#তুই_শুধু_আমার 💕
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_15
ইশা বসে আছে জিসানের ঘরে ফুল দিয়ে সাজানো খাটে। সারাঘরে মোমবাতির আলো জ্বলছে সাথে জোৎস্নার আলোতে ঘর আলোকিত হয়ে আছে। ইশা একটা পাতলা কালো শাড়ি পড়েছে সিস্পল ভাবে সেজেছে। কানে জুমকো পড়েছে হাতে সোনার চুড়ি গলাতে একটা ছোট্ট নেকলেস। মুখে হালকা মেকাপ ঠোটে হালকা লিপস্টিক। লম্বা চুল গুলো ছাড়া।
ইশার আজকে কোন জানি ভীষন লজ্জা লাগছে আগেও তো ইশা এই রুমে অনেক বার এসেছে তখন তো লজ্জা লাগে নি তাহলে আজকে কেন জানি ইশার খুব লজ্জা লাগছে। লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে আছে। ইশার শরীরের মনে কেমন জানি এক অদ্ভুদ ফিলিংস কাজ করছে।
_____
সালিহা বেগম বলেন।
–জিসান বাবা একটা কথা বলি দেখ ইশা তকে মেনে নিয়েছ। হয়তো তোকে ভালোবাসে তাই প্লিজ আজকে তদের মাঝে সব জামেলা কিছু মিটিয়ে নে আর এমন কিছু করিস না যাতে করে ইশা কষ্ট পায়।
জিসান নিচের দিকে তাকিয়ে বলে।
–ঠিক আছে মা।
–ঠিক আছে এখন ঘরে যা ইশা তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
জিসান আস্তে আস্তে করে ঘরের দিকে যাচ্ছে আর ভাবছে।
–আজকের রাতটা হয়তো খুব মধুর হতো কিন্তু তুই যে আমাকে অনেক বড় একটা আঘাত করেছিস ইশু সেই আঘাতটা কি করে শুকাবি তুই। আমি জানি তুই হয়তো আমাকে খুশি করার জন্য এই বিয়েটা করেছিস। কিন্তু তুই কি সত্যি আমাকে ভালোবাসতে পারবি। জানি না তোর ভালোবাসা আমার এই পোড়া কপালে আছে কি না।
জিসান নিজের ঘরের দরজা খুলে দেখে ইশা খাটের উপর ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। জিসানের আসার শব্দ শুনে ইশার বুকের ধুপপুকানিটা যেন আরও বেড়ে গেছে। জিসান ইশাকে এমন ভাবে দেখে একটা মুচকি হাসি দেয়। জিসানের খুব ইচ্ছা করছে ইশার কাছে যাওয়ার জন্য কিন্তু ও যে নিজের কাছেই নিজে প্রতিক্ষা করেছে ইশা যত দিন না নিজে থেকে ওর কাছে আসবে তত দিন জিসান ইশার কাছে যাবে না। জিসান ঘরের দরজা লক করে তাতে ইশার মনের ভিতরে যেন একটা টেউ বয়ে যাচ্ছে। জিসান ধীর পেয়ে হেটে সামনে আসছে। ইশা ভাবে হয়তো জিসান ওর কাছে আসবে কিন্তু জিসান আলমারির কাছে চলে যায়। ইশার মনটা খারাপ হয়ে যায়। জিসান আলমারি থেকে নিজের কাপড় বের করে ওয়াশরুমে ডুকে পড়ে ফ্রেস হওয়ার জন্য। ইশার ভীষন রাগ হচ্ছে নিজের ঘোমটাটা নিজেই রাগে তুলে বলে।
–এতো ইগো তোমার জন্য সেজে গুজে বসে আর তুমি আমাকে পাত্তা না দিয়েই চলে গেলে হিটলার কোথাকার ঠিক আছে। আমার নামও ইশা হার আমি কিছুতেই মানবো না।
