাতে খাওয়া হয় নি। তাই ক্ষুধা টা তীব্র হয়েছে আরো।
চারু ওয়াশরুমে গিয়ে চোখেমুখে পানি দিয়ে বের হয়ে এলো। সোজা কিচেনে গেলো। কিচেনে নুডুলস ছাড়া কিছুই পেলো না। ফ্রিজে খাবার রাখা আছে কিন্তু এসব গরম করে খেতে ইচ্ছে হলো না।ঘড়িতে দেখলো প্রায় ১১ টা বাজে। এমন সময়ে রুবিনা বেগমকে বিরক্ত করাটাও তো ঠিক হবে না। আবার তার একা একা রান্নাঘরে গ্যাস জ্বালাতেও ভয় করছে। সে সিড়ি দিয়ে দু তলায় উঁকি দিলো।রবিনের ঘরে আলো জ্বলতে দেখলো। রনি রবিনের সাথে থাকছে আজ।রবিন যদি রনির জন্য চিপস, চানাচুর কিছু এনে থাকে তাহলে সেখান থেকে কিছু একটা খেয়ে আপাতত ক্ষুধা নিবারণ করবে সে। এই ভেবে সে রবিনের দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো। দরজায় হালকা নক করলো। ভিতর থেকে আওয়াজ এলো “দরজা খোলা।”
চারু দরজা খুলে দিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। রবিন ল্যাপটপ কোলে নিয়ে কাজ করছিলো।চারুকে দেখে চারুর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।চারু বলল-
“আমার অনেক ক্ষুধা লাগছে।”
” ফ্রিজে খাবার আছে। গিয়া গরম কইরা খা।”
“অইগুলা খাইতে ইচ্ছা করতাছে না।”
“তো এখন?”
চারু এদিক ওদিক তাকিয়ে অস্বস্তি নিয়ে বলল-
“তোমার কাছে কি কিছু আছে? চিপস, চানাচুর?”
রবিন এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো।তারপর বেড সাইড টেবিল থেকে সিগারেটের প্যাকেট বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
“সিগারেট আছে।খাবি?”
চারু বিস্ময় নিয়ে মাথা নেড়ে জানালো “না।”
রবিন সোজাসাপটা বলল-
“তাইলে এইখান থাইকা যা।”
চারু খুব অপমানিত বোধ করলো। সে ধুপ ধুপ পা ফেলে কিচেনে এলো। তার অনেক জেদ চাপলো। সিদ্ধান্ত নিলো সে একাই রান্না করে খাবে। রান্নাঘরে ঢুকে সে নুডুলস সিদ্ধ করার জন্য একটা প্যানে পানি নিয়ে চুলায় বসালো।কিন্তু চুলা জ্বালাতে গিয়ে বিপত্তিতে পড়লো। সে চুলা জ্বালাতে সাহস পেলো না। জ্বালাতে গিয়ে যদি ব্লাস্ট হয়ে যায় সে তো উড়ে যাবে। সে ঠোঁট কামড়াতে কামড়াতে দাঁড়িয়ে থাকলো।
“সামান্য চুলা জ্বালাইতে পারস না আবার বিয়ে করার শখ।”
পুরুষালি গলার আওয়াজে চারু পিছনে তাকালো।রবিন চেয়ার টেনে ডায়নিং টেবিলে বসলো। ফোন বের করে ফোনে নজর দিয়ে আদেশের সুরে বললো-
“খালি খালি নুডুলস আমার পছন্দ না।ফ্রিজে সব্জি আছে।সব্জি কেটে নুডুলসে দে।”
চারুর সর্বাঙ্গে আগুন ধরে গেল যেন। এই আগুন দৃশ্যমান থাকলে এই আগুনেই নুডুলস রান্না করা যেত। একটু আগেই তাকে খাওয়ার জন্য সিগারেট সেধে অপমান করলো আর এখন এসে হুকুম করছে।মানুষ এত খারাপ? চারু রাগ চেপে ফ্রিজ থেকে গাজর আর মটরশুঁটি নিলো। চপিং বোর্ড বের করে রাগের চোটে গাজর না ধুয়েই ছুড়ি দিয়ে কাটতে উদ্ধত হলো। রবিন এসে চারুর হাত থেকে ছুড়ি নিয়ে বলল-
