#প্রেম_প্রার্থনা
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৪৯
তালুকদার বাড়ির উৎসবমুখর পরিবেশ বিষাদময় পরিবেশে রূপান্তর হয়েছে। চারুর নিরুদ্দেশ হওয়ার খবর এতক্ষনে সবাই জেনে গিয়েছে। গ্রামের কিছু মানুষও এই কথা শুনে বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। রাত বলে হয়ত কথা তেমন ছড়াতে পারে নি কিন্তু যতটা সম্ভব ছড়িয়ে গিয়েছে। প্রথমে কথা ছড়িয়েছিল তালুকদার বাড়ির মেয়েকে বিয়ের দিন তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু পরে দেখা গেলো তালুকদার বাড়ির মেয়ে বাড়িতেই আছে।আস্তে আস্তে খোঁজ পড়লো চারুর।তখন সবাই বুঝতে পারলো তালুকদার বাড়ির মেয়ের পরিবর্তে সৈয়দ বাড়ির মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঘটনার এমন প্যাঁচের জন্য সবাই কৌতূহলী হয়ে ভীড় জমাচ্ছে তালুকদার বাড়ির সামনে।
তালুকদার বাড়ির ভেতরে যেন ঝড় বয়ে গেছে।এমন আনন্দময় উৎসবে যেন কেউ বিষ ঢেলে দিয়েছে। রাজিয়া বেগম ফ্লোরে বসে কান্না করছেন তাকে আগলে রেখেছেন সাজেদা বেগম। রুবিনা বেগম ফোন করছেন স্বামীর নাম্বারে,ভাইদের নাম্বারে কিন্তু কেউই ফোন তুলছে না। চারুর কিডন্যাপের সময় পুরুষরা সবাই বাড়ির ভিতরেই এক জায়গায় বসে চা খাচ্ছিলেন। তখন একটা ছেলে এসে শাখাওয়াত তালুকদারকে জানালো সে চায়ের দোকানে শুনে এসেছে যে তালুকদার বাড়ির মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শাখাওয়াত তালুকদার জানালা দিয়ে বাগানে স্টেজে বসা মেয়েকে এক নজর দেখলেন।এই ধরনের গুজবে তিনি বড্ড বিরক্ত হয়েছিলেন। আস্তে আস্তে আরো কয়েকজন এসেও একই কথা জানালো। শাখাওয়াত তালুকদার সবাইকেই ধমক দিয়েছিলেন।কিন্তু বিপত্তিটা বাঁধলো যখন চারুকে কোথাও খুঁযে পাওয়া গেলো না। রানির কানে এই কথার আভাস যেতেই ওর চোখ মুখ ভয়ে ছেয়ে গেলো।সে তো চারুকে বাড়ির পিছনে রেখেই চলে এসেছিলো। এখানে এসে সবার মাঝে আর চারুর কথা তার মনে ছিলো না। শেষ পর্যন্ত চারুকে খুজে না পেয়ে রানিকে জিজ্ঞেস করা হলে রানি স্বীকার করলো বাড়ির পিছনে যাওয়ার কথা। মুহুর্তেই এই কথা জানানো হলো বাড়ির পুরুষদের। সবাই ছুটে গিয়েছিলো বাড়ির পিছনে। সেখানে চারুকে পাওয়া না গেলেও মাটিতে গাড়ির চাকার দাগ স্পষ্ট। আর ধস্তাধস্তিতে চারুর চুল থেকে পড়ে যাওয়া ফুলের পাপড়ি দেখে সবাই বুঝতে পারলো কি ঘটেছে।তখন ই বাড়ির পুরুষরা বেরিয়ে পড়েছিলো চারুকে খুজতে।
রানি এক জায়গায় অপরাধী মুখ করে বসে আছে। তার গায়ে হলুদের সাজ এখনো খোলা হয় নি। এই সাজগোজ তার কাছে বিষাক্ত লাগছে। আজ তার জন্য চারুর এই অবস্থা।সে যদি বাড়ির পিছনে যাওয়ার জেদ না করতো তাহলে এটা হত না।তাকে নিতে এসে চারুকে নিয়ে গেছে।কি করছে চারু, কেমন আছে,ওকে তুলে নিয়ে কি করেছে এসব ভেবে রানির খুব কান্না পেলো। পুরো বাড়িতে এক চাপা নিস্তব্ধতা। শুধু রাজিয়া বেগমের কান্নার সুর ভেসে আসছে।সাজেদা বেগম শক্ত থাকতে চেয়েও পারছেননা।কিন্তু এই মুহুর্তে তিনি শক্ত না থাকলে রাজিয়া বেগম আরো ভেংগে পড়বে।
