প্রেম_প্রার্থনা #তামান্না_আঁখি #পর্ব-৪৮

0
519

#প্রেম_প্রার্থনা
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৪৮

চারদিকে শুনশান নীরবতা। মাঝে মাঝে বাতাসে গাছের পাতা নড়ার শব্দ কানে আসছে।চারু একটা কাঠের চৌকির উপর শুয়ে আছে। শুয়ে আছে বললে ভুল হবে তাকে চৌকির উপর মুখ বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে। তার হাত পেছনে বাঁধা,পায়েও দড়ি দিয়ে শক্ত গিঁট দেয়া। বাঁধনের জায়গাগুলোতে চামড়া ছিলে গেছে। হাতের বাঁধনের জায়গাটায় রক্ত বেরিয়ে দড়ি লাল হয়ে গেছে। শক্ত বাঁধন টানাটানি করে খোলার চেষ্টা করার ফলে ক্ষত হয়ে গেছে। চারু আরেকবার হাত নাড়ালো বাঁধন খোলার জন্য। ক্ষত হওয়ার জায়গাটায় শক্ত দড়ির ঘষা লাগতেই মুখ বাঁধা অবস্থায় যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠলো সে। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। এই অন্ধকারে একা একটা ঘরে নিজেকে খুব অসহায় অনুভব করলো চারু। তার মনে পড়লো তার বাবার কথা, তার বড়বাবার কথা। তার বড়বাবা আর বাবা কি জানে চারু যে কিডন্যাপ হয়েছে? অবশ্যই জানে।এতক্ষনে জেনে যাওয়ার কথা।তারা নিশ্চয়ই তাকে খুঁজতে বেরিয়েছে। তার মা কি খুব কান্না করছে? রবিন ভাই কি করছে? নিশ্চয়ই দলবল নিয়ে তাকে খুঁজতে বেরোবে। পরিবারের মেয়েদের বিষয়ে রবিন অনেক সেন্সিটিভ।নিশ্চয়ই পুরো দুনিয়া এক করে ফেলবে তাকে খুঁজতে।চারুর হঠাৎ করে বুকের ভেতর ভার ভার অনুভূত হতে লাগলো।রবিনের সাথের স্মৃতি গুলো চোখে ভাসলো। যদি এমন হয় যে চারু আর কোনোদিন বাড়ি ফিরতে পারলো না তখন কি বাড়ির সবাই খুব কাঁদবে?চারু বুঝতে পারছে যারা তাকে ধরে নিয়ে এসেছে তারা পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিশোধ নিতেই তাকে তুলে এনেছে। তাই তার প্রাণ সংশয় হওয়ার চিন্তাও আসছে মনে।

হুট করে ঘরের দরজাটা খুলে গেলো।দরজায় দেখা গেলো এক পুরুষ অবয়ব। লোকটা হেঁটে ঘরে ঢুকলো।পর পর আরো অনেকগুলো লোক এসে ঢুকলো।ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিলো। পরক্ষনের আলো জ্বলে উঠলো।তীব্র আলোর ঝলকানিতে চারু চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো।আলো কিছুটা সয়ে আসতেই চোখ মেলে তাকালো।চোখে পড়লো কিছু অচেনা লোক। চোখ ঘুরিয়ে দেখে বুঝতে পারলো সে একটা গুদামঘরে বন্দী।গুদামঘরটা বেশ বড়।ধানের বস্তা সারি সারি করে রাখা।

মাঝ বয়সী এক লোক এগিয়ে এসে চারুর সামনে দাঁড়ালো।লোকটার নাম মিজান আলী,সবুর আলীর বড় ছেলে।মিজান আলী চারুকে দেখিয়ে কমবয়সী ছেলেগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলল-

“এইডাই তালুকদারের ছেড়ি?”

ছেলেগুলো মাথা নেড়ে সায় জানালো।মিজান আলী চারুর কাছে এগিয়ে এসে ভালো করে দেখলো।তারপর ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল-

“এই ছেড়ির নিরুদ্দেশের খবর পুরা গ্রামে ছড়াইছস?”

