#প্রেম_প্রার্থনা
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৫০
“চারুরে আমি নিজে উদ্ধার করছি।আমি জানি চারু কতটা পবিত্র।আমি বিয়ে করবাম চারুরে।কাল রানি আর তুহিনের সাথে আমার আর চারুরও বিয়ে হইব।”
রবিনের এই কথায় ঘরে যেন বজ্রপাত হলো।সবাই চুপ মেরে গেলো।কোনো শব্দ হলো না।সবাই একযোগে রবিনের দিকে তাকিয়ে থাকলো।রবিন ঘাড় ঘুরিয়ে চারুর দিকে তাকালো। চারুর হতবাক দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিললো।
সারা বসার ঘরের পাশের ঘরে দাঁড়িয়ে পর্দার আড়াল থেকে সব দেখছিলো।রবিনের এই কথা শুনে তৎক্ষনাৎ ফ্লোরে বসে পড়লো। চোখ ফেটে পানি বেরিয়ে আসলো। সে তো অনেক আগে থেকেই জেনে আসছে যে রবিন চারুকে ভালোবাসে তারপরও তার বোকা হৃদয় কারনে অকারণে এত কষ্ট পায় কেন?সে তো সমস্ত কিছু থেকে নিজেকে দূরে দূরে রাখছে। রানির বিয়েটা শেষ করেই এখান থেকে সে চিরদিনের মতো চলে যাবে। যেই কটা দিন এখানে থাকার পরিকল্পনা করেছিলো সেইদিনগুলোও কি বিষাক্ত বাতাস ছড়াবে? সারা দরজায় মাথা দিয়ে ফুপিয়ে উঠলো। তার চোখের সামনেই কি রবিনের অন্য কাউকে বিয়ে করার ঘটনাটা ঘটার খুব দরকার ছিলো?
ফাতেমা বেগম এই কথা শুনে চমকে উঠলেন। চারুর সাথে রবিনের বিয়ে হলে তার মেয়ের কি হবে?তিনি রবিনকে উদ্দেশ্য করে বললেন-
“এইটা কেমন ছেলেমানুষী রবিন? গ্রামের মানুষ তো কত কিছুই কইবো।তাই বইলা বিয়ের মতো ব্যাপারে এইভাবে সিদ্ধান্ত নিবি?”
“আমি জেনেবুঝেই সিদ্ধান্ত নিছি ফুপি।আশা করি এই সিদ্ধান্তে কারো আপত্তি নাই।”
রবিন চোখ ঘুরিয়ে শাহজাহান আলী আর কামরুজ্জামানের দিকে তাকালো। দুজনই তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।ফাতেমা বেগম এগিয়ে এসে বললেন-
“রবিন, বাপ, তোরে কেউ চারুরে বিয়ে করতে জোর করে নাই।তুই কেন বিয়ে করবি।আমরা চারুরে অনেক ভালো ছেলে দেইখা বিয়ে দিবাম।তোর এত চাপ নেয়ার দরকার নাই।”
রবিন ফাতেমা বেগমের দিকে পুরোপুরি ঘুরলো। ভরাট গলায় বলল-
“আমি আমার নিজের ইচ্ছাতেই এই সিদ্ধান্ত নিছি।এই সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নিছি আজকে শুধু জানায়া দিলাম।আর চারুর আমি ছাড়া অন্য কোথাও বিয়ে হওয়ার সুযোগ নাই।আমি হইতে দিতাম না।আমি চারুরে ভালোবাসি।”
ফাতেমা বেগম বজ্রাহতের মতো তাকালেন। ঘরের বাকি সবারই একই অবস্থা।শুধু শাহজাহান আলি শাখাওয়াত তালুকদার আর রুবিনা বেগম স্বাভাবিক থাকলেন। রানি খুশি হয়ে ভাইয়ের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে চারুর দিকে তাকালো।তাহলে এইবার তারা ননদ ভাবি হতে যাচ্ছে। তাদের দুজনের একদিনেই বিয়ে হবে।এর চেয়ে আনন্দের কি হতে পারে!
কামরুজ্জামান বলে উঠলেন-
“রবিন,তুমি নিজে থাইকা সব সিদ্ধান্ত নিতে পারো না।আমরা বড়দের না জানায়া এত বড় কথা জনসম্মুখে কেমনে কও তুমি? আমার মেয়ে কি এতই সস্তা হইছে যে তুমি সবার সামনে নিজের ইচ্ছা মতো ঘোষণা দিলা!”
