#প্রেম_প্রার্থনা
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-২২
চারু গেট খুলে উঠোন পেরিয়ে বারান্দায় উঠলো। বাড়িতে কেমন যেন একটা উৎসব উৎসব ভাব টের পেলো। সিড়ির দিকে যাওয়ার সময় বসার ঘরের সামনে এসে থেমে গেলো। তার মা চাচীরা বসে আছে। পান চিবুচ্ছে আর হেসে হেসে কথা বলছে। সাজেদা বেগম আর রাজিয়া বেগমের মুখে যেন হাসি ধরছেই না। চারু ভ্রু কুচকে সিড়ির দিকে এগিয়ে চললো। দু তলায় নিজের ঘরের দরজা খুলে অবাক হয়ে গেলো। তার বিছানায় একটা মেয়ে শুয়ে আছে। চেনা চেনা লাগছে। চারু চিনতে পারলো। “আপু” বলে একটা চিৎকার দিলো।
স্মৃতি দুপুরের খাবার খেয়ে একটু শুয়েছিলো চারুর চিৎকার শুনে চমকে গিয়ে উঠে বসলো। চারু ব্যাগ ফেলে রেখে দৌড়ে গিয়ে স্মৃতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। স্মৃতি বিছানায় হাত রেখে ভর দিয়ে টাল সামলালো। চারু জড়িয়ে ধরে থামলো না বিভিন্ন অভিযোগ করলো। অভিমান করে বলল-
“তুমি একটাবারো আমার কথা মনে করো না তাই না? কোনো দিন একটা কল ও দিছো না। আমি হইলে কোনো দিন এরকম করতে পারতাম না।”
স্মৃতি হেসে দিয়ে বলল-
“আরে আগে আমারে ছাড়। দম আটকে আসতাছে তো। মাইরা ফেলবি নাকি।”
চারু ছেড়ে দিলো স্মৃতিকে। স্মৃতির পাশে বিছানায় মুখ ভার করে অন্য দিকে ফিরে বসলো। স্মৃতি বোনের অভিমান বুঝলো।সে খাট থেকে নেমে ব্যাগ ঘেটে একটা মাঝারি সাইজের বক্স বের করে আনলো। চারুর সামনে বাড়িয়ে দিলো বক্স টা। চারু আড়চোখে বক্স টা একবার পরখ করে অন্য দিকে তাকিয়ে বলল-
“আমার কিছু লাগবে না। খবর ই নাও না, এখন এইসব দিয়া কি হইব!!”
“আগে খুলে তো দেখ। পছন্দ না হইলে ফালায় দিস।”
চারু হাত বাড়িয়ে বক্স টা নিলো। উপহার উপেক্ষা করার মতো সাহস তার নেই। বক্সটা খুলে তার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেলো। স্মৃতির দিকে তাকিয়ে হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলল-
“এইগুলা সব আমার?”
স্মৃতি চারুর পাশে বসে কাঁধে হাত রেখে বলল-
“হুম সব তোর। যখন মন চায় ব্যবহার করবি। তোর পছন্দের সব জিনিস এইখানে আছে।”
চারু উল্টেপাল্টে দেখতে লাগলো জিনিসগুলো। অনেক সাজগোজের জিনিস – মেকাপ আইটেম থেকে শুরু করে অর্নামেন্টস সব আছে। চারুর মন টা লাফিয়ে উঠলো। বক্সটাও তার ভীষন পছন্দ হয়েছে। স্মৃতি জিজ্ঞেস করল-
“পছন্দ হয়েছে?”
“অনেক অনেক পছন্দ হইছে আপু। ”
তারপর বক্সটা পাশে রেখে স্মৃতির দিকে ঘুরলো। স্মৃতির হাত ধরে বলল-
“তুমি যে আসবা কেউ তো বলল না আমারে।”
“কাওরে না জানায়া আসছি। গতকাল যখন শুনলাম তোদের উপর হামলা হইছে তুই আর রবিন ভাই হারায় গেছিলি তখন আর থাকতে পারি নাই। চইলা আসলাম।”
“তুমি একা আসছো কেন? গ্রামের অবস্থা তো ভাল না যদি কোনো বিপদ হইতো?”
