#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩৪
আজ শুক্রবার! ভার্সিটি ছুটি , কোন কাজ নেই বলেই বেশ বেলা করে ঘুম থেকে উঠলাম। ঘুম থেকে উঠে মিতু আপু কে দেখতে পেলাম না। মুন্নি আপু মরার মতো ঘুমাচ্ছ। তার এই ঘুম দুপুরের আগে ভাঙবেনা আমি জানি। সে অনেক রাগ জেগে বসে বসে ফোন টিপে বিধায় এতো তাড়াতাড়ি তার ঘুম ভাঙবে না। আমি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে এসে রান্না ঘরে গেলাম। দেখি আপু রান্না করছে। আমাকে দেখে বলে উঠল,
“কিরে এতোক্ষণে ঘুম ভাঙ্গল তোর।
“জানি না কি করে এতোক্ষণ ঘুমোলাম।
“তা ভালোই করেছিস, উঠেই বা কি করতি।
আমি মাথা নেড়ে আপুর দিকে তাকালাম। দেখি মুচকি মুচকি হাসছে সে। আমি বলে উঠি,
“কি ব্যাপার আপু , তোমাকে আজ বেশ খুশি খুশি লাগছে।
আমার কথায় আপু ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন। হুট করেই মনে পড়ল আপুর আজ তার প্রেমিকার সাথে ঘুরতে যাবার কথা। আমি হেসে বলে উঠি,
“ওহ্ আজ তো তোমার ডেট! তা কখন যাচ্ছো?
“দুপুরের পর যাবো।
“সেজে যাবে না।
“হুম সেজেই যাবো। তাকে বলেছি একটা সবুজ রঙের পাঞ্জাবি পড়তে আর আমি সবুজ রঙের একটা শাড়ি পড়বো।
“তা ভালো তো!
“কিন্তু?
“কিন্তুর কি হলো?
“আমি যে শাড়ি পড়তে পারি না নিহা, কি করে পরবো বল তো।
“আচ্ছা চিন্তা করো না আমি পারি পড়াতে তোমাকে পড়িয়ে দেবো।
“এই সত্যি! বাহ কত গুণ রে তোর।
“তা তোমার বোন কে কি বলবে?
“ওকে সব বলা আছে চিন্তা করিস না।
“তাহলে তো হলোই!
.
আপু শাড়ি পড়বে বলে তার বড় ব্যাগ টা থেকে প্রায় অনেক গুলোই শাড়ি বের করল। আমি অবাক হয়ে বলি,
“এতো শাড়ি কেন বের করেছ?
“আরে সবুজ রঙের শাড়ি টা খুঁজে পাচ্ছি না।
“আগে থেকে গুছিয়ে রাখবে তো!
মুন্নি আপু একবার চোখ ঘুরিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আবারো ফোনের দিকে মুখ গুজল। তার কানে হেডফোন কিন্তু আমার মনে হচ্ছে না তিনি আদৌও কিছু শুনেছেন।
আপুর শাড়ি পেয়ে গেল, আমার ও নজর গেল একটা শাড়ির প্রতি। কালো একটা একটা শাড়ি। শাড়িটা সুতির শাড়ি দেখতে বেশ ভালো। আপু আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুই চাইলে এটা পড়তে পারিস।
“আমার কাছে ব্লাউজ এসব কিছু নেই আপু।
“আমার কাছে আছে। তোর হবে মনে হচ্ছে আর একদিন’ই তো একটু পড়বি।
আমি এবারো মাথা নাড়লাম। অনেক ঝামেলা করে আপু কে শাড়ি পড়ালাম। ঝামেলাটা তার কারনেই হচ্ছিল। শুধু নড়াচড়া একটু স্থির ছিল না।