শাখাওয়াত তালুকদার ছেলের হাবভাব দেখলেন। তিনি এগিয়ে এসে কামরুজ্জামান কে বললেন-
“জামান,এতে আমার আর রবিনের মায়ের কোনো আপত্তি নাই।আমার ছেলের যা চায় আমরাও তাতেই খুশি।”
কথাটা বলে তিনি সম্মতির জন্য রুবিনা বেগমের দিকে তাকালেন। রুবিনা বেগম মাথা নাড়িয়ে সায় জানালেন।শাখাওয়াত তালুকদার হাসি হাসি মুখ করে কামরুজ্জামানের দিকে তাকালেন।কামরুজ্জামান শক্ত কন্ঠে বললেন-
“আমার মেয়েরে বিয়ে করতে চাইলে আমার পরিবারের কাছে প্রস্তাব নিয়া আসুক, আমরা যাচাই কইরা মতামত জানাইবাম।কিন্তু ভরা মজলিশে যেইখানে আমার মেয়ের চরিত্র নিয়ে কথা উঠছে সেইখানে সে বিয়ের কথা কেমনে জানায়!তার মানে সে কি আমার মেয়েরে দয়া করতাছে? আমার মেয়ের দয়ার দরকার নাই।আমার মেয়ের চরিত্রে কোনো দাগ নাই যে কারো দয়া লাগব।”
রবিন খুব বিরক্ত হলো এমন সময়ে এসব অর্থহীন কথাবার্তায়। সে কামরুজ্জামানের দিকে তাকিয়ে বলল-
“মামা,আমি কাওরেই দয়া করতাছি না। আমি চারুরে আগে থাইকাই ভালোবাসি। বড়মামাও তা জানে।আমার বাড়ির সবাই জানে। শুধু আমি বিয়ের কথাটা ভুল সময়ে তুলছি বইলা আমার ভালোবাসা দয়া হইয়া গেলো? ঠিক আছে আপনার মেয়েরে বিয়ে দিয়েন না আমার সাথে।কিন্তু অন্য কোথাও বিয়ে দেয়ার কথাও ভুইল্লা যান।আর গ্রামবাসী আমার কাজ অনেকটা আগায় দিছে। তারাই আপনার মেয়ের বিয়ে হইতে দিবে না। যাই হোক অর্থহীন আলোচনা বাদ দিয়া বিয়ের আয়োজন নিয়া কথা বলেন।এক দিনে দুই বিয়ের আয়োজন করাটা একটু কঠিন হইব।”
রবিন শক্ত কন্ঠে কথাগুলো বলে বসার ঘর ছেড়ে বাড়ির বাইরে বের হয়ে গেলো। সকলে তার বের হওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
তুহিন গেট পেরিয়ে হন্তদন্ত হয়ে তালুকদার বাড়িতে ঢুকছিলো তখনি সে রবিনের মুখোমুখি হলো।রবিন মাথা নিচে দিয়ে হেটে আসছিলো বলে তুহিনকে দেখতে পায় নি।তুহিন রবিনের বাহু ধরে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
“কই যাস?”