“আমি একা আসি নাই ফরহাদ ভাই ও আসছে সাথে।”
চারুর আনন্দে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। জিজ্ঞেস করলো-
“ফরহাদ ভাইরেও নিয়া আসছো? আমি তো ভাবছিলাম ফরহাদ ভাই রাগ কইরা আর আসতোই না।”
“ফরহাদ ভাই তোরে খুজছিলো। ফ্রেশ হইয়া দেখা কইরা আসিস।”
“ফ্রেশ হইয়া না আমি এখনি যাইতাছি।”
বলেই চারু ফরহাদের ঘরের দিকে দৌড় দিলো। ফরহাদের ঘরের দরজা খোলাই ছিল। চারু দরজায় দাঁড়ালো। ভিতরে ফারহানা আর রনিও আছে। রনি বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে চকলেট খাচ্ছে। তার কোলভর্তি চকলেট। ফারহানা তার জন্য ফরহাদের আনা বইগুলো উলটে পালটে দেখছে। ফরহাদ লাগেজ থেকে জামাকাপড় বের করে আলমারিতে রাখছে।
রনি চকলেট খেতে খেতে দরজায় দাঁড়িয়ে চারুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। সে ডাকলো-
“তুমি ওইনে দাঁড়ায় আছো কেন চারুপু?”
রনির কথায় ফরহাদ আর ফারহানা দরজার দিকে তাকালো। ফরহাদ মুখে হাসি টেনে বলল-
“আরে চারু। স্কুল থেকে চলে আসছস? ঘরে আয়।”
চারু অভিমানী মুখ নিয়ে ঘরে ঢুকলো। ঢুকে বিছানার এক কোণ ঘেষে অন্য দিকে তাকিয়ে বসলো। ফরহাদ
চারুর হাব ভাব দেখে হাসলো। রনি খাওয়া থামিয়ে বলল-
“তোমার আবার কি হইলো চারুপু?”
চারু গোমড়া মুখে উত্তর করলো-
“কিছুনা।”
ফারহানা বই উল্টাতে উল্টাতে বলল-
“আমাদের চারুর অভিমান হইছে। তাই না চারু? ভাইয়া অভিমানী চারুর অভিমান ভাংগায়া দাও তো।”
ফরহাদ হেসে দিয়ে ব্যাগ থেকে একটা চকলেটের বক্স বের করলো।চারুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল-
“নে ধর।”
বেচারি চারু এবারো উপহার ফেলে দিতে পারলো না। সে মুখ বাঁকিয়ে বক্স টা নিলো। বক্স এর দিকে তাকিয়ে আনন্দে বলে উঠলো –
“ওয়াও!! এইটা তো আমার ফেবারিট চকলেট।”
ফরহাদ বলল-
“খেয়ে দেখ।”
চারু বক্স খুলে চকলেট মুখে পুরতে পুরতে বললো –
“তুমি আর আপু যুক্তি কইরা এসব নিয়া আইছো তাই না? যাতে কেউ তোমাদের উপর রাগ কইরা না থাকতে পারে। ”
” আগে বল তোর রাগ কি ভাংছে?”
চারু দুই পাশে মাথা নেড়ে বলল-
“না, আগে কও তোমরা আর কখনও এমন কইরা এতদিন বাড়ি ছাইড়া থাকবা না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
ফারহানা বই গুলো বন্ধ করলো। ফরহাদ তার জন্য অনেক গুলো গল্প উপন্যাসের বই এনেছে। সে আগামী কয়েকদিন এসব পড়ে কাটাবে। সে ফরহাদের দিকে তাকিয়ে বলল-
“তোমার আর স্মৃতি আপুর হোস্টেল কি কাছাকাছি ভাইয়া?”
“হুম, কাছাকাছি। ”
চারু জিজ্ঞেস করলো-
“যেতে কতটুক সময় লাগে?”
ফরহাদ উত্তর করলো-
“দশ মিনিটের মতো। ”
চারু বিজ্ঞের মাথা নেড়ে বলল-
“ওওওও এইজন্য ই আপু আর তুমি সবসময় একসাথে যাওয়া আসা করতা।”
চারু কি যেন একটা ভাবলো। ভেবে জিজ্ঞেস করল-
“আচ্ছা ভাইয়া, আব্বা তো আপুরে বকাবকি করছিলো তাইলে তুমি কেন রাগ কইরা বাইর হইয়া গেছিলা?”
