#প্রেম_প্রার্থনা
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৩৬
চারু সিড়ি বেয়ে এক প্রকার দৌড়ে নিচে নামলো।নিচে নেমে হাঁপাতে লাগলো সে। নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে মেয়েরা সবাই যেখানে গল্পে মশগুল সেখানে গেলো। সারা চারুকে পরখ করে জিজ্ঞেস করলো-
“একি চারু এভাবে ঘামছো কেন?”
চারু হাত দিয়ে গলার ঘাম মুছে বললো-
“সিড়ি দিয়া উপর নীচ করছি তো তাই।”
রানি চারুর হাতের দিকে তাকিয়ে বলল-
“এ আল্লাহ! তোর মেহেদী এরকম নষ্ট হইলো কেমনে?হাতে এমন ধুলা লাগলো কেমনে?”
চারু হাত দেখে বলল-
“ধুলা লাগছে। আমি যাই হাত ধুইয়া আসি।”
চারু ওয়াশরুমে চলে গেলো। ওয়াশরুমে এসে বেসিনে হাত ধোয়ার সময় চোখ পড়লো আয়নায়। আয়নায় চোখ পড়তেই রবিনের সাথে কাছাকাছি হওয়ার দৃশ্য আয়নায় ভেসে উঠলো। চারু এপাশ ওপাশ মাথা ঝাঁকালো। মাথা থেকে দৃশ্যটা বের করার চেষ্টা করলো। তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে বের হয়ে আসলো। তার আর আড্ডায় মন বসলো না রানির ঘরে এসে শুয়ে পড়লো। আসলেই রবিন ঠিক ই বলেছে তার কিশোরী মন এত অনুভুতির ধাক্কা নেয়ার মত শক্ত হয় নি এখনো। চারু চোখ বন্ধ করলো কিন্তু তার ঘুম আসলো না। রবিনের নিঃশ্বাসের গরম আভা এখনো তার গালে লেগে আছে, চোখ বন্ধ করলেই তার মুখের সামনে রবিনের ধারালো চেহারা ভেসে উঠছে। চারু লম্বা করে শ্বাস নিলো। রবিনের কথা মনে পড়লেই তার কেমন কেমন জানি লাগে। সে চোখ মুখ কুচকে শুয়ে রইলো।
সকালে উঠে চারু ঘর থেকে বেরিয়ে বসার ঘরে এসে দেখলো সারা কতগুলো কাপড় নিয়ে বসেছে।চারু এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
“এগুলো কার কাপড় সারা আপু?”
সারা চারুর দিকে এক পলক তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল-
“এইগুলো তোমার রবিন ভাইয়ের কাপড়।”
চারু নাক কুচকে বলল-
“রবিন ভাই তো তোমার ও ভাই, আমার একার না তো।”
সারা শব্দ করে হাসলো যেন চারু খুব মজার একটা জোক বলেছে। তারপর বললো-
“তুমি এসব বুঝবে না চারু। আমাকে একটু সাহায্য করো তো,এই শার্ট গুলো একটু ধরো।”
সারা চারুর হাতে রবিনের কয়েকটা শার্ট ধরিয়ে দিয়ে চারুকে তার পিছু পিছু আসতে বললো। দোতলায় সারার ঘরে এসে বিছানা দেখিয়ে চারুকে বললো-
“শার্টগুলো এখানে রাখো চারু।”
চারু শার্টগুলো নামিয়ে রেখে প্রশ্ন করল-
“এইগুলা এইনে আনছো কেন?”