জিসান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে ইশা সাপের মতো ফুঁসছে। জিসান ইশার এই রুপ থেকে কিছুটা ভ’য় পায়। তাও জিসান ইশাকে কেয়ার না করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করছে। ইশা তা দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
–হুমমম আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করা হচ্ছে ঘরে যে নতুন বউ বসে আছে সে দিকে তার কোনো খেয়াল নেই। ইচ্ছে করছে তো সব চুল ছিড়ে ফেলতে কিন্তু ছিড়লে তো আমারেই সর্বনাশটা হবে। সবাই বলবে দ্যা গ্রেড ইশার হাসবেন্ড টকলা, না না এগুলো আমি শুনতে পারবো না কিছুতেই না। তার চেয়ে ভালো চুল চুলের জায়গাতে থাক আমি না হয় আমার জায়গাটা চেইন্জ করি।
জিসান আয়নার ভিতরে তাকিয়ে দেখে ইশা গভীর ভাবে কি যেন চিন্তা করছে রাগে। জিসান তা দেখে বলে।
–বাবারে মহারাণী দেখা যায় ভীষন রে’গে আছে। ঠিক আছে দেখি আজকে তুই কি করতে পারিস যদি তুই নিজে থেকে আমার কাছে আসিস তাহলে প্রমিজ করছি আমি পৃথিবীর সব সুখ তোর পায়ের কাছে এনে রাখবো।
জিসান সোজা বেলকনিতে চলে যায় ইশার দিকে না তাকিয়ে। ইশা রা’গী চোখে তাকায় জিসানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে।
–হুম বেলকনিতে চলে গেল যাতে আমাকে না দেখতে পারে ইচ্ছে করছে তো তোক। ইশা কুল কুল ঠান্ডা হ এত দিন এই হিটলার তোকে পাওয়ার জন্য অনেক কিছু করেছে এবার আমাকে ওই হিটলারকে পাওয়ার জন্য কিছু করতে হবে। হুমমম কিন্তু কি করতে পারি হুম সোজা সামনে গিয়ে দাঁড়াব।
ইশা আস্তে আস্তে করে খাট থেকে নেমে জিসানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। জিসান ইশাকে দেখেও না দেখার ভান করছে। জিসান বুঝতে পারছে ইশা রমনে যে ওর জন্য একটু হলেও জায়গা আছে। জিসানের খুব হাসি পাচ্ছে ইশার এসব কান্ড দেখে। কিন্তু ইশার মুখে একটা কথা শুনে মেজজটা গরম হয়ে যায়।
–ভাইয়া।
জিসান রা’গে বলে।
–কি হয়েছে?
–এইরে কাম সারছে ভুল করে আবার ভাইয়া বলে ফেলেছি।
মনে মনে কথা বলে জিসানকে বলে।
–সরি সরি আর ভাইয়া ডাকবো না।
জিসান ইশার কথা শুনে মনে মনে বলে।
–বাহ এত উন্নতি হয়ে গেছে এক দিনেই গুড।
–কেমন লাগছে আমায়?
–হুম সুন্দর।
–আমাকে তুমি না দেখেই কিভাবে বলে দিলে আমাকে কেমন লাগছে। দেখে বলো আমাকে কেমন লাগছে?
জিসান ইশার দিকে তাকিয়ে ইশার পা দেখে মাথা পর্যন্ত দেখে। ইশার সাদা পেটটা দেখা যায় পাতলা শাড়ি হওয়ার জন্য। জিসান তা দেখে মনে মনে বলে।
–বাবারে আমার বউ যে এতটা হ*ট আর সে*ক্সি আগে জানতাম না তো আর জানবো কি করে এমন পাতলা শাড়ি ওতো পড়ে নাই কোনো দিন।
–কি হলো বলো? কেমন লাগছে আমাকে?