ফারহানা উত্তর শোনার জন্য মনোযোগ দিয়ে তার ভাইয়ের দিকে তাকালো।ফরহাদ কাজ থামিয়ে চারুর পানে চাইলো। চারুর একপাশের বেনী ধরে টান দিয়ে বলল-
“স্কুল থাইকা আইসা এখনো জামা কাপড় ছাড়স নাই কেন? যা ঘরে যা, ফ্রেশ হইয়া খাইতে যা। রনি ফারহানা তোরাও যা। আমি এখন রেস্ট নিব।”
ফরহাদ এক প্রকার ঠেলে সবাইকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।চারু মাথা ডলতে ডলতে ফারহানাকে বললো –
“দেখসো, ভাইয়া প্রসংগটা এড়াইয়া গেলো তার মানে নিশ্চয়ই কিছু একটা আছে।”
“তা তো আছেই। ভাইয়াকে আর না জিজ্ঞেস কইরা স্মৃতি আপুরে জিজ্ঞেস করবাম পরে। এমন ভাবে ধরবাম যেন আপু উত্তর না দিয়া ছুটতে না পারে।”
চারু মাথা দুলিয়ে সায় জানালো। রনি হাতের আংগুলে লেগে থাকা চকলেট চাটতে চাটতে বললো –
“তোমাদের ধরাধরিতে আমারেও রাইখো। আমি একবারে ছাই দিয়া ধরবাম। ছুটার চান্স নাই।”
চারু আর রানি দুইজন রনির দুদিকের কান ধরে টান দিলো। রনি “আয়ায়ায়া” করে ছোট একটা চিৎকার দিলো।
_________
সন্ধ্যায় শাখাওয়াত তালুকদার গজ গজ করতে করতে বাড়িতে ঢুকলেন। ঢুকেই বসার ঘরের সোফায় ধপ করে বসে পড়লো।হাতের মোবাইল এক প্রকার ছুড়ে ফেললেন সাম্নের টেবিলে। ঠাস করে শব্দ হলো। শব্দ শুনে রুবিনা বেগম শোবার ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে দেখলেন তার স্বামী রেগে বোম হয়ে আছে। তিনি তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে গিয়ে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে বাড়িয়ে দিলেন স্বামীর দিকে। শাখাওয়াত তালুকদার পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটা শেষ করে ফেললেন। রুবিনা বেগম স্বামীর হাত থেকে গ্লাস নিয়ে টেবিলে রাখলেন তারপর বসলেন সাম্নের সোফায়। প্রশ্ন করলেন-
“কিছু হইছে নাকি?”
শাখাওয়াত তালুকদার যেন এই প্রশ্নের ই অপেক্ষায় ছিলেন। গর্জে উঠে বললেন-
“হইছে মানে? দুধ কলা দিয়া কালসাপ পুষছি এত দিন। কত বড় খোটা দিলো আমারে।”
রুবিনা আগামাথা কিছু বুঝলেন না। তিনি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালেন। জিজ্ঞেস করলেন-
“কিসের কালসাপ? কে খোটা দিলো তোমারে?”
“আছে একটা কালসাপ। আমারে মিষ্টি খাওয়ানোর খোটা দিলো, রাইন্ধা খাওয়ানোর খোটা দিলো। ভাবো একবার আমি কত বার তারে তোমার রান্না খাওয়াইছি। তুমি রান্না কইরা আমার লাইগা পাঠাইতা। অথচ আমি তারেও ভাগ দিতাম।আমি কি সেই খোটা দিছি?”
রুবিনা বেগম বুঝলেন কাকে নিয়ে কথা হচ্ছে। তিনি স্মিত হেসে বললেন-
“আমার রান্না তো তোমার কাছে সে ই পৌছায়া দিতো সেই হিসাবে তার তো একটা ভাগ থাকেই।”
শাখাওয়াত তালুকদার অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকালেন স্ত্রীর দিকে। তার স্ত্রী তার শত্রুর সাইডে কথা বলছে?