“এইগুলো গতকাল কাজের খালাকে দিয়ে ধুইয়ে রেখেছি এখন ইস্ত্রি করব।”
চারুর নাক মুখ কুচকে গেলো। এই মেয়ে এমন ভাব করছে যেন সে রবিনের বউ। সে সারার ঘর থেকে বের হয়ে ছাদে এলো। ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়ালো। বাড়ির পাশের মাঠটাতে রবিনকে দেখতে পেলো। জগিং করছে। ঘামে ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে,চুল থেকে টুপটুপ করে ঘাম ঝরছে। হাত কাটা টি শার্ট পড়ার কারনে তার ফোলা ফোলা পেশি দৃশ্যমান। রবিনের ছাদের দিকে চোখ পড়তেই সে দৌড় থামিয়ে দিলো। হাত দিয়ে কপালের ঘাম ঝেড়ে দুহাত কোমড়ে রেখে চারুর দিকে তাকালো।হাঁপাতে হাঁপাতে চারুর দিকে তাকিয়ে মাথা ইশারা করে বুঝালো “কি?”। চারু ইতস্তত করে দু পাশে মাথা নেড়ে বুঝালো ” কিছুনা” তারপর ছাদ থেকে ছুটে নিচে নেমে গেলো। রবিন হালকা হেসে আবারো দৌড় শুরু করলো।
সকালের খাওয়ার পর ফারহানা আর চারু বাড়িতে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিলো। আগামিকাল রানির জন্মদিন তখন বাড়ির সবার সাথে আসবে আবার। যাওয়ার আগে চারুর মাথায় এক দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো।সে আস্তে করে দুতলায় উঠে আসলো। সারার ঘরে এসে দেখলো সব গুলো শার্ট ইস্ত্রি করে পাশে ভাঁজ করে রাখা হয়েছে। চারু মনে মনে আওড়ালো “খুব বউগিরি দেখানোর শখ তাই না? এখন দেখো আমি কি করি”।
সে একটা শার্ট তুলে নিলো, ইস্ত্রি টা গরম করে শার্টের বুক বরাবর ডান দিকে চেপে ধরলো। শার্ট পুড়ে গিয়ে ধোয়া উঠলো,শার্টের বাম পাশেও সে এক ই কাজ করলো। শার্টের বুক বরাবর দুই পাশে দুটো বড় গর্ত হয়ে গেলো।তারপর আগের মতো সুন্দর করে ভাঁজ করে একটা শার্ট এর নিচে রেখে দিয়ে মুখে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বেরিয়ে আসলো। এখন সে শান্তিমতো বাড়ি যেতে পারবে।
সারা কিচেনে এসেছিলো রবিনের জন্য জুস বানাতে। সে জেনে নিয়েছে রবিন প্রতিদিন সকালে ওয়ার্ক আউট করার পর গোসল সেরে জুস খায়। আজকে সারা নিজে জুস বানিয়ে ঘরে দিয়ে আসবে। সে জুস টা হাতে নিয়ে দুতলায় আসলো। রবিনের ঘরে যাওয়ার আগে নিজের ঘরে গিয়ে অন্য হাতে শার্টগুলো তুলে নিলো। তারপর রবিনের ঘরের সামনে এসে দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকলো। জুস টা টেবিলের উপর রেখে শার্ট গুলো বিছানার উপর রেখে দিলো।
রবিন চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। সারাকে দেখে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো-
” তুই এইনে কি করস?”
“তোমার শার্টগুলো ইস্ত্রি করেছি ভাবলাম ঘরে এসে দিয়ে যাই। আর এই নাও তোমার জুস।”
সারা জুস টা রবিনের দিকে বাড়িয়ে দিলো। রবিন জুস টা হাতে নিয়ে বিছানায় বসে পুরো টা শেষ করলো।তারপর উলটে পালটে দেখে একটা শার্ট তুলে নিলো। শার্টের বোতাম আগে থেকেই খোলা ছিলো, আর সারার সামনে এভাবে বেশিক্ষন থাকতে তার অস্বস্তি হচ্ছিল তাই বেশিকিছু না দেখেই সে তাড়াতাড়ি শার্ট টা গায়ে দিলো। সারার দিকে পিছন ফিরে শার্ট গায়ে দিয়ে বোতাম লাগাতে গিয়ে সে হতভম্ব হয়ে গেলো। সে আয়নায় তাকালো। তার শার্টের বুকের দুইপাশে দুটো গর্ত। রবিন অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। সারার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
“শার্ট ইস্ত্রি করছে কে,তুই?”
