ভালোবাসার_ফোড়ন_২ #মিমি_মুসকান #পর্ব_৪৬

0
723

#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৪৬

পহেলা ফাল্গুন আজ! এই উপলক্ষে ভার্সিটিতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মেয়েদের দলে দলে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। আলাদা আলাদা দল আলাদা আলাদা রঙের শাড়ি পড়বে। ছেলেদের ও তাই! আমাদের দলে কয়েকটা মেয়ে ছিল যাদের বাসন্তি রঙের শাড়ি পড়ে আসতে বলা হয়েছে। নিতি’রা মনে হয় হলুদ রঙের শাড়ি পড়ে আসবে। উনাকে বলা হয়েছে সবুজ রঙের পাঞ্জাবি পড়তে। তার সাথে আকাশ, নাহান আর আনাফ ভাইয়াও সবুজ রঙের পাঞ্জাবি পড়বে।

সকাল সকাল আমি উঠে গোসল করে বাসন্তি রঙের শাড়িটা পড়ে নিলাম। অতঃপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঝাড়তে লাগলাম। উনার দেখা নেই, সেই যে জগিং করতে গেছেন এখনো আসেন নি।
আমি নিচে নেমে রান্না ঘরে এসে ঢুকলাম। মা, বাবা সবার জন্য নিজের হাতে চা বানালাম। প্রতিদিন’ই চা আমিই বানাই। বাবা ইদানিং আমার হাতের চা অনেক পছন্দ করেন। মা আর বাবা দুজনেই ডয়িং রুমে বসে আছে। আজকের বিষয় ইয়ান কে নিয়ে। তাকে আজ আনতে যাবে বাবা। তার কাঠবিড়ালী টা একদিন দুলাভাই এসে নিয়ে গেছিল। পিকু টাকেও বেশ মিস করছি আমি। ভালোই হবে ওরা দুজন আসলে পুরো বাড়ি জমজমাট থাকবে।

দেখতে দেখতে উনি চলে এলেন। আমি উনাকে দেখেও বসা থেকে উঠলাম না। জানি এখন উপরে গিয়ে প্রথমে গোসল করে তৈরি হবেন উনি। আজ আমাদের তাড়াতাড়ি যেতে হবে। আমি খানিকক্ষণ পর উঠে ব্রেকফাস্ট নিয়ে রুমের দিকে গেলাম । মা আর বাবা ব্রেকফাস্ট করতে এখনো অনেক দেরি।

আমি উনার জন্য ব্রেকফাস্ট নিয়ে এসে দেখি উনি অলরেডি গোসল সেড়ে পাঞ্জাবি পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি ব্রেকফাস্ট বিছনায় রেখে বসে বসে উনার কান্ড দেখতে লাগলাম। পাক্কা আধ ঘন্টা লাগিয়ে তৈরি হলেন উনি। ততোক্ষণে আমি খেয়ে হজমও করে ফেলেছি। অতঃপর উনি আমার কাছে এসে বলেন,

“এভাবে নজর দিচ্ছো কেন?

“কোন মেয়ে সাজতেও এতোক্ষণ লাগায় না।

“হুহ আসছে, তোমার সাজতে এখন আমার চেয়েও বেশি সময় লাগবে এটা জানো তুমি!

“না লাগবে না। আপনি যতক্ষণে ব্রেকফাস্ট শেষ করবেন তার আগেই আমি তৈরি হয়ে এসে পড়বে।

উনি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকান। আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ি। উনি গিয়ে বিছানায় বসে খেতে শুরু করলেন। আয়নায় দাঁড়িয়ে চুল গুলো আঁচড়ে, উনার আনা কানের দুল আর চুড়ি গুলো পড়ে চোখে কাজল আকলাম। অতঃপর শেষবারের মতো শাড়ি টা ভালোভাবে দেখে ব্যাগ টা কাঁধে নিয়ে উনার সামনে দাঁড়িয়ে বলি,

“নিন আমি তৈরি!

