শুধু_তুই #পর্বঃ২৫ #Rifat_Amin

0
385

#শুধু_তুই
#পর্বঃ২৫
#Rifat_Amin

পাখির কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙলো আমার। পাশে ফিরে দেখলাম প্রহরভাই নেই। নিশ্চই না বলে চলে গেছে! একটাবার তো ডাকতে পারতো, ধুর। বালিশ হাতরে ফোনটা বের করে দেখলাম সকাল ১০ টা বাজে! আশ্চর্য! ঘড়ির মাথা খারাপ হয়েছে নাকি আমার চোখের সমস্যা হলো? এত তারাতারি সকাল দশটা বেজে গেলো! বেলকনির পর্দাটা সড়িয়ে দিয়ে দেখলাম বাইরে রৌদ্রজ্বল সকাল বেলা৷ ঘড়ির মাথা তাহলে ঠিকই আছে। আমি ফ্রেস না হয়েই ছাদে উঠলাম। ছাদে উঠে দেখলাম প্রেম হাঁটাহাঁটি প্রাকটিজ করছে৷ গতরাতে ঘুম ভালো হওয়ার কারণে মনটাও বেশ ফুরফুরে। কিন্তু প্রহরকে এই অবস্তায় দেখে খারাপ লাগলো। বেচারার কি অবস্থা। প্রেম আমাকে দেখেই একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

‘গুড মর্ণিং জানু।'(প্রেম)

আমি ওর কথায় সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

‘শরীর ঠিক নাই, নাকি মাথা ঠিক নাই? আমারে জানু বলিস কেন? ‘ (আমি)

প্রেম আবারো ভুবনমাতানো হাসি দিয়ে বললো,

‘কিছুই ঠিক নাই। এত তারাতারি ঘুম থেকে উঠলে যে? ‘(প্রেম)

‘সবতো তোর ভা…’ (আমি)

আমি সোজা প্রহরভাইয়ের দোষ দেবো এমন সময় থেমে গেলাম। উনি যে গতকাল রাতে লুকিয়ে আমার কাছে এসেছিলো সেটা তো বলা যাবে না। বললেই তো মানসম্মান প্লাসটিকে হয়ে যাবে দুজনার। কথাটা এড়িয়ে যেতে দাঁত কেলিয়ে বললাম,

‘তোর সারার কি খবর? সব কি ঠিকঠাক? ‘ (আমি)

প্রেম হাঁটা বন্ধ করে দোলনায় বসে পানি খাচ্ছিলো। আমার কথা শোনার সাথে সাথে সব পানি ছিটকে বেরিয়ে গেলো। প্রেম চোখ বড় বড় করে বললো,

‘আমার সারা মানে? মাথা ঠিক আছে? সি জাস্ট মাই ফ্রেন্ড। ‘(প্রেম)

আমি চোখটিপে বললাম,

‘হ বুঝি বুঝি। আর বুঝাতে এসো না মনা। ‘ (আমি)

এমন সময় প্রেমের ফোন বেজে উঠলো। ফোনটা ছাদের ছোট টেবিলটাতে থাকায় ফট করে প্রেমের আগে ফোনটা তুলে নিলাম আমি। স্ক্রিনে সারা নামটা ভেসে উঠতেই আড়চোখে প্রেমের দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘ঘটনা তাহলে ঘটিয়ে ফেলছো। বিয়ে করছিস কবে? ‘(আমি)

‘বিয়ে ! কিসের বিয়ে! কার বিয়ে?” (প্রেম)

আমি ওর কথা না শুনে ফোনটা রিসিভ করলাম। রিসিভ করার সাথে সাথেই সারার কন্ঠ ভেসে আসলো। আমি ফোনটা লাউডে দিয়ে প্রেমের পাশে বসে পরলাম,

‘ হ্যালো প্রেম। তোমার শরীর এখন কেমন আছে? ‘ (সারা)

প্রেম খানিকটা বিরক্তস্বরে বললো,

‘দু’ঘন্টা আগেই তো বললাম ভালো আছি। এর মধ্যে আর কি উন্নতি হবে শরীরের? ‘ (প্রেম)

প্রেমের কঠিন স্বরে ঘাবড়ে গেলো সারা। ভয় ভয় কন্ঠে বললাম,

‘ আচ্ছা সরি। রাখি তাহলে। ‘ (সারা)

