#প্রেম_প্রার্থনা
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৩৫
চারু হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। সে একবার অন্যদিকে তাকিয়ে আবারো রবিনের দিকে তাকালো। রবিন শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে, তার ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি। চারু থম মেরে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো। সে চাইলেও চোখ সরাতে পারছে না। একটা বাজখাই গলার ধমকে চারু জানালা থেকে চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকালো। ক্লাসে অমনোযোগী হওয়ার কারনে ক্লাসের স্যার তাকে দাঁড় করিয়ে রাখলো পুরো ক্লাস। এরপর ও চারুর চোখ মাঝে মাঝে জানালার বাইরের দিকে গেলো।রবিন এখন আর এইদিকে তাকিয়ে নেই, হাঁটুর উপর এক হাত রেখে শহীদ মিনারের সিড়িতে বসে আড্ডা দিচ্ছে।
ছুটির পর চারু গেটের দিকে না গিয়ে রওয়ানা করলো শহীদ মিনারের দিকে। রানি পিছন থেকে চারুর ব্যাগ টেনে ধরে বলল-
“আরে কানি গেট ওইদিকে না এইদিকে।”
“কিন্তু তোর ভাই ওইদিকে।”
রানি ভ্রু কুচকে বলল-
“মানে?”
“তোর ভাই শহীদ মিনারে। যাই একটু টুক্কা দিয়া আসি।”
“তোর কি মনে ডর ভয় নাই? কেউ এসব শুনলে কি কইব?”
চারু খুব বিরক্ত হলো।রানির হাত ছাড়িয়ে বললো-
“তোর তো মনে খুব ভয় ডর আছে তাই না!! এই ভয় ডর নিয়া রাতের বেলা পিরিত করো।”
রানি থতমত খেয়ে তাকালো।চারু শহীদ মিনারের দিকে চলে গেলো। শহীদ মিনারের কাছে এসে একটু দূরে দাঁড়িয়ে চারু “রবিন ভাই” বলে ডাকলো।রবিন ডাক শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।রবিনের সাথে থাকা সবাই ই তাকালো চারুর দিকে।সবার একযোগে তাকানোতে চারু কিছুটা ইতস্তত বোধ করলো। লিমন দাঁত বের করে হাসি দিয়ে রবিনের কানে কানে বললো-
“ভাই, ভাবি আইছে।মনে হয় কিছু কইবো।”
রবিন বিরক্ত চোখে লিমনের দিকে তাকালো। চাপা স্বরে বলল-
“তোরে না কতবার কইছি ওরে ভাবি ডাকবি না।”
বিনিময়ে লিমন একটা মধুর হাসি দিলো।যার অর্থ সে ভাবি ডাকবেই। রবিন উঠে এসে চারুকে পাশ কাটিয়ে গেলো।যাওয়ার সময় বলল-
“এইদিকে আয়।”
চারু রবিনের পিছু পিছু গেলো।রবিন গিয়ে থামলো একটা গাছের নিচে। চারুর দিকে ফিরে বললো-
“বল কি বলবি?”
চারু এদিক ওদিক তাকালো তারপর গলা পরিষ্কার করে বলল-
“আমি কিন্তু সত্যিটা জানি।”
রবিন আগ্রহী চোখে তাকালো। জিজ্ঞেস করলো-
“কি সত্যি?”
চারু লাজুক একটা হাসি দিলো।চোখ নামিয়ে বললো –
“তোমার মনে যে আমার জন্য ফিলিংস আছে সেই সত্যি।”
রবিন বিস্ময় নিয়ে তাকালো। এইভাবে কোনো মেয়ে এইসব বলতে পারে তা তার অজানা। চারু রবিনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল-
“মুখে বইলা দিলেই তো পারো।এত লজ্জা পাও কেন।আমি তো রাজিই।”
“তোর তো লজ্জা নাই,নির্লজ্জ। ভেবে দেখলাম কারো তো লজ্জা থাকা দরকার।তাই আমিই না হয় লজ্জা পাইলাম।”
চারু চোখ পিটপিট করে তাকালো। এই লোক কি তাকে অপমান করলো?আশ্চর্য!! মনের কথা বলে দেওয়াতে লজ্জার কি আছে।
রবিন আংগুল দিয়ে গেটের দিকে ইশারা করে বলল-
“চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো বাড়িত যা। আর হ্যা এইসব আজেবাজে চিন্তা বাদ দে। আগে স্কুল পাশ কর।।”
চারু বিরস মুখে হাঁটা ধরলো। রবিন আবারো তাকে ডাকলো-
“আর শোন ওই মাথা পাগল তুহিনের সাথে যেন কথা কইতে না দেখি।যা এইবার।”
রবিন উলটোপথে শহীদ মিনারের দিকে চলে গেলো। চারু পা বাড়ালো গেটের দিকে।রানি এগিয়ে এসে তাল মিলালো হাঁটায় আর জিজ্ঞেস করলো-
“কি কইছস ভাইয়ারে?”
