#অরুর_সংসার
#পর্বঃ২৯
লেখিকাঃ তানহা ইসলাম(ছদ্মনাম-নিশিকথা)
_____________________
অয়ন কেবিনে আধাশোয়া হয়ে আছে….
ডঃ ফাইয়াজ কেবিনে ঢুকতে যাবে অরু বের হল……..
-কি হয়েছে ডাক্তার?? উনি এখনো হাটতে পারছেন না কেন??
হাত নাড়াতে পারছেন না কেন?? আপনি তো বলেছিলেন উনি আজকের পর স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারবেন …. তাহলে??
– …………………..
-কি হল চুপ কেন?উনার রিপোর্ট ও তো নরমাল বলেছিলেন……
-রিপোর্ট এখনো নরমাল ই দেখাচ্ছে… কিন্তু!!!!
-কিন্তু কি ডাক্তার??
-আমার মনে হচ্ছে অয়ন স্যার আর কোন দিন হাটতে পারবে না…….
– …………….? (চোখে পানি টলমল অবস্থায় ডাক্তারের দিকে জিজ্ঞাসু নজরে তাকিয়ে আছে অরু….
-এক্সে রিপোর্ট নরমাল ই ছিল কিন্তু উনার স্নায়ুবিক প্রব্লেম হয়েছে…. এক্সিডেন্ট এর মাঝেই উনি স্টোক করেছিলেন…. নিজের জীবন যায় যায় মোমেন্টে স্নায়ুকে অনেক চাপ পড়েছে তার…..আর মেবি
মেন্টালি ডিপ্রেড ছিলেন ওই সময় …জানেন তো স্নায়ুকোষ ই সারা শরীরের প্রতিটি অঙ্গের চলাচল নিয়ন্ত্রন করে .মানুষের পশ্চাৎ মস্তিস্কের খন্ডিতাংশ হল সেরিবেলাম….আর এই সেরিবেলাম ই মানুষের চলাচলের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রন করে। স্যার ওভারঅল প্যারালাইজড হন নি ঠিক ই তবে তার ডান হাতের আর বাম পায়ের স্নায়ুকলা গুলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে……. That’s why…….
এর বেশি সহজে আপনাকে আমি বুঝাতে পারবো না।
ডঃফাইয়াজ এর এরূপ কথা শুনে অরু দুই কদম পিছিয়ে গেল…..
ভ্রু কুচকে অরু তাকিয়ে আছে ফাইয়াজ এর দিকে …..
– I am sorry Mrs.Hussain
-উনি কি জীবনেও আর হাটতে পারবে না?
-Possibility 50-50
লাইফে এক টাইমে সুস্থ হয়েও যেতে পারেন আবার নাও….
অরু চুপ করে কিছুক্ষন বুকে হাত দিয়ে দাড়িয়ে থাকলো…….
-ডক্টর!!
-জ্বি বলেন
-ভিতরে গিয়ে উনি একদম সুস্থ আছেন এবং কিছুদিনের মধ্যে হাটতে পারবেন এটাই বলবেন!
-মানে কি? মিথ্যা আশা দিতে চান নিজের স্বামী কে?
-নাহ এটাই সত্যি আমি প্রমান করে দেখাবো
-আমরা কি ট্রাই করি নি??
-করেছেন।আমিও করবো
-লাভ হবে না
-দেখা যাক
-আজব যা আমি এত সাক্সেস্ফুল ডক্টর হয়ে পারি নি সেটা আপনি পারবেন???
