#তুই_শুধু_আমার 💕
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_14
জিসানের সামনে দাড়িয়ে আছে ইশা লাল টুকটুকে বেনারসি পড়ে। হাত ভর্তি লাল চুড়ি, কোমড়ে সোনার কোমড় বন্ধনী, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, চোখে গাঢ় কাজল, চুল গুলো কার্লিং করে খোপা করেছে, খোপাতে লাল গোলাপ গুজা, মুখে হালকা মেকাপ তাতেই যেন ইশার সৌর্ন্দয ফুটে ওঠেছে। জিসান ইশার দিকে থেকে চোখ সরাতেই পারছে না। মনে হচ্ছে যেন আসমান থেকে একটা পরী নেমে এসেছে। জিসানের পাশ ইশাকে এনে দাঁড় করায় জিসা। ইশা জিসানের দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। ইশার খুব লজ্জা লাগছে এমন ভাবে জিসানের তাকানো দেখে। লোকটা এভাবে দেখায় কেন ইশার বুঝি লজ্জা লাগে না। সবাই জিসান আর ইশার দিকে তাকিয়ে নানা রকমেে কথা বলছে ওদের জুটির প্রশংসা করছে। জিসানের বিশ্বাসেই হচ্ছে না তার সাথে এমন একটা ঘটনা ঘঠবে। এখনো মনে হচ্ছে এটা কোনো স্বপ্ন। জিসা জিসানের উদ্দেশ্যে বলে।
–কি ভাইয়া কেমন দিলাম সারপ্রাইজটা?
জিসান কোনো কথা বলছেনা বলবেই বা কি করে জিসান তো মারাত্মকভাবে একটা শক খেলো। জিসান কল্পনাই করতে পারছে না যে ইশা জিসানের কাছে এভাবে ধরা দিবে। জিসান ইশার কাছ থেকে একটু দুরে দাঁড়ায়। জিসানের যে অনেক আভিমান জমে আছে ইশার উপর। কিন্তু এই অভিমানটা যে কিছুক্ষন আগে ইশাকে এমন ভাবে দেখে গলে গেছিল। কিন্তু জিসানের ওই ঘটনাটা মনে পড়তেই ইশার কাছ থেকে দুরে সরে যায়।
ফটো তুলার জন্য ক্যামেরাম্যানরা এসেছে জিসান আর ইশার কাছে। জিসানকে দুরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একজন ক্যামেরাম্যান বলে।
–ভাইয়া প্লিজ আপনি একটু আপুর কাছে আসুন।
ইশা মনে মনে মুখ ফুলিয়ে বলে।
–এখনও অভিমান করে আছো ঠিক আছে দেখবো এই অভিমানটা তোমার কতক্ষন থাকে।
জিসান আর ইশার কিছু কাপল পিক তুলে। জিসা জিসানকে বলে।
–ভাইয়া তুমি একটু সোফাতে বসো।
জিসান ভ্রু কুচ করে বলে।
–কেন?
–আরে বসো তো এতো কথা না বলে ।
জিসান বোনের জোরাজুরিতে সোফাতে বসতেই জিসা বলে।
–এবার ইশা আপু তোমার কোলে বসবে আর সেই সুন্দর মুহূর্তের একটা পিক তুলা হবে। ইশা আমতা আমতা করে বলে।
–কিন্তু জিসা!
–কোনো কিন্তু না বসো তো।
জিসা জোর করেই ইশাকে জিসানের কোলে বসিয়ে দেয়। জিসা তাড়াহুড়ো করে ইশাকে জিসানের কোলে বসাতে চাইলে ইশা শাড়ির সাথে পা লেগে পড়ে যেতে নিলে জিসান ইশাকে তাড়াতাড়ি করে ধরে ফেলে। ইশার উনমুক্ত কোমড়ে জিসান তার শক্ত পোক্ত হাতে রেখে জড়িয়ে ধরে। ইশা তো চোখ ভ’য়ে বন্ধ করে আছে। ইশা আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে জিসান তাকিয়ে আছে ড্যাব ড্যাব করে অন্য দিকে এমন একটা রোমান্টিক সিন ক্যামেরায় আবদ্ধ করে ফেলে। জিসানের উত্তপ্ত নিশ্বাস ইশার মুখের উপর পড়ছে। জিসান আর ইশা একে ওপরের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। সবার চেঁচামেঁচির শব্দ শুনে জিসান আর ইশার হুস ফিরে। তাড়াতাড়ি করে দুজন ঠিক হয়ে দাঁড়ায়। ইশা লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে। জিসান রে’গে বলে।
–তোকে কে বলেছিল শাড়ির পড়ার জন্য?
