তুই_শুধু_আমার💕 #Nusrat_Jahan_Bristy #Part_2

0
580

#তুই_শুধু_আমার💕
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_2

জিসান ইশাকে নিয়ে বাড়িতে আসে। কলিং বেল বাজাতেই আসমা দরজাটা খুলে দেয়। আসমা দরজা খুলে আবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ইশা আর জিসানের দিকে। আসমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিসান বলে।

–কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? সামনে থেকে সর।

আসমা কিছুটা তোতলিয়ে বলে।

–হে ভাই জান।

জিসান ইশার হাত ধরেই বাড়ির ভিতরে ডুকে। ঘরে ডুকেই মাকে উচ্চ স্বরে ডাকতে থাকে। জিসানের মা সালিহা বেগম‌ ছেলের চিৎকার শুনে ঘর থেকে আসতে আসতে বলেন।

–কি হলো এভাবে চিৎকার করচ্ছিস কেন?

সালিহা বেগম ইশাকে নববুধ অবস্থায় দেখে বড় ধরণের শক খায় আর ইশার চোখ মুখ ফোলা দেখে বলে।

–ইশা তোর এই‌ অবস্থা কেন?

ইশা দৌঁড়ি তার মামনির বুকে গিয়থ ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর ফুফিয়ে ফুফিয়ে কান্না করা শুরু করে দেয়। সালিহা বেগম ইশাকে প্রশ্ন করেন।

–কি হয়েছে ইশার তোর আর তোর এই সাজ কেন? কলেজে গিয়েছিলি তো অন্য ড্রেস পড়ে।

তারপর‌ জিসানের দিকে তাকিয়ে বলেন।

–জিসান তুই বল ওর কি হয়েছে আর বিয়ের বেনারসি ওর গায়ে কোথা থেকে এলো?

ইশা কোনো কথা বলছে না শুধু কান্না করেই যাচ্ছে। অন্য দিকে জিসানের রাগে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে ইশার এই ন্যাকা কান্না দেখে। জিসানের মন চাইছে ইশার মুখে টেপ লাগিয়ে দিতে যাতে কান্না না করতে পারে। জিসান সোফাতে আয়েশ করে বসে চিৎকার করে বলে।

–আসমা আমাকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিয়ে যায়।

আসমা তাড়াতাড়ি করে জিসানের জন্য এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে আসে। জিসানের এমন চিৎকার শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে জিসানের বাবা জিহান চৌধুরী আর জিসানের বোন জিসা। জিহান চৌধুরী ড্রয়িং রুমে এসেই বলেন।

–কি হলো জিসান এভাবে চিৎকার করছো কেন তুমি?

জিহান চৌধুরীর চোখ যায় ইশার দিকে ইশাকে দেখে জিহান চৌধুরী খুব আবক হয়। আবাক হওয়ারেই কথা এক জন অবিবাহিত মেয়ের হঠাৎ করে এমন সাজ।

জিসান পানিটা এক টানে খেয়ে মাথা নিচু করে শান্ত হয়ে বসে আছে। নজর তার সাদা টাইলস করা ফ্লোরের দিকে। ঝড় আসার আগে ঠিক যেমন সব কিছু শান্ত থাকে ঠিক তেমনেই জিসান এখন শান্ত হয়ে রয়েছে। জিসানকে চুপ থাকতে দেখে জিহান চৌধুরী আবারও বলে উঠে।

–জিসান আমি তোমাকে কিছু বলছি কথা বলছো না কেন?

জিসান আর সহ্য করতে পারছে না ইশার এই অতিরিক্ত কান্না তাই এক প্রকার জোরে ধমক দিয়ে বলে।

–ইশা স্টোপ রাইট নাও আর এক বার যদি তোর কান্নার আওয়াজ পাই তো তোর খবর আছে বলে দিলাম।

জিসানের চিৎকারে ইশার আত্মা ক্ষেপে ওঠে। ইশা নিজের চোখের পানি মুজে দৌঁড়ে নিজের ঘরের দিকে চলে যায়। সালিহা বেগম অবাক হয়ে ইশাকে পিছু ডাকে কিন্তু ইশা সাঁড়া না দিয়েই চলে যায়। অতঃপর জিসানের দিকে তাকিয়ে বলেন।

–জিসান কি হচ্ছে টাকি এমন ভাবে তুই ওর সাথে কথা বলছিস কেন আর ইশার এমন অবস্থা কেন?