রুবিনা বেগম আবার বললেন-
“শুধু কি রান্না? তোমার ওই ১০০ টা বানান ভুলের চিঠিও তো সে ই আইসা আমার কাছে দিয়া যাইতো। তোমার তো সাহসে কুলাইত না। আমার সামনে আসলে হাঁটু কাঁপত।”
শাখাওয়াত তালুকদার অধিক বিস্ময়ে পাথর হয়ে গেলেন।তিনি খুব কষ্ট করে উচ্চারন করলেন-
“আমার হাঁটু কাঁপতো? আমার সাহস নাই? ”
“নাই ই তো। ভুইল্লা যাইয়ো না জামশেদ ভাই না থাকলে আমাদের বিয়ে এত সহজে হইতো না। তুমি তো তোমার বাপের সামনে আমার কথা তুলতে গেলেই তোতলাইতা।”
শাখাওয়াত তালুকদার এবার কঠিন মুখ করে বললেন-
“ভুইলা যাইয়ো না এই জামশেদ ই কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়ের উপর আক্রমন করাইছিলো।”
“তুমিও জানো আর আমিও জানি জামশেদ ভাই কাদের প্ররোচনায় এই পথে গেছে। খালি যদি তোমাদের বন্ধুত্বে ফাটল না ধরতো তাহলে এখন এত রেষারেষি হইতো না।”
শাখাওয়াত তালুকদার কিছু বললেন না। কঠিন মুখ করেই বসে রইলেন। রুবিনা বেগম একটা ছোট শ্বাস ফেলে উঠতে উঠতে বললেন-
“হাত মুখ ধুইয়া আসো। নাস্তা দিতাছি।”
শাখাওয়াত তালুকদারের তেমন ভাবাবেগ হল না। তিনি ঠায় বসে রইলেন। আসলেই কি তাদের বন্ধুত্বে ফাটল না ধরলে এসব কিছুই হতো না? শাখাওয়াত তালুকদার চোখ বন্ধ করে সোফায় হেলান দিয়ে বসে রইলেন।
___________
রাত ৮ টার উপরে বাজে। রানি ঘরে বসে বই খাতা নিয়ে অংক করছিলো। হঠাৎ মোবাইলে একটা মেসেজ আসলো। রানি হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা নিয়ে মেসেজটা ওপেন করলো।মেসেজ টা পড়তেই তার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। সেখানে লেখা-
“মহারানি, আমি আপনার বাড়ির পিছনে দাঁড়ায় আছি। দয়া করে দেখা দিয়ে এই প্রজাকে ধন্য করুন।”
রানি তাড়াতাড়ি উঠে জানালার পর্দা সরিয়ে বাড়ির পিছনে তাকালো। বাড়ির পিছন টা গাছপালায় ঘেরা। রানি ভালো করে তাকিয়ে দেখলো তুহিন একটা গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে মোবাইল টিপছে। তার পরনে টি শার্ট লুংগি গলায় আবার একটা গামছা ঝুলানো। হুট করে তুহিন মুখ তুলে রানির জানালায় তাকালো। রানি সাথে সাথে পর্দা নামিয়ে জানালা থেকে ছিটকে দূরে সরে গেলো। তার বুকের ভেতর কেমন জানি লাগছে। এক মিনিটের মাথায় মোবাইল বেজে উঠলো। মেসেজ এসেছে। রানি কাঁপা কাঁপা হাতে মেসেজ টা খুললো। সেখানে লিখা-
“মহারানি, জানালা দিয়ে উঁকি ঝুঁকি না মেরে সরাসরি সামনে এসে আমাকে দেখে যান।আমি মাইন্ড করব না।”
সাথে সাথে আরেকটা মেসেজ আসলো –
“আপনি না আসলে কিন্তু আমি পাইপ বেয়ে আপনার জানালায় এসে দাঁড়িয়ে থাকব।”
রানির বুকের কাঁপন বেড়ে গেলো। এ কি সর্বনাশা কথাবার্তা!! এই ছেলে কি পাগল? আজ স্কুল ছুটির পর যখন বলেছিলো বাড়ির পিছনে আসবে তখন রানি বিশ্বাস করে নি,কিন্তু এখন তো দেখছে সত্যি সত্যি চলে এসেছে। এ কেমন মুসিবতে পড়লো!!
রানির ভাবনার ছেদ ঘটালো মোবাইলের রিংটোন। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রানির চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। তুহিন কল করছে। রানি ধরলো না। সাথে সাথে মেসেজ আসলো-
“তুমি কি চাও আমি জানালায় আসি? না চাইলে কল ধরো। নয়ত আমি এক্ষুনি ব্যবস্থা নিব।”
এমন সাংঘাতিক মেসেজ পড়ে রানির পেট মোচড় মারলো। তুহিন আবারো কল দিলো। রানি ভাবলো এই ছেলে যেই তারছিড়া এখন না ধরলে সত্যি সত্যি চলে আসবে। সে কল রিসিভ করে কানে ধরে বসে রইলো। তুহিন কিছুক্ষন হ্যালো হ্যালো করে উত্তর না পেয়ে বললো –
“মহারানি জলদি নিচে আসো। মশার কামড়ে ডেংগু হইয়া যাইব। তুমি অকালে আমারে হারাইতে চাও নাকি।”
রানি মিনমিন করে বলল-
“আপনি চলে যান তুহিন ভাই আমি আসব না।”
