#তুই_শুধু_আমার 💕
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_10
ইশা একটা আলমারির পেছনে লুকিয়ে আছে নিজের মুখ চেপে। ইশার কাছে নিজের শ্বাসটাও এখন মনে শত্রু হচ্ছে। রাহুলের কন্ঠ ভেসে আসে।
–বেইবি কোথায় তুমি? এমন করে না সোনা বেরিয়ে এসো না। তুমি না আমাকে ভালোবাসা তো আমার কাছ আসতে সমস্যা কোথায়? প্লিজ সোনা বেরিয়ে এসো।
রাহুল কথা বলতে বলতে ইশার অনেক কাছে চলে এসেছে। রাহুল ইশার ওরনাটা দেখে ফেলে।
—সোনা….. আমি তোমাকে খুজে পেয়ে গেছি তাই প্লিজ আর লুকোচুরি না খেলে বেরিয়ে এসো।
ইশা তাড়াতাড়ি করে ওরনাটা সরিয়ে ফেলে। ইশার বুকটা ধড়ফড় করছে। কি করে ছাড়া পাবে এই জানোয়ারের হাত থেকে। ইশা মনে মনে বলে।
–ও খোদা আমাকে রক্ষা করো এই জানোয়ারের হাত থেকে।
–আমি কিন্তু তিন পর্যন্ত গুনবো তার মাঝে লক্ষী মেয়ের মতো বেরিয়ে আসবে আর যদি না হও তাহলে আমি কি করবো বলো তো…..
এদিকে ইশার সারা শরীর কাঁপছে ঘাম বেয়ে পড়ছে কপাল থেকে। চোখ দুটো ঝাপ্টে বন্ধ করে আছে। আর এদিকে রাহুল গুনতে শুরু করে।
–এক….. দুই….. তিন…. যা তিন পর্যন্ত গুনে ফেললাম তাও বের হলে না। ওকে তুমি যখন চাও আমি নিজে তোমাকে খুজে বের করি তাহলে ঠিক আছে আমিই বের করছি ওখান থেকে।
রাহুল ইশার দিকে এগিয়ে এসে বলে।
–এই তো ধরে ফেলেছি।
রাহুল আবাক হয়ে যায় ইশাকে এখানে না দেখতে পেয়ে।
–যা কোথায় চলে গেলে সোনা? তুমি আবার লুকোচুরি খেলছো আমার সাথে আমি কিন্তু তোমাকে বের করে ফেলেছিলাম। কিন্তু তুমি না বের হয়ে আবার লুকিয়ে গেলে এটা কিন্তু খেলার নিয়ম না সোনা। ঠিক আছে কোনো সমস্যা নাই আবার না হয় খুজে বের করবো। শুনেছি সবুরে মেওয়া ফলে।
এইদিকে ইশা আলমারির পিছন থেকে চলে যায়। ইশা পিছন পিছন হাটতে থাকে হঠাৎ করেই কারো সাথে ধাক্কা খায় ইশা। ইশার গলা শুকিয়ে আসছে এটা ভেবে রাহুলের কাছে হয়তো এবার ধরা পড়েই গেলো হয়তো। ইশা ভয়ে ভয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে জিসান দাঁড়িয়ে আছে। ইশা কোনো কিছু না ভেবেই জিসানের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আর কান্না শুরু করে দেয়। জিসান ইশার মাথায় নিজের হাত রাখে।
অন্য দিকেরাহুল ইশাকে খুজতে খুজতে এসে দেখে জিসান দাঁড়িয়ে আছে। রাহুল কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু নিজেকে আবার স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে।
–আরে মিস্টার জিসান চৌধুরী যে আপনি এখানে চলে এসেছেন এতো তাড়াতাড়ি। আপনার বউয়ের সাথে ফুলশয্যাটা করার আগেই আপনি চলে এলেন।
রাহুলের এই কথাটা শুনে জিসানের মেজাজটা এক দম বিগড়ে যায়। পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায় আর কিছুটা আবাক হয় এটা ভেবে রাহুল কি করে জানে ইশাকে ও যে বিয়ে করেছে। জিসান চিৎকার করে বলে।
–জাস্ট স্টেআপ। তোর সাহস কি করে হলো এসব কথা বলার ( ইশাকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে) আর তুই কি করে জানলি ইশাকে আমি বিয়ে করেছি।
