ভালোবাসার_ফোড়ন_২ #মিমি_মুসকান #পর্ব_৪৭

0
757

#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৪৭

নিতি আমার পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে আমি ওর বাহু ধরে নিজের দিকে টেনে আনি। নিতি একবার আমার দিকে তাকিয়ে ওর বাহুর দিকে তাকাল। অতঃপর আমার হাত ছাড়িয়ে বলে,

“সাহস হয় কিভাবে আমাকে ধরো তুমি!

আমি ওর সামনে এগিয়ে বলি,
“তোমার সাহস হয় কীভাবে আমার স্বামীর কাছে আসো। এতোটা নির্লজ্জ হও কিভাবে?

“মুখ সামলিয়ে কথা বলো নিহা।

“আর তুমি নিজের সীমার মধ্যে থাকো। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি পাল্টে গেছো। কিন্তু না! তুমি আগেও যা ছিলে এখনো তাই আছো।

নিতি হেসে বলে,
“ভুল বললে! আগে যা ছিলাম এখন তার থেকেও বেশি! তোমার কি মনে হয় নিহা! আমি তোমার কাছে এসে ক্ষমা চাইলাম, এতো সহজে তোমাদের মেনে নিলাম, শান্ত হয়ে গেলাম। এটা আদৌও সম্ভব! আহি আমার ভালোবাসা! অনেক ভালোবাসি ওকে আমি অনেক ভালোবাসি।

“এই একতরফা ভালোবেসে কি লাভ!

“তবুও তো আমি একতরফা ভালোবাসি। ভালোবাসা তো আছে আমাদের মাঝে তোমাদের মাঝে তো তাও নেই

আমি নিতির দিকে তাকিয়ে আছি। সে আমার দিকে তাকিয়ে জয়ের হাসি দিচ্ছে। তার বলা কথাটা যে মিথ্যে না সেটা সে জানে। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি,

“আমাদের মাঝে এখন কি আছে না আছে সেটা বড় কথা না। সত্যি এটাই যে আমি আহিয়ান’র বিবাহিতা স্ত্রী! তাই উনার থেকে দূরে থাকবে তুমি বুঝতে পারলে।

“বাহ বেশ কথা বলছো দেখছি।

“ওহ! তাহলে তুমি কি ভেবেছিলে আমি কিছুই বলবো না।

নিতি আমার কাছে এসে বলে,
“ভেবেছিলাম নিজ থেকেই সরে যাবে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমার’ই কিছু করতে হবে।

বলেই নিতি হেঁটে দরজা কাছে যেতে নেয়। তখন আমি বলে উঠি,

“আমার নাম কি সেটা জান তো!

নিতি দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকায়। আমি হেঁটে ওর কাছে গিয়ে বলে উঠি,

“নিহারিকা নিহা চৌধুরী! আইমিন মিসেস আহিয়ান চৌধুরী! জানো তো এটার মানে কি!

নিতি আমার দিকে রেগে তাকাল। তার চাহনিতে আমি মুচকি হেসে বলি,

“সময় আছে , সময় দিচ্ছি বুঝে নাও। কারন আমি আর যা কিছুই ছেড়ে দিই না কেন কখনো নিজের সংসার ছাড়বো না।

নিতি রেগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেল। অতঃপর আমি বের হয়ে দেখি ইতি আমার তাকিয়ে হা হয়ে আছে। আমি ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলি,

“কি হয়েছে!

ইতি আমার বাহুতে দু হাত রেখে বলে,
“ফাটিয়ে দিয়েছিস আজ তুই! কিন্তু কম হয়ে গেল না।

“দেখি সর তো যেতে দে!
বলেই আমি চলে এলাম। ইতি আমার পাশে পাশে হেঁটে হেঁটে বলে,

“এখন কি ভাইয়ার ক্লাস নিবি।

“উনার কি ক্লাস নিবো আর কেন নেব।

“কেন নিবি মানে। কতো বড় কান্ড করল। তোর জায়গায় অন্য কোন মেয়ে থাকলে এতোক্ষণে পুরো কলেজ মাথায় করতো।

“আমি নিহা অন্য কেউ না!

ইতি চাপায় গলায় বলল,
“হ্যাঁ আহিয়ানের ভূতনি বউ বলে কথা!

