#তুই_শুধু_আমার 💕
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_12
রাত দুটো বাজে তখন জিসান বেলকনিতে বসে একের পর এক সিগারেট খাচ্ছে আর আকাশের দিকে নিকোটিনের ধোয়া ছেড়ে দিচ্ছে । জিসানের বুকটা জ্বলে যাচ্ছে তারপরেও সিগারেট খেয়েই যাচ্ছে আর চোখ বন্ধ করলেই ইশার নিষ্পাপ চেহারাটা ভেসে ওঠে। হঠাৎ করেই জিসান শুনতে পায় কারো কুঁকড়ে ওঠার শব্দ। জিসান ঘরে ভিতরে তাকিয়ে দেখে ইশা ঠান্ডাতে কাপছে। জিসান আর এক মুর্হূত না বসে ইশার কাছে যায়। জিসান ইশার কপালে হাত রেখে দেখে ইশার গা একেবারে ঠান্ডা বরফ হয়ে গেছে। ঠান্ডায় ইশার ঠোঁট জোড়া কাপছে। জিসান তাড়াতাড়ি করে এসির পাওয়ার অফ করে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে আলমারি থেকে লেপ এনে ইশার গায়ে রাখে কিন্তু ইশার গা এখনও ঠান্ডাই রয়েই গেছে। জিসান ইশার হাত পা তেল দিয়ে মালিশ করে দেয়। কিন্তু তারপরও ইশার গা গরম হচ্ছে না। জিসানের মাথা কাজ করছে না কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না এতো রাতে। জিসান আর উপায় না পেয়ে নিজের শার্টের বোতাম খুলে লেপের নিচে ডুকে ইশাকে নিজের কাছে টেনে নেয়। জিসানের গায়ের উষ্ণতা পেয়ে ইশা কিছুটা স্বাভাবিক হয়। ইশার কাঁপুনিটা কিছুটা কমে। জিসানের অনেক কষ্ট হয় এই গরমের দিনে লেপের নিচে থাকতে। জিসানের সারা শরীর ঘেমে যাচ্ছে গরমে। তারপরও জিসান নিজের কষ্ট সহ্য করে ইশাকে জড়িয়ে ধরে রাখে। ইশার কপালে জিসান একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়। ইশাও ঘুমের মাঝে জিসানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমের ঘোরে। জিসান মনে মনে বলে।
–তোর কিছু হবে না আমি যত দিন পর্যন্ত আছি আমি কিছু হতে দিবো না তোর কিছু না।
জিসানও নিজের চোখ বন্ধ করে ঘুমের দেশে পাড়ি দেয়।
_____
সকালে ইশা বুঝতে পারে তাকে কেউ শক্ত করে ছড়িয়ে ধরে আছে। ইশা চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে জিসানের উনমুক্ত বুকে ইশা একে বারে লেপ্টে আছে। ইশা জিসানের দিকে তাকিয়ে দেখে জিসান খুব শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। ইশার খুব ইচ্ছে করছে জিসানের গাল ছোঁয়ে দিতে। ইশা আস্তে আস্তে করে জিসানের গালে হাত রেখে মন মনে বলে।
–ঘুমিয়ে থাকলে তোমাকে কত কিউট লাগে তুমি জানো। কিন্তু যখন জেগে থাকো তখন একে বারে একটা হিটলারের মতো লাগে।
ইশা জিসানের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। জিসান হঠাৎ করেই জেগে যায় চোখ মেলে তাকিয়ে ইশাকে মুচকি মুচকি হাসতে দেখে বলে।
–কি হলো এভাবে হাসছিস কেন?
ইশা ইতস্তত হয়ে বলে।
–না এমনি।
জিসান খেয়াল করলো যে ও খালি গায়ে। তাই জিসান তাড়াতাড়ি ইশাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে নিজের শার্টটা পড়ে নেয়। ইশাও উঠে বসে। জিসান শার্ট গায়ে দিয়ে বলে।
–এখন কেমন লাগছে তোর?
ইশা অবাক হয়ে বলে।
–কেমন লাগছে মানে আমার কি কিছু হয়েছিল নাকি?
–তোর কি কিছুই মনে নেই।
–না! হে তবে শাওয়ার নিতে ছিলাম আমি। এরপরে কি হয়েছে ছিল আমার কিছু মনে নেই।
–খুব ভালো। দেখি এদিকে আয় তোর জ্বর আছে কি না এখন।
জিসান ইশার কপালে হাত ধরে দেখে ইশার গা এখন স্বাভাবিক আছে আর ইশা জিসানের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে।
–আমি জানি ভাইয়া তুমি আমাকে এখনও আগের মতোই ভালোবাসা। কিন্তু এখন আভিমান করে আছো আমার উপর কোনো ব্যাপার না তোমার আভিমান ভাঙ্গা আমার বা হাতের কাজ। আর আমার সব কিছু একটু একটু মনে আছে কালকে রাতে কি হয়েছিল।
–কি হলো কি এভাবে তাকিয়ে আছিস কোন?
–হুম কিছু বললে?
–নাহ….. আমি কেন তোকে কিছু বলবো?