উনি জুসের গ্লাস টা মুখে দিয়ে আমার দিকে তাকান। অতঃপর গ্লাস নামিয়ে আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকেন। আমি উনাকে বলে উঠি,

“মনে হচ্ছে আপনি আমাকে নজর লাগাচ্ছেন।

উনি মুখ ভেংচি দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। আমি উনার পিছু পিছু যেতে থাকি।
.
ভার্সিটিতে আজ পুরো জমজমাট ব্যাপার। চারদিক ফুল আর বেলুন দিয়ে সবকিছু সাজানো। আর যারা ভিতরে ঢুকছে সবাইকে একটা করে গোলাপ ফুল দেওয়া হচ্ছে। সেই হিসেবে আমাদের ও দেয়া হবে। কিন্তু ফুল দেবার সময় হুট করেই ভেতর থেকে নিতি দৌড়ে এলো। সে এসে আমাকে আর আহিয়ান কে ফুল দিল। ফুল নেবার সময় তার মুখে হাসি দেখতে পেলাম। তাকে আজ বেশ সুন্দর লাগছে দেখতে। শাড়িতে বেশ মানিয়েছে তাকে। তার মুখে সাজ, ঠোঁটে রং, চুল গুলো খোঁপা করে তাতে ফুল দেওয়া। এক কথায় অসাধারণ লাগছিল তাকে।

ভেতরে এসে দেখি উনি ম্যাম স্যারদের সাথে কথা বলছেন। স্টেজ এখনো ঠিক করা হচ্ছে। মানুষের আনাগোনা তেমন নেই। উনিও তাঁদের সাথে কাজে জরিয়ে গেছেন। আমি চেয়ার পেতে একপাশে বসে সবার কাজকর্ম দেখছি। নিতি আর উনি দূরে একসাথে দাঁড়ানো। নিতির হাতে একটা কাগজ এটা দেখাতেই আহিয়ান কে ডেকেছে সে। কিন্তু নিতির দুই বান্ধবীকে এখনো দেখছি না। একটু খোঁজাখোঁজি করতেই দেখা গেল দুজনেই এক কোনে দাঁড়িয়ে গল্প করছে আর হাসছে। টিনা আর আনিকাকেও শাড়িতে বেশ মানিয়েছে। তবে একটা জিনিস আমার খুব খারাপ লাগলা। তাদের দু’জনের শাড়ির ফাঁক দিয়ে কোমর দেখা যাচ্ছে। ব্যাপারটা বেশ আপত্তিকর!

নিতির দিকে তাকিয়ে দেখি তার ও কোমর দেখা যাচ্ছে কিন্তু তা শাড়ির মাঝে আড়াল হয়ে আছে। টিনা আর আনিকার শাড়িল আঁচল উঠানো বলেই কোমর দেখা যাচ্ছে! একবার ভাবলাম তাদের গিয়ে কথাটা বলবো, পরক্ষনেই ভাবলাম বলে কি লাভ। তারা স্টাইল বেশ পছন্দ করে আমি কিছু বললেই বলবে, এটা স্টাইল! এসব বলে লাভ কি!

কিছুক্ষণ বসে থাকার পর নাহান আর আনাফ ভাইয়াও এলেন। তাদের সাথে এলো সিফাত বজ্জাত টাও। তার কিছুক্ষণ পর এলো আকাশ আর ইতি! দু’জনকে একসাথে বেশ মানাচ্ছে। ইতির হাতে একটা গোলাপ ফুল। সে সেটা বার বার দেখছে আর হাসছে। শাড়িতে তাকেও বেশ সুন্দর লাগছে!

ইতি এসেই আমার পাশে বসল আর আকাশ ভাইয়া গেল আহিয়ানের কাছে। ইতি কে কেমন লাজুক লাজুক লাগছিল আমার কাছে। কি হয়েছে এই মেয়েটার আজ। আমি ওর হাতের দিকে তাকিয়ে আছি। গোলাপটাকে বেশ যত্নে রাখছে সে। আমি ওর হাত থেকে গোলাপ টা নিতেই সে উঠে আমার হাত থেকে ফুলটা কেড়ে নিলো। বোঝাই যাচ্ছে ফুলটা কে দিয়েছে যার কারনে তার এতো অস্থিরতা। আমি মুচকি মুচকি হেসে বলি,

“বাহ এতো ভালোবাসা! এখন’ই পর করে দিচ্ছিস আমায়।

“কি বলিস এসব, তুই তো আমার সব। তোকে কিভাবে পর করি বল।

“দে ফুলটা তাহলে দে।

“না মানে অন্য ফুল দেই এটা নিস না।

“ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার।

ইতি লজ্জায় বসে থাকতে না পারে উঠে গেলো। আমি সেখানেই বসেই হাসতে লাগলাম। আমাকে হাসতে দেখে আহিয়ান আমার কাছে এসে বলে উঠে,

“কি হয়েছে? এতো হাসছো কেন?

