#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৫০
আমি সেখানে এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে চলে এলাম। কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। আমি কাঁদছি, খুব কাঁদছি! কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির বাইরে চলে এলাম। অতঃপর দৌড়াতে লাগলাম। কি করছি কেন করছি কিছুই জানি না তবে এতো টুকু জানি আমি পালিয়ে যাচ্ছি। এখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছি!
অনেকদূর অবদি আসার পর এখন হাঁটতে লাগলাম। দেখতে দেখতে মাঝরাস্তায় চলে এসেছি। চারদিক খুটখুটে অন্ধকার! কত রাত হয়েছে কে জানে? আমি নিশ্চুপ ভাবে গাড়ির চলে যাওয়া দেখছি। হঠাৎ করেই একটা সিএনজি এসে থামল আমার সামনে। জিজ্ঞেস করল..
“আফা কোথায় যাবেন!
আমি স্থির চোখে তাকিয়ে আছি তার দিকে। লোকটা আবারো জিজ্ঞেস করল। আমি আহিয়ানের বাড়ির ঠিকানা বলি। লোকটা বলে,
“আচ্ছা উঠেন!
অতঃপর আমি তার সিএনজিতে চড়ি। কিন্তু এতো রাতে লোকটা আমার কাছেই কেন এলো। অতঃপর পেছনে তাকিয়ে দেখি আমি বাসস্ট্যান্ড এর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
লোকটা গাড়ি চালাচ্ছে আর আমি পিছনে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি। এখন আর কাঁদতে ইচ্ছে করছে না। মন শান্ত হয়ে গেছে, সব নিশ্চুপ! সিএনজি চলছে দ্রুত গতিতে, বাতাসও দ্রুত গতিতে ছুঁয়ে যাচ্ছে আমায়। চোখ বন্ধ করতেই সেই দৃশ্য আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। অস্বস্তি হতে লাগলা। কানে একটা কথাই বাজতে লাগাল, “আহিয়ান আমাকে ঠকিয়েছে, উনি বলেছিলেন আমার সাথেই তার বাকিটা জীবন কাটাবে। কিন্তু উনি উনার কথা রাখে নি। আমাকে ঠকিয়েছেন উনি।
এসব ভেবে চোখ বন্ধ করতেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল। চোখের অশ্রু ও বড় অদ্ভুত জিনিস। সে তার মন মতোই চলে। কেন কাঁদছি আমি, কেন কষ্ট হচ্ছে আমার সেসব কিছুই জানি না। শুধু জানি আমাকে কাঁদতে হবে! হঠাৎ করেই ফোনটা বেজে উঠল। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি আহিয়ান! কলটা কেটে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম।
সিএনজি এসে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিল। আমি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে তাকে দিলাম। সদর দরজা বন্ধ। কড়া নাড়তেই দাড়োয়ান গেট খুলে দিল। আমাকে দেখে একটা বড় সালাম দিল। আমি মাথা নেড়ে ভিতরে এলাম।
বাড়ির দরজায় কলিং বেল চাপতেই সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দিল। পুরো বাড়ি আজ খালি। কেউ নেই বাড়িতে। সবাই গেছে আপুর শশুড় বাড়িতে। সার্ভেন্ট আমাকে দেখেই অনেক কথা জিজ্ঞেস করতে লাগল। বলল,
“ম্যাম, আপনারা চলে এসেছেন।
বলেই বাইরে তাকাল। আমি হাঁটতে হাঁটতে সিঁড়ি বেয়ে উঠছি। সে জিজ্ঞেস করল,
“আপনি একা এসেছেন, স্যার আসে নি।
আমি কিছু বলি নি। সে আবারো জিজ্ঞেস করল,
“ম্যাম আপনার জন্য চা বানাবো!
আমি কোন উত্তর না দিয়ে ঘরে চলে এলাম। বিছানায় ব্যাগ টা রেখে বেলকনির দিকে গেলাম। বেলকনির সামনে পর্দা টানা ছিল। আমি পর্দা সরিয়ে দরজা খুলে বেলকনির দিকে যাবো তখন’ই ফোনটা আবারো বেজে উঠলো। আমি ফোনটার দিকে তাকিয়ে দেখি আহিয়ানের নাম্বার! আমি তার ফোন কেটে দিতেই ইতির নাম স্ক্রিনে ভেসে উঠলো। তার কল’টা কেটেও করে যেই বিছনাতে রাখতে যাবো ওমনি ফোনটা আবারো বেজে উঠলো। এর আগেও উপরে অনেক মেসেজ জমা আছে। সব গুলোই আহিয়ানের! আমি রেগে ফোনটাকে একটা আছাড় মারলাম। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বেলকনিতে এলাম। সেখান স্নিগ্ধতা দেখে চোখ বন্ধ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি, বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে আমায়। বুকের ভেতর কোথাও বেশ কষ্ট হচ্ছে। খুব ইচ্ছে করছে জোরে জোরে কাঁদতে। কিন্তু আমি যে অপারগ!