বলেই জিসান ফ্রেস হতে চলে যায় ওয়াশরুমে আর এদিকে ইশা গালে হাত দিয়ে বিছানাতে বসে ভাবছে কি করে জিসানের অভিমান ভাঙ্গা যায়। জিসান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে ইশা এখনও একই জায়গাতে ধ্যান মেরে বসে আছে।
–ইশুর কি হয়েছে? সকাল থেকে কেমন জানি বিহেভ করছে।
জিসান কথা গুলা মনে মনে ভেবে ইশাকে বলে।
–ইশা তুই এভাবে বসে আছিস কেন? যা ফ্রেস হ গিয়ে রাতে যা করেছিস তুই সারা জীবন মনে থাকবে।
–হুম এতো আভিমান আমার উপরে যে ইশু না ডেকে ইশা ডাকছে। ঠিক আছে আমার নামও ইশা তোমার আভিমান আমি ভেঙ্গেই ছাড়বো মিস্টার জিসান চৌধুরী।
মনে মনে ভাবচ্ছে ইশা।
–কি হলো এভাবে বসে আছিস কে? যা ফ্রেস হ গিয়ে।
–হুম যাচ্ছি।
ইশা খাট থেকে নামার সাথে সাথে মাথা ঘুরে যায় ধপ করে বিছানাতে বসে পড়ে।
জিসান দ্রুত পায়ে ইশার কাছে এসে হাত বাড়িয়ে বলে।
–কি হয়েছে? খারাপ লাগছে নাকি আমার হাতটা ধর আমি তোকে ওয়াশরুম পর্যন্ত দিয়ে আসি।
–না ভাইয়া আমি ঠিক আছি আমি একাই যেতে পারবো।
জিসান এই কথাটা শুনে নিজের হাতটা সরিয়ে নেয়। মুখটা কালো হয়ে যায় জিসানের। ইশা আস্তে আস্তে করে ওয়াশরুমে চলে যায়। ইশার মুখে এই ভাইয়া ডাকটা জিসানের কানে জলন্ত শিখার মতো লাগে। জিসান চোয়াল শক্ত করে বলে।
–আমার হাতটাও তুই আজকে ধরতে চাইলি না ইশু আমি কি এতটাই খারাপ।
জিসান তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে কিছু না খেয়েই অফিসে চলে যায়…. ইশা ফ্রেস হয়ে এসে দেখে জিসান রুমে নেই ইশা ভাবে জিসান হয়তো নিচে আছে কিন্তু নিচে জিসান নেই…
–ইশা তুই ঠিক আছিস এখন।
–হে মা মনি ঠিক আছি আমি।
তীর চারপাশটাও নজর বুলিয়ে বলে।
–মা মনি ভাইয়া কোথায়?
–জিসানের কথা বলচ্ছিস। ও তো অফিসে চলে গেছে নাস্তা না করেই।
ইশা কথাটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে যায় মনে মনে বলে।
–আমার উপর অভিমান করেছে ভালো কথা কিন্তু না খেয়েই চলে যাবে এটা কেমন কথা।
–কি রে তুইও কি না খাওয়ার কথা ভাবছিস এক দম এমনটা ভাবিস না চুপচাপ খেতে আয়। কালকে যা করলি তুই তাতে সবার উপর দিয়ে যা গেছে বিশেষ করে জিসানের উপরে।
–মামনি তোমাকে কিছু বলতে চাই আমি।
–কি কথা বলনা?
–আসলে মামনি আমি বলতে চাইছিলাম যে।
–আরে বলনা কি বলবি
ইশা যা বলে তাতে সালিহা বেগম আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে আবার খুব খুশিও….
–ইশা তুই ভেবে বলছিস তো!
–হে মা মনি আমি যা বলছি সব ভেবেই বলছি তুমি জাস্ট সব কিছুর ব্যবস্থা করো আর ভাইয়াকে কিছু বলতে হবে না এই বিষয়ে।
–ঠিক আছে…
–এবার দেখবো কি করে আমার সাথে তুমি আভিমান করে থাকো। তুমি তো এটাই চাইছিলে তাই না তাই হবে।
মনে মনে এসব বলে মুচকি হাসে।
সারা দিন পার হয়ে যায় জিসান বাড়িতে আসেনি কিন্তু জিসান ঠিকেই ইশার খবর নিয়েছে মাঝে এক দুই বার।
সন্ধ্যায় সালিহা বেগম জিসানকে ফোন করে।
–হে মা বলো!
সালিহা বেগম উত্তেজিত হয়ে বলেন।
–জিসান বাবা তুই কোথায়?
–কেন? কি হয়েছে মা?
–জিসান বাবা তুই তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয় না হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
–কি হয়েছে মা? আমাকে খুলে বলো তোমারা সবাই ঠিক আছো তো।
–প্লিজ জিসান তুই বাড়িতে আয় আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
–মা কি হয়েছে? বলবে তো ধ্যাত ফোনটা কেটে গেলো।
–ভাইয়া কি হয়েছে?
–বাড়িতে কিছু একটা হয়েছে সাঈদ। আমাকে বাড়িতে যেতে হবে এক্ষুনি।
–ঠিক আছে চলো আমিইও তোমার সাথে যাচ্ছি।
–হুম চল।
জিসান আর সাঈদ তাড়াতাড়ি করে অফিস থেকে বের হয়ে যায়। জিসান তাড়াতাড়ি করে গাড়ি ড্রাইভ করছে। বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামে। গাড়ি থেকে জিসান আর সাঈদ বের হয়ে যা দেখে তাতে জিসান আর সাঈদ ভীষন আবাক হয়। সাঈদ অবাক কন্ঠে বলে।
–ভাইয়া এসব কি?
–আমি যেখানে তুইও সেখানে তাই সব কিছু বুঝতে চাইলে আগে বাড়িতে ডুকতে হবে।
–হুম চলো।
#চলবে