“আরে কি হয় নি সেটা জিজ্ঞেস করেন। ইতি কে যা জ্বালালাম না, বলার মতো না!

“মেয়েটার পিছনে লেগে থাকা ছাড়া আর কি কাজ আছে তোমার বলো তো।

“আমার পিছনে লাগা!

বলেই সেখান থেকে চলে এলাম। বেশ মজা পাচ্ছি দুজনকেই জ্বালিয়ে। পেছনে ফিরে দেখি উনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
.
আমি আশপাশ শুধু ঘুরছি, কি করবো বুঝতেই পারছি না। ইতি আকাশ ভাইয়ার সাথে,‌এখন‌ মনে হচ্ছে ভুল করেছি। আকাশ ভাইয়া আর ইতিকে এক করা ঠিক হয় নি। এখন আমার কোন দাম নেই। কেউ নেই আমার সাথে।
শীত যেতে না যেতেই গরমে ঘেমে একাকার আমি। এর মাঝেই মনে হচ্ছে চুল গুলো বেশ জ্বালাতন করছে। কোন দিক না পেয়ে চুল গুলো খোঁপা করে বসে রইলাম।

খালি একটা ক্লাসরুমে বসে ফোন টিপতে লাগলাম। কিছুই নেই ফোনে। একবার ভাবলাম মা’র সাথে কথা বলব। পরক্ষণেই মনে পড়ল এখানে এতো আওয়াজের মাঝে ঠিক মতো কথা বলতে পারবো না।

কি মনে করে ফোনের ক্যামেরা অপশনে ক্লিক করলাম। ফোনের স্ক্রিনে আহিয়ান কে দেখা যাচ্ছে। উনি দূরে দাঁড়িয়ে একজনের সাথে কথা বলছে। কি জানি বুঝাচ্ছে তাকে। আমি তখনকার সেই ছবি তুলে রাখলাম। পরপর অনেকগুলো ছবি তুললাম। অতঃপর সেই ছবি আবার দেখতে লাগলাম। ৫ টা ছবির মাঝে ৪ টা ছবিই ঠিক হয় নি। একটা সুন্দর হয়েছে। আমি কি মনে করে আবারো ছবি তুলতে চাইলাম। তখন’ই দেখলাম উনার পাঞ্জাবি আমার অনেক কাছে। এটা দেখেই আমি সামনে তাকালাম। অতঃপর দেখি উনি আমার সামনে দাঁড়ানো। তাকে দেখেই আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। ফোনটা রাখতে গিয়ে সেটা পড়ে গেল। বুঝতে পারছি না আমি ভয় কেন পাচ্ছি।

ফোনটা কোনমতে উঠিয়ে হাতে নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছে‌। মস্তিস্ক একটা কথাই বলছে কোনভাবে যেন উনি ছবি গুলো না দেখেন।
উনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি কিছু স্বাভাবিক হয়ে জিজ্ঞেস করি,

“কি হয়েছে?

উনি হাত বাড়ালেন। কি হলো ফোন টা নিয়ে নেবেন নাকি। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি। অতঃপর বোধ হলো উনি আমার চুলের খোঁপা খুলে দিলেন। আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনার অন্যহাত দিয়ে আমার কানে চুল গুলো গুঁজে দিলেন। তার সাথে মনে হলো আরো কিছু একটা গুঁজে দিলেন। এবার উনি আমার গাল টেনে হেসে বলেন,

“এখন মনে হচ্ছে সুন্দরী ভূতনি!

“কি বললেন?

উনি কিছু বলতে চাইলেন এর মাঝেই উনার ডাক পড়লেন। উনি কিছু না বলেই চলে গেলেন। আমি ভ্রু কুঁচকে কানে হাত দিয়ে বুঝি কানে কোন ফুল গুঁজে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু কি?
ফোনের ক্যামারা নিজের দিকে করে তাকিয়ে দেখি আমার কানে কাঠগোলাপ! তার মানে উনি কাঠগোলাপ গুজে দিলেন আমার কানে। অজান্তে হেসে ফেললাম আমি। কিন্তু আবারো সেই ভূতনি। সুন্দরী বলেও সেই ভূতনি উনি বলেই দিলেন। এই ভূতনি পিছু ছাড়ছে না আমার।
.
ইতি আমাকে খুঁজতে খুঁজতে ক্লাসরুমে এসে পড়ল। আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বলি,

“প্রেম করা শেষ!

