তুই_শুধু_আমার 💕 #Nusrat_Jahan_Bristy #Part_25

0
369

#তুই_শুধু_আমার 💕
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_25

জিসান ইশার সামনে দাড়িয়ে আছে। ইশার পাশেই ইশান দাঁড়িয়ে আছে।

–মাম্মাম জানো আমরা যখন বিদেশে ছিলাম তখন এই‌ আঙ্গেলটার সাথে দেখা হয়েছিল।

–ইশান চলো তোমার দাদু ফোন করেছিল তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়ার জন্য।

–কিন্তু ম্মামা আমরা তো মাত্র আসলাম।

–ইশান তোমাকে আমি অন্য দিন আবার নিয়ে আসবো।

–নাহ মাম্মাম আমি এখন যাবো না।

–ইশান জেদ করো না।

ইশা তাড়াতাড়ি করে চলে যেতে চাইলে জিসানের ডাকে থেমে যায়।

–ইশু! তোর কাছ থেকে আমি জাস্ট একটা কথা জানতে চাই এই‌ কথাটা জানার পরে আমি তোর সামনে কোনো দিন আসবো না। আমি বুঝতে পারছি তুই আমাকে আর সহ্য করতে পারিস না। চিন্তা করিস না আমার জন্য তোকে আর কষ্ট পেতে হবে না।

ইশা জিসানের এসব কথা শুনে বুকের ভেতরটা যে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও ইশা নিজেকে সামলিয়ে বলে।

–কি কথা? তাড়াতাড়ি বলেন।

–ইশান কি সত্যি তোর ছেলে?

–হে! ও আমার ছেলে।

–ওর বাবা… ওর বাবা কে?

–আমি সব কথা বলতে বাধ্য নই আপনার কাছে।

–কিন্তু আমার জানা দরকার ইশানের বাবা কে?

–প্লিজ মিস্টার চৌধুরী এটা একটা পাবলিক প্লেস তাই কোনো সিনক্রিয়েট করবেন না। আর আপনার প্রশ্ন উত্তর হয়তো আমি দিতে পেরেছি এখন আসি।

ইশা জিসানের সামনে থেকে চলে যায়। হয়তো ইশা জিসানের সামনে আরও‌ বেশিক্ষন থাকলে কান্না করে দিতো। জিসান মনে মনে বলে।

–আমাকে জানতেই হবে ইশান কার ছেলে? কিন্তু কি করে জানবো আমি কি করে?

_______

ইশা গাড়িতে বসে আছে আর জিসানের প্রতিটা কথা ইশার কানের কাছে বাজছে ‌‌। ইশা নিজের চোখের পানিটা আটকে রেখেছে শুধু মাত্র ইশানের জন্য।

–মাম্মাম ওই‌ আঙ্গেলটা কি বললো এসব?

–কিছু না সোনা।

–আমি আর পারছি না এই কষ্ট সহ্য করতে ওনার এই মলিন চেহারা যে আমি দেখতে পারছি না। কিন্তু ওনার এই অবস্থা কেন রুহি আপু কি ওনার খেয়াল রাখতে পারে না আর রাখবেই বা কি করে রুহির আপুর তো ছোট একটা বেবি আছে। মামনি আর জিসা ওরা কেমন আছে ওদেরকে যে দেখতে খুব ইচ্ছা হয় আমার। নাহ দুর্বল হলে চলবে না আমাকে এই শহর থেকে চলে যেতে হবে যত সম্ভব তাড়াতাড়ি যাওয়ার আগে আমাকে এই ডিলটা শেষ করে যেতে হবে না হলে বাবার কোম্পানির লস পূরণ করতে পারবো না।

ইশা মনে মনে এসব ভেবে চোখ দুটো বন্ধ করে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ে।

এভাবে কিছু দিন কেটে যায় ইশা আর জিসানের দূরত্ব দিয়ে। এর মাঝে সময় করে জিসাব তালুকদার বাড়িতে আসে। জিসান বসে আছে একলাস তালুকদার আর আয়শা বেগমের সামনে। ইশা আর ইশান তখন বাড়িতে ছিল। ইশা ইশানকে নিয়ে অফিসে চলে গেছে আর সেই সুযোগেই জিসান তালুকদার বাড়িতে এসেছে।

–আপনাদের সাথে আমি কেন দেখা করতে এসেছি সেটা নিশ্চয়ই আপনার বুঝতে পারছেন।

–আপনি কি বলতে চাইছেন আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।

–আমি এমন কিছু বলে নাই যে আপনি এটা বুঝতে পারছেন না। আপনি হয়তো আমাকে চিনতে পেরেছেন আর প্লিজ আমি চাই আপনি আমাকে সব খুলে বলুন প্লিজ অন্তত ইশার কথা ভেবে।

—হে আমি তোমাকে চিনতে পেরেছি কিন্তু…

–প্লিজ আঙ্গেল আমি সব জানতে চাই পাঁচ বছর আগে কি হয়েছিল আর ইশান ইশান কে? কে ওর বাবা?

