ইশাকে জোর করে একটা ঘরে কতগুলো লোক এনে বন্দী করে রেখেছে। ইশা ক্রমাগত চিৎকার করে বলেই যাচ্ছে “কারা আপনারা আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন? প্লিজ আমাকে যেতে দিন আমি বাড়ি যাবো”। ইশা চিৎকার করতে করতে এক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। মেঝেতে বসে পরে হাটু ঘেড়ে কান্না করতে করতে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে, চোখ মুখ ফুলে গেছে।
প্রায় আধঘন্টা পরে দরজা দরজা খোলার শব্দ শুনতে পেয়ে ইশা চোখ তুলে মানুষটিকে দেখতে পেয়ে ইশার উচোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ইশা দৌঁড়ে গিয়ে সামনে থাকা মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে ফুফিয়ে কান্না করতে থাকে আর বলে।
–জিসান ভাইয়া তুমি এসেছো দেখনো ভাইয়া ওরা আমাকে এখানে রেখে চলে গেছে। প্লিজ তুমি আমাকে বাড়িতে নিয়ে চলো আমার এখানে খুব ভয় করছে।
জিসান ইশাকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে আলতো হাতে ইশার চোখের পানি মুজে দিয়ে বলে।
–তোরর কোনো চিন্তা নেই আমি থাকতে তোর কেউ কোনো ক্ষতি করতে পারবে না এমন কি একটা ফুলের টুকাও দিতে পারবে না। আগে তুই এখানে একটু বস শান্ত হয়ে।
ইশা অস্থির কন্ঠে বলে
–না না ভাইয়া আমি এখানে আর থাকবো ওরা আবার চলে আসবে।
–আসবে না তুই এখানে একটু শান্ত হয়ে বস।
ইশা জিসানের কথামতো চুপচাপ সোফাতে বসে পড়ে। জিসান ইশার সামনে এক গ্লাস পানি ধরে বলে।
–নে পানিটা খেয়ে নে তাহলে ভালো লাগবে তোর।
ইশা এক দমে পুরা গ্লাসের পানিটা শেষ করে বলে।
–জিসান ভাইয়া এখন তো চলো এখান থেকে।
জিসান কোমল স্বরে বলে।
–ইশু তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে খুব জরুরি।
–আমি তোমার সব কথা শুনবো আগে এখান থেকে চলো। না হলে ওই গুন্ডা গুলো এখানে আবার চলে আসবে।
ইশা বসা থেকে উঠে চলে যাওয়ার জন্য দরজা কাছে যেতেই জিসানের কন্ঠস্বর শুনে থমকে যায়। জিসানের কথাটা কর্ণগোছর হতেই মনে হচ্ছে যেন ইশার পায়ের নিচ থেকে শক্ত মাটিটা সরে গেছে। ইশা ভাবতেই পারে নি এমন একটা কাজ করবে জিসান।
–এখানে তোকে কোনো গু’ন্ডা’রা তুলে আনে নি ইশু আমি তোকে এখানে তুলে এনেছি।
ইশা জিসানের দিকে ফিরে তাকায় অবাক দৃষ্টিতে। ইশার এমন অবাক দৃষ্টি দেখে বলে।
–অবাক হচ্ছি তাই তো! কিন্তু এ ছাড়া আমার যে আর কোনো পথ খোলা ছিল না রে।
ইশা স্থির কন্ঠে বলে।
–আমাকে এখানে কেন তুলে এনেছো? সেই কারণটা কি আমি জানতে পারি।
জিসান ইশার দিকে এগিয়র এসে নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে।
–আমি তকে বিয়ে করতে চাই ইশু।
ইশা জিসানের কথা শুনে খুব একটা বড় শক খায়।
–কি বলছো কি এসব জিসান ভাইয়া? তুমি কি ভুলে গেছো আমি তোমার কে হই আমি তোমার বোন হই আর তুমি কিনা আমাকে বিয়ে করতে চাইছো।
জিসান নিজের দু হাত ইশার গালে রেখে বলে।