সারার কথা শেষ হতেই আমি বললাম,

‘ তোমার বন্ধু এখন আমার পাশে আছে মনা। রশ্নি! হিহিহি। ‘ রেডি হয়ে যাও। আজ সাজেক যাবে না? ‘(আমি)

সারা উৎফুল্ল হয়ে বললো,

‘ বাবা তো কাল রাতেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছে৷ কিন্তু প্রেম বোধহয় আমার যাওয়াটা মেনে নিবে না। আমি ওর পাশে থাকলে ও বোরিং ফিল করে ‘ (সারা)

আমি প্রেমের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

‘ কোনো কিন্তু হবে না। প্রেম যাবে, দরকার হলে প্রেমের বাপও যাবে, থুক্কু প্রেমের ভাই আর ভাবি যাবে। সাথে তুমিও যাবা। এবং সবাই যাবে। পরে আমি প্রেমকে দেখে নেবো নে। ‘(আমি)

প্রেমের সাথে কিছুসময় কাটিয়ে নিচে নেমে আসলাম৷ ফ্রেস হয়ে খেতে বসবো এমন সময় আম্মি বললো,

‘ঐশীর বিয়েটা খুব তারাতারি দেবো। আজকে আবারো কথা ফাইনাল করতে তোর পুলক ভাইয়ারা আসবে। রুমের ভীতর হারিয়ে যাস না আবার। ‘ (আম্মি)

আমি মনোযোগ দিয়ে খেতে খেতে বললাম,

‘আজ তো আমরা সাজেক যাচ্ছি। জানো না? ‘ (আমি)

আম্মি মুচকি হেসে বললো,

‘ প্রহরবাবু আমাকে তোর আগেই বলেছে। ও সব কথা আগে আমার সাথেই শেয়ার করে। কত ভালো ছেলে! আমি তোর ভবিষ্যত নিয়ে কত টেনশনে ছিলাম রে। ভাগ্যিস প্রহর তোর মতো একটা গাঁধাকে পছন্দ করে বিয়ে করলো ‘ (আম্মি)

আম্মির কথায় ঠোঁট বাকালাম। তুমি তো আর জানে না কোন বান্দ’রের সাথে আমায় বিয়ে দিছো। আম্মি আবারো বললো,

‘ একটু পরই সবাই আসবে। তোরা তো যাবি বিকেল বেলা। সমস্যা হবে না। ‘ (আম্মি)

আমি হা হু কিছুই করলাম না। মনোযোগ দিয়ে খাওয়াদাওয়া করে রুমের ভীতর ঢুকে পরলাম। কিন্তু তখন-ই প্রেয়সী চকলেট খেতে রুমে প্রবেশ করলো। এসেই বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে বললো,

‘দাভাই তোমাকে ছাদে ডাকে। যাও ‘ (প্রেয়সী)

আমি ওর নির্দিষ্ট জবাব না দিয়ে বললাম,

‘আমায় একটা চকলেট দে। লক্ষী বোন আমার। ‘(আমি)

আমার মিষ্টি কথায় প্রেয়সীর মন গললো না। সে চোখ পাকিয়ে বললো,

‘না। এটা দেয়া যাবে না। তোমাকে দাভাই ডাকে। যাও’ (প্রেয়সী)

‘শুনছি! এহন বিদেয় হ। তুই বোন তো না.. বোন নামে কলঙ্ক। যা, বেড়িয়ে যা রুম থেকে। (আমি)

আমার কথা প্রেয়সীর গায়ে লাগলো বলে মনে হলো না। সে চকলেট খেতে খেতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। মনে হচ্ছে আমি ওকে আদর করে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে বলেছি৷ সিদ্ধান্ত নিলাম এখন আর ছাদে যাবো না। ভালো লাগছে না। শুধু ঘুম পাচ্ছে। কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার পর ঘুমটা কেবল আসবে এমন সময় বিছানা কেঁপে ফোন বেজে উঠলো। চোখ খুলে দেখি প্রহরভাই চোখের সামনে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পরনে সেন্টু গেন্জি আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। আমি ওনার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলাম। এই মহুর্তে কিছু বলা মানেই ভুল। উনি কঠোরস্বরে বললেন,

‘আমাকে জমিদারি দেখাস। তোকে ছাদে ডাকিনি? ‘ (প্রহর)

