#তুই_শুধু_আমার 💕
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_11
ইশা শাওয়ারের নিচে বসে আছে প্রায় এক ঘন্টা ধরে আর কান্না করছে অতিরিক্ত ঠান্ডাতে ঠোঁট গুলো কাপছে। সারা শরীর কেপে উঠছে শীতে তারপরও ইশা শাওয়ারের নিচে বসে আছে। নিজেকে নিজেই শাস্তি দিছে এত বড় অপরাধ করার জন্য। কিন্তু ইশার কাছে এই শাস্তিটা যে তুচ্ছ জিসানের অবহেলার কাছে ইশা চোখ বন্ধ করতেল ভেসে ওঠে কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা।
জিসান আর ইশা বাড়ি ফিরতেই জিসান নিজের ঘরে চলে যায় কারো সাথে কোনো কথা না বলেই। সালিহা বেগম বলেনে।
–ইশা মা তুই ঠিক আছিস তো?
–হুম মামনি আমি ঠিক আছি।
–কেন তুই বাড়ি থেকে বের হলি বল তো জিসান না করার সত্বেও।
–আমার ভুল হয়ে গেছে মামনি বড্ড বড় ভুল হয়ে গেছে। আমাকে ক্ষমা করে দাও।
–তুই বুঝতে পারছিস আজকে যদি জিসান ঠিক সময় মতো না যেতো ওখানে তো কি হতো। আর ক্ষমা আমার কাছে চেয়ে কি হবে জিসানের কাছে গিয়ে ক্ষমা চা।
জিসা বলে।
–ইশা আপু তুমি এটা একদম ঠিক করো নি। ভাইয়া তোমাকে এত ভালোবাসে আর তার বদলে তুমি ভাইয়াকে এভাবে ইগনোর করছো ছিহ আমার ভাবতেও খারাপ লাগে তোমার মতো একটা মেয়েকে আমার ভাইয়া এতটা ভালোবাসে।
জিসা এই কথাটা বলেই চলে যায় এখান থেকে। জিসার এই কথাটা শুনে ইশার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। ইশা মনে মনে ভাবে সত্যি তো যে মানুষটা তাকে এত ভালোবাসে তাকেই সে এভাবে ইগনোর করে মসেছে। ঠিক এখন যেভাবে ওকে জিসানকে ইগনোর করছে।
–ভাইয়ার কি এতটাই কষ্ট হতো আমি যখন ইগনোর করতাম।
সালিহা বেগম ইশার কাধে হাত রাখে। ইশা অসহায় দৃষ্টিতে মা মনির দিকে তাকিয়ে
–মা মনি।
–তুই ওর কথায় কিছু মনে করিস না আসলে ভাইকে খুব বেশি ভালোবেসে তো তাই ভাইয়ের কষ্টটা সহ্য করতে পারছে না। আর ইশা মা তোকে একটা কথা বলি পারলে আমার ছেলেটাকে একটু ভালোবাসিস ও যে তর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কঙ্গালের মতো বসে আছে। আমার কথা গুলো একটু ভেবে দেখিস মা এখন যা ফ্রেশ হয়ে ডিনার করতে নিচে আয়।
ইশা ঘরে ডুকে দেখে জিসান চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে মাথায় হাত ধরে আছে। দরজার শব্দ শুনে জিসান তাকিয়ে দেখে ইশা দরজার পাশে দাড়িয়ে আছে। জিসান ইশার দিকে এক নজর তাকিয়ে নিজের চোখ সরিয়ে নিয়ে মনে মনে বলে।
–কি অবস্থা করেছে চোখ মুখের কান্না করে আর চুল গুলো উস্কোখুস্কো হয়ে আছে। কেন তুই এমন করেছিস ইশু? প্লিজ নিজের দিকে খেয়াল রাখ আমার যে তোকে এমন ভাবে দেখতে ভালো লাগে না কেন বুঝিস না তুই আমার মনের কথা।
ইশা জিসানের কাছে আসার জন্য পা বাড়াতেই জিসান উঠে দাঁড়ায়। ইশা ভেবেছিল জিসান হয়তো ইশার সাথে কথা বলবে কিন্তু জিসান কথা না বলে ঘর থেকে বের হতে চাইলে ইশা জিসানকে ডাক দেয়.।
–ভাইয়া প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি আর কোনো দিন তোমার কোনো কথা অমান্য করবো না। প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমাকে এবারের মতো।
জিসান মনে মনে আওড়ায়।
–সেই একেই ডাক কোনো দিন কি তুই আমায় ভালোবাসতে পারবি না ইশা। কোনো দিন কি আমার ভালোবাসা বুঝবি না এতো অবুঝ কেন তুই?
জিসান মনে মনে এসব ভেবে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে।
–তুই ফ্রেশ হয়ে নে ইশা তরো উপর অনেক দখল গেছে। ফ্রেশ হয়ে ডিনার করে নে।
জিসান এই কথাটা বলেই ঘর থেকে বের হয়ে যায়। ইশা জিসানের যাওয়ার দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে। ইশার ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কান্না করতে। তাই কোনো উপায় না পেয়ে শাওয়ারের নিচে বসে কান্না করছে যাতে কেউ সেই কান্নার আওয়াজ শুনতে না পায়। ইশা মাথাটা দেয়ালের সাথে মাথাটা হেলিয়ে দিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলে।
–এত অবহেলা কেন করছো তুমি ভাইয়া আমাকে কেন? আমি যে তোমার এই অবহেলাটা একদম সহ্য করতে পারছি না একদম না। আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে খুব।
নিচে সালিহা বেগম সবার জন্য ডিনার রেডি করে বলে।
–আসমা তুই ইশাকে গিয়ে ডেকে নিয়ে আয় আর সাথে জিসানকেও।
–আচ্ছা….