সারা মাথা নাড়লো। রবিন এই শার্ট খুলে তাড়াতাড়ি অন্য একটা শার্ট পড়ে নিলো।সারা কিছু বুঝলো না।সে শার্ট টা হাতে তুলে শার্টের অবস্থা দেখে ছোটখাটো একটা চিৎকার দিলো।
“একি!! এই শার্টের এই অবস্থা কেন?”
রবিন ধীর কন্ঠে বলল-
“তোরে শার্ট ইস্ত্রি করতে কে কে দেখছে?”
“কাজের খালা শার্টগুলো এনে দিলো আর চারু শার্টগুলো আমার ঘরে নিতে সাহায্য করেছে।”
রবিন আনমনে মৃদু হাসলো। সারার দিকে তাকিয়ে বলল-
“ঠিক আছে ।এই নিয়া আর কথা বাড়ানোর দরকার নাই।”
“কিন্তু শার্টটার এই অবস্থা কিভাবে হলো?”
“এইটা তুই গিয়া তোর ইস্ত্রিরে জিজ্ঞেস কর।”
বলেই রবিন পোড়া শার্ট টা সহ অন্য শার্টগুলো তুলে নিজেই আলমারিতে রেখে দিলো।সারা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো-
“পোড়া শার্ট টা রাখলে কেন?”
“শার্ট টা আমার প্রিয় তাই।”
বলেই ঘর ছেড়ে রবিন নিচে চলে গেলো।সারা অবাক হয়ে চোখ পিটপিট করলো।
__________
তালুকদার বাড়ির প্রতিটি কোণায় আলো ঝলমল করছে। আজ এই বাড়ির একমাত্র মেয়ে রানির জন্মদিন। তালুকদার বাড়ির গেটে এসে থামলো সৈয়দ বাড়ির গাড়ি। একে একে সবাই নেমে আসলো গাড়ি থেকে। বাড়ির তিন গিন্নী আসলেও কর্তারা কেউ আসতে পারে নি। শাহজাহান আলী ছাড়া সৈয়দ বাড়ির দুই কর্তাই ব্যবসার কাজে শহরে আছে। শাহজাহান আলী আরো ঘন্টাখানেক পর আসবে বলে বাড়ির সবাইকে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছেন।
চারু একটা লাল স্কার্ট পড়েছে সাথে পড়েছে কালো আর লালে মিশালো একটা লম্বা হাতাওয়ালা টপ,এক পাশে নিয়েছে কালো ওড়না।হালকা মেকাপ নিয়ে চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে। সন্ধ্যার অন্ধকার আর তালুকদার বাড়ির লাইটের আলোতে তাকে দেখতে অনেক মিষ্টি লাগছে।চারু আশে পাশে তাকিয়ে স্কার্ট উচু করে বাড়ির ভেতর ঢুকলো।রানি কেক সামনে নিয়ে সোফায় বসে আছে। সাদা বার্বি গাউনে তাকে দেখতে প্রিন্সেসের মতো লাগছে। চারু গিয়ে জড়িয়ে ধরলো রানিকে। একে একে বাড়ির গিন্নীরাও রানির পাশে ভিড় জমালো। সাজেদা বেগম রানির থুতনিতে হাত ছুয়ে চুমু খেলেন। সবাই ই রানির মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করলেন। রনি রানির কোলে চেপে বসে আবদার করলো কেক খাওয়ার। রানি তাকে এটা সেটা বলে থামানোর চেষ্টা করছে।
চারু এদিক ওদিক তাকিয়ে রবিনকে খুঁজলো।কোথাও নেই রবিন। সারাকেও তো কোথাও দেখা যাচ্ছে না। এই মেয়ে কি এখন তার রবিন ভাইয়ের সাথে চিপকে আছে নাকি কে জানে? চারু স্কার্ট উঁচু করে ধরে দুতলায় এলো। তখনি সাজগোজ করে বের হয়ে এলো সারা।চারুকে দেখে হেসে বলল-
“বাহ চারু খুব সুন্দর করে সেজেছো তো। কে সাজিয়েছে তোমাকে?”
