তুই_শুধু_আমার 💕 #Nusrat_Jahan_Bristy #Part_22

0
344

#তুই_শুধু_আমার 💕
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_22

পাঁচ বছর পরে….

জিসানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে ইশা চুপটি করে। কেউ কোনো কথা বলছেনা শুধু একে ওপরের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনা যাচ্ছে। জিসান ইশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে চিরজীবনের জন্য ওর জীবন থেকে।

জিসানের কানে হঠাৎ করে কারো কন্ঠস্বর ভেসে আসে। জিসান ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে দেখে চার পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা ছেলে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বাচ্চাটি আবারো বলে…

–আঙ্গেল তুমি তো পড়ে যাবে নিচে!

জিসান চারপাশে তাকিয়ে দেখে এটা হাসপাতাল আর এতক্ষন জিসান স্বপ্ন দেখছিল। জিসান জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে।

জিসান এই পাঁচ বছরে অনেক চেইন্জ হয়ে গেছে। ইশা চলে যাওয়ার পর জিসান ইশাকে অনেক খুজে কিন্তু ইশাকে কোথাও খুজে পায় নি। যে হারিয়ে যায় তাকে খুজে পাওয়া যায় কিন্তু যে নিজেকে সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখে তাকে খুজে পাওয়া যে বড় মুশকিল।জিসান ইশা চলে যাওয়ার পর গভীর রাত করে বাড়ি ফিরে। রাতের পর রাত জিসান না ঘুমিয়ে রাত কাটিয়েছে। জিসান এখন চোখে চশমা পড়ে। চুল গুলো আগের মতোই আছে। জিসানের নিজের প্রতি তেমন যত্ন নেয় না তাতেও যেন জিসান আরও হ্যান্ডসাম আর ডেসিং হয়ে গেছে। জিসানের এখন সারা দিন অফিস নিয়ে ব্যস্ত থাকে। যাতে করে ইশার স্মৃতি কিছুক্ষণ হলেও ভুলে থাকতে পারে। কিন্তু কই পারে দিন শেষে যখন বাড়ি ফেরে নিজের‌ রুমে ঢুকে‌ তখনেই ইশার পুরোনো সকল স্মৃতি জেগে উঠে মস্তিষ্কে।

–আঙ্গেল তুমি ঠিক আছো?

জিসান মুচকি হেসে উত্তর দেয়।

–হে বাবা আমি ঠিক আছ! কিন্তু তুমি এখানে একা একা কি করছো?

–আমি তো এই হাসপাতালটা ঘুরে ঘুরে দেখছি। মাম্মাম দাদুর জন্য ঔষধ আনতে গেছে আর তার জন্যই তো ঘুরছি মাম্মাম থাকলে তো ঘুরতেই পারতাম না।

–তাই ঠিক আছে তুমি আমার পাশে এসে বসো।

জিসান বাচ্চাটাকে নিজের পাশে এনে বসিয়ে বলে।

–তুমি তো খুব সুন্দর করে কথা বলো তোমার নাম কি??

–আমার নাম ইশান।

–ইশান….

–সুন্দর না নামটা।

জিসানের অতিতের কিছু কথা মনে পড়ে যায়। জিসান অতিতের মিষ্টি একটা মুহূর্তে ডুব দেয়।

গভীর রাতে ইশা জিসানের উনমুক্ত বুকে শুয়ে আছে একই চাদরের নিচে।

–ইশু।

–হুম…

–আমার একটা বেবি চাই।

ইশা চমকে বলে।

–কিহ বেবি?

–হে এতে এত চমকে ওঠার কি হলো এক দিন না একদিন আমাদের বেবি হবেই তাই না। আর আমার বন্ধুদের জানিস চার পাঁচটা করে বাচ্চা আছে আর দেখ তোর জন্য আমি অপেক্ষা করতে করতে আমার সব গেলো।

–কি গেলো তোমার?

–কি যায় নি বল এখনও একটা বাচ্চার বাপ হতে পারলাম না।

–এই শোনো এক দম ভাব ধরবে না তোমাকে কে বলেছিল আমার জন্য অপেক্ষা করতে ।

–আরে জান এত রাগিস কেন? আমি তো এটা এমনি বললাম আর কি?

–হুম…

–শুন আমাদের ছেলে হলে নাম রাখবো কি জানিস??

–কি নাম???

–উমমমম! ইশান সুন্দর না নামটা তোর নামের সাথে মিলিয়ে রাখলাম।

–হুমমম আর মেয়ে হলে!

–এটা তুই ঠিক কর।

–ঠিক আছে এটা নিয়ে আমাকে কিছু দিন ভাবতে হবে।

–একটা নাম ভাবতে তোর কিছু দিন লাগবে।

–হে লাগবে কারন আমার মেয়ের নাম বলে কথা।

–ঠিক আছে এখন ঘুমা সকাল থেকে ভাববি।

_________

–আঙ্গেল কি হলো বললো না আমার নামটা সুন্দর না?

ইশানের ডাকে জিসান অতিতের ঘোর কাটে আর বলে।

–হে বাবা তোমার নামটা অনেক সুন্দর। তোমার নামটা কে রেখেছে?