–হে তুই আমার বোন হোস কিন্তু খালাতো বোন। আমি তোকে ভালোবাসি ইশু, সেই ছোট বেলা থেকেই আমি তোকে ভালোবেসে এসেছি। আমি তকে হারাতে পারবো না ইশু।
জিসানের কাছ থেকে সরে দাঁড়ায় ইশা আর বলে।
–ছিহ ভাইয়া তুমি ভাবলে কি করে আমি তোমাকে বিয়ে করবো আর আমি তোমাকে ছোট বেলা থেকে নিজের ভাই হিসাবে দেখে এসেছি
–কিন্তু আমি তো কোনো দিন বোনের চোখে দেখি নি। প্লিজ ইশু রাজি হয়ে যা না বিয়েতে। তোকে ছাড়া যে আমি বাচতে পারবো না।
–তুমি ম’রো বাঁচো তাতে আমার কোনো যায় আসে না আমি এখানে আর এক মুহূর্ত থাকবো না।
ইশা চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই জিসান দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
–আর এক পাও এগুবি না ইশা।
ইশা ভ’য় পেয়ে যায় জিসানের কথা শোনে।কারন জিসান সবসময় ইশাকে ইশু বলেই ডাকে আর যখন প্রচন্ড রা’গ হয় ইশার উপর তখনেই ইশাকে ইশা বলে। জিসান পুনরায় বলে উঠে।
–তুই যদি আর এক পা এগোস তাহলে….
–তাহলে কি! কি করবে তুমি?
–সেটা তুই ভালো করে জানিস ইশা আমি কি করতে পারি নিজের জিনিস পাওয়ার জন্য।
–ভাইয়া তুমি কেন আমার সাথে এমন করছো তুমি জানোতো আমি রাহুলকে ভালবাসি তারপরও…..
ইশা আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই জিসান চিৎকার করে বলে।
–চুপ একদম চুপ ওই কু*র বাচ্চা রাহুলের নাম তুই মুখে আনবি না বলে দিলাম। যদি ওর নাম তর মুখে শুনি তো তপকে খুন করে ফেলবো আমি বলে দিলাম।
ইশার আত্মা কেঁ’পে ওঠে জিসানের এমন কথা শুনে। ভয়ে ভয়ে জিসানের দিকে তাকিয়ে দেখে জিসানের চোখ গুলো লাল হয়ে রক্তবর্ণ ধারন করেছে কিন্তু তার পরও ইশা নিজেকে সামলিয়ে কা’পা কা’পা কন্ঠে বলে।
–ভাইয়া প্লিজ তুমি আমার সাথে এমন করো না।
–ঠিক আছে এমন করবো না তাহলে আমাকে বিয়ে করে নে এতে তোরও ভালো আমারও ভালো।
ইশা চিৎকার করে বলে।
–না আমি এই বিয়ে করবো না।
–ঠিক আছে! তর মনে হয় আমার সাথে বিয়ে করার আগেই বাসর করতে ইচ্ছা করছে তাই তো। ঠিক আছে এই ইচ্ছাটাও আমি তোর পূরন করবো। আজ পর্যন্ত তোর কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ রাখি নি আমি। তো এটা কি করে অপূর্ণ রাখি বল।
জিসান ইশার দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে আসচ্ছে। ইশা জিসানের এগুনো দেখে পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সাথে আটকে গিয়ে ভয়ে ভয়ে বলে।
–ভাইয়া প্লিজ আমার সাথে এমন কিছু করো না।
–ওকে জান কিছু করবো না তাহলে বিয়েতে রাজি হয়ে যা।
–না আমি বিয়ে করবো না তোমাকে আর কত বার বলবো।
–ঠিক আছে তাহলে আমিও আমার কাজ শুরু করি।
জিসান ইশার গলা থেকে ওরনাটা সারাতে যাবে তখনেই ইশা চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে বলে।
–ঠিক আছে আমি বিয়েতে রাজি
জিসান বাঁকা হেসে বলে।
–গুড।
_____
পার্লার থেকে মেয়েরা এসেছে ইশাকে সাজাতে। জিসান আগে থেকেই সব ঠিক করে রেখেছে। ইশাকে কান্না করতে দেখে পার্লারের একজ বলে।
