#তুই_শুধু_আমার 💕
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_18
ইশা অনেকক্ষন ধরে জিসানকে গলা ফাটিয়ে ভাইয়া বলে ডাকছে কিন্তু জিসান কোনো রেসপন্স দিছি না ইশার ডাকে। যার কারণে ইশার মেজজটা গরম হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে রাগে কান দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে।
–এই হিটলার কি আমার ডাক শুনতে পারছে না নাকি??? বাড়ির সবাই আমার চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে যাবে কিন্তু এই হিটলার উঠছে না কেন? কুম্ভকর্নের মতো কি ঘুমাচ্ছে নাকি। দেখি তো এক বার।
ইশা ওয়াশরুমে দরজা হলকা খুলে যা দেখে তাতে ইশার রাগটা আরও দ্বিগুন বেড়ে যায়। জিসান আধশুয়া হয়ে পায়ের উপর পা তুলে ফোনে গেইম খেলছে মনের শান্তিতে। ইশা দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে।
–কত বড় বয়রা এই লোকটা এতক্ষন ধরে এত ডাকলাম কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ দিলো না। এই ভাইয়া একটু শুনো না।
জিসান ইশার দিকে না তাকিয়ে ফোনে গেইম খেলে যাচ্ছে আর মনে মনে বলে।
–ভাইয়া ডাকছিস না তোর ভাইয়া ডাকা আমি বার করছি দাঁড়া। দেখি তুই কতক্ষন ওয়াশরুমে ভিজা শরীর নিয়ে থাকতে পারিস। বেয়াদব মেয়ে নিজের স্বামীকে ভাইয়া বলে ডাকে কত্ত বড় সাহস।
–কি আজব এত জোরে ডাকছি তার পরেও কোনো সাড়া শব্দ দিচ্ছে না বয়রা হয়ে গেল নাকি। আবার ডাকি ভাই…. ও হোরে ভাইয়া ডাকার জন্য সাড়া দিচ্ছে না তাহলে ঠিক আছে জিসান বলেই ডাকছি।
“””জিসান আমাকে একটু আমার কাপড় গুলা দিবেন প্লিজ”””
জিসান মনে হেসে বলে।
-এই তো জান লাইনে এসেছো একটু কিন্তু আর একটু মধুর সুরে ডাকো তাহলে কাপড় দিবো এর আগে নয়।
জিসানের কোনো হেলদোল নেই। সে আগের মতোই শুয়ে আছে।
–কি আজব জিসান বলেই তো ডাকলাম তার পরেও সাড়া দিলো না। উফফ আমার এখন অসহ্য লাগছে একেবারে।
ইশা রাগে ওয়াশরুমে দরজা লক করে দিয়ে চিন্তিত স্বরে বলে।
–আচ্ছা ভাইয়াকে তো নাম ধরে ডাকলাম তার পরেও কেন সাড়া দিলো না। ধ্যাত কিছুই বুঝতে পারছি না শীতও লাগছে।
ইশা কিছুক্ষন ভাবে জিসানকে কি বলে ডাকলে সাড়া দিবে।
–ইয়েস আইডিয়া পেয়েছি।
ইশা ওয়াশরুমে দরজাটা একটু খুলে দেখে জিসান খাটের উপরে নেই।
–গেলো কই এই লোক আবার?
ইশা একটু উকি দিয়ে দেখে ঘরের দরজা ভিতর দিয়ে লক করা দেখে বলে।
–ও তার মানে ঘরেই আছে মিস্টার জিসান চৌধুরী। ইশা জাস্ট চোখ বন্ধ করে বলে দে। না হলে আজকে সারাটা দিন ওয়াশরুমেই থাকতে হবে। জিসান জান প্লিজ আমার কাপড় গুলো একটু দিবে।
ইশা এই কথাটা বলার সাথে সাথে কেউ একজন ইশাকে ঝড়ের বেগে ওয়াসরুমে ডুকে ইশাকে টেনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। ইশার তো ভয়ে কলিজাটা শুকিয়ে যায়। হঠাৎ করে এমন একটা ঘটনা হওয়াতে। ইশা অনুভব করতে পারে কারো গরম নিশ্বাস ওর মুখে পড়ছে। ইশা চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে জিসান ওর দিকে ডেবডেব করে তাকিয়ে আছে। জিসান ওয়াশরুমের সাইডে লুকিয়ে ছিল যার কারণে ইশা জিসানকে দেখতে পাই নি। ইশা চমকে উঠে বলে।
–তুমি এখানে!