একটা ছেলে উত্তর দিলো-
“হ কাকা।আস্তে আস্তে গ্রামের সবাই জাইন্না যাইব। তবে রবিন কিন্তু খুজতে বাইর হইব। আমরারে ধরতে পারলে জানেও মা*ইরা দিতে পারে।”

মিজান আলী খেক করে হাসলো। তাচ্ছিল্যের সুরে বললো-

“এর আগেই ওর বংশের মান ইজ্জত সব ভাইস্যা যাইব। এই ছেড়িরে কাল ভোরে কলেজের সামনে ফালায় দিয়া আসবি।”

চারু আতংকে জমে গেলো। যতটা কথাবার্তা সে শুনেছে তাতে বুঝতে পারছে রানির জায়গায় ভুল করে তাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছে। চারু তার নিজের পরিণতির কথা চিন্তা করে শিউরে উঠলো।মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলো। ভয়ে আতংকে তার শরীর ঘামতে লাগলো। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। তীব্র পানি পিপাসা অনুভব করলো।

ছেলেগুলোর মাঝে একটা ছেলে অনেক্ষন যাবত চারুকে পর্যবেক্ষন করছিলো। অনুসন্ধানী চোখে এগিয়ে এসে চারুর মুখ থেকে কাপড় টা সরালো। মুখ খোলা পেয়ে চারু তৎক্ষনাৎ ছেলেটির হাতে কামড় বসালো।ছেলেটি যন্ত্রনায় চিৎকার করে দূরে সরে গেলো।অবিশ্বাস্য চোখে তাকালো চারুর দিকে। হাত ঝাড়তে ঝারতে তড়িৎ বেগে মিজান আলীর কাছে এগিয়ে গেলো।নিচু কন্ঠে বললো-

“কাকা, মস্ত বড় ভুল হইয়া গেছে। এই ছেড়ি তো তালুকদারের ছেড়ি না।”

মিজান আলী ভ্রু কুচকে ছেলেটির দিকে তাকালো। তারপর চারুর দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলল-

“মানে?”

“কাকা, এইটা সৈয়দ বাড়ির ছেড়ি। নাম চারুলতা। তালুকদারের ছেড়ির সাথে একলগে কলেজে যায়। আমি চিনি।”

উপস্থিত সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো।সবাই একযোগে চারুর দিকে তাকালো। ভালো করে পরখ করে বুঝলো এই মেয়ের আজ গায়ে হলুদ না। একদম বউ এর মতো একরকম সেজেছে বলে একে অন্ধকারে তালুকদারের মেয়ে বলে ভুল করেছে ছেলেরা। মিজান আলী রাগে ফুঁসে উঠলো। যে ছেলেগুলো রানিকে তুলে আনতে গিয়েছিলো সেগুলোর দিকে এগিয়ে গিয়ে এক নাগাড়ে চড় থাপ্পড় দিলো। চোখ লাল করে তাকিয়ে বলল-

“কু*ত্তার বাচ্চারা,একটা কাজ ঠিকমতো করতে পারস না। টাকা দিয়া অপদার্থ পালতাছি।এই ছেড়িরে দিয়া আমার এখন কোনো লাভ ই হইত না।সব প্ল্যান জলে গেলো।!

আগের ছেলেটা এগিয়ে এসে মিজান আলীর কানে কানে বললো-

“কাকা,এখনো চিন্তার কিছু নাই। এই ছেড়ি রবিনের জান।রবিন এই ছেড়িরে ভালোবাসে।আপাতত রবিনের হৃদয়ে আঘাত করি পরে না হয় তালুকদার বংশের সম্মানে আঘাত করা যাইব।”

মিজান আলী কিছুটা শান্ত হলো কিন্তু পুরোপুরি রাগ কমলো না তার। কিছুক্ষন চিন্তা করলো। সৈয়দ বাড়ির মেয়েও খারাপ না।সৈয়দ বাড়ি তো তালুকদার বাড়ির ই আত্নীয়। তাই সৈয়দ বাড়ির মেয়েরেও কাজে লাগানো যেতে পারে। ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো-

