#তুই_শুধু_আমার 💕
#Nusrar_Jahan_Bristy
#Part_24
ইশা কেবিনের এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে। ইশা কেবিন থেকে যাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিল কিন্তু জিসানের জন্য বের হতে পারলো না। ইশা ভয়ে জিসানের দিকে দেখাতে পর্যন্ত পারছে না। জিসান চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে রাগে ইশার দিকে তাকিয়ে আছে। কপালের নীল রগটা ফুলে গেছে অতিরিক্ত রাগে।চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। হাত দুটো মুঠো বন্দী করে রেখেছে। হঠাৎ করেই জিসান উঠে দাঁড়ায় আর ইশার দিকে এগোতে থাকে। ইশার তো প্রাণ যায় যায় অবস্থা। পৃথিবীতে যদি ইশা কাউকে ভয় পায় সেটা হলো একমাত্র জিসান।
জিসান ইশার দিকে এগোছে আর ইশা পিছুতে থাকে। এক পর্যায়ে ইশা দেয়ালের সাথে আটকে যায়। ইশার গলা কাপছে কথা বলতে। কপাল থেকে ঘাম বেয়ে পড়ছে এসি থাকা সত্বেও। ইশা মনের ভেতরে সাহস জুগিয়ে বলে।
–কি করছেন কি মিস্টার চৌধুরী? আমাকে যেতে দিন।
জিসান ভ্রু কুঁচকে চোখ দুটো ছোট করে বলে।
–কিহ? কি বললি তুই??
–যেটা বলেছি আপনি কি শুনতে পান নি আমাকে যেতে দেন।
ইশা চলে যেতে নিলে জিসান ইশার দুহাত আঁকড়ে ধরে দেয়ালে সাথে চেপে ধরে।
–কি করছেন কি আপনি মিস্টার চৌধুরী? আমার হাত ছাড়ুন!
জিসান দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
–এত সহজে তোকে ছেড়ে দিবো। কি ভেবেছিলি তুই তোকে আমি খুজে পাবো না। সত্যি তোকে আমি খুজি পায় নি কিন্তু দেখ সেই তুই নিজে এসে আমার কাছে ধরা দিলি।
–আমার হাত ছাড়ুন প্লিজ মিস্টার চৌধুরী।
–যদি না ছাড়ি তাহলে তুই কি করবি? আগে বল তুই কোথায় চলে গিয়েছিলি ইশু আমাকে না বলে? জানিস তুই আমি এই পাঁচ পাঁচ বছর কিভাবে কাটিয়েছি?
ইশা জিসানের দিকে এক নজরে তাকিয়ে মনে মনে আওড়ায়।
–আমি জানি তুমি কিভাবে এই পাঁচটা বছর কাটিয়েছো রুহি আপুর সাথে। নাহ আমাকে দুর্বল হলে চলবে না এক বার যখন তোমার জীবন থেকে চলে গেছি তাহলে কেন আমি আবার তোমার আর রুহি আপুর জীবনটা নষ্ট করবো?
জিসান ইশাকে চুপ থাকতে দেখে ধমকে উঠে।
–কি হলো কোথায় চলে গিয়েছিলি তুই??
ইশা নাকের পাঠা ফুলিয়ে শক্ত কন্ঠে বলে।
–আপনাকে আমি আমার হাত ছাড়তে বলেছি মিস্টার চৌধুরী আর আপনার সাহস কি করে হলো আমার হাত ধরার।
–মানে।
আবাক হয়ে কথা বলে জিসান।
–মানে আপনি বুঝতে পারছেন না একা একটা ঘরে আপনি একটা মেয়ের হাত ধরেন কোনো অধিকারে আমি তো আপনাকে সেই অধিকার দেই নি।
জিসান কি করবে কিছই বুঝতে পারছেনা ইশার মুখে এমন একটা কথা শুনে। জিসান ইশার হাতের বাঁধন ছেড়ে দিয়ে ইশার কাছ থেকে দুরে সরে আসে। জিসান নরম গলায় বলে।
–সরি আমি আসলে বুঝতে পারি নি তোর যে এতটা খারাপ লাগবে আমার ছোঁয়াতে।
ইশা বুকটা মুচরে উঠে মনে মনে বলে।
–আই এম সরি ভাইয়া আমি এভাবে বলতে চাই নি তোমাকে আর তোমার ছোঁয়াতে আমার কোনো দিনও খারাপ লাগে নি আর এখনও লাগে নি। কিন্তু পরিস্থিতিই যে এমন তোমাকে আমার কাছ থেকে দুরে থাকতে হবে। কারণ তোমার জীবনে যে আরও দুই জন মানুষ আছে। নাহ আমাকে এক্ষুনি এখান থেকে চলে যেতে হবে। না হলে যে আমি দুর্বল হয়ে যবো। আমি চাই না তোমার সামনে আমি নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করতে।
ইশা তাড়াতাড়ি করে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। জিসান ইশার হাত ধরতে গিয়েও ধরে নি। কি করে জিসান আটকাবে ইশাকে ও নিজেই যে জিসানের কাছ থেকে দুরে সরে থাকতে চায়। জিসান ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে। ইশা যাওয়ার সাথে সাথে সাঈদ কেবিনের ভেতরে এসে বলে।
–ভাইয়া কি হয়েছে? ভাবি এভাবে চলে গেলো কেন?