আসমা জিসানের ঘরের দরজাতে নক করে কিন্তু কারো কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে আসমা ঘরের ভিতরে ডুকে শাওয়ারের শব্দ শুনতে পেয়ে বলে।
–এত রাতে গোসল করতাছে কেডা আবার ভাইজান নাকি ইশা আপা ডাক দিয়া দেখি। ইশা আপা তুমি কি শাওয়ার নিতাছো।
ইশার ধ্যান ভাঙ্গে আসমার কথাতে ভাঙ্গা গলায় বলে।
–কি হয়েছে?
–ইশা আপা আম্মা কইছে তাড়াতাড়ি নিচে যাইতা খাওয়ার জন্য।
–তুমি যাও আমি আসছি।
–আইচ্ছা আর বেশিক্ষন পানিতে ভিইজো না তাহলে ঠান্ডা লাগবো।
–তুমি যাও আসমা আপা আমি আসছি।
আসমা যাওয়ার আধ ঘন্টা হয়ে গেল কিন্তু ইশা বা জিসান কেউ নিচে নামে নি তা দেখে সালিহা বেগম বলে।
–আসমা তুই কি ইশা আর জিসানকে নিচে আসার জন্য বলিস নি।
–কইছি তো গিয়ে দেখি ইশা আপা গোসল করতাছে এতক্ষনে তো গোসল শেষ হওয়ার কথা।
–আচ্ছা তুই গিয়ে দেখ ইশা কেন নিচে আসতাছে না?
আসমা জিসানের ঘরে ডুকে দেখে ওয়াশরুম থেকে এখনও পানি পড়ার শব্দ আসছে। আসমা ইশাকে অনেক ডাকে কিন্তু ইশার কোনো সাড়া না পেয়ে তাড়াতাড়ি করে নিচে চলে গিয়ে বলে।
–আম্মা ইশা আপা এখনও ওয়াশরুমে আছে মনে হয়। আমি অনেক ডাকেছি কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ দেয় নি। আমার খুব ভয় লাগতাছে।
সালিহা বেগম মৃদু চিৎকার করে বলে।
–কি বলছি কি তুই কতক্ষন ধরে ও শাওয়ার নিতাছে মানে।
–আমি জানি না।
–জিসান কোথায়?
–ভাই জান তো ঘরে নাই।
–জিসান ঘরে নাই কি বলছি কি তুই? তাড়াতাড়ি চল আগে ইশাকে ওয়াশরুম থেকে বের করতে হবে।
সালিহা বেগম আর জিসা তাড়াতাড়ি করে জিসানের ঘরে যায়। ইশাকে অনেক ক্ষন ধরে ডেকেই যাচ্ছে কিন্তু ইশার কোনো সাড়া শব্দ নেই। সবার চেঁচামেচির শব্দ শুনে জিসান তাড়াতাড়ি করে গেস্ট রুম থেকে নিজের ঘরে এসে দেখে ইশাকে ডাকছে।
–কি হয়েছে মা? এভাবে চিৎকার করছো কেন?
–জিসান তুই কোথায় ছিলি? ইশা ওয়াশরুমে কখন শাওয়ার নিতে ডুকেছে আর এখন ওর কোনো সাড়া শব্দ পাচ্ছি না।
–কি বলছো কি তুমি মা? সরো তোমারা আমি ডাকছি। ইশা ইশা এই ইশা দরজা খুল দেখ সবাই চিন্তা করছে তাড়াতাড়ি দরজাটা খুল প্লিজ।
ইশার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে জিসান ওয়াশরুমের দরজাটা ভেঙ্গে যা দেখে তাতে জিসানের বুকটা ধ্বক করর ওঠে।
–ইশা…..
জিসান তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমে ডুকে শাওয়ারটা বন্ধ করে ইশাকে তাড়াতাড়ি করে কোলে তুলে নেয় আর বিছানাতে শুয়েই দেয়। ইশা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে অতিরিক্ত চিন্তা আর বেশিক্ষন ভিজার কারণে।
–মা তাড়াতাড়ি করে ওর ভেজা ড্রেসটা চেইন্জ করো আমি ডক্টরকে কল করছি।
কিছুক্ষণ পরেই। ডক্টর এসে ইশাকে চেকাপ করে।
–হঠাৎ কি এমন হলো যে এভাবে ইশা ভিজেছে?
–আমরা জানি না।
ডক্টর বলে।
–আমি ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি আর একটা স্যালাইন দিয়েছে। রাতে হয়তো ইশার জ্বর বাড়তেও পারে আবার নাও বাড়াতে পারে। তাই সবসময় ওর পাশে থাকবেন।
–ঠিক আছে।
ডক্টর চলে যেতেই ঘর থেকে এক এক করে সবাই চলে যায়। জিসান দুরে দাঁড়িয়ে ইশাকে দেখছে লেপ দিয়ে ইশার সারা শরীর ডেকে রেখেছে। পানিতে বেশিক্ষন থাকার কারনে ঠোঁট গুলো ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। জিসান দুর্বল কন্ঠে বলে।
–কি চাইছিস তুই ইশা? কেন তুই নিজেকে কষ্ট দিছিস কেন তোর সেই অধিকারটা নেই নিজেকে কষ্ট দেওয়ার। খুব ভালো লাগে না তোর আমাকে কষ্ট দিতে ঠিক আছে তাই হবে আমি তোকে আমার জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে দিবো। তুই তো এটাই চাস আমার জীবন থেকে চলে যেতে তাই হবে আমি তকে মুক্তি দিয়ে দিবো।
#চলবে