বাড়ির সামনে বাইকের হর্ন শোনা গেলো। রবিন গেট দিয়ে ঢুকলো চারুকে নিয়ে। গেটের ভিতর এত মানুষের আনাগোনা দেখে তার কপাল কুচকে গেলো।বুঝতে পারলো কথা ছড়িয়ে গেছে। কথা যাতে না ছড়ায় এই জন্য ই সে চুপচাপ চারুকে খুজতে বেরিয়েছিলো।কারন সে গ্রামের ছেলে হয়ে জানে কথা ছড়ালে গ্রামের মানুষ তিলকে তাল করবে। রবিন আর চারুর দিকে সবাই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।দুএকজন চাপাস্বরে কথা বলতে লাগলো। রবিন শক্ত করে চারুর হাত ধরে রাখলো।সবার চাহনি অগ্রাহ্য করে চারুকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো।রবিন ঘরে ঢুকে যেতেই গুনগুন শব্দ উঠলো ভীড়ের মাঝে।
বসার ঘরে চারুকে নিয়ে ঢুকতেই সবার নজর ঘুরে এলো তাদের দিকে। রবিনের সাথে বিধ্বস্ত চারুকে দেখে সবার জানে যেন পানি এলো।রানি উঠে দাঁড়িয়ে গেলো।রাজিয়া বেগম ছুটে এসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন।হাউমাউ করে কেঁদে দিলেন। মায়ের কান্নায় তাল মিলালো চারুও।আস্তে আস্তে সবাই এগিয়ে এসে একসাথে চারুর পাশে ভীড় করলো।রবিন ক্লান্ত ভংগিতে সোফায় বসে পড়লো।রানিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ক্লান্ত গলায় বলল-
“একটু পানি দিবি?”
ভাইয়ের অনুরোধ শুনে রানি দৌড়ে গেলো ডায়নিং এ। গ্লাস ভর্তি পানি এনে রবিনের সামনে ধরলো।রবিন ঢকঢক করে পুরোটা পানি শেষ করলো।রানি গ্লাস হাতে নিয়ে টেবিলের উপর রাখলো। সে চারুর কাছে যাবে কিনা বুঝতে পারছে না।বড্ড অপরাধী লাগছে তার নিজেকে।সে একটু আগে মহিলাদের চারুকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলতে শুনেছে।এমনকি পুরো গ্রামেও চারুর সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ রটনা হতে আর দেরি নেই। রানি বুকের ভেতর ভার ভার অনুভব করলো।শুধুমাত্র তার ছেলেমানুষীর জন্য চারুর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে না তো? তার নজর পড়লো রবিনের দিকে। দুই হাঁটুর উপর দুই হাত রেখে মাথা নিচের দিকে ঝুঁকিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। রানি মনের মাঝে কিছুটা জোর অনুভব করলো।সে জানে চারুর জন্য রবিন আছে।যাই হয়ে যাক না কেন রবিন চারুর গায়ে আচড় লাগতে দিবে না।