–হুম কেন?? আমি কি আমার বউয়ের কাছে আসতে পারি না বল।
ইশার কোমড় ধরে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসে এসে কথাটা বলে জিসান শাওয়ার ছেড়ে দেয় অন্য দ্বারা।
–আরে আরে এটা তুমি কি করছো শাওয়ার ছাড়লে কেন হঠাৎ?
–শিসসসস।
ইশার ঠোঁটে তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে বলে। জিসানের মুখ দিয়ে গড়িয়ে পড়া পানি ইশার মুখের উপর পড়ছে। ইশার গোলাপি ঠোঁট জোড়া ঠান্ডায় কাঁপছে। জিসান ইশার ঠোঁটে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আলতো হাতে স্পর্শ করে। একে তো ইশার ঠান্ডা লাগছে তার উপর জিসানের পাগল করা ছোঁয়া যার জন্য ইশা বরফের ন্যায় জমে গেছে। জিসানকে যে নিজের কাছ থেকে সরাবে তারও শক্তি টুকু পাচ্ছে না ইশা। জিসান আস্তে আস্তে করে ইশার ঠোঁটে দিকে এগিয়ে এসে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে দেয়। ইশা নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়। ইশা জিসানের পিঠ কামছে ধরে এতে জিসানের কোনো রেসপন্স নেই জিসান তো ইশাতেই মেতে আছে।
______
সবাই খাবরের টেবিলে বসে নাস্তা করছে। জিসান ফ্রেশ হয়ে আগেই চলে গেছে নিচে। সালিহা বেগম জিসানকে দেখে বলে।
–কি রে ইশা কই?
–মা ও ঘরে… একটু পরে আসবে।
–একটু পরে আসবে মানে! তুই সাথে করে নিয়ে আসতে পারলি না।
–মা তোমার বউমা কি বাচ্চা যে ওকে কোলে করে নিয়ে আসতে হবে। আর আমাকে তাড়াতাড়ি নাস্তা দাও অফিসে যেতে হবে আমার।
জিসা ইশাকে দেখে বলে।
–ওই তো ইশা আপু চলে এসেছে।
জিসান তাকিয়ে দেখে তার সামনে একটা নীল পরি দাঁড়িয়ে আছে। ইশা একটা নীল চুরিদার পড়েছে চুল গুলো থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে মুখের সৌর্ন্দয যেন আজকে একটু বেড়েই গেছে ইশার। বিয়ের পরপরেই নাকি মেয়েদের সৌর্ন্দয বেড়ে যায় ঠিক যেমন ইশার সৌর্ন্দযটাও আজকে দিগুন বেড়ে গেছে।
–ইশা আপু আসো বসো এখানে।
সালিহা বেগম মেয়েকে ধমকে স্বরে বলেন।
–ওই ইশা আপু কি রে আজকে থেকে ওকে ভাবি বলে ডাকবি।
–হে হে তুমি তো আমার ভাবি হয়ে গেছো।
জিসার মুখে ভাবি ডাকটা শুনে ইশা কিছুটা লজ্জা পায়। সালিহা বেগম জিসানকে উদ্দেশ্য করে বলে।
–কি রে এখন খাচ্ছিস না অফিসে যাওয়ার জন্য তো পাগল হয়ে গেছিস।
–হুম এইতো খাচ্ছি।
খাওয়ার জিসান ইশার পায়ে নিজের পা দিয়ে সুরসুরি দেয় যাতে করে ইশার ভীষন রাগ উঠছে না পারছে সইতে না পারছে কিছু বলতে। ইশা জিসানের দিকে তাকিয়ে দেখে জিসান মিটিমিটি করে হাসছে। ইশার দিকে তাকিয়ে জিসান দু ভ্রু নাচায়। এবার জিসান একটু বেশি বেশি করে ফেলে যার জন্য ইশা দেয় একটা চিৎকার।
–আউউউউউচচচ…
সালিহা বেগম চমকে বলেন।
–কি হয়েছে?
–মশা…. মশা কামড় দিয়েছে।
জিসা অবাক হয়ে বলে।
–মশা …… মশা কই থেকে আসলো ওই দিন না পোকা মা’রার বি’ষ দেওয়া হয়েছে।
জিসান এসব দেখে খুব কষ্টে হাসিটা থামিয়ে রাখছে। ইশা জিসানের দিকে রা’গী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।
–মামনি আমি আর খাবো না।
–কেন কি হয়েছে…???
