ভালোবাসার_ফোড়ন_২ #মিমি_মুসকান #পর্ব_৫৭_৫৮

0
736

#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৫৭_৫৮

আমি আহিয়ান কে ভালোবাসি এটাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আমার এই ভালোবাসার প্রকাশ কি আদৌও হবে। নাকি আমার মনের মাঝেই চাপা পড়ে থাকবে। খালিক্লাসে একা বসে আছি আমি। কিছুই ভালো লাগছিল না বলে ডায়রি টা খুলে বসলাম। আর লিখতেও শুরু করলাম। কিন্তু লিখব টা কি!
নিজেকে খুব ক্লান্ত লাগছে। গতকাল রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি নি। কেন জানি দু চোখের পাতা এক’ই হলো না। উনি দিব্যি নাক ডেকে ঘুমিয়েছিলেন। আমি সারারাত উনাকে দেখেই কাটিয়ে ছিলাম। জানি না কেন তবে মনে হলো উনার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সময় দ্রুত চলে যাচ্ছিল।

একটা মজার ব্যাপার ঘটেছিল তখন। আমি উনাকে দেখতে দেখতে উনার খুব কাছে চলে গেছিলাম। তখন উনি ঘুমের রাজ্যে ছিলেন। তাই হয়তো টের পান নি। একসময় আমি উনার কাছেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কখন তা বুঝতে পারি নি তবে খুব অল্প সময়ের জন্য’ই। ভাগ্যিস আমি আগে উঠে গেছিলাম নয়তো উনি দেখে ফেললে কি হতো। ছিঃ ছিঃ অস্বস্তিকর পরিবেশেই না পড়তাম আমি।

এসব কথা ভেবেই নিজেই হেসে ফেললাম। অতঃপর কলমটা নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করতে লাগলাম। লেখব কি? কাকে নিয়ে লেখব। আমি তো আর লেখক নই, হলে হয়তো ভালো হতো। লেখকরা মনের কথা খুব সুন্দর করে লিখতে পারে। আমিও না হয় তেমন কিছু একটা লিখতাম। অতঃপর সেটা একটা খামে ভরে উনাকে দিতাম। তার সাথে দিতাম এক গুচ্ছ ভালোবাসার ফুল মানে জবা। জবা ফুলের শুভ্রতা তাকে বলতো আমি তাকে ভালোবাসি। আচ্ছা এমনটা হলে কি খুব বেশি খারাপ হতো!

লিখতে শুরু করলাম, ভালোবাসা কি? কেন এটা মানুষ কে এতোটা অস্বস্তিতে ভোগায়। এটার কোন স্বার্থ আছে। তবে মানুষ যে বলে ভালোবাসা নিস্বার্থ ! আচ্ছা এক তরফা ভালোবাসা কেমন হবে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমি নিতির মতো ভাবছি। না আমি ওর মতো ভাবছি না, ওর মতো আহিয়ান কে ভালোবাসার জন্য জোর করছি না। আমি যে উনাকে ভালোবাসি এটা এখনো উনাকে বলি নি। আর কখনো বলবো কি না তা ভাবিনি। কিন্তু আমি আমার ভালোবাসা কে এক তরফা ভালোবাসা কেন বলছি। আমি তো জানি না আহিয়ান আমাকে ভালোবাসে কি না। আচ্ছা যদি বেসে থাকে তাহলে, আর না বেসে থাকলে তখন কি হবে। তবে যে সেদিন তাকে জিজ্ঞেস করলাম কেন উনি কিছু বললো না আমায়। কথায় বলে নিশ্চুপতা নাকি সম্মতির লক্ষণ! সেটা ধরে নেব! না এক্ষেত্রে এটা ধরবো না। ভয় করছে। আমি ভয় পাচ্ছি। কিসের ভয় জানি না তবে এমনটা আগে হয় নি। সব দোষ ওই ইতি মেয়েটার। মেয়েটা আমাকে একটা গোলক ধাঁধা’র মাঝে ফেলে দিলো। কিভাবে বের হবো সেটাই বুঝতে পারছি না..

এতটুকু লেখার পর হঠাৎ করেই ফোনটা বেজে উঠল। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি যাকে এতোক্ষণ ভাবছিলাম এটা সেইই, মানে ইতি। আমি ফোনটা ধরতেই ইতি বললো ক্যাম্পাসে চলে আসতে। ডায়রি টা ব্যাগে ভরে চলে গেলাম ক্যাম্পাসের দিকে। ইতি আমাকে দেখেই ওর ব্যাগ আর একটা গোলাপ ফুল হাতে দিয়ে বলল,

“একটু অপেক্ষা কর আমি আসছি!

বলেই ছুটতে ছুটতে চলে গেল। চলেই যদি যাবি তাহলে আমাকে কেন ডাকলি। আজব! আমি এক কোণায় বসে পড়লাম। ব্যাগ টা রেখে বলে ফুলের দিকে তাকালাম। বাহ বেশ তো দেখতে। গাঢ় লাল রঙের গোলাপ! ঘ্রাণ টাও বেশ! হঠাৎ করেই মাথা একটা বুদ্ধি এলো। আমি গোলাপের একটা পাপড়ি ছিঁড়ে বলি,

“উনি আমাকে ভালোবাসেন!

আবার একটা ছিঁড়ে বলি,
“ভালোবাসেন না!

মুচকি হেসে বলি,
“ভালোবাসেন!

মুখটা অন্ধকার করে বলি,
“ভালোবাসেন না।

“ভালোবাসেন!

“ভালোবাসেন না!