“আমি নিজেই সাজছি।”
“খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে। চল নিচে যাই এক্ষনি কেক কাটা হবে।”
চারু রবিনের দরজার দিকে তাকালো।এখনো আসছে না কেন রবিন? সারা চারুকে ধরে নিচে নামতে লাগলো।তখনি রবিন নেমে এলো ছাদের সিড়ি থেকে।তার হাতে একটা টকটকে গোলাপ। সাদা পাঞ্জাবি পাজামায় তাকে বেশ সুদর্শন লাগছে । সে দ্রুতবেগে চারু আর সারাকে পাশ কাটিয়ে গেলো। সারা রবিনকে দেখে চারুকে ছেড়ে দিয়ে রবিনের পিছু পিছু নেমে গেলো। চারুর সর্বাঙ্গ জ্বলে গেলো সারার ন্যাকামি দেখে। সে আস্তে আস্তে নেমে আসলো।
সারা রবিনকে ডেকে দাঁড় করালো।রবিন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।সারা রবিনের হাতের দিকে ইশারা করে বলল-
“ফুল টা সুন্দর। তোমার বাগানের বুঝি? এইটা আমার ড্রেসের সাথে খুব ভাল মানাবে। আমার চুলে গেঁথে দাও না?”
রবিন কি বলবে বুঝে পেলো না তার দৃষ্টি গেলো চারুর দিকে। চারু সিড়ির রেলিং ধরে থমথমে মুখে এদিকেই তাকিয়ে আছে। রবিন সারাকে বুঝানোর সুরে বললো-
“এইটা তোর লাইগা না। ছাদে গিয়া অন্য ফুল নিয়া আয়।”
সারা রবিনের কথার পাত্তা দিলো না। রবিনের হাত থেকে ফুল টা ছো মেরে নিয়ে বলল-
“অন্য ফুল না, আমার এটাই লাগবে।”
চারু দূর থেকে দেখলো সবটাই, সে সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে চলে আসলো সেখান থেকে। রবিন পাশের পিলারে সাজানো ফুলগুলো থেকে সেম দেখতে একটা গোলাপ ছিড়ে নিয়ে সারার হাতে ধরিয়ে দিলো।তারপর অন্য ফুল টা সারার হাত থেকে নিয়ে বলল-
“এই ধর সেম ফুল। এইটা নিয়া চুল দে।”
বলেই আশেপাশে তাকিয়ে চারুকে খুজতে খুজতে অন্য দিকে চলে গেলো।সারার মন টা কিছুটা খারাপ হয়ে গেলো কিন্তু সে পাত্তা দিলো না।রবিনের দেয়া অন্য ফুলটাই সে চুলে গুঁযে নিলো। শত হোক রবিনের ছিড়ে দেয়া ফুল ই তো।সে তার মায়ের কাছে যাবে এখন। রবিনের জীবনের সমস্ত ফুলের একচ্ছত্র মালিক হওয়ার জন্য সে যা প্রয়োজন সব করবে।
রানি বেশ আনন্দেই আছে। গেস্ট রা এসে তাকে গিফট দিচ্ছে,দোয়া করছে। সে বেশ হাসিখুশি হয়ে বসে আছে।আচমকাই এক বোরকা পড়া বড়সড় মহিলা এসে ওর পাশে বসে পড়লো। সে চমকে গিয়ে তাকালো।মহিলার বসার জোরে পুরো সোফা নড়ে গেলো যেন। বোরকা পড়া সেই মহিলা আস্তে আস্তে তার মুখ টা রানির কানের কাছে নিয়ে এলো।মিন মিন করে বলল-
“মহারানি, আমি তোমার তুহিন।”
রানি বিস্ফোরিত চোখে তাকালো। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো কেউ আছে কিনা। তুহিন একটা বক্স রানির হাতে দিয়ে বলল-
“এই নাও,তোমার লাইগা স্পেশাল গিফট।”
স্পেশাল গিফটের কথা শুনেই রানির ওইদিন স্পেশাল গিফট হিসেবে প্র*স্রাব ছুড়ে দেয়ার কথা মনে পড়ে গেলো। রানি ভয়ার্ত কন্ঠে অনুরোধ করে বলল-