জিসান নিঃশব্দে হেসে আবেগী স্বরে বলে।
–এতো অভিমান আমার উপরে তোর যে আমার ছোঁয়াতেও তোর খারাপ লাগে। একবার তো আমাকে জিঙ্গেস করতে পারতি আমি কেন এমনটা করেছিলাম ওই দিন?
–ভাইয়া কিছু তো বলো?
–সাঈদ আমার সব খবর চাই ইশার ব্যাপারে! ও কি করে একটা কোম্পানির এমডি হয়েছে? আজকের মধ্যে আমার সব খবর চাই।
–ঠিক আছে ভাইয়া।
–আর একটা কথা এই ডিলটা তালুকদার গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির সাথে ফাইনাল কর।
–ওকে ভাইয়া।
সাঈদ চলে যেতে জিসান চেয়ারে মাথাটা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলে।
–কোন তুই আমার সাথে এমন করছিস কেন? পাঁচ বছরে পর আমাদের দেখা হয়েছে একবারও কি তোর জানতে ইচ্ছা হলো না আমি কেমন আছি তলকে ছাড়া? তোকে যখন আমি একবার পেয়েছি আর তোকে আমি যেতে দিবো না আমার জীবন থেকে। তোর সব ভুল ধারনা আমি ভাঙ্গবো কারন #তুই_শুধু_আমার আর অন্য কারোর তুই কিছুতে হতে পারিস না তুই সবটাই আমার।
অন্য দিকে ইশা ঘরের দরজা বন্ধ করে কান্না করতে থাক।
–আমি খুব খারাপ খুব নিজের ভালোবাসর মানুষটাকে হার্ট করেছি। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও ভাইয়া প্লিজ।
দরজার বাইরে থেকে ইশান অনেক ক্ষন ধরে মাম্মাম বলে ডেকে যাচ্ছে। ইশানের ডাকাডাকির মাত্র বাড়তে শুরু করেছে দেখে ইশা নিজের চোখের পানি মুজে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই ইশান ইশাকে জড়িয়ে ধরে বলে।
–মাম্মাম তোমার কি হয়েছে?
–কিছু হয়নি সোনা।
–তাহলে তুমি দরজা বন্ধ করে কি করছিলে। মাম্মাম তুমি কান্না করছিলে?
–কই না তো!
–তাহলে তোমার চোখে পানি কেন?
–ওওও কিছু না চোখটা একটু জ্বালা করছিলো তো তাই পানি পড়ছে আর কি।
–আচ্ছা এবার চলো আমি তুমি দাদু, দাদি মিলে ভাত খাবো। আজকে তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে।
–ঠিক আছে সোনা তুমি নিচে যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
–আচ্ছা।
ইশা একটা র্দীঘ শ্বাস ফেলে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ইশানকে একা নদেখে আয়েশা বেগম বলেন।
–ইশান দাদু ভাই তোমার মাম্মাম কোথায় আসে নি?