জিসান শান্ত কন্ঠে নিজের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলে।

–ইশাকে আমি বিয়ে করেছি মা।

জিহান চৌধুরী নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। ছেলে তার কিসব উল্টাপাল্টা কথা বলছে। জিহান চৌধুরী হতভম্ব হয়ে বলেন।

–কিহ? কি বললে তুমি?

জিসান বসা থেকে উঠে শক্ত কন্ঠে বলে উঠে।

–হে আমি ইশাকে বিয়ে করেছি শুনতে পাও নি তোমারা আমার কথা।

সালিহা বেগম বলেন।

–তোর কি মাথা ঠিক আছে জিসান আর কয়েকদিন বাদে তোর আর রুহির এনগেজমেন্ট আর তুই ইশাকে বিয়ে করেছি।

–হে আমি ইশাকে বিয়ে করেছি আর আমি এই এনগেজমেন্ট করতে চাই নি। শুধু মাত্র ওই‌ ড্রামাবাজ রুহির জন্য আমি এই এনগেজমেন্টে রাজি হয়েছি।

–জিসান তুমি বুঝতে পারছো রুহি যদি জানতে পারে এই কথাটা তো কি হবে।

জিসান বাবার কথা শুনে দাঁতে দাঁত চেঁপে বলে।

–আই ডোন্ট কেয়ার বাবা! ও কি করতে পারে সেটা আমি খুব ভালো করে জানি। ও আমাকে সুইসাইড করার ভয় দেখিয়ে এনগেজমেন্টে রাজি হতে বাধ্য করেছে।

–কিন্তু….

সালিহা বেগম আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই উপর থেকে একটা বিকট আওয়াজ ভেসে আসলো। হয়তো কাঁচ ভাঙ্গার। জিসান আনমনেই বলে উঠে।

–ইশা….

জিসান দৌঁড়ে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে সোজা ইশার ঘরের দিকে চলে যায়। সবাই জিসানের পিছন পিছন যায়। জিসান ইশার ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দরজা ধাক্কা দিলে দেখে দরজা ভেতর থেকে লাগানো। জিসান দরজায় বারি দিতে দিতে ইশাকে ডাকতে থাকে কিন্তু ইশা কিছুতেই সাড়া দিচ্ছে না।

–ইশা মা প্লিজ দরজাটা খুল।

সালিহা বেগমের ডাকেও ইশা কোনো সাঁড়া দিলো না। জিসান আবারও বলে।

–ইশা দরজাটা খোল বলছি।

সালিহা বেগম ভয়ে শিউরে উঠেন। মেয়েট যদি কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলে তা হলে। সালিহা বেগম কাদোকাদো কন্ঠে বলে।

–ইশা মা দরজাটা খুল খারাপ কিছু করিস না তুই। তাহলে আমি তোর বাবা মাকে কি জবাব দিবো বল।

জিসান আর সহ্য করতে পারছে না এবার হুংকার দিয়ে বলে উঠে।

–ইশা আমি তকে শেষ বারের মতো বলছি তুই যদি দরজা না খুলিস তো তোর কপালে শ’নি আছে বলে দিলাম।

ইশা সাথে সাথে দরজাটা খুলে দেয়। জিসান আর বাকিরা ঘরের ভেতরে ডুকে দেখে টেবিলের কাঁচ ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে সারা ফ্লোরে ছড়িয়ে আছে। এই বিকট শব্দটা তাহলে কাঁচ ভাঙ্গার ছিলো। জিসান ইশার হাতে একটা কাচের টুকরা দেখতে পায়। জিসান কাঁচের টুকরাটা তাড়াতাড়ি করে ফেলে দেয় ইশার হাত থেকে।

ইশা নিজের হাত কাটার জন্যই এই কাচের টুকরাটা নিয়েছিল। কিন্তু জিসানের শেষ কথাটা শুনা মাএ আর সাহস পেলো না হাত কাটার। জিসান ইশার দিকে রা’গী চোখে তাকায়। ইশা জিসানের এমন ভাবে তাকানো দেখে ভ’য় পেয়ে দু কদম পিঁছিয়ে যায়। জিসান ইশাকে হুট করেই কোলে তুলে নেয় সবার সামনে। ইশা সাথে সাথে বলে উঠে।

–কি করছেন কি নামান আমাকে?