“শুরুই বা হলো কোথায়?

“ওহ আচ্ছা তাহলে এতোক্ষণ কি করছিলি।

“কোথাও আর কি করলাম? দেখাই তো পেলাম না তাহার।

“রাখ তোর বিরহ!

“তোর কাছে এটাই মনে হলো। এই তোর কানে ফুল গুঁজে দিল কে?

“কেন?

“ভাইয়া!

“এছাড়া আর কে?

“বাহ কি ভালোবাসা!

“কচু! বলে গেছেন সুন্দরী ভূতনি!

আমার কথায় বেচারা ইতির মুখে হাসি দেখা গেল।‌ খিলখিলিয়ে হাসল ও। অতঃপর দুজনেই বের হলাম!

অনুষ্ঠান শুরু হলো। মানুষজনে চারদিক ভরপুর। অতিথিরাও এসে পড়েছে।‌ শিক্ষকগণ অল্প কিছু বক্তৃতা রাখলেন। অতঃপর রবীন্দ্রনাথ সঙ্গীত! একে একে কবিতা, আবৃত্তি, নৃত্য হলো। উনাকে এতোক্ষণ কোথাও দেখছিলাম না। হঠাৎ ইতি আমাকে খোঁচা মেরে বলল উনি স্টেজের কাছে। তাকিয়ে দেখি শুধু উনি না উনার সাথে আকাশ, নাহান আর আনাফ ভাইয়াও। অ্যানাউসমেন্ট হলো আহিয়ান গান গাইবে! কিহ? উনি গান গাইবে। তখনই একপ্রকার হইচই শুরু হলো। পেছন থেকে ছেলেরা হাত তালি দিতে লাগলা। কিন্তু উনি গান গাইতে পারে আর এটা আমি জানতাম না! ইতি আমাকে খোঁচা মেরে বলে,

“আগে তো জানালি না ভাইয়া গান গাইবে

“আমি নিজেই তো জানতাম না উনি গান গাইতে পারে, আমাকে কি বলছিস!

আমার পাশেই নিতি বসা ছিল। সে বলে উঠে,

“কিহ তুমি জানো না আহি গান গাইতে পারে, কখনো শোনায় নি তোমায়।

“না!

“আহি সবার জন্য গান গায় না। শুধু বিশেষ কারো জন্যই গান গায়। আর তুমি বলছো তোমার জন্য গান গায় নি। তার মানে কি!

আমি কিছু না বলে সামনে তাকালাম। এখন গান গাইবে উনি। উনার পিছনে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন উনার বন্ধুরা। উনি গাইতে শুরু করেন

“ওরে ছেড়ে দিলে সোনার গৌর
ক্ষ্যাপা ছেড়ে দিলে সোনার গৌর
আমরা আর পাব না, আর পাব না।

তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো ছেড়ে দেবো না,
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিবো ছেড়ে দেবো না।”…….

গান শুনে মনে হলো আসলেই উনার গানের গলা সুন্দর! খুব ভালো গান গাইতে পারেন উনি। কিন্তু আমাকে কখনো বললেন না কেন? গান শেষ হবার পর সবাই হাত তালি দিল। উনাকে স্টেজ থেকে নামতে দেখলাম কিন্তু কোথাও গেল আর দেখতে পেলাম না! এর মাঝেই ইতি উঠে গেল। আমি উঠবো কি উঠবো না ভাবছি। ইতির চেয়ারে এসে বসল আনিকা। সে বসেই আমার সাথে গল্প জুড়ে দিল। তাও অন্যরকম গল্প যাতে আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই। তবুও ভদ্রতার খাতিরে ওর বক বক শুনে চলছি আমি।

অনেকক্ষণ পর এপাশে তাকিয়ে দেখি নিতি নেই! এই মেয়ে আবার কখন গেলো এখান থেকে। মনটা হঠাৎ করেই অস্থির হয়ে উঠল কিন্তু কেন? উনাকে খুঁজে চলছি কিন্তু কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। দূরেই নাহান আর আনাফ ভাইয়া কে দেখতে পেলাম। আনিকা রীতিমতো এখনো বক বক করছে। আমি এবার উঠে পরলাম। আর শুনতে চাইছি না বকবক!