–মাম্মাম বলেছে এই নামটা আমার পাপা রেখেছে।

–মাম্মাম বলেছে তোমার পাপা রেখেছেন কেন তোমার পাপা তোমার সাথে থাকে না??

–নাহ… পাপা ওইইইই বিদেশে থাকে।

–ওওও তোমার পাপার নাম কি সোনা?

–মাম্মাম বলেছে যেন আমি কারো সাথে ম্মামা আর পাপার নাম না বলি।

–কেন??

–সেটা তো আমি জানি না আর মাম্মাম বলেছে আমি নাকি পাপার মতো দেখতে হয়েছি। এই নাকটা একদম নাকি আমার পাপার মতো হয়েছে

নাকে হাতে দিয়ে বলে কথাটা। জিসান ইশানের ‌এমন করা দেখে হেসে বলে।

–ওওওও! তাই।

জিসান আরো কিছু একটা বলতে যাবে সাথে সাথে একজন নার্স এসে বলে।

–স্যার আপনার পেশেন্ট রেসপন্স করছে না প্লিজ আপনি তাড়াতাড়ি আসুন।

জিসানের এই কথাটা শুনে প্রান যায় যায় অবস্থা। জিসান উঠে দাঁড়িয়ে বলে।

–কি বলছেন কি আপনি?

–হে স্যার আপনি তাড়াতাড়ি আসুন।

–ঠিক আছে আপনি যান আমি আসছি। ইশান বাবা তুমি এখানে বসে থাকো কোথাও যেও না কেমন???

–ঠিক আছে।

জিসান তাড়াতাড়ি করে যাওয়ার জন্য দ্রুত হাটার জন্য একজন ভদ্র মহিলার সাথে ধাক্কা খায়। ভদ্র মহিলাটার সাথে ধাক্কা লাগাতে তার হাত থেকে সব ঔষধ গুলো নিচে পড়ে যায়।

–সরি সরি আমি আসলে দেখতে পাই নি।

জিসান তাড়াতাড়ি করে ঔষধ গুলো তুলে ভদ্র মহিলাটার হাতে তুলে দিয়ে কিছু দুর যেতেই থেমে যায়। কিছু একটা ভেবে জিসান আনমনেই একটা নাম বলে ওঠে।

–ইশু…..

জিসান পিছন ফিরে কাউকে দেখতে পায় না। জিসান ভদ্র মহিলাটাকে খুজার জন্য পা বাড়াতেই চাইলে অন্য একজন নার্স এসে বলে।

–অভিনন্দন স্যার আপনার পেশেন্টের মেয়ে বাচ্চা হয়েছে ওনি এখন সম্পূর্ণ বিপদ মুক্ত আর আপনাকে ওনি খুজছে আপনি একটু তাড়াতাড়ি আসুন প্লিজ।

–হুমমম।

নার্সটা চলে যেতেই জিসান চোখ করে মনে মনে বলে উঠে।

–ইশু তুই কোথায় চলে গেলি আমি যে এই কষ্ট আর সহ্য করতে পারছি নায কেন জানি আজকে মনে হচ্ছে তুই আমার আশে পাশে কোথাও আছিস কিন্তু কোথায় আছিস? যদি এখানে থেকে থাকিস তাহলে একবার সামনে আয় অন্তত ওই দিনের পার্টির পর কি ঘটে ছিল এটা জানার জন্য!

জিসান চলে যাওয়ার সাথে সাথে একজন দেয়ালের আড়াল থেকে বের হয়ে আসে। সে আর কেউ‌ না জিসানের হারিয়ে যাওয়া ইশু। আর জিসান একটু আগে যার সাথে ধাক্কা লেগে ছিল সেও ইশা ছিল। জিসান তাড়াতাড়ি করে চলে যাওয়ার জন্য মুখটা দেখতে পাই নি। ইশা মনে মনে ভাবতে থাকে।

–অনেক দিন পর তোমার হাতের ছোঁয়া পেলাম ভাইয়া। তুমি নিশ্চয় খুব সুখে আছো তাই না কারন আজকে তোমার জীবনে নতুন কারোর আগমন ঘটেছে। আমি সবসময় চাই তুমি যেন সুখে থাকো আমিও অনেক সুখে আছি আমাকে নিয়ে তোমার চিন্তা করা লাগবে না। কিন্তু ভ্যাগের কি নির্মম পরিহাস আমাদের দুজনকে এক থাকতে দিলো না।

কারো ছোট কোমল হাতের স্পর্শে ইশার ধ্যান ভাঙ্গে।

–মাম্মাম এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? চলো না দাদু আর দাদির কাছে যাই। মাম্মাম তোমার চোখে পানি কেন?

–ও কিছু না সোনা। চলো তোমার দাদু আর দাদির কাছে যাই তোমার দাদুর জন্যও তো ঔষধ কিনা হয়ে গেছে। কিন্তু আমার ইশান বাবা বাইরে কি করছে?