এভাবেই করতে থাকলাম। অবশেষে বিজয়ী হলো ভালোবাসেন না। আমি বিরক্ত হয়ে বলি,
“ধুর ছাতার মাথা। এগুলো কখনো হয় না।

আবার মনে হলো,
“আচ্ছা যদি হয়, তাহলে উনি কাকে ভালোবাসেন!

বিরক্ত হয়ে উঠে গেলাম। এর মাঝেই ইতি এলো। এসেই আমার কানের কাছে বলল,
“সরি রে ইয়ার একটু ও ডাকছিল তাই.. কিরে ফুল ছিঁড়ল কে?

“আমি ছিড়েছি?

“কেন?

“এমনেই, ভাইয়া কে বললো তোকে আরেকটা গোলাপ দিতে মন খারাপ করিস না।

“গাধি এটা আমার না তোর জন্য!

আমি চমকে উঠে বলি,
“আহিয়ান দিয়েছে!

“না আমি এনেছি, তোর জন্য যাতে ভাইয়া কে তুই এটা দিতে পারিস।

আমি হতাশ হয়ে নিচে বসে বলি,
“এখন এসব দিয়ে কি হবে, উনি তো আমাকে ভালোই বাসেন না।

“কে বলেছে তোকে এই কথা, ভাইয়া!

“না!

“তাহলে?

আমি ফুলের পাপড়ি দিকে ইশারা করলাম। অতঃপর বিরক্ত হয়ে উঠে গেলাম। ইতি কপালে হাত দিয়ে বলল,
“তুই এটা ধরে বসে আছিস।

“দেখ ইতি আমি তোকে সাফ জানিয়ে দিচ্ছি উনি আমাকে ভালোবাসেন না।

“হ্যাঁ তারপর!

“ইতি! বিরক্ত করিস না।

“আমি বিরক্ত কোথায় করলাম। তুই নিজেই বিরক্ত!

“জানি না কিছু!

বলেই চলে এলাম। উফ নিজেকে খুব বিরক্ত লাগছে আমার। ভালো লাগছে না কিছু। সবকিছুই যেন বিরক্তিকর!
.
ক্লাস না করে দাদির বাসায় চলে এলাম। দাদির সাথে অনেকক্ষণ অবদি আড্ডা দিলাম। দাদা দাদী’র সাথে এতো দিন পর দেখা করে বেশ লাগলো। তাদের সাথে আরো কিছুক্ষণ থাকার ইচ্ছে ছিল কিন্তু থাকলাম না বের হয়ে এলাম। বাইরে এসে একটা রিক্সায় চড়ে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে দেখি ৫১ টা মিসকল! কিন্তু আমার ফোন কেন বাজল না।

ফোন সাইলেন্ট থেকেই মাথা খারাপ হয়ে গেল। তার মাঝে সব গুলো মিসকল’ই আহিয়ানের ছিল। হঠাৎ করেই আবারো কল এলো। আমি কলটা রিসিভ করে কানে দিতেই ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ পেলাম না। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি ফোন বন্ধ! কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে ফোনটা ব্যাগে রেখে দিলাম। এখন আমার গন্তব্য বাসায় যাওয়া!

বাসায় আসার পর দেখলাম পরিবেশ শান্ত। পিকু আর ইয়ান দুজনেই ছুটে এলো আমার কাছে। মা আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, আহিয়ান কোথায়? এর মানে বুঝলাম উনি এখনো আসে নি। আমি বললাম উনার আসতে একটু দেরি হবে।

মা বললেন,
“আচ্ছা হাত মুখ ধুয়ে আসো। আমি খাবার বাড়ি।

“না মা এখন খাবো না। আমার শরীর টা ভালো লাগছে না আমি একটু ঘুমাবো।

“আচ্ছা যাও!

ইয়ান আমার হাত নাড়িয়ে বলল,
“ভূতনি আম্মু খেলবে না।

আমি হাঁটু গেড়ে বসে ইয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলি,
“আমার সোনাটা! তুমি এখন খেয়ে একটু ঘুমাও। তারপর বিকালে আমরা ফুটবল খেলব।

“সত্যি তো।

“তিন সত্যি!
বলেই ইয়ানের কপালে চুমু খেলাম। ইয়ান খিলখিলিয়ে হেসে পিকু কে নিয়ে চলে। আমি ঘরে এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। খুব ঘুম পাচ্ছে! আমি চাইলে মা’র ফোন থেকে উনাকে ফোন করে জানাতে পারতাম। জানালাম না! চিন্তায় রাখলাম। একটু চিন্তায় থাকলে মানুষের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

বিছানায় শুয়ে পড়ার সাথে সাথে পাড়ি দিলাম ঘুমের রাজ্যে। কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম টের পেলাম না।
.
প্রায় অনেকক্ষণ ঘুমালাম। ঘুম যখন ভাঙল সামনে তাকিয়ে দেখি আহিয়ান আমার সামনে বসে আছে। আমি লাফ দিয়ে উঠে গেলাম। আহিয়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। খুব শান্ত লাগছিল তাকে। আমি বলে উঠি,

“আপনি চলে এসেছেন!

“হুম!

“আসলে আমার ফোনটা বন্ধ হয়ে গেছিল তাই..

