#তুই_শুধু_আমার 💕
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Last_part
ইশান কখন থেকে কেঁদেই যাচ্ছে। ইশা ইশানের কাছে যেতে চাইলেও যেতে পারছে না আশিকের লোকদের জন্য। ইশা কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। জিসানকেও আশিকের লোক বেঁধে রেখেছে। আশিক জিসানের মুখোমুখি হয়ে বলে।
–তুই কি ভেবেছিলি জিসান আমি চলে যাবো ইশার জীবন থেকে কখন না। আরে আমি তো আমার ইশাকে ভালোবাসি তাহলে ছেড়ে যাওয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না।
জিসান দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
–এক বার আমার হাতের বাঁধনটা খুলে দে তারপর তোকে ঠিক আগে যেভাব কু’কু’রের মতো করে মেরেছিলাম ঠিক এখনও তোকে এভাবে মারবো।
–কি বললি আমাকে কু’কু:রে’র মতো করে মারবি। আমি চাইলে না তোকে?এখন কু’কু’রের মতো করে মারতে পারি। কিন্তু না এটা আমি করবো না।
–কি বললি তুই? মারবি না আমাকে?
–হ্যাঁ বরবো। তুই জেনে গেছিলি না আগে যে আমি ইশাকে ভালোবাসতাম আর তখনেই তুই তোর দলবল নিয়ে আমাকে মেরে এই শহর ছাড়া করলি। কিন্তু আমি তোর মতো এত দয়ালু না রে যে তোকে বাচিয়ে রাখবো। তোকে আমি এই পৃথিবী ছাড়া করবো।
ইশা এই কথাটা শুনে চিৎকার করে বলে।
–নাহ! আপনি একদম হাত দিবেন না ওদের গায়ে।
আশিক মুচকি হেসে ইশার দিকে ফিরে বলে।
–ঠিক আছে সোনা আমি ওদের গায়ে হাত দিবো না কারন তুমি কষ্ট পাবে বলে। আর আমি তোমার কষ্ট একদম সহ্য করতে পারি। তোমাকে ওই রাহুল কষ্ট দিয়েছিল না তাই আমি ওকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছি।
–মানে! তার মানে আপনি রাহুলকে খু’ন করেছেন আর সেই খু’নের সাজা পাচ্ছে রুহি।
–হ্যাঁ সোনা হ্যাঁ। তুমি খুব বুদ্ধিমতি না বললেও সব বুঝে যাও।
ইশান কান্না করতে করতে বলে।
–মামাম্ম আমাকে তোমার কাছে নাও প্লিজ। এই আঙ্গেলটা খুব খারাপ আমাকে এখানে তুলে এনেছে।
ইশা ইশানের কাছে আসতে চাইলে আশিকে রেগে বলে উঠে।
–একদম না! ওদের কাছে যাওয়ার চেষ্টাও করবে না তার ফল কিন্তু ভালো হবে না।
–আশিক ইশানকে ছেড়ে দে বলছি। না হলে কিন্তু ভালো হবে না। আর ইশান তো তোর কোনো ক্ষতি করে নি। তুই ইশানকে ছেড়ে দে আর আমাকে মেরে ফেল তোর সব শত্রুতা তো আমার সাথে।
আশিক জিসানের এমন কথা শুনে বাকা হেসে বলে।
–চল একটা গেইম খেলি ইশাকে নিয়ে কি বলিস? আর ইশানকে আমি কিছু করবো না ও তো একটা শিশু। ওকে যদি আমি কিছু করি তাহলে ওপরওয়ালা তো আমাকে ক্ষমা করবে না ।
জিসান হুংকার দিয়ে বলে।
–আশিক কু*ত্তার বাচ্চা ওর গায়ে একদম হাত দিবি না।
আশিক নাক মুখ কুচকে বলে।
–উফফ তোর সেই পুরোনো গা’লি। নতুন কোনো গা’লি দে এই গা’লি তোর মুখে শুনতে শুনতে আমি বোর হয়ে গেছি।
–প্লিজ আপনি ওদের ছেড়ে দেন আমি হাত জোড় করে বলছি আপনাকে।
আশিক ইশার কথা শুনে নরম গলায় বলে।
–আরে না না তুমি কেন হাত জোড় করবে বলো। আচ্ছা তুমি চাও তো ওদেরকে আমি ছেড়ে দেই।
–হে চাই প্লিজ ছেড়ে দেন ওদেরকে।
–ঠিক আছে আমি ওদেরকে ছেড়ে দেবো। কিন্তু তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।
–কি?