আমি ইতির কথা শুনেও কিছু বললাম না। আমার মাথায় অন্য একটা কথা চলছে। কিন্তু এটা নিতির কথা না অন্য কথা।

বাইরে এসে দেখি উনি এক কোনে টেবিলের সাথে ঠেসে দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান দেখছে। নৃত্য চলছে এখন! দলীয় নৃত্য! মেয়েরা এক ঝাঁকে শাড়ি পড়ে নাচছে। আমি এসে উনার পাশে দাঁড়ালাম। আমার সাথে সাথে ইতিও এলো। দাঁড়িয়ে মেয়েদের নৃত্য দেখছি। ইতি একবার স্টেজে তাকাচ্ছে আরেকবার তাকাচ্ছে আমার দিকে।

নৃত্য শেষ হলো, উনি একটা পানির বোতল আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলেন,

“নাও পানি খাও! ঝগড়া করে এসে তোমার গলা শুকিয়ে গেছে।

পানিল বোতল নিয়ে পানি খেলাম। ইতি কে সাধলাম, সে কোন কথা না বলে শুধু তাকিয়ে রইল। উনার হাতে চকলেট! উনি চকলেটের প্যাকেট টা আমার দিকে সাধলেন। আমি পুরো চকলেটের প্যাকেট টাই নিয়ে নিলাম। একটা একটা করে চকলেট মুখে দিচ্ছি আর স্টেজের দিকে তাকিয়ে আছি। আবারো অ্যানাউসমেন্ট হচ্ছে। হুট করেই ইতি এসে আমাদের দুজনের সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

“ব্যাপারটা কি হলো! তোমরা দু’জন এতো শান্ত আছো কিভাবে?

“কেন কি হয়েছে?

“তুই আবার জিজ্ঞেস করছিস কি হয়েছে? আর ভাইয়া আপনি! আপনার কি মনে হয় না কিছু একটা বলা উচিত!

উনি বলে উঠেন,
“কোন ব্যাপারে!

“একটু আগে যা হলো, আইমিন নিতি আর..

বলার আগেই আমি আর আহিয়ান একসাথে বলে উঠি,

“তেমন কিছু হয় নি আমরা জানি!

বলেই দুজন দুজনের দিকে তাকালাম। ইতি অবাক হয়ে বলল,

‘এতো বিশ্বাস দুজনের দুজনের প্রতি!

আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বলি,
“এটা বিশ্বাস না! আমি জানি এমন কিছু হয় নি। তাই এটা নিয়ে কথা বলে সময় নষ্ট করার দরকার নেই। তবে হ্যাঁ একটা বিষয় নিয়ে সিউর হয়ে গেলাম!

আহিয়ান বলে উঠে,
“নিতির ব্যাপারটা!

“হুম এটাই! দেখলেন ও একটুও বদলায় নি।

“মানুষের স্বভাব বদলানো এতো সহজ না।

“কি ধরিবাজ মেয়ে রে বাবা!

দুজনেই ভ্রু কুঁচলাম। অতঃপর সামনে তাকালাম। ইতি তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে আমাদের দিকে। আমি ওকে একটু হালকা ভাবে ধাক্কা দিয়ে বলি,

“কি হয়েছে?

ইতি হেসে আমাদের দুজনের দিকে হাত দিয়ে বলে,
“নজর না লাগযায়ে! একদম মেড ফর ইচ আদার!

আমি চকলেট মুখে দিয়ে বলি,
“কচু!

“ভূতনি!

“গোমরামুখো!

উনি কিছু না বলে চলে যান। ইতি এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
“আচ্ছা নিহা সত্যি করে বল তো।

“কি বলবো!

“তোর কি একটু ও হিংসে হচ্ছে না।

“না হিংসে কেন হবে।

“হবে নাই বা কেন! তুই ছাড়া অন্য একটা মেয়ে তোর বরের গালে হাত রেখেছে তোর খারাপ লাগে নি বলছিস!

আমি ওর মুখের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে আহিয়ানের দিকে তাকালাম। আকাশ ভাইয়া আর নাহান ভাইয়াদের সাথে আড্ডা দিচ্ছেন। হঠাৎ করেই ইতি আমাকে খোঁচা মেরে বলে,

“কিরে কথা বলছিস না কেন?