চারুকে ধরে এনে সোফায় বসানো হলো। পানি খাওয়ানো হলো। কিছুটা ধাতস্ত হলো চারু।রাজিয়া বেগম মেয়েকে ছাড়লেন না এক দন্ডও। তিনি এখন থেকে আর কখনো মেয়েকে একা ছাড়বেন না। এই এতটুকু বয়সে মেয়েটা দুটো বড় বড় বিপদের মধ্য দিয়ে গেলো।তিনি আর তার মেয়েকে বাড়ির চৌকাঠ ই পেরোতে দিবেন না। স্মৃতি আর ফারহানাও চারুকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকলো। তাদের ছোট বোনের সাথে এমন ঘটনা ঘটে যাবে তারা স্বপ্নেও ভাবে নি।দুজনেই চারুকে কাছ ছাড়া করলো না। রানি আগের মতোই দূরে দাঁড়িয়ে থাকলো।চারু একবার চোখ তুলে রানির দিকে তাকালো।দুজনেরই চোখাচোখি হলো।চারু দূর্বল ভংগিতে হাসলো। ভ্রু নাচিয়ে দুষ্টু ইশারা করলো।রানি ঠোঁট ভেঙ্গে কেঁদে দিলো।ছুটে গিয়ে চারুর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে চারুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।
এইসময় ঘামে ভিজে বসার ঘরে ঢুকলেন কামরুজ্জামান।এদিক ওদিক উদ্ভ্রান্তের মতো তাকিয়ে চারুকে খুজতে লাগলেন।একসময় পেয়ে গেলেন মেয়েকে। চারুকে সুস্থ অবস্থায় বসে থাকতে দেখে এতক্ষন আটকে থাকা দমটা ফেললেন। টলতে টলতে রবিনের পাশে সোফায় বসে পড়লেন। সোফায় হেলান দিয়ে বুকে হাত দিয়ে বসে থাকলেন।চারুর কিডন্যাপের খবর পেয়ে তিনি যেখানে যাওয়ার দরকার সেখানেই গিয়েছেন।সব জায়গায় খুজেছেন।গাড়ির চাকার দাগ অনুসরণ করে অনেক দূর পর্যন্ত গিয়েও হদিস পান নি মেয়ের। প্রথমে মেয়ের সম্মানহানির ভয় পেলেও পরে শুধু মেয়ের জান ভিক্ষা চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। এক অসহায় পিতা মেয়েকে ফিরে পেতে এর চেয়ে বেশি কিইবা করতে পারে। একটু আগেই খবর পেয়েছেন রবিন চারুকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে। তৎক্ষনাৎ রওয়ানা দিয়েছেন সৈয়দ বাড়ির উদ্দেশ্যে।
রবিন পাশে বসা তার মেজ মামার দিকে তাকালো।বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছেন।চোখের কোন ভিজা।ঠোঁট চেপে ধরে আছেন হয়ত কান্না আটকানোর আপ্রান চেষ্টা।আজ এক দিনেই কন্যার শোকে উনার বয়স বেড়ে গেছে।রবিন মুখ ফিরিয়ে চারুর দিকে তাকালো। চারুকে ঘিরে বসে আছে সবাই। সবাই চারুকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে। চারু মৃদু স্বরে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছে। আশেপাশের কিছু মহিলার কানাঘুষা কানে এলো রবিনের।চারুর ব্যাপারে নোংরা আলোচনা শুনে তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।ঘাড় বাকিয়ে চোখের কোনা দিয়ে মহিলা গুলোর দিকে তাকাতেই ফিসফিসানি বন্ধ হয়ে গেলো।কিন্তু একেবারে বন্ধ হয়ে গেলো না।আবারো শুরু হলো।রবিন পাশ ফিরে তাকাতেই কামরুজ্জামানের সাথে চোখাচোখি হলো।উনিও নিজের মেয়ের সম্পর্কে কানাকানিগুলো শুনেছেন। রবিন তার দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।কামরুজ্জামান ভাবলেশহীন কন্ঠে বললেন-
“আমার মেয়েটারে কি অবস্থায় পাইছো?”