“কইছি তোর ভাইরে আমি বিয়ে করবাম।তোর ভাই ও রাজি হইছে, বুঝছস?”
রানি কিড়মিড়িয়ে বলল-
“তুই আসলেই একটা শয়তানি।”
চারু বিশেষ পাত্তা দিলো না।তার মনে এখন রবিনের কথাগুলো চলছে। সে নির্লজ্জ? হাহ! নির্লজ্জরাই শেষে ভালোবাসা জিতে। এই ক্ষেত্রে একটু নির্লজ্জ হওয়া দোষের না।
________
বিকেলে রবিন তার ঘরে ঢুকে সারাকে দেখে অবাক হলো। সারা চেয়ারে বসে বই পড়ছিলো রবিনকে দেখে বই নামিয়ে বললো-
“বসে বসে বোর হচ্ছিলাম তাই তোমার ঘরে এসে এই বইটা নিয়েছিলাম পড়তে।পরে আর এখান থেকে উঠতে ইচ্ছা হয় নি।”
রবিন আলমারি থেকে একটা টি শার্ট নিয়ে জিজ্ঞেস করল-
“কখন আসছস?”
“দুপুরে।”
“আমারে জানাইলি না কেন? আমি আগায় গিয়া নিয়া আসতাম।”
“বারে! জানাইলে কি আর সারপ্রাইজ দেয়া হতো নাকি।”
“হুমমম, ভালো।”
রবিন ওয়াশরুমে চলে গেলো। সারা দেখলো রবিন টাওয়াল নিয়ে যায় নি। সে উঠে টাওয়াল হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের দরজার সামনে দাঁড়ালো।নক করবে কিনা বুঝতে পারলো না। তারপরও দাঁড়িয়ে রইলো।রবিন ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখলো সারা দাঁড়িয়ে আছে। রবিনকে দেখে সারা টাওয়াল এগিয়ে দিলো।মুচকি হেসে বলল-
“এইটা নিতে ভুলে গিয়েছিলে।”
রবিন টাওয়াল হাতে নিলো।সারাকে পাশ কাটিয়ে বিছানায় বসে মুখ মুছতে মুছতে বললো-
” যা এখন, গিয়ে রেস্ট নে।”
সারা ঠোঁট কামড়ালো। বললো-
“তোমাকে একটু চা করে দেই?”
“না, তোর এইসব করা লাগত না।জার্নি কইরা আসছস রেস্ট নে গিয়া।যাওয়ার সময় দরজা লাগায় দিয়া যাবি।”
সারা অনিচ্ছা স্বত্তেও রবিনের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। আস্তে আস্তে নিজের জন্য বরাদ্দ ঘরের দিকে রওয়ানা দিলো। রবিনের ঘর থেকে বেরিয়ে আরেকটু গেলেই ওর ঘর।দুজনের ঘর ই দোতলায়। সারা ঘরে এসে বারান্দায় চলে গেলো। চেয়ার টেনে বসে মৃদু হাসলো। এমন একদিন আসবে যেদিন আর রবিন তাকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলবে না বরং রবিন তাকে ঘর থেকে বের ই হতে দিবে না। সারা লজ্জা পেয়ে দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো।
__________
আস্তে আস্তে রানির জন্মদিনের দিন এগিয়ে আসলো। আর একদিন পর ই রানির জন্মদিন। বিকালে রানি এসে সৈয়দ বাড়িতে হামলা দিলো সে সবাইকে এখনি সাথে করে নিয়ে যাবে। আজ রাতে মেয়েরা সবাই মিলে মেহেদী লাগাবে হাতে। বাড়ির মহিলারা সবাই এটা ওটা বলে রানিকে বুঝাতে পারলেও রানি চারু আর ফারহানাকে ছাড়া যাবে না। বাধ্য হয়ে চারু আর ফারহানাকে পাঠানো হলো।
সন্ধ্যার পর রাতের খাওয়া দাওয়ার পর তালুকদার বাড়িয়ে উৎসব উৎসব আমেজ সৃষ্টি হয়ে গেলো। বাড়ির মেয়েরা হাত পেতে বসে পড়লো মেহেদী দিতে। কেউ দেখলে বলবে এই বাড়িতে হয়ত কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। সারা দুহাত মেলে বসে পড়লো।আজ সে সুন্দর করে মেহেদী লাগাবে। মেহেদী দেয়া মেয়েটাকে সে চুপি চুপি ডেকে বলল-
“আমার হাতে ” R” লিখে দিবে কেমন?”