আমার অশ্রু আবারো বেইমানি করল। তারা নিজ ইচ্ছেমত গড়িয়ে পড়তে লাগালো। আমার হাত পা সব কাপতে লাগলো। সেখানেই হাঁটু ভেঙ্গে বসে কাঁদতে লাগলাম। মন বার বার এক কথাই বলছে,
“আহিয়ান কেন করল আমার সাথে এমন! কেন করলেন উনি এরকম। নিতি কে ভালোবেসে থাকলে তার সাথেই থাকতেন। আমাকে বিয়ে করতে গেলেন কেন। উনি আমাকে বাঁচাতে বিয়ে গিয়ে নরক যন্ত্রণা’র মাঝে ফেলে দিলেন।
.
নিচ থেকে গাড়ির আওয়াজ এলো। আহিয়ান এসেছে! গাড়ি থেকে উনার নামার আওয়াজ পেলাম। তড়িখড়ি করে নামছেন উনি। দৌড়াতে দৌড়াতে উপরে আসছেন। আমি যেখানে ছিলাম সেখানেই ঠাঁই বসে আছি। শুধু দু চোখের অশ্রু মুছে নিয়েছি।
উনি ঘরের ভেতর আসার পর’ই সব শান্ত হয়ে গেল। নিশ্চুপ হয়ে গেল সবকিছু। উনি ধীরে ধীরে আমার দিকে আগাচ্ছেন। অতঃপর আমার কাছে আসতেই পাশে বসে পড়লেন। দু’জনেই চুপ, কেউই কোন কথা বলছি না। আচ্ছা উনি কি আদৌও কিছু বলবেন। হঠাৎ করেই উনি বলে উঠেন,
“তুমি আমাকে না বলে কেন চলে এসেছ, জানো পাগলের মতো খুঁজছিলাম তোমায়। ইতিকেও বলে আসো নি। পুরো বাড়ি খুঁজতে খুঁজতে আমি শেষ! তার উপর ফোন! এতো গুলো কল করলাম ধরলে না কেন তুমি!
আমি কিছু না বলে সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। উনি বলে উঠেন,
“নিহা, ঠিক আছো তুমি!
উনার মুখে নিহা নামটা শুনে এই প্রথমবার যেন খুব কষ্ট পেলাম। কেন ডাকছে এই নামে। পর করে দিচ্ছে আমায়। আমি আর উনার কাছে বসে থাকার ধৈর্য্য হলো না। কিছু না বলে উঠে দাঁড়িয়ে চলে যেতে নিলাম। তখনই হুট করে আমার হাত ধরে নিজের দিকে টানলেন উনি।
আমি উনার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। উনার চোখে আমার জন্য চিন্তা দেখতে পাচ্ছি এসব কি আদৌও সত্যি। আমার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। উনি সেই অশ্রু মুছে দিয়ে বলেন,
“কাঁদছো কেন তুমি!
আমি উনার থেকে সরিয়ে হাত ছাড়িয়ে বলি,
“কিছু না, আমাকে যেতে দিন।
“নিহা একটু শোন!
“কি শুনবো আহিয়ান, কি শুনাবেন আপনি।
বলতে বলতে দু চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরল। উনি আবারো মুছতে নিলে আমি উনার হাত ধরে বলে,
“যে কাঁদায় তার হাতে অশ্রু মুছিয়ে দেওয়া মানায় না আহিয়ান।
“তুমিও কি এটাই ভাবো।
“কেন ভাববো না, আমি নিজের চোখে দেখেছি, আপনি কি বলতে চান আমি ভুল দেখেছি
“আমি তা বলছি না।
“তাহলে,তাহলে তো হয়েই গেল। আচ্ছা একটা কথা বলুন তো, কেন আনলেন এসবের মাঝে আমাকে।
“নিহা আমার কথা শোন..