“আচ্ছা! আকাশ ভাইয়া তোকে কবে বিয়ে করবে বল তো।

“তুই মাঝখানে এই কথা কেন বললি।

“এমনি। আকাশ ভাইয়া কে বলবি কাল’ই যেন তার মা আর বাবা কে তোর বাড়িতে পাঠায় বিয়ের কথা বলার জন্য!

“কিন্তু..

বলার আগেই আমি চলে এলাম। অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে আরো এক ঘন্টা লাগল। ততোক্ষণে দুপুর গড়িয়ে গেছে। আমরা সবাই বাইরে চলে এসেছি। নিতি ওদের এখন আর দেখতে পারছি না। বলতে গেলে তখন থেকেই দেখতে পারছি না। চলে গেল নাকি।

আহিয়ান বাইরে এসে বলল আজ গাড়ি করে যাবে না। রিকসা করে যাবে। উনার এমন হুটহাট কথা শুনে মেজাজ খারাপ হবার কথা তবুও খারাপ করলাম না‌‌। কিছু না বলে মাথা নাড়লাম কারন রিক্সায় চড়তে আবারো বেশ লাগে।

ড্রাইভার কে ফোন করে বলা হলো গাড়ি যেন এসে নিয়ে যায়। অতঃপর একটা রিকসা ভাড়া করলাম। দুজনেই চড়লাম তাতে। প্রথমে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম। অতঃপর সেখান থেকে বের হয়ে দুজনে হাঁটতে লাগলাম। আমি উনার পাশে পাশে হাঁটছি আর চারপাশ দেখছি। আজ অনেক কাপল বের হয়েছে। তাদের দু’জনের গায়ে এক রঙের শাড়ি আর পাঞ্জাবি। মেয়েরা ছেলেদের কাঁধে মাথা রেখে হেঁটে যাচ্ছে।

উনি আর আমি হাঁটতে হাঁটতে ওভারব্রিজ এ এসে পৌঁছলাম। ওভারব্রিজ এ ধারে দু’জনে একসাথে হাঁটছি। কিছুক্ষণ’র জন্য দাঁড়ালাম এক পাশে। বাতাস খুব জোরে বয়ে যাচ্ছে। গাড়িগুলোও চলছে দ্রুত গতিতে! বাতাসের কারনে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল। আমি সেগুলো খোঁপা করে উনার দিকে তাকালাম। উনি তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি বলে উঠি,

“আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব!

“বলো!

“আচ্ছা আপনি কখন আরেকজন কে কিস করবেন।

“যদি তাকে ভালোবাসি তখন! যেমন ধরো, ইয়ান তোমাকে খুব ভালোবাসে তাই সে তোমাকে কিস করে কিংবা পিকু কে তুমি খুব আদর করে বলে তাকেও কোলে তুলে কিস করো। করো না।

“হুম করি!

উনি হেসে বলেন,
“তুমি হয়তো অন্য উদাহরণ চাইছো। তাহলে শোন! তোমার সেদিন টিভিতে দেখা বিয়েটার কথা মনে আছে।

আমি চোখ ঘুরিয়ে উনার দিকে তাকালাম।‌ উনি আবারো হেঁসে বলেন,

“এটা খ্রিষ্টানদের বানানো একটা নিয়ম। বিবাহের পর তারা একজন আরেকজনকে কিস করে সবার সামনে তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে।

“এতো ব্যাখা জানতে চাই নি। বললেই হলো আপনি কাউকে ভালোবাসলে তাকে কিস করবেন ব্যস।

“তুমি কি এখনো আমার আর নিতির কথা ভাবছো।

আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলি,
“আপনাকে যথেষ্ট বিশ্বাস করি!

বলেই আবারো হাঁটতে লাগলাম। উনি হাঁটলেন আমার পিছু পিছু। সূর্য অস্ত অবদি দুজনে হেঁটে গেছি। দুজনে একসাথে আইসক্রিম’র গোলা , হাওয়াই মিঠাই আর বেলপুরি খেলাম। অতঃপর রিক্সায় চড়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম।

বাসায় ফিরতেই ইয়ান দৌড়ে এলো আমাদের কাছে। জরিয়ে ধরল আহিয়ান কে। তার পিছু পিছু পিকু ও এলো। সামনে তাকিয়ে দেখি দুলাভাই, আয়ানা আপু সবাই দাঁড়িয়ে আছে হাসি মুখে। আমি তাদের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here