–আরে রিলেক্স তোর বাড়িতে আমার লোক আছে গার্ড সেজে তাই জানি এইআর কি। ভ্যাগিস আমার একটা লোক রেখেছিলাম তোর বাড়িতে না হলে তো জানতেই পারতাম না তুই যে ইশাকে জোর করে বিয়ে করেছিস। আর এটা আমার গুহা আর এই গুহাতে যে এক বার ডুকে তারা আর বের হতে পারে না। ঠিক যেমন আজকে তুইও বের হতে পারবি না।
জিসান রাহুলের দিকে বন্দুক তাক করে বলে।
–ও তাই নাকি।
–আরে আরে এটা কি করেছিস তুই? প্লিজ এমন করিস না। আমার ভুল হয়ে গেছে। এমনটা আর কোনো দিন করবো না। হাহাহ… কি ভেবেছিস আমি তোকে এটা বলবো ভয় পেয়ে কখনো না এবার দেখ আমি কি করে।
রাহুল ইশারা করতেই কতো গুলো লোক কোথা থেকে এসে ইশার মাথায় বন্দুক ধরে।
রাহুল পকেটে নিজের হাত গুজে বলে।
–একটু পিছনে তাকিয়ে দেখ তোর সব হাওয়া বেরিয়ে যাবে।
জিসান পিছনে তাকিয়ে ইশার এমন অবস্থা দেখে কলিজা শুকিয়ে যায়।
–কি রে শক লাগলো বুঝি।
–রাহুল এই কাজটা তুই ঠিক করছিস না আমার ইশুকে ছেড়ে দে বলছি না হলে কিন্তু এর ফল ভালো হবে না।
–ও মা তাই নাকি তা কি ফল হবে আপেল ফল নাকি কমলা ফল তুই আমার কিছু করতে পারবি না জিসান কিছু না। তুই সবসময় আমার কাজে বেগরা দিস। কিন্তু এইবার পারবি না কারন এবার আমি ইশাকে গুটি বানিয়ে আমি আমার সব কাজ করবো।
–রাহুল শেষ বারের মতো বলছি ইশুকে ছেড়ে দে।
–তুই কি করে ভাবলি আমি ইশাকে ছেড়ে দেব আগে তো ওকে আমি টেস্ট করবো তার পর না ছাড়বো। এর আগে কি করে ছাড়বো বল আমার তো কিছু……
রাহুল আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই জিসান বলে।
–রাহুল তোকে আমি কিন্তু গুলি করবো বলে দিলাম। কু*র বাচ্চা।
–আরে আরে এই ভুলটা করিস না তুই তাহলে কিন্তু তোর ইশা আর এই দুনিয়াতে থাকবে না আর বন্দুকটা নিচে নামা ভাই আমার ভ’য় করছে। কখন না জানি আবার গুলি টুলি বের হয়ে যায়।
ইশা কান্না করতে করতে বলে।
–ভাইয়া আমার খুব ভ’য় লাগছে প্লিজ বাচাও আমাকে।
এদিকে সাঈদ আর অন্যরা ভিতরে আওয়াজ শুনতে পেয়ে ভেতরে ডুকে দেখে জিসান হাটু ঘেড়ে বসে আছে রাহুলের সামনে। আর ইশা এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে ইশার মাথায় বন্দুক রাখা। জিসানের এমন অবস্থা দেখে সাঈদের ভিষন রাগ উঠে যায়। জিসান হাটু ঘেড়ে বসে আছে শুধু মাএ ইশাকে বাচানোর জন্য। আজ পর্যন্ত জিসান কারো সামনে মাথা নত করে নি কিন্তু আজকে ইশার প্রান বাচানোর জন্য জিসানকে মাথা নিচু করতে হলো রাহুলের কাছে।
–এতো ভালোবাসিস ইশাকে। যে জিসান চৌধুরী কোনো দিন কারোর কাছে মাথা নত করে নি সে আজকে শুধু মাত্র একটা মেয়ের জন্য মাথা নত করলো খুব ভালো।
রাহুলের এই কথাটা শুনে ইশার বুকের ভেতরটা মোচর দিয়ে উঠে। সত্যি তো আজকে ইশার জন্য সব কিছু হয়েছে। ও যদি তখন জিসানের কথা শুনে বাড়ি থেকে বের না হতো তাহলে এমন কিছু হতো না। মানুষ মন প্রান দিয়ে যাকে ভালোবাসে তাকে বাচানোর জন্য সব করতে পারে সেটা যদি মরনও হয়।
–আচ্ছা চল এবার আমারা একটা ডিলে আসি তুই তোর ইশাকে নিয়ে চলে যায় এখান থেকে আর আমাকে আমার কাজ করতে দে।
জিসানের হঠাৎ চোখ যায় সাঈদের দিকে। জিসান ইশারা করে সবাই মিলে যেন রাহুলের উপর হামলা। জিসানকে চুপ থাকতে দেখে রাহুল বলে।
–কি হলো কিছু বলছিস না কেন?