–মাম্মাম ফ্রেশ হয়ে আসছে।
–আচ্ছা তুমি আমার কাছে আসো তোমাকে আমি খাইয়ে দেই।
–না না না আমি আজকে ম্মামামের হাতে খাবো।
–ঠিক আছে।
–ওই তো ম্মামা চলে এসেছে।
ইশান ইশাকে এনে চেয়ারে বসায়
–মাম্মাম তুমি এবার আমাকে খাইয়ে দেও
ইশা ইশান খাইয়ে দিছে চুপচাপ কোনো কথা বলছে না। ইশার মৌনতা আয়েশা বেগম আর একলাস তালুকদার লক্ষ্য করছে। একলাস তালুকদার খলা খাকারি দিয়ে বলেন।
–ইশা মা কিছু হয়েছে কি?
–নাহ বাবা সব কিছু ঠিক আছে।
–কিছু হয়ে থাকলে আমাকে নির্ভয়েবলতে পারিস আমি চেষ্টা করবো সমাধান করার জন্য।
ইশা মুচকি হেসে বলে।
–নাহ বাবা আমার কিছু হয় নি তুমি চিন্তা করো না।
অন্য দিকে…..
জিসান নিজের ঘরে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে আর একের পর এক সিগারেট খাচ্ছে। জিসানের বুকটা ফেটে যাচ্ছে ইশার এমন আচরণ করার জন্য। সাঈদের ডাকে জিসান পিছনে ফিরে তাকায়।
–ভাইয়া সব খবর নিয়ে এসেছি ভাবির।
–ওকে ঠিক আছে সব কিছু খুলে বল আমাকে।
–ভাবি তালুকদার বাড়িতে পাঁচ বছর ধরে আছে। মাঝে তিন বছরের জন্য একবার দেশের বাইরে চলে গেছে। কারণ ভাবির নাকি তখন বাচ্চা হয়েছিল।
–হোয়াট ইশার বাচ্চা হয়েছিল মানে?
–হে ভাইয়া ভাবির একটা চার বছরের বাচ্চা আছে।
–তুই সবকিছু ভালো ভাবে জেনে বলচ্ছিস সাঈদ।
–হে ভাইয়া আমি সবকিছু ভালো ভাবে জেনে বলছি।
–তার মানে ও কি কাউকে বিয়ে করেছে?
–না ভাইয়া ভাবি কাউকে বিয়ে করেনি।
–তাহলে বাচ্চা! বাচ্চা আসলো কোথা থেকে?
–জানি না সেটা আমি।
–ইশার সাথে আমার সরাসরি কথা বলতে হবে।ও আমার কাছ থেকে নিশ্চয়ই কিছু লুকাছে। ওর মুখ দেখেই আমি আজকে বুঝতে পারছি। আর শুন বাড়ির কাউকে জানানোর কোনো দরকার নেই যে ইশাকে আমরা খুজে পেয়েছি।
–আচ্ছা ভাইয়া আমি এখন আসি।
সাঈদ চলে যেতেই জিসান পুনরায় চাঁদের দিকে নজর রেখে বিড়বিড় করে বলে।
–ইশার চার বছরের একটা বাচ্চা আছে তাহলে কি ও আবার বিয়ে করেছে না না এটা ইশা করতে পারে না। ও যদি কাউকে বিয়ে করে থাকে তাহলে আমার থেকে কেউ খারাপ হবে না। এটা ইশা জানে কিন্তু।
______
ইশান শুয়ে আছে ইশার সাথে আর ইশা ইশানের মাথায় হাত বুলিয়র দিছে।
–মাম্মাম।
–হুম!
–আমার পাপা কবে আসবে? সবার পাপারা ঘুরতে নিয়ে যায় আমার বন্ধুদের। কিন্তু আমার পাপা তো আমার কাছে কোনো দিন আসে নি। জানো যখন আমার বন্ধুরা ওদের পাপার সাথে ঘুরে তখন আমার খুব মন খারাপ হয়। পাপা খুব পচা আমার কাছে আসে না খুব পচা পাপা।
–না সোনা তোমার পাপা পচা না আসলে তোমর পাপা তো এখানে নেই যখন এখানে আসবে তখন তোমাকে খুব ভালোবাসবে দেখে নিও।
–সত্যি পাপা আসবে কিন্তু কবে?
–চলে আসবে সোনা তুমি এখন ঘুমাও।
–নাহ তুমি আমাকে আগে বলো পাপা কবে আসবে আর আমাকে নিয়ে কবে ঘুরবে?