–তুমি শান্ত হও আমি আজকে তোমাকে সব কিছু বলবো আমি আর ইশার কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। তার জন্য আমাকে যে তোমায় সব বলতে হবে। পাঁচ বছর আগে আমার মেয়ে মারা যায় ওকে আমরা দাফন করে বাড়ি ফিরছিলাম আয়েশা তখন খুব ভেঙ্গে পড়েছিল। বাড়ি ফিরার পথেই হঠাৎ করেই ইশা আমাদের গাড়ির সামনে চলে আসে। ড্রাইভার সাথে সাথে ব্রেক করে না হলে হয়তো ইশান এই পৃথিবীতে আসত না। ইশা ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। আমরা তাড়াতাড়ি করে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাই আর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে জানতে পারি ইশা চার সপ্তাহের প্রেগন্যান্ট আর যখন ইশা জানতে পারে ও‌ প্রেগন্যান্ট তখন ও ভীষন অবাক হয়ে যায়। ওর বেবির কোনো ক্ষতি হয় নি। ইশার যখন জ্ঞান ফিরে তখন আমরা ওকে জিঙ্গাস করি…

–মা তোমার বাড়ি কোথায়???

–বাড়ি… আমার কোনো বাড়ি নেই!

–তাহলে তুমি কোথা থেকে আসলে???

–কোথা থেকে আসলাম?

–তুমি আমাদের সব খুলে বলো আমরা তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিবো।

–নাহ! আমি ওই‌ বাড়িতে ফিরে যাবো না। ওই‌ বাড়িতে যে আমার আপন বলতে কেউ নেই কেউ নেই।

কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ইশা আয়েশা বেগম ইশাকে জড়িয়ে ধরে।

–তুমি শান্ত হও মা তোমাকে যে নিজেকে ঠিকে রাখতে হবে।না হলে যে বেড়ে উঠছে তোমার মাঝে সে কি করে সুস্থ থাকবে?

–মানে?

–মানেটা হলো তুমি প্রেগন্যান্ট।

–কিহ???

–হে মা….

ইশার দু চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। ইশা নিজের পেটে হাত রেখে মন মনে বলে উঠে।

–ভাগ্যের কি খেলা তাই না। তোর নিজের বাবার পরিচয় টুকু তুই পাবি না কিন্তু তোর মায়ের পরিচয়ে তুই বাচবি।

–তা মা তাহলে তুমি কোথায় যাবে?

একলাস তুলকদারের কথায় শুনে তীর নরম গলায় বলে।

–আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই কোথাও নেই!

–একটা কথা বলবো তোমায় মা.. আসলে আজকে আমি আমার নিজের হাতে আমার মেয়েকে ক’বরে শুয়েই এসেছি আর আজকেই তোমাকে আমাদের মাঝে পাঠিয়েছে তাই আমরা চাই তুমি আমাদের কাছে থাকো।

–কিন্তু! আপনারা তো আমাকে ভালো করে চিনেন না।

–কে কেমন মানুষ সেটা আমি বুঝতে পারি মা তার চোখ দেখেই। আমার এক মেয়েকে আমার কাছ থেকে উপরওয়ালা কেঁড়ে নিয়েছে তো কি হয়েছে তোকে তো আমাদের কাছে পাঠিয়েছে আমার মেয়ে করে আর আমরা জানতে চাই না তোর অতিত কি ছিল? যখন তোর ইচ্ছা হবে তুই নিজে আমাদেরকে বলবি। কি রে হবি তো তুই আমার মেয়ে?

আয়েশা বেগমের কথা শুনে ইশা তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়।

–একদম কান্না করবি না। তোকে এখন নিজেকে শক্ত রাখতে হবে।

বর্তমান….

–তার মানে ইশান আমার সন্তান আর এই কথাটা আমাকে ইশা বলার প্রয়োজনেই করলো না। (এটা ইশা ঠিক করে নি এর শাস্তি ওকে পেতেই হবে ওর সাহস কি করে হলো আমার সন্তানকে আমার কাছ থেকে দুরে রাখার।)