আমি ভয়ভয় কন্ঠে জবাব দিলাম,

‘ঘুম পেয়েছিলো৷ তাই আরকি! ‘ (আমি)

উনি কথা না বলে হরহর করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন। ধুর! আমার কাঁচা ঘুমটাই যা নষ্ট হলো। এতকিছু না ভেবে আবারো ঘুমিয়ে পড়লাম। যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন বাইরে মানুষের কোলাহল। দেয়ালঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম দুপুর দুটো বাজে। ওহহ সিট! নিশ্চয়ই পুলক ভাইয়ারা এসে গেছে। আর এদিকে আমি গোসলটা পর্যন্ত করিনি! আম্মি এই অবস্থায় আমাকে দেখলে তো মে’রেই ফেলবে একদম। বিছানা থেকে নেমে রুমের দরজা থেকে আড়চোখে বাইরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম। সোফায় প্রেম, প্রহর, আঙ্কেল-আন্টি আর পুলক ভাইয়ার পরিবার বসে আছে। সারাও দেখছি আছে। আর এদিকে অলসতার কারণে আমি ওখানে নাই! অতঃপর আম্মি আসার আগেই কোনোমতে গোসল সেরে নিয়ে একটু সেজেগুজে ড্রইংরুমে প্রবেশ করলাম।

সময় তখন বিকাল ৩ বেজে ১৯ মিনিট। প্রহরের বাসার সামনে তিন তিনটা মাইক্রো জিপ দাঁড়িয়ে আছে৷ সবগুলোর কালার ব্লাক। প্রহর যখন ড্রাইভারদের সাথে কথায় ব্যস্ত তখন হুট করে সেখানে উপস্থিত হলো অর্জন। প্রহর তৎক্ষনাৎ ড্রাইভারকে বললো,

‘ যারা যারা যাবে তাদের সবাইকে গাড়িতে উঠায় নিয়ো, ঠিক আছে? এখান থেকে সাজেকে রওনা দেবো ঠিক বিকাল ৪ টায়। তার আগেই যেনো সবাই উঠে পরে৷ আমি ঠিক চারটায় এখানে আসবো। ওকে? ‘ (প্রহর)

ড্রাইভার প্রহরের পরিচিত। তাই বেশিকিছু বুঝাতে হলো না তাকে। চারটার সময় রওনা হবে মানে তাঁর একসেকেন্ড আগেও না, পরেও না৷ আর সাজেকেও অলরেডি হোটেল বুকিং করা হয়ে গেছে। প্রহর আর কোনো কথা না বলে অর্জনের বাইকে উঠে পরলো। মুখে দুজনার কালো মাস্ক৷ সারা শরীর কালো জ্যাকেট দিয়ে আবৃত। পকেটে রিভ’লবার। একটু পরই নাউমি আর সোনিয়ার সাথে দেখা হবে। ইতোমধ্যে অর্জন রাস্তার বিভিন্ন গলিতে প্রহর গ্যাংয়ের লোক সেট করে রেখেছে। যেকোনো বিপদে তারা এগিয়ে আসবে৷ যদিও প্রহর সেটা জানে না। প্রহর আর অর্জন নাউমির লোকেশন অনুযায়ী একটা পরিত্যক্ত তেল কারাখানায় এসে দাঁড়ালো। সোনিয়া তো এখানেই ডেকেছিলো। কিন্তু এমন একটা বাজে পরিবেশে ওরা থাকবে কেনো? খুব সাবধানে মুল ফটকের ভীতর প্রবেশ করলো দুজন। চারপাশটা খুব সাবধানতার সাথে চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো ভীতরে কেউ আছে কি না। অতঃপর গুটিগুটি পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে চললো। কারখানার দরজাটা ভেদ করে ভীতরে ঢুকার পর পরই দরজাটা আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেলো। সাথে সাথেই প্রহর আর অর্জন সাবধান হয়ে গেলো। অর্জন অলরেডি সব ছেলেদের এলার্ট করে দিছে। একটু পর তারা এসে যাবে কারখানার বাইরে। ভেতরটা গভীর অন্ধকার। এতই অন্ধকার যে কোনো ক্রমেই বুঝা যাবে না বাইরে এখন দিন নাকি রাত চলছে। তার ঠিক একমিনিট পর হঠাৎ করে পুরো কারখানার সব লাইট জ্বলে উঠলো। প্রহর নিজেকে স্বাভাবিক রাখার যথেষ্ট চেষ্টা করছে। এখন একটা উদ্ভদ এলাকায় এর আগে কখনো এসেছিলো বলে মনে করতে পারছে না সে। প্রহর অর্জন দুজন দুজনার দিকে চাওয়া-চাওয়ি করছে। এমন সময় একটা লম্বা চওড়া ছেলে প্রবেশ করলো ভীতরের রুমে। চারপাশে ময়লা আবর্জনার স্তুপ। বিভিন্ন যায়গায় পরিত্যক্ত তেলের ড্রাম পরে আছে। ছেলেটাকে দেখেই একপ্রকার অবাক হয়ে গেলো প্রহর আর অর্জন। ছেলেটার মাথায় বড় বড় চুল। হাতে ব্যান্ডেজ। ছেলেটি বিকট শব্দে হাসতে হাসতে বললো,