–ইশু! তুই ওর কোনো কথায় রাজি হবি না।
জিসানের কথা শুনে ইশা বলে।
–না আমাকে ওর কথা শুনতেই হবে। প্লিজ তুমি আর আমাকে বাধা দিও না।
–গুড গার্ল! আচ্ছা আগে বলো তুমি কাকে চাও ওদের দুজনের মধ্যে। জিসান নাকি ইশানকে।
ইশা আশিকের কথা শুনে আবাক হয়ে বলে।
–মানে?
–মানেটা হলো গিয়ে তোমাকে দুজনের মধ্যে একজন বেছে নিতে হবে। আর তুমি যাকে বেছে নিবে সে বেঁচে যাবে আর যাকে বেছে নিবে না তাকে তুমি নিজের হাতে গু’লি করবে। আর যদি তুমি না গু’লি করো তাহলে আমি ওদের দুজনকেই মেরে দিবো।
–নাহ। আমি পারবো না এটা করতে প্লিজ এমনটা করবেন না প্লিজ
–তোমার হাতে দুইটা রাস্তা খোলা আছে এক আমি দুজনকেই মেরে দিবো আর দুই তুমি যেকোনো একজনকে শুট করবে।
ইশা মনে মনে বলে।
–কি করবো এখন আমি? আমি কিছুতেই পারবো না গুলি করতে, আমার যে ওদের দুজনকেই চাই।
–নাও গু’লিটা ধরো।
ইশা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে তা দেখে আশিক চিৎকার করে বলে।
–কি হলো ধরো?
ইশা কাঁপাকাঁপা হাতে গুলিটা নেয়। আশিক নিজের চেয়ারে গিয়ে আরাম করে বসে বলে।
–নাও শুট করো। পাঁচ মিনিটের মাঝে শুট করবে যদি না করো তাহলে আমার লোক ওদের দুজনকেই মেরে ফেলবে।
–নাহ।
জিসান চিৎকার করে বলে।
–ইশা তুই আমাকে শুট কর। প্লিজ আমার ইশানকে তুই বাঁচা।
ইশা দুর্বল গলায় বলে।
–না আমি পারবো না।
–ইশা শুট কর না হলে ওরা মে’রে দিবে আমার সন্তানকে। আমি চাই না ওরা আমাদের ভালোবাসার অংশকে মেরে ফেলুক। প্লিজ ইশু শুট কর আমাকে।
ইশা কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে কাঁপাকাঁপা হাতে শুট করে দেয়। কিন্তু ইশা চোখ খুলে তাকিয়ে যা দেখে তাতে ইশা একদম প্রস্তুত ছিলো না। ইশার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাঈদ আশিকের মাথায় বন্দুক তাক করে। আর ইশার গুলিটা গিয়ে লাগে একটা দেয়ালে। সাঈদ আর তার দলবল এসে জিসান আর ইশানকে মুক্ত করে দেয়। ইশান দৌঁড়ে এসে ইশাকে জড়িয়ে ধরে। ইশা ভাবতেও পারছেনা এমন একটা ঘটনা ঘটবে। জিসান ইশাকে ইশারা করে শান্ত থাকতে বলে। আশিকের হাত পিছনে নিয়ে বেঁধে দেয় আর হাটু ঘেড়ে বসায় জিসানের সামনে।
–কি রে? কি ভেবে ছিলি আমাকে মেরে ফেলবি এতো সহজ মনে হলো তোর আমাকে মেরে ফেলাটা। আসলে তুই কি জানিস একটা কু*ত্তার বাচ্চা যাকে আমার পায়ের নিচে ফেলে পিষে ফেলতে একটুও সময় লাগবে না। খুব তো হিরোগিরি দেখিয়েছিলি এবার তোর হিরো গিরি কোথায় গেলো। ( আশিকের নাক বরাবর একটা ঘুসি মেরে) তোর লোক গুলো না খুব লোভী টাকার গন্ধ ফেলেই পাল্টে যায়। এমন লোক রাখিস কেন যারা তোর সাথেই প্রতারণা করে। আর যারা নিজের বসের সাথেই প্রতারণা করতে পারে তারা আমার সাথে প্রতারণা করবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। তাই তদের সবকটাকে জেলে পাঠাবো আমি।
আশিক অনুনয় করে বলে।
–জিসান আমার ভুল হয়ে গেছে প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে।
জিসান আশিকের বুকে একটা জোরে লাথি মেরে বলে।
–তোর মতো শু*রের বাচ্চাকে আমি ক্ষমা করবো তুই ভাবলি কি করে। খুব তো উড়ছিলি এবার উড় দেখি।
–ভাইয়া কি করবো এটাকে?