জিসান ভীষন অবাক হয় ইশার মুখে আপনি ডাকটা শুনে। ইশা সবসময় জিসানকে তুমি করেই ডাকে। তারপরও ইশার কথা পাত্তা না দিয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে বল।

–মা এই‌ঘরটা পরিষ্কার করতে বলো।

জিসান ইশাকে কোলে করে নিয়ে নিজের ঘরে এনে বসিয়ে দেয়। ইশা রেগথ বলে।

–আমাকে এখানে আনলেন কে? আমি আমার ঘরে যাবো।

জিসান নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে।

–তুই আজকে থেকে এই‌ ঘরেই থাকবি।

ইশা বসা থেকে উঠে বলে।

–নাহ আমি এই‌ ঘরে থাকবো না।

–তোকে আমি উঠতে বলেছি।

ইশা‌ জিসানকে ভ’য় পেয়ে আবার বসে পড়ে। জিসানের চোখ যায় ইশার হাতের দিকে র’ক্ত লেগে আছে। জিসান যখন ইশার হাত থেকে কাঁচের টুকরাটা সরিয়েছিল তখন কাঁচটা লেগে হাত কে’টে যায় ইশার। জিসান তাড়াতাড়ি ইশার হাত চেপে ধরে বলে।

–তোর হাত দিয়ে র’ক্ত পরছে আর তর কোনো খেয়াল নেই।

ইশা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বলে।

–পড়লে আপনার কি আমার হাত যা খুশি হবে।

–একটা চ’ড় দিয়ে তোর সব দাত গুলো ফেলে দিবো বেয়াদব মেয়ে।

জিসান তাড়াতাড়ি করে ফাস্ট এইড বক্সটা এনে ইশার হাত ব্যান্ডেজ করে দেয়া। ইশার এত টুকু হাত কা’টা’র জন্য জিসান যা পাগলামো শুরু করেছে তাতে ইশা মারাত্মক ভাবে শক। জিসান দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

–চুপচাপ গিয়ে ফ্রেস হবি আর একটা যদি উল্টাপাল্টা কাজ করেছিস তো তোর খবর আছে বলে দিলাম।

–কি করবে তুমি?

জিসান বাঁকা হেসে ইশার মুখের কাছে নিজের মুখ নিতেই ইশা মুখটা পিঁছিয়ে। জিসান ইশার কপালে পড়ে থাকা চুল গুলা সরাতে সরাতে বলে।

–এখন যদি সব বলে দেই তাহলে হবে কি করে হবে জান। আস্তে আস্তে সব জানতে পারবি কি কি করবো।

ইশার ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। কি বলছে এই‌ লোক কি করবে আস্তে আস্তে। ইশার ভয় মিশ্রিত মুখটা দেখে ইশার কাছ থেকে সরে আসতেই ইশা বসা থেকে উঠে ঘর থেকে বেরুতে যাবে সাথে সাথে জিসানের কন্ঠ ভেসে ওঠে।

–কোথায় যাচ্ছিস তুই?

–আমার ঘরে…

–তো এখন তুই কোথায় আচ্ছিস? তোকে কি আমি যেতে বলেছি এই ঘর থেকে। আজকে থেকে তুই এই ঘরে থাকবি আর তোর সব ড্রেস আমি এই‌ ঘরে আনতে বলবো আসমাকে।

ইশা আর কিছু বলে না। জানে এই‌ মুর্হূতে কিছু বলে লাভ নাই তাই চুপ থাকাটাই শ্রেয় মনে করলো।

_____

রাতে সবাই ডিনার টেবিলে বসে ডিনার করছে। জিসানের সামনের চেয়ারে বসে আছে জিহান চৌধুরী।‌ জিসান চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে তার কোনো হেলদোল নেই যে এত বড় একটা কাজ করেছে। জিসানের পাশে বসে আছে ইশা। জিসান জোর করেই ইশাকে তার পাশে বসিয়েছে। ইশার খাবার গলা দিয়ে নামছে না তারপরও জিসানের ভ’য়ে খুব কষ্ট করে খাচ্ছে। জিহান চৌধুরী গলা খাকরি দিয়থ বলেন।

–জিসান তো তুমি এখন কি ভেবেছো এই ব্যাপারে‌?