আয়নার সামনে বসে আপু একাই সাজতে লাগল। চুল গুলো খোঁপা করে তাতে নকল ফুল লাগাল। চোখে গাঢ় কাজল, ঠোঁটে গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিক আরো কিছু দিল। শেষ করল কপালে একটা সবুজ রঙের ছোট টিপ দিয়ে। বেশ লাগছে তাকে দেখতে।
আপু আমাকে বিদায় দিয়ে চলে গেল। আমি একবার ভাবলাম শাড়ি পড়বো না। বিছানায় চোখ পড়তেই দেখি মুন্নি আপু ঘুমিয়ে গেছে। অতঃপর একবার ভাবলাম পড়েই দেখি। আপু সব কিছুই রেখে গিয়েছিল।
কালো রঙের শাড়িটা পড়েই ফেললাম। খোঁপা করা চুল গুলো ছেড়ে দিলাম। আমার চুল লম্বা বটে তবে ঘন নয়। তাও যা আছে বেশ আছে। শাড়ি পরে একা একাই আয়ানায় দাঁড়িয়ে ছিলাম খানিকক্ষণ।
আয়নার দিকে তাকতেই হঠাৎ উনার কথা মনে পড়ল। আজ সারাদিনে একবার ও দেখা হয় নি উনার সাথে। আর না উনি এলেন আমার সাথে দেখা করতে। কি ভাবছি এসব। উনি আসবেন কেন আর এটা কি কোন আহামরি ব্যাপার নাকি।
শাড়ি পড়েছি, দাদি কে গিয়ে একবার দেখিয়ে আসি। অতঃপর ঘর থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলাম। হঠাৎ করেই বাইকের আওয়াজ পেলাম। মনে হলো উনি, আবার মনে হলো না এটা উনি না। উনি এখন কেন আসবেন, আর যদি আসতেন ও তাহলে আমাকে তো এই বিষয়ে কিছু বলেননি।
আমি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গেলাম। আবারো কেউ বাইকের হর্ন বাজাচ্ছে। একবার দেখলেই বা কি হবে, দেখি গিয়ে কে এসেছে। আমি সিঁড়ি কোনে দাঁড়িয়ে উপর থেকেই দেখলাম। সত্যি সত্যি উনি এসেছেন!
উনাকে দেখে নিজের মুখে আচমকা হাসি ফুটল। ছুটে নিচে নামলাম। গেটের কাছে এসে দেখি উনি নিজের হেলমেট খুলছেন। তাকে দেখেই আমি চক্ষু চড়কগাছ! শুধু আমার না উনারও! দুজনেই একসাথে বলে উঠি,
“আপনি!
“ভূতনি!
“আপনি এই রঙের পাঞ্জাবি কেন পড়েছেন।
“তুমি এই রঙের শাড়ি কেন পড়েছ! ওয়েট তুমি শাড়িই কেন পড়েছ!
“শখ হয়েছে তাই পড়েছি, কেন?
“এই রঙের কেন পড়লে।
“আগে বলুন আপনি কালো রঙের পাঞ্জাবি কেন পড়লেন। রঙ চুরি কেন করলেন?
“রঙ চুরি করতে কেন যাবো। আম্মু বলেছে আজ এই পাঞ্জাবি পড়তে তাই পড়েছি!
“আপনার মা বাবা চলে এসেছে!
“হুম সকালে এসেছে, তা এখন তুমি বলো? কেন পড়লে এই রঙের শাড়ি!
“বিয়ে লেগেছে তাই পড়েছি
“কার বিয়ে?
“আমার বিয়ে!
“দুবার বিয়ে তো ছেলেরা করে, তুমি করতে যাবো কেন?
“রঙ লেগেছে তাই।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুমি সোজা ভাবে কেন উওর দিতে পারো না বলো তো।
“আপনি সোজা ভাবে কেন জিজ্ঞেস করছেন না বলুন। চরকিড় মতো শুধু ঘুরপাক খাচ্ছেন কেন!
“আচ্ছা বাদ দাও। বাইরে যাবা।
“এখন!
“কেন বিয়ে ছেড়ে যেতে পারবা না নাকি!
“কেন যাবো আর কোথায় যাবে!
“মাটি দিতে যাবে আমাকে!