“কাজ আছে।সাথে আয়। ”
তুহিন বুঝতে পারলো রবিন কোন কাজের কথা বলছে।সেও পিছু নিলো।চারু কিডন্যাপ হওয়ার খবর পাওয়ার সাথে সাথেই তুহিন লোকবল নিয়ে খুজতে বেরিয়েছিলো। জামশেদ মজুমদারও অনেক সাহায্য করেছে।সবুর আলীর সমস্ত লোকদেরকে পাকড়াও করেছে। তারপর সবুর আলীর ছোট ছেলেকে তুলে এনে রবিনের হাতে দিয়েছিলো।যার কারনে চারুকে পেতে সুবিধা হয়েছে।তুহিন চারুর কিডন্যাপের জন্য নিজেকে দোষারোপ করে।সে যদি রানিকে না ডাকতো তাহলে এই কান্ড ঘটতো না।
গেটের কাছে যেতেই রবিনের দেখা হলো জামশেদ মজুমদারের সাথে। তিনিও চারুকে পাওয়ার খবর শুনে তুহিনের সাথে এসেছেন এই বাড়িতে। রবিন জামশেদ মজুমদারকে দেখা মাত্রই বিনীতভাবে সালাম দিলো।তারপর গেট দিয়ে বেরিয়ে গেলো। তুহিনও রবিনের পিছু পিছু বেরিয়ে গেলো।
__________
সবুর আলী বিছানার কিনারায় দুইপাশে দুই হাত বিছানায় রেখে বসে আছেন। তার সামনেই ফ্লোরে বসে আছে তার ছোট ছেলে সিরাজ আলী। একটু আগেই তার ছোট ছেলে কে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে চড় বসিয়েছেন তিনি। তার আহত ছেলে চড় সামলাতে না পেরে ফ্লোরে বসে গেছে। সবুর আলী তীব্র ক্রোধে উত্তেজিত হয়ে আছে।তার বড় বড় শ্বাস পড়ছে। বুক উঠানামা করছে।ছেলের দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে একটা বিশ্রি গালি দিয়ে বললেন-
“এতদিনের প্ল্যান একদিনে শেষ কইরা দিলি!!তোর লাইগা আমার প্রতিশোধ নেওয়া হইলো না।এখন তালুকদারের হাতে মরবার লাইগ্যা রেডি হ।”
সিরাজ আলী বড্ড ভয় পেলো।সে খুব ই ভীতু প্রকৃতির লোক।সে এত তাড়াতাড়ি বউ বাচ্চা রেখে মরতে চায় না।বাপের প্রতিশোধের চক্করে পড়ে নিজের অমূল্য প্রাণটা খোয়াতে চায় না সে।সে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো-
“আব্বা চলেন আলুকদারের কাছে মাফ চাই। মাফ চাওয়া ছাড়া উপায় নাই।রবিন নিশ্চয়ই ভাইজানরে জানে মা*ইরা দিছে। আমরা মাফ না চাইলে আমরারেও জানে মা*ইরা দিব।আব্বা….”
গর্জে উঠলেন সবুর আলী।চিৎকার করে বললেন-
“চুপ কর হারাম*জাদা।তুই…..”
চিৎকার দেয়ার কারনে সবুর আলীর কাশি উঠে গেলো। অনেক্ষন পর কাশি থামিয়ে বললেন-
“তুই গুদামঘরের হদিস দিলি কেন রবিন্যারে? তুই হদিস না দিলে তো এতক্ষনে ওর বাড়ির মাইয়ার সম্মান ধূলাত মিইশ্যা যাইতো।তখন রবিন্যা উইঠ্যা দাড়ানির শক্তি পাইতো না।”
সিরাজ আলী চোখ নামিয়ে ফেললো। সে তো ইচ্ছা করে গুদামঘরের হদিস দেয় নি।মজুমদারের লোকেরা যখন তাকে পাকড়াও করে রবিনের কাছে দিয়ে দিলো তখনই রবিনকে দেখামাত্র ভয়ে তার অন্তরাত্মা বেরিয়ে গিয়েছিলো।রবিন যে কত উগ্র প্রকৃতির এটা সে নির্বাচনে মারামারির সময় দেখেছে। রবিনের লোকদের হাতে কিল ঘুষি খেয়েও সে নিজেকে শক্ত রেখেছিলো, পণ করেছিলো যে কিছুই স্বীকার করবে না।কিন্তু রবিন যখন লোহার শিক আগুনে পুড়িয়ে নিয়ে চোখ তুলতে আসলো তখন আর সে নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি। গরগর করে সব বলে দিয়েছিলো।
হঠাৎ টিনের গেট এ বিকট শব্দ হলো। সিরাজ আলী কেঁপে উঠলো। রবিন কি চলে এলো নাকি? সব স্বীকার করার পর তো তাকে ছেড়ে দিয়েছিলো এখন তাহলে বাড়িতে আসলো কেন? তার বড় ভাই কি মেয়েটার কোনো ক্ষতি করে দিয়েছে?এখন রবিন প্রতিশোধ নিতে এসেছে? সিরাজ আলী ভয়ার্ত চোখে সবুর আলোর দিকে তাকালো। সবুর আলী ক্রুদ্ধ চোখে তার ঘরের বন্ধ কাঠের দরজার দিকে তাকালো।
রবিনের এক লাথিতে তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে ঘরের দরজা খুলে গেলো। ঘরে ডুকলো রবিন আর সাথে তুহিন। রবিন ঘরে ঢুকেই কোনো কথা ছাড়াই ফ্লোরে বসে থাকা সিরাজ আলীকে লা*থি মারলো।সিরাজ আলী ছিটকে গিয়ে পড়লো একপাশে। রবিন রিভল*বার বের করে সবুর আলীর কপাল বরাবর তাক করলো। হিংস্র কন্ঠে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল-