–তোমার পাপা চলে আসবে কাজ শেষ হলে এখন তুমি ঘুমাও আর কালকে আমি তোমাকে নিয়ে ঘুরবো।
–সত্যি।
ইশা ইশানের কপালে একটা চু’মু দিয়ে বলে।
–হুম! এবার তুমি ঘুমাও।
ইশা ইশানকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। কিছুক্ষণ ঠাই দাঁড়িয়ে থেকে আফসোসের স্বরে।
–কি পোড়া কপাল আমার ছেলেটার বাবার আদর পেলো না। আমিও আমার বাবা মার আদর স্নেহ ভালোবাসা পেলাম না আর আজকে আমার ছেলেটাও ওর বাবার ভালোবাসা টুকু পেলো না।
ইশা দুচোখ বন্ধ করে জিসানের সাথে কাটানো মুর্হূত গুলো ভাবছে। হঠাৎ করেই ইশার ফোনটা বেজে ওঠে। ইশা ফোনটা ধরে।
–হ্যালো।
–ম্যাডাম আমি রিয়াজ।
-ও রিয়াজ বলুন।
–ম্যাডাম একটা খুশির সংবাদ আছে।
–কি?
–ম্যাডাম জিসান চৌধুরী আমাদের সাথে আজকের ডিলটা ফাইনাল করেছে। তাই ওনি আপনার সাথে একটু বসতে চান এই ডিলটার বিষয় নিয়ে। তাই ওনি জানতে চাইছেন আপনার সময় কখন হবে?
ইশা মনে মনে বলে।
–আমি কি করে আবার ওনার মুখোমুখি হবো? আমি যদি ওনার সামনে দুর্বল হয়ে যাই তাহলে যে প্রবলেম হয়ে যাবে। কিন্তু এই ডিলটা যে আমাকে নিতেই হবে কোম্পানির ভালোর জন্য।
–ম্যাডাম আপনি লাইনে আছেন কি?
–হুম! ওনাকে বলে দেন আমি কালকে ওনার সাথে বসতে পারবো না পরের দিন আমি ওনার সাথে মিট করে নিবো।
–ওকে ম্যাডাম।
–ওনি সব কিছু জেনে যাই নি তো যে আমার একটা বাচ্চা আছে তাহলে তো গন্ডগোল হয়ে যাবে একটা। কি করবো আমি এখন??
ইশা সারাটা রাত টেনশন করেই কাটিয়ে দিলো।
সকাল এগারটায়। ইশা ইশানকে নিয়ে মার্কেটে এসেছে খেলনা কিনে দেওয়ার জন্য।
–মাম্মাম আমি এই ডেডি বিয়ারটা নিবো।
–এটা ঠিক আছে দাঁড়াও।
ইশা ইশানের জন্য ডেডি বিয়ার কিনে বলে।
–এই যে তোমার ডেডি বিয়ার।
ইশা ডেডি বিয়ারটা কিনে তাকিয়ে দেখে ইশান তার পাশে নেই।
–ইশান… ইশান কোথায় গেলো? এই যে ভাইয়া আমার পাশে একটা বাচ্চা ছিল ও কোথায় গেছে কি দেখেছেন?
–না আপা আমি তো দেখেনি।
–ইশান… কোথায় গেলো ছেলেটা?
ইশা চারদিকে ইশানকে খুজছে কিন্তু পাচ্ছে না। ইশার মাথা কাজ করছে না কি করবে? হঠাৎ করেই ইশাকে ইশা মাম্মাম বলে ডাক দেয়।
–ইশান।
ইশা ইশানকে জড়িয়ে ইশানের সারা মুখে চুমু দিতে থাকে। ইশানকে না দেখতে পেয়ে যে ইশার প্রাণ টা চলে গিয়েছিল।
–ইশান কোথায় চলে গিয়েছিলে তুমি মাম্মামকে না বলে? মাম্মামের কি চিন্তা হয় না তোমরা জন্য আর কখন আমাকে না বলে কোথাও যাবে না।
–আচ্ছা মাম্মাম। এবার দেখো আমি কাকে নিয়ে এসেছি?
–কাকে নিয়ে এসেছো তুমি?
ইশা এতক্ষন লক্ষ্য করে নি তার সামনে যে কেউ দাঁড়িয়ে ছিল। ইশা যেই মানুষটার দিকে তাকালো তাতে যেন ইশার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।
#চলবে