“ঠিক আছে। হাত মুখ দিয়ে খেতে যাও।
বলেই উঠে গেলেন। সোজা গেলেন বেলকনির দিকে। আচ্ছা উনি কি রেগে আছেন।‌ রেগে থাকবে নাই‌ বা কেন। নির্ঘাত পাগলের মতো আমাকে খুঁজেছিল। আর আমি, আমি দায়িত্বহীনদের মতো কাজ করেছি।

আমি উঠে বেলকনিতে গেলাম। উনি দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছেন। উনি সচরাচর সিগারেট খান না। যখন অনেক টেনশন কিংবা রেগে থাকেন তখন’ই সিগারেট খান। আমি গুটিগুটি পায়ে উনার কাছে গেলাম। উনি চুপচাপ সামনে তাকিয়ে আছেন। আমি উনার পাশে দাঁড়িয়ে বলি,

“একটু দাদির বাসায় গিয়েছিলাম, খুব মনে পড়ছিল তাকে। ফোন সাইলেন্ট ছিল বলে বুঝতে পারি নি আপনি ফোন করেছেন। আর যখন বুঝলাম তখন’ই ফোন বন্ধ হয়ে গেল। তারপর বাসায় চলে এলাম।

উনি সিগারেটে টান দিয়ে সামনে ধোঁয়া উড়িয়ে বলেন,
“বাসায় ফোন ছিল না নাকি আমার নাম্বার মনে ছিল না।

বলেই শীতল চোখে আমার দিকে তাকালেন। প্রশ্নের জবাব ছিল না বলে মাথা নিচু করে ফেললাম। উনি কিছু না বলে দাড়িয়ে সিগারেট খেতে লাগলেন। অতঃপর সিগারেট এ শেষ টান দিয়ে আমার দিকে তাকান। বলে উঠেন,

“তুমি দায়িত্বহীন নও , যথেষ্ট ম্যাচিউর। তুমি হয়তো এভাবেই এমনটা করেছো। কিন্তু তোমার কোন ধারনা নেই আমি কতোটা চিন্তায় ছিলাম। পাগলের মতো শুধু খুঁজে যাচ্ছিলাম।‌ তোমাকে না পেয়ে বাসায় চলে এলাম। মা কে কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। মা যখন নিজেই বললো তুমি উপরে ঘুমিয়ে আছো ছুটে চলে এলাম।‌ দেখি তুমি ঘুমাচ্ছ। ইচ্ছে করলে পারতাম তোমার ঘুম ভাঙাতে কিন্তু ইচ্ছে হলো না। বসে রইলাম!

বলেই উনি চলে গেলেন। উনার কথায় অভিমান ছিল তবে আমার শুনতে বেশ ভালো লাগছিল। উনি যেতেই আমি মিটিমিটি করে হাসতে লাগলাম। উনি আমাকে নিয়ে কতোটা ভাবেন এটা নিয়ে কোন দ্বিধা নেই। এটা প্রথমবার নয় উনি বরাবরই আমাকে নিয়ে চিন্তা করেন।‌তখন আমি হয়তো এতোটা ভাবতাম না তবে আজকে কেন জানি বেশ লাগছিল। আকাশের দিকে তাকিয়ে বিশাল একটা নিঃশ্বাস ফেললাম। খুব ফুরফুরে লাগছিল। আমি নিশ্চিত উনি আমার রাগ গুলোই সিগারেট’এ ধোঁয়া ভেবে উড়িয়ে দিয়েছেন! এসব ভেবে হাসতে লাগলাম!
.
উনাকে খাবার বেড়ে দিয়ে নিজেও খেতে বসলাম। উনি খেতে খেতে বলেন,

“ভূতনি লবন দাও!

“এখানেই আছে নিয়ে নিন।

“তোমার কাছে তুমি দাও।

আমি লবনেল বাটি টা উনার কাছে এগিয়ে দিলাম। খানিকক্ষণ পর আবার বলেন,
“ভূতনি তরকারি বাটি টা দাও!

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি, কারন তরকারি বাটি উনার সামনেই। আমি বলে উঠি,

“এই যে!

“তরকারি প্লেটে দাও!

আমি উনার দিকে তাকিয়ে তরকারি উনার পাতে দিলাম। অতঃপর ভাতের লোকমা মুখে দিতে গেলাম উনি আবারো ডাকেন,

“ভূতনি..

আমি ভাত রেখে বলি,
“বদলা নিচ্ছেন।

“কিসের বদলা।

“এই যে আপনাকে এতো খাটিয়েছি বলে আপনি এখন আমাকে খাটাচ্ছেন।

উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
“তোমার ভাগ্য ভালো আমি তোমাকে বেশি কিছু বলি নি, তাহলে তুমি আজ যা করলে আমার সাথে।

“বেশ করেছি আবার করবো।
বলেই ঘুরে বসলাম। উনি হুট করে আমার চুল টেনে বলেন,

“করো, তখন তোমার চুল টেনে আমি ছিঁড়ে ফেলব। দেখো!

আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি ঘুরে বসলেন। আমিও মুখ ভেংচি কেটে খেতে বসলাম। খানিকক্ষণ বাদে আবারো বলেন,

“ভূতনি পানি দাও!
.
ইয়ানের সাথে খানিকক্ষণ আগেই খেললাম। এখন মা তাকে নিয়ে গেছে পড়াতে। আমিও টেবিলের কাছে চলে এলাম। ডায়রি বের করে তাতে লিখতে শুরু করলাম,

“আমার আর উনার ভালোবাসার একটা নাম দিয়েছি, আর সেই নাম হলো অপ্রকাশিত ভালোবাসা। অনেক ভেবে দেখলাম এই অপ্রকাশিত ভালোবাসা খারাপ না। আর এটা এক তরফা ভালোবাসা ও না। কারন আমি এখনো জানি না উনি আমাকে ভালোবাসেন কি না। আর জানতেও চাই না ওই যে বললাম ভয় করে।
কিন্তু এই প্রকাশিত ভালোবাসায় মাঝে একটা লাভ আছে। আর সেটা হলো এখানে কোন ভয় নেই। এখানে তাকে হারাবার ভয় নেই। আমি উনাকে ভালোবাসি নিছক একটা ফুলের মতো। আর উনার ভালোবাসা হলো, ফুলের ঘ্রাণ, এর শুভ্রতা আর স্নিগ্ধতার মতো। ফুলের ঘ্রাণ, শুভ্রতা আর স্নিগ্ধতা যেমন দেখা যায় না ঠিক তেমনি উনার ভালোবাসা অনুভব করা যায় তবে ছোঁয়া বা দেখা যায় না। আমিও উনার ভালোবাসা তেমনি অনুভব করি, প্রতিটা সময়ে,‌প্রতিটা মূহুর্তে! সবসময় উনার এই ভালোবাসার আবরনে নিজেকে আচ্ছাদিত রাখি। উনার ছায়ার মাঝে নিজের আশ্রয় পাই। উনার ভাবনায় নিজেকে পাই। তাহলে কি আমার সবটুকু ভালোবাসা শুধু উনার প্রাপ্য নয়!