বলেই উনি বাইকে গিয়ে বসলেন। আমি উনার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে চলে এলাম। আচ্ছা এই লোকটা কি ভালো কথা বলতে পারে না। ভালো কথা কেন বলবে। ভালো জিনিস কি আর খারাপ মানুষের পেটে হজম হয়। বদ মানুষের এক শেষ।
ঘরে এসে ব্যাগ নিয়ে বের হতে যাবো, হঠাৎ মনে পড়ল মুন্নি আপু তো ঘরে। তাকে না বলে খালি ঘরে একা ফেলে চলে যাবো। এর মধ্যে তিনি আবার ঘুমাচ্ছেন। আমি তাকে ডেকে ঘুম থেকে উঠালাম। সে চোখ মেলে আমার দিকে তাকিয়ে হতচকিত বলল,
“শাড়ি পেলি কোথাও?
“আপু দিয়েছে!
“আমার ঘুম কেন ভাঙালি!
“আমি একটু বাইরে যাচ্ছি দরজা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য।
“বাইরে কোথায় যাচ্ছিস?
আমি খাবড়ে না গিয়ে বলি,
“ইতি’র সাথে যাচ্ছি। আমাকে নিতে এসেছে সে!
“আচ্ছা!
অতঃপর আমি বের হয়ে এলাম!
.
হেলমেট পড়ে বান্দা রেডি হয়ে বসে আছে। আমি সামনে আগাতেই উনি হেলমেট টা আমার দিকে দিলেন। আমি হেলমেট পড়ে উনার পিছনে চড়ে বসলাম!
উনি বাইক চালাচ্ছেন, কিন্তু আমরা যাচ্ছি কোথায় সেটাই তো জানা হলো না!
“আচ্ছা আমরা কোথাও যাচ্ছি!
“গন্তব্য ছাড়া পথ! আবার এটাও বলতে পারো সেখানে দু চোখ যায় সেখানেই যাবো।
“ঝগড়া করে এসেছেন নাকি!
“না তো, তোমার কেন এটা মনে হলো।
“ঝগড়া করলেই মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে বলে, যেখানে দু চোখ যায় সেখানে যাবো।
“তুমি কি আমাকে তোমার মতো মনে করো।
“মানে!
“কিছু না। এভাবেই বের হলাম। মন চাইলো ঘুরতে তাই।
“আর সঙ্গ হিসেবে আমাকেই পেলেন।
“সারাদিন ঝগড়া করি নি তাই ঝগড়া করতে মন চাইলো।
আমি একটু রেগেই বলি,
“তার মানে আমি আপনার ঝগড়ার পার্টনার!
উনি হেসে বলেন,
“ঠিক বলেছ! লাইফ পার্টনার হও আর না হও ঝগড়ার পার্টনার ঠিক হবে। এমন যদি হয় তোমার আর আমার ১০ বছর পর দেখা তখনও আমরা প্রথম আলাপ ঝগড়া দিয়েই শুরু করবো।
আমি উনার ঘাড় শক্ত করে ধরলাম। ইচ্ছে তো করছিল একটা চিমটি মেরে দিই। বলে কি না আমি সারাক্ষন ঝগড়া করি। উনি বলে উঠেন,
“ভূতনি আমার ঘাড় মটকানোর চেষ্টা করছো!
“হ্যাঁ করছি, পারলে সত্যি’ই মটকাতাম।
উনি হেসে দিলেন। আমি বলে উঠি,
“এতো হাসবেন না তো। এক হাতে তালি বাজে না বুঝলেন।
“বাজে যদি তার সাথে শক্ত জাতীয় কিছু জিনিস থাকে। যেমন ধরো আমার গাল!
আমি খানিকক্ষণ চুপ থেকে আস্তে করে বলি,
“আপনি কি সেদিনের চড়ের কথা বলছেন।
“আমি আজীবন মনে রাখবো বিশ্বাস করো।
উনার কথায় আমার লজ্জা মাথা কাটা যাচ্ছিল আবার হাসিও পাচ্ছিল। হঠাৎ করেই তখন বাইক থেমে গেল।আমি আশপাশ তাকিয়ে দেখি সবার গাড়ি থেমে গেছে। উনি বলে উঠেন,
“জ্যামে আটকা পড়েছি বুঝলে!
