#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩৭
তাকে দেখেই ভয়ে আমি পিছিয়ে গেলাম। সে আমার কাছে আগাতে লাগলো। তার মুখের একধরনের হাসি দেখতে পাচ্ছি। এ হাসির অর্থ আমি জানি। খালেদ কে দেখেছি এই হাসি হাসতে। আমি তার পাশ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করার সময় সে আমার হাত ধরে ফেলল।
আমি তার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। সে আরো শক্ত করে আমার হাত ধরল।
“সিফাত কি করছো।
সিফাত হেসে বলল,
“তোমার মতো বুদ্ধিমান মেয়ের কাছে এমন প্রশ্ন আশা করি নি। তুমি কি বুঝতে পারছো না কিছু!
“না পারছি না! তুমি আমার হাত কেন ধরেছো ছাড়ো।
“আমি তো শুধু হাত ধরলাম। কিন্তু আমার কাছে এ খবর কাছে আহিয়ান ভাইয়া নাকি রাত বেরেতে তোমার বাসায় ও যায়।
“সিফাত! কি সব বলছো তুমি এসব।
“চিৎকার করে শক্তি অপচয় করে লাভ নেই। কেউ আসবে না। আর চিৎকার কেন করছো, তোমার জন্য অনেক ভালো অপশন এনেছি আমি!
আমি ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকালাম। সিফাত আমার হাত ছেড়ে দিল। আমি বলে উঠি,
“অপশন!
“হ্যাঁ , এই ধরো আহিয়ান ভাইয়া তোমাকে যতটুকু দেয় তার চেয়ে বেশি আমি দেবো!
সিফাতের কথা গুলো আমার শরীরে কাঁটার মতো বিঁধতে লাগলো। হুট করেই একটা চড় মেরে দিলাম ওর গালে। সিফাত রক্তবর্ণ ধারণ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মুখ চোখ শক্ত করে বলি,
“কি মনে হয় কি তোমার, এতো বাজে তোমার ভাবনা চিন্তা ছিঃ। কতোটা নিচ তুমি!
“ওহ আচ্ছা তুমি করলে কিছু না আর আমি করলেই নিচ।
“আর একটা কথা বললে..
“কি করবে মারবে আমায়, চড় মারবে।
“পুলিশে দেবো তোমায় আমি।
সিফাত জোরে জোরে হেসে বলল,
“আরে ডার্লিং এর আগে তুমি এখান থেকে তো যাও।
“তোমার মনে হয় তুমি আটকে রাখতে পারবে আমায়। কখনো না।
“তোমার ধারনা নেই আমি কি করতে পারি।
বলেই আমার দিকে আগাতে লাগলো। আমি পিছনে যেতে যেতে বলি,
“তুমি কিন্তু এটা ঠিক করছো না সিফাত।
“আমি জানি আমি করছি!
আমি কিছু বলতে যাবো এর মাঝেই ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা আমার হাতেই ছিল। আমি ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি আহিয়ান। আমি ফোনটা রিসিভ করতেই যাবো এর আগেই সিফাত আমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিল। আমি ওর হাত থেকে ফোনটা নিতে যাবো সে আমার হাত ধরে পিছনে ঘুরিয়ে নিল। হেসে বলল,
“বাহ আহিয়ান! কি ফোনটা আহিয়ান ভাইয়া দিয়েছে নাকি।
“সিফাত ছাড়ো আমায়!
সিফাত কলটা কেটে ফোনটা ফেলে দিল। আমাকে ছুড়ে সামনে ফেলে বলল,
“তোমাকে ফোন না আরো অনেক কিছু দেবোই আমি।
“সিফাত তুমি তোমার সীমা পার করছো।
“আহিয়ান ভাইয়া করলে কিছু না আর আমি করলেই দোষ বাহ! আমি তো ঠিক ততোটুকুই চাচ্ছি, যতটুকু আহিয়ান ভাইয়া পেয়েছে!
“বন্ধ করো তোমার বাজে কথা!
“কেন মিথ্যে বললাম নাকি আমি।
বলেই সিফাত আবারো সামনে আগাতে থাকে। আমি আশপাশ তাকিয়ে দেখি দরজা খোলা। একবার সিফাতের দিকে তাকাই। সে আমার দিকেই আগাচ্ছে। আমি দরজার দিকে তাকিয়ে বলে উঠি,
“আহিয়ান আপনি!
আহিয়ানের নাম শুনে সিফাতের মুখের রং উড়ে যায়। সে মুখ ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকায়। আমি দ্রুত তাকে ধাক্কা দিয়ে দরজার দিকে দৌড়ে যাই।
ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে এসেও দৌড়াচ্ছি আমি, সিফাত আমার পিছনেই। দৌড়াতে দৌড়াতে সিড়ির কাছে চলে আসি। পিছনে ঘুরে আবার সামনে ঘুরতেই কারো সাথে ধাক্কা খাই।
সামনে তাকিয়ে দেখি আহিয়ান। তাকে দেখেই আমি চমকে উঠি। আহিয়ান দুই হাত দিয়ে বাহু ধরে বলে,
“কি হয়েছে?