ইশা ভ’য়ে ভ’য়ে বলে।
–আসলে বিয়ের দিন শাড়ি না পরলে কেমন দেখায় তাই পড়েছি।
–কেন লেহেঙ্গা পড়তে পারলি না? এখন যদি আমি না থাকতাম তো কি হতো।
ইশা মুচকি হেসে বলে।
–আমি জানি তো তুমি আমাকে বাঁচিয়ে নিবে তাই পড়েছি শাড়ি।
জিসান আর কিচ্ছু বললো না।
______
একটু পরেই জিসান আর ইশার সবার সামনে আবার নতুন করে বিয়ে পড়ানো হয়। জিসান ঠিক এটাই চাইছিল যেন সবাই জানতে পারে ইশা ওর বিবাহিত স্ত্রী ঠিক তাই হলো। কিন্তু ইশার প্রতি জিসানের এখনও সেই অভিমানটা রয়ে গেছে। জিসা হঠাৎ করেই মাইক্রোফোন নিয়ে বলা শুরু করে।
–সবাইকে জানাই শুভ সন্ধ্যা। আমার এক মাত্র ভাইয়ার বিয়েতে সবাইকে জানাই স্বাগতম। আমার ভাইয়ার জীবনে আজকে একটা বিশেষ দিন তাই এই দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য একটা বিশেষ আয়োজন করেছি আমি। সবাইকে একটা গেইম খেলতে হবে সবাইকে যে যার কাপল খুজে নিয়ে একটা পেপারের উপর নাচতে হবে আর যে এই গেইম জিততে পারবে সেই এই গেইমেরউইনার হবে। তবে মনে রাখবেন যত জন করে এই গেইম থেকে আউট হবে তত কিন্তু পেপার ছোট হবে তাই সবাই খুব সাবধানে ডান্স করবেন। অল দ্যা বেস্ট সবাইকে।
সবাই এই কথাটা শুনে চিৎকার করে ওঠে। সবাই সবার কাপল বেচে নেয়। কিন্তু এখনও জিসান আর ইশা অংশ নেয় নি। তা দেখে জিসা বলে।
–কি হলো ভাইয়া তোমারা দাঁড়িয়ে আছো কেন? তোমারদের জন্যই এই গেইমটা রাখা হয়েছে আর তোমারা এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন যাও নাচো গিয়ে।
জিসা ইশা আর জিসানকে নাচের জায়াগতে দিয়ে আসে। জিসান তাকিয়ে দেখে সবাই সবার মতো করে ডান্স করছে। জিসান সাদা পেপারের উপর দাঁড়িয়ে ইশার দিকে হাত বাঁড়ায়। ইশা জিসানের দিকে তাকাতেই জিসান ইশারা করে হাত ধরার জন্য। ইশা জিসানের হাতের উপরে হাত রাখে আর ডান্স করতে শুরু করে।
অন্য দিকে জিসা একা দাঁড়িয়ে আছে। জিসার ঘাড়ে কারো গরম নিঃশ্বাস পড়তেই ভ’য় পেয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে সাঈদ হাসিহাসি মুখ দাঁড়িয়ে আছে।
–তুমি!
সাঈদ ভ্রু নাচিয়ে বলে।
–কেন? অন্য কেউকে চাইছিলি বুঝি?
–নাহ… আসলে হঠাৎ করেই কারো নিঃশ্বাস ঘাড়ে পড়েছে তো তাই একটু ভ’য় পেয়েছি আর কি।
–আচ্ছা চুলে কি দিয়েছিস রে যে একেবারে মাতাল করা গন্ধ বের হয়।
–ওইতো শ্যাম্পু দিয়েছে।
–কি শ্যাম্পু?
–Dove শ্যাম্পু কেন?
সাঈদ গম্ভীর গলায় বলে।
–তুই এই শ্যাম্পু চেইন্জ করে ফেলবি।
–কেন এটা আমার ফেবারিট শ্যাম্পু।
–ফেবারিট শ্যাম্পু! আমার জায়গাতে যদি তোর কাছে অন্য কোনো ছেলে এসে দাঁড়ায় তো সে তোর এইচু লের গন্ধে পাগল হয়ে যাবে। তাই এই শ্যাম্পু চেইন্জ করবি যে শ্যাম্পুর ঘ্রান নেই সেই শ্যাম্পু দিবি ঠিক আছে।
জিসা ঠোঁট বাকিয়ে বলে।
— হুম।
আর মনে মনে বলে।
–সবসময় আমার উপরে খবরদারি করে শুধু। এটা দিবি না ওটা দিবি না। না জানি আমাকে বিয়ে করলে আমার সাথে কি করবে উফফ ভাবতেই ভ’য় লাগে।
সাঈদ জিসার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে।
-চল ডান্স করি।
–নাহ।
–কেন?
–আমিই তো এই গেইমটা রেখেছি তাই আমি ডান্স করতে পারবো না।
–বুঝেছি তো তুই কেন এটা করেছিস যাতে আমি তোর সাথে নাচতে না পারি। ওকে ঠিক আছে এই নাচটা ভবিষতে জন্য তুলা রাখলাম।
___
একে একে সবাই ডান্সের মাঝে ভুল করে আর আস্তে আস্তে করে পেপার ছোট হতে থাকে।
ইশা জিসানের পায়ের উপর নিজের দু পা রাখে। জিসান ইশার কোমড় ধরে নিজের আরোও কাছে টেনে নেয়। জিসান আর ইশার মাঝে এক ইঞ্চিও জায়গা নেই। জিসান ইশাকে শক্ত করে ধরে রাখে যাতে ইশা ব্যালেন্স না হারিয়ে ফেলে। ইশাও জিসানের ঘাড় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।
আবার পেপার ছোট করে দেওয়া হয় এখন শুধু ডান্স ফ্লোরে জিসান ইশা আর অন্য একটা কাপল আছে।
এবার জিসান ইশাকে কোলে তুলে নেয়। জিসান ইশাকে হুট করে কোলে নেওয়াতে কিছুটা ঘাবড়ে যায়। ইশা জিসানের গলা জড়িয়ে ধরে আছে। অন্য দিকে ওই কাপলরা হোচট খেয়ে যায় নাচতে গিয়ে। জিসান আর ইশা গানের তালে তালে নাচতে থাকে তাদের কোনো খেয়ালেই নেই যে ডান্স ফ্লোরে শুধু ওরা দুজন আছে। খেয়াল থাকবে কি করে ওরা তো একে ওপরের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই হাত তালির আওয়াজে জিসান আর ইশার ধ্যান ভাঙ্গে জিসান ইশাকে তাড়াতাড়ি করে কোল থেকে নামিয়ে দেয়। ইশার ভীষন লজ্জা লাগছে লজ্জায় তাকাতে পারছে না।
আর এদিকে রুহি নিজের ফোনে এসব দেখে খাবার টেবিলের সব জিনিস নিচে ফেলে দিয়ে বাজখাই কন্ঠে বলে।
–এটা তুই ঠিক করলি না ইশা তোকে আমি বলেছি আমার জিসানের কাছ থেকে দুরে থাকার জন্য কিন্তু তুই আমার কথা শুনলি না ঠিক আছে। তার জন্য মাশুল তোকে দিতে হবে ইশা দিতেই হবে। এত থ্রেট দেওয়ার পরেও তুই জিসানকে নিজের করে নিয়েছিস। কিন্তু না তোর কাছ থেকে আমি যে করেই হোক জিসানকে আমার কাছে আনবো যে করেই হোক।
কি ভাবছেন হয়তো এটাই ভাবছেন রুহি ইশাকে কখন থ্রেট দিলো তাহলে চলুন সকালের ঘটনা থেকে একটু ঘুড়ে আসি।
ইশা সকালে নাস্তা শেষ করে নিজের ঘরে বসে আছে আর ভাবছে জিসানের অভিমান কি করে ভাঙ্গা যায়। হঠাৎ করেই ইশার ফোনটা বেজে ওঠে। ইশা ভেবেছিল জিসান হয়তো কল দিয়েছে কিন্তু জিসানের নাম্বার না একটা আউট নাম্বার থেকে কল এসেছে ইশা কলটা রিসিভ করে।
–হ্যালো কে বলছেন…
–বাহ এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেছিস আমাকে এটা কিন্তু আমি মানতে পারলাম না।
–রুহি আপু তুমি
–তাহলে চিনতে পারলি তুই আমাকে।
–কেমন আছো তুমি?
–কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিছিস নাকি।
–ও মা আমি নুনের ছিটা দিবো কেন?
–চুপ একদম চুপ! তুই কি ভেবেছিস তুই আমার জিসানকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে জিতে গেছিস তাহলে তুই ভুল ভেবেছিস। তুই আমাকে চিনিস না ইশা জিসানকে আমি নিজের করেই ছাড়বোই। তার জন্য যদি তোকে এই পৃথিবী থেকে সরাতে হয় তবে তোকে আমি এই পৃথিবী থেকে সরাবো।
–কুল কুল এত হাইপার হই না আর চেষ্টা করে দেখো তুমি আমাকে পৃথিবী থেকে সরাতে পারো কি না। আর রইলো ভাইয়ার কথা আমি সারাজীবন ভাইয়ার সাথে থাকবো দেখি তুমি কি করতে পারো। ও আজকে আমাদের বিয়ে তাই আমাদের জন্য দোয়া করো। আর হে কোনো কিছু করার চেষ্টা করো না। কারন বাড়ির চারিদিকে গার্ড আছে। তাই প্লিজ সাবধানে পা ফেলো কেমন বাই ভালো থেকো।
–ইশা… ইশা…. উফফ।
রুহি রাগে নিজের ফোনটা ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে। মুহূর্তের মাঝে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় ফোনটা।
–এত বড় সাহস! ও আমাকে এত কথা বলার সাহস পায় কি করে? তোর সময় শেষ হয়ে আসছে ইশা শেষ হয়ে আসছে।
#চলবে