–ম্যাডাম প্লিজ কান্না করবেন না সব মেকআপ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ইশাকে পার্লারের মেয়েরা খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়। লাল বেনারসি, খোপায় বেলি ফুলের মালা, হাতে চুড়ি চোখের কাজল কিছুটা লেপ্টে গেছে কান্না করার জন্য।
জিসান ইশার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। তার সকল স্বপ্ন আজ পূরণ হতে যাচ্ছে। কিন্তু এভাবে এমন একটা বাজে পরিস্থিতির মাঝে যে পূরণ হবে তা কোনো দিন ভাবতেই পারে নি। জিসান এক প্রকার বাধ্য হয়েই এই পদক্ষেপটা নিয়েছে। জিসান তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে হাত বাড়িয়ে ইশার চোখের পানি মুজে দেয় আর ইশার মাথায় কাপড় দিয়ে বলে।
–এখন ঠিক আছে আর তোর চোখে যেন আমি বিয়ের সময় পানি না দেখি।
ইশা ঝপসা চোখে জিসানের দিকে তাকায়। আজকের এই জিসান তার কাছে খুবেই অচেনা লাগছে। তার আগের জিসান ভাই ভালো ছিলো এখনের জিসান খুব খারাপ খুন। কেন এভাবে সব বদলে গেলো কেন?
জিসান ইশার দিকে এক পলক তাকিয়ে উঠে ঘরের বাইরে চলে যায় আর কাজী ডেকে আনে।
জিসান আর ইশার বিয়ে সম্পন্ন হয়। ইশা অনেক কষ্টে বিয়ের সময় কান্না আটকিয়ে রেখেছে। ইশা তো কান্না করতে করতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। জিসান ইশার কান্না করা দেখে জোরে একটা ধমক দেয়।
–ইশা চুপ একদম চুপ আর এক বার যদি তোর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই তো তোর খবর আছে বলে দিলাম।
ইশা মনে মনে বলে।
–হুম সব কিছু কি নিজের ইচ্ছা মতো হবে নাকি একটু কি নিজের মতো করে কান্নাও কি করতে পারবো না।
ইশা অনেক কষ্ট করে নিজের কান্না টা আটকে রাখে কিন্তু কান্না আটকে রাখার কারণে হেচকি উঠে যায়। ইশার হেচকির শব্দ শুনে জিসান ইশাকে পানি খেতে বলে।
এবার পরিচয়টা দেই নাবিলা ইসলাম ইশা আর্নাস ১ম বর্ষে পড়ে। বাবা মার এক মাএ সন্তান। কিন্তু ইশার বাবা মা নেই যখন ইশা ক্লাস সেভেনে পড়তো তখন ইশার বাবা মা মারা যায় এক্সিডেন্টে। তখন থেকেই ইশা জিসানদের বাড়িতে থাকে। জিসানের মাকে ইশা মা মনি বলে ডাকে আর জিসানের বাবাকে বাবাই বলে ডাকে।
জিসান চৌধুরী বাবা মার এক মাএ ছেলে তবে ছোট একটা বোন আছে ইন্টারে পড়ে। খুব জেদি এক রোগা আর ভীষন রাগী জিসান । যেটা তার চাই সেটা যেকোনো মূল্যে আদায় করে নেয়। জিসান একজন নাম করা বিজনেসম্যান আবারও একজন মাফিয়া।
ইশার পানি খাওয়া শেষ হতেই জিসান বলে।
–আর এক বার যদি তোর কান্না করার আওয়াজ শুনতে পাই তাহলে তোর খবর আছে বলে দিলাম। আর এত কাঁদার কি আছে তোকে তো আর কেউ মে’রে নদীতে ভাসিয়ে দিচ্ছে না। শুধু বিয়েই তো হয়েছে তোর এতে এতো ম’রা কান্না করার কি আছে আমি মরলেও হয়তো তুই এভাবে কাঁদবিনা।
#তুই_শুধু_আমার💕
#Writer_Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_1