“আল্লাহর দোহাই লাগে তুহিন ভাই,আজকে আমার জন্মদিন।এমন স্পেশাল গিফট আমার চাই না।”
তুহিন ব্যস্ত হয়ে বলল-
“আল্লাহর কসম রানি এইটা অন্যরকম স্পেশাল গিফট। বিশ্বাস না হয় খুইল্লা দেখো।”
রানি ভয়ে ভয়ে র্যাপিং পেপার ছিড়ে বক্সটা খুললো।ভিতরে এক জোড়া খুব সুন্দর রূপার নুপুর। রানির মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেলো। তার খুব পছন্দ হয়েছে। তুহিন কানের কাছে মুখ এনে বলল-
“বিয়ের পর এই নুপুর পইড়া শব্দ তুইলা তুমি হাঁটবা আর আমার বুকে ঝড় উঠব।তারপর সেই ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হইবা তুমি।”
বলেই তুহিন উঠে চলে গেলো। রানি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। কানের কাছে এখনো তুহিনের কথা গুলো বাজছে।
______
চারু মন খারাপ করে ডায়নিং এ আসলো। রবিন ভাইয়ের সাথে সারার এত আদিখ্যেতা কেন? রবিন ভাইও ত এসবে সাড়া দিচ্ছে। চারু ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে ঢকঢক করে খেলো। বোতল রেখে চলে যেতে নিবে তখনি রান্নাঘর থেকে ফাতেমা বেগম আর রুবিনা বেগমের কন্ঠ শুনতে পেলো। তারা রবিন আর সারাকে নিয়ে কথা বলছে। চারু এগিয়ে গিয়ে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়ালো। ফাতেমা বেগম রবিনের সাথে সারার বিয়ে নিয়ে কথা বলছেন,রুবিনা বেগম ও সায় দিয়ে বললেন-
“বাড়ির কর্তার যদি মত থাকে তেইলে আমার আর কি বলার আছে।”
ফাতেমা বেগম ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন-
“রবিনের মত আছে কিনা জিজ্ঞেস করো ভাবি।”
“রবিনের মত অবশ্যই থাকব।সে কি আর সারারে আজকে থাইকা চিনে নাকি।”
ফাতেমা বেগম খুশি হয়ে বললেন –
“ঢাকা থাকাকালীন সময়ে সারার সব বিষয়েই রবিন অনেক খেয়াল রাখে। এইবারে গুলি লাগার পর সারাই তো ওর সবচেয়ে কাছে কাছে থাকছে।রবিন ও সারার কাছাকাছি থাকা নিয়া আপত্তি করে নাই।”
চারু আর শুনলো না। সে আস্তে করে সরে এলো সেখান থেকে। রবিন যদি সারাকেই চায় তাহলে তার সাথে এসব আচরন করলো কেন? চারুর মনের কথা বলার পর সরাসরি না করে দিলেই তো পারতো। ফারহানা কোথা এসে চারুকে টেনে বসার ঘরে নিয়ে এলো।এখন কেক কাটা হবে। আস্তে আস্তে সবাই এসে জড়ো হলো। রবিন এসে দাঁড়ালো একপাশে।সারা সাথে সাথে রবিনের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।চারু তাকিয়ে দেখলো রবিনের হাতে ফুল টা আর নেই। চারুর চোখ গেলো সারার চুলে। সেখানে তখন রবিনের হাতে থাকা ফুল টা সুন্দর করে গুঁজে দেয়া। চারু চোখ সরিয়ে নিলো।
রবিন স্থির চোখে চারুর দিকে তাকিয়ে আছে। চারুর গোমড়া মুখ দেখে মনে মনে হাসলো।চারুর যে কি নিয়ে এত রাগ হয়েছে সে বেশ বুঝতে পারলো। সে চারুর সেই গোমড়া মুখেই তাকিয়ে রইলো। কেক কাটা হলো। রানি একে একে সবাইকেই কেক খাইয়ে দিলো। চারুর গোমড়া মুখ দেখে রানি চারুকে হালকা ধাক্কা মেরে বললো-