উনাকে থামিয়ে দিয়ে উনার চোখের দিকে তাকিয়ে বলি,
“রাখুন এসব, শুধু এতটুকু বলুন! আপনি ভালোবাসেন নিতি কে।
উনি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন। খানিকটা বিরক্ত স্বরে বলেন,
“নিহা, এসব কি বলছো। পাগল হয়ে গেছ তুমি।
“পাগল তো আপনারা আমাকে বানিয়ে দিচ্ছেন আহিয়ান।
“নিহা, আমার কথা শোন! তুমি যা দেখছ…
“ভুল দেখেছি আমি।
“না ভুল দেখোনি কিন্তু ভুল বুঝেছ!
“তাহলে সঠিক না কি আহিয়ান। আপনিই তো বলেছিলেন, কেউ কাউকে ভালোবাসলেই তাকে কিস করে! বলেন নি আপনি।
“হ্যাঁ আমিই বলেছি, কিন্তু…
“আবারো কিন্তু! নিতি কে ভালোবাসেন বলেই তো তাকে কিস করেছেন। আচ্ছা আহিয়ান একটা কথা বলুন। নিতি কে যদি ভালোবেসে থাকেন তাহলে আমাকে কেন বিয়ে করেছেন।
“নিহা আমি নিতি কে ভালোবাসি না।
আমি চেঁচিয়ে বলি,
“তাহলে তাকে কিস কেন করেছেন! ( আহিয়ান কলার ধরে বলি ) কেন ছিলেন ওর এতো কাছে। কেন?
আহিয়ান আমার হাতে হাত রেখে বলে,
“তুমি একটু শান্ত হও, আমি সব বলছি।
“আহিয়ান আপনি কি বলবেন এখন আমায়। কি বলবেন, নিতি..নিতি আপনাকে… ( আর বলার সাহস হলো না। মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে আসছিল আমার। অতঃপর আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি… ) আচ্ছা আহিয়ান! আপনার কিছু যায় আসেনা নাহ! কোন মেয়ে আপনার গালে হাত রাখল, কোন মেয়ে আপনাকে কিস করল, কোন মেয়েরা আপনার আশেপাশে ঘুরঘুর করে এতে আপনার কিছু যায় আসে না বলুন!
“নিহা হাইপার হয়ো না। তুমি আগে শান্ত হও আমি সব বলছি।
আমি আবারো জোরে বলে উঠি,
“আপনি আমাকে বার বার নিহা নিহা বলে কেন ডাকছেন!
বলেই উনার থেকে দূরে সরে যাই। আহিয়ান স্থির হয়ে দেখছে আমাকে। আমি খুব অস্বাভাবিক আচরণ করছি।
আমি কেঁদে কেঁদে আহিয়ান’র দিকে তাকিয়ে বলি,
“আহিয়ান আপনি আমাকে ঠকিয়েছেন!
“না নিহা.. তুমি শোন তো একটু।
“না আহিয়ান! আপনি ঠকিয়েছেন আমায়, ঠকিয়েছেন । আপনি আমাকে সব মিথ্যে কথা বলছেন সব মিথ্যে।
“নিহা দুটো মিনিটেরও জন্য একটু শান্ত হয়ে আমার কথা শোন।
“আমি কিছুই শুনতে চাই না আহিয়ান, কিছু না।
বলেই সেখান থেকে বের হয়ে যেতে নিলাম, হুট করেই আহিয়ান আমার দুই বাহু ধরে ফেলে। আমি তার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছোটাছুটি করছি কিন্তু সে আমাকে ততোই জোরে ধরে রেখেছে। এক পর্যায়ে আহিয়ান আমাকে ধমক দিলেন। তার ধমকের আওয়াজে আমি চুপ হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি ছেড়ে দিলেন আমায়। আমি উনার দিকে তাকিয়ে কাঁদছি। উনি উনার এক হাত আমার গালে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
“একটু শান্ত হও, আমাকে কিছু বলার সুযোগ দাও।
আমি একটু শ্বাস নিয়ে বলি,
“আহিয়ান আপনি আমাকে ঠকিয়েছেন, ( উনার চোখের দিকে তাকিয়ে.. ) ঠকিয়েছেন আমা…
বলার আগেই হঠাৎ উনি কিছু সেকেন্ড’র জন্য আমার ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরেন। আমি হতভম্বিত হয়ে গেলাম। ঘটনা একদম সময় সাপেক্ষ ছিল। উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। আমি একবার উনার দিকে তাকিয়ে আবারো মাথা নিচু করছি। কেন জানি মনে হচ্ছে যা হয়েছে সেটা একটা স্বপ্ন ছিল।