-ইনশাআল্লাহ… পারবো। আপনি পারেন নি বা আশা দিচ্ছেন না কারন আপনি উনার স্ত্রু নন একজন ডক্টর……
-ওকে বেস্ট অফ লাক
-হুম
কেবিনের ভিতরে হুইল চেয়ারে করে দরজার কাছে এসে সব কথাই অয়ন….. চোখ থেকে ২ ফোটা পানি বের হল অয়নের…. সাথী চৌধুরী ছেড়ে চলে যাবার দিনের পর থেকে অয়ন কোন দিন কাঁদে নি। কাঁদতে যেন ভুলেই গেছিল। এক্সিডেন্ট এর পরদিন অরুর তার প্রতি অপার ভালবাসা দেখে সেদিন ২ ফোটা পানি পড়েছিল অয়নের এত বছরে…. আর আজ!! আজ কেন যেন চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে তার।নিজের অসহায়িত্বে নাকি অরুর ভালবাসার গভীরতা পরিমাপ করে?? জানা নেই…………
ডঃফাইয়াজ কে ঢুকতে দেখে অয়ন নিজেকে সামলে নিল।
-রিপোর্ট নরমাল। খুব দ্রুত আপনি হাটতে পারবেন স্যার।
-Okay doc done
-Ok take care
-sure
……………
অরু অয়নকে ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো। অয়ন ডান পায়ে স্টিক এর সাহায্যে হাটছে পা টেনে টেনে, ডান হাত তার অসার।
হটাৎ…!! অয়ন থেমে গেল…
-কি হল??
-তুমি চেকআপ করাবা না??
-না থাক
-কেন?
-আর ১৫ দিন পর আসবো
-১৫দিন পরেই কেন?
-৭মাস হবে তখন। তখন আসবো
-১৫ দিন পরে আবার এসো এখন চল গিয়ে একটা রুটিন চেক আপ করায় নেও
-হু
অরু অয়ন চেক আপ করায় বাড়ী ফিরলো…. অরুর বাবু আর অরু দুইজন ই সুস্থ আছে…….
সাড়ে ৬ মাস চলছে অরুর….. অরু আর বাবু সুস্থ আছে শুনে কেন জানি অয়নের বুকে শান্তির ছোঁয়া মিলল…. যেন সে নিজের সব কষ্ট ভুলে গিয়েছিল কয়েক মুহুর্তের জন্য……..
এদিকে আরোহীকে হাসপাতালে এডমিট করা হয়েছে……. বিকালে ডেলিভারি তার…. সাদ,অহনা,রাজ, নিসাদ হুসাইন সবাই আছে হাসপাতালে অনিকের সাথে। রুশা বাসায় মৌ এর কাছে…….
বলতে গেলে অনিক ২য় বার বাবা হতে চলেছে তবে ভয় যেন তার একই রকম লাগছে….. টেনশনে কাঁপছে অনিক।এও যেন এক অসাধারন অনুভুতি ♥
সন্ধা ৬:৩০..অয়ন ঘুমিয়ে আছে….. অয়নকে নিজের হাতে খাইয়ে, ওষুধ দিয়ে ঘুম পরিয়েছে অরু…. অয়নের পাশে বসে অরু ভাবছে কিছু কথা….কিভাবে সে তার স্বামীকে সুস্থ করবে? কিভাবে আগের মত করে তুলবে সে অয়নকে??? পারবে তো অরু??
না হার মানলে চলবে না। সে তো অয়নের স্ত্রি। অয়নের বুকের পাঁজরের হাড় দিয়ে গড়েছেন মহান আল্লাহ রব্বুল আলআমীন তাকে…….অরু নিজের সেবা আর ভালবাসা দিয়ে অয়নকে সুস্থ করে তুলবে.!
আর দেরী করলে চলবে না অরুর…..দ্রুত কাজে লেগে পরতে হবে কেননা আর এক, দেড় মাস পর তো সে নড়তেই পারবে না ঠিক মত।অরুর ঘাড়ে যে তার জীবনের সব থেকে মূল্যবান দুইজন মানুষকে সুস্থ রাখার দায়িত্ব।ফোনের শব্দে ভাবনায় ছেদ ঘটে অরুর।অয়নও ফোনের শব্দে ঘুম থেকে উঠে গেছে। অরু ফোন রিসিভ করে হেসে দেয়!