রবিন সোজা হয়ে বসলো।একজন বাবা কতটুকু কষ্ট পেলে এই ধরনের প্রশ্ন করতে পারে তার জানা নেই।রবিন উত্তর করলো-
“চারুর কোনো ক্ষতি হয় নাই মামা।ওরে সুস্থ অবস্থায়ই আমি বাড়ি ফিরায় আনছি। কারো হাত লাগে নাই ওর গায়ে।”
কামরুজ্জামান তারপরেও বিষাদময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।তিনি বুঝে গেছেন আজকের পর থেকে তার মেয়ের জীবন পালটে যাবে। মেয়ের নামে জায়গায় জায়গায় অপবাদ রটানো হবে। তিনি নিজেকে শক্ত করলেন।তিনি কিছুতেই তার ফুলের মতো মেয়েকে এসব কষ্টের ভিতর দিয়ে যেতে দিবেন না।দরকার পড়লে এই গ্রাম ছেড়ে দিবেন তিনি।
শাহজাহান আলী ছোট ভাই মোস্তফা কামালকে নিয়ে বসার ঘরে ঢুকলেন।তার পিছনে ঢুকলো শাখাওয়াত তালুকদার। সবাই ই চোখ ঘুরিয়ে চারুকে খুজলেন।চারুকে সুস্থভাবে বসে থাকতে দেখে আশ্বস্ত হলেন সবাই। শাহজাহান আলী এগিয়ে এসে চারুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। তাঁর চোখ ছলছল করে উঠলো ভাতিজিকে এইভাবে দেখে। চারু তার বড়বাবার দিকে তাকালো।পরপর তাকালো তার বিষন্ন বাবার দিকে। স্নেহের পরশ পেয়ে চারুর চোখ গড়িয়ে পানি পড়লো।মোস্তফা কামাল এগিয়ে এসে চারুর দিকে তাকিয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বললো-
“তুই কোনো চিন্তা করিস না মা। একটারেও আমি ছাড় দিতাম না। সবাইরে পুলিশে দিবাম।আমার ভাতিজির সাথে এমন করার শাস্তি ওদের পাইতে হইব।”
শাহজাহান আলী বিরক্ত হলেন।কোন জায়গায় কি বলতে হয় এটা তার ছোট ভাই বুঝে না ৷ যেই মেয়ে একটু আগে একটা বিপদ থেকে উদ্ধার হয়েছে তার সামনেই এমন কথাবার্তা বলে মানসিক পীড়া বাড়ানোর মানেই হয় না।শাহজাহান আলী ছোট ভাইকে ধমকে থামিয়ে দিতে উদ্ধত হলেন। কিন্তু তার আগেই শাখাওয়াত তালুকদার মোস্তফা কামালের কথার রেশ টেনে বললেন-
“না না,একজনরেও ছাড় দেওন যাইব না।কঠিন শাস্তি হইব।আমার পরিবারের মেয়ের সম্মানে হাত আমি মাইনা নিতাম না।চারুর জীবনের সংশয় হইব সে ভয়ে পুলিশ জানাইছি না। এখন যেহেতু চারু বাড়ি ফিইরা আইছে তাইলে আর কোনো সমস্যা নাই।রবিন পুলিশরে খবর দে।”
রবিন তার বাবার কথায় ছোট একটা শ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো। তাদের অতিরিক্ত উত্তেজনা এখনি থামাতে হবে।রবিন তার বাবার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বলল-
“পুলিশ কেস করা ঠিক হইব না।এতে আরো কথা ছড়াইব। একেক জন একেক রকম অপবাদ দিব চারুরে।এর চেয়ে যা হইছে আমরাই ধামাচাপা দিয়া দেই।”
শাখাওয়াত তালুকদার ছেলের কথায় বিস্মিত হলেন। যেই ছেলে অন্যায় দেখলে মেজাজ হারিয়ে বসে সেই ছেলে এত শান্তভাবে উপদেশ দিচ্ছে।তাও আবার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার। তিনি রাগী কন্ঠে বললেন-
“এইসব কি কস তুই?দোষীদের শাস্তি না দিয়া এমনি এমনি ছাইড়া দেওন যাইত না।”