উনি নিহা বলেই আমার কাছে আসতেই আমি পিছিয়ে গেলাম। আমাকে পিছুতে দেখে উনি নিজেও পিছিয়ে গেলেন। আমি এখন নিশ্চুপ হয়ে গেছি। আহিয়ান বলতে শুরু করেন,
“এখন তোমার সাথে যা ঘটল আমার সাথে সেটাই ঘটেছে। এমন কথা বলার মাঝেই নিতি হুট করে আমাকে কিস করে। আমি ব্যাপারটা তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারি না। তবে এটা সত্যি আমি সেটার কোন সুযোগ নিই নি। হয়তো তুমি সেখানে কিছু সেকেন্ড দাড়ালেই ব্যাপারটা বুঝতে পারতে। বলছি না তুমি যা দেখেছ তা ভুল। স্বীকার করছি যা দেখেছ সব সত্যি কিছু বুঝেছ ভুল। আমার জীবনে তুমি থাকতে আমি অন্য কোন মেয়ের কথা ভাবি নি আর না ভাববো।
আমি শীতল গলায় বলে উঠি,
“আপনার ফোন! আমি কেন গেলেন সেখানে। জানতেন না নিতি কি করতে পারে। সেদিনের কথা ভুলে গেছিলেন আপনি।
উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। বেলকনির গ্রিলের সাথে দাঁড়িয়ে বলেন,
“আমার ফোন সিফাতের কাছে ছিল। ও বলেছিল তা ফোনে চার্জ নেই আমার ফোনটা একটু দরকার তাই আমি তাকে ফোন দিয়েছিলাম। কিন্তু ও মিথ্যে বলেছিল। আসার সময় ওর হাতে আমি ওর ফোন দেখি। আমাকে আনিকা এসে বলছিল তারা সবাই আমাকে আর তোমাকে সরি বলতে চায়। যা কিছু হয়েছে এজন্য তারা সরি বলবে। আমি ওদের বিশ্বাস করেছিলাম। আমি তোমাকে ডাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু আনিকা বলল সে তোমাকে ডেকে আনছে। টিনা’র সাথে গিয়ে নিতি কে দেখার পর যখন দেখি টিনা নেই তখন’ই বুঝতে পারি ওরা সবাই আমাকে মিথ্যে বলেছে। আমি সেখান থেকে তখন’ই চলে আসতাম কিন্তু নিতি এসে আমার পথ আটকে দিল। তর্ক শুরু হয়ে গেল আমাদের মাঝে আর এমন সময়ই হুট করে…
বলেই নিঃশ্বাস নিলেন উনি। অতঃপর আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
“এতো ভালো টাইমিং তোমার জানতাম না। ঠিক তখনই এলে তুমি আর চলেও গেল। এরপর কি হলো আর জানলে না। আমি নিতি কে ছেড়ে দিয়ে ভিতরে এসে তোমাকে খুঁজতে লাগলাম কিন্তু পেলাম না। বুঝতে আর বাকি রইল না তুমি সব দেখেছ আর ভুল বুঝছো। পাগলের মতো পুরো বাড়িতে তোমাকে খুঁজেছি। ইতি কে জিজ্ঞেস করছি সেও কিছু বলতে পারছে না। চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। কোথাও না পেয়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলাম। ড্রাইভ করতে করতে তোমাকে খুঁজছি, ফোন করছি কিন্তু তুমি ফোন তুলছো না। বাসায় আসতেই সার্ভেন্ট বলল তুমি এসেছ!
আমি তাকিয়ে আছি উনার দিকে। উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“তুমি আমাকে বিশ্বাস করো কি না বা করবে কি না জানি না কিন্তু যা ঘটেছে তাই বলেছি। আর হ্যাঁ নিতি কে আমি ভালোবাসি না।
বলেই উনি চলে যেতে নিলেন। আমি দেওয়ালের সাথে ঠেসে দাঁড়িয়ে বলে উঠি,
“আর আমাকে!
উনি থমকে দাঁড়িয়ে গেলেন। পিছনে আমার দিকে ফিরলেন। আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলি,
“আমাকে ভালোবাসেন আপনি!