নাহান ভাইয়া কে আহিয়ানের কথা জিজ্ঞেস করতেই ক্লাসরুমের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করলেন। আমিও ক্লাসরুমের দিকে হাঁটা ধরলাম। কিন্তু অনুষ্ঠান তো বাইরে হচ্ছে উনি ক্লাসরুমে কি করছেন। আমি এক ক্লাসরুমের পাশ দিয়ে যেতেই কারো সাথে খুব জোরে ধাক্কা খেলাম!

সামনে তাকিয়ে দেখি ইতি! এই মেয়েটা এখানে কেন? আর এতো দৌড়াদৌড়ি করার’ই বা কি আছে। উফ আমার হাতটার বারোটা বাজিয়ে দিল। কিছুক্ষণ পর’ই বের হতে দেখলাম আকাশ ভাইয়া কে। তিনি আমাকে দেখে খুব লজ্জায় পরে গেলেন। এদিকে ইতিও লজ্জায় মরি মরি! আমি সেদিকে নজর না দিয়ে জিজ্ঞেস করি,

“আহিয়ান কে দেখেছেন!

“আহি তো এখানেই ছিল, বলেছিলাম এখানে পাহারা দিতে শালা চলে গেল!

“পাহারা দিতে…

কিছু বলার আগেই ইতি আমাকে টেনে সামনে চলতে লাগল। পেছনে তাকিয়ে দেখি আকাশ উধাও! ব্যাপারটা কি হলো! আমি ইতির হাত ছাড়িয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলি,

“কি হলো রে?

“ককি হবে!

“তোতলাতে কে বলেছে!

ইতি কোন জবাব দিচ্ছে না। সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। লজ্জায় মাথা নিচু। লজ্জার’ই কিছু কাজ করেছে। আমি ওর থিতুনি ধরে মুখটা উঁচু করে বলি,

“কি হয়েছে!

“হামমম..

“কি হাম হাম করছিস!

“ধ্যাত যা সর তো!

বলেই আবারো ধাক্কা মেরে চলে গেল। আজব তো! কি পেলো আমাকে ও। যখন তখন ধাক্কা মারছে। আমি ওর পিছু পিছু গিয়ে এক পর্যায়ে ওর দুটো হাত ধরে ফেলি। অতঃপর জিজ্ঞেস করি,

“কি হয়েছে, বল!

ইতি আমার কানের কাছে এসে কিছু বলে। আমি চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে বলি,

“চুমু খেয়েছে!

ইতি একবার এদিক তাকায় একবার ওদিক। একদিনেই এই ছেলে মেয়ে গুলো কতোদূর এসে পড়েছে। আমি কপালে হাত দিয়ে বলি,

“হয়েছে রাখ তো নাটক! এখন চল আমার সাথে।

“কোথায় যাবো

“হবু জামাইয়ের কাছে একবার গিয়েছিস এখন নিশ্চিত তার কাছে যাবি না।

ইতি চোখ ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি বলে উঠি,

“আহিয়ান কে খুঁজতে, কোথাও গেলো উনি!

বলতে বলতে একটা ক্লাসরুমে এসে দাঁড়ালাম। ভেতর থেকে কারো কথার আওয়াজ আসছে। এটা নিতির আওয়াজ বলে মনে হচ্ছে। আমি কান খাড়া করে শুনছি সে কিছু বলছে। হঠাৎ করেই তার মুখে আহি ডাকটা শুনলাম। রুমের দরজা ভিরানো ছিল। আমি আর দাঁড়িয়ে না থেকে দরজা খুলে ভিতরে তাকালাম। আমার সাথে ইতিও। দুজনেই দেখলাম উনার দু গালে হাত রেখে খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছে নিতি। আহিয়ান নিতির সেই দু হাত ধরে রেখেছে। আমাকে দেখে আহিয়ান কে মোটেও অবাক হতে দেখলাম না। কিন্তু নিতি কে অবাক হতে দেখলাম। তার সাথে সে চিন্তিত!

আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছি, আমার সাথে ইতিও! ইতি আমার ঘাড়ে হাত রাখল। নিতি হাত দুটো সরিয়ে নিলে আহিয়ান সেখান থেকে চলে আমার কাছে এলো। আমার হাত ধরে বাইরে যেতে নিলে আমি নিতির দিকে তাকিয়ে বলি,

“আপনি যান আমি পরে আসছি!

উনি কোন কথা না বলে হাতটা ছেড়ে চলে গেলেন। আমি এগিয়ে নিতির কাছে গেলাম। ইতি রুমের বাইরেই দাঁড়িয়ে রইল!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here