এতো টুকু লেখার পর একটা দাড়ি টেনে লেখা শেষ করলাম। হঠাৎ করেই তখন উনার আওয়াজ পেলাম,

“ভূতনি কি করছো!

সাথে সাথে চমকে উঠলাম। পেছনে তাকিয়ে দেখি উনি দাঁড়িয়ে আছেন। আচ্ছা আমার লেখা পড়ে ফেলেননি তো উনি!

#চলবে….

#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৫৮

হঠাৎ করেই উনাকে দেখে চমকে উঠলাম। আমি দাঁড়িয়ে বলি,
“কি হয়েছে?

উনি কিছু খুঁজতে খুঁজতে বলে,
“আমার ফোনটা খুঁজে পাচ্ছি না দেখেছ তুমি!

আমি ততোক্ষণে ডায়রি টা ব্যাগে ঢুকিয়ে বলি,
“সারাদিন তো হাতে নিয়ে বসে থাকেন আর এখন বলছেন খুঁজে পাচ্ছেন না। ইয়ার্কি নাকি!

উনি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে হুট করেই আমার কাছে এসে বলে,
“মনে হচ্ছে তুমি কিছু করেছ? বলো কোথায় আমার ফোন!

উনার হুট করে কাছে আসাতে আমার অস্বস্তি লাগতে শুরু করল। আমি একটু সরে গিয়ে বলি,
“আমার তো আর কোন কাজ নেই, শেষে কি না আপনার ফোন নিয়ে বসে থাকবো!

উনি হুট করেই আমার হাত ধরে বলে,
“তাহলে পালিয়ে যাচ্ছো কেন? নির্ঘাত তুমিই কিছু করছো।

“আরে সত্যি কিছু করে নি।

“ভূতনি, ভালোই ভালোই বলছি বলে দিয়ে দাও।

“আরে আমি সত্যি কিছু করে নি

উনি কিছুক্ষণ কপাল কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“সত্যি কিছু করো নি।

আমি উনার হাত ছাড়িয়ে বলি,
“না করি নি আর এভাবে হুট করেই আমাকে ধরবেন না বুঝলেন!

“ফোন কোথায় তোমার, আমার নাম্বারে কল করো এখনি।

“আমার ফোন খুঁজতে হবে। আচ্ছা একটু দাঁড়ান।

অতঃপর আমার ফোন খুঁজে উনার নাম্বারে ফোন দিলাম। উনার ফোনে রিং হচ্ছে। উনি বলে উঠেন,

“ফোন বাজছে!

“বাজছে, অস্থির হবেন না। দেখুন ঘরে কোথাও থেকে শব্দ হয় কি না।

অতঃপর দুজনেই দেখতে লাগলাম। ফোনের রিং বাজার শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছ। আমরা দু’জনেই দরজার দিকে তাকালাম। ফোন হাতে নিয়ে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে ইয়ান ঢুকল ঘরে। ঘরে এসেই বলল,

“আহি তোমার ফোন বাজছে!

আমি উনার দিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে বলি,
“এই ফোন আমায় দিয়েছিলেন!

উনি ভেংচি কেটে ইয়ানের থেকে ফোন নিয়ে বলল,
“তুমি ছাড়া এই কাজ কেউ করতে পারে না

“আপনাকে আমি..

কিছু বলার আগেই ইয়ান কে কোলে নিয়ে বেরিয়ে গেল। বজ্জাত লোক একটা!
.
পরদিন দুপুরে,
আজ কি উপলক্ষে সরকারি ছুটির দিন ছিল বলে ভার্সিটি বন্ধ! এদিকে আগামীকাল ভার্সিটি খোলা হলেও পরশু অফ ডে তাই বন্ধ! অতঃপর তেমন কাজ না থাকায় দিনের মধ্যাহ্ন ভাগে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রোদ উপভোগ করছি। যদিও এই রোদ শীতের মতো না তবুও ভালোই লাগছে। তবে শুধু আমি না উনিও আছে। আমি বেলকনির এক কোনায় আর উনি এক কোনায়। উনি দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে আর তা বাতাসে উড়াচ্ছে। আমার হাতে একটা বই। হুমায়ূন আহমেদ এর বই মিসির আলির চশমা! গল্পটার আর কিছু পৃষ্ঠা এখনো বাকি।‌ তবে পড়ে বেশ মজা পাচ্ছি। এদিকে উনিও একবার আমার দিকে তাকান আবারো আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেট খেয়ে ধোঁয়া উড়িয়ে দেন। সূর্যের কিরন চারদিক আলো ছড়িয়ে দিয়ে দরুন দেখাচ্ছে। গরমের সময় সূর্যের আগমন জলদি হয়। গতকাল রাত বেশ বৃষ্টি হয়েছিল। ঠান্ডাও লাগছিল কিন্তু এখন সকাল হতেই একটু গরম লাগতে হলো।