“তোর জন্য একটা বুলেট খরচ করতেও মায়া লাগে। এম্নিই তুই দুইদিন পর মইরা যাবি।কিন্তু তাও নিজের হাতে তোরে মারতে লোভ সামলাইতে পারতাছিনা।”
সবুর আলী ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললো-
“কর,গু*লি কর। তোর বংশ খু*নি বংশ।তোর দাদা একটা খু*নি। আমার ভাইরে খু*ন করছে। তুই নিজেও তো খু*নিই হইবি।”
রবিনের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। হাতের রিভল*বার নাড়িয়ে বললো-
“তোর ভাই আমার চাচারে মা*রছে। প্রতিশোধ হিসেবে আমার দাদা তোর ভাই রে মা*রছে। হিসাব মিটমাট।তুই নতুন কইরা হিসাবের খাতা খুললে আবারো খুনা*খুনি হইব।”
সিরাজ আলী উঠে এসে রবিনের কাছে দাঁড়িয়ে অনুনয় করে বললো-
“রবিন আমি তো তোর কাকা লাগি।আমার দিকে তাকায়া এইবারের মতো আমার অসুস্থ বুড়া বাপরে ছাইড়া দে।”
রবিন কিড়মিড় করে বলল-
“তোমার বুড়া বাপ আমার বাড়ির মেয়ের সম্মানে হাত দিসে আর তুমি আর তোমার ভাই সায় দিছো।আমার দাদার রীতিই অনুসরন করা উচিত আমার।”
“হ তেইলে খু*ন কর আমারে। তেইলেই সব মিটমাট হইয়া যাইব।”
সবুর আলীর কথায় রবিন ক্রুর দৃষ্টিতে তাকালো।তার মেজাজ সামলানো খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে।তুহিন দুই হাত বুকে বেঁধে বললো –
“এত কইরা যখন কইতাছে তাইলে এই বুড়ার মাথায় একটা বু*লেট ঢুকায় দে না।ট্রি*গারটা টিইপ্পা দে। কি দাদা বু*লেট কি মাথায় দিতো নাকি বুকে?”
সবুর আলী খেয়ে ফেলবে টাইপ দৃষ্টি দিয়ে তুহিনকে দেখলো।তুহিন একটু ঝু্ঁকে বললো-
“আমার বাপের কানে বিষ ঢাইল্লা তালুকদার বাড়ি আর মজুমদার বাড়ির সম্পর্ক নষ্ট করছেন। এখন কাপুরুষের মতো মেয়েদের সম্মানে হাত দিছেন।এই বুড়া বয়সে এসব বাদ দিয়া আল্লাহর কাছে মাফ চান।”
রবিন সবুর আলীর কপালে রিভ*লবার ঠেকিয়ে বললো-
“অনেকবার আমারে মারার চেষ্টা করসস আমি টু শব্দটাও করি নাই।কিন্তু বাড়ির মেয়ের গায়ে হাত দেয়া বরদাস্ত করব না। এর মাশুল তোর বড় ছেলে দিব।আর এর পরেরবার আমার পরিবারের দিকে চোখ তুইলা তাকাইলে তোর বংশ নির্বংশ কইরা দিবাম।”
বলে রবিন বেরিয়ে গেলো।সবুর আলী অসহায়ের মতো চিৎকার করে বলল-
“রবিন আমার পোলার কিছু হইলে আমি কাউরে ছাড়তাম না।”
তুহিন মুখে “চ” জাতীয় শব্দ করে বলল-
“আহ দাদা! আপনার পোলা অনেক খাটাখাটনি করছে তাই রবিন একটু তার খাতির যত্নের ব্যবস্থা করছে।আপ্যায়ন শেষ হইলে পাঠায় দিব,নো টেনশন ।”
________
বসার ঘরে বাড়ির সবাই বসে আছে।বাইরের মানুষ সবাইকেই বুঝিয়ে শুনিয়ে বের করা হয়েছে।থমথমে হয়ে আছে পরিবেশ।কামরুজ্জামান কথা বললো –
“এইভাবে কারো বিয়ে হয় না।এই বিয়েতে আমার মত নাই।”
রুবিনা বেগম কথা বললেন-
“মত না থাকার কি হইলো। আমার ছেলেরে ছোট থাইকাই তোরা চিনস।চারুর জন্য ওর চেয়ে ভালো আর কে হইতে পারে।”
জামশেদ মজুমদার কথার রেশ টেনে বললেন –
“জামান তুমি অমত কইরো না। তুমি তো তোমার মেয়ের ভালো চাও নাকি। রবিন তোমার বইনের ছেলে।চারু তালুকদার বাড়িতেই ভালো থাকব।”
“এই তালুকদার বাড়ির জন্যই আমার মেয়ে বিপদে পড়ছে।”
কামরুজ্জামানের কথায় শাখাওয়াত তালুকদার আহত হলেন। কথাটা চিরন্তন সত্য।তিনি শাহজাহান আলীর দিকে তাকিয়ে বললেন-
“তোমার বোনরে যখন বিয়ে করতে চাইছিলাম তখন আমার বংশের দোহাই দিয়া ফিরায় দিছিলা।পরে ঠিক ই আমি তোমার বোনরে বিয়ে করছি।এতদিনে আমি কি তোমার বোনের উপর কোনো আঁচ লাগতে দিছি?নাকি আমি নিজে কোনোদিন তোমার বোনরে কষ্ট দিছি?”