“আহি…আহিয়ান! আহিয়ান আমি।
“শান্ত হও, মাথা ঠান্ডা করো।
আমি আহিয়ানের হাত আঁকড়ে ধরি। ভয়ে আমার মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না। শুধু ঘামছি আমি। পুরো শরীর কাঁপছে আমার। আহিয়ান বার বার আমায় জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে? আমি হাতের ইশারায় তাকে ওই ক্লাসরুম দেখলাম। আহিয়ান ভ্রু কুঁচকে সেখানে তাকাল।
অতঃপর আমাকে বলল,
“কে আছে ওখানে?
আমি নিশ্চুপ!
“আচ্ছা চলো আমরা দেখি।
বলেই আমার হাত ধরে টানল। আমি সেখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আহিয়ান আমাকে আশ্বাস দিয়ে সেই রুমের কাছে নিয়ে গেল। রুমের দিকে উঁকি দিতেই থমকে গেলাম। কেউ নেই রুমে। আহিয়ান আমাকে নিয়ে রুমের ভিতরে নিয়ে এলো। নিচে আমার ফোনটা পড়ে আছে। আহিয়ান আমাকে বেঞ্চে বসিয়ে ফোনটা উঠিয়ে আমাকে দিলো। আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আমার হাতে হাত রেখে বলল,
“তুমি এখানে কেন এসেছিল।
আমি বির বির করে বলি,
“আপনি এখানে ডেকেছিলেন আমাকে।
আহিয়ানের কানে হয়তো কিছুই যায় নি। সে অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। একপর্যায়ে আহিয়ান দাঁড়িয়ে আমার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে থাকে। আমি কিছুটা হলেও শান্ত হই। আমি স্বাভাবিক ভাবে বলি,
“আহিয়ান এখানে কিছু হয়েছিল?
“কি হয়েছিল!
“আহিয়ান এখানে কেউ একজন তো ছিল। কিন্তু সে নেই।
আহিয়ান ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকাল। আমি উত্তেজিত হয়ে বলি,
“আহিয়ান আপনি আমার কথা বিশ্বাস করছেন। এখানে কেউ ছিল। আমি তার সাথেই এখানে এসেছি। সে আপনার নাম করে আমাকে এখানে নিয়ে আসে।আমার সাথে খুব বাজে ব্যবহার করে। কিন্তু এখন সে নেই এখানে!
আহিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুমি জানো তো এখানে আসার রাস্তা আর যাবার রাস্তা একটাই।
“আহিয়ান আমি সত্যি বলছি।
“শান্ত হও, আমি জানি তুমি সত্যি বলছিলে। তুমি হয়তো হ্যালুসিনেশনে ছিলে তাই তোমার এমন মনে হচ্ছে।
আমি দাঁড়িয়ে বলি,
“আহিয়ান আপনি আমাকে পাগল বলছেন!
“একদমই না। পাগল’রা মুখে মুখে তর্ক করে না। হ্যালুসিনেশন হলেই সে পাগল হয় না। এটা মানুষের মনের ভুল। ভ্রম বলতে পারো।
আমি চুপ হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে থাকি। কি করে প্রমাণ করবো আমি এখানে কেউ ছিল। কেউ এখানে নিয়ে এসেছিল আমায়। আমার মুখের কথা আহিয়ান বিশ্বাস করছে না। সে আমাকে বলেই দিচ্ছে এটা আমার হ্যালুসিনেশন কিন্তু আমি জানি এটা সত্যি ছিল।
আহিয়ান আমাকে বলল,
“চল ক্লাসে চল।
“আপনি এখানে কিভাবে এলেন।
“আমাকে একজন বলল তোমাকে এখানে আসতে দেখেছে।
“আমার সাথে কেউ ছিল না।
“না! তুমি একা এসেছ!
আহিয়ানের কথায় আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। এই কারনেই উনি এতো সহজে বলে দিলেন আমি ঘোরের মধ্যে ছিলাম। আদৌও কি আমি ঘোরের মধ্যে ছিলাম! সেটা যদি না হয় তাহলে সিফাত কোথাও! তার তো এখানেই থাকার কথা। এখানে আসা আর যাবার রাস্তা একটাই। সিফাত গেলে তো আমাদের সামনে দিয়েই যাবে। রুমের জানালায় গ্রিল দেওয়া। সেখান দিয়ে লাফ দেওয়া সম্ভব না। তাহলে!
.