“তাড়াতাড়ি কাম কাজ শেষ কইরা এই ছেড়িরে ফালায় দিয়া আয়। ঠিকমতো কোনো কাম ই করতে পারস না। তাড়াতাড়ি এই ঝামেলা শেষ কর।”

আদেশ দিয়ে মিজান আলী দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। দরজা খুলতেই এক লাথি এসে পড়লো তার বুকে। লাথির আঘাতে আর্তনাদ করে ছিটকে পড়লো ঘরের ভিতর।পর পর ঘরে প্রবেশ করলো রবিন। তার মুখে ধরা সিগারেট।ডান হাতে ধরা রিভ*লবার।বাম হাতে সিগারেটটা মুখ থেকে সরিয়ে বাম দিকে মুখ বাকিয়ে ধোয়া ছাড়লো।তারপর সিগারেটের পোড়া অংশ ছুড়ে মারলো অন্যদিকে।রবিনের দুই পাশ দিয়ে প্রবেশ করলো লিমনসহ অন্য ছেলেরা। ঘরে থাকা ছেলেগুলো হঠাৎ আক্রমনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। লিমনসহ অন্যরা এই সুযোগে সবাইকে কুপোকাত করার চেষ্টা করলো।ঘরের ভিতর মারামারি বেঁধে গেলো। রবিন এগিয়ে এসে মাটিতে বসে থাকা মিজান আলীর সামনে দাঁড়ালো। চোখ ঘুরিয়ে একবার চারুকে দেখলো। চারুর ভয়ার্ত চোখে চোখ মিলিত হলো তার।চারুকে ভালোভাবে পরখ করে চোখ সরিয়ে হালকা ঘাড় বাঁকিয়ে মিজান আলীর দিকে তাকালো। রিভল*বার টা দিয়ে কপাল চুলকালো। তারপর মিজান আলী কিছু বুঝার আগেই রবিন তার বাম পায়ে গু*লি করে দিলো।ঘর কেঁপে উঠলো গু*লির শব্দে। জান্তব গলায় চিৎকার করে উঠলো মিজান আলী। মিজান আলীকে গু*লি খেতে দেখে তার সাথের ছেলেগুলো সব মিইয়ে গেলো।লিমন তার দলবল নিয়ে সহজেই ওদের কাবু করে ফেললো।

রবিন পায়ের আংগুলের উপর ভর দিয়ে মিজান আলীর সামনে বসলো। ক্ষুব্ধ গলায় রিভল*বার উঁচিয়ে শাসালো-

“এর পরের বার আমার পরিবারের দিকে হাত দিলে পায়ের পরিবর্তে তোর মাথা ফুটো কইরা দিমু।”

মিজান আলী কাতরাতে লাগলো। রবিন লিমনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে সবাইকে নিয়ে যেতে বললো। লিমন মিজান আলীকে ধরে তুললো তারপর বাকিদের নিয়ে বেরিয়ে গেলো। রবিন রিভল*বার টা কোমড়ে গুজে নিয়ে চারুর দিকে এগুলো। চারু কান্নাভেজা চোখে তাকিয়ে আছে রবিনের দিকে। তার দৃষ্টিতে একই সাথে খুশি ও ভরসা ফুটে উঠলো। রবিন চারুর কাছে এসে তাকে ধরে বসালো। হাঁটু গেড়ে বসে চারুর গালে হাত দিয়ে আকুল নয়নে চারুর ভেজা অসহায় চোখে দৃষ্টি মিলালো। তারপর একে একে হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিলো। হাত পায়ের ক্ষত পরিক্ষা করলো উলটে পালটে। চারুর মাথার একপাশে হাত দিয়ে কোমল কন্ঠে বলল-

“আমি চইলা আসছি চারু।আর কোনো ভয় নাই।”

চারুর চোখ উপচে পানি গড়িয়ে পড়লো। রবিন হাতের বুড়ো আংগুল দিয়ে গাল ছুয়ে পড়া পানির স্রোতে হাত বুলালো। চারুর কপালে কপাল ঠেকালো। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে চারুকে কোলে তুলে নিয়ে গুদাম ঘর থেকে বের হয়ে এলো। বাইরে লিমন ততক্ষণে সবাইকে গাড়িতে তুলে ফেলেছে। রবিন ইশারায় লিমনকে ডাকলো।লিমন কাছে আসতেই শক্ত কন্ঠে বললো-

“এদের নিয়া পুরনো ফ্যাক্টরিতে যা।আমি না আসা অবধি আটকায় রাখবি।”

“ভাই এমনি এমনি বসায় রাখবাম নাকি ওদের? একটু খাতির যত্ন…….”