আমি উনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। উনি চোখ নামিয়ে নিলেন। চলে গেলেন। উনি যেতেই আমি নিচে স্থির হয়ে বসে পড়লাম। হয়তো উনার মুখ থেকে হ্যাঁ শুনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কেন চাইলাম জানি না। তবুও ভেবেছিলাম উনি হ্যাঁ বলবে।
খানিকক্ষণ এভাবেই বসে রইলাম। উনি ঘর থেকে চলে গেছেন। আবারো এলেন। আমি যেখানে ছিলাম সেখানেই চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম। হঠাৎ করেই মনে হল আমি কারো কোলে। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আমি উনার কোলে। উনি কোলে তুলেছেন আমাকে। উনি আমার দিকে তাকাচ্ছেন না। চোখ নামিয়ে রেখেছেন।
আমাকে এসে খাটে বসিয়ে দিলেন। আমি এখনো তাকেই আছি উনার দিকে। উনি হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে আমার সামনে বসলেন। আমার মুখে ভাতের লোকমা তুলে বলেন,
“খেয়ে নাও, কাঁদতে কাঁদতে আর চেঁচিয়ে তোমার সব এনার্জি চলে গেছে। বাকি রাত ও ঝগড়া করতে হবে। এনার্জি লাগবে খেয়ে নাও।
উনার কোন কথায় আমার রাগ কমছে না। খুব রাগ হচ্ছে নিতি ওদের উপর। আমি মুখ ভেংচি দিয়ে ভাতের লোকমা মুখে দিলাম। উনি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন। আমি খেতে খেতে বলি,
“আপনি খাবেন না
“হুম তুমি খাও আমি পরে খাবো।
আমি আর কথা বাড়ালাম না। কথা বাড়ানোর কোন ইচ্ছাও নেই। খাবার খাওয়া শেষ করে উঠতে যাবে এর মাঝেই উনার ফোন বেজে উঠল। উনি ফোনের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“ইতি ফোন করেছে!
অতঃপর আমি ফোনটা নিয়ে রিসিভ করি। উনি চলে যান বেলকনির দিকে। আমি ফোন তুলতেই ইতি কথা শুরু করে দিল। আমি বলে উঠি,
“আমি নিহা!
“নিহা! তুই! বেয়াদব মেয়ে তোর ফোন কেন তুলছিস না। কখন থেকে ফোন করেই যাচ্ছি আগে তো তাও ফোন যাচ্ছিল এখন তো তাও যাচ্ছে না।
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি ফোনটা নিচে পড়ে আছে। আমি বলে উঠি,
“ফোন আছে ঠিকঠাক।
“বুঝলাম। তুই আছিস তো ঠিকঠাক
“হুম আছি। বল কি হয়েছে?
“সেটা তো তুই বলবি, আমাদের কাউকে কিছু না বলে চলে গেলি। কখন গেলি টের ও পেলাম না।
“সরি, আসলে খুব খারাপ লাগছিল তাই চলে এলাম!
“মিথ্যে কেন বলছিস সেটা কাল জানবো। আগে শোন তুই চলে যাবার পর কি হয়েছে?
“কি হয়েছে?
“তুই যেতেই আহিয়ান ভাইয়া হঠাৎ করে এসেই সিফাত কে সবার সামনে চড় মারল। আর তার পেছন পেছন নিতি কে আসতে দেখেছিলাম। বেচারি কাঁদতে কাঁদতে এসেছে। ভাইয়া নিশ্চিত ওকে বকেছে। এছাড়া আনিকা আর টিনা কেও সাইলেন্ট ভাবেই চোখ রাঙিয়ে গেল। কেন এমন হলো সেই সম্পর্কে তুই জানিস কিছু!
ইতির কথা এতটুকুই আমার কানে এলো। আমি খাটে বসে দেখছি উনি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। ফোনটা কেটে বেলকনিতে গিয়ে উনার পাশে দাঁড়ালাম। উনি সিগারেটে টান দিচ্ছে আর তার ধোঁয়া আকাশের দিকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছেন। আমি শীতল গলায় বলে উঠি,
“আপনি কি সিফাত কে মেরেছিলেন
“চড় দিয়েছি আর কিছু বলি নি। সেখানে অনুষ্ঠান চলছিল বলে তেমন কিছুই বলতে পারি নি।
“আর নিতি!
“আমি ওকে ধমক দিয়েছি। কিন্তু এমন কান্ড হবার পর শুধু ধাক্কা দিয়েছিলাম যার কারনে ও পড়ে গেছিল। ওকে না তুলে এসে পড়েছি। মেয়েদের গায়ে কখনো হাত তুলিনি আমি। নিতিকেও আজ ফেলতাম না কিন্তু রাগের মাথায় ধাক্কা দিয়ে ফেলেছি।
“টিনা আর আনিকা।
“ওদের বলেছি আর কখনো আমার সামনে আসতে না। সম্পর্ক শেষ ওদের চার জনের সাথে আমার!
#চলবে….