‘হ্যাল্লো মি. প্রহর। ওয়েলকাম টু মাই হোম ‘ (ছেলেটি)

প্রহর চরম আশ্চর্য হয়ে বললো,

‘ মাহিম তুই? তুই এখানে কি করছিস? তুই না অস্ট্রেলিয়ায়? ‘ (প্রহর)

তার সাথে অর্জনও সুর তুলে বললো,

‘এসব কি মাহিম। তোর সাথে আমাদের এমনিতেই ছোটখাটো ঝামেলা ছিলো। কিন্তু এখন তো নাই। এসব কি শুরু করছিস?’ (অর্জন)

মাহিম হাসতে হাসতে একটা ড্রামের উপর বসে পড়লো। সাথে সাথেই দুটো ছেলে দুদিক দিয়ে দুজনার মাথায় শর্ট’গা’ন ঠেকালো। প্রহর অর্জন খুব একটা অবাক হলো না। মাহিম উদ্ভটস্বরে হাসতে হাসতেই বললো,

‘ সব ভুলে যাবো? তোকে ভুলে যাবো? রশ্নিকেও? আর আমাকে দেয়া তোদের যন্ত্রণা অপমানগুলোও? (মাহিম)

প্রহর নিজেকে শান্ত রেখে বললো,

‘ আমি তোকে মোটেও অপমান করিনি মাহিম। আমি রশ্নিকে ভালোভাসি তোকে আগেও বলেছিলাম। বরং তুই আগ বাড়িয়ে ওকে প্রতিনিয়ত ডিস্টার্ব করেছিলি। আর রশ্নির সাথে মিসবিহেভ করলে তার পরিণতি কি হয় তা নিশ্চই জানিস? ‘ (প্রহর)

মাহিম ড্রাম থেকে উঠে পা দিয়ে সজোড়ে ড্রামটাকে আঘাত করলো। অতঃপর বললো,

‘ ওসব বাদ দে৷ তোর ভাইও দেখি তোর মতো হয়েছে। বরং বলা যায় তোর থেকেও বেশী ডেঞ্জারাস। সেদিন দেখ, ওকে মার’তে গেলাম৷ উলটা ওর ফ্রেন্ড আমার হাতের চৌদ্দটা বাজিয়ে দিলো৷ ভেরি গুড জব ‘ (মাহিম)

অর্জন বিরক্তিকর কন্ঠে বললো,

‘দিস ইজ টু মাচ। নাউমি আর সোনিয়া কই? ‘ (অর্জন)

‘ ওর আর কোথায় থাকবে? নাউমি তো আমার বউ। আর সোনিয়া আমার বাজি পার্টনার। হা-হা-হা। তবে আমার বারবার তোর ভাইয়ের প্রসংশা করতেই হয়। ওকে কত চেষ্টা করলাম মার’তে’। কিন্তু সে এত ধুরুন্ধর তা জানা ছিলো না। (মাহিম)

প্রহর মুচকি হাসলো। সাথে সাথেই বাইরে গোলাগুলির আওয়াজ শোনা গেলো। প্রহর, অর্জন সাথে সাথেই নিজেদের সেফটির জন্য নিজেদের শর্ট’গান বের করলো…

আগাম একটা করে বেশি পর্ব পড়তে চাইলে আমাকে এক্ষনি ফ্লো করুন ✊🖐️,
,

চলবে?

(গল্পের ইতি টানবো। ভালোয় ভালোয় শেষটা যেনো কমপ্লিট করতে পারি। দোয়া করেন সবাই🙂)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here