#তুই_শুধু_আমার 💕
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_3
ইশা বেডের এক কোণে বসে অঝোরে কান্না করছে আর জিসান সোফায় বসে নাক মুখ কুচকে ইশার এই কান্না দেখছে। জিসানের ক’ষ্ট লাগছে আবার হাসিও পাচ্ছে যে একটা মেয়ে এতো কান্না করতে পারে কি করে বাচ্চাদের মতো। যে কিনা ইচ্ছে করলেই একটা বাচ্চার মা হয়ে যেতে পারে।
চলুন এবার জেনে আসি ইশা কেন এভাবে কান্না করছে।
জিসান ইশাকে ঘরে নিয়ে এসে দরজা লাগিয়ে দেয় তা দেখে ইশা বলে।
–তুমি দরজা লাগছো কেন?
জিসান ইশার দিকে ফিরে বলে।
–বাহ তুমি করে ডাকছিস দেখা যায়। একটু আগে তো খুব আপনি আপনি করছিলি।
–তুমি দরজা খুলো আমি আমার রুমে যাবো।
ইশা চলে যেতে নিলেই জিসান ইশাকে খাটের উপর ফেলে দিয়ে নিজেও ইশার উপর উঠে ইশার মুখের কাছে নিজের মুখটা নেয়। জিসানকে এমন করতে দেখে ইশা নিজের মুখটা অন্য দিকে ফিরিয়ে নেয়। ইশা চটপট করছে দেখে ইশার দু বাহু চেপে ধরে জিসান দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
–এত নড়ছিস কেন বলতো আর আমার দিকে মুখ ফিরা। আমি দেখতে কি সুন্দর না যে মুখ ফিরেই নিলে।
–ভাইয়া প্লিজ আমার উপর থেকে উঠো।
জিসানের মেজজটা এক দম বিগড়ে যায় ইশার মুখে এই ভাইয়া ডাকটা শুনে। এই ভাইয়া ডাকটা ইশার মুখে শুনতে শুনতে কান পচে গেছে একেবারে। ইশার মুখে এই ভাইয়া ডাকটা যেন আর সহ্য হচ্ছে না। জিসান রা’গে ইশার দু হাত শক্ত করে চেপে ধরে। ইশা ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে বলে।
–ভাইয়া আমার হাতে লাগছে খুব ছাড়ো প্লিজ….
জিসান নিজের রা’গটা আর কন্ট্রোল করতে না পেরে ইশার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট দিয়ে আবদ্ধ করে ফেলে। আর কন্ট্রোল করবেই বা কি করে আগে যখন ইশা জিসানের এতোটা কাছে থাকতো তখন নিজেকে অনেক কষ্ট করে কন্ট্রোল করতো। কিন্তু এখন তো তার প্রিয়তমা তার অনেক কাছে তাই কি করে কন্ট্রোল করবে তার নিজের সত্ত্বাকে। জিসান নিজেকে পুরুষালী সত্ত্বাকে কন্ট্রোল করতে পারকেএ দিন শেষে সেও তো একজনপুরুষ।
ইশার তো চোখ গুলো একে বারে রসোগোল্লার ন্যায় বড় হয়ে গেছে হঠাৎ এমন ঘটার জন্য। অনেক চেষ্টা করেও ইশা জিসানের বাহুডোর থেকে ছুটতে পারে না। একটা ছেলের শক্তির কাছে একটা মেয়ের শক্তি নিতান্তই তুচ্ছ। ইশার চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়লো।
ইশা শান্ত হতেই জিসান নিজের হাতের বাঁধন থেকে ইশাকে মুক্ত করে ইশার উপর দিকে উঠে সোফাতে গিয়ে বসে। আর ইশা তার ননস্টপ কান্না শুরু করে দেয়। ইশা তার ঠোঁট মুজতে থাকে নিজর ওড়না দ্বারা। মনে হচ্ছে ঠোঁটের ছাল তুলেই ফেলবে। জিসান ইশার ঠোঁট মুছা দেখে আরও রে’গে যায়। আবার ইশার কাছে গিয়ে ইশার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। এবার জিসান রা’গে ইশার ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দেয়। জিসান সরে আসতেই ইশা ঠোঁট মুছতে যাবে সাথে সাথে জিসান বলে।
–আর এক বার যদি ঠোঁট মুজি তো আমি আবার কি’স করবো।
ইশা হতবাক হয়ে জিসানের দিকে তাকায়। এই জিসানকে ভাইকে খুব অচেনা লাগছে তার। যে জিসান তাকে সবসময় আগলে রাখতে তার চোখ থেকে পানি গড়তে দিতো না। আজকে সেই জিসানের জন্যই ইশার চোখে অজস্র পানি স্রোত বলছে। ইশা ঠোঁট না মুজে আবারও কান্না করতে থাকে।
এবার বর্তমানে ফিরে আসি….
জিসান ইশার কান্না প্রায় দশ মিনিট ধরে সহ্য করছে। কিন্তু এখন আর সহ্য করতে পারছে না বলে এক ধমক দেয় ইশাকে।
–তুই চুপ করবি নাকি আমি আবার কিছু একটা করবো। আচ্ছা এতো কান্না করার কি আছে আমি বুঝতে পারছি না। তোর চোখের পানিতে তো আমার ঘর ভসিয়ে ফেলবি। তোর স্বামীই তো তোর কাছে গেছে এমন না যে আমি পর পুরুষ। তোর উপর আমার সর্ম্পূন অধিকার আছে কথাটা মনে রাখিস। আর আমি এমন কিছু করতে চাই নি তোর এই ভাইয়া ডাকটা শুনে আমার মাথায় রক্ত উঠে গেছে। এত দিন এই সো কল্ড ভাইয়া ডাকটা খুব কষ্টে সহ্য করেছি। তাই এখন থেকে যদি ভাইয়া ডাকটা তর মুখে শুনি তো খবর আছে বলে দিলাম।
–কথায় কথায় শুধু খবর আছে খবর আছে। আমার কি খবর করবি তুই আমার বি-টিভির নাকি সময় টিভির বেটা খাটাশ লুচ্চাই হিটলার কোথাকার!