শেষের কথাটা জিসান মনে মনে বলে।

–হে ইশান দাদুভাই তোমার সন্তান।

–আমি চিনতেই পারলাম না আমার সন্তানকে এত কাছে থাকতেও একেই বলে দুর্ভাগ্য বাবা।

–পাঁচ বছর ধরে ইশা আমাদের কাছে আছে। তুমি কেন আমার মেয়েটার সাথে এমন করলে কি দোষ করেছে ও? জানো এই পাঁচটা বছর আমার মেয়েটা কি কষ্টে কাটিয়েছে এই পাঁচ বছরে প্রত্যেকটা রাত আমার মেয়েটা কেঁদে কেঁদে কাটিয়েছে। তুমি বুঝতে পারছো আমার মেয়েটা কি করে কাটিয়েছে এই পাঁচটা বছর। তুমি যেই কষ্টটা দিয়েছো সেই কষ্টটা কি করে একটা মেয়ে সহ্য করবে? মেয়েদের সব থেকে কাছের মানুষ হয় নিজের স্বামী আর তুমি ওর স্বামী হয়ে ওকে তুমি ঠকালে।

আয়েশা বেগমের কথা শুনে জিসান তড়িৎ বেগে বলে।

–নাহ আমি ওকে ইচ্ছে করে ঠকাই নি আমি একটা খারাপ পরিস্থিতির মাঝে পড়ে গিয়েছিলাম। তার জন্য আমি ওকে বাঁচাতে ওর সাথে এমন করতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু এখন ওকে আমি আর কষ্ট পেতে দিবো না।

–প্লিজ জিসান আমার মেয়েটার এই কষ্ট থেকে বাঁচাও।

–হে মা আমি আমার ইশুকে আর কষ্ট পেত দিবো না।

–মা বলে ডাকলে তুমি আমাকে।

–আপনি আমার ইশুর মা তাই আজকে থেকে আপনিও আমার মা।

–দোয়া করি বাবা তোমাদের মাঝে যেন সব ভুল বোঝাবুঝি মিটে যায়।

_______

জিসান তাড়াতাড়ি করে গাড়ি ড্রাইভ করে অফিসে যায়। অফিসে ঢুকে দেখে ইশান বল নিয়ে একা একা খেলা করছে।জিসান আস্তে আস্তে করে ইশানের দিকে এগোছে।

–আরে আঙ্গেল তুমি কখন এলে?

জিসান ইশানের সামনে হাটু গের বসে ইশানের কপালে একটা চু’মু দেয়। জিসানের দু চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।

–আঙ্গেল‌ তোমার কি হয়েছে? কাঁদছো কেন?

ইশান জিসানের চোখের পানি নিজের হাত দিয়ে মুছে দেয়। জিসান দুচোখ বন্ধ করে নেয় ইশানের ছোঁয়া পেয়ে।এটাই যে ইশানের প্রথম ছোঁয়া যেটা জিসান চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে।

–কেঁদো না আঙ্গেল সব ঠিক হয়ে যাবে।

–ইশান বাবা একটা কথা বলবো?

–কি?

–আমাকে একবার পাপা বলে ডাকবে?

–কেন তুমি তো আমার পাপা নয় তাহলে তোমাকে পাপা বলে ডাকবো কেন?

–প্লিজ ইশান একবার ডাকো প্লিজ।

–ঠিক আছে তোমাকে আমি বাবা আঙ্গেল বলে ডাকবো কিন্তু তার জন্য কিন্তু শর্ত আছে।

–কি শর্ত?

–আমার সাথে তোমাকে বল খেলতে হবে।

–ঠিক আছে খেলবো।

–প্রমিজ।

— প্রমিজ।

–বাবা আঙ্গেল।

জিসানের বুকের ভেতরটা যে একটা শান্তি অনুভব করছে। ইশানের মুখে বাবা ডাকটা শুনে।

–এবার চলো আমরা খেলি।

–তুমি বল খেলবে তাই তো।

–হুম।

–তুমি আর আমি একা খেলবে কেন? আমরা আরও অনেকে খেলবো।

–সত্যি।

–চলো আমার সাথে।

–আমার বাবা আঙ্গেল খুব ভালো।

ইশান জিসানকে জড়িয়ে ধরে জিসানের গালে একটা চুমু একে। দেয়। জিসান নিজের গালে হাত ছোঁয়া। জিসান ভাবতেই পারছেনা ওর জীবনেও এমন একটা দিন আসবে। জিসান ইশানকে কোলে তুলে নিয়র বলে।

–চলো এবার আমরা যাই।

–হুম।

জিসান ইশানকে নিয়ে গাড়িতে বসায়। জিসানও গাড়িতে উঠে বসে মায়ের নাম্বারে ফোন করে বলে।

–মা সব কিছু রেডি রেখো আমি তোমার নাতিকে নিয়ে আসছি

–জিসান শুন যা কেটে দিলো।

জিসা মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে বলে।

–মা কি হয়েছে?

–জিসান ফোন দিয়ে কিসব বললো?

–কি বলেছে ভাইয়া?

–বললো আমার নাতি নিয়ে আসছে।

–মানে!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here