উনি আমার কাছে এসে বলেন,
“ভূতনি চা নিয়ে এসো।

আমি ঘর থেকে বের হয়ে বই টা টেবিলের কাছে রেখে বের হতে নিলাম তখনই উনার ছায়া দেখতে পেলাম। ঠিক আমার সামনে উনার ছায়া। আমি দাঁড়িয়ে দেখছি উনার ছায়া কে। ভালো লাগছে এভাবে তার ছায়া কে দেখতে। হুট করেই একটা পাগলামি করে বসলাম। একটু চুমু খেলাম ছাড়ার কপালে। যদিও এটা একটু কঠিন ছিল কারন উনি আমার থেকে লম্বা। আমি সোফায় দাঁড়িয়ে উনার মাথায় একটা চুমু খেয়ে জলদি বের হয়ে গেলাম। এমন একটা কাজ করায় আমার শরীর শিউরে উঠলো। এটা কি ধরনের কাজ! খুব অদ্ভুত তবুও ভালো লাগছিল। মিটিমিটি হাসছিলাম আমি। অতঃপর দ্রুত উনার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এলাম। কিন্তু উনার ছায়া টা দেখতে পেলাম না। সে চলে গেল!
.
সকালে খাবার টেবিলেই মা জানাল আজ রাতে তারা বাসায় ফিরবে না। ইয়ানের বাড়িতে যাবে। আপু যেতে বলেছে। কাল অফ ডে, তখন যেন আমি আর আহিয়ান দুজনেই চলে যাই। আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম।

অতঃপর ভার্সিটিতে,

“তা তোদের এই অপ্রকাশিত ভালোবাসা কি প্রকাশ হবে না।
ভ্রু কুঁচকে‌ আমার দিকে তাকিয়ে ইতি বলল!

“আমি কি করে জানবো।

“তুই কি করে জানবি মানে..

“হ্যাঁ এটাই তো আমি কি করে জানবো

“গাধি একটা। ভাইয়া তোকে ঠিক’ই বলে ভূতনি। ওটাই তোর ঠিক নাম।

“😒

“আবার এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? ভুল বললাম নাকি। অপ্রকাশিত ভালোবাসা প্রকাশের জন্য তোকে গিয়ে তো বলতে হবে নাহ।

“আমি বলব!

“না আমি বলে গিয়ে..

“আরে রেগে যাচ্ছিস কেন?

“রাগব না কেন তুই বল। তুই বলছিস উনি আমাকে ভালোবাসে না, আচ্ছা তাই যদি হতো তাহলে এতো দিন তোর সাথে আছে কেন। তোকে বিয়ে করল’ই বা কেন। প্রথমবার নয়তো বাঁচানোর জন্য করেছে তাহলে আবার। আবারো তো বিয়ে করল তোকে। এরপর.. এরপর আর কিসের দরকার পরে তোকে ভাইয়া ভালোবাসে না আমাকে বল তো।

আমি কিছু না বলে চুপ করে বসে রইলাম। ইতি থেমে আমার পাশে বসল। শীতল গলায় আমাকে বলল,

“দেখ রাগ করিস না কথা গুলো তোর ভালোর জন্য’ই বলছি। ভালোবাসা ছাড়া কোন সম্পর্ক টিকে না

“আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম উনাকে।

“কি জিজ্ঞেস করেছিলি?

“উনি আমাকে ভালোবাসে কি না।

“কি বলেছিলো?

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি,
“কিছুই বলে নি, চলে গেলো।‌

ইতি কপালে হাত দিয়ে,
“হায়রে…

“ধুর, আর ভালো লাগছে না!

বলেই উঠে চলে এলাম। সামনে আসতেই আরেকটা ধাক্কা খেলাম। আহিয়ান আর নিতি। বাহ দুজন একসাথে মুখোমুখি দাঁড়ানো, চোখাচোখি! কি প্রেম আলাপ করেছে নাকি।‌ আমিও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ওদের দেখতে লাগলাম।

বলা বাহুল্য আহিয়ান একবার ও চোখ ফিরাচ্ছে না। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়েই আছে। কথাও বলছে। এতো কিসের কথা। এদিকে রাগে আমার শরীর জ্বলছে। কেন জানি আজ সহ্য হচ্ছে না আমার। দুজনকে এভাবে একসাথে দেখে মেনে নিতে পারছি না। না আর না দাঁড়িয়ে ব্যাগ টা শক্ত করে ধরে হাঁটা ধরলাম। এর মাঝেই ইতি এসে জিজ্ঞেস করল,

“কিরে কোথায় যাচ্ছিস!

“জরুরী কাজ করতে!
বলেই দ্রুত হেঁটে চলে এলাম আহিয়ানের কাছে। আহিয়ান আমার দিকে একবার তাকিয়ে বলল,

“কিছু বলবে!

“হ্যাঁ কথা আছে।

“আচ্ছা ১ মিনিট!

বলেই আবারো নিতির দিকে ফিরল। আমার রাগ চরম শিখরে উঠে গেল। আমি সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও উনি নিতির সাথে কথা বলতে চাইছে। আমি হুট করেই তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে গেলাম।‌আহিয়ান ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বলে উঠি,

“জরুরি কথা আছে আপনার সাথে!

বলেই উনার হাত থেকে সেখান থেকে নিয়ে আসি!
.
ক্যান্টিনে বসে হাতে গরম চা নিয়ে একবার একবার করে চুমুক দিচ্ছে আরেকবার আমাকে দেখছে। আমি টেবিলে মাথা রেখে সামনে গরম চায়ের কাপ থেকে ধোঁয়া উড়ে যাওয়া দেখছি! একটু একটু করে উনাকেও দেখছিলাম। উনার অবস্থান দেখছিলাম আর কি। উনি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলেন,

“তুমি কি সত্যি কিছু বলবে!