জিসান সাঈদের কথা শুনে বলে।
–মেরে মেরে আধ মরা কর। তারপর পুলিশের হাতে তুলে দিবি।
–ঠিক আছে ভাইয়া।
জিসান ইশা আর ইশানের কাছে গিয়ে বলে।
–ইশান বাব তুমি ঠিক আছো তো।
–হে পাপা আমি ঠিক আছি।
জিসান ইশার দিকে তাকিয়ে দেখে ইশা ফুফিয়ে কান্না করছে। জিসান ইশার চোখের জল মুছে দিয়ে বলে।
–কি হলো এভাবে কান্না করছিস কেন? আরে আমি থাকতে কেউ কিছু করতে পারবে না চল এবার বাড়ি চল।
–হুম।
_____
সাড়ে পাঁচ বছর পর। আজকে আবারও নতুন সাজে সেজেছে চৌধুরী বাড়ি কারন আজকে আমাদের রিহির জন্মদিন।
–মামাম্ম পাপা।
–কি হয়েছে ইশান?
–রিহি আমাকে কেক না খাইয়ে ওই শান্তকে কেন কেক খাওয়ালো?
ইশা মুচকি হেসে বলে।
–রিহি তো ছোট তাই বুঝতে পারে নাই।
–ছোট তো কি হয়েছে? ও শুধু আমাকে কেক খাওয়াবো আর কাউকে না বুঝলে।
জিসান আর ইশা একে ওপরের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়। পাপা আর মাম্মামের হাসি দেখে ইশান নাক ফুলিয়ে বলে।
–কি হলো তোমরা হাসছো কেন??? আমার রাগ উঠছে আর তোমরা হাসছো।
–আচ্ছা আচ্ছা আর হাসবো না আমরা। রিহিকে বকা দিয়ে দিবো কেন তোমাকে আগে কেক খাওনি?
–সত্যি তো…..
জিসান বলে,
—হে ইশান বাবা এবার তুমি যাও খেলা করো গিয়ে।
ইশা বিড়বিড় করে বলে।
–যেমন বাবা তেমন তার ছেলে পুরো ফটোকপি।
–কি বললি তুই?
–যেটা বলেছি সেটা সত্যি। একদম তোমার মতো হয়েছে ইশানটা।
–হবেই তো দেখতে হবে না কার ছেলেটা……
সবাই আনন্দে কাটায় রিহির জন্মদিনটা….
রাতে ইশা কাপড় ভাঁজ করছে এমন সময় জিসান এসে ইশাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। ইশা তড়িৎ বেগে বলে।
–এই কি করছো তুমি ইশান উঠে যাবে তো।
জিসান ইশার চুলে মুখ ডুবিয়ে বলে।
–উঠবে না।
–উফফ ছাড়ো তো এক বাচ্চার বাপ হয়ে গেল তারপরেও প্রেমটা কমলো না।
–প্রেম কমবে কেন? তোর প্রতি আমার ভালোবাসটা সবসময় একেই থাকবে বুঝলি।
জিসান ইশাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ইশার ঠোঁটের দিকে যেতে নিবে সাথে সাথে ইশান বলে উঠে।
–পাপা মাম্মাম কি করছো তোমরা???
ইশা তাড়াতাড়ি করে জিসানের কাছ থেকে সরে যায় আর ইশানের কাছে যায়। জিসান মনে মনে বলে।
–ধ্যাত! এই ইশানটার আর ঘুম ভাঙ্গার সময় পেলো না ইশুরে তুই কি আমার কষ্টটা একটু বুঝবি না আর হয়েছে আমার এক ছেলে বাবা মা একটু প্রেম করবে তার কোনো সুযোগ না করে দিয়ে বেজাল লাগায় শুধু।
ইশা বলে ইশানের কাছে গিয়ে বলে।
–ইশান তুমি এখনও ঘুমাও নি।
–ঘুমাবো কি করে? তোমাকে আর পাপাকে না জড়িয়ে ধরলে তো আমার ঘুমেই আসে না।
–আমার তো মনেই নেই ইশান বাবা তো তার পাপা আর মাম্মামকে ছাড়া একদম ঘুমাতে পারে না।
জিসান ইশানের পাশে গিয়ে শুয়ে বলে।
–ইশান বাবা এবার ঘুমাও।
ইশা ইশানকে জড়িয়ে ধরে জিসানও ইশার হাতের উপর হাত রাখে। ইশা তাতে মুচকি হাসি দেয়।
এভাবেই জিসান আর ইশার সুখের সংসার চলতে থাকে।
________সমাপ্ত_________