চারু রানি দুজনেই কথা টা শুনলো। চারু রানির দিকে তাকালো।রানি চারুকে একটা চোখ মারলো।কিছু বুঝতে না পেরে চারুর ভ্রু কুচকে গেলো। রানি একটু কাছাকাছি এসে চারুর পাশ ঘেঁষে বসে বললো-
“সারা আপু হাতে ভাইয়ার নাম লিখাইতাছে।R দিয়া তো ভাইয়ার নাম।”
“তোর ভাইয়ার ই একলা R দিয়া নাম নাই।আরো অনেকের আছে।”
রানি একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল-
“পুড়া পুড়া গন্ধ আসতাছে, কিছু একটা পুড়তাছে না রে?”
চারু চোখ গরম করে তাকালো।রানি আবারো বলল-
“শুনছি যার হাতে মেহেদীর রঙ গাড় হয় তার ভালোবাসা নাকি সফল হয়।তুই ও হাতে ভাইয়ার নাম লিখাইয়া সারা আপুর সাথে প্রতিযোগিতায় নাইমা পড়।”
চারু মুখ ভেংচি দিয়ে বলল-
“আমার তো আর খাইয়া কাম নাই এত সুন্দর মেহেদীতে তোর ভাইয়ের নাম লিখাইতাম।”
রানি একটা গা জ্বালা হাসি দিয়ে দূরে সরে বসলো। চারু প্রতিজ্ঞা করলো সে কিছুতেই হাতে রবিনের নাম লিখাবে না।কিছুতেই না।
আস্তে আস্তে রাত আরো কিছুটা গভীর হলো।মেয়েরা হাতের মেহেদী পড়া শেষ করে মেহেদী শুকানোর ফাঁকে গল্পে মেতে উঠেছে। সবাই সবার হাত নিরাপদে রেখেছে পাছে মেহেদি নষ্ট না হয়ে যায়। চারু মুখ গোমড়া করে বসে রইলো। তার সারাকে অসহ্য লাগছে। সারা বার বার রানির কাছে রবিনের বিষয়ে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে , জানতে চাইছে। এসব ন্যাকামি দেখে চারুর গা জ্বালা করছে। সে উঠে এলো ওখান থেকে। আস্তে আস্তে সিড়ি পেরিয়ে ছাদের দরজার কাছে এলো। দরজা ঠেলে উঁকি দিয়ে দেখলো ছাদ খালি। ছাউনি দেয়া রবিনের খোলা ঘরটাও খালি। চারু স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।যাক,এখন একটু একা থাকা যাবে এখানে। সে এগিয়ে গিয়ে রবিনের চৌকিটায় বসলো। আকাশে গোল চাঁদ উঠেছে।জোছনায় ভেসে যাচ্ছে চারপাশ সেই সাথে মৃদুমন্দ বাতাস ও ছুয়ে যাচ্ছে। অল্পক্ষন পরেই ছাদের দরজার শব্দ হলো। চারু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। রবিন এসেছে। শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে এগিয়ে আসছে সে। একটু এসেই সে ঘরের দিকে তাকিয়ে থেমে গেলো। তারপর এগিয়ে এসে চারুর সামনে দিয়ে হেঁটে গিয়ে লাফ দিয়ে রেলিং এ উঠে বসলো।
রবিনের রেলিং এ বসা দেখে চারুর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।চেচিয়ে বলল-
“আরে আরে পইড়া যাইবা তো।”
রবিন কৌতুকপূর্ন চোখে তাকালো। পকেট থেকে সিগারেট বের করে বলল-
“আজ তোরে দেইখা ইচ্ছা কইরাই সিগারেট ধরাইবাম। বেড সাইড টেবিলটার ড্রয়ারে দিয়াশলাই আছে। ওইটা আন।”
চারু একবার টেবিলটার দিকে তাকালো তারপর রবিনের দিকে তাকিয়ে বলল-
“আমি দেয়াশলাই দিতে পারতাম না।”
রবিন ভ্রু কুচকালো।প্রশ্ন করলো-
“কেন?”