–আসলে মাম্মাম তোমাকে খুজতে বের হয়েছিলাম যদি তুমি কোথাও হারিয়ে যাও। তার জন্য আমি যাতে তোমাকে বাচাতে পারি সে জন্য বের হয়েছি।

–হয়েছে! তোমাকে আর মিথ্যা কথা বলতে হবে না। এবার চলো।

ইশা ওই দিনের পর থেকে নিজেকে সর্ম্পূন রুপে চেইন্জ করে ফেলেছে। ইশা এই‌ পাঁচ বছরের মাঝে ওই‌ দিনের পার্টির পর থেকে আর সাজে নি সব সময় ড্রাক কলারের‌ শাড়ি পড়ে। ইশা নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছে এখন। শাড়ি পড়লেও এখন আর হোচট খেয়ে পড়ে যায় না। ইশানকে আঁকড়ে নিয়ে বেচে আছে এখন ইশা। যদি ইশান ওর জীবনে না আসতো তাহলে হয়তো ইশা বেচে থাকতে পারতো না। এখন ইশানেই ওর বেচে থাকার মুল কারণ।

ইশান কেবিনে ডুকে দাদি বলে চিৎকার করে আয়শা বেগমকে জড়িয়ে ধরে। আয়শা বেগমও ইশান জড়িয়ে ধরে বলে।

–দাদু ভাই কোথায় গিয়েছিলে তুমি? তুমি তো জানো তোমার দাদি এখন বুড়ো হয়েছে আগের মতো আর তোমার পিছনে ছুটতে পারে না। তোমার মাম্মাম যদি জানতে পারে তুমি বাইরে গিয়েছিলে তাহলে তো অনেক রেগে যাবে।

–আমি জানি মা ও যে বাইরে গিয়েছিলো।

কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে কথা বলে ইশা। ইশাকে দেখে আয়েশা বেগম বলেন।

–ইশা এসে গেছিস তুই মা। আসলে হয়েছে কি ইশান দাদুভাই দুই মিনিটের জন্য বাইরে গিয়েছিলো ওকে আর বকাবকি করিস না তুই।

–হয়েছে মা তোমাকে আর ওর হয়ে মিথ্যা কথা বলতে হবে না।

এর মাঝে বেডে শুয়ে থাকা একলাস তালুকদার বলেন।

–না রে মা। তোর মা সত্যি বলছে আমার দাদু ভাই কিছু ক্ষনের জন্য বাইরে গিয়েছিলো।

–আচ্ছা আচ্ছা আমি মানলাম বাবা। তোমাদের নাতি দুই মিনিটের জন্য বাইরে গিয়েছিল ঠিক আছে।

–আচ্ছা শুন না মা আমরা কবে দেশে ফিরে যাবো?

–কালকেই ফিরে যাবো বাবা তো এখন সর্ম্পূন সুস্থই হয়েই গেছে আর বাবা এখন তুমি তোমার এসব ব্যবসা করা বন্ধ করো এখন নিজের শরীরের দিকে একটু খেয়াল রাখো। সবসময় ব্যবসা নিয়ে পড়ে থাকলে এখন আর চলবে না।

–নিজের খেয়াল রাখতে তো চাই কিন্তু তুই তো রাখতে দিছিস না।

বাবার কথা শুনে ইশা অবাক হয়ে বলে।

–মানে!

আয়শা বেগম বলেন।

–মানেটা তুই কি বুঝতে পারছিস না?? তোর বাবা তোর কাছ থেকে কি চায়।

–মা প্লিজ আমি এসব অফিসে জয়েন টয়েন করতে পারবো না। আমার দ্বারা এসব ব্যবসা করা সম্ভব হবে না। আমি এটা আগেও তোমাদেরকে বলেছি।

–কেন হবে না?? তুই একটা শিক্ষিত মেয়ে হয়ে এটা বলছিস কি করে?

একলাস তালুকতার বলেন।

–ঠিক আছে আয়শা তোমার মেয়েকে বলে দাও ও অফিসে জয়েন না করে যদি শান্তিতে থাকে ঠিক আছে তাহলে ও শান্তিতে থাক আর ওর বাবা আবার অফিসে গিয়ে আর একটা স্ট্রোক করে মা’রা যাক।

–বাবা তুমি এমন কথা বলো না তোমরা ছাড়া আমার এই জীবনে আর কেউ নেই আর তোমরাই যদি না থাকো তাহলে আমি কি নিয়ে বাচবো।

–তাহলে তুই দেশে গিয়ে অফিসে জয়েন করবি বল।

ইশা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে।

–ঠিক আছে আমি অফিসে জয়েন করবো কিন্তু আমারও একটা শর্ত আছে।

–শর্ত এর জন্য আবার কি শর্ত আছে?

–দেশে গিয়ে তোমরা দুজন আমার কথা মতো চলবে যখন খেতে বলবো তখন খাবার খেতে হবে যখন ঔষধ খেতে বলবো টাইম টু টাইম খেতে হবে আমার কথা মতো চললে কিন্তু আমি অফিসে যাবো। তা না হলে আমি যাবো না।

–ঠিক আছে আমার মা আমি আপনার শর্তে রাজি এবার খুশি।

–হুম….

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here