অতঃপর দুজনেই একসাথে নেমে গেলাম। সবকিছুই ধোঁয়াশা লাগছে। নিচে নামতেই দেখি সিফাত আকাশ ভাইয়ার সাথে। তার সাথে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে। এটা দেখার পর আমার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিল। আহিয়ান তো বিশ্বাস’ই করছে সেখানে কেউ ছিল। এখন যদি বলি সেটা সিফাত তাহলে উনি নির্ঘাত আমাকে পাগল বলেই দাবি করবেন।
সিফাত আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করল। আমি উওর না দিয়ে হেঁটে ক্লাসরুমে চলে গেলাম। সবকিছু’ই গন্ডগোল লাগছে আমার কাছে। কিছুতেই হিসেব মিলাতে পারছি না আমি। এদিকে আমার পাশে বসে ইতি বক বক করেই যাচ্ছে।
.
ক্লাসের শেষে আহিয়ানের বাইকে চড়ে রিনুর বাসায় যাচ্ছি। আমার মাথায় এখনো সেই কথা। আহিয়ান হঠাৎ আমাকে বলে উঠে,
“তুমি এখনো সেই কথা নিয়ে ভাবছো।
“না।
“হ্যাঁ তুমি ভাবছো।
“আমি বললাম তো না।
“না ভাবলে এখানে বসে আছো কেন? তোমাকে গন্তব্য তো চলে এসেছে।
আমি আশপাশ তাকিয়ে দেখি আসলেই রিনুর বাসার সামনে চলে এসেছি। আমি দ্রুত বাইক থেকে নেমে গেলাম। আহিয়ান বলে,
“এতো ভেবো না মাথা ফেটে যাবে।
“না আমি ভাবছি না কিছু!
“আচ্ছা! সন্ধ্যার সময় ওখানে দাঁড়াব।
“না দরকার নেই।
“কেন?
“আজ অর্ণ পড়বে না। ওর নানু বাড়ি যাবে।
“তাহলে তুমি ফোন করে বলো কোথায় আসবো।
“দরকার নেই। তখন আলো থাকবে আমি একাই যেতে পারবো।
“আচ্ছা!
অতঃপর আহিয়ান বাইক নিয়ে চলে গেল। আমি রিনু কে পড়াতে গেলাম। যদি এর মাঝেও আমার মাথা থেকে এসব বের হয়। অন্য কোন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখলে হয়তো মাথা থেকে এসব বের হয়ে যাবে। তবে আমি এটা জানবোই এখানে কি হয়েছিল। সিফাত হঠাৎ করেই কি করে উধাও হলো।
.
অর্ণ কে পড়াতে হবে না বলে তুহিন কে পড়িয়ে বাসায় না গিয়ে পার্কে এসে বসে রইলাম। এখন হচ্ছে বিকাল বেলা। দিনের এই সময়টায় সবচেয়ে সুন্দর হয়। পার্কে কিছু বাচ্চারা খেলছে। মায়েরা গল্প করছে। পাখিরা উড়ছে। আমি একটা বেঞ্চে বসে এসব দেখছি। সময়টা খারাপ না।
হঠাৎ করেই “ভূতনি” ডাকটা কানে এলো। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে ওদিকে তাকিয়ে দেখি আহিয়ান আসছে বাদাম খেতে খেতে। আমি ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছি। সে এসেই আমার পাশে বসল। আমার দিকে বাদামের প্যাকেট দিয়ে বলল,
“ভূতনি বাদাম খাবে।
“আপনি এখানে কেন?
“কি স্বভাব তোমার, জিজ্ঞেস করছি উওর দিবা তা না করে আবার জিজ্ঞেস করছো। না খাও!
বলেই আমার হাতে ধরিয়ে দিল। আমি উনার হাতেই প্যাকেট টা রেখে বলি,
“খাবো না। এখন বলুন এখানে কি করছেন!
“আসলে কি বলো তো, ১ দিনের সময় ৩ রকম। সকাল বেলা, দুপুর বেলা আর সন্ধ্যা বেলা। এই ৩ বেলা তোমার সাথে ঝগড়া না করলে আমার জমে না।
আমি উনার দিকে একবার তাকিয়ে আবারো সামনে তাকালাম। একটা বাচ্চা মেয়ে বেলুন হাতে নিয়ে খেলছে। ভালোই লাগছে দেখতে। আহিয়ান বলে উঠে,
“বুঝলে ভূতনি তুমি শীঘ্রই তোমার স্বামীর বিয়ের দাওয়াত মানে!
আমি কপাল কুঁচকে বলি,
“কি?
আহিয়ান বাদাম মুখে দিয়ে বলে,
“হুম! আজ নিতির মা আর বাবা আমাদের বাসায় এসেছিল নিতি আর আমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে! আর মনে হচ্ছে বিয়েটা হবে!
উনার কথায় আমি ভ্যাবলার মত তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে।
#চলবে….