শাহজাহান আলী কোনো কথা বললেন না চুপ করে শুনে গেলেন। শাখাওয়াত তালুকদার কামরুজ্জামানের দিকে তাকিয়ে আবারও বলতে লাগলো-
“আমার ছেলে তোমার মেয়েরে অনেক আগে থাইকাই পছন্দ করে। যা অঘটন ঘটছে এর একটাতেও কারো হাত ছিলো না।আমার ছেলে তোমার মেয়ের লাইগা জান দিতেও প্রস্তুত। তবে সে উগ্র প্রকৃতির। আমার মতো মন জয় কইরা চারুরে পাওয়ার চেষ্টা সে করতো না।প্রয়োজনে সে চারুরে অন্য জায়গায় বিয়ে দেয়ার সব রাস্তা বন্ধ কইরা দিব। তুমি কি তোমার মেয়েরে সারাজীবন ঘরে রাখবা?”
কামরুজ্জামান কিছু বললেন না। তিনি মনে মনে চাচ্ছেন না রাজনৈতিক পরিবারে মেয়ের বিয়ে দিতে আর রবিনের মতো উগ্র ছেলের সাথে তো নাইই।কিন্তু এখন সব উলটে গেছে। গ্রামে গ্রামে চারুর নামে অপবাদ ছড়িয়ে যাবে। চাইলেও অন্য কোথাও বিয়ে দেয়া সম্ভব না।
শাহজাহান আলী ভাইয়ের কাধে হাত রেখে বললেন –
“’মন টা একটু নরম কর। মেয়ের বাপ তুই।তোর এত জেদ মানায় না।”
কামরুজ্জামান ভাইয়ের কথা বুঝতে পারলেন।মুখ তুলে স্ত্রীর দিকে তাকালেন।রাজিয়া বেগম মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। পরিবারে বাকি সবাই-ই সম্মতি দিলো।কামরুজ্জামানও মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন।
সারা ফ্লোরে বসে ফুপিয়ে কাঁদছে তাকে জড়িয়ে ধরে আছে ফাতেমা বেগম। তার দৃষ্টি শূন্য। রবিনের মুখ থেকে চারুর জন্য তার ভালোবাসার কথা শোনার পর নিজের মেয়ের সাথে তার বিয়ের কথা তুলেন নি।আর যাই হোক তিনি মা হয়ে মেয়েকে অপমানিত হতে দিবেন না।সারা নাহয় কয়েকদিন কষ্ট পেলো।আস্তে আস্তে ঠিক ভুলে যাবে।তিনি ভালো ছেলে দেখে মেয়ের বিয়ে দিবেন।
______
গভীর রাতে চারুর ফোন বেজে উঠলো।চারুর ঘুম আসছিলো না জেগেই ছিলো। সে হাত বাড়িয়ে ফোন নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকালো।রবিন ফোন করছে।চারু পাশে শুয়ে থাকা তার মা আর বড় চাচীর দিকে তাকালো। দুজনেই ক্লান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে।দুজন ই চারুকে মাঝখানে নিয়ে শুয়েছে। একটুর জন্যও কাছ ছাড়া করছে না।চারু কল রিসিভ করে কানে ধরলো।কানে এসে বাড়ি খেলো ঘন নিশ্বাস সাথে রবিনের গম্ভী ভরাট গলা।
“চারু?জেগে আছিস?”