নিচু গলায়,
“হুম!

“তাহলে বলো।

বির বির করে বলি,
“কিভাবে বলবো বুঝতেই পারছি না।

“আচ্ছা তুমি না বললে আমি উঠে গেলাম।

আমি উঠে বলি,
“এই না যাবেন না, একটু বসুন।

“কখন থেকেই তো বসে আছি।

আমি বাইরে তাকিয়ে দেখি ইতি দাঁড়ানো। আমি বলে উঠি,
“আচ্ছা আর ৩ মিনিট!

উনার ঘড়ির দিকে তাকালেন। আমি ইতি কে দেখছি। ইশারায় বলছে বলতে কিন্তু কি বলবো বুঝতেই পারছি না। এদিকে উনি বলে উঠেন,

“তোমার সময় শুরু হয়ে গেছে।

“হ্যাঁ..

“বলছি তোমার ৩ মিনিট শুরু হয়ে গেছে। ৩ মিনিট হলেই আমি চলে যাবো।

“চলে যাবেন।

“হুম!

বলেই আবারো চায়ের কাপে চুমুক দিলেন। এদিকে আমি বুঝতে পারছি না কি বলবো। ওদিকে ইতি ইশারায় জিজ্ঞেস করছে বলতে। আবার টাইম ও চলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে মাঝ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি আমি। আহিয়ান বলে উঠল,

“এক মিনিট চলে গেছে!

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠি,
“আচ্ছা আহিয়ান আপনি কাউকে ভালোবাসেন।

আমার এই কথায় মনে হলো সময় থমকে গেল। উনি খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,

“তুমি এই কথা বলতে চেয়েছিল!

“হুম!

“তোমার মনে হয় আমি নিতিকে ভালোবাসি।

“আরে না না একদমই না।

“না হলে জিজ্ঞেস কেন করতে, একটু আগে নিতির সাথে ছিলাম বলেই তুমি জিজ্ঞেস করলে নাহ। তাহলে শোন, আমি ওর সাথে একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছিলাম আর সেটা পড়াশোনার এর বেশি কিছু না।

“না না আহিয়ান বুঝতে পারছেন। আসলে এই কথাটা আমার মাথায় অনেকক্ষন ধরেই চলছিল!
বলতে বলতে পিছনে তাকালাম। ইতি ইশারা করেই যাচ্ছে। হঠাৎ উনি পিছনে ফিরলেন। ইতি উনাকে দেখে মাথায় হাত দিয়ে পিছনে ঘুরে গেলেন। উনি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,

“হুম ভালোবাসি একজন কে!

আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। আমি অবাক স্বরে বলি,

“আপনি ভালোবাসেন কাউকে!

“হ্যাঁ বাসি!

“কে সে ? আমি কি তাকে চিনি,‌ আপনি কতোদিন ধরে ভালোবাসেন তাকে।

“না তুমি চিনো না। অনেক দিন ধরেই ভালোবাসি!

আমি মুখ টা নিচু করে বলি,
“ওহ্ আচ্ছা!

“তুমি কাকে ভালোবাসে!

“কাউকে না।

“ওহ ভালো তো! তবে আমি যাকে ভালোবাসি সে এখানে নেই!

বলেই উনি উঠে গেলেন। আমিও সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম। পেছন থেকে জিজ্ঞেস করলাম,

“কে সে? এখন কোথায় আসে সে!

উনি পিছনে ফিরে বলেন,
“তোমার ৩ মিনিট শেষ!

বলেই বের হয়ে যান। আমিও ব্যাগ টা নিয়ে উনার পিছন পিছন বের হয়ে আসি। দেখি উনি ইতির মাথায় হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করেন,

“কি করছিলে এখানে!

“আমি ভাইয়া, আসলে তেমন কিছু না। নিহার কাছে এসেছিলাম!

আমি বলে উঠি,
“আপনি আমার কথার জবাব দিলেন না আহিয়ান।

“তোমার সময় শেষ, এখন বাসায় যেতে হবে চলো।
অতঃপর ইতির দিকে তাকিয়ে বলেন,

“পরে দেখা হবে ইতি!

“জ্বি ভাইয়া!

“ভূতনি আসো!

আমি বলে উঠি,
“আপনি বলবেন না!

“তোমার সময় একটু বেশি নেওয়া দরকার ছিল তাহলে হয়তো জানতে পারতে।

“দেখুন আপনি না বললে আমি বাসায় যাবো না কিন্তু!

“ঝগড়া না করে আসো।

“আমি যাবো না।

“বাসায় যাবে না তো কোথায় যাবে, কোথায় গিয়ে থাকবে।

আমি ইতির হাত ধরে বলি,
“ইতির বাসায় যাবো। সেখানেই আজ থাকবো। যাবো আপনার বাসায়।

“তোমার ইচ্ছা!
বলেই উনি চলে গেলেন। উনার এতো ভাব দেখে খুব রাগ হচ্ছিল। মন তো চাচ্ছিল উনার মাথা ফাটিয়ে দিতে। অসভ্য, গোমরামুখো লোক একটা!
.
ইতির সাথে চলে এলাম ইতির বাসায়। এসেই বিছানায় ধপাস করে বসে পড়লাম। রাগে আমার পুরো শরীর জ্বলছে। ইতি আমাকে দেখে বলল,

“আরাম করে কতোক্ষণ বিছানায় বস, শান্ত হ!

আমি ওর দিকে তাকিয়ে আসন পেতে বিছানার মাঝে বসলাম। ইতি হেসে বলল,

“তোর রাগ তো দেখি সপ্তাকাশে!