“যা মন চায় কর।জানে মারিস না।”

লিমন একটা বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে গাড়ির কাছে এগিয়ে গেলো।অনেক দিন পর মনের মতো কাজ পেয়ে সে বেজায় খুশি।

রবিন ধীর পায়ে চারুকে কোলে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো।একটু দূরেই তার বাইকটা স্ট্যান্ড করা।চারু রবিনের গলা জড়িয়ে ধরে রবিনের কাঁধে মুখ গুঁযে আছে। তার শরীর অল্প কাঁপছে।রবিন মৃদু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো-
“ভয় পাচ্ছিস?”

কোনো উত্তর এলো না চারুর থেকে। সে আগের মতোই নিশ্চুপ থাকলো।রবিন চারুর চুলের ভাজে নাক ছোয়ালো। বুকের সাথে আরো শক্ত করে চেপে ধরলো চারুকে। আজ সে জীবনের সবচেয়ে বড় আতংকের ভিতর দিয়ে গিয়েছে। লিমন সবুর আলীর যে ছেলেটাকে ধরে চারুর কিডন্যাপের খবর জেনেছিলো সে ছেলেটাকে অনেক চাপ দিয়েও যখন চারু কোথায় আছে তার খবর মিললো না তখন রবিনের ভয় আরো বাড়লো। ওর বারবার ভয় হচ্ছিলো যদি সে চারুকে খুঁজে পেতে বেশি দেরী করে ফেলে তখন। শেষমেশ সবুর আলীর ছোট ছেলেকে তুলে এনে হালকা ট*র্চার করার পর ই সে চারুর অবস্থান জানতে পেরেছে।

রবিন বাইকের কাছে এসে চারুর মুখ পানে তাকালো। চারু চোখ বন্ধ করে রবিনের পাঞ্জাবি খামচে ধরে আছে। রবিন মৃদু স্বরে ডাকলো-
“চারু।”

চারু ভেজা চোখ মেলে তাকালো।রবিন বাইক ইশারা করে বলল-
“বাইকে উঠতে পারবি।”
চারু মাথা নাড়লো সে পারবে। তারপর শুকনো ঢোক গিলে বলল-

“আব্বা আম্মারে আর সবাইরে দেখতে ইচ্ছা হইতাছে রবিন ভাই।”

রবিন সস্নেহে চারুর দিকে তাকিয়ে বলল-
“এইত আর কিছুক্ষন তারপর সবার সাথেই তোর দেখা হইব।”

রবিন চারুকে নামিয়ে দিলো।অনেক্ষন হাত পা বাঁধা থাকায় চারু কিছুটা টলে গেলো।রবিন শক্ত হাতে চারুকে ধরে সামলালো।চারু রবিনের হাত ধরে পিঠ সোজা করে দাঁড়ালো।পায়ের ক্ষত থেকে সূক্ষ্ম যন্ত্রনা টের পেলো।দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিলো। রবিন চারুর হাত ধরা অবস্থায় বাইকে উঠে বসলো।চারুকে টেনে বাইকে বসালো। চারুর হাত দুটো পেচিয়ে পেটের কাছে এনে এক হাতে চেপে ধরলো। তারপর বাইক স্টার্ট দিয়ে ধীর গতিতে এগিয়ে গেলো সামনের দিকে।