“দোষীদের শাস্তি দিতাম না এমন কিছু বলি নাই আমি।দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা আমি করছি। পুলিশের হাতে তুইলা দিলে উপযুক্ত শাস্তি ওরা পাবে না। আমি ওদের জন্য অন্যরকম ব্যবস্থা কইরা রাখছি।”
শাখাওয়াত তালুকদার ছেলের শান্ত চোখের দিকে তাকালেন। ছেলের চোখের ভাষা আর মুখের ভাষা দুইই বুঝলেন। এই ছেলে হয়েছে তার মররহুম বাবার মতো।একদম খু*নি প্রকৃতির। তার বাবাও এমন ছিলেন। কোনো ভয়ডর ছিলোনা মনে। এসবের মাঝে হঠাৎ করে বসার ঘরের মানুষের মাঝখান থেকে একটা মহিলা কন্ঠস্বর ভেসে এলো-
“এখন এই ছেড়িরে বিয়া করব কেডা? সৈয়দ বংশের মেয়ে বইলা তো কেউ আর নিরুদ্দেশ হওয়া ছেড়িরে বিয়া করতো না।”
কামরুজ্জামান মুখ বাড়িয়ে ভীড়ের দিকে চাইলেন।কে কথাটা বলেছে খোজার চেষ্টা করলেন। তিনি এই ভয়টাই পাচ্ছিলেন। তিনি চোখ সরিয়ে চারুর দিকে তাকালেন।চারু অবাক হওয়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।হয়ত বুঝার চেষ্টা করছে কিডন্যাপ হওয়ায় তার দোষটা কোথায়।
এমন কথা শুনে শাহজাহান আলী হুংকার ছেড়ে বললেন-
“ওর বিয়া নিয়া আপনাদের ভাবতে হইব না।এইনে আমার বাড়ির মেয়ের কোনো দোষ নাই। আমার বাড়ির মেয়ে বরাবরের মতোই সম্মান নিয়া থাকব।”
ভীড়ের মধ্যে গুঞ্জন উঠলো।পুরুষ কন্ঠে কে জানি বলে উঠলো-
“এক রাইত পরপুরুষের সাথে বাইরে থাকা মেয়ের সম্মান আবার কি!! এই মেয়ের নিশ্চয়ই কোনো প্রেম পিরিতি আছে। প্রেমিকের সাথে পালায় গিয়া এখন ধরা খাইয়া দোষ দিছে কিডন্যাপের।এই মেয়ের চরিত্রে সমস্যা আছে।”
এমন কথা শুনে রবিন গর্জন করে উঠলো।রিভলবার বের করে ভীড়ের দিকে তাক করে বলল-
“কোন কুত্তা*র বাচ্চা এই কথা কইছস।সামনে আইসা ক।”
শাহজাহান আলী তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে ভাগ্নের হাত ধরলেন।রবিন মেজাজ হারিয়ে কিছু করে ফেললে আরেকটা ঝামেলায় পড়তে হবে এম্নিতেই ঝামেলার শেষ নেই। তিনি ভীড়ের দিকে তাকিয়ে বললেন-
“আপনারা এখন যান।কাল তালুকদার বাড়ির মেয়ের বিয়ে ঠিক সময়ে আইসা দাওয়াত খাইয়া যাইবেন।”
সামনে দাঁড়ানো এক বৃদ্ধা টিপ্পনী কেটে বললো –
“তালুকদার বাড়ির ছেড়ির বিয়া দিয়া আপনে কি করবেন!নিজের বাড়ির ছেড়ির বিয়া দিতে পারেন কিনা দেখেন”
চারু স্তব্ধ হয়ে এসব কথা শুনে যাচ্ছে। এমন হবে জানলে সে সেখানেই থেকে যেত।কিডনাপারদের বলতো তাকে জানে মেরে দিতে। তাহলে তার একবার মরন হত কিন্তু এখন তো তার বারবার মরন হচ্ছে। চরিত্রের উপর আঙুল উঠানোর যে কি কষ্ট এইটা একটা মেয়ে ছাড়া কেউ জানে না।
রবিন লম্বা করে একটা শ্বাস টানলো। সবার দিকে এক নজর চোখ ঘুরিয়ে আনলো।চারুর বিমর্ষ মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো।তারপর ভীড়ের দিকে তাকিয়ে বলল-
“চারুরে আমি নিজে উদ্ধার করছি।আমি জানি চারু কতটা পবিত্র।আমি বিয়ে করবাম চারুরে।কাল রানি আর তুহিনের সাথে আমার আর চারুরও বিয়ে হইব।
চলবে