লজ্জা মাখা কন্ঠে বলে।
জিসান কুটিল হাসি দিয়ে মনে মনে আবারো বলে।
–দাঁড়া তোকে একটু জ্বালাই অনেক জ্বালিয়েছিস আমাকে এবার তোকে একটু জ্বালাই আমি এর থেকেই বুঝতে পারবো তুই আমাকে ভালবাসিস নাকি বাসিস না।
মনে মনে এসব বলে ইশাকে বলে।
–হুম হুম তোকে না আজকে।
—আমাকে আজকে বলো।
আগ্রহী হয়ে বলে কথাটা।
–উমমম…. রুহির থেকে সুন্দর লাগছে না তোকে। রুহি তোর থেকেও অনেক সন্দুরী বুঝলি রুহি রুপ দেখলেই আমি পাগল হয়ে যাই।
এই কথাটা বলে মনে মনে বলে।
–মিছা কথা একে বারে মিছা কথা। আমি তো তকে দেখেই পাগল হয়ে গেছি।
ইশা চোখ বড় বড় করে বলে।
–কিহ বললে তুমি? ওই রুহি আমার থেকেও সুন্দরী।
–হে কেন তাতে কি তোর কোনো সন্দেহ আছে যে রুহি তোর থেকে সুন্দরী না।
–তুমি এটা বলতে পারলে যে আমি ওই রুহির থেকে সুন্দর না। বুঝতে পারছি আমাকে দিয়ে তো এখন তোমার দরকার নেই। আগে তো আমার দরকার ছিল তোমার। ঠিক আছে যাও তুমি ওই রুহি টুহির কাছে আমার কাছে থাকতে হবে না তোমাকে।
ইশার চোখ বেয়ে যেন বন্যা বয়ে যাচ্ছে। জিসান তো পুরাই টাস্কি খেয়ে যায় ইশার এমন রুপ দেখে। জিসান ইশার এমন অবস্থা দেখে যা বুঝার বুঝে নিয়েছে। ইশা চলে যেতে চাইলে জিসান ইশার হাত ধরে ফেলে।
–ছাড়ো আমার হাত তুমি তোমার সুন্দরী রুহির কাছে যাও।
জিসান ইশার কোনো কথা না শুনে ইশাকে টান দিয়ে নিজের বুকে এনে ফেলে বলে।
–জেলাস হচ্ছিস নাকি আমি যে রুহির রুপের প্রশংসা করেছি দেখে।
–আমি কেন জেলাস হবো। তুমি আমাকে ছাড়ো।
–কোথায় যাবি আমাকে ছেড়ে?
–আমি যেখানেই যাই তুমি আমার হাত ছাড়ো।
–এত সহজে তো তুই আমার কাছ থেকে ছাড়া পাবি না জান।
–মানে ( আবাক হয়ে)
–মানেটা হলো গিয়ে…..
জিসান ইশার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে।
–আমি কিন্তু বুঝে গেছি।
–কি বুঝতে পারছো তুমি?
জিসান সোজা হয়ে ইশার মুখটা নিজের দুহাত দিয়ে আবদ্ধ করে বলে।
–ভালোবাসিস আমাকে জান…..
জিসানের কথাটা শুনে ইশার চোখ পানিতে ঝলঝল করে ওঠে আর বলে।
–কি হলো বল না ভালবাসিস কি আমাকে??
–হুমমম খুব ভালোবাসে ফেলেছি তোমাকে।
কান্না জড়িত কন্ঠে বলে।
–সত্যি বলছিস তুই।
–তুমি আমাকে অবিশ্বাস করো….
জিসান ইশাকে ছেড়ে দিয়ে বেলকনির দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।
–ঠিক আছে! তাহলে প্রমান দে যে তুই আমাকে ভালোবাসিস আর আমি তো অনেক বার প্রামান দিয়েছি যে আমি তোকে খুব ভালোবাসি। এবার তোর পালা।
–প্রমান দিতে হবে!
–হুম…
–কিন্তু আমি কি প্রমান দিবো যে আমি তোমাকে ভালবাসি?
–সেটা আমি কি জানি তুই একটু ভাব কেমন!
–কিন্তু……
#চলবে