জিসান খেতে খেতে উত্তর দেয়।

–কোন ব্যাপারে?

জিহান চৌধুরী ছেলের এমন উত্তর শুনে রেগে বলে উঠেন।

–কোন ব্যাপারে মানে! আজকে তুমি যা করেছো তার ব্যাপারে আর তুমি বুঝতে পারছো যদি রুহি তোমার আর ইশার বিয়ের ব্যাপারটা জানতে পারে তো কি হবে?

–কি আর হবে আমি রুহিকে বলে দিবো যে আমি ওকে বিয়ে করতে পারবো না।

জিহান চৌধুরী ছেলেকে বোঝানোর স্বরে বলেন।

–জিসান তুমি কেন বুঝতে পারছো না ওর বাবা একজন নামকরা বিজনেসম্যান আর ওদের কোম্পানির সাথে আমাদের কোম্পানির একটা ডিল রয়েছে। যদি ওরা তোমার আর ইশার বিয়ের কথাটা জেনে যায় তো আমাদের বড়সর একটা ক্ষতি হয়ে যাবে।

–বাবা তুমি ভুলে যাচ্ছো যে আমরাও একটা নিজের কোম্পানি আছে আর তোমার কোম্পানির কিছু হবে না।

জিহান চৌধুরী স্ত্রীকে উদ্দেশ্যে বলেন।

–সালিহা তুমি তোমার ছেলেকে বুঝাও।

–জিসান তুই তোর বাবার কথাটা একটু বুঝ।

–মা প্লিজ তুমি অন্ত্যত এসব কথা বলো না আর আমি ইশাকে কেন বিয়ে করেছি সেটা নিশ্চয় তোমারা সবাই বুঝতে পারছো।

জিহান চৌধুরী বলেন।

–হে আমারা সবাই বুঝতে পারছি আর আমার সবাই ইশা মাকে খুব ভালোবাসি কিন্তু.।

–বাবা তুমি কি বলতে চাইছো ঠিক পরিষ্কার করে বলো।

–আমি চাই এই ব্যাপারটা যেন আর কেউ না জানুক আর তুমি রুহিকে বিয়ে করে নাও।

ইশা তো খুশি হয়ে যায় জিসানের বাবার কথা শুনে। জিসানের চোখ এড়ায়নি ইশার এই খুশি। জিসান রেগে টেবিলে মারি মারে। ইশার তো প্রান যায় যায় অবস্থা। পাগলা কু’কু’র আবার ক্ষেপে গেছে এবার আর কি কি করবে কে জানে।

–ব্যস বাবা অনেক হয়েছে আর না আর আমারা কি এতপটাই গরিব যে আমাকে বিক্রি তুমি তোমার বিজনেস বাঁচাবে। শুনো বাবা আমার বিয়ে হয়ে গেছে আর কালকে আমি এটা সবার সামনে আনবো।

বলেই জিসান রাগে ইশার হাত ধরে নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে চলে যায়।

জিহান চৌধুরী দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন।

–এতো জেদ তোমার ছেলের।

–আমি বুঝতে পারছি না তুমি কেন ওর পিছনে পরে আছোয ও ইশাকে ভালোবাসে আমি ওর চোখে সেটা দেখেছি প্লিজ তুমি আর ওকে জোর করো না। এটা ওর জীবন তাই ওকে ওর বুঝতে দাও।

–ঠিক আছে আমি আর কিছু বলবো না। তোমার ছেলের যা মন চায় তাই করুক।

জিহান চৌধুরী চলে যায় নিজের ঘরে চলে যেতেই জিসা মাকে বলে।

–মা ইশা আপু কিন্তু খুব আপসেট হয়ে আছে। আচ্ছা মা ইশা আপু কি ভাইয়াকে ভালোবাসে।

–জানি না তবে ইশাও এক দিন আমার পাগল ছেলেটাকে ভালোবাসবে।

–মা তুমি তো এটাই চাইতে বলো ইশা আপু আর ভাইয়ার যেন বিয়ে হয়। ইশা আপু যেন তোমার কাছে থাকে সবসময়।

–হুম। শুধু তোর বাবার জন্য এই ইচ্ছাটা পুরণ করতে পারছিলাম না কিন্তু আমার ছেলেটা সেটা পুরণ করে দিলো।

#চলবে_____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here