চারু রবিনের পিঠে গাল ঠেকিয়ে বসে রইলো। মৃদু তালে বাইক অন্ধকার ছিড়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চারুর বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। মনে পড়লো সন্ধ্যার সময়ের কথা।খুব আনন্দেই তো ছিলো ও। রানিকে হলুদ দেয়া, রবিনের সাথে লুকোচুরি,কত ছবি তোলা সব ই তো ঠিক চলছিলো।তবে এমন কেন হলো? চারুর মনে পড়লো বাড়ির পিছনে যাওয়ার ব্যাপারটা। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের মাঝখানে রানি চারুকে ডেকে কানে কানে বললো বাড়ির পিছনে রানিকে নিয়ে যাওয়ার কথা।চারু তখন শুনে চোখ কপালে তুলেছিলো।কিন্তু রানির জোরাজুরিতে বাধ্য হয়ে সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে রানিকে নিয়ে পিছনের গেট পেরিয়ে গাছগাছালির জায়গাটায় এসে দাঁড়িয়েছিলো।তুহিন আগে থেকেই দাঁড়ানো ছিলো। রানিকে তুহিনের সাথে কথা বলতে দিয়ে চারু দূরত্ব নিয়ে দেখছিলো ওদের।তুহিন রানির হাতে একগুচ্ছ গোলাপ তুলে দিয়েছিলো।চারু মুগ্ধ চোখে দেখেছিলো সেই দৃশ্য। রানিকে নিয়ে ফেরার পথে হঠাৎ রানির খেয়াল হলো ওর পায়ের একটা নুপুর নেই। এই নুপুর সে তুহিনের কাছ থেকে উপহার পেয়েছিলো। রানি আবারো বাড়ির পিছনে যাওয়ার জেদ করলে চারু ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়েছিলো। হবু বউ এতক্ষন স্টেজে না থাকলে সবাই খোঁজ করবে।রানিকে তৎক্ষনাৎ হলুদের স্টেজে পাঠিয়ে নিজেই গিয়েছিলো নুপুর খুজতে। কিন্তু গেট পেরিয়ে কিছুটা জায়গা খুজতেই কোথা থেকে কয়েকটা ছেলে এসে ওর মুখ বেঁধে ফেললো।চারু জান প্রান দিয়ে ছুটতে চেষ্টা করেছিলো।কিন্তু দূর্বল নারী হয়ে এতগুলো ছেলের সাথে সে পেরে উঠে নি। এর পরেই তাকে গুদামঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

চারু চোখ বন্ধ করে আবার তাকালো।রবিন যদি ওকে খুজে না পেত তাহলে ওর পরিণতি কেমন হত? বিধ্বস্ত অবস্থায় কাল সকালে কলেজের সামনে ওকে ফেলে রেখে আসতো? তারপর আস্তে আস্তে লোক জমায়েত হত ওর চারপাশে।সবাই ছবি তুলতো, ভিডিও করতো কেউবা আফসোস করতো কিন্তু কেউই সাহায্য করত না।চারু শিউরে উঠলো এসব ভেবে। সে আরো শক্ত করলো হাতের বাঁধন। সাথে সাথে ওর হাতের উপর থাকা রবিনের হাতটাও শক্ত করে আকড়ে ধরলো ওর হাত। চারুর মুখে হাসি খেলে গেলো। রবিন আছে ওর জন্য। ওর গায়ে কাঁটার আচড় লাগতেও দিবেনা রবিন। সবসময় বুক পেতে দিবে তাকে আগলে রাখতে।

অন্ধকার মেঠো পথ ধরে রবিনের বাইক শব্দ তুলে ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।দুপাশে ধানক্ষেত।আকাশে ইয়া বড় চাঁদ। জোছনায় ভেসে যাচ্ছে চারদিক। এক প্রেমময় আলোতে স্নান করছে প্রকৃতি ।চারু রবিনের পিঠে মাথা রাখা অবস্থায় আকাশের দিকে তাকালো। তার বড় ভালো লাগছে।সমস্ত ভয় আতংক অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে মন থেকে।এখন মনে শুধু এক শ্যামপুরুষের চিন্তা যে এখন শক্ত করে তার হাত ধরে আছে।চারু পরম ভরসায় রবিনের পিঠে মাথা রেখে জোৎস্না বিলাসে মত্ত হলো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here