“আরে কি কও!! এতগুলা মশার কামড় খাইছি কি চইলা যাওয়ার লাইগা। আগে দেখা করবাম পরে যাইবাম। জলদি আসো।”
রানি কিছু বলার আগেই তুহিন কল কেটে দিলো। রানি ভেবে দেখলো একটু গিয়ে শুনেই আসা যাক এই পাগল কি বলে। সে সুন্দর করে মাথা ওড়না দিয়ে ঢেকে নিলো।তারপর সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। রান্নাঘর থেকে টুংটাং শব্দ আসছে তার মানে তার মা রান্নাঘরে। আর তার বাবাকে নিয়ে চিন্তা নেই তার বাবা এখন অফিসঘরে রাজনৈতিক মিটিংয়ে ব্যস্ত। রানি পা পা টিপে পিছনের দরজা খুলে বের হলো। তারপর বাড়ির পিছনের বাগান পেরিয়ে পিছনের গেট খুলে বাউন্ডারির বাইরে আসলো।
তুহিন রানিকে দেখে হাত নাড়ালো। রানি এগিয়ে গেলো ধীর পায়ে। তুহিনের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াল। চোখ নামিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো।তুহিন কিছুক্ষন স্থির দৃষ্টিতে রানিকে দেখলো। গভীর গলায় বলল-
“কাল ঢাকা চইলা যাইতাছি তাই ভাবলাম তোমার সাথে একটু রোমান্টিক স্মৃতি রাইখা যাই। যাতে তুমি আমারে নিয়া ভাবতে পারো।”
রানি আস্তে করে বললো- –
“কি বলবেন বলেন? কেউ দেখলে খারাপ ভাববো।”
“কি আর বলব বলো? তোমারে দেইখাই তো কথা বন্ধ হইয়া গেছে।”
“কথা না থাকলে আমি যাই।”
বলেই রানি যেতে উদ্ধত হলো। তুহিন ব্যস্ত হয়ে বলল-
“আরে না না। যাইয়ো না। কথা আছে তো। অন্যসময় তো কথাই কইতে পারি না তোমার সাথে চালের নাড়ু আইসা বাঁধা দেয়। গত বার যেই ঢিল টা মারলো বিশ্বাস করো এখনো আমার কাঁধে ব্যথা করে।”
রানি শব্দ করে হেসে দিলো।তুহিন হা করে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। তুহিনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রানি বারকয়েক গলা খাকারি দিলো। তুহিনের ঘোর তবুও কাটলো না। রানি মশা মারার ভান করে তুহিনের ঘোর কাটানোর জন্য বললো –
“কত মশা!! ”
তুহিন ঘোর ভেংগে বলল-
“মশা কামড়াইতাছে তোমারে? এত বড় সাহস মশার আমার সামনে তোমারে কামড়ায়!!”
বলেই তুহিন আশে পাশে খুজে একটা চিকন লম্বা ডাল তুলে নিলো। ডাল দিয়ে রানির আশেপাশে মশাকে উদ্দেশ্য করে বাড়ি দিতে লাগলো। মশা মারা তো হলোই না উলটা ডালের আগা রানির মাথার কাছে ওড়নায় পেচিয়ে গেলো। তুহিনের হাতের টানে রানির গা থেকে ওড়না চলে এলো ডালের ডগায়। ঘটনার আকস্মিকতায় তুহিন হতভম্ব হয়ে গেলো। রানি চমকে গিয়ে দুই হাত দিয়ে শরীর ঢেকে অন্যদিকে ফিরে দাঁড়ালো।
তুহিন নিজের হাতে রানির ওড়না দেখে চমকে গিয়ে ডাল সহ ওড়না ছূড়ে ফেলে দিলো মাটিতে। তারপর রানির দিকে তাকিয়ে দুই হাত নেড়ে বলল-
“বিশ্বাস করো রানি আমি ইচ্ছা কইরা করছি না। ওই শা*লার মশা……..”
“তুহিন ভাই আপনি এইখান থাইকা যান।”
“রানি আমি সত্যিই………”
“আপনি যান এইখান থাইকা। আর আমার ওড়না মাটিতে ফেলসেন কেন?”
“ওড়না মাটিতে ফেলসি তাই তোমার রাগ উঠছে না? এই দেখো আমার গামছাও আমি মাটিতে ফালাই দিছি।”
বলেই তুহিন তার গলার গামছা রানির ওড়নার পাশে মাটিতে ছুড়ে ফেললো। তখনি একটা পুরুষ আওয়াজ শোনা গেলো-
“কেডা ওইনে? কেডা কথা কয়?”
রানি তুহিন দুজনেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থমকে গেলো। তুহিন তাড়াতাড়ি মাটি থেকে রানির ওড়না ভেবে ওর গামছা তুলে রানির গায়ে পেচিয়ে দিয়ে রানির ওড়না তুলে নিজের গলায় ঝুলিয়ে কোনোদিক না তাকিয়ে দৌড় দিলো। রানি বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে দেখলো তুহিন এক হাতে লুংগি ধরে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে দৌড়াচ্ছে। সে ইংরেজিতে Speechless আর বাংলায় হতবাক হয়ে গেলো।
চলবে