চারু তার দুহাত বাড়িয়ে ধরলো রবিনের দিকে। চাঁদের আলো পড়লো তার মেহেদী রাঙা হাতে। রবিন তাকিয়ে দেখলো তা।চারু বললো-
“আমার হাতে মেহেদী, আমি কিছু করতে পারতাম না।”
রবিন নিজেই এসে ড্রয়ার থেকে দেয়াশলাই নিয়ে রেলিঙে উঠে বসলো।তারপর সিগারেট ধরিয়ে এক টান দিয়ে ধোয়া ছেড়ে বললো-
“মেহেদী পড়ছস কেন হঠাৎ?”
“এমনি।সবাই পড়ছে তাই পড়ছি।”
“হুম্মম্মম, কার নাম লেখছস দেখি?”
চারু বিস্মিত হলো।চোখ বড় বড় করে বলল-
“তুমি কেমনে জানো যে মেহেদি পড়লে হাতে নাম লিখে।”
“সারা আইসা কইলো সে নাকি হাতে স্পেশাল কারো নাম লিখছে তাই আমার মনে হইলো তোরেও জিগাই তুই লেখছস কিনা।”
সারার কথা শুনে চারুর রাগ পেলো।কি বেয়াদব মেয়ে! সোজা রবিনকে দেখাতে চলে গেছে।রবিন হাতের সিগারেট ফেলে উঠে এসে চারুর হাত টেনে ধরলো।চারু চমকে তাকালো।খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে বলল-
“কই কোনো নাম ধাম তো নাই হাতে।”
“আমি নাম লিখছি না।”
“কেন?”
চারু জেদ করে বলল-
“আমার ইচ্ছা।”
বলেই সে ছাদ থেকে চলে যাওয়ার জন্য রওয়ানা দিলো।চৌকির পায়ার সাথে পা বেঁধে হুড়মুড় করে পড়ে গেলো। সে আপ্রাণ চেষ্টা করলো হাতে ভর না দিতে তারপর ও লাভ হলো না। সে হাতে ভর দিয়েই মাটিতে পড়লো।এতক্ষনে মেহেদি অনেকটাই শুকিয়ে যাওয়ায় ডিজাইন খুব বেশি নষ্ট হয় নি। চারুর পড়ে যাওয়া দেখে রবিন শব্দ করে হালকা হাসলো। হাসি ঠোঁটে রেখেই বললো-
“কারো নাম লেখোস নাই বইলাই এই শাস্তি পাইলি।এইবার উঠ।”
চারু অসহায় চোখে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল-
“আমারে একটু ধইরা তুলো না রবিন ভাই!! হাতে ভর দিয়ে উঠলে মেহেদি নষ্ট হইয়া যাইব।”
রবিন এগিয়ে এসে চারুর দিকে ঝুঁকে চারুর দুই বাহু ধরলো তারপর এক টানে চারুকে দাঁড় করিয়ে দিলো কিন্তু দূরে সরে গেলো না।চারু রবিনের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে হাসফাস করলো। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলল-
“আমি এখন যাই, নিচে সবাই খুঁজতাছে আমারে।”
রবিন কন্ঠ খাদে নামিয়ে গভীর স্বরে বলল-
“একটু কমায় খাবি।মোটা হইয়া যাইতাছস।মোটা হইলে কোলে নিতে অসুবিধা হয়।”
চারু বড় বড় চোখ করে তাকালো।রবিন চারুর মুখের কাছে নিজের মুখ নামিয়ে আনলো। ফু দিয়ে সামনে পড়ে থাকা চারুর চুলগুলো সরালো। ফিসফিস করে বলল-
“এই মুহুর্তে তোর জন্য আমার অনুভূতি জানলে তোর ই অসুবিধা হইব।তুই আর এখন ছোট নাই আর আমি অনেক ডার্টি মাইন্ডের।আজে বাজে চিন্তা আসে মনে।একটু দূরত্ব বজায় রাখ।”
রবিন এই কথা বলে চারুকে ছেড়ে রেলিঙের কাছে গিয়ে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে শ্বাস টানলো।চারু কিছুক্ষন চোখ পিটপিট করলো তারপর আস্তে করে হেঁটে সিড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।তার বুক ধুকপুক করছে। পেটের ভেতর কেমন মোচড় দিচ্ছে। হাত পা কাঁপছে।আজকে থেকে সে আর কখনো রবিনের আশেপাশে যাবে না। কখনোই না।
চলবে