-আলহামদুলিল্লাহ ♥
-অরু কি হয়েছে
-মেয়ে।
-আলহামদুলিল্লাহ আমি আবার মামা হলাম
-হুম।আমিও মামি হলাম
♥
♥♥
♥
♥♥
♥
সময় এভাবেই কাটতে থাকে……. চলতে থাকে অরুর সংসার……
দেখতে দেখতে আরো দেড় মাস পার হয়ে গেল তাদের জীবনে।
এখন অয়ন পুরোপুরি সুস্থ সবল…হাটতে পারে,হাত নাড়াতে পারে।কোন সমস্যা হয় না তার.. বলতে গেলে অয়ন এখন পুরোই আগের মত শরীরের দিক থেকে। আর মনের দিক থেকে কি আগের মতই? ।অয়ন যে আজ মাত্র দেড় মাসে সুস্থ তা পুরোটাই তার স্ত্রি অরুর কারনে। এই দেড় মাসে প্রতি মুহুর্তে অরুর ভালবাসা,সেবা, যত্ন আজ অয়নকে সুস্থ করে তুলতে সক্ষম হয়েছে! অয়ন দিনের পর দিন অরুকে দেখে শুধুই অবাক হয়েছে। এই মেয়ে নারীর কোন রূপ? নিজের মায়ের আসল রুপ দেখার পর আর কোন নারীর রুপ দেখতে চায় নি অয়ন।তবে আজ পরিস্থিতি তাকে একোন নারীর রূপ দেখালো তার স্ত্রি রূপে?? এই নারীকে সে কি বলে সম্বন্ধন করবে?? মহীয়সী নাকি সম্পুর্ণা??
এই দেড় মাসে অন্তঃসত্বা অবস্থায় অরু তার জানপ্রান এক করে অয়নের সেবা করেছে। প্রেগন্যান্সির সাত মাসে পা রাখার পর থেকে হুটহাট করে বাবু লাথি যখন মারতো অরুর বোধহয় জান টা বের হয়ে যেত…. পেটে হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠতো সে।অয়ন তো খুব ভয় পেয়ে যেত তখন….পরমুহুর্তেই অরু হেসে দিত। বলতো ….. ♥”আরে আম্মু টা লাথিটা আস্তে দিতে পারিস না? এত জোরে কেউ দেয়??
ডাক্তার বলেছে তুই মেয়ে।থাক তুই জলদি আয় আমার ঘরে লক্ষি হয়ে। আমি জানি তুই এভাবে নাড়াচাড়া আর লাথি দিয়ে আমাকে আভাস দিস যে তুই সুস্থ আছিস ভাল আছিস “♥
অরুর এমন কথা শুনে অয়ন কতই না লুকিয়ে চোখের জল মুছেছে….
যে মেয়েদের সে দুরদুর করতো আজ তার ছোট্ট অংশ টা মেয়ে রূপে অরুর গর্ভে একটু একটু করে বড় হচ্ছে। অরু দের মাস আগে সেদিন রাতেই বিভিন্ন ডাক্তার এর সাথে কথা বলে সেই অনুযায়ী অয়নের যত্ন নিয়েছে। বেস্ট ফিজিসিয়ান ফর্মুলার অর্গান অয়েল দিয়ে ২বেলা অয়নের বাম হাত আর ডান পা ম্যাসাজ করেছে থ্যারাপির মত…
অয়নের খাওয়া থেকে শুরু করে গোছল, কাপড় পাল্টানো সব অরু ৭ মাসের পেট নিয়ে একা হাতে করেছে… অয়নের জন্য কত রাত জেগে তাহাজ্জুদ নামায সহ নফল নামায আদায় করেছে, চোখের জন গেলেছে ঠিক নেই।রোজ ফযরের সময় অয়নের ঘুম ভাংগে অরুর কুরআন তিলাওয়াতের আওয়াজে…. ♥
আজ অরু অয়নকে স্বামি স্ত্রির সম্পর্ক নিয়ে বলা তার ৩ টা কথার প্রমান হাতেনাতে দিয়েছে। অরুর প্রতি এখন অয়নের মনে সম্মান আর ভরসার অবিচ্ছিন্ন প্রাচীর গড়ে উঠেছে….. তবে ভালবাসা???
চলবে………..