“হু”
“ছাদে আসতে পারবি?”
“এখন?”
“পারবি না?তোরে দেখতে মন চাইতাছে।আয়।”
রবিনের কন্ঠ খুব করুণ শুনালো।চারু আসছি বলে কল কেটে দিলো।আস্তে করে দরজা খুলে পা টিপে টিপে ছাদে আসলো। ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে ছাউনির নীচের চৌকিতে রবিনের অবয়ব দেখতে পেলো।এখনো সেই আগের সাদা পাঞ্জাবিটাই পড়নে। চারু এগিয়ে এসে দাঁড়িয়ে ডাক দিলো-
“রবিন ভাই।”
রবিন ঘাড় ফিরিয়ে চারুর দিকে তাকালো।বিষাদময় চোখে চারুকে দেখলো কিছুক্ষন।তারপর ইশারা করে বিছানা দেখিয়ে বলল-
“বস।”
চারু বিনা বাক্যব্যয়ে বসলো।রবিন চারুর কোলে শুতে চাইলো কিন্তু চারুর দিকে তাকিয়ে কি ভেবে একটা বালিশ এনে চারুর কোলে রেখে তারপরে শুয়ে পড়লো। চারু আকস্মিক এই ঘটনায় চমকে উঠলো।শক্ত হয়ে গেলো তার শরীর। রবিন গভীর জড়ানো কন্ঠে বললো-
“একটা রাত না ঘুমাইলে কি তোর সমস্যা হইব? প্রমিস কাল বিয়ের পর রাতে তোরে আমি ঘুমাইতে দিব।ডিস্টার্ব করব না।”
চারু কি বলবে বুঝে পেলো না।রবিন নিজেই আবার বললো –
“মাথায় হাত বুলায় দে।হালকা চুল টাইনা দে।আমি ঘুমাব।”
চারু হতবিহ্বল হয়ে গেলো রবিনের আবদারে। রবিন ধমকের সুরে বললো-
“কি সমস্যা?আমার কথা শুনস নাই?”
চারু তৎক্ষনাৎ রবিনের চুলে হাত দিলো।তার হাত ইষৎ কেঁপে উঠলো।আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।রবিন ঘুম জড়ানো গলায় বললো-
“একটা গান ধর………না থাক। তোর গানের গলা জঘন্য ।”
এই কথা শুনে চারু রবিনের চুলে জোরে টান দিলো।রবিন চোখ মেলে তাকালো।ঘাড় ঘুরিয়ে চারুর দিকে ফিরে বললো-
“হবু জামাইরে চুল টানা দেস?”
“আর আপনি যে হবু বউ এর গানরে জঘন্য বললেন তার বেলায়?”
রবিন অন্যরকম এক দৃষ্টি ফেললো চারুর দিকে। চারু অপ্রস্তুত হয়ে অন্য দিকে তাকালো।রবিন আবারো আগের মতো শুয়ে চোখ বন্ধ করে বলল-
“বিয়ের পর উঠতে বসতে প্রশংসা করবাম। সাথে আরো অনেককিছু।”
রবিন চারুর একটা হাত টেনে নিয়ে বুকে চেপে ধরলো।ঘুম ঘুম গলায় বলল-
“আমারে ছাইড়া যাইস না শুধু।”
চারুর সমস্ত কায়া থম মেরে গেলো রবিনের ছোয়ায়।সে শক্ত হয়ে রবিনের দিকে তাকিয়ে বসে রইলো। রবিনের শক্ত চোয়াল দেখা যাচ্ছে। ঘন নিশ্বাসের শব্দ আসছে।নিশ্বাসের শব্দে চারুর যেন ঘোর লেগে এলো। সে রবিনের গালে অন্য হাতটি রাখলো। দাড়ির খোচা টের পেলো হাতে।অন্যরকম এক অনুভূতিতে ভরে গেলো হৃদয়।ভালোবাসার মানুষ কাছে থাকলে বুঝি এমন ই হয়।
চলবে
[এত দেরিতে গল্প দেয়ার জন্য সরি। লিখতে লেট হয়ে গেছে।কাল থেকে তাড়াতাড়ি দিতে চেষ্টা করব ইন শা আল্লাহ]