“তোর সমস্যা কি? মুখ এমন কইরা রাখছস কেন? আমার ভাইরে তো আজ সেই হ্যান্ডসাম লাগতাছে।তোর মুখের এই ডিজাইন থাকলে তো তোরে পছন্দ করব না।”
চারু কিছু বললো না।সে ওইখান থেকে উঠে চলে আসলো।এক কোণায় দাঁড়িয়ে রইলো।পিছন থেকে চুলে টান পড়ায় পিছন ফিরলো। রবিন দাঁড়িয়ে আছে। চারু সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। রবিন আরেকটু এগিয়ে পিছনে দাঁড়িয়ে চারুর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো-
“কিশোরি মেয়েদের মনে সামান্য কারণে মেঘ জমে যায়।একটু ছুয়ে দিলেই যেন বৃষ্টি নেমে যাবে।”
তারপর থেমে আবারো বলল-
“তোর মনের মেঘ ছুয়ে দেই? একটু বৃষ্টি নামুক? অনেকদিন গাল ছুয়ে ঝরে পড়া বৃষ্টি দেখিনা।”
চারু রাগী চোখে পিছন ফিরলো। কিছু বলতে যাবে তখনি সারার গলার স্বর শুনলো।সারা পিছন থেকে ডাকলো-
“রবিন ভাই শুনো।”
চারু সাথে সাথে সেখান থেকে চলে গেলো।রবিন বিরক্তি নিয়ে মুখে “চ” জাতীয় শব্দ করে পিছন ফিরে সারার দিকে তাকালো। সারা এগিয়ে এসে বলল-
“তোমাকে সেই কখন থেকে খুঁজছি। তুমি তো পায়েস না খেয়ে চলে এসেছো।আমি তোমার জন্য পায়েস নিয়ে এসেছি।আর চারুর হয়েছে কি? ওর কি মন খারাপ।”
রবিন কোনো উত্তর করলো না।রবিনের ফোনে একটা কল আসলো। সে সারার সাথে কোনো কথা না বলে ফোন ধরে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেলো।
চারু এসে বসলো রানির পাশে। সারাও এসে সেখানে বসলো।রানিকে উদ্দেশ্য করে বলল-
“তোর ভাইটা যে কি না!পায়েস না খেয়ে চলে গেলো।আমার কথার ও কোনো জবাব দিলো না। আর কয়টা দিন পর তোর ভাইকে আঁচলে এমন করে বাঁধব যে আর ছুটতে পারবে না।”
রানি চারুর দিকে আড় চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো-
“আঁচলে বাঁধবা মানে?”
সারা মৃদু হেসে বলল-
“সেইটা পরে বুঝবি এখন বলব না।”
চারু উঠে গেলো সেখান থেকে। দুম দুম করে হেঁটে দুতলায় সোজা রবিনের ঘরের সামনে এলো।ধড়াম করে দরজা খুলে সে রবিনের ঘরে ঢুকলো।রবিন চিন্তিত মুখে বসে ছিলো চারুকে দেখে মুখ তুলে চাইলো।
চারু যেন রাগে ফেটে পড়ছে। সে চাপা চিৎকার করে বলল-
” আমার প্রতি কি তোমার অনুভূতি আছে নাকি সবটাই মিথ্যা?”
রবিন ভ্রু কুচকে তাকালো। বললো-
“এইসময় এইসব কি ধরনের কথাবার্তা? ”
চারু রাগে ফেটে পড়লো।বললো –
“তুমি সারা আপুরে বিয়ে করতে চাও তাই না? তাইলে আমার সাথে এরকম কথাবার্তা বলো কেন?”
রবিন ধমকে উঠল-
“চারু, এসব কি কস তুই? বাড়ি ভর্তি লোকজন। তুই কি লজ্জা শরম সব বিসর্জন দিছস। ”
“থাকুক লোকজন। তুমি আগে বলো তুমি কারে ভালোবাসো?”
চলবে