“দেখ মজা করবি না।

“আহা ভাইয়ার বিরহে আমার বান্ধবী টা শুকিয়ে যাচ্ছ।

“ইতি কি বাচ্চি!

আমার কথায় ইতি দৌড় দিল। আমিও ওর পিছনে দৌড়াতে লাগলাম। দৌড়াতে দৌড়াতে দুজনেই নিচে চলে এলাম। ইতি এসেই আন্টির পিছনে লুকিয়ে পরল। আমি ওকে বলি,

“বের হ।

“মার খেতে!

“আন্টি একটু সরুন সামনে থেকে, আজ ইতির খবর আছে।

আন্টি বলে উঠে,
“আরে কি শুরু করলি তোরা!

ইতি বলে উঠে,
“আমাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, ভাইয়ার সাথে ঝগড়া তুই করেছিস!

আন্টি বলে উঠে,
“কি ঝগড়া করেছিস কার সাথে, নিহা আহির সাথে ঝগড়া হয়েছে তোর।

“না আন্টি মানে…

ইতি টি টেবিল থেকে একটা আপেল নিয়ে সোফায় বসে খেতে খেতে বলে,
“শুধু ঝগড়া, বলেছে আজ রাতে এখানেই থাকবে।

আমি চোখ রাঙিয়ে ইতির দিকে তাকিয়ে আছি। আন্টি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“তা বেশ থাকুক না, কিন্তু একটা কথা শোন স্বামী স্ত্রীর মাঝে এসব ঝগড়া হয়েই থাকে কিন্তু এসব দ্বন্দ্ব দীর্ঘস্থায়ী হলে সম্পর্কে মরিচা ধরে।

“বুঝেছি আন্টি।

“যাও হাত মুখ ধুয়ে এসো আমি খাবার বাড়ছি!

বলেই আন্টি চলে গেল। ইতি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“বুঝলি তো স্বামী স্ত্রী!

আমি কুশন নিয়ে ওকে মেরে বলি,
“চুপ থাক বেয়াদব মেয়ে!

বলেই উপরে চলে এলাম। অতঃপর হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ইতিদের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি।
বেশ গরম পড়ছে কদিন ধরে। বৈশাখ মাস তাই এই দশা। বাইরে কাঠফাঁটা রোদ্দুর! কোথাও একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা নেই। সবকিছু’ই নিরব।‌ হঠাৎ করেই ইতি এসে পেছন থেকে আমাকে জরিয়ে ধরে ঘাড়ে থিতুনি রেখে বলল,

“ভাইয়া আসবে না বুঝলি!

“চুপ করবি তুই।

“আচ্ছা চুপ করলাম। আম্মু খেতে ডাকছে চল।

“ইচ্ছে করছে না।

“না করলেও খেতে হবে, আয়!

বলেই টানতে টানতে নিয়ে গেল।‌ ভাতের থালা নিয়ে বসে আছি। কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না। আচ্ছা উনি খেয়েছেন তো। বাসায় তো মা নেই তবে সার্ভেন্ট আছে। রান্না করাই থাকবে কিন্তু উনি খাবেন তো।

ইতি আমাকে খোঁচা মেরে বলে,
“কি ভাবছিস এতো, ভাইয়ার কথা! খেয়েছে কি না।

আমি ভাতের লোকমা মুখে তুলে বলি,
“খাবে না মানে, গিয়ে দেখ খেয়ে ঘুমিয়ে আছে। উনি খাবেন না কেন উনার কি দায় পড়েছে।

“দায় তো পড়েছে তোর। চাইলে ফোন করে খবর নিতে পারিস।

“দরকার নেই!.

বলতে বলতে ইতির ফোন বেজে উঠল। ইতির মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে আকাশ ভাইয়ার ফোন। ভাগ্যিস আন্টি এখন সামনে নেই।‌খাবার দিয়েই চলে গেছে নাহলে এই মেয়ের বেহায়াপনা দেখলে মাথা ঘুরে যেত!
.
কোনমতে খাবার খেয়ে জানালার কাছে এসে দাঁড়ালাম। আকাশের অবস্থা ভালো না। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে কিন্তু খানিকক্ষণ আগেই দেখেছিলাম রোদ্দুর আর এখন মেঘে আচ্ছাদিত। ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। আমি এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। ইতি সোফায় শুয়ে কথা বলছে। ওকে দেখতে দেখতে’ই একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম!

ঘুম ভেঙে ঘড়ির দিকে তাকাতেই আমার চক্ষু চড়কগাছ! ৭ টা বেজে গেছে। আমি এতোক্ষণ ঘুমোলাম কিভাবে আর কেউ ডাকলোও না। ডাকবে কে? ইতি তো সোফায়’ই ঘুমিয়ে পড়েছে।
হঠাৎ করেই ফোনের কথা মাথায় এলো। জলদি করে ফোনটা খুঁজে চেক করলাম উনি ফোন করেছেন কি না। কিন্তু আমার কপাল পোড়া উনার একটা ফোন তো দূর কোন মেসেজ ও নেই। রেখে গিয়ে ফোনটা বন্ধ করে রেখে দিলাম। লাগবে না উনার ফোন করা। কি করবো ভেবে না পেয়ে একটা গল্পের বই নিয়ে বসলাম। পড়তে শুরু করলাম বই টা…
.
সামনে তাকিয়ে দেখি আহিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। তার পড়নে তার কালো রঙের শার্ট। শার্টের হাতা ফোল্ট করতে করতে আমার কাছে আসছে উনি। আমি ঘামছি। প্রচুর ঘামছি। কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে। এতো ঘামার একটা কারন হলো আমি বেশ টেনশনে আছি। তার সাথে খেয়াল করলাম আমার শরীর ও কাঁপছে। আহিয়ান আমার কাছে আসতেই আমি মুখ ফুটে বলে উঠি,

“আহিয়ান আপনি কাকে ভালোবাসেন!

আহিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
“ভালোবাসি একটা মেয়ে কে!
বলেই মুখটা ফিরিয়ে নিলো। আমি এতো টেনশনে’র মাঝে উনার সামনে দাঁড়িয়ে বলি,

“আপনি কি এখন তার সাথে দেখা করতে যাবেন!

কথাটা বলার সময় আমার গলা ভারী হয়ে যাচ্ছিল। চোখে পানি ছলছল করছিল। যেন এখনি যদি উনি হ্যাঁ বলেন তাহলেই আমি কেঁদে দেব। উনি হেসে আমার গালে হাত রেখে বলেন,

“তুমি জানতে চাইবে না সেই মেয়েটা কে?

আমি উনার হাত শক্ত করে ধরে বলি,
“না আমি জানতে চাই না, জানার কোন ইচ্ছে নেই। আপনি আমার কথা শুনুন। আমি আপনাকে ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি আহিয়ান! প্লিজ ছেড়ে যাবেন না আমায়!

বলতে বলতে কেঁদে দিলাম। আহিয়ান আমার অশ্রু মুছে আমার গালে হাত রেখে বলল,

“যদি বলি আমার সেই ভালোবাসার মেয়েটা তুমি!

তার কথা শুনে আমার চোখের পানি স্তব্ধ হয়ে গেল। আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি উনার দিকে। উনি আমার কাছে আসছেন। অনেক কাছে। উনার আর আমার মাঝে আর বিন্দুমাত্র জায়গা নেই অথচ আমি সরে যাচ্ছি না। দাঁড়িয়ে আছি। নিজেকে বেহায়া বলে মনে হলো। মাথা নিচু করে সরে যেতে নিলেই উনি এক হাত দিয়ে আমার কোমর টেনে ধরে নিজের কাছে টেনে নিলেন। বলে উঠেন,

“কোথায় পালিয়ে যাচ্ছো, এই না তুমি বললে তুমি আমাকে ভালোবাসো! তো..

“আহিয়ান আমি…
কিছু বলার আগেই আহিয়ান আমার ঠোঁটের মাঝে আঙ্গুল রাখল। আমার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলল,

“চুপ থাকো, আমাকে বলতে দাও!

উনার কথায় আমি চুপ হয়ে গেলাম। উনি আমার ঘাড়ের কাছে চুল সরিয়ে সেখানে আলতো করে একটা চুমু খেলেন। আমি আঁকড়ে ধরলাম উনার শার্টটা! হঠাৎ করেই তখন বৃষ্টি শুরু হলো। বৃষ্টি পড়ছে আমার উপর। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। এ কি করে সম্ভব! বৃষ্টি কেন পড়ছে আমার উপর। আমরা তো ঘরে! হঠাৎ করেই লাফিয়ে উঠলাম। এতোক্ষণে বুঝতে পারলাম এটা একটা স্বপ্ন ছিল। সামনে তাকিয়ে দেখি ইতি দাঁড়ানোর। ওর হাতে পানির গ্লাস। বৃষ্টি’র ব্যাপারটা এতোক্ষণে মাথায় ঢুকল। আমি রেগে ইতি কে বলি,

“কি করলি এটা তুই!

“কখন থেকে ডাকছি, উঠছিলি না তাই আর কি?

“তোকে তো আমি, তোর জন্য আমার স্বপ্ন টা পূরন হলো না।

“ওহ আচ্ছা ভাইয়া কে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলি। বাহ ভালোই তো তা কি দেখলি।

“তোকে বলছি!
বলেই ওর হাত ধরলাম। ইতি বলে উঠে,

“নিহা না একদম না!

আমি হেসে ইতি কে টেনে বিছানায় ফেললাম। অতঃপর ওকে কাতুকুতু দিতে লাগলাম। ইতি হেসে বলল,

“নিহা ছাড়।

“অনেক জ্বালিয়েছিস আমাকে, তুই পুরো আমার স্বপ্নে জল ঢেলে দিলি।

“আরে শোন তো ( হাসতে হাসতে ) আমি না ভাইয়া বলেছিল আমাকে এমনটা করতে, তাই করেছি।

আমি বলে উঠি,
“আহিয়ান! উনি!

“হ্যাঁ ফোন করেছিল, তোর কথা জিজ্ঞেস করছিল। বলছি তুই ঘুমাচ্ছিস তখন বলল ঘুমের মধ্যে যেন তোর গায়ে জল ঢেলে দিই।

“আর তুই রাজিও হয়ে গেলি বাহ!

বলেই মুখ ফিরিয়ে বসে রইলাম। ইতি আমাকে খোঁচা দিয়ে বলল,

“আহ রাগ করে থাকবি নাকি। জিজ্ঞেস করবি না কেন ফোন করেছিল।

“না দরকার নেই, জেনে কি করব।

“ভেবে বলছিস তো।

“হুম
বলেই চলে এলাম ওয়াশরুম এ। মুখে পানি ছিটিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছি। চোখ বন্ধ করে বসে পড়লাম। খুব জানতে ইচ্ছে করছে কেন উনি ফোন করলেন কিন্তু এখন ইতি কে জিজ্ঞেস করলেই আমার মান সম্মান খাবে ছেড়ি টা। ধুর ভালো লাগেনা কিন্তু জিজ্ঞেস না করেও পারছি না।
আমি তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে ইতির পাশে এসে বসলাম। ইতি আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসে। অতঃপর…

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here