–তোর মতো কু*র সাথে আমি ডিল কোনো দিন করবো তুই ভাবলি কি করে।
–ভাঙ্গবে তবু মচকাবে না। ঠিক আছে তাহলে চল ইশাকে না হয় এই দুনিয়া থেকে বিদায় দিয়ে দেই।
রাহুল ইশারা করে যাতে ইশাকে মে’রে ফেলে। ইশাকে গুলি করতে যাবে সাথে সাথে সাঈদ আর অন্যরা সবাই তাড়াতাড়ি করে ডুকে রাহুল মাথায় বন্দুক ধরে সাঈদ বলে।
–তোর লোকদের বল সব বন্দুক নিচে ফেলে দেওয়ার জন্য। না হলে তোকেই উড়িয়ে দিবো।
রাহুল ভয়ে ভয়ে বলে।
–ওই ওই এটা করিস না। আমি সবাইকে বলছি বন্দুক নিচে রাখার জন্য ওই তোরা বন্দুক নিচে নামা সবাই।
সবাই বন্দুক নিচে রাখে। জিসান উঠে দাঁড়িয়ে রাহুলের কাছে গিয়ে রাহুলের কলার চেপে ধরে।
–কি রে শক লাগলো বুঝি। কি ভেবেছিলি তুই এই জিসান চৌধুরীকে হারাবি আমি তোর মতো এত কাচা খেলোয়ার না যে হেরে যাবে তোর মতো একটা জানোয়ারের কাছে। বাকি মেয়েরা কোথায়? কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস বাকি মেয়েদের বল তাড়াতাড়ি না হলে তোকে এখানেই শেষ করে দিবো।
–ওই ঘরটাতে….. আছে সব মেয়েরা।
জিসান ইশারা করে বলে ওই ঘরটা খুলে দেওয়ার জন্য। দরজা খুলে দেওয়ার সাথে সাথে সব মেয়েরা বেরিয়ে আসে।
–প্লিজ জিসান আমাকে ছেড়ে দে আমি আর এমন কাজ করবো না।
–নেড়ি কুত্তা চিনিস। তুই হলি সেই নেড়ি কুত্তা যার লেজ কোনো দিন সোজা হবে না তাই তোকে তোর শাস্তি পেতেই হবেই।
–প্লিজ জিসান এবারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দে।
জিসান রাহুলকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়। যাওয়ার আগে রাহুল জিসানকে বলে।
–এটা তুই ঠিক করলি না জিসান আমাকে পুলিশের হাতে দিয়ে। আমি ঠিক বেরিয়ে আসবো জেল থেকে তখন আমি এর সুধ তুলবো জিসান। কথাটা মনে রাখিস।
পুলিশ রাহুলকে নিয়ে চলে যায়। ঘরে ভেতরে শুধু দাঁড়িয়ে আছে জিসান আর ইশা। ইশা ঘরের এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে আর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে। ইশার যে নিজের কাছে নিজেকেই এখন ছোট লাগছে।
–কি হলো এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বাড়ি চল নাকি এখানে থাকতে চাস তুই।
জিসানের কথা শুনেও ইশা কোনো কথা বলছে না চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ইশা কথা বলছে না দেখে জিসানের মেজাজটা আবার গরম হয়ে যায় ধমকের স্বরে বলে।
–তোকে আমি কিছু বলছি কানে যাচ্ছে না তোর।
জিসানের এমন ধমকে ইশার আত্মা কেপে ওঠে।
–আমি গাড়িতে গিয়ে বসছি তাড়াতাড়ি আয়।
কথাটা ইশাকে বলে মনে মনে বলে।
–তোকে এবার বুঝতে হবে আমার ভালোবাসা এতো দিন তুই আমার ভালোবাসা দেখিছিস এবার তুই আমার অন্য রুপ দেখবি ইশা তার জন্য রেডি থাক।
জিসান চলে যায় ইশাও আস্তে আস্তে করে ঘর থেকে বের হয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসে। সারা রাস্তা কেউ কারো সাথে কথা বলে নি। জিসান এক বারের জন্য ইশার দিকে তাকাই নি। সেটা যে ইশার বুকে এখন তীরের মতো লাগছে। জিসানের এই অবহেলা ইশার এক দম সহ্য হচ্ছে না। ইশা আড় চোখে জিসানের দিকে তাকায়। যেটা জিসান ঠিকেই বুঝতে পারছে।
–আমাকে ক্ষমা করে দিস জান তোকে যে আমার ভালোবাসাটা বুঝানোর জন্য আমাকে কঠোর হতেই হবে আমি বুঝতে পারছি তর মনে এখন কি চলছে। কিন্তু আমার কিছু করার নেই।
মনে মনে বলে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
#চলবে