” পারবি না। সইরা দাঁড়া।”
চারু জেদ দেখিয়ে বলল-
“পারব। দাও আমার কাছে দাও।”
“চুপচাপ ওইখানে দাঁড়া।”
রবিনের ধমকে চারু একটু সরে দাঁড়ালো। রবিন শার্টের হাতা গুটালো।একটা প্যানে পানি নিয়ে মটরশুঁটি সিদ্ধ বসালো।পাশের চুলায় নুডুলস ও সিদ্ধ বসিয়ে দিলো।চারু তার বিস্ময় চেপে রাখতে পারলো না।সে একবার রবিনের এই পাশে আরেকবার ওইপাশে গিয়ে সব দেখতে লাগলো।তার বিশ্বাস হচ্ছে না যে রবিন রান্না জানে। রবিন গাজর ধুয়ে ছুড়ি দিয়ে কাটা শুরু করলো। এত সুন্দর করে স্লাইস করছে যে চারু অবাক হয়ে ঝুঁকে পড়ে দেখতে লাগলো।
চারুর এই ছটফটানি রবিনের কাজে যথেষ্ট বাঁধা দিলো।রবিন চারুর দুই বাহু ধরে এক পাশে দাঁড়া করিয়ে আংগুল তুলে শাসিয়ে বুঝালো “এইখান থেকে নড়লে খবর আছে”। চারু ওইখানে দাঁড়িয়েও তাকের উপর হাতে ভর দিয়ে রবিনের দিকে ঝুঁকে পড়লো। অবাক হয়ে প্রশ্ন করল-
” রবিন ভাই তুমি রান্না জানো?”
রবিন উত্তর করলো না। চারু আগ্রহ ভরে প্রশ্ন করলো-
“বিয়ের পর কি তুমি তোমার বউ এর জন্য ও রান্না করবা?”
রবিন কাজ থামিয়ে চারুর দিকে তাকালো। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চারুর কাছে এসে চারুর দুই পাশে তাকের উপর হাত রেখে হালকা হাঁটু ভেংগে মাঝখানে অনেকখানি দূরত্ব রেখে দাঁড়ালো। মাথাটা ঝুঁকিয়ে চারুর মুখ বরাবর নামিয়ে এনে জিজ্ঞেস করলো-
“তুই কি আমার বউএর উপর জেলাস?”
চারু রবিনের দুই হাতের মাঝখানে দাঁড়িয়ে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে খুব ই অসহায় অনুভব করলো। রবিন গভীর কন্ঠে আবারো প্রশ্ন করল-
“তোর লজ্জা শরম এত কম কেন? ”
চারু এই প্রশ্নের উত্তর কি দিবে বুঝলো না। আসলেই তো তার লজ্জা শরম অনেক কম। তা না হলে নিজে থেকে কি করে রবিনকে কল করে ওইসব বলতে পারলো। চারু রবিনের দিকে তাকালো। রবিন এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। আবারো সেই দৃষ্টি। এই মাঝরাতে কিচেনে দাঁড়িয়ে সেই দৃষ্টি চারুর ভেতর নাড়িয়ে দিলো।সে এলোমেলোভাবে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। তুহিন ভাই তো তাহলে ঠিক ই বলেছে।আসলেই তো রবিনের ব্যবহার কেমন জানি চেঞ্জ হয়ে গেছে। হঠাৎ তার চুলায় নজর গেলো।সে রবিনের দিকে তাকিয়ে বলল-
“হায় হায়! পুইড়া যাইতাছে।”
রবিনের কানে যেন চারুর কথা ঢুকলো না।সে একই ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো। চারু জোর গলায় বলল-
“রবিন ভাই পুড়তাছে তো।”
“হুম্মম, সবসময়ই পুড়ে। মনটা।”
“আরে তোমার নুডুলস পুড়তাছে। ”
“হু? ওহ শীট।”
চলবে