আমি উনার দিকে তাকালাম। বাইকের আয়ানায় উনি তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি ভ্রু কুঁচকে বলি,
“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
“তোমায় দেখছি।
“দেখছেন মানে।
“কিছু না।
বলেই তিনি চোখ সরিয়ে নিলেন। আমিও চোখ সরিয়ে নিলাম। অনেকক্ষণ ধরেই জ্যামে আটকা দুজন। আশপাশ অনেক গাড়ি। আজ অফ ডে! সবাই ঘুরতে বেরিয়েছে তাই এই অবস্থা! আমি পিছনে ফিরে একবার তাকালাম। একটা রিক্সায় একটা মেয়ে আর ছেলে বসে আছে। ছেলেটার মুখটাই দেখা যাচ্ছে, মেয়েটার মুখ দেখতে পারছি না। সে ছেলের ঘাড়ে মুখ গুঁজে আছে। রিক্সার হুড তোলা। ছেলেটার গায়ে সবুজ রঙের একটা পাঞ্জাবি। সবুঝ রঙের পাঞ্জাবি দেখেই মনে পড়ল মিতু আপুর কথা। আমি সাথে সাথে মেয়েটার শাড়ি দেখলাম। হ্যাঁ এটা মিতু আপুই আর এটা তার’ই প্রেমিক। বাহ কি দৃশ্য! জ্যামে আটকা পড়ে হুড তোলা রিক্সায় প্রেমিকার ঘাড়ে মাথা গুঁজে বসে আছে প্রেমিকা, যদি অনেকক্ষণ এই জ্যামে আটকা পড়ে থাকে তবেও তার খারাপ লাগবে না বরং ভালো লাগবে। প্রেমিকের ঘাড়ে মাথা গুজার শান্তি সবাই পায় না। হয়তো ঠিক করেছে আজ দুজনেই সারাদিন রিক্সায় করে ঘুরবে। চন্দ্র বিলাস, সমুদ্র বিলাসের মতো রিক্সা বিলাস করবে আজ তারা। এই দৃশ্য সচরাচর আমার চোখে পড়ে না। তবে বলতে হবে ছেলেটা দেখতে বেশ সুর্দশন। মিতু আপুর সাথে বেশ মানাবে! ইশ! মিতু আপু কে জ্বালাতন করতে পারবো না নাহলে খুব বলতাম এই কথা। খুব পচাতাম তাকে। জিজ্ঞেস করতাম প্রেমিক এর ঘাড়ে মাথা গুঁজে কি ভাবছিল সে?
নিজেকে কেমন জানি অন্যরকম অন্যরকম লাগলো। এমন কথা তো আমি কখনো বলি না। প্রথম অনুভূতি হলো এমন কিছুর। কারন টা কি?
হঠাৎ উনার কথায় ঘোর ভাঙল।
“এভাবে অন্যের উপর নজর দিও না। বেচারাদের সম্পর্ক ভেঙে যাবে।
“আপনার কি মনে হয় বলুন তো আমার নজর খারাপ!
“খারাপের চেয়েও খারাপ!
“হুহ!
সামনে তাকিয়ে বসে রইলাম। আর তাকাবো না পিছনে। দেখলাম সামনের কিছু মেয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়ে গুলো কে দেখতে কমবয়সী! আমি বলে উঠি,
“ওরা আমাদের কি এমন ভাবে দেখছে!
“হুম দেখছে।
“কেন দেখছে?
“কারন তুমি আর আমি এক রঙের শাড়ি আর পাঞ্জাবি পড়েছি।
“এতে কি? এতো উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখার মানে কি?
“সেটা তুমি বুঝবে না। ভূতনিদের মাথায় এসব ঢুকে না।
আর কিছুই বললাম না। কিছু জিজ্ঞেস করলেই শুধু অপমান করে। জ্যামের অবশান ঘটল। বাইক আবারো ছুটল। সেই রিক্সাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।
বাইক থামালেন উনি। বাইক এখানেই রেখে হাঁটতে লাগলেন। উনার পিছু পিছু আমিও হাঁটছি। আকাশে ভালো রোদ্দুর, রাস্তার দু’পাশে জমজমাট ভীড়। আশপাশ অনেক দোকানে ছোটখাটো ভিড়। আমি আর উনি হেটেই যাচ্ছি। ভীড় বাড়ছে! এক পর্যায়ে উনি আমার হাত ধরে আমাকে উনার সামনে দাঁড় করিয়ে বলেন,
“হাটো!