–যা হয়েছে তা কি তোমাকে বলা যাবে নাকি।
মনে মনে কথাটা বলে সালিহা বেগমকে বলেন।
–না কিছু না আমার পেট ভরে গেছে।
–কি এমন খেলি রে বাবা যে পেট ভরে গেল।
ইশা আর কোনো কথা না বলেতা ড়াতাড়ি করে নিজের ঘরে চলে যায়।
জিসান ঘরে ডুকে দেখে ইশা খাটের উপরে বসে রাগে সাপের মতো ফুসছে। আর ফুসবেই না কেন বেচারি একটু শান্তিতে পর্যন্ত খেতে পারলো না জিসানের জন্য। জিসান মনে মনে বলে।
–বাবারে যেভাবে রাগে আগুন হয়ে আছে আমার বউ না জানি আমাকে কখন জ্বালিয়ে দেয় জিসান নিজেকে রক্ষা করতে হবে তাই নিজের উপরে আত্মবিশ্বাস রাখ।
জিসান ঘরের ভিতরে ঢুকেই সোজা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করা শুরু করে চুল ঠিক করে ঘুরে তাকাতেই ইশাকে নিজের সামনে দেখে ভয় পেয়ে যায়। ইশা ভীষন ক্ষেপে আছে আজকে জিসানের উপর। ইশা জিসানের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে। জিসান কিছু না জানার ভান ধরে বলে
–কি হয়েছে? জান এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
ইশা গম্ভীর গলায় বলে
–তোমার সমস্যা কি?
জিসান দু কাঁধ নাচিয়ে বলে।
–আমার আবার কি সমস্যা হবে??
–তাহলে আমাকে শান্তি মতো খেতে দিলে না কেন? তুমি জানো আমার পেটে কত ক্ষুধা লেগেছে নিজে তো গান্টেপিন্টে খেয়ে এসেছো।
জিসান মুখটা অসহায় করে বলে।
–তাই খুব বেশি ক্ষুধা লেগেছে।
–একদম কথা বলবে না তুমি আমার সাথে। তোমার জন্য আমি একটু শান্তিতে খেতে পারলাম না
হঠাৎ করেই জিসান ইশার ঠোঁটে ছোট করে কি’স করে ফেলে। যার জন্য ইশা একদমেই প্রস্তুত ছিল না। জিসান মুচকি হেসে বলে।
–এবার পেট ভরেছে জান নাকি এখনো পেট খালি…
ইশা তো লজ্জায় পুরো টমেটো হয়ে গেছে। জিসান ইশাকে ঘুড়িয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ইশার চুল মুখ ডুবায় আর একটা কি’স করে বলে।
–উফফ জান এত লজ্জা পাস না তো তাহলে কিন্তু আমি নিজেকে সামলেতে পারবো না।
ইশা কিচ্ছু বলে না। জিসান পুনরায় বলে।
–সাবধানে থাকিস। আমি এখন আসি আর খেয়ে নিস কেমন।
–হুম।
জিসান চলে যায়। কিন্তু আবার ফিরে আসে। তীর অবাক হয়ে বলে।
–কি হলো ফিরে এলে যে?
–একটা জিনিস দিতে ভুলে গেছি।
–কিহ?
জিসান ইশার কপালে গভীর ভাবে কি’স করে বলে।
–এইটা দেওয়ার জন্য ফিরা আসা। এবার আসি আমি সাবধানে থাকবি।
সারা দিন ইশা ওর মামনি আর জিসার সাথে আড্ডা দিয়ে সময় কাটায়। মাঝে মাঝে জিসান ইশার সব খবর নিয়েছে
______
রাত নয়টা ইশার ফোনটা বেজে ওঠে। ইশা ফোনটা নিয়ে দেখে জিসান ফোন করেছে। ইশা খুশি মনে ফোনটা ধরে বলে।
–হ্যালো!
–হ্যালো ইশু তুই ডিনার করে নে। আমার আসতে একটু লেইট হবে আর যদি ভয় লাগে তাহলে জিসার সাথে গিয়ে শুয়ে পড়িস কেমন আর ডিনার করে ঘুমাবি। যদি এসে শুনি তুই ডিনার করিস নি তাহলে কিন্তু খবর আছে তোর। আচ্ছা বাই সাবধানে থাকিস।
ইশাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনটা কেটে দেয় জিসান।
— আরে ধ্যাত ফোনটা কেটে দিলো। কোথায় আমার সাথে একটু সময় কাটাবে তা না করে অফিসে গিয়ে বসে আছে। আর অফিসে গিয়েও আমাকে হুমকি দেয়। রাতে ডিনার না করলে নাকি আমার খবর আছে। ভাল লাগে না আমার।
ইশা ডিনার করতে চলে যায় নিচে।
#চলবে