ইশা ভ্যাগিস মনে মনে কথা গুলো বলেছে জিসান যদি শুনতো তাহলে ইশার কপালে শনি ঝুলতো। ইশা কোনো কথা বলছে না দেখে জিসান বলে।
–কি হলো কথা বলছিস না কেন?
–হুম আর ডাকবো না ভাইয়া ( হুম ডাকবো না ভাইয়া আরও বেশি করে ডাকবো তোকে ভাইয়া। আমাকে খুব জ্বালাছিস তুই আমিও তোকে জ্বলাবো। আমি একা জ্বলবো তা কি করে হয় তোকেও আমি জ্বালাবো)
–মনে থাকে যেন….
–ঠিক আছে… ভাইয়া
–কিহ বললি?
–সরি আর বলবো না।
–এবার চুপচাপ ঘুমা…..
–এবার চুপচাপ ঘুমা অর্ডার করছে আমাকে তোর অর্ড়ারের গুষ্টির তুষ্টি গিলায় শালা খচ্চর।
ইশা মনে মনে কথা গুলা বলেই চুপচাপ শুয়ে পড়ে আর কথা না বাড়িয়ে।
জিসান বেলকনিতে চলে যায়। ডান হাতের দু আঙ্গুলের মাঝে জ্বলন্ত সিগারেট রেখে টানছে আর খোলা আকাশের দিকে সিগারেটের ধোঁয়া উঁড়িয়ে দিচ্ছে। এটাই জিসানের সাথী ছিলো যখন ইশাকে কাছে পেতে চাইতো তখনেই জিসান ইশাকে ভুলে থাকার জন্য সিগারেট খেতো কিন্তু ইশার নেশাটা যে প্রখর ছিলো। চাইলেও ইশার অস্তিত্বটাকে মুছে ফেলতে পারতো না। আজকে ইশাকে আরও বেশি করে কাছে চাইছে জিসান। কিন্তু ইশা তো জিসানকে চায় না তাই জিসান নিজেকে কট্রোল করে রাখেছে যথাসম্ভব।
ইশা মিটিমিটি চোখে তাকিয়ে দেখে জিসান ঘরের ভেতরে নেই। শুয়া থেকে উঠে বসে বেলকনির দিকে উঁকি দিয়ে দেখে জিসান সিগারেট খাচ্ছে। জিসানকে এমন অবস্থা দেখে ইশার ভ্রু-কুচকে মনে মনে ভাবে।
–ভাইয়া সিগারেট খায় কবে থেকে? যা খুশি খাক তাতে আমার ক? আমার তো শুধু এখান থেকে বের হতে হবে। এক বার শুধু একটা সুযোগ পাই তারপর আমাকে আর কোথাও খুজে পাবে না এই হিটলারটা। রাহুলের সাথে আমার যোগাযোগ করতে হবে। কিন্তু কালকে যদি সবাইকে জানিয়ে দেয় যে আমার বিয়ে হয়ে গেছে তখন। নাহ কালকে আমাকে রাহুলের কাছে চলে যেতে হবে।
ইশা এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যায়।
জিসান সিগারেট খেয়ে রুমে ডুকে দেখে ইশা ছোট বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে ঘুমাচ্ছে। জিসান ইশার কাছে গিয়ে বসে। ইশাকে যেন আজকে একটু বেশি স্নিগ্ধ লাগছে জিসানের কাছে। বেলকনির জানালা দিয়ে চাঁদের আলোতে উজ্জ্বল হয়ে আছে ইশার মায়াবী মুখখানা। জিসান ইশার মুখে পড়ে থাকা চুল গুলো সরিয়ে কপালে ভালোবাসার পরশ একে দেয়।
–ভাবতেই পারে নি তুই আমার চোখের সামনে থাকতে থাকতে এতো বড় হয়ে যাবি। যখন তোকে প্রথম দেখি তখন তুই একটা পিচ্চি মেয়ে ছিলি তখনেই তোকে দেখে একটা অদ্ভুদ ফিলিংস কাজ করেছিলো হয়তো প্রথম দেখাতেই তোকে ভালোবেসে ফেলেছি।
জিসান ইশার পাশে গিয়ে শুয়ে ইশার মাথাটা নিজের বুকে রাখে আর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে।
–জানিস তোকে না খুব ইচ্ছে করতো জড়িয়ে ধরতে কিন্তু তখন নিজেকে খুব কষ্টে কন্ট্রোল করতাম ঠিক যেমন এখন তোকে এতটাও কাছে পেয়েও আমি নিজেকে কন্ট্রোল করছি। কেন তুই আমার ভালোবাসা বুঝতে চাইছিস না কেন? একটু ভালোবাসবি আমাকে আমি যে তোর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কাঙ্গালের মতো পথ চেয়ে বসে আছি। কবে আসবে সেই দিন সেই সুন্দর মুহূর্ত।
জিসান নিজের চোখ বন্ধ করে অতিতে ডুব দেয়……
#চলবে