আমি হাঁটছি সামনে আর উনি পিছনে। অনেক কাপল এসেছে এখানে। ছেলে আর মেয়ের গায়ে এক রঙের পাঞ্জাবি আর শাড়ি। একদম আমাদের মতো। উনি পেছন থেকে আমার চুল গুলো ধরে বলেন,
“এগুলো বাঁধ, আমাকে জ্বালাতন করছে। তুমি যেমন তোমার চুল ও তেমন। সারাক্ষণ আমাকে জ্বালাতষ করার ধান্দায় থাকো।
“ভূতনির চুল তো তাই চুল ও আমার কথা শুনে!
বলেই আমি হেসে দাঁড়িয়ে চুল গুলো খোঁপা করলাম। ভিড় কাটিয়ে দুজনে একটা শান্ত জায়গায় এলাম। যদিও এটা শান্ত জায়গা না। সামনেই একটা চায়ের দোকান। উনি আমাকে নিয়ে বসলেন সেখানে। দু কাপ চা দিতে বললেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“চুল গুলো খুলে ফেল।
“কেন?
“জানি না কেমন জানি লাগছে তোমায় দেখতে!
“তাহলে তো ভালো খুলবো না।
বলেই হেসে দিলাম। এর মাঝেই আশপাশ থেকে একটু হৈচৈ এর শব্দ পেলাম। একজন ছেলে হাঁটু গেড়ে একগাদা ফুলের তোরা নিয়ে একটা মেয়েকে প্রপোজ করছে। তার আশেপাশে তার বন্ধুরা তাকে চেয়ার আপ করছে। মেয়েটা হেসে ফুল গুলো হাতে নিতেই হৈচৈ জোরে হলো। এর মাঝেই আমার চুল গুলো আমার ঘাড়ে এসে পড়ল। উনি চুল গুলো খুলে ফেলেছেন। আমি তাকিয়ে দেখি উনি আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছেন।
“আপনি দেখলেন?
“কি?
আমি চোখ দিয়ে ইশারা করলাম। উনি সেখানে একবার চোখ বুলিয়ে বলেন,
“এসব দেখে আমি কি করবো!
“কিছুই না!
বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। চা চলে এলো। একটা বৃদ্ধ লোক চা দিয়ে গেলেন। তার মুখে তখন মায়া ভরা একটা হাসি ছিল। চা গুলো দেওয়া হয়েছে মাটির কাপে। আমি চায়ে চুমুক দিয়ে থম মেরে গেলাম। এনার চা দাদি’র থেকেও অনেক ভালো। আমি ভাবতাম দাদি’ই হয়তো বিশ্বের সেরা চা বানান কিন্তু আমার সেই ভুল তিনি ভাঙালেন। কে জানে? তার মতো এমন আর ক’জন আমার ভুল ভাঙাবে। আচ্ছা দাদু কি তার চা খেয়ে প্রেমে পড়তেন।
চা খেয়ে দুজনেই কিছুক্ষণ হাঁটলাম। উনি আমাকে এইবার নিয়ে গেলেন ফুচকার দোকানে। নিজেই বললে দু প্লেট ফুচকা দিতে। তার মানে উনিও ফুচকা খেতে ভালোবাসেন।
আমি সবে একটা ফুচকা মুখে দিলাম। এর মাঝেই হঠাৎ করে কেউ আমার ঘাড়ে হাত রেখে পিছনে ঘুরিয়ে বলল,
“আরে নিতি!
আমি চমকে তার দিকে তাকালাম। উনি এতোক্ষণ আমার সাথে কথা বলছিলেন। তিনিও অবাক হয়ে পিছনে ঘুরলেন। দুজনেই চুপ কিন্তু তার চেয়েও বেশি অবাক আমার সামনে থাকা মানুষটি! হয়তো